#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১৪)
সিজন ২
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
২৯.
দিনটা রবিবার, ঝলমলে রোদের আলো ভরা দিন। মাঝে মাঝেই পাখির কিচির মিচির শোনা যাচ্ছে। সামনেই বসন্ত পদার্পণ করবে তাই বসন্তের ও কিছু আমেজ দেখা যাচ্ছে। মৃদু মন্দ বাতাসে চারিদিক ছেয়ে আছে। মেহজার বেলকনির পর্দাটা বাতাসে ঝাপটায় উড়ছে। আর মেহজা পড়ার টেবিলে বসে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তার পড়াতে মন নেই। বাহিরের সুন্দর দৃশ্যটা দেখতেই কেন যেন ভালো লাগছে। মেহজা ঠিক করল এবার এই পর্দাটা বদলে ফেলবে। তার পরিবর্তে একটা সাদা পাতলার মধ্যে জর্জেটের পর্দা এনে লাগাবে। তখন দেখতে আরো বেশি ভালো লাগবে। হালকা বাতাসেও পর্দাটা নড়বে। বসন্তের দিনগুলি সুন্দর করে উপভোগ করা যাবে। বাতাসে গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার পর্দা আরো বেশি উড়ছে। যার ফলে বাহিরের আকাশটা উঁকি মারছে। পেঁজা তুলো গুলো কী সুন্দর ছুটোছুটি করছে। মেহজার চট করেই মনে হলো এই মেঘের উপর যদি একটু শুয়ে থাকতে পারত! শুয়ে শুয়ে একটু সারা বাংলাদেশ ঘুরতে পারত! আচ্ছা? এমন স্বপ্ন গুলো পূরণ হয় না কেন? হলে কী খুব বেশি ক্ষতি হতো! মেঘ গুলো নরম গদি কেন হলো না! এগুলো কেন বাষ্প হতে গেল? মেহজার মনে পড়ল ছোটবেলার আরেকটা স্মৃতি। যখন সে ছোট ছিল তখন ভাবত আকাশ ধরা যায়। দূরের ওই সৃষ্টি গাছে উঠলে ধরা যাবে। তবুও যদি ধরা না যায় একটা মই নিয়ে আসলেই হবে। গাছের উপর মই রেখে সে উপরে উঠে আকাশ ধরবে। ভাবতেই মেহজার হাসি পেয়ে গেল। ছোটবেলার ইচ্ছে গুলো এত সুন্দর কেন?
মেহজার ভাবনার মাঝেই তার মা এসে টেবিলে চায়ের কাপ রাখল। মেহজাকে আনমনে বেলকনির দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসতে দেখে তিনি চমকে গেলেন। মেয়ের হয়েছে কি! কী এত ভাবছে সে?
-‘এই! এই মেহজা!’
মেহজার ভালো লাগার রেশটা মায়ের কর্কশ স্বরে কেটে গেল। কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘কী! চিল্লাও কেন?’
-‘আমি চিল্লাচ্ছি? হ্যাঁ! তুই ওদিকে তাকিয়ে হাসছিস কেন? মাথায় সমস্যা আছে?’
-‘আজব! ওদিকে তাকিয়ে হাসলে মাথায় সমস্যা হবে কেন?’
-‘তো অকারণে হাসে কেউ?’
-‘হাসে তো। পাগলরা হাসে।’
মেহজার মা চোখ বড় বড় করে বললেন,
-‘তুই কি নিজেকে পাগল দাবি করছিস?’
-‘করলে ক্ষ’তি কী? আমরা সবাই পাগল, আমাদেরই পাগলের রাজত্বে।’
সাবিনা বেগম মেয়ের দিকে এমন ভাবে তাকালো। তার কেন যেন মনে কু গাইছে। মেয়েটা রূপবতী, একা একা মাঝে মাঝে ছাদে ঘোরাফেরা করে, রাতে বেলকনিতে বসে থাকে। কোনো আলগা বাতাস লাগেনি তো? তিনি বেশ ঘাবড়ে গেলেন। কি মনে করে তিন কূল পাঠ করে মেয়ের সারা শরীরে ফুঁ দিলেন। মায়ের কান্ড দেখে মেহজা হা হা করে হেসে উঠল। এতে যেন সাবিনা বেগমের ভ’য়টা আরো বেড়ে যায়। ফট করে তিনি বলে উঠলেন,
-‘আজ থেকে ছাদে যাওয়া তোর বন্ধ। আর রাতের বেলায় বারান্দায়ও যাবিনা। মনে থাকে যেন।’
মা চলে যেতেই মেহজ হাসতে হাসতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। বললেই হলো? ছাদে না গেলে সে ইরফানকে দেখবে কীভাবে! মা শুধু শুধু চিন্তা করছে। ব’দ নজর তার লাগেনি বরং সে কাউকে লাগিয়েছে। এটা কী মাকে বলা যায়?
৩০.
