বসন্ত কন্যা পর্ব-২৫+২৬

0
405

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৫
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

পড়ার টেবিলে বসে আছে ফয়সাল। রাত জেগে পড়ার অভ্যাস তার। কিন্তু এই কয়দিন পড়ায়ও মন বসছে না ঠিকভাবে। বসবে কিভাবে, মনটা যে মোটেও ভালো নেই তার। হঠাৎ খেয়াল করলো ওর দরজার ওপাশে একটা ছায়ামূর্তি ঘুরঘুর করছে।

ফয়সাল মৃদু স্বরে বলল – কে ওখানে?

প্রথমবার ডাকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো – কে ওখানে?

ফারিয়া গুটি গুটি পায়ে ফয়সালের সামনে এসে দাঁড়ালো। ফয়সালের দরজাটা খোলাই ছিল, লক করেনি শুধু চাপিয়ে রেখেছিল।

ফয়সাল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো – তুই এখানে ,এত রাতে? কিছু বলবি?

ফারিয়া অস্ফুট স্বরে জবাব দিল – হুম।

– কি বলবি?

ফারিয়া আমতা আমতা করে বলল – সেদিন তোমাকে ঐ চিঠিটা নিশা আপু লিখেনি, আমি লিখেছিলাম।

ফয়সাল ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল – জানি আমি।

ফারিয়া বেশ অবাক হলো, জিজ্ঞেস করলো – তবে যে নিশা আপুকে তুমি ভীষণ অপমান করলে, আর আমাকে কিছুই বললে না।

ফয়সাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল – এটাই তো ভুল আমার। তখন টাকায় আর রাগে আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। তুই এখান থেকে যা, এত রাতে তোকে কেউ আমার রুমে দেখলে খারাপ মনে করবে।

– আমায় কেন ভালোবাসো না ফয়সাল ভাই?

মুচকি হাসি দিল ফয়সাল, উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল – ভালোবাসা? কি বুঝিস তুই ভালোবাসার? বয়স কত তোর? এই বয়সে তোর ভিতরে আমাকে নিয়ে যেটা চলছে ওটা ভালোবাসা না শুধুই মোহ। সময়ের সাথে সাথে যেটা কেটে যাবে।

– আর যদি না কাটে তবে কি তুমি আমায় ভালোবাসবে ফয়সাল ভাই?

– এইটুকু বয়সে তোর মাথায় এসব চিন্তা আসে কোথা থেকে ফারু? কেবল এসএসসি দিয়েছিস। তোর না স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া, মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা কর।

– তুমিই যদি আমার না থাকো ফয়সাল ভাই তাহলে আমি ডাক্তার হয়ে কি করবো বলতে পারো? আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও যে তোমারই জন্য।

– স্বপ্ন কখনও অন্য কারো জন্য দেখতে হয়না ফারু, স্বপ্ন দেখতে হয় নিজের জন্য।

– কিন্তু আমার গোটা স্বপ্নজুড়েই যে তুমি।

– এসব কেমন কথা ফারু, বয়স দেখেছিস তোর আর আমার। তুই পুচকি আর আমি কত বড়।

তেতে উঠল ফারিয়া, রাগী কন্ঠে বলল – একদম পুচকি বলবে না। শুনেছি নিশা আপু আর তার হাজবেন্ডের বয়সের ডিফারেন্স ১০ বছর সেখানে তোমার আর আমার বয়সের ডিফারেন্স মাত্র ৬ থেকে ৭ বছর।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফয়সাল, এই মেয়েকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। মেয়েটা বড্ড একগুঁয়ে। গম্ভীর কন্ঠে বলল – এখান থেকে যা এখন ,না হয় তোর গালে দুই একটা চড় থাপ্পর বসিয়ে দিলে আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবি।

ফারিয়া মুখ বাঁকালো, বলল – না আমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদি আর না আমি তোমার চড় থাপ্পরকে ভয় পাই।

ফয়সাল দাঁতে দাঁত চেপে বলল – যাবি তুই এখান থেকে?

