#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৫)
সম্পর্কের সুতো গুলো কেমন যেনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। লাবিবার প্রতি তানভীরের মোহ কাজ করে। টান কাজ করে। এটুকু লাবিবা নিশ্চিত। চোখের সামনে যে কোন সুন্দরী মেয়ে থাকলে যদি সে হয় স্ত্রী ! তাহলে তো আকর্ষণ কাজ করবেই। লাবিবার সব সময় মনে হতো তার প্রতি তানভীরের কোনো আকর্ষণ নেই । যদি বিন্দুমাত্র থাকতো এখনো লাবিবা আনটাচড থাকতো না। একটা বিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে পড়েই তানভীর লাবিবাকে বিয়ে করেছে। আর তাকে কনভিন্স করেছে ইসসমাইল লাবিবার ধারণা। সেজন্যই তো আব্বুর সাথে মনোমালিন্য তার। হুট করেই তো একটা লোক আনমেরিড দেখে তার কাছে মেয়েকে গছিয়ে দিবেনা যদি না তার আগে থেকেই সেই টার্গেট করা থাকে। লাবিবার মনে হয় তার আব্বু খুবই সহজ সরল। কিন্তু মাঝে মাঝে তাকে অত্যন্ত ধূর্তবাজ কেউ মনে হয় আর সেগুলো লাবিবার বিষয়েই। একটা লোক যে লাবিবাকে তেমন দৃষ্টিতে দেখেই না। ভালোই বাসে না কিন্তু দায়িত্ববান বড়লোক। তা দেখেই বিয়েটা দিয়ে দিলো। আর মানুষটাও কি সুন্দর নিজের সমস্ত দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করে যাচ্ছে। ভালোবাসাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। লাবিবার বিশ্বাস ধীরে ধীরে সে তানভীরের হৃদয়ে দখল নিবে। তার দৃষ্টি নিজের করে নিতে সে সক্ষম। আজকের ঘটনায় লাবিবা তানভীর খানকে নতুন ভাবে চিনেছে। পুরুষ জাতির উপরে সমাজে একটা সত্য রটনা আছে। পুরুষ মানুষ বড়ই অধৈর্য্য। কিন্তু সবক্ষেত্রেই হাতের পাঁচ আঙুল যে সমান নয় এটাও সত্য। তানভীর মানুষটাই যেনো আলাদা। সংযতপূর্ণ ! কোনো পুরুষ ই এভাবে বউকে ফেলে চলে যেতে পারতো না। সে পেরেছে। খুব সুন্দর ভাবে সামলে নিয়েছে। কিন্তু লাবিবাই নুইয়ে পড়েছে। লাবিবার যত সাহস, শক্তি, জেদ, উদ্যোম এইটুকুন ছোঁয়াতে ই নিঃশেষ! তাহলে তানভীর যখন লাবিবাকে তাকে ভালোবেসে পুরোটাই দখলদারিত্ব করবে তখন কি লাবিবার চিহ্ন টুকু পাওয়া যাবে? চেনা যাবে তাকে? কেউ জানবে? লাবিবা নামের একটা মেয়ে ছিলো, জম্ম হয়েছিলো তার ইসমাইলের ঘরে!
নানান চিন্তায় লাবিবার সময় চলে যায়। নতুন নতুন প্রেমে পড়লে যা হয়! দিন দুনিয়া খেয়াল থাকে না। খাবার খায় না। সাবিনা বকা বকি করলে আলু ফ্রাই হাতে নিয়ে বলে,
‘ জামাই আদর করে না। খাবারে স্বোয়াদ পাই না।’
পড়তে বসে না মোটেও। ঘুর ঘুর করে বেড়ায়। বকাবকি করতে করতে যাও বই নিয়ে বসায়, বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ এতো পড়ে কি হবে? জামাই তো ভালোবাসে না। ‘
কলেজে যেতে বললে বলে,
‘ কলেজে গিয়ে কি হবে? জামাই তো ক্লাস নিবে না। ‘
একঘেয়েমি তা দেখে পার্কে গিয়ে হেটে আসতে বলে,
‘ পার্কে গিয়ে কি হবে? জামাই তো প্রেম করতে চায়না । ‘
সাবিনার হয়েছে যত জ্বালা। মেয়ের মুখের বেড়িবাঁধ নেই। কখন কি বলে! মাঝে মাঝে দু একটা উত্তর করলেও এমন এমন সময় নিজেই লজ্জা পেয়ে মেয়েকে গালা গালি করে বসে। এদিকে জামাইটাও আসছে না। ঝগড়া হলো নাকি? মেয়েটা এসব বলে কেনো? মায়ের মন ভয় পায়। ইসমাইল কে বললে ইসমাইল শান্তনা দেয়। উল্টো বুঝায়, ‘ তুমি তো বাপের বাড়ি গেলে আসতেই চায়তে না। মাস দেড় দুয়েক না থেকে পা রাখতে না।আমি কি গিয়ে পড়ে থেকেছি? লজ্জায় এক দুদিনের বেশি থাকতেই পারিনি। জামাই আমাদের নতুন।লজ্জা পাবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আকাশ পাতাল চিন্তা করোনা। মেয়ে আমার যোগ্য ছেলের হাতেই গিয়েছে। ওরা ভালোই থাকবে। ‘
সাবিনা চিন্তা দূর করে।
ফাহাদটা আজকাল বেশ জ্বালাচ্ছে। লাবিবা বিয়ের পর পরই সিম পাল্টে নিয়েছে। নতুন নাম্বার টা কিভাবে যেনো ফাহাদের হাতে চলে গিয়েছে। এখন বেশ জ্বালাচ্ছে। তানভীর কে নিয়ে তার যতযত খারাপ কথা!লাবিবা এসব কথা কানেও তুলে না। প্রতিপক্ষ যখন ক্ষেপে যায় তখন সত্যের চেয়ে মিথ্যার রেশ ই বেশী আসে। মন্দ কথায় কানে নিতে নেই। লাবিবা জানে তানভীর খান কি। তার প্রতি দিন দিন শ্রদ্ধাবোধ টা বেড়েই যাচ্ছে। লাবিবার সুবিধার্থে যে এ বাড়িতে আসছে না সেটাও জানে। কিন্তু যোগাযোগ ঠিকই রেখেছে। প্রতিদিন রাতে ফোন করে খোঁজ নেয় লাবিবা কি করছে ? কি খবর! বেশ খানেক সময় করে কথা হয় তাদের। হৃদয়ে এক বুক প্রেম জমিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় প্রতি রাতে। আগে কিছু অনুভব না করলেও এখন করে। হাতে গুনা তিন চারদিন ভাগ্যে জুটেছে তানভীরের বুকে ঘুমাতে। সেই সময় টুকু আর এই দূরত্বের সময়টুকুর মাঝে প্রচুর ফারাক। লাবিবা প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে দোয়া করে যেনো তানভীর লাবিবাকে ভালোবাসে। ভোরের দোয়া কবুল হয়। লাবিবার এই যে অসহায়ত্ব, মন খারাপের সময়, ছটফটানো সব কিছুর শোধ তখন তুলবে। কাউকে ভালোবেসে যখন তাকে হাতের কাছে রেখেও না পাওয়া যায় তখন ঠিক কেমন লাগে লাবিবা তখন হারে হারে তানভীরকে বুঝাবে। লাবিবার জীবনে ভালোবাসাটা এসেছে পবিত্রতার মাধ্যমে। সে কোন পরপুরুষ কে ভালোবাসেনি। স্বামীকে ভালোবেসেছে। তিন কবুলের জোরেই ভালোবেসেছে। এই ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। লাবিবা চায় তানভীর ও তাকে ভালোবাসুক। লাবিবা নামক মানুষটাকে ভালোবাসুক।