বিকেল বেলায় কোচিং থেকে ফেরার পথে মেহজা ইরফানের গাড়িটি দেখতে পায় রাস্তার এক পাশে। যদিও একই রকম গাড়ি অনেকের থাকতে পারে কিন্তু সে ইরফানের গাড়িটা ভালো ভাবেই চিনে। গাড়ির লুকিং গ্লাসে একটা কাপড় ঝোলানো থাকে ইরফানের গাড়িতে। এখানেও সেটি আছে। অতএব নিশ্চিন্তে বলা যায় এটা ইরফানেরই গাড়ি। ইরফানের গাড়ি থাকলেও ইরফানকে কোথাও দেখা গেল না। সে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে দেখল ইরফান নেই। গাড়িটা যেখানে পার্ক করা তার সামনেই একটা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মেহজার মনে হলো ইরফান বোধ হয় সেখানেই গিয়েছে। সে একটু এগিয়ে যেতেই দেখল তার অনুমান সঠিক। ইরফান সেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসছে। মেহজার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সেই হাসি মিলিয়ে গেল। ইরফানের পেছন পেছন বেশ সুন্দরী একটা মেয়েও আসছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছে অভিজাত পরিবারের সন্তান এবং বয়সটা অনুমান করে যা বোঝা যাচ্ছে পঁচিশ কী ছাব্বিশ! মেয়েটা যখন ইরফানের গাড়িতে উঠল তখন মেহজা যেন সবচেয়ে বড় ধা’ক্কাটা খেল। ইরফান কী সুন্দর ভাবে মেয়েটির জন্য দরজা খুলে দিল। মেয়েটি সিটে বসে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে। বিপরীতে ইরফানও হাসল। চোখের পলকে দু’জন চলে গেল। গাড়ি কোথায়, কোনদিকে গেল সে জানেনা। কারণ সে আর কিছু দেখার সাহস পাচ্ছিল না। কোনো মতে একটা রিকশা ডেকে সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ভেবেছিল কেনাকাটা করবে আজকে কিন্তু তা আর হলো না।
বাসায় ফিরেই সে রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। তা দেখে সাবিনা বেগম বিচলিত হয়ে পড়লেন। মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছে? কি হলো তার! চিন্তায় অস্থির হয়ে তিনি কল করলেন তার ছোট বোনকে। তার সন্ধ্যানে নাকি অনেক ভালো হুজুর আছেন। তাদের থেকে কিছু সাহায্য যদি পাওয়া যায়!
রাতে মেহজা দরজা খুলল। খাবার খেয়েই আবার রুমে ঢুকে পড়লেন। মেহজার মা ব্যাপারটা তার ভাই আর বাবাকে জানালেন। তারাও বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। এদিকে মেহজার ছোট খালামণি লক্ষণ শুনে বেশ সিরিয়াস হয়ে বললেন,
-‘আপা গো! কী শুনাইলা? মনে তো হয় আশিক জ্বী’নে ধরছে। হায় হায়রে! বলছিলাম এই মেয়ে সুন্দর, এরে সাবধানে রাখো। তোমরা তো সেটা শুনো না। এখন এই মেয়ের বিয়ে শাদিতে কত সমস্যা হবে তুমি জানো!’
-‘কী বলছিস!’
-‘হ্যাঁ আপা। এক কাজ করো, ব্যাপারটা বেশি দূর না গড়ানোর আগেই বিয়ে দিয়ে দাও। পরে নাহলে বিয়ে হবে কিনা সন্দেহ আছে।’
-‘মেয়ে আমার ছোট। এখনই বিয়ে কেন দিব? আর তাছাড়া এত দ্রুত পাত্র পাব কোথায়?’
-‘সেদিন বললে না তোমাদের অ্যাপার্টম্যান্টের মালিকের ছেলের জন্য প্রস্তাব আসছিল। ওর সাথেই দাও না। তাদের তো শহরে বেশ নাম ডাক। আমি বলি কী হাত ছাড়া করিও না। ভালো ঘর আর ভালো বর দু’টোই সুযোগ পাওয়া মাত্র লুফে নিতে হয়।’
-‘না না। ছেলেটার বয়স মেহজার থেকে বেশি।’
-‘তো কী হইছে? আমি তুমি কি জোয়ান বিয়ে করছি? মণির বাবা তো আমার এগারো বছরের বড়। আমি সংসার করি নাই!’