– যাচ্ছি বাবা, কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই এখন যেহেতু নিশা আপু নেই আমি কিন্তু তোমার পিছু ছাড়ছি না।

ফয়সাল কিছু বলবে তার আগেই দৌড়ে পালালো ফারিয়া। ফয়সাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো।

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল – দুনিয়াটা বড্ড অদ্ভুত তাই না? আমি যাকে চাই সে আমায় চায় না, আর যে আমায় চায় তাকে আমি চাই না।

________________________

সকাল সকাল উঠেই দৌড়াদৌড়ি শুরু নিশার। বিয়ের বাকি আর মাত্র কয়টা দিন এখনও আবসারের এই অত্যাচার। বিয়ের পর কি করবে আল্লাহ মালুম। নিশা এখন নিজের উপর নিজেরই বেশ বিরক্ত , দুনিয়ায় এত ছেলে থাকতে এই ভয়ংকর মানুষটাকেই কেন তার ভালোবাসতে হলো, সেদিন যদি বিয়ের সময় বিয়ে করবে না বলে একটু ঝামেলা করতো তাহলেই হয়তো আজ এই ডায়াবেটিস রোগীর মতো সকাল সকাল দৌড়া দৌড়ি থেকে রক্ষা পেত। পার্কে যত মানুষ রোজ সকালে দৌড়াতে আসে তাদের অধিকাংশই ডায়াবেটিস রোগী। নিশার নিজেকেও এই মুহূর্তে ডায়াবেটিস রোগীই মনে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে আফসোসের বিষয় হলো এই আবসার নামক ভয়ংকর প্রানীর হাত থেকে আয়ানের বউ মিষ্টি সেও রেহাই পায়নি। সেও সকাল সকাল কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। নাহ এভাবে আর পারা যায় না। এবার এর একটা প্রতিবাদ করা অবশ্যই প্রয়োজন। খাওয়ার টেবিলে শুধু মনে থাকে নিশা রোগা পটকা দূর্বল তখন ঠেসে ঠুসে খাওয়ানো হয়, আর দৌড়াদৌড়ির সময় মনে হয় নিশা বেশ সবল, এই সময় নিশা দূর্বল ওকে দৌড়াদৌড়ি করিয়ে লাভ নেই বলে ছেড়ে দেওয়া হয় না। নাহ এর একটা বিহিত করা দরকার ‌।

নিশা দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে কাকতাড়ুয়ার মতো আবসারের পথ আটকে দাঁড়ালো। আবসার ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – কি সমস্যা?

– সমস্যা তো অনেক এখানে বলা যাবে না একটু আড়ালে আসুন।

আবসার দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল – বাহ আমার বউ দেখি বেশ রোমান্টিক হয়ে গেছে, এখন যখন তখন আড়ালে আবডালে ডাকছে‌।

– দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না‌। ঐ পাশটায় আসুন বলে ধপধপ পা ফেলে নিশা চলে গেল।

আবসারও নিশার পিছু পিছু গিয়ে নিশার পাশে দাঁড়ালো।

– কি বলবে বলো।

নিশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – প্রতিদিন এইভাবে ডায়াবেটিস রোগীর মতো দৌড়াদৌড়ি, এগুলো কি ধরনের অত্যাচার?

– ক্যাপ্টেনের বউ হলে এমন একটু আধটু অত্যাচার তো সইতেই হবে বউ।

– এই এর জন্যই আমি এই বিয়েটা করবো না বলেছিলাম কিন্তু কি হলো ? পোড়া কপাল আমার ( এক হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে )

– এখন তো আর কিছু করার নেই বউ , বিয়েটা যখন একবার করে নিয়েছো তখন তোমার বরের সব অত্যাচার যে মুখ বুজে সহ্য করে নিতে হবে।

– পারবো না আমি ,রোজ সকাল সকাল এত অত্যাচার আর ভালো লাগে না। এত দিন তো তাও একটু ভালো ছিলাম এখন তো আবার পার্লামেন্টভাবে এই বাড়িতে থাকতে হবে, তাও আপনার মতো একজন ভয়ংকর মানুষের সাথে।

আবসার আর একটু এগিয়ে গেল , নিশার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মুখটা নিশার কানের কাছে নিল। তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলল – আর তো কিছু দিন, তুমি একবার আমার রুমে শিফট হলে আর এই অত্যাচার করবো না। তখন তো রাত দিন ২৪ ঘন্টা শুধু তোমাকে আদর করতে ব্যস্ত থাকবো এইসব দৌড়াদৌড়ির আর সময় কোথায় জান।