লাবিবা ছোট্ট থেকেই গুলুমুলু। স্বাস্থ্যবতী। এই স্বাস্থ্য টুকুর জন্যই তাকে বেশ আদুরে লাগে। কিউটনেস ও বেড়ে গেছে তিনগুণ। উজ্জ্বল শ্যামা রংটায় তাকে বেশ মানিয়েছে। সব সময় গাউন পড়ে থাকায় তাকে পুতুলের মতো দেখায়। শত শত মেয়ের মাঝে তার এই অসামান্য সৌন্দর্য তাকে নির্ধিধায় আলাদা করে দেয়। প্রেমে পড়ার পর থেকেই তার মাঝে নিজেকে নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিজেকে আয়নায় দেখে কিছুতেই সেটিসফাইড হতে পারে না। যেখানে তানভীর টল ফিগার, সুন্দর ফেস কাটিং,সিল্কি চুল, পেটানো শরীর, ফর্সা গৌঢ় বর্ণের অধিকারী সেখানে তার ধারণা সে এই চেহারায় কোনো দিক থেকেই তানভীরের সাথে যায়না। যদিও সে জানে সৌন্দর্য মোহর সৃষ্টি করে সম্পর্ক মজবুত করার খুঁটি না। তবুও মনকে বোঝাতে পারে না। সপ্তাহে তিন দিন কলেজ শেষে প্রাইভেট পড়ে আসার আগে ঘন্টা দেড়েক করে জিমে ঘাম ঝড়িয়ে আসে। ইসমাইল ই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যদিও লাবিবা নিজে গিয়ে বলেনি। সাবিনার মাধ্যমে বলেছে। ইসমাইল বেশ খুশিই হয়েছে। আলসে মেয়েটা একটু ক্যালরি ক্ষয় করে আসুক। রোজগার তো কম ক্যালরি গিলছে না! যত ক্যালরি পূর্ণ খাবার তার ম্যানুতে থাকে। এসব খাবার খেয়ে জিম করলে স্বাস্থ্য মোটেই কমবে না। বরং শরীর সুস্থ থাকবে। এই ব্যাপারে ইসমাইল খুশি। তিনি মোটেও চাননা তার মেয়ের স্বাস্থ্য কমুক। স্বাস্থ্য কমার আগে মুখটাই শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। এতে মোটেও ভালো লাগেনা। বরং এই স্বাস্থেই মেয়েটা সুন্দর। কিন্তু লাবিবা বুঝলেতো। গুগুল করে কিসব কিসব ডায়েট চার্ট তৈরি করেছে। সেসব আবার সাবিনাকে বানিয়ে দিতে হয়। যেভাবে বানায় ঠিক সেভাবেই বাটিতে পড়ে থাকে। পেটুক লাবিবা পচা টেস্টের সেসব খাবার মুখে দিয়ে গিলতে পারলে তো! ছেহ! এসব কিভাবে খায়! ইসপগুলের ভুসি! পেটা পেটা! দেখেই বমি চলে আসে। দু একবার বমিও করে। তবুও প্রতিদিন তার চাই চাই টেবিলে। গরম জলে লেবুর রস! কোনো ভাবে গিলতে পারলেও সারাদিন তুত গ্যাস উঠে, এসিডিটি হয়। তবুও আপ্রাণ চেষ্টায় আছে। কিভাবে হিরোইন রা জিরো ফিগার বানিয়েছে সেসব দেখে দেখে চিন্তায় ঘুম হারাম করে দিয়েছে। হিরোর মতো জামাই তার ! নিজেকে তো হিরোইন বানাতেই হবে।
এক্সামের রুটিন দিয়ে দিয়েছে। লাবিবার পড়াশোনা কতদূর তা দেখতে তানভীর আজ শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। বড্ড অসময়! বেলা এগারোটার দিকে। লাবিবা কলেজে নেই যেহেতু সেহেতু বাড়িতেই আছে। কিন্তু পথিমধ্যে এমন কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি। ফাহাদের ফ্যামিলির চেপ্টার তো সে কবেই ক্লোজ করে এসেছে। এখন কিভাবে ফাহাদ লাবিবার সাথে? তাও এমন একটা নিরিবিলি রাস্তার পাশে! লাবিবা অবশ্য মাস্ক পড়েছে । তাতে কি? তানভীর কি চিনবে না তার বউকে? তানভীর কিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করে। কি হচ্ছে এখানে তার জানতে হবে। লাবিবার সাথেই বা কি কথা বলে? বেশ কৌতুহল জাগে। নিশ্চিন্ত বিষয় নিয়ে আবার অনিশ্চিন্ত হতে কে বা চায়! তানভীর অনেকটাই কাছে চলে আসছে। এখান থেকে ফাহাদের গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দু হাত নাড়িয়ে লাবিবাকে বোঝাচ্ছে,
‘ উত্তরায় চার বেডরুমের ফ্ল্যাট নিয়েছি। সেখানে তোমার কোনো অসুবিধা ই হবেনা। প্রতি সপ্তাহে তোমাকে নিয়ে বেরোবো। তুমি আমি আমরাই থাকবো শুধু। ‘
লাবিবা মিন মিন করে কি বললো বোঝা গেলো না। ফের ফাহাদ বললো,
‘ তুমি দুঃস্বপ্নের জগতে আছো। দুঃস্বপ্ন দেখা এবার ছাড়ো। আকাশ পাতাল চিন্তা করছো এখনো সব কিছু জেনেও। ‘
এবারো লাবিবার গলা স্পষ্ট শুনলো না। তবে রেগে রেগে যে কথা বলছে সেটা ঠিকই বুঝতে পারছে। তানভীর কাছাকাছি আসতে আসতেই ফাহাদ লাবিবার হাত ধরে ফেলে। ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে।লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু ফাহাদ আবার চেপে ধরে।এই ঘটনা তানভীরের সহ্য হলোনা।তেড়ে এসে লাবিবার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো। হাতটা এমনভাবে মুচড়ে দিলো যে ফাহাদ ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো।
‘ জ্বালাতন করবি কর। কথা বলবি বল। দেখা করবি কর। বউয়ের হাত কেনো ধরবি? বউ টা কার? তোর নাকি আমার? ‘