-‘আজকালকার ব্যাপারটা আলাদা।’
-‘কচু আলাদা। আজকাল তো আরো বেশি হয় বরং। আবার ছোট ছেলেরা বড় মেয়েও বিয়ে করে। এসব অজুহাত দিবা না একদম। যা বলছি তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি। পরে বেশি দেরি করলে তোমাদেরই লস। আমও যাবে, ছালাও যাবে। সময় থাকতে কাজ সারো।’
বোনের কথা শোনার পর থেকেই তিনি বেশি দু’শ্চি’ন্তা করছেন। মেহজার বাবা আর ভাই বেশ বোঝানোর পরেও তিনি বুঝলেন না। পরদিন সকালে তিনি ইরফানদের বাসায় গেলেন। বললেন যে মেয়ে বিয়ে দিতে তিনে রাজি। এবং এটাও বললেন বিয়েটা অতি দ্রুত দিতে চান। এদিকে মাহিমা বেগম সেই খবর শুনে খুশিতে আত্মহারা। ইরা চলে যাবে এক সপ্তাহ পর। ভালো হয় যদি এই সপ্তাহেই শুভ কাজটা সারা যায়।
এদিকে যাদের নিয়ে এত আয়োজন তারা কিছুই জানেনা। ঐ যে প্রবাদ বাক্য আছে “যার বিয়ে তার হুশ নেই, পাড়া পরশীর ঘুম নেই” তেমনই।
মেহজার এরপর দুইদিন খুবই বা’জে গেল। সে কোচিং যাওয়া বন্ধ করল। একদিন বিকেলে সুযোগ বুঝে মায়ের চোখ লুকিয়ে সে ছাদে গেল। তার আগে কী মনে করে একটু ইরফানদের বাসার সামনে গেল। গিয়ে দেখল তাদের বাসার দরজা খোলা। আর ভেতরে বেশ কিছু মানুষ। হয়তো ইরফানদের অতিথি। মেহজা একটু উঁকি দিতেই দেখল সেদিনের মেয়েটা। তাকে দেখে মেহজার বুক ভেঙে কান্না আসছিল। দ্রুত সে লিফটে উঠে পড়ল। ছাদে এসেই তার দুঃখ যেন বেড়ে গেল। ইরফান ছাদে আছে। তার গায়ে ফরমাল স্যুট। অফিস থেকে এসেছে বোধ হয়। তবে সে বাসায় না গিয়ে ছাদে কী করছে! মেহজা আরেকটু সামনে গিয়ে দেখল সে ল্যাপটপে কি কাজ করছে খুব মনযোগ দিয়ে। মেহজার এই সুদর্শন পুরুষটিকে জড়িয়ে ধরার মতো ইচ্ছা হচ্ছিল। তার ভাবতেও খারাপ লাগছে এই পুরুষ অন্য কারো। দো’ষ আসলে তার। তার বোঝা উচিত ছিল প্রাপ্ত বয়স্ক এই যুবকের কোনো বিশেষ বান্ধবী থাকতে পারে। নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে। তারপরই তার মনে হলো সে এত কিছু কেন ভাবছে? সরাসরি জিজ্ঞেস করলে হয় না? সে এগিয়ে গেল। ইরফানের মুখভঙ্গি দেখে যা বোঝা গেল সে বেশ রে’গে আছে। মেহজা পাত্তা দিল না। সে আজ যে করেই হোক ইরফানের লাভ লাইফ সম্পর্কে জানবে।
ন বেশ চটে আছে। আজকে অফিসের একটা দরকারি প্রোজেক্ট সে নিজের ভুলে ন’ষ্ট করেছে। অফিসে বাবার সামনে টিকতে না পেরে বাসায় এসেছিল কাজটা নিশ্চিন্তে করবে বলে। কিন্তু সেটাও হলো না। বাসায় মেহমান ভীড় ধরেছে। নিজের রুম গিয়ে দেখল ইরা সেখানে কী কাজ করছে। তাকে দেখেই বলল
-‘ইয়াজ তুই অন্যরুমে যা। আমাদের তোর রুম এখন কাজ আছে।’
অতঃপর তাকে ছাদে আসতে হলো। সারাদিন অফিসের ভেজালে সে আটকা পড়েছিল। খাবার সময়টুকুও পায়নি। এখনও ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে সে এখানে বসে কাজ করছে। মেজাজ আর কতটা ঠিক থাকে? এরই মধ্যে হাজির হলো মেহজা। এসেই তার সামনে বসে মিষ্টি করে হাসল। ইরফানের সেই হাসিটা একটু ভালো লাগেনি। গত কয়েক দিনে মেয়েটা তাকে জ্বালিয়েছে। ভীষণ জ্বালিয়েছে! ইরফান তার কাজ কর্মে কিছু আন্দাজ করতেও পেরেছে। গত সপ্তাহে সে এসে বলল,
-‘আপনি বিয়ে করবেন না ইয়াজিদ ভাইয়া?’
মেহজার কথায় ইরফান ভ্রু কুঁচকে ফেলে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-‘আমার বিয়ে নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছ কেন? তোমার এতো সমস্যা হচ্ছে কেন অবিবাহিত আমিকে নিয়ে!’
একটু রাগত স্বরে বলার কারণ সে আরো দুই বার ও তার বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিল।
মেহজা হেসে বলল,
-‘না মানে আমি সিঙ্গেল!’
-‘তো আমি কি করব?’
-‘কিছু না।’
তারপর সে দৌঁড়ে চলে গেল। তারপর থেকে ইরফান কিছু একটা বুঝতে পেরে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। মেহজাকে একটু এভোয়েড করার চেষ্টাও করছে বলা যায়। উঠতি বয়সে কতজনের কত কিছুই হয়। সবার সবকিছুকে ধরার কোনো মানে আছে?
মেহজা দেখল ইরফান তার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো কাজে মন দিলো। তার একটু অভিমান হলো এই জন্যে। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘কী করছেন?’
-‘কাজ করছি।’
-‘কী কাজ?’
ইরফান চোখ তুলে তাকালো। মেহজার প্রশ্নের ধরনে তার রা’গ আরেকটু বেড়ে গেল। কোনো মতে রা’গ চেপে বলল,
-‘অফিসের কাজ করছি। এখন একটু চুপ থাকলে আমার সুবিধা হয়।’
মেহজা চুপ করেই রইল। ইরফানের কথা বলার ধরনে তার বেশ খা’রা’প লাগল। তবুও ভালোবাসার মানুষের সব সয়ে নেওয়া যায়, নিতে হয়।
সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ছাদে হাঁটাহাঁটি করে। ইরফান তার উপস্থিতি পছন্দ করছেনা সে বুঝতে পারে। তবুও তার এখনও ইরফানের থেকে কিছু জানা বাকি। নয়তো সে আরো একটি রাত নির্ঘুম কাটাবে।
৩১.
কাজ শেষ হতেই ইরফান ল্যাপটপ নিয়ে উঠে পড়ল। এদিক ওদিক না তাকিয়ে দ্রুত লিফটের দিকে এগিয়ে গেল। মেহজা এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইরফানকে যেতে দেখেই সে পেছন থেকে ছুটে আসে। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই সে উঠে পড়ে। তারপর ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘আপনি এভাবে আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছিলেন কেন? একটু ওয়েট করবেন না!’
-‘কেন?’
-‘না মানে আমিও তো বাসায় যাবো।’
-‘তুমি যে এখনই যাবে তা তো আমি জানতাম না।’
-‘আচ্ছা। কোনো ব্যাপার না।’
মেহজা হাসল। তারপর তার মনে হলো সময় বেশি নেই। এখনই কথাটা বলতে হবে। তাই সে চট করেই বলে উঠল,
-‘ভাইয়া? আপনাদের বাসায় একটু আগে গিয়ে দেখলাম নীল থ্রী পিস্ পড়া একটা মেয়েকে। মেয়েটা আপনাদের কিছু হয়!’
ইরফানের জবাব দিতে ইচ্ছা করেনি একদম। তবুও, ভদ্রতার খাতিরেই বলল,
-“ওর নাম ইলা। আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে। তোমার সিনিয়র হবে চার/পাঁচ বছরের।”
-“সিনিয়র জুনিয়র তো জানতে চাইনি। মেয়েটা সিঙ্গেল?”
-“সিঙ্গেল না কি মিঙ্গেল তা আমি জানব কী করে? আর তোমারই বা এত ইন্টারেস্ট কেন?”
-“আসলে মায়েদের বান্ধবীদের মেয়ে থাকলে মায়েরা তাদের ছেলেদের সাথে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তো আমি বলছিলাম কি, আপনার মায়ের আবার ওইরকম চিন্তা নেই তো!”
-“থাকতেই পারে।”
মেহজার চোখ-মুখ কেমন কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। ইরফানের চোখে চোখ রেখে বলল,
-“পরিকল্পনা যদি করেও থাকে তবে কি আপনি বিয়ে করবেন?”
ইরফান মেহজার চোখের ভাষা পড়তে পারলো কীনা কে জানে! সে মেহজার চোখে চোখ রেখেই বলল,
-“বিয়ে তো কোনো একদিন করতেই হবে। আমার যেহেতু নিজস্ব পছন্দ নেই তাই আমি মায়ের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করব। এতে মেয়েটাও খুশি হবে মা’ও খুশি হবে।”
মেহজার চোখ ছলছল করে উঠল। ইরফান লিফট থেকে নেমে কাউকে কল করে। আর তার সাথেই কথা বলতে বলতে চলে গেল। একটিবারও পেছনে ফিরে দেখেনি। পেছন ফিরলে হয়তো মেহজার চোখ থেকে পড়া অশ্রু কণা গুলো দেখতে পেত। হয়তো সে ইচ্ছা করেই ফিরে চায় নি। সে তো জানেই মেহজা কাঁদবে এমন কথা শুনে। কাঁদলে কাঁদুক। একটু কান্না কাটি না করলে কী হয়! জীবনে হাসি খুশির সাথে দুঃখ আর কান্নাও অনেক জরুরী। তাছাড়া ইরফান তো জানেই তার মায়ের পছন্দ মেহজা। বোকা মেয়েটা তা বোঝেনি তো কি হয়েছে? ইরফান তো আগেই বুঝে গিয়েছিল তার মা মনে মনে মেহজাকে ছেলের বউ হিসেবে চায়। নাহলে প্রতিদিন কানের কাছে মেহজা মেহজা করে ঘ্যানঘ্যান করতো? আর প্রতিদিনই বা কেন তাকে বাসায় আসতে বলে! কেন? মা কী মনে করে! ইরফানও মেহজার মতোই অবুঝ। উহু! একদমই না।
#চলবে।
#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১৫)
সিজন ২
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
৩২.