নিশা বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকালো। আবসার ভাবলেশহীন ভাবে দৌড়াতে চলে গেল। নিশা এখনও ভ্যাবলার মতো আবসারের দিকেই তাকিয়ে আছে।

________________________

জগিং শেষে সবাই বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হতে চলে গেল। যাওয়ার আগে আবসার আবিদা বেগমকে বলে গেল – মা আমার জন্য এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও।

আবিদা বেগম গতকালের মতো আবার নিশাকে দিয়েই কফিটা পাঠালো । ঐ বজ্জাত লোকের রুমে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে না থাকলেও নিশাকে যেতেই হলো। দরজাটা চাপানো ছিল। নিশা চুপচাপ গিয়ে কফির মগটা টেবিলে রেখে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই দরজাটা আটকে দিল আবসার। কেবলই ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়েছিল আবসার। চোখে মুখে পানির ছিটা। চোখের ঘন কালো পাপড়ির উপর শিশির বিন্দুর মতো ফোটা ফোটা পানি। নিশা এক দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন ঘোর লেগে গেছে ওর। হঠাৎ আবসারের দুষ্ট কথায় ঘোর কাটলো নিশার।

আবসার বলল – বাসরটা কি এখন চোখ দিয়ে আমাকে দেখে দেখেই সেড়ে ফেলবে বউ?

থতমত খেয়ে গেল নিশা। লজ্জায় গাল দুটো রক্তিম বর্ন ধারন করলো। ইসসসস এই লোকটাও না বড্ড ঠোঁট কাটা। এই ভাবে কেউ লজ্জা দেয় নাকি?

– হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না এখন কাছে এসো।

আবসারের কথায় প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো নিশা। নিশার এমন দৃষ্টিতে হেসে ফেলল আবসার। একদম ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসি তবে এই হাসির কোনো শব্দ নেই , কি সুন্দর সেই হাসি। নিশা আবার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে।

চলবে….

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৬
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আবসারের গায়ের রংটা নিশার থেকে হালকা একটু চাপা। নিশা তো শ্যামবর্না তাহলে এই পুরুষটি কি কালো? নাহ কালোর মধ্যেও তো পড়ে না, তাহলে এই পুরুষটির গায়ের রংটাকে ঠিক কোন বর্নের মধ্যে ফেলা যায় ভেবে পাচ্ছে না নিশা। তবে এই হালকা শ্যাম কৃষ্ণ মিশ্রিত পুরুষটিকে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ মনে হচ্ছে নিশার কাছে। নিশা আবার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে।

আবসার বলল – দেখো আমার কিন্তু এভাবে চোখে চোখে বাসর সারলে চলবে না সরাসরি বাসর করতে হবে।

আবার থতমত খেয়ে গেল নিশা। এই লোকের সামনে আর থাকা যাবে না তাহলে মিনিটে মিনিটে লজ্জায় পড়তে হবে। রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতেই আবসার নিশার হাতটা ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে নিল।

– যেতে বলেছি তোমাকে?

– থাকতেও তো বলেননি।

– কাছে আসতে তো বলেছি।

– যাবো না আমি আপনার কাছে।

– কেন আসবে না?

– কেন আসবো?

– এখন আর ভয় পাও না আমাকে?

– না

– কেন?

– আগে আপনি আমার বান্ধবীর ভাই ছিলেন আর এখন আমার বর। আর বরকে ভয় পেতে হয় না ভালোবাসতে হয় বলেই দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটলো নিশা। আবার সে বেফাঁস মন্তব্য করেছে। এবার নির্ঘাত ফেঁসে যাবে। এমনি লোকটা যে পরিমানে লুচু। নিশা আড় চোখে আবসারের দিকে তাকালো আবসারের ঠোঁটে ঝুলছে দুষ্ট হাসি।

আবসার বলল – কি বললে আবার বলো।

নিশা আমতা আমতা করে বলল – কই কিছু না তো।

আবসার বলল – একদম ঠিক বলেছো বরকে ভালোবাসতে হয় কিন্তু তুমি তো আমায় মোটেও ভালোবাসো না শুধু দূরে দূরে থাকো বলে নিশাকে আরেকটু টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল আবসার। নিশার সাথের মধ্যকার দূরত্বটা ঘুচিয়ে নিল। নিশা থমকালো , চমকালো। আবসার আলতোভাবে নিশাকে জড়িয়ে ধরলো। কেঁপে উঠলো নিশা।

– এই সামান্য স্পর্শে যদি এত কাঁপাকাঁপি করো তাহলে একটু গভীরভাবে ছুঁয়ে দিলে কি করবে তুমি?