‘ স্যার ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি। আপনি সম্মানিত লোক তাই এখনো সম্মান দেখাচ্ছি। এরপর কিন্তু আমি সম্মানটা দেখাতে পারবো না। ‘
‘ ঐ চুপ সালা। তোকে না সাবধান করেছি এই এলাকায় পা না মাড়াতে! তার পরেও তুই এসেছিস। আমার বউয়ের হাত ধরার সাহস কি করে হয় তোর?তোর বাপকে ফোন লাগাচ্ছি দারা। তোর বাপকে ফোন লাগা। এক্ষুনি ফোন বের কর। ‘
লাবিবা হটাৎ তানভীরের আগমনে ভয় পেয়ে যায়। এভাবে ধরা খাবে ভাবতেও পারেনি। ফাহাদের হাতটা এখনো ছাড়েনি। ফাহাদের মুখটা ব্যথায় কুঁকড়ে আছে। ইসস রে! মোচড় টা কি বেশী লাগলো? উৎসুক হয়ে লাবিবা ঘাড় বাঁকিয়ে তানভীর যে জায়গায় ফাহাদের হাত ধরেছে সেদিকে ঝুকলো। সর্বনাশ! এই হাত মনে হয় না কোনদিন সোজা করতে পারবে। বেচারা! লাবিবার দুঃখ অনুভব হলো। সেটাও সাথে সাথে ঘুচে গেলো। তানভীর বড় সড় এক ধমক দিলো। সেই ধমক খেয়েই লাবিবা ছিটকে গেলো। ধমকটা লাবিবাকে দেয়নি। দিয়েছে ফোনের ওপাশে কাউকে।
‘ হারামজাদার বাপ! আপনার ছেলে এ মুখো কোন সাহসে হয়েছে? শালা আমার বউয়ের হাত ধরে। এই হাত আমি টুকরো টুকরো করবো তারপর তোর ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন। কলিজায় ডর নেই না? তানভীর খানের কথা অমান্য করার শাস্তি কি হয় আজ হাড়ে হাড়ে বুঝবে। ‘
ভয়ঙ্কর রাগী এই তানভীর খানকে দেখে লাবিবার হাতপা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করলো। আজ তার কপালে শনি আছে ভাবতেই ঘামতে লাগলো। চুরি করে দেখা করা! সাধ মিটবে। ফাহাদের হাত দেখে নিজের হাত চোখের সামনে তুলে ধরলো। এই হাতটা ঠিক এইখানে ধরেছিলো। আস্ত থাকবে তো?
তানভীর ফোন কান থেকে নামিয়ে নিয়েছে। লাবিবা হাত পা সোজা করে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে সাহস সংগ্ৰহ করছিলো। না তাকে কিছুই বলতে পারবেনা। আব্বুর সামনে যদি রাগ দেখাতে আসে তাহলে আব্বু আচ্ছা বকে দিবে। সেই সাহস ছুটে যায় আরেক ধমকে। এইবার ধমকটা লাবিবাকেই দিয়েছে।
‘ কি করছো তুমি ফাহাদের সাথে? লীলা শুরু করেছো? হাত ধরে টানাটানি? আব্বুকে জানাচ্ছি। আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন। ‘
লাবিবা কি আরো সেখানে থাকবে? জুতো খুলে দেয় দৌড়। মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে। ফরিয়াদ জানায়। আল্লাহ আব্বুকে যেনো কিছু না বলে। এমনিতেই বিয়ের পর থেকে জেদের বশে লাবিবা বেশী বেশী করছে তার উপর যদি এই কথা ক্ষুনাক্ষরেও কানে যায় তাহলে আর আস্ত রাখবেনা। দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িই চলে এসছে। ট্রেড মিলে দৌড়ে দৌড়ে এখন আধঘন্টার এই দৌড়ের রাস্তা সে অনায়াসেই দৌড়ে এসেছে।আর পারছেনা। উঠোনে বসেই হাঁপাচ্ছে। কবির এসেছিলো ইসমাইলের সাথে দেখা করতে। বেরোনোর সময় দেখে লাবিবা টুলের উপর বসে হাপাচ্ছে। কবির এগিয়ে যায়। সামনে টুল টেনে বসে। লাবিবা হকচকিয়ে যায়। কবির কে দেখে স্বস্তি নেয়।
‘ ওপপ ভাইয়া। ‘
‘ কিরে ম্যারাথনে জয়েন করবি নাকি? নাকি প্রাইজ টা জিতেই এলি?’
‘ তা আর কম কিসে? যার সাথে বিয়ে দিয়েছো ! কত কাঠখড়ি পোড়াতে হচ্ছে আমাকে!’
‘ কি করলো আবার তানভীর?’
‘ কি করেনি বলো? বাব্বাহ! কি রাগ! ফাহাইদ্দা শুধু আমার হাতটা ধরেছে। সেজন্যই ফাহাইদ্দার হাতটা সোজা অকেজো করে দিবো? এটা কোনো কথা? ‘
ফাহাদের কথা শুনে কবিরের মুখটা থমথমে হয়ে যায়।হাসি খুশি মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠে। লাবিবার হাত টেনে ধরে।
‘ ফাহাদ তোর হাত ধরবে কেনো? তোর সাথে ফাহাদের দেখা হলো কিভাবে? যোগাযোগ করিস তুই? লাবিবা? উত্তর দে। ‘
‘ ভাইয়া __’
‘ ঐ তোর ফোন দে। ‘
কবির হাত পাতে।
‘ দিবি?’
লাবিবা জোরপূর্বক হাসে। বলে,
‘ আমার কোনো দোষ নেই ভাইয়া। ঐ আমাকে ফোন দেয়। ডিস্টার্ব করে। ‘
‘ কবে থেকে?’
‘ শুরু থেকেই। ‘
‘ কি বলে?’
‘ খারাপ খারাপ কথা উনার সম্পর্কে। ‘
‘ উনি কে?’
‘ উনি। স্যার। তানভীর স্যার। ‘
‘ কি বলে ডাকিস?’
‘ স্যার। ‘
‘ ঐটাতো কলেজে তোর স্যার। বাসায় কি ডাকিস?’
‘ স্যার। ‘
‘ থাপ্পড় খাবি। কলেজেও স্যার। বাড়িতেও স্যার। সব জায়গায় স্যার হলে সারাজীবন ঐ শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্কই বয়ে বেড়াতে হবে। ডাকের মধ্যেও একটা ব্যাপার আছে। নয়তো সম্পর্ক এগোবেনা। ‘
‘ তাহলে কি ডাকবো? ভাবীর মতো হেগো? ওগো? প্রাপ্তির আব্বু? নাকি যখন রোমান্স মুডে থাকে, কবির…মাই হার্ট! ‘
কবির খুক খুক করে কেশে উঠে। গলা খাঁকারি দিয়ে শাসন করে,
‘ লাবিবা! বড় হয়েছিস। বিয়ে দিয়েছি। বড় ভাইয়ের সামনে মুখে লাগাম দে। ‘
‘ আমার কি দোষ! ভাবীই তো ‘
‘ চুপ। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
‘ তানভীরকে জানিয়েছিস এসব কথা?’