বাসায় ফিরে মেহজা অবাক হয়ে গেল। ছোট খালামণি এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। মেহজাকে দেখে তার মা ধ’ম’কে উঠে বললেন,
-‘এই তুই কোথায় ছিলি?’
-‘ছাদে।’
-‘কী!! এই তোকে আমি মানা করেছিলাম না যে ছাদে না যেতে।’
-‘কেন যাব না? ছাদে গেলে সমস্যা কোথায়?’
খালামণি বললেন,
-‘আহ আপা! বকো না এখন। মেহজা তুই যা তো তোর রুমে। তোর মায়ের কথা ধরিস না।’
মেহজা চলে এলো নিজের রুমে। তার তো রুমেই আসতে হবে। এখন যে এক সমুদ্র কান্না আসবে সেগুলো কী সবাইকে দেখানো যায়? যায় না তো!
মেহজার মা বোনের উপর রে’গে গেলেন। মেয়েটাকে বারণ করার পরও ছাদে গেছে। সামনে বিয়ে,এখন যদি আবার বড় কিছু হয়ে যায়? মেহজার খালামণি বললেন,
-‘আপা শোনো! বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। ওর সাথের টাই ওরে এমন ঘোরায়। তুমি ওরে বিয়ের ব্যাপারে জানতে দিও না। দেখা গেল নিজের ক্ষ’তি করে বসবে। জানো না, ওর মধ্যে এখন আর ও নাই।’
মেহজার মা মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছেন। তার ভীষণ ভ’য় করছে। ছোটবেলায় তার এক সহপাঠীর সাথেও এমন ভ’য়াবহ ব্যাপার ঘটেছিল। তিনি উপলদ্ধি করতে পারছেন এমনটা যদি সত্যি হয় তবে মেয়েকে অনেক য’ন্ত্র’ণা ভোগ করতে হবে।
-‘আপা তুমি ছেলের বাড়ির কাউরে বলছ যে ওর এই সমস্যা নিয়ে।’
-‘না সেটা বলিনি।’
-‘ভালো করছ। একদম ভালো করছ। বলিও না। বললেই যত সমস্যা। দেখা গেল বিয়ে ভাঙবে পরে এমনিতেও তোমার মেয়ের বিয়ে দিতে ঝা’মেলা সৃষ্টি হবে। তার চেয়ে ভালো চুপ থাকো, বিয়েতে আমোদ প্রমোদ করো। শপিং করবা কবে? বিয়ের আর মাত্র চারদিন! আত্মীয়-স্বজন ডাকবা না? আসো লিস্ট বানাই।’
সারা বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই বোন মিলে লিস্ট তৈরি করল। মাহিমা বেগম বলে দিয়েছেন বিয়ে হবে কমিউনিটি সেন্টারে। বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে চাপ পড়ে বেশি। মেহজার মা আর বাবা তাতেই মত দিলেন। এদিকে চমক এই খবর শোনার পর রা’গে ফেঁ’টে পড়ছে। তার মা জানালেন তারা আসবেনা বিয়েতে। মেহজার মা আর জোর করলেন না। এমনিতেও তার ননদের ব্যবহারে সে আ’হ’ত হয়েছেন। এখন ভদ্রতা করে আত্মীয়ের খাতিরেই বলেছেন। তবুও তিনি ভালো ব্যবহার করেননি। মেহজার খালামণি বললেন,
-‘ভালো হইছে। না আসুক। এরা আসলে আরো বড় ঝামেলা হবে।’
রাতে রাদিফ আর মেহজার বাবা বাসায় ফিরলে তারা তাদের কার্ড ছাপানোর জন্য বলে দেন। তাছাড়া আরো যা যা ব্যবস্থা করতে হবে সব নিয়ে আলোচনা করেন। মেহজা সেই খবর আর পেলো না। তার সংবাদ প্রচারদাতা রাফসান যে বাড়িতে ছিল না তাই। সে গিয়েছে স্কুল থেকে পিকনিকে। আগামীকাল তার ফেরার কথা।
এদিকে কান্না কাটি করে মেহজা চোখ লা’ল করে মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। সবাই তার এমন অবস্থা দেখে আৎকে উঠলেন। ঠিক হলো রাতে মেহজার সাথে খালামণি ঘুমাবেন। এই কথা শুনে মেহজার এত বিরক্ত লাগছিল! মেহজার মা সারারাত স্বামীর পাশে বসে বিলাপ করতে থাকেন। মেয়ের এই সমস্যা দেখা না দিলে তিনি এই সময়ে বিয়েতে নামতেন না। তার ইচ্ছা ছিল মেয়ে অন্তত অনার্স কমপ্লিট করে বিয়ে করবে। এত জলদি বিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত তার মেয়ে হয়নি। তাই তো তিনি প্রথমবার ইরফানের বাসা থেকে আসা প্রস্তাব নাকোচ করেছিল। পরে যখন চমকের জন্য তাদের বললেন তারা তখনও বেশ আন্তরিক ভাবে বললেন,
-‘ভাবি আপনি আরেকটু ভাবেন। আপনার মেয়েটাকেই আমাদের চাই। আশাহত করবেন না।’
তারপর বাসায় ফিরে তিনি পুরো ব্যাপারটা চমকের মায়ের কাছে খুলে বললেই চমকের মা তেঁতে উঠেন। অবশ্য তার জায়গা থেকে রা’গ করা জায়েজ আছে।
৩৩.
