#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪১
“দরজা লকড, আর চাবি এইখানে তাই নিজের ভালো চাও তো চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো এখানে আসো।”
মেঘালয়ের কথায় হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ালাম। বাম হাতের তর্জনীতে চাবিটা ঘুরিয়ে, বাম হাতে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে।
-চাবিটা আপনার কাছে কি করে এলো।
-ফ্ল্যাটের প্রতিটি রুমের এক্সট্রা চাবি মায়ের কাছে থাকে, সেখান থেকে এই ঘরের চাবিটা আমার হাতে আসতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
বলেই বাকা একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালো। এবার বুঝতে পেরেছি সবটা। এই এক্সট্রা চাবি দিয়েই লক খুলে ঘরে ঢুকেছে লোকটা।
-এখানে আসতে বলেছি?
এভাবে শান্ত কণ্ঠে বললেও আমার বুঝতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে নাহ,লোকটা নির্ঘাত একটা কান্ড ঘটাবে। দু কদম আরও পিছিয়ে গিয়ে বললাম
-এভাবে দিনে দুপুরে একা মেয়ের ফ্ল্যাটে ঢুকতে আপনার বিবেকে বাঁধলো না
-একটুও নাহ, আমার যেখানে মন যাবো এতে বাঁধাবাঁধির কি আছে।
-আ আপনি এক্ষুণি চলে যান
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পকেটে হাত গুজে বললো
-না গেলে কি করবে, আর তাছাড়াও আমার বাড়ি,আমি যেখানে খুশি যাবো। এ্যানি প্রবলেম?
-আপনার বাড়ি হলেও এই ঘরটা আপাতত আমার, আপনি উইদাউট পারমিশন এভাবে আসতে পারেন নাহ।
আরও দু কদম এগোতে এগোতে বললো
-আমি কি পারি কি না পারি সেটা তোমার ধারনার বাহিরে।
শুকনো ঢক গিললাম। একটুও বিশ্বাস করিনা আমি এই লোকটাকে এখন। এর ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে নাহ, আমি পেছন ঘুরে দৌড় দিতে নিলেই খপ করে আমার হাত ধরে ফেললো।
ক্রমাগত ছুটাছুটি করছি ছাড়া পাওয়ার জন্য। লোকটা কোনো প্রতিক্রীয়া ছাড়া এক হাতে আমার কবজিটা আবদ্ধ রেখেই দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ ছটফট করেও হাত ছাড়াতে না পেরে ক্লান্ত স্বরে বললাম।
-ছাড়ুন প্লিজ। কেও দেখলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
-কে দেখবে,আপাতত তুমি আমি ছাড়া কেও নেই বলেই এক হাতে দেওয়ালে ভর দিয়ে ঝুঁকে দাঁড়ালো আমার দিকে, আমি চোখ মুখ খিচে দেওয়ালের সাথে লেগে আছি।
-খুব সাহস বেড়েছে নাহ? আমার মুখের উপর পারবো না বলা।
-আ আমার ভুল হয়ে গেছে আর করবো নাহ, আপনি প্লিজ চলে যান।
চোখ মুখ খিচেই অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম কথাটা।
মেঘ কিছুক্ষণ শান্তভাবে তাকিয়ে থেকে বললো
-এদিকে মুখ ফেরাও, আমার চোখে তাকিয়ে কথা বলো।
এক পলক আড়চোখে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এতো কাছ থেকে আমি কিছুতেই সইতে পারিনা মুখ খানা। বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দে তোলপাড় করছে। ঘনঘন শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত রাখার বৃথা চেষ্টা করছি
-আমার দিকে তাকাতে বলেছি, তুমি কি চাচ্ছো আমি নিজে তোমার ঘাড় টা এদিক ঘুরিয়ে নেই? তাহলে কিন্তু আমি সে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবোনা
কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে শুরু হয়েছে, আস্তে আস্তে কাঁপা কাঁপা দৃষ্টিতে তাকালাম, শান্ত গভীর চোখ জোড়ার দিকে। মেঘালয় হিসহিসিয়ে বললেন
-তোমাকে বারান্দায় যেতে বলেছিলাম। আমার মুখের উপর পারবোনা বলার সাহস কি করে হলো তোমার হু? আমার যতক্ষণ ইচ্ছে আমি দেখবো,তাকিয়ে থাকবো। তোমার সাহস কি করে হয় চলে আসার।
বলেই পালকের ভয়ার্ত চেহারায় তাকিয়ে আবারও বললো
-নেক্সট টাইম আমার কথার অবাধ্য হওয়ার চিন্তাও মাথায় আনবে নাহ,তাহলে আমি কি করবো তুমি ভাবতেও পারবে নাহ। বুঝতে পেরেছো?
আমি কোনো কথার উত্তর না করে, চুপচাপ তাকিয়ে আছি, এই মানুষ টাকে কিছুতেই বুঝা যায়না, এই ভালো তো এই খারাপ। শুধু মাত্র চলে এসেছি বলে এমন হুম’কি
-কি হলো উত্তর দাও
-আআচ্ছা
আমতাআমতা করে জবাবা দিলাম।
মেঘ খানিক দূরে গিয়ে দাঁড়ালো, পালকের দিকে খানিক চেয়ে থেকে বললো
-বিয়ের আগ অব্দি এভাবে আর আমার সামনে আসবেনা, এবারের মতো ছেড়ে দিলাম।
মেঘের কথায় পালক নিজের দিকে তাকিয়েই হুড়মুড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ালো, ছুটাছুটি করতে গিয়ে তার ওড়না সরে গেছে, লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে চেঁচিয়ে বললো
-আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান! এক্ষুনি!!
বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মুখ থেকে দু’হাত নামিয়ে দেখলো কেও নেই। তাহলে চলে গেছে। একা একাই বিড়বিড়িয়ে বলে
“নি’র্লজ্জ বে’য়াহা অস’ভ্য পরপুরুষ কোথাকার”
“লাস্টের ট্যাগ টা খুব জলদিই সরে যাবে, তারপর বুঝিয়ে দেবো কতখানি অ’সভ্য ”
মেঘের কণ্ঠস্বর শুনে পালক আবারও অন্যদিকে ঘুরে মুখ ঢেকে বলে
-আপনি এখনো যাননি!!
মেঘ পালকের এমন কান্ডে মুচকি হেসে চলে যায়
____________
-সারা তোর আব্বুকে পানি দে তো মা
-এক্ষুণি দিচ্ছি আম্মু।
বলেই জগ থেকে পানি ঢেলে তারেক হাসানের সামনে ধরলো। গ্লাসের পানি গুলো খেয়ে, তারেক হাসান বললো
-রুমানা, একটু এদিকে আসো তো কথা আছে।
শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন রুমানা বেগম। পাশে বসে বললেন
-জলদি বলো তো কি বলবে রান্না চাপিয়েছি তো, এতক্ষণ বসতে পারবো নাহ
-হ্যাঁ বলছিলাম যে
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।
-এই সময় কে এলো?
-তুমি বসো আমি দেখছি
বলেই উঠে এসে দরজা খুললেন রুমানা বেগম।
-আসসালামু আলাইকুম আপা।
-ওয়ালাইকুম সালাম, আপনারা!
-কেনো,আসতে পারিনা আমরা?
-হ্যাঁ হ্যাঁ, এ তো আমাদের সৌভাগ্য! ভেতরে আসুন না
বলেই দরজা ছেড়ে দাঁড়ালেন। দরজার স্বয়ং রমজান চৌধুরী আর তার সহধর্মিণী নিলাশা চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে, পালক কে দেখতে গেলে তাদের সাথে প্রায় ই কথা হয়েছে। এভাবে তাদের হঠাৎ আগমনে বেশ অবাক হয়েছেন রুমানা।
তারেক হাসান ও তাদের এরম হঠাৎ আগমনে বেশ বিহ্বলিত , সালাম দিয়ে বসতে বলে নিজেরাও পাশে বসলেন
-এমন অসময়ে না জানিয়ে এসে বিরক্ত করে ফেললাম তাই নাহ।
হাসি হাসি মুখে বললেন নিলাশা চৌধুরী।
-আরে না না,কি বলছেন আপা। আমরা তো ভাবতেই পারিনি আপনারা এভাবে হঠাৎ আসবেন। অবাক হয়েছি ঠিকই তবে খুশি বেশি হয়েছি।
-আসলে একটা দরকারে এসেছি আমরা, দরকার বললে ভুল হবে, অনুরোধ নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে, দয়া করে ফিরিয়ে দেবেন নাহ
রমজান চৌধুরীর কথায় তারেক হাসান আর রুমানা বেগম কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থেকে, মৃদু হেসে তারেক হাসান বললেন
-এভাবে বলছেন কেনো ভাই সাহেব, আপনি তো আমার বড় ভাইয়ের মতো। আপনার জন্য কিছু করতে পারলে আমাদের ভীষণ ভালো লাগবে, আপনি বলুন নাহ
নিলাশা বেগম বলতে শুরু করলেন
-ভাই সাহেব আপনাদের নিকট একটা আর্জি নিয়ে এসেছি, আমার একটি মাত্র ছেলে মেঘালয়। ওকে নিশ্চয় জানেন। সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরেছে মাস দুয়েক হলো। আমার ছেলেটার জন্য আপনার মেয়েটিকে আমরা চাই ভাইসাহেব,এ আমাদের অনুরোধ, আবদার,আর্জি যাই ভাবুন।
নিলাশা বেগমের নিকট এহেন প্রস্তাব ভীষণ অকল্পনীয় ছিলো তারেক হাসান আর রুমানা বেগমের নিকট। মেয়ের পড়াশোনা আর থাকার খাতিরে এই ব্যক্তিজনের সাথে তাদের পরিচয়ের সীমা টা ছোট নয়, বেশ দীর্ঘ। ভদ্র মানুষ গুলোর আন্তরিকতা, স্বচ্ছতায় ভরা ব্যবহার আর মেয়ের প্রতি তাদের স্নেহটা তাদের খুব করে জানা। এমন একটা পরিবারে একমাত্র মেয়ের স্থান হলে কোনো মা বাবাই আপত্তি জানাতে পারবে নাহ, তবুও একটা কিন্তু থেকেই যায়, মেয়ে তার যদি রাজি না হয়,আগেই কি কাওকে কথা দেওয়া টা ঠিক হবে?