‘ ওরে আল্লাহ! আস্ত রাখবে না। ‘
‘ দোয়া করি তুই আস্ত থাক। আমি তানভীর কে বোঝাবো। ‘
‘ আব্বুর কানে যেনো না যায়। ‘
‘ কাকাই তো ঝামেলাটা বাঁধায়। তোর ইন্টার পাশের পরেই বললাম বিয়েটা দিয়ে দিতে। তখনি তানভীরের সাথে বিয়েটা দিলেই হয়ে যেতো। ‘
‘ তখন তো বিয়ের ঘর আনতো ও পাড়ার মধু, সেই গ্ৰামের মোল্লার ছেলে, শহুরে বাবু! স্যারকে কোথায় পেতে? উনার কলেজে ভর্তি হবার আগে আমি উনাকে দেখেছি নাকি?’
‘ তুই দেখিসনি তো কি হয়েছে? আমরা তো দেখেছি। এমপি মহোদয়ের ছেলে! তাকে কে না চেনে?’
‘ তাও ঠিক। তোমরাই চিনো। আমার কিছু চিনতে হবেনা। ওসব রাজনীতি ঠাজনীতি আমার দেখে কাজ নেই। আমার শুধু বই আর মলের খবর রাখলেই হবে। ‘
‘ পরশু ঢাকা যাচ্ছি। তোর আনকমন কি লাগবে বলিস।’
‘ সরি ব্রো! আমার জামাইয়ের অনেক টাকা! সো এখন আর তোমাদের টাকা লাগবেনা। ‘
অনেক টা ভাব দেখিয়েই বলে লাবিবা। কবির ভাব দেখে হাসে। মাথায়া গাট্টা মেড়ে চলে যায়। কবির চলে যাওয়ার পর লাবিবার মাথায় প্রশ্নটা নড়েচড়ে উঠে। ডানে বামে মুখ বাকায়। ‘ এ্যাহ! ইন্টার পাশের পর বিয়ে দিয়ে দিতো। তাও আবার এমপি মহোদয়ের ছেলের সাথে। মগের মুল্লুক! বোনকে কি আসমানের হুর ভাবে নাকি? কই এতো এতো বিয়ের সমন্ধ এলো একটাও তো ঐ লেভেলের সমন্ধ এলো না। ভাগ্যের ফেরে বিয়েটা হয়েছেতো এখন এমপি মহোদয় কি? মাটিতে পা পড়ছেনা। এমন ভাবে বলছে যেনো হাতের মোয়া! ‘
কবির এখানে থাকলে শুনিয়ে দিতো কথাটা। লাবিবা হতাশ হয়। মুখে হাওয়া লুফে ফুস করে ছেড়ে দেয়।
‘ ওফফ আমি সত্যিই লেইট লাবিবা! ‘
চলবে __
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৬)
লাবিবার জল্পনা কল্পনা কে মিথ্যে করে দিয়ে তানভীর কিছুই বললো না। রুটিন বের করে নিজের ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে লাবিবার ফোনটা হাতে তুললো। সিম টা বের করে নতুন সিমটা তুলে দিলো। বিছানায় রেখে লাবিবার দিকে তাকাতেই দেখলো লাবিবা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। তানভীর তাচ্ছিল্য সুরে হাসলো।
‘ বিশেষ কাউকে মাথায় তুলে রাখলে তাকে সরিয়ে এখন এক্সামের চিন্তা মাথায় ঢুকাও। ‘
‘ আপনাকেও?’
‘ আমাকেও কি?’
‘ কিছুনা। ‘
লাবিবা নিজের হুয়াটস এপ এ রুটিনটা সেন্ড করে দেয় ।ফোনটা তানভীরের হাতে দেয়। তানভীর পকেটে ঢুকিয়ে রুম ত্যাগ করে। লাবিবা বন্ধ করা দম ছাড়ে। এতোক্ষন শুধু শুধু টেনশন করছিলো। কত ভালো জামাই! কিছুই বললোনা তাই নিজেকেই খানিক বকা দিলো। রুম থেকে বের হয়ে তানভীর কে খুঁজলো। না পেয়ে সাবিনার কাছে গেলো।
‘ আম্মু উনাকে দেখেছো?’
সাবিনা কেমন যেনো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। লাবিবার দিকে তাকালোও না। হলোটা কি?
‘ আম্মু? উনি কি চলে গেছে?’
এবার সাবিনা লাবিবার দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে গো ধরে বললো, ‘ হ্যা। চলে গেছে। বাঁচা গেছে। ভীমরতি যখন ছাড়বে প্লিজ ডেকে নিয়ে ভালো ভাবে থেকো। আমার যেনো কখনো মাথা না হেড হয়। ‘
লাবিবা বুঝলো কেনো এতো রাগ! তানভীর নিশ্চয় সব বলে দিয়েছে। ভয়ে ভয়েই বললো,
‘ উনি কি কিছু বলেছে তোমাকে? আম্মু বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনি। ‘
‘ তোমার কি করে মনে হয় তানভীরের মতো ছেলে এরকম একটা ব্যাপারে আমাকে বলতে আসবে? ওর শিক্ষা দীক্ষা অনেক উপরের। তোমার সেই ফাহাদের বাবা ফোন দিয়েছিলো। ক্ষমা চেয়েছে। ‘
‘ ফাহাদ কিভাবে আমার হয় আম্মু? তাকে তো তোমরাই ধরে এনেছিলে। ‘
‘ এনেছিলাম যেমন তারিয়ে দিয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়েও দিয়েছি। তারপরেও তুমি আড়ালে কিভাবে তার সাথে দেখা করতে যাও তাও আবার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে?’
‘ দেখা হয়ে গিয়েছিলো আম্মু। আমি নিজে থেকে দেখা করিনি। ‘
‘ আচ্ছা যাই হোক। এমনটা যেনো আর না হয়। যাও নিজের রুমে যাও। পড়াশোনা করো। ‘
‘ তুমি কেনো উনাকে আটকালেনা আম্মু ‘ বলেই লাবিবা হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো। ফুফাতে ফুফাতেই পেটের কথা বলে দিলো। ‘ উনি আমার উপর রাগ করে আরো দূরে সরে গেলো আম্মু। একটু ভালো করে কথা না বলেই চলে গেল আম্মু। দায়িত্ব পালন করেই তো গেলো। আর কি লাগে?’