রাতে খাবার খাওয়ার সময় ইরফানকে তার মা বিয়ের ব্যাপারে বললেন। ইরফান বুঝতে পারল মা কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলেছে। তাই সে বলল,
-‘মা সোজাসুজি কথা বললে ভালো হয়।’
মাহিমা বেগম নড়ে চড়ে বললেন,
-‘তোর বিয়ে ঠিক করেছি। সামনের শুক্রবার বিয়ে।’
ইরফান এমন আন্দাজ করেছিল তবে এত জলদি সেটা ভাবতেও পারেনি। তাই সে চমকে গিয়ে বলল,
-‘মানে কী!’
ইরা বলল,
-‘মানে হলো আমি চলে যাব সোমবার। তাই বিয়েটা এত জলদি আনা হচ্ছে।’
-‘কার সাথে বিয়ে ঠিক করেছ? মেয়ে কোথায় থাকে? আমি আসলে বুঝতে পারছিনা, আমি চিনি না জানি না। মেয়ে দেখিনি, তোমরা বিয়ে পাকা করে এসেছ। এসব কী!’
-‘মেয়ে না চেনার কী আছে? আমরা তো তোর চেনা মেয়ের সাথেই বিয়ে দিচ্ছি।’
-‘কোন চেনা মেয়ে?’
-‘মেহজা।’
ইরফান বোনের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,
-‘তোরা পা’গ’ল? ও আমার কত ছোট আইডিয়া আছে?’
-‘এই! তুই কত বড়? চটকনা চিনস?’
-‘আপা!’
-‘কীসের আপা! আম্মা একজন অসু’স্থ্য। ইকরা ও নাই এখন আর। তিনি একা একা কত করবেন? কাজ করার কথা বলছিনা। একা একা থাকতেও তো ভালো লাগেনা। বয়স হয়েছে কথা বলার মানুষ লাগে। তোরে দুই বছর যাবৎ বিয়ের জন্য বলি তুই না না করস। নিজের পছন্দ মতো খুঁজতে বলছি সেটাও করিস নাই। এখন আমাদের সবার মেয়ে পছন্দ হইছে আমরা বিয়ে দিব তোর। ব্যাস!’
মাহিমা বেগম একটু নরম হয়ে ছেলেকে বললেন,
-‘আব্বা! মেহজারে তোমার পছন্দ হয় না?’
এই প্রশ্নের জবাব কী দিবে সে বুঝতে পারছে না। সে অস্বীকার যেতে পারে না যে মেহজাকে সে পছন্দ করে। মেয়েটি নিঃসন্দেহে পছন্দ করার মতো। তার ভালোও লাগে। তবে মায়ের কথা শুনে তার ল’জ্জা লাগছে। মায়ের হাবভাব আর মেহজার ও যে তার প্রতি অনুভূতি আছে সে আগেই ধরতে পেরেছে। যখন থেকে সে এটা ধরতে পেরেছে সত্যি বলতে সে একবার হলেও মেহজাকে নিয়ে এমনটা ভেবেছে। তার মনে হলো যদি মেহজার আপত্তি না থাকে পরিবারের আপত্তি না থাকে তবে সে কেন আপত্তি করবে। মায়ের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে সে শুধু বলল,
-‘তোমাদের যা ইচ্ছা তোমরা করো।’
ইরফানের কথা শুনে মাহিমা বেগম স্বস্তি পেলেন। আর ইরা মুখে হাত চেপে হাসছে। সে জানে এই মেয়েকে তার ভাই পছন্দ করে। ওইরকম সিরিয়াস পছন্দ না হলেও খারাপ লাগেনা ভালো লাগে ধরনের পছন্দ করে। আর ভালোবাসা বিয়ের পর নয়তো হয়ে যাবে। তাড়াহুড়োর কিছু তো নেই।
রাতে ইমা, ইকরা, ইনায়া সবাইকে কল করে জানিয়ে দেওয়া হলো। ইমা ছাড়া সবাই ব্যাপারটাতে দারুন খুশি হলো। তবে ইমা যে খুশী নয় তেমনটাও না। সে আসলে ভাবছে মেহজার কী মত আছে কিনা! তাছাড়া মেয়েটা তার স্টুডেন্ট। ভাইয়ের বউ হবে এটা ভাবতে একটু অন্যরকম লাগছে। যা স্বাভাবিক।
পরদিন তিন বোন হাজির হলো। বিয়ের কার্ড ছাপানো, বিলি করা, নিজেদের জন্য টুকটাক শপিং, সবই তারা করল। সন্ধ্যায় মেহজাদের বাসায় ইনায়া আর ইরা গেল। মেহজা তাদের দেখে চমকে গেলেও তার পরিবারের বাকি সদস্য স্বাভাবিক। মেহজার মা তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত আর খালামণি তাদের সাথে আলোচনা করছে কী করবে না করবে। তারা মেহজাকে ডাকল বেশ কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করার পর। মেহজা এলেই ইনায়া মেহজাকে পাশে বসিয়ে আংটির মাপ নিল, তারপর তার পুরো শরীরের মাপ নিলো। মেহজা এতটাও অবুঝ নয়। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। সে বলল,
-‘আপু, মাপ নিচ্ছেন যে?’