নিলাশা বেগম রুমানা বেগমের হাত ধরে তার অমায়িক হাসি টা বহাল রেখে বিনয়ী সুরে বললেন
-আমি বুঝি আপনাদের বিহ্বলিত হওয়ার কারণ, প্রতিটি সন্তানই বাবা মায়ের কলিজার অংশ হয়, তাদের নিয়ে হুট করেই কোনো সিদ্ধান্তে আপতিত হওয়া টা সহজ ব্যপার মোটেও নয়, তবুও আমাদের দেখা বা সম্পর্ক টা তো হুট করেই নয় আপা। আমাদের এই সম্পর্ক টাকেই আরেকটু প্রগাঢ় করতে চাই, আমার মেয়ে সন্তান হীনা ঘরটাতে আপনাদের বুক থেকে জান্নাতের হুর টাকে নিতে চাই। মা হিসেবে এই অধিকার টুকু কি দিবেন না আপা।
নিলাশা বেগমের কথায় মৃদু হাসলেন রুমানা বেগম। তারেক হাসান উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন
-ঠিকই তো বলেছেন,আমাদের সম্পর্ক টা তো নতুন নয়, এই দীর্ঘ সময়ের চেনা জানায় ও আজ কিন্তু আমাদের নীড়ে প্রথম পদার্পণ করেছেন। শুধু কথা বলেই কিন্তু যেতে দেবো নাহ।
বলে রুমানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো
-রান্না করো পালকের আম্মু, আজ ভাইজান আর আপা কে কিন্তু ছাড়ছি না সহজে।
রমজান চৌধুরী আর তার সহধর্মিণী ও হাস্যজ্বল চেহারায় সায় দিলেন। এমন একটা আত্মীয়, এমন আন্তরিকতার সম্পর্ক কি হাতছাড়া করা যায়? মোটেও নাহ।
__________________
বিকেলের সময়টাতে সূর্যের লাল আভায় ছড়ানো আশপাশ টা, পাখিদের কিচিরমিচির আর রিকশার টুংটাং শব্দ কানে বাজছে।
পরন্ত বিকেলের মৃদু নম্রতা আর শুকনো বাতাসে দুটি মানুষ পাশাপাশি হাঁটছে। ভেতরে নিয়ে একবুক ভালো লাগা, উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর ভালোবাসা নিয়ে। পাশাপাশি হাটঁতে হাটঁতে মাঝখানের অপ্রিয় দূরত্ব টা খুব নিশ্চুপভাবে ঘুচিয়ে নিলো। হাঁটার তালে মৃদু ছন্দে দোলা হাতটাই সযত্নে আঙুলের ফাঁকে আঙুল লেপ্টে দিলো। ছোট্ট বাচ্চাকে ধরতে যেমন সাবধানতা,তেমনি সজাগ তার স্পর্শ।
এমন সযত্নে রাখা প্রিয় মানুষের ছোঁয়া পেয়ে আরশির ভেতর টা ঝনঝনিয়ে উঠলো। একরাশ মুগ্ধতায় ভরে গেলো মনের প্রেমাঙ্গন।।
লাজুক চেহারায় উপচে পরা চুল গুলো নিবিড় ভাবে গুঁজে নিলো কানের পেছনে।
-ওইখানটাই বসি?
আরাবের কথায় ছোট্ট হু বলে সায় দিলো। হাতের বন্ধন টা আরও প্রগাঢ় করে রাস্তা পার করলো আরাব। পার্কের পাশের ফাঁকা মাঠের বেঞ্চিতে বসলো দুজন। মাঝে খুব দূরত্ব রাখেনি,তবে ঘনিষ্ঠতাও আনেনি। আরাব একটু সময় নিয়েই এগোতে চাই, আরশি তার হুট করে প্রকাশ করা অনুভূতিতে সায় দেবে সে প্রথমেই ভাবেনি। কিন্তু সে তো হুট করেই ভালোবাসেনি। ভার্সিটির শুরুর দিক থেকেই আরশিকে তার অন্যরকম ভালো লাগতো। প্রাণোচ্ছল, চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটির হাসি আর পাগল পাগল কথা গুলো তার শান্তশিষ্ট মনটাতে ভীষণ দোলন দিতো। আরশির পাগলামি, আর অপরিপক্ক বয়সের মতো স্বভাবে বেশ ভালো লাগার সৃষ্টি হতো। তবে তা দূর থেকেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলো। ভীষণ চাপা স্বভাবের হওয়ায় নিজ অনুভূতির প্রখরতার মাত্রা টা সহজেই ছাড়াতে দেইনি, সে সময় নিয়েছে। আপন অনুভূতি গুলোকে নীরিক্ষণ করেই সে এগিয়েছে। প্রেম নয় ভালোবাসায় সম্পর্ক চাই তার। সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার দিনগুলোতে মনের দ্বিধা আরও কমেছে, বেড়েছে ভালো লাগা, নিজের করে পাবার আকাঙ্ক্ষা। তাই তো আর দেরি করেনি তা প্রকাশে।
-ভাই ফুল নিবেন? ম্যালা সুন্দর, একদম তাজা। আর একটাই আছে নেন না!