লাবিবার হটাৎ এমন ব্যবহারে হকচকিয়ে গেলো সাবিনা। কিন্তু তার রাগ কমলো না।ধমকে বললো,
‘ কান্না থামাও। কান্না করার মতো কিছু হয়নি। এখন রাগ করেছে, রাগ পরে গেলে ঠিকই আসবে। রুমে যাও তোমাকে ক্লান্ত লাগছে। ‘
লাবিবা জেদ ধরলো, ‘ তোমাদের জামাইকে এক্ষুনি ডাকো আম্মু । আমার উনাকে লাগবে। ‘
‘ চুপ করো বেশরম মেয়ে। মুখে কিছুই আটকায় না। কয়দিন থেকে দেখছি এরকম অভস্য কথা বলতে। মুখে লাগাম টানো এবার। বিয়ে দিয়েছি । আল্লাহ আমার মেয়েটার বোধ বুদ্ধি হোক। ‘
বুঝলো না। লাবিবার ভয়, লাবিবার আহাজারি কেউ বুঝলো না। মাকে বেশরমের মতো বলেও বোঝাতে পারলোনা। ব্যর্থ লাবিবা। নতুন সিম তাই কারো নাম্বার ও খোঁজে পেলোনা। পেলে হয়তো উর্মিলার সাথে শেয়ার করতে পারতো। তানভীরের নাম্বার মুখস্থ বিধায় তাকেই কল দিলো। ধরলো না। একে একে পাঁচ বার কল দিলো। তাও ধরলোনা। ছয়বারের সময় ধরলো। লাবিবাই প্রশ্ন করলো,
‘ কোথায় চলে গেলেন?’
‘ যায়নি। ‘
‘ এখন কোথায়?’
‘ আছি। উঠোনেই । ‘
এই উত্তর টুকুই যথেষ্ট ছিলো লাবিবার জন্যে। আর দ্বিক বেদ্বিক তাকালো না। দৌড়ে কেচি গেইট খুলে চলে গেলো উঠোনে। ঠান্ডার মাঝেই টুলে বসে সিগারেট ফুকছে তানভীর। সাথে আরেকজন ও আছে। হ্যা। কবির। কবির আগে থেকেই চেইন স্মোকার। তার থেকেই তানভীরের আজকের স্মোক করা । লাবিবাকে দেখেই প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেট টা ফেলে পায়ে পিষে দিলো। তানভীর বিষয়টা খেয়াল করলো। ঘাড় ঘুরিয়ে লাবিবাকে একপলক দেখলো। কিছু না বলে উঠে গেইট পেরিয়ে বাইরে চলে গেলো। এদিকটায় অন্ধকার। বাল্ব লাগানো হয়নি। লাবিবাও পিছু পিছু গেলো। গেইটে দাড়াতেই সাদা গাড়িটি চোখে পড়লো। গাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে তানভীর। একহাতে সিগারেট আরেকহাত প্যান্টের পকেটে। আবছা আলোয় লাবিবা খেয়াল করলো তাকে। সাদা শার্ট কালো প্যান্ট ফর্মাল গ্যাটাপে হাতে সিগারেট। কি অভাবনীয়! এই প্রথম চির অপছন্দের সিগারেট টাকেও যেনো লাবিবার ভালো লাগলো। এই সিগারেট উদ্ভাবন ই হয়েছে তানভীরের হাতে শোভা পাওয়ার জন্য। লাবিবার মোটেই গা ঘিন ঘিন করলো না। বমিও পেলোনা। যেটুকু খারাপ স্মেল পাচ্ছিলো সেটুকুও নাক চেপে বন্ধ করে দিলো। লাবিবার অস্তিত্ব বুঝতেই তানভীর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। লাবিবা যেনো একবার হার্টবিট মিস করলো। অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করলো। তানভীরের আশেপাশে এলেই সময় অসময়ে এমন ফিলিংস হয়। নবযৌবনের প্রথম প্রেমে পড়ার ফিলিংস। সেটা জেনেই চলে লাবিবার পদক্ষেপ। লাবিবার সবাইকে ডেকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে,
‘ এইযে জলন্ত সিগারেট হাতে দাঁড়ানো মানুষটি, সে আমার স্বামী। আমার ব্যক্তিগত পুরুষ। আমার অর্ধাঙ্গ। জান্নাতের সাথী। আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি। কারণ ছাড়াই ভালোবাসি। ‘
লাবিবার মনে হয় তানভীরের চোখ দুটো লাল। রক্তিম লাল। সে চোখে চোখ রাখতে লাবিবার অস্বস্তি হচ্ছে। লাবিবা উশখুশ করে উঠে। তানভীর ভাবে লাবিবার কষ্ট হচ্ছে। তাই পিছিয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা গলায় বলে, ‘ বাসায় যাও। তোমার কষ্ট হচ্ছে। ‘
‘ আপনি রেগুলার স্মোক করেন?’
‘ উহু। আমি সিগারেট খাই না। ‘
লাবিবার হাসি পেয়ে যায়। হাসতে হাসতেই বলে,
‘ তো এখন কি খাচ্ছেন?’
‘ ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে। ‘
‘ সিগারেট কখনো তেষ্টা মেটায় না। পানি আনবো আপনার জন্য? ‘
‘ না। তোমার ঠোট দুটো চুষতে দাও। আমার তেষ্টা মিটে যাবে। ‘
লাবিবার হাসি মুখ নিমেষেই বুঝে যায়। কি অসভ্য কথা! উপস্থিত লাবিবা উল্টোপিঠে কি জবাব দিবে আমতা আমতা করতে থাকে। ঝটপট কথা ঘুরিয়ে ফেলে।
‘ আপনার চোখ এতো লাল কেনো? ‘
‘ দিবে? ‘
আবার সেই প্রসঙ্গ। লাবিবা একবার তানভীরের চোখে চোখ রাখতে চায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়। পাশ ঘুরে তাকায়। জোর গলায় বলে,
‘ প্লিজ আপনি ওভাবে তাকাবেন না। আমি আপনার চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। আমার ভীষণ ভয় করে।’
‘ ভীতুর ডিম। ‘
‘ মিথ্যা। ‘
‘ সত্যটা কি? লজ্জাবতী লাবিবা ?’
‘ একদম না। ‘
‘ কিন্তু আমি তো দেখছি তোমার গাল দুটো ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে। বিশ্বাস হচ্ছে না? ওয়েট। ‘
তানভীর গাড়ির ভেতরকার লাইট জ্বালিয়ে দেয়। বাইরেও আলো এসে পড়ে। গ্লাসে আঙুল দিয়ে দেখায় ।
‘ লুক। নিজেই নিজেকে দেখে নাও। ‘
লাবিবা চোখ তুলে তাকানোর ফুরসৎ ও পায়না। পৃথিবীর সব লজ্জা তাকে চাঁপা দিয়ে দেয়। সদা নিলজ্জ লাবিবার ভাগ্যে এতোটা লজ্জা জমা ছিলো কে জানতো? তানভীর না এলে জানাই হতো না। লাবিবা নিজেকে আড়াল করতে দৌড় দেয়। তানভীর চেঁচিয়ে বলে, ‘ আমাকে তেষ্টা মেটাতে না দিলে আমি কিন্তু বাসায় যাবো না। ‘ লজ্জানত লাবিবা শুনলো। কিন্তু পাত্তা দিলে তো! সেদিন কার একটু চুমোর দৃশ্য ই সে ভুলতে পারেনা। প্রতিরাতে মনে পড়তেই বালিশ চাঁপা দেয় মুখের উপরে। আর এভাবে সরাসরি নির্লজ্জ ভাবে প্রপোজাল! লাবিবার আর এ অঞ্চলে থাকার ইচ্ছে থাকলেতো? রুমে ঢুকে সে কম্বলে নিজেকে লুকালো।
ঘন্টাখানেক পর নিজেকে সামলে বেরিয়েও এলো। শুধু কবিরকেই পেলো।
‘ ভাইয়া উনি কোথায় গেলো?’