নিশা লজ্জায় আবসারের বুকে মুখ লুকালো। লোকটার মুখে কিছু আটকায় না ‌।

– আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছো বসন্ত কন্যা?

নিশা অবাক চোখে আবসারের মুখের দিকে তাকালো। আবসার ঠোঁট কামড়ে নিশার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।

– কিছু শুনতে পাচ্ছো তুমি? আমার প্রতিটি স্পন্দন শুধু তোমাকেই চাইছে বসন্ত কন্যা। আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন শুধু তোমারই নামে বউ।

এক টুকরো প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল নিশার মনে। একটা শীতল রক্তস্রোত বয়ে গেল নিশার শিড়দাড়া বেয়ে।
দুই হাত বাড়িয়ে নিজেও আবসারকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। আবসারের ঠোঁটে ফুটে উঠল প্রশান্তির হাসি।

_________________________

ফয়সাল রুমেই ছিল রেডি হচ্ছে একটু পর মেডিকেলের উদ্দেশ্য বের হবে। ফারিয়া এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে। ফয়সাল আড় চোখে একবার দেখে নিল ফারিয়াকে। হাতঘড়িটা পড়তে পড়তে প্রশ্ন করলো – ওখানে ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কিছু বলার থাকলে দ্রুত বলে বিদায় হ।

– তাড়িয়ে দিচ্ছো ফয়সাল ভাই, দেও দেও এখন তো তোমারই সময় বলে ফয়সালের রুমে ঢুকে পড়লো।

ফয়সাল ভ্রু কুঁচকে ফারিয়ার দিকে তাকালো, বলল – ফাইজলামি না করে কি বলতে এসেছিস বলে সামনে থেকে দূর হ।

ফারিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো – এমনি এমনি আসিনি কাজেই এসেছি।

ফয়সাল ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো – তোর আবার কি কাজ?

ফারিয়া বই খাতা মেলে ফয়সালের সামনে ধরলো , বলল – এই অংকটা বুঝিয়ে দেও অনেকক্ষন চেষ্টা করলাম পারছি না কিছুতেই।

অংকের কথা শুনে ফয়সাল আর কিছু বলল না। নিজেও টেবিলে বসে ফারিয়াকেও বসতে বলল। ফারিয়া খুশি মনে ফয়সালের পাশের চেয়ারটা নিয়ে বসে পড়লো। ফয়সাল হাত ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে অংক বোঝাচ্ছে আর ফারিয়া এক দৃষ্টিতে ফয়সালের দিকে তাকিয়ে আছে। এই অংক বোঝা তো বাহানা মাত্র ও তো মন ভরে ফয়সালকে একটু দেখতে এসেছে।

ফারিয়া ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো – এত সুন্দর কেন তুমি ফয়সাল ভাই?

ফয়সাল বিরক্ত হলো, ভ্রু কুঁচকালো, ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে জোরে এক ধমক দিল।

দাঁতে দাঁত চেপে বলল – ফারুর বাচ্চা

– এসব কি কথা ফয়সাল ভাই, আমি ফারিয়া আমার তো এখনও কোনো বাচ্চা হয়নি। তবে তুমি চাইলে হবে তোমার আর আমার বিয়ের পর।

ফয়সালের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এইটুকু মেয়ের মুখে এইসব কি ধরনের কথা। মুখ দেখেও মনে হচ্ছে না কোনো লজ্জার আভাস আছে। মেয়েটা লাজ লজ্জা কি সব গুলিয়ে খেয়ে ফেললো। এই মেয়ে তো নিজেই বাচ্চা সবে এসএসসি দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে এর মধ্যে সে নিজের বাচ্চার কথাও চিন্তা করছে? ফয়সাল হতবম্ব, নাহ এই মেয়ের সামনে এই মুহূর্তে থাকা যাবে না থাকলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবে। ফয়সাল উঠে দাঁড়ালো, দ্রুত পায়ে বাড়ি ত্যাগ করলো। আর যাওয়ার আগে ফারজানা বেগমকে বলে গেল ” মা আমি কলেজে যাচ্ছি। ”