ছোট বাচ্চাটির দিকে ডাকে তাকালো আরাব। বয়স আর কতো, এগারো বারো হবে। পরনে ছেড়া ময়লা জামা কাপড়। মুখে ঝুলানো অমায়িক হাসি আর হাতে শুভ্রুতার প্রতীক।
মৃদু হেসে ছেলেটির মাথায় হাত রেখে বললো
-দাম কতো?
-দশ টেকা ভাই
আরাব পকেট থেকে একশত টাকার একটা নোট বের করে হাতে ধরিয়ে দিলো।
-আমার কাছে তো ফেরত দেওয়ার টেকা নাই ভাই।
-ফেরত দিতে হবে নাহ তুমিই রেখে দাও
এতগুলো টাকা! বাচ্চা মনটাই যেনো মুহূর্তেই আনন্দে রাঙা হলো। প্রফুল্লচিত্তে বললো
-সত্যি কইতাছেন ভাই, সবটা আমার?
-হ্যাঁ তোমার
ছেলেটা ভীষণ আনন্দের সাথে ফুলটা দিয়েই ছুটে গেলো। আরাব ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে মৃদু হেসে বা পাশে তাকালো।
হালকা মিষ্টি রঙের জামা পরিহিতা তার প্রিয়তমাকে দেখতে পরন্ত বিকেলের চেয়েএ স্নিগ্ধ লাগছে। আরেকটু কাছে সরে বসে,আরশির কানের পেছনে গুঁজে দিলো শুভ্র রাঙা গোলাপ।
-ফুলের জন্য আরেকটি ফুল।
আরাবের কথায় আরশি লাজুক চাহনিতে চেয়ে ধীমি স্বরে বললো
-ধন্যবাদ।
আরাব মৃদু হেসে বললো।
-আরু!
-জ্বী?
-তোমায় ভীষণ ভালোবাসি
যেনো শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়ে একরাশ প্রশান্তি প্রবাহিত হয়ে গেলো আরশির। লাজে রাঙা মুখটা আরও নামিয়ে নিলো
কিছু সময় নিঃশব্দেই অতিবাহিত হলো, যেনো শব্দহীনায় নিস্তব্ধতায় কথা হলো, একে অপরের উত্তরের দলিল দিলো,, দুজনের ভেতর বয়ে যায় একে অপরের প্রতি সীমাহীন আকুলতা।
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪২
শরতের বিকেলে ফুরফুরে হাওয়ার মৃদু দোলনে কাশফুলের বাক ধরা নৃত্য আর আকাশে নাম না জানা পাখিদের উড়াউড়ির দৃশ্য টা ছবির মতোই চমৎকার লাগছে। অদূরে ছোট ছোট বাচ্চাদের একটি দল খেলা করছে, তার মাঝে ককয়েকজন আবার রাস্তার পাশ থেকে বন্য ফুল তুলে কানের পৃষ্ঠে গুঁজে নিচ্ছে পরম আনন্দে।
ছাদ থেকে দাঁড়িয়ে বাড়ির আশেপাশের দৃশ্যটা অবলোকন করছিলাম
-আফু, তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস, আর আমি তোকে সারা বাড়ি খুঁজে বেরাচ্ছি, শিগগির চল। কতো কাজ বলতো তোকে আন্টিও খুঁজছে।
বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিচে আনলো আরশি। আশেপাশে খুব একটা লোকজন না থাকলেও অন্যদিনের তুলনায় ঢের বেশি। আমি নিচে যেতেই সারা দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো
-আপু তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে। কখন থেকে খুঁজছি বলো তোহ। তাড়াতাড়ি চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে তোহ
সারার কথার মাঝেই আম্মু এসে বললো
-আফু, আই খেয়ে নে মা।বেলা গড়িয়ে বিকেল হতে চললো আর তুই এখনো খাস নি।
মায়ের ডাকে টেবিলে গিয়ে বসলাম। বাবা মামাকে নিয়ে সেই সকালে বাজারে গেছে, ঢের কাজ তার মাথার উপর, থাকবেই বা না কেনো,মেয়ের বিয়ে বলে কথা!
গতবার বাড়ি থেকে ফেরার পর পরীক্ষা দেওয়ার সপ্তাহ খানেক পরেই বাড়ি থেকে ফোন আসলো। আব্বু জানালো গুরুত্বপূর্ণ কোনো দরকারে আমায় ফিরতে হবে। আমিও দেরি না করে শিমুকে রেখে একাই ফিরলাম। বাড়ি আসতেই ব্যপার টা খোলাসা হলো।
আব্বু আম্মু আমায় মামনী আর আংকেলের প্রস্তাব টার কথা বলে সে ব্যপারে আমার মতামত চেয়েছিলো। মেঘ আমায় বিয়ের কথা বেশ কয়েকবার বলেছিলো। তবে সেটা তার নিত্যকার ধমক ভেবে ব্যপার টা আমি আমলে নেয়নি কিন্তু আব্বু আম্মুর মুখে বিয়ের কথা শুনে আমার সারা শরীরে বেয়ে তরঙ্গ খেলে গেলো। লোকটা সত্যিই বাড়িতে বিয়ের কথা বলে পাঠিয়েছে! এভাবে হুট করেই?
