#হীরকচূর্ণ_ভালোবাসা
#পর্ব৩৪ (অন্তিম পর্ব)
#রাউফুন
অসুস্থ মেয়েকে কিছুতেই ওষুধ খাওয়াতে পারে না তুলিকা। অনলাইন ঘেটে একটা বুদ্ধি বের করলো সে। অনেক ভিডিওতে দেখেছে সে, সন্তানকে চিপসের প্যাকেটে কলা পিস পিস করে কে’টে ঢুকিয়ে খেতে দিচ্ছে মহিলারা। আরে কত রকমের পন্তা অবলম্বন করেন তারা। এখন আঁতুরের ডিম খাওয়ার সময় তাই সে ডিমের মধ্যে ওষুধ ঢুকিয়ে খেতে দিলো। আঁতুর বাধ্য মেয়ের মতো ডিমটা আস্তে আস্তে খেতে থাকে। ডিম খাওয়া শেষ হলে তুলিকা এসে আঁতুর কে জিজ্ঞেস করে,
‘মা আঁতুর ডিম খেয়েছো? তোমার শরীর কিন্তু খুব দুর্বল হয়ে গেছে।’
‘হ্যা মা, খেয়েছি। তবে আজ ডিমে ভেতর একটা বীজ ছিলো সেটা ফেলে দিয়েছি।’
‘ওমা কি বলো? ফেলে দিয়েছো কেন?’
‘অন্য দিন তো ডিমের ভেতর বীজ থাকে না আজ ছিলো কেন? আমার মনে হলো ডিমটা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো জানি তুমি আমাকে খারাপ ডিম খেতেই দেবে না। তাই বীজ ভেবে ফেলে দিয়ে পুরোটা খেয়েছি। ভালো করেছি না মা?’
‘আজ অন্য ডিম ছিলো মা তাই ওমন ছিলো! তাই বলে সেটা না খেয়ে ফেলে দিলে?’ হতাশ হয়ে বললো তুলিকা। এরপর কত শত নাটক করেও কিছুতেই ওষুধ খাওয়ানো গেলো না আঁতুরকে।
পাঁচ বছরের পাকা মেয়ের এমন জেদে তুলিকা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। মাইজিন অফিস যাওয়ার জন্য বের হলো। এসে দেখলো তুলিকা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
‘আরে কি হয়েছে? তুমি এখানে বসে আছো? ওখানে নিহাল আর নিহাদ কাঁন্না করছে।’
‘কাঁদুক। আমার আর ভালো লাগে না।’
‘এতো হাইপার কেন হয়ে আছো? আবার কি হয়েছে?’
‘আপনার মেয়ে যে ঔষধ খেলো না কি করবো হ্যাঁ?’
‘যা কিছু করে খাওয়াও না।’
‘আজকে ওষুধ ডিমের ভেতর দিয়েছিলাম তাও সেটা বীজ ভেবে ফেলে দিয়েছে।’
মাইজিন হো হো শব্দ করে হেসে উঠলো। বললো, ‘মেয়ে আমার চালাক হয়েছে। কই দেখি দাও ওষুধ আমি খাইয়ে আসি।’
‘হ্যাঁ দিচ্ছি যান যদি পারেন। মেয়ে তো আবার বাপ দোলালি। পেটে ধরলাম আমি মেয়ে হয়েছে বাপ নেউটা।’
তাদের জীবনের পাঁচটি বছর এভাবেই কে’টে গেলো হাসি-খুশি, স্বাচ্ছন্দ্যে। আহ আর কি চাই জীবনে। এইতো জীবন। বাবা বলতে মেয়ে দুটো অজ্ঞান। আর ছেলে গুলো তো সবে বড় হচ্ছে। সব কটা যে বাবা নেউটা হবে সে বেশ ভালো করেই জানে। তম্বন্ধে মিষ্টি হাজির হলো।
‘বুবুজান!’ সুন্দর করে ডেকে জড়িয়ে ধরলো সে তুলিকাকে!
‘হয়েছে হয়েছে। নাফিস ভাই ভেতরে এলো না কেন?’