ইনায়া হেসে বলল,
-‘মাপ না নিলে লেহেঙ্গা ঠিক ভাবে ফিট করবে কী! মাপ তো নিতেই হবে।’
মেহজা খালামণির দিকে তাকায়। তিনি ইশারায় চুপ থাকতে বলছেন। মেহজা কি করবে বুঝতে পারছেন না। মেহজার জুতোর মাপ নিয়ে তারপর দুই বোন বিদায় নিলো। খালামণিকে বলল আগামীকাল সকালে মেহজাকে তৈরি করে রাখতে। তারা কালকে শপিং এ যাবে। হাতে সময় নেই বললেই চলে। এর মধ্যেই সকল আয়োজন করতে হবে। খালামণি তাদের কথায় সায় দিলেন। তারা যাওয়ার পর মেহজা তার মা খালামণিকে প্রশ্ন করতে থাকে বারবার। এখন তো আর গোপন রাখা যায়না! তারা বলে দিল বিয়ের কথা। মেহজার ইরফানের কথা মনে পড়তেই এত রা’গ হলো। লোকটা তাকে কী অ’প’মা’নটাই না করেছে! সে তার দুই বান্ধবী অনা আর প্রথিকে কল করে জানালো। তারা দুইজন বলল,
-‘এটাই সুযোগ। বিয়ে করে নে। ওই লোক তোকে বিয়ের আগে একবার কী দুই বার অ’প’মান করেছে। তুই বিয়ে করে সারাজীবন করবি।’
মেহজা তাদের দুইজনকেও দাওয়াত দিল। এবং বলল তার সাথে কালকে যেতে। অনা বলল তার পক্ষে কাল সম্ভব নয় প্রথিও এখন নানাবাড়িতে। মেহজা যেন আরো অসহায় হয়ে পড়ল। তারা দুজন বলল বিয়ের আগে তারা ঠিকই সময় মতো চলে আসবে। টেনশন না নিতে।
পরদিন সকালে মেহজা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো। তার একটুও মন ছিল না যাওয়ার। খালামণি কী করলেন জোর করে তাকে সাজিয়ে দিলেন। সুন্দর একটা থ্রী পিস হাতে ধরিয়ে দিলেন। মেহজা চুপচাপ সেজে গুজে আয়নার সামনে বসে রইল। তার হঠাৎ করেই ল’জ্জা লাগছে। সে এখন এই মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে যেতে চায়। সে করবেনা বিয়ে। ইরফানের পেছনে ছুটোছুটি করার সেই স্মৃতি গুলো মনে পড়তে তার আরো বেশি ল’জ্জা লাগে। তার ইচ্ছে করছে সব ভুলে ঘুমিয়ে পড়তে।
৩৪.
ইনায়া আর ইকরা এলো মেহজাকে ডাকতে। মেহজা তাদের বলল,
-‘আপু আমার মাথা ব্যাথা করছে। আমি না যাই?’
-‘আচ্ছা সমস্যা নেই। আমাদের কাছে ঔষুধ আছে। সেই ঔষুধ এত বেশি কার্যকরী যে মাথা মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যাবে।’
মেহজা যখন নিচে নেমে দেখল ইরফান তার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইরা আর ইমা আরেকপাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। ইরফান এক ধ্যানে সামনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে ফরমাল ড্রেসেই ছিল। স্কাই ব্লু শার্টটা তার বলিষ্ঠ দেহে কী সুন্দর ভাবে মানিয়েছে! মেহজা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। তাকানো যাবেনা। ভুলেও তাকানো যাবেনা। ইনায়া বলল,
-‘ইয়াজ! তুই মেহজাকে তোর গাড়িতে নিয়ে যা। আমরা চারজন একসাথে অন্য গাড়িতে আসছি।’
ইরফান মেহজার দিকে একবার তাকালো। তারপর বোনের দিকে তাকিয়ে বলল-
-‘তোমরা আলাদা যাবে কেন? গাড়িতে দুইজন আসো।’
-‘না না। ওর তো মাথা ব্যথা করছে। আমরা থাকলে মানে বেশি মানুষ থাকলে মাথা ব্যথা বেশি করবে। আমরা আলাদা যাই। ওই তো ইকরার গাড়িতেই যাব। সমস্যা নেই।’
দুই বোন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে গেল। ইমা আর ইরাকে নিয়ে ইকরার গাড়িতে উঠে বসল। তারপর তারা খুব জলদি স্থান ত্যাগ করে। মেহজা হা হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রইল। এত বড় চ’ক্রা’ন্ত যে তার সাথে হবে সে ভাবতেই পারেনি। ইরফান মেহজার দিকে সরাসরি তাকালো। ইরফানকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহজা চোখ নামায়। ইরফানের এত হাসি পাচ্ছিল! সে কোনোমতে অন্যদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। মেহজাকে দেখতে সুন্দর লাগছে। আবারও তাকাতে ইচ্ছা করছে। তবে আর একবার তাকালে মেহজা তাকে বে’হা’য়া ভাবতে পারে। তাই সে আর সেভাবে তাকালো না। মেহজার জন্য দরজা খুলে দিলো সে। মেহজা উঠে বসলে সে মেহজার ওড়নাটা সুন্দর করে তুলে দেয়। মেহজা কেন যেন ভীষণ ল’জ্জা পাচ্ছে। ধুর!