কিন্তু উৎকণ্ঠা ভেতরে দমিয়ে রেখে বাহ্যিক কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই উত্তর দিয়েছি। আব্বু আম্মু আমার আর মেঘের ব্যপারে তেমন কিছুই জানে নাহ। তাদের কাছে নিতান্তই এটা সামাজিকভাবেই বিয়ে৷ আমি বরাবরই পরিবারের বাধ্য মেয়ে,আজ অবদি জীবনের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তই আব্বু আম্মু দিয়েছে, আর আমি তা সানন্দে মাথা পেতে নিয়েছি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমি একই উত্তর দিয়েছি। তোমরা যেটা ভালো মনে করবে আমি তাতেই খুশি। ব্যস, বেশ কিছুদিন কথা বার্তা সেরে আব্বু আম্মুও রাজি হয়ে গেছে বিয়ের জন্য। পরিবার,পাত্র পরিস্থিতি কোনোটাই প্রতিকূলে না থাকায় তারাও দিন তিনেকের মাথায় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু তারপর আমার আর ঢাকা ফেরা হয়নি।
আব্বু আম্মু তাদের মতামত জানাবার পরের দিন ই বিয়ের দিন তারিখ ঠিকঠাক করেছে, মেঘ নাকি স্পষ্ট করে জানিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করতে চাই। উনি সবার সামনেও এমন বেহায়াপনা করবেন আমি ভাবতেও পারিনি। বাড়িতে বলেছে ভালো কথা, তা বলে এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে করবে এসব কথা বড়দের বলতে নূন্যতম লজ্জাবোধ ও হলো না লোকটার।
উনার লজ্জাহীনতার কারণেই আমার আর ফেরা হয়নি।আব্বু আম্মু চেয়েছিলো ভাইয়া দেশে ফেরার পরেই বিয়েটা হোক,তবে ভাইয়া জানিয়েছে আপাতত দুই এক বছরের মধ্যে দেশে ফেরা ইন্সটিটিউট থেকে নিষিদ্ধ। মা বাবা তাই অনেক ভেবে চিন্তে ভাইয়ার অনুপস্থিতিতেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই আয়োজন করা হয়েছে। মামা মামী তাদের পাঁচ বছরের ছেলে। আরশির পরিবার, শিমু আর আমরাই।
গুটি কয়েক কাছের মানুষ গুলো নিয়েই সবটা আয়োজিত। শিমু আরশি আর তার বাবা মা গতকাল এসেছে, মাঝে একদিন থাকা,, আগামী কালই বিয়ে।
আর আজ সন্ধ্যায় ই আমার তথাকথিত গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি যেখানে আয়োজন, কাজে হরদমে ব্যস্ত সেখানে আমি গিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো সবটা স্বপ্নের মতোই লাগছে আমার। হুট করেই কি হয়ে গেলো! এইতো কিছুদিন আগেই তো মেঘালয় নামক মানুষ টা আমার কাছে শুধু নাম মাত্র পরিচিত ছিলো, আর আজ রাত পোহালেই সে সারাজীবনের মতো আমার হয়ে যাবে, লিখিত এক দলিলের মাধ্যমে সবাইকে সাক্ষী রেখে এক জীবনের জন্য এক হয়ে যাবো দুজন। এখনো স্বপ্নের মতোই লাগছে।নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার মতো অদ্ভুত এক আনন্দানুভূতিতে মন মস্তিষ্কে ছেয়ে আছে।
খাওয়া শেষ করে ঘরে আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রুচি আপু বললো
-আফুরে,ও বাড়িতে গিয়ে আমাদের ভুলেই গেলি, নিজের একমাত্র হবু ননদিনীর খোঁজ ও নিস নাজ
-আমি খোঁজ কি করে নেবো আপু, আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ফোনটা ধরতে দেয়না আরশি আর শিমু, এখন তো সারাও যোগ দিয়েছে এদের সাথে
-সে কি কথা! ফোন কেনো ধরতে দিচ্ছে নাহ
-আমাকে ফোন দিলেই নাকি আমি উনাকে ফোন দেবো, আর বিয়ের আগ অব্দি নাকি তার সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ।
আমার উত্তর শুনে রুচি আপু যেনো বেশ মজা পেলো, সুর টেনে গলা উচিয়ে বললো
-ওও,,,এই জন্য তোর উনি আজকাল বিরহে মরছে, এইবার বুঝলাম ব্যপার টা
-মানে?
-মানে তোর উনি তোর সাথে কথা বলতে না পেরে আমাদের জ্বালিয়ে মারছে, একটু পরপর এসে বলে আপু নূরের সাথে কথা হয়েছে তোমার? রাফাত নিবিড় আদ্রিশ সব গুলোকে দিনে চব্বিশ বার করে বলে তোমার বান্ধবীর সাথে কথা হয়েছে? ও আমার ফোন ধরছে না কেনো।
আজ সকালে তো মামনীকেও বলেছে নূর আমার ফোন ধরছে না কেনো, ওকে আমার সাথে কথা বলতে বলো
আপুর কথায় না চাইতেও ফিক করে হেসে দিলাম, লোকটা আচ্ছা পাগল, কাকে কি বলতে হয় এসব বোধশক্তি দিন দিন লোপ পাচ্ছে বোধহয়।
-হাসি পাচ্ছে? আমার শান্তশিষ্ট ভাইয়ে এমন উন্মাদ প্রেমিক বানিয়ে খুব হাসি পাচ্ছে তোর?