‘ চলে গেলো বললো। ‘
‘ ফোন দাও না একটা।’
কবির তানভীরকে কল করলো। প্রথম বারেই রিসিভ হলো।
‘ হ্যালো। কোথায় তুই?’
‘ গাড়িতে আছি। ‘
‘ বাসায় আয়। লাবিবা ওয়েট করছে। ‘
‘ চলে এসেছি। আর যাচ্ছিনা। ‘
কবির লাবিবার দিকে তাকায়। লাবিবার উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। কবির মুখ চেপে হাসে।
‘ দোস্ত তুই না এলে একজনের কষ্ট হবে। ‘
‘ হোক। ‘
‘ নিষ্ঠুর শালা! আমার বোনকে কষ্ট দেওয়া?’
‘ সরি। আমি আমার বউকে ছাড়া কাউকে কষ্ট দেবার দায়িত্ব নিই না। ‘
‘ আসবিনা?’
‘ নাহ। ‘
কবির অসহায় মুখ করে তাকায়। তার ই বা কি করার আছে? লাবিবা ভীষণ ব্যথিত হয়। আরেকটু আগে এলেই তো আটকানো যেতো। কবির তাড়া দেয়।
‘ ঘরে যা। তানভীর আসবে না। ‘ লাবিবার মনের ব্যাথা ভূলে যায়। একটা প্রশ্নের উদয় ঘটে। প্রশ্নটার উত্তর জানতে চায়।
‘ ভাইয়া তুমি স্যারকে দোস্ত বলে সম্বোধন করলে কেনো? তোমার সব ফ্রেন্ডদের তো আমি চিনি। স্যার তো তোমার সিনিয়র হয়। ‘
‘ হ্যা। ঐতো ফ্রেন্ড হয়ে গেলো। ‘
‘ কই আমি তো জানিনা? সমন্ধি হয়ে একসাথে সিগারেট ফুকছো। তোমরা তুই তুকারি করেও কথা বলছো। উনি কিভাবে তোমার ফ্রেন্ড হলো? ‘
‘ তোর জন্যই তো হলো। ‘
‘ তুমি উনাকে তাহলে আগে থেকেই চেনো? আমাকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর পরই যে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলে এর জন্যই তো তুমি বলো স্যার তোমাদের চেনা জানা ছিলো। তোমার মনে মনে তাহলে এই ছিলো! ‘
লাবিবার কথায় কবির প্রাণবন্ত হাসলো। লাবিবা অস্থির হয়ে উঠলো। কবিরের হাত চেপে ধরলো । উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলো,
‘ ভাইয়া সেদিন হসপিটালে কে এই বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো? কোনো আগাম কথা বার্তা ছাড়া হুট করেই স্যারের সাথে আমার কিভাবে সমন্ধের কথা উঠতে পারে? স্যারের সাথে আমার তো অনেক ফারাক। সবদিক থেকেই ফারাক। আব্বুর হাতে তখনো কত অপশন! স্যার ই কিভাবে রাজি হলো? আমি বুঝতে পারছি তুমিই এসব করেছো। তবুও তুমি বলো। আমি জানতে চাই ভাইয়া। আমার বিয়েটা কিভাবে হলো?’
‘ তানভীর খানকে বোন জামাই হিসেবে কার না পছন্দ?’
‘ এই প্রপোজাল তাহলে তুমিই রেখেছো। ‘
‘ কাকা যখন বেশ অসুস্থ তোকে নিয়ে চিন্তিত, আমি তানভীরের নামটা উত্থাপন করতে চাইলাম। তানভীর তোকে বিয়ে করতে প্রস্তুত কিনা সেটাও জানার বিষয় ছিলো। বুদ্ধি করে নিতু ম্যামকে মাধ্যম হিসেবে নিলাম। মেডাম তো তুই বলতে অজ্ঞান! সাথে ছিলো তামিম ভাই। কাকার ও রিজেক্ট করার কোনো অপশন ছিলো না। একদম চেপে ধরা হয়েছিলো। ‘
‘ স্যার কেনো রাজি হলো?’
‘ তোর জন্য। পরিস্থিতিটাই সেরকম ছিলো। সব দিক বিবেচনা করেই তোকে একদিনের ভেতরেই সাদামাটা ভাবে বিয়েটা করে নিলো। ‘
চলবে __
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৭)
রাস্তার পাশে তৃতীয় তলায় জিমনেশিয়াম। তার অপজিটেই ক্যাফে। পুরো শহরে এই একটিই জিমনেশিয়াম থাকায় প্রচুর লোকের আনাগোনা। লাবিবাও তাদের মধ্যে একজন। এতো দিন থেকে এখানে আসছে অথচ আজ যে দৃশ্যের সাক্ষী হলো তা আগে কখনো হয়নি। তানভীর কে এখানে কখনোই এস্পেক্ট করে নি। তার পাশেই আবার ফুটফুটে একটা মহিলা। কোনাকাটা গোলাপী ড্রেসের সাথে কোমড় অব্দি ব্রাউন চুলে অত্যাধিক মর্ডান একজন। তার সাথে মুখোমুখি চেয়ারে বসে সংলাপে ব্যস্ত তানভীর। এক্সপ্রেশন প্রায় প্রায় চেঞ্জ। কখনো সিরিয়াস, কখনো খেয়াল খুশি, কখনো গা ছেড়ে দিচ্ছে চেয়ারে। এতো কমফোর্ট ভাবে কিভাবে কথা বলতে পারে? মুখে মাস্ক পড়েছে দেখে চেনাও যাচ্ছে না। কে হতে পারে? মামাতো বোনদের তো লাবিবার চেনা। তাহলে কি ফ্রেন্ড? গার্লফ্রেন্ড? ফ্রেন্ড থেকেই গার্লফ্রেন্ড এর কথা মাথায় আসা। এতো গর্জিয়াস একজন কে তানভীরের গার্লফ্রেন্ড ভাবা মোটেই অযাচিত চিন্তা নয়। কিন্তু তানভীর এখন বিবাহিত। লাবিবার হাজবেন্ড। তাকে নিয়ে এসব ভাবা ঠিক হচ্ছে না। সন্দেহ রোগ সর্বনাশী রোগ। জীম থেকে বেরিয়ে লাবিবার ক্ষিধে পেয়ে যায়। সেজন্যই ক্যাফেতে ঢুকে। নিজের কফি ঠান্ডা হতে লাগলো। লাবিবার হুস নেই। ধ্যান জ্ঞান সব তানভীর আর ঐ মহিলার উপর। যত সময় ফুরাচ্ছে ততো লাবিবার ছটফটানি বাড়ছে। নিজেকে কোনো ভাবেই আটকে রাখতে পারলোনা। চেয়ার ছেড়ে ছুটলো তানভীরের টেবিলের দিকে। ততোক্ষনে মহিলাটি কেঁদে কুটে তানভীরের কাঁধে কপাল ঠেকিয়েছে। তানভীর ও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। তবে কি সত্যিই এ তানভীরের গার্লফ্রেন্ড? কি বলছে সে? গায়ের উপর কেনো ঢলে পড়বে? কাছে যেতেই শুনতে পায় মহিলাটি বলছে, ‘ প্লিজ তানভীর! আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। আমরা বিয়ে করে অনেক হ্যাপি হবো দেখো। বাকি জীবন স্বামী সংসার নিয়েই সুখে কাটাতে চাই। সব ভুল বুঝাবুঝি মিটমাট করার একটা সুযোগ দাও। আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ। ‘
তানভীর উদাস ভঙিতে অন্যদিকে তাকিয়ে জানায়,
‘ দেখি। ‘
ওদের কথপোকথন এ লাবিবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। কি সুন্দর বিয়ে করে সংসারের আবদার। আর তার সহজ স্বীকারোক্তি, ‘ দেখি ‘ । এজন্যই কি এতো দূরত্ব? তাহলে লাবিবা কে? লাবিবার স্থান কোথায়? দৌড়ে গিয়ে এক ঝটকায় মহিলাটিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় । আচমকা ধাক্কাতে মহিলা কোনো মতো টেবিলের কোণা ধরে ব্যালেন্স রাখে। নয়তো ফ্লোরে পড়ে কোমড়টা এখনি ভাঙতো। মহিলা চেঁচিয়ে উঠে লাবিবার উপর।
‘ হে?হাউ ডেয়ার ইউ?’