রাস্তায় বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্যামে পড়তে হলো। মেহজা বাহিরেই তাকিয়ে আছে। আর ইরফান কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে মেহজাকে দেখছে। মেহজা তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। বুঝতে পারছে দেখেই তার কা’ন্না পারছে। কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি। একটুও ভালো লাগছেনা। ইরফানের তাকানো তাকে ল’জ্জায় ফেলতে ফেলতে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে রীতিমত। তার বারবার মনে মনে একটাই প্রার্থনা জাগছে এটা স্বপ্ন হোক! স্বপ্ন হোক! ঘুম ভাঙলেই যেন এই ল’জ্জা থেকে রেহাই মিলে। কিন্তু এটা স্বপ্ন নয়, এটা বাস্তব। ইরফান মেহজার মন পড়তে পারছে। পারছে দেখেই তার ইচ্ছে করছে একটু জ্বা’লা’তন করতে। এই কয়দিন মেহজা তো তাকে কম জ্বা’লা’য়’নি। আজ সে একটু করুক। তার খুবই মজা লাগছে। এত দিন নিশ্চয়ই মেহজাও এমন মজা পেতো! ইরফান পণ করে বসল এখন থেকে এই মজা কেবল সে করবে। এই পৈ’শা’চি’ক আনন্দটা তার বেশ লাগছে। সে গাড়িতে একটা গান ছাড়ল।
I wanna be your vacuum cleaner
Breathing in your dust
I wanna be your Ford Cortina
I won’t ever rust
If you like your coffee hot
Let me be your coffee pot
You call the shots babe
I just wanna be yours
Secrets I have held in my heart
Are harder to hide than I thought
Maybe I just wanna be yours
I wanna be yours, I wanna be yours
Wanna be yours, wanna be yours, wanna be yours
মেহজা গানের প্রতিটা অর্থ বুঝতে পারছে। গানটি খুবই ধীর গতিতে হওয়াতে যেন এমনটা হচ্ছে। সুরটাও কেমন টানছে। ইরফান এমন একটা গান কেন ছাড়তে গেল এখন? গাড়ি চলছে সাথে এই রোমান্টিক গানটা বাজছে। দুইজন মানব-মানবী বসে আছে সেই গাড়িতে। একজনের মনে অন্যজনকে জ্বা’লা’তে পেরে আনন্দ হচ্ছে অন্যজনের সেই জ্বা’লা’য় ম’রে যাওয়ার মতো ক’ষ্ট হচ্ছে।
গাড়ি যখন শপিং মলের সামনে গিয়ে থামে তখন ইরফান সবচেয়ে অবাক করা কান্ডটা ঘটালো। সে মেহজার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
-‘মেহজা তোমার ওয়েস্ট সাইজ কত?’
মেহজা এই কথা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকল ইরফানের দিকে। ইরফান এবার সরে এসে বলল,
-‘আমি আসলে একটা নাইটি নিব তোমার জন্য! আচ্ছা থাক, সাইজটা তোমার বলতে হবে না। আমি আন্দাজ করতে পারব। তুমি বলো তোমার প্রিয় রঙ কী!’
মেহজার বুক ধকধক করছে। সে যেকোনো মুহূর্তে ল’জ্জায় ম’রে যাবে। ইরফান মেহজাকে তারপরও চুপ থাকতে দেখে মুঁচকি হেসে বলল,
-‘আচ্ছা থাক, আমার পছন্দের রঙেই না হয় কিনব। আমি জাস্ট ইমাজিন করছি কে…
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই মেহজা ইরফানের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো। তারপর রা’গী স্বরে বলল,
-‘একদম চুপ! আর কিছু ইমাজিন করলে আমার থেকে খা’রা’প কেউ হবে না বলে দিলাম।’
সে গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু লক করা। ইরফান তার একটা হাত ধরে একটু কাছে টেনে বলল,
-‘আচ্ছা, আর ইমাজিন করব না। যা হবে সব সত্যি সত্যিই হবে। একদম রিয়েলিটিতে।’
তারপর লকটা খুলে দিল। মেহজা চট করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। ইরফান তা দেখে হেসে ফেলল। তার মনে হলো বেশ ভালো জব্দ করা গেছে। এখন থেকে এভাবেই সব করতে হবে।
#চলবে।