তারপর কিছুক্ষণ থেমে বেশ থমকে ভরাট গলায় বললো
-ছোট থেকে আমি আর মেঘ একসাথেই বড় হয়েছি,মেঘের এই চেহারা দেখবো কখনও ভাবিনি জানিস। ভাই আমার তোকে ভীষণ ভালোবাসে, তুই আসবি বলে ওর কতো স্বপ্ন, আশা সাজিয়েছে জানিস, বড় বোন হয়ে তোর কাছে একটাই অনুরোধ করি আফু,আমার ভাইটাকে কখনও ভুল বুঝেও কষ্ট দিস না, একটু রাগী স্বভাবের হলেও ওর ভেতর টা জুড়ে শুধু তোকেই রেখেছে।
আপুর কথায় আনমনেই চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো, কেনো জানি নাহ,আমিও যে মানুষটাকে অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছি, আমার রাত দিন এক হয় সেই মানুষটাকে ঘিরেই। নিরব অশ্রুতে ভেতরের অস্ফুটবাক যেনো ব্যয়িত হলো।
হঠাৎ করেই কানে ধরে রাখা ফোনটা পেছন থেকে কেও খপ করে কেড়ে নিলো। পেছনে ঘুরতেই দেখি আরশি দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
-তোকে না বলেছি নো ফোন অ্যালাউড,
-আরে রুচি আপু ফোন করেছে, আপুর সাথে তো কথা বলতে দে
-নো মানে নাহহ,,আপুর সাথেও আমরা কথা বলবো।
বলেই ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যেতেই, সারা আর শিমু ঢুকলো ঘরে, হাতে ডালা ভরা জিনিস, ডালা টা খাটের উপর রেখেই বললো
-এখন চটপট রেডি হতে হবে আফু,কতো বেলা হয়ে গেলো, কখন তুই সাজুগুজু করবি কখন গায়ে হলুদ দিবো। শিগগিরই এদিকে আই দেখি।
সারা আর শিমু মিলে পালককে হলুদ আর লালের মিশ্রনের দামি শাড়িটা পরাতে লাগলো,কিছুক্ষণের মধ্যে আরশিও এসে, একসাথে তিনজন মিলে এক ঘন্টার মধ্যেই পালককে শাড়ি গয়নায় সাজিয়ে দিলো।
বড় গাড়িটা থেকে একে একে নেমে দাঁড়ালো রাফাত,আদ্রিশ,নিবিড়, ধ্রুব, তিয়াস, রুচিতা একে একে সবাই। সবাই নেমে যেতেই ধ্রুব গাড়িটা পার্ক করে সেও এগিয়ে এলো।
বেশ অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত একতালা বাড়িটা, বাড়িটার উত্তরের দিকে একটা পুকুর মতো দেখা যাচ্ছে তার পাশ ঘেঁষেই ছোট খাটো একটা বাগান। একতালা বিশিষ্ট বাড়িটার দেওয়ালে উজ্জ্বল রঙের স্পর্শ, বড় বড় গাদা ফুলের ঝালর ঝুলানো বারান্দা জুড়ে, দেওয়ালের গায়ে গায়ে লাল নিল সবুজ রঙের মরিচবাতি, বাগান টার সাথ ঘেঁষেই একটা বড় উঠান সেখানে হরেক রকমের ফুলে সাজানো স্টেজ । পালকের গায়ে হলুদ আজ,সে নিয়েই বাহারি সাজে সেজেছে, তার বাড়ি। রাফাত নিবিড় আদ্রিশের এর আগেও অনেকবার আসা হয়েছে এবাড়িতে। তখনকার চেহারা আর এখন কার চেহারায় বিশাল তফাত বাড়িটার, যেনো পালক আর মেঘের ভালোবাসার ছোঁয়া বাড়িটাও নিজের দেওয়ালে দেওয়ালে মেখেছে। রুচি তার স্বামী তিয়াসের কোলে মিষ্টি, ধ্রুব আরাব সকলের এই প্রথম আসা এবাড়িতে।
বাড়িতে উপস্থিত সকলের পরনে হলুদের পোশাক, সবাই যার যার মতো আড্ডা, হাসি, আনন্দ,আর কাজে মেতে পরিবেশ টাকে আরও মুখরিত করে তুলেছে, হলুদের ডালা হাতে এগিয়ে গেলো রুচিতা আর বাকি সবাই।
-আরে রুচিতা, এসে গেছো মা! এসো এসো এদিকে এসো। আরশি, শিমু শিগগির আই,দেখ চলে এসেছে ওরা
রুমানা বেগমের কথায় বাড়ির ভেতর থেকে আরশি, শিমু, সারা ছুটে এলো। পালকের মামা মামীও এসে সবাইকে স্বাগতম করে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলো। ওরা সকলেও আতিথেয়তা স্বীকার করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। বাড়ির ভেতরটা আরও বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো। ভেতরে ঢুকেই নিবিড় বললো