‘তার অফিসে যাওয়ার তাড়া আছে তাই ভেতরে এলো না। বললো সবাইকে মিস করছে যাওয়ার আগে দেখা করে যাবে।’
‘আচ্ছা তুই যা আঁতুর কি করছে দেখ গিয়ে!’
‘তৃধা কোথায়?’
‘ওর দাদুর সঙ্গে হাঁটতে গেছে।’
‘আর নিহাল-নিহাত?’
‘ওঁদের রেশমা আপা দেখছেন। এই চার বিচ্ছুবাহিনীতে আমাকে জ্বালিয়ে মেরে ফেলবে একদিন!’
‘আহ বুবুজান এভাবে বলিও না তো। তোমার বাচ্চারা কি মিষ্টি বলো তো?’
‘হ্যাঁ মিষ্টিই বটে। আমাকে জ্বালায় তোদের ভাই- বোনের তো কিছু না।’
‘আহা রাগ করো না বুবুজান। আমার এমন বাচ্চা থাকলে কোনোদিনও বকতাম না। সারাক্ষণ কোলে চাপিয়ে আদর করে গাল চটকে দিতাম।’
‘হ্যাঁ আগে মা হও তারপর বুঝবে।’
‘আমার মা হওয়ার কি দরকার? অলরেডি আমার চারটি সন্তান আছে তো!’
মিষ্টি বলতে বলতে ভেতরে চলে গেলো। তুলিকা মিষ্টির কথায় মুচকি হেসে উপরে চলে গেলো। সে শুধু সন্তানের জন্মই দিয়েছেন কিন্তু মায়ের দায়িত্ব পালন করছে তার একমাত্র বোন মিষ্টি। আহ কি নিদারুণ মমত্ববোধ মেয়েটার! খালামনিকে পেয়ে আঁতুর ছুটে এলো।
‘আমার মাম্মাটা কি করছিলো?’
‘দেখো না খালামনি বাবা আমাকে জোর করে ওষুধ খাইয়ে দিলো। বাবার সঙ্গে আঁড়ি আর কথা নেই। আতুর আঁড়ি করে দিয়েছে।’
‘উফ বাঁচালে মিষ্টি। আমি যায় অফিসের জন্য লেট হচ্ছে। ওঁকে তুমিই সামলাতে পারবে।’
‘ওকে ভাইয়া যান।’
মাইজিন চলে গেলো। আঁতুরকে পড়া বােঝানোর চেষ্টা করছিলো মিষ্টি। অনেকবার বােঝানাের পরেও সে বুঝতে পারে না।
‘আঁতুর খালামনিকে বলো তো অ, আ তে কি হয়?’
‘অ তে অজগর সাপ, আ তে গাছের পাকা আম!’
‘এভাবে না, বলবে, অ- তে অজগর, আ তে আম। বাকি পড়া গুলাও বলে ফেলো।’
বাকি পড়া গুলো কোনো রকমে বললো আঁতুর। এরপর প্রশ্ন করলো,
‘খালামনি আম পাকলে মাটিতেই পরে কেন? আম তো উপরে আকাশেও যেতে পারতো।’
‘সেসব তুমি বুঝবে না। আগে বড় হও।’
‘খালামনি আম আকাশে গেলে ওখানে খাবে কে? তাই আমটা নিচেই পরে সিম্পল! তুমি পারো না বললেই হয়!’
‘তাই? তবে আমাকে শিখিয়ে দাও তো দেখি!’
‘আচ্ছা এসব পড়া কে বানালো?’
‘এসব পড়াশোনা না থাকলে সুশিক্ষা পাবে কিভাবে মা?’
‘অ আ ক খ ই কেন? অন্য কিছু হলো না কেন?’
‘কারণ এভাবেই বাক্যের তৈরি হয়ে থাকে। এরপর একেকটা অক্ষর দিয়ে শব্দ তৈরি করা যায়।’
‘যারা পড়াটা লিখেছে তাদের মাথাতে এসব এলো কেন?’
‘এসেছে কোনো ভাবে!’
‘কেন এসেছে? আচ্ছা পাখির নাম পাখিই কেন হলো? গাছের নাম গাছ কেন? পাতার নাম পাতা কেন? ভাতের নাম ভাত কেন? এই যে কাগজ কলম, এগুলোর নাম কাগজ কলমই কেন হলো?’