লাবিবা কড়া চোখে দৃষ্টি ফেলে। পাত্তা না দিয়ে তানভীরের দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কলার চেপে ধরে মুখোমুখি আনে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ য়্যু য়্যার মাই হ্যাজবেন্ড। মাই প্রোপার্টি। জীবন দিবো তবুও আমি ডিভোর্স দিবো না। কোন সাহসে আপনি এধরনের চিন্তা মাথায় নিয়ে আসেন?’
আকষ্মাৎ এমন আচরণে তানভীর নিজেও কিছু বুঝতে পারে না। কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
‘ য়্যা য়্যু মেড? ডিভোর্স আসছে কোথা থেকে?’
‘ আমি প্রেজেন্ট থাকা অবস্থায় আপনি কি করে আবার বিয়ে করতে চান? ক্যাফেতে অন্য মেয়ের সাথে বসে প্রেমালাপ করেন? এই আপনার ক্যারেক্টার?আমি মেনে নিবো এসব? কি ভেবেছেন কি? জীব্বনেও না। ‘
‘ লাব্বু প্লিজ স্টপ। উল্টা পাল্টা কথা বলছো কেনো? এটা পাবলিক প্লেস। ‘
‘ পাব্লিক প্লেসে অন্য মেয়ে নিয়ে প্রেমালাপ করেন কেনো? তখন স্টপ যেতে পারেন না? ‘
‘ মাথায় পোকা উঠেছে তাই না? চলো এখান থেকে। ‘
তানভীর লাবিবাকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। মহিলাটি জিজ্ঞেস করে,
‘ তানভীর? হু ইজ সী? ‘
‘ লাবিবা। ‘
‘ হুয়াট? এই লাবিবা? হাউ ম্যানারলেস সী ইজ!’
‘ ঐ বুড়ি তুই ম্যানারলেস। অন্যের জামাইয়ের গায়ে ঢলে পড়িস কেনো? কাটা কাটা জামা পড়ে আমার জামাইরে ভুলাতে এসছিস। ‘
‘ লাবিবা স্টপ প্লিজ। ‘
‘ আপনি চুপ থাকুন। আপনার সাথে বোঝা পড়া পরে করছি। আগে একে শায়েস্তা করি। ‘
‘ তানভীর! কিসব বলছে! আটকাবে তুমি ওকে? ‘
‘ আরেকবার আমার জামাইয়ের নাম মুখে নিবি তো মুখ সেলাই করে দিবো। নিকুচি করি তোর স্বামী সংসারের। আমার স্বামী আমার সংসারের দিকে নজর দিস শাকচুন্নী। ‘
তানভীর আর স্থির থাকতে পারে না। লাবিবাকে টেনে নিয়ে ক্যাফের বাইরে চলে আসে। লাবিবা হাত পা ছুড়তে থাকে। সিঁড়ির কাছে এনে লাবিবাকে ছাড়ে তানভীর। ধমকে বলে,
‘ কি শুরু করেছো কি? কাকে কি বলছো? তুমি চেনো ওকে? ক্যাফেতে এসে সিনক্রিয়েট শুরু করেছো কেনো? জামাই জামাই বলে মান সম্মান ঢুবিয়ে দিচ্ছো। পাগল তুমি? মাথা খারাপ হয়েছে? ‘
‘ ঐ মহিলা কেনো আপনার সাথে মিশবে? আপনার কাঁধে কপাল কেনো রাখবে? ঐ ব্লেজার খুলুন। এতে ঐ মহিলার গন্ধ লেগে আছে। ‘
লাবিবা ব্লেজার ধরে পেছন দিকে টান দেয়। তানভীর ব্লেজার উপরের দিকে টেনে ধরে।
‘ প্রব্লেম কোথায় তোমার? কোথায় লেখা আছে আমার সাথে কোনো মহিলা মিশতে পারবেনা? কাঁধে কপাল রাখতে পারবেনা? তোমার কথায় সব হবে নাকি? ‘
লাবিবা ডাইরেক্ট তানভীরের চুল টেনে ধরে। মরণঘাতী খামচি দিয়ে চুল ছিঁড়ে চলে।
‘ আমার কথায় হবে নাতো কার কথায় হবে? আমি আপনার একমাত্র বউ। আমি আপনাকে উঠতে বললে উঠতেও হবে। বসতে বললে বসতেও হবে। আমি যা বলবো আপনাকে তাই শুনতে হবে। ‘
‘ লাব্বু চুল ছাড়ো। ব্যাথা লাগছে। ‘
‘ আমারো লাগে। আপনি আমার হাজব্যান্ড হয়ে কেনো পরকীয়া করবেন? ‘
‘ কিসব যা তা বলছো? চুল ছাড়ো। ‘
‘ ইইইইইই ‘
‘ আচ্ছা তুমি যা বলবে তাই শুনবো। এবার ছাড়ো। ‘
‘ ঐ মহিলা আমাকে ম্যানারলেস বলেছে। আপনি এর প্রতিশোধ নিবেন। ‘
‘ নিবো। ‘
‘ আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করার ভুত মাথা থেকে সরাবেন। ‘
‘ আমার একটাই বউ রে বাবা। ‘
‘ আমি আপনার কোন জন্মের বাবা?’