-আন্টি, আফু কোথাও, নতুন বউয়ের মুখ দেখার জন্য তো আর তর সইছে নাহ।
-নতুন বউকে দেখবে বইকি, আগে একটু গলা ভিজিয়ে নাও তো অনেকটা পথ এসেছো,
বলেই শরবতের ট্রে টা টেবিলের উপরে রাখলেন আরশির মা পারুল বেগম। আরশির বাবা মাও হাতে হাতে সব কাজ করছেন একই বাড়ির সদস্যদের মতো, তারেক হাসান, আরশির বাবা আমজাদ তৈয়ব আর পালকের মামা রেদোয়ান আহমেদ সকলে বাইরের কাজ ডেকোরেশন, খাবারের দিকটা সামলে যাচ্ছেন, আর বাড়ির ভেতরের মেয়েলি কাজ গুলো রুমানা বেগমের সাথে পারুল বেগম আর পালকের মামী শিলা সামলাচ্ছেন, যদিও বিয়েটা নিতান্তই পারিবারিক আয়োজনে খুব বেশি লোক সমাগম করেনি তবুও বিয়েতে কতো হাজারো কাজ।
-আম্মু আফু কই, আমি আফুর কাছে যাবো
-যাবে তো মা, আমরা তো আফুকেই দেখতে এসেছি।
মিষ্টির কথায় রুচিতা হেসে উত্তর দিয়েই তিয়াসকে বললো পালকের বাবার কাছে উপহার গুলো দিয়ে আসতে, আরশি আর সারা ওদের সবাইকে নিয়ে পালকের ঘরে যায়।
-মাম্মাম!! বলেই এক ছুটে দৌড়ে যায় মিষ্টি পালকের কাছে
পালকে খাটে বসে হাতের চুড়ি গুলো পরছিলো এভাবে মিষ্টি কে দৌড়ে আসতে দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণেই দু হাতে জড়িয়ে ধরে, কোলে তুলে খাটে বসায়। মিষ্টির পেছন পেছনই রাফাত নিবিড় আদ্রিশ রুচিতা, ধ্রুব আর আরাব আসে ঘরে, সবাইকে এক সাথে দেখে পালক বেশ খুশি হয়ে এগিয়ে যায়।
-আরে আফুউ,,বেবস তোমাকে তো পুরা ফুলটুসি বউ লাগতাছে, এখন তো আমার মেঘ ভাইরে সরাই নিজেরই বিয়ের পিরিতে বসতে ইচ্ছে করছে ভাই
আদ্রিশের কথায় ফিক করে হেসে দেয় পালক, আরশি পাশ থেকে রাফাতের গায়ে জোরে চিমটি বসিয়ে বলে
-খবরদার যদি তোর অশুভ নজর টা এদিকে দিস, তোরে তো ওই রাফাতের লাভার রিপনাও বিয়াইবো নাহ
রিপনার নামটা শুনে রাফাত তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
-দ্যাখ আপদের ঘরের আপদ, তোর মতো খাই’সটার মুখ দিয়ে যদি ভালো কথা না কইতে পারোস তাইলে মুখটা বন্ধ রাখ, রিপনার নাম নিলে তোরে আজ ড্রেনে চু’বামু আমি
-আরে থামম, কি শুরু করলি, এই সময়েও তোরা ঝগড়া করবি। দেখি সর তো আমায় দেখতে দে
বলেই রুচিতা এগিয়ে এলো পালকের দিকে, হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে তা থেকে একজোড়া ভারি সোনার চুড়ি বের করে পালকের দু’হাতে পরিয়ে দিয়ে বললো
-এই চুড়ি আমাদের চৌধুরী বাড়ির বউদের নামেই। নানি মামিকে দিয়েছিলো, মামি তোর জন্য পাঠিয়েছে, চৌধুরী বাড়ির ঐতিহ্যের একটা অংশ এই বালা জোড়া, বহু আগে থেকেই বংশপরম্পরায় এটা চলে আসছে।এটা সবসময় সামলে রাখবি।
বলেই চোখ থেকে কাজলের ফোটা বসিয়ে দিলো পালকের কানের পিছে
-মাশ-আল্লাগ মাশ-আল্লাহ কি দারুন যে লাগছে তোকে আফু। যেনো অপ্সরী। আমার ভাই তো এমনেই পাগল তোর প্রেমে তোরে এই রূপে দেখলে নির্ঘাত অক্কা পাবে।
রুচিতার কথায় লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো পালক। সেই চিরচেনা মানুষ গুলোকেও আজ নতুন লাগছে যেনো, নতুন সম্পর্কের বেড়াজালে বাধতে মানুষ গুলোর ও যেনো নতুনত্ব রূপ দেখা যাচ্ছে।
-তোমরা আফু কেনো বলছো। মাম্মাম কেনো বলছো নাহ, মেঘ আমাকে বলেছে আফুকে মাম্মাম বলেই ডাকতে।
মিষ্টির কথায় পালকের লাজ যেনো আরেক দফা বেড়ে গেলো, এতদিন আফু ডাক শোনা মিষ্টির মুখে মাম্মাম ডাকটাও যেনো অন্যরকম লাগছে।
মিষ্টির কথা শুনে তিয়াস এগিয়ে এসে বললো