____________________________

বিকেলে বাড়ির সবাই মিলে গেল শপিং করতে। তিন তিনটা বিয়ের কেনাকাটা চারটি খানে কথা নাকি। রিশাও এসেছে, শপিং এর কথা শুনেই তো নিশা ভয় পেয়েছিল আবসার না আবার গিয়ে বিয়ের জন্যও ঐ ল্যাহেঙ্গা, শাড়ি বাদ দিয়ে ফর্মাল ড্রেস খোঁজে, উনার তো আবার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। নাহ নিশার চিন্তা ভাবনাকে মিথ্যা প্রমান করে ল্যাহেঙ্গা আর শাড়িই কিনেছে আবসার। নিশা, আয়না আর কাজল একই জিজাইনের একই কালারের ল্যাহেঙ্গা কিনেছে। আর আবসার, ইয়াসিন আর শাহরিয়ার একই রকমের, একই কালারের শেরওয়ানি কিনেছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আবসার এসে নিশাকে হাত ধরে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে গেল।

– আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ওরা সবাই তো ওখানে।

আবসার কোনো কথার উত্তর দিলো না। টেনে এনে একটা চেয়ারে বসিয়ে নিশার পায়ের কাছে বসে পড়লো। পায়ে হাত দিতেই নিশা লাফিয়ে উঠলো।

– একি করছেন পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?

আবসার গম্ভীর কন্ঠে শুধালো – চুপচাপ বসো আমাকে আমার কাজ করতে দেও।

নিশা বলল – পায়ে হাত দিবেন না প্লিজ। পাপ লাগবে আমার।

আবসার ধমকে উঠলো নিশাকে, বলল – চুপ করে বসতে বলেছি না এত কথা বলছো কেন?

চুপসে গেল নিশা। আবসারের মুখের উপর আর কিছু বলার সাহস হলো না। আবসার নিশার পায়ের জুতা জোড়া খুলে ডাস্টবিনে ফেলে হনহন করে কোথাও একটা চলে গেল। আর যাওয়ার আগে নিশাকে কড়া গলায় বলে গেছে – এখান থেকে এক পাও এগোবে না। যেভাবে বসিয়ে রেখে গেছি এসে যেন সেভাবেই পাই। না হয় পা দুটো কেটে ঐ চার রাস্তার মোড়ে ভিক্ষা করতে বসিয়ে দেব।

নিশার আর নড়াচড়ার সাহস হলো না। সে সটান হয়ে ঐ একই জায়গায়ই বসে আছে। মিনিট দশেক পর এক জোড়া স্লিপার এনে পরম যত্মে নিশার পায়ে পড়িয়ে দিল। শান্ত কন্ঠে বলল – যেগুলো পড়ে তোমার কষ্ট হবে সেগুলো তুমি পড়ো কেন? ফের যেন এমনটা আর না দেখি।

নিশা চুপচাপ বসে আছে। বাসা থেকে আসার সময় একটু হিল পড়ে এসেছিল। এমনি ওর হিল পড়ার অভ্যাস নেই তবে আবসারের সাথে লম্বার একটু সামঞ্জস্যতা রাখার জন্যই হিল পড়ে এসেছিল। হাঁটতে যদিও একটু কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কাউকে তো বুঝতে দেয়নি। সবার সাথে যথেষ্ট স্বাভাবিকভাবেই হেঁটেছে তাহলে আবসারের চোখে পড়লো কিভাবে ভেবে পাচ্ছে না নিশা।

শপিং শেষে প্রায় রাত ১০ টায় বাড়ি ফিরেছে সবাই। আজ আর নিশাকে রাতে ছাদে ডাকেনি, খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে বলেছে। সারাদিন শপিং করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে মেয়েটা। শপিং মলে নিশার মলিন, ঘর্মাক্ত মুখটা দেখে বড্ড মায়া লেগেছিল আবসারের। ইচ্ছে করছিলো তখনই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসতে কিন্তু পারেনি।

চলবে….