‘ নারে মা ছাড়। ‘
‘ ছেহ!’
‘ বউ ছাড়ো তো। ‘
লাবিবা ছেড়ে দিয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে। তানভীর মাথায় হাত চেপে লাবিবার কোলে চেপে ধরে। ব্যাথাটা কমে আসে ধীরে ধীরে। বাম পাশের চোখ উঁচিয়ে দেখে লাবিবা ঘামছে। তানভীর ফিসফিসিয়ে বলে,
‘ রণচন্ডী বাঘিনী। ‘
মাথা তুলে কিছু না বলেই হন হন পায়ে বেরিয়ে আসে।
লাবিবার জন্যই এদিকে তানভীরের আসা। ক্যাফেতে হটাৎ ফ্লোরার সাথে দেখা। তার ডাকে সাড়া না দিয়ে তানভীর পারে না। যেহেতু বসতে হবে কিছুক্ষণ ফ্লোরা বসুক সাথে সমস্যা কি? তার কথা শুনা যাক। ফ্লোরার কথা মানেই ইমোশনাল কথাবার্তা। আর তানভীরকে তোষামোদ করা। ব্যপারটা ভালোই ইনজয় করে তানভীর। তাই তাকে বাঁধা দেয়না। কিন্তু আজ ফ্লোরা শুরু করলো অন্যভাবে। নিজেকে নিয়ে নয় লাবিবাকে নিয়ে।
‘ লাবিবা কেমন আছে? ‘
তানভীর এক অবাক ই হলো। হাসিমুখে উত্তর দিলো
‘ আলহামদুলিল্লাহ। ‘
‘ খুব সুন্দরী বুঝি?’
‘ তোমার থেকে নয়।’
‘ তাহলে বিয়ে করলে কেনো?’
‘ ভীষণ হট! ‘
ফ্লোরা তাচ্ছিল্য হাসে।
‘ হুহ! ছেলেদের যা লাগে! তাহলে দূরে সরিয়ে রাখো কেনো? ‘
‘ সব খবর ই দেখি রাখো। ‘
‘ খবর রাখি। কিন্তু দেখা হয়নি। তোমার ওয়াইফকে দেখার বড্ড ইচ্ছে আমার। ‘
‘ ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্রই মিট করাবো দুজনের। সে আবার বড্ড প্রশ্ন করে। উত্তর সাথে নিয়ে এসো। ‘
‘ এতো লুকোচুরি খেলার কারণ টা কি? নাকি লাবিবাই তোমাকে পছন্দ করেনা? শোনেছি যে ছেলেটার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো তার সাথে নাকি মাঝে মাঝে একসাথে দেখা যায়! ‘
‘ হুম। পাশে আমিও থাকি। সে আর যাই হোক তোমার ক্যারেক্টারের না। ‘
‘ আমি আজকাল যেচে পড়ে অপমানিত হতে ভালোবাসি তানভীর। ‘
তানভীর ফিক করে হেসে উঠে। মুখে চুক চুক শব্দ তুলে ‘ আফসোস! ‘ ফ্লোরার দিকে তাকায়।
‘ লাবিবা একজন পিউর মাইন্ডেড গার্ল। সে এক পুরুষে আগ্ৰহী। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিলাসীতা করতে গেলেও আমার যা আছে তাই ফুরিয়ে উঠতে পারবেনা। তুমি যা। ঠিক তার অপজিট। ‘
‘ এতো অহংকার ভালো নয় তানভীর। ‘
‘ তোমার মতো সিচুয়েশন না হলেই নয়। ‘
এতো অপমান নিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ফ্লোরা।
‘ তোমার ভাই এখনো আমাকে লাভ করে। আমি বুঝি তাকে। তার সাথে কথা বলতে গেলেই আমি ফিল করি। তোমরা যদি মতামত দাও তাহলে সে নিশ্চয় আমাকে আবার তার জীবনে এন্ট্রি দিবে। ‘
‘ সেটা নয় বুঝলাম। তার আগে বলো তুমি আমার ভাইয়ার পিছু ছাড়ছো কবে?’
‘ মৃত্যু হলে। ভালো থাকার অধিকার সবার আছে তানভীর। আমি ভুল পথকে চুজ করেছিলাম। বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি। এবার আমি ভালো থাকতে চাই। আমার অধিকার যা হারিয়েছি ফিরে পেতে চাই। এতো কেনো শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? আমি আর পারছিনা প্লিজ। তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি। আমি ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা না করলে আজ শাস্তিও চাইছি। আমাকে শাস্তি দাও তাও বঞ্চিত করোনা। ‘
‘ তুমি যে বার বার আমার সামনে এভাবে এসে কাঁদো আমার ভীষণ ভালো লাগে মিস্ ফ্লোরা!’
‘প্লিজ তানভীর! আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। আমরা বিয়ে করে অনেক হ্যাপি হবো দেখো। বাকি জীবন স্বামী সংসার নিয়েই সুখে কাটাতে চাই। সব ভুল বুঝাবুঝি মিটমাট করার একটা সুযোগ দাও। আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ। ‘
শেষ কথাগুলো শুনে লাবিবা অন্যকিছু ভেবে নিয়েছে। রিয়েক্ট করে বসেছে তৎক্ষনাৎ।
লাবিবা চুপচাপ বসে থাকে। কি করে ফেললো রাগের মাথায়! ভীষণ খারাপ লাগে। কিন্তু মহিলাটি কে? লাবিবা উঠে চটপট ক্যাফেতে যায়।সেখানে আর দেখতে পায় না মহিলাটিকে। ভরক্রান্ত মন নিয়ে বিল্ডিং ছেড়ে আসে। অদূরে তানভীরের সাদা গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে যায়। তানভীর বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। চুলগুলো আর এলোমেলো নেই। একদম সেট করা। লাবিবার খারাপ লাগে ভীষন। কত কষ্ট দিলো সে! তানভীর লাবিবাকে ইশারায় গাড়িতে উঠে বসতে বলে। লাবিবা উঠে বসতেই পাশে তাকিয়ে চমকে যায়। ফেমাস হিরোইন ফ্লোরা স্বয়ং তার পাশে বসা। লাবিবা ফ্লোরা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। ভেতর থেকে উৎফুল্ল ভাব বেরিয়ে আসে। পর পরই ফ্লোরার গেটাপ নজরে পড়তেই মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ফ্লোরা নিজ ঠোঁটে আঙুল চেপে বসে।
‘ চুপ। আমি তোমার এক্স জা। সামনে তাকাও।একদম চেঁচাবেনা। ‘
এতোক্ষণ যে সন্দেহে পাগলামি করেছে সেই সন্দেহ তার দিক পরিবর্তন করে দুশ্চিন্তা কেও সাথে নিয়ে ধাবিত হয়। অতিরিক্ত চাপে লাবিবা এবার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। চোখের জল ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব নতুন করে পাওয়া যায়না।
চলবে____