-মেঘ তো তোমার মামা হয়, তাই আফু শুধু তোমার মাম্মাম। আমাদের তো ভাই হয়, সে হিসেবে আমরা তোমার মাম্মাম কে ভাবি ডাকতে পারি মাম্মাম তো শুধু তুমি ডাকবে।
তিয়াস ভাইয়ের কথার পৃষ্ঠে নিবিড় এবার বললো।
-দেখি দেখি সাইড প্লিজ, আমাদের ভাবির কয়টা ছবি তুলতে দাও তো, ভাবির চেহারা এইকইদিন না দেখতে পেয়ে ভাই আমার শুকিয়ে গেছে, একটু প্রোটিন ফরওয়ার্ড করতে হবে তো।
বলেই পালকের সামনে ফোন ধরে ছবি তুলতে গেলেই খপ করে ফোনটা কেড়ে নেই কেও
-প্রোটিন ভিটামিন সব কাল বিয়ের পর একবারে সরাসরি ইনটেইক করবে,এখন কোনো ফরওয়ার্ডিং চলবে নাহ। বিয়ের আগ পর্যন্ত বউয়ের মুখ দেখা বরের জন্য বয়কট।
চিকন মেয়েলি কণ্ঠস্বরে পাশ ফিরে তাকালেই, হলুদ রঙের লেহেঙ্গা পরা ছোট পাতলা উজ্জ্বল গড়নের একটা মেয়েকে দেখলো নিবিড়। কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া করতে পারছে নাহ, কতক্ষণ ওভাবে হা করে চেয়ে আছে মুখের দিকে নিজেরও হিসেব নেই,
-একদম ই তাই, সারা ফোনটা দে তো আমাকে, কোনো ছবি পাঠানো যাবে না মেঘ ভাইকে,যে ছবি পাঠাবে তাকেও বয়কট করা হবে।
আরশির কণ্ঠের ঘোর ভাঙলেও এখনো হা করে চেয়ে আছে নিবিড় সারার পানে। ভেতরটা যেনো ধক করে উঠলো কেমন করে।
তখনি রুমানা বেগম আর শিমু ঘরে প্রবেশ করলো।
-আফুকে নিয়ে আয় তোরা, রাত হয়ে যাচ্ছে তো। হলুদের অনুষ্ঠান শুরুও তো করতে হবে না কি।
রুচিতা আর সারা পালককে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে স্টেজের দিকে হাঁটা ধরলো, তার পিছু৷ তিয়াস, রাফাত নিবিড় সহ বাকিরাও গেলো, আরশি ফুলের ডালা গুলো নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে নিলেই পেছন থেকে দুটো হাত কোমর জড়িয়ে ধরে টেনে নিলো
-আরে কি করছেন, কেও দেখে ফেলবে তো
-দেখুক, দুটো দিন ধরে না তোমার চেহারা দেখতে পাচ্ছি, না ফোনে পাচ্ছি,বান্ধবীর বিয়েতে এসে আমাকেই ভুলে গেলে
-ভুলবো কেনো এই একটু ব্যস্ততার জন্য কথা বলতে পারিনি
মিনমিনিয়ে উত্তর দিলো আরশি, ঘরে ঢোকার পর থেকেই আরাব তার দিকেই চেয়ে ছিলো, ইচ্ছে করেই তাকায়নি৷ এতোগুলা মানুষের সামনে আপত্তিকর অবস্থায় পরতে চাইনি বলে, এখন তো লোকটা এসে ঝাপটে ধরেছে, কেও দেখলে কি ভাববে।
-আচ্ছা তাইলে এখন একটা চুমু দাও
-কিহ, কিসব বলছেন কেও দেখলে আর মুখ দেখাতে পারবো নাহ
-কাওকে মুখ দেখানো লাগবে নাহহ, আমি দেখতে পারলেই হবে। ফটাফট একটা চুমু দাও না তো আমি ছাড়ছি নাহ
আরাবের কথায় আরশির লজ্জায়, ভয়ে মিইয়ে যাচ্ছে, লোকটা যা তা বেহায়াপনা শুরু করেছে ইদানিং। এখন কেও যদি এভাবে এসে দেখে ফেলে। তার মাও তো এদিক ই ঘুরাফেরা করছে, দেখলে কতো বড় কেলেঙ্কারি হবে!
-প্লিজ ছাড়ুন, আম্মু আব্বু যখন তখন এসে পরবে, দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে
-হোক কেলেঙ্কারি,,পরে কলঙ্ক ঢাকতে দুজনকে বিয়ে দিয়ে দেবে, দারুণ মজা হবে বলো!
-কিসব বলছেন, আপনার কি মাথা টা পুরো গেছে
-এতসব শুনতে চাইনি, ফটাফট চুমু দাও, দেরি করার জন্য প্রতি মিনিট প্রতি একটা করে চুমু বাড়বে।
এদিক ওদিক তাকিয়ে কোনো উপায় না পেয়ে আরাবের জেদের কাছে হার মেনে গালের উপর টুস করে একটা চুমু দিয়ে আরশি এক ধাক্কায় আরাবকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
আরাব মুচকি হেসে গালে চুমু দেওয়া জাগায় হাত বুলিয়ে হাঁটা ধরে
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