আঁতুরের এমন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে গেলো মিষ্টি। চেচিয়ে বললো,
‘এই বুবুজান আমি তোমার মেয়েকে পড়াতে পারবো না। নিয়ে যাও তোমার মেয়েকে।’
আঁতুর শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। তার কি দোষ? যদি তার মাথায় এসব ঘুরঘুর করতে থাকে সে জানে করতে পারে? আঁতুরের মন খারাপ দেখে মিষ্টি কতক্ষণ মৌন থেকেও হেসে উঠলো। আঁতুরকে সুরসুরী দিয়ে হাসালো। খিলখিল করে হেসে উঠলো ছোট্ট আঁতুর।
তুলিকা নিহাল নিহাতের সঙ্গে খেলছিলো। সে সময় তার ফোন বেজে উঠলো। আশফির কল এসেছে। তুলিকার মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
‘এই আশু কেমন আছিস? পরাগ আর মুহিদ কেমন আছে?
‘আমি এবং বাচ্চারা ভালো আছি। তুই বল?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি আমরা সবাই।’
আশফি চুপ করে আছে দেখে তুলিকার চিন্তা হলো।
‘কি হয়েছে আশু? মন খারাপ কেন? বাড়িতে সব ঠিক আছে তো?’
‘হ্যাঁ এখানে সব ঠিক আছে। আসলে শিপন ভাইয়া নূরী ভাবিকে ডিভোর্স দিয়ে আমার মামাতো বোনকে ঘরে তুলেছে। নূরী ভাবির কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমার ভাই এতোটা নিচ কি করে হলো ভাবতে পারি না। দশটা বছরের সম্পর্ক এভাবে শেষ করে দিলো?’
‘থাক যা হবার তা হয়ে গেছে। নূরী ভাবির কি অবস্থা জানিস কিছু?’
‘হ্যাঁ। জানিস ভাইয়া ভাবির কাছে থেকে তার মেয়েটাকেও ছিনিয়ে নিয়েছে। তুই একবার ভাব? একজন মায়ের ঠিক কতটা কষ্ট হয়েছে? সন্তান স্বামীকে হারিয়ে দিশাহারা অবস্থা ভাবির। আমি ভেবেই পাইনি কিভাবে স্বান্তনা দিবো ভাবিকে। একটা জানুয়ার আমার ভাই ওর থেকে মুক্তি পেয়েছে ভালোই হয়েছে কিন্তু আমি না মানতে পারছি না সবটা। নূরী ভাবির মতো মানুষ হয় না রে।’
‘মন খারাপ করিস না আশু। নিশ্চয়ই আল্লাহ নূরী ভাবির তকদীরে ভালো কিছুই রেখেছেন! আল্লাহ তো একমাত্র উত্তম পরিকল্পনাকারী।’
দশ বছরের সম্পর্ক কি করে এক নিমিষেই ভেঙে গেলো ভাবতেই তুলিকার বুক ভার হয়ে আসে। সব পুরুষ মানুষ তো আর এক রকম হয় না। দুনিয়াই যেমন তার স্বামী মাইজিনের মতো ভালো মানুষ আছে তেমনই শিপনের মতো বা’জে লোক ও আছে। সে ব্যস্ত হয়ে পরলো নিজের কাজে।
মনে মনে সে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যত যায় হোক, একজন মানুষ যদি শুধরে যায় তাকেও একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে গেলো নিজের গন্তব্যে।
একটা বৃদ্ধাশ্রমের কাছে গিয়ে নামলো তুলিকা। রৌফ সুলতানের বয়স হয়েছে তার ও তো দিন শেষে একজন গল্প করার সঙ্গীর প্রয়োজন আছে। এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না। শাপলা সিদ্দিকার জামিন হয়েছে মাস ছয়েকের মাথায়। সেখান থেকে বেরিয়েই এই বৃদ্ধাশ্রমে উঠেছেন শাপলা। এর আগেও তুলিকা শাপলাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু শাপলা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি যেতে চান না। তিনি চান না নতুন করে কোনো অশান্তি হোক। কিন্তু আজকে আর তা হবে না। তুলিকা তাকে এখান থেকে নিয়ে তবেই ফিরবে।
‘মা তৈরি হয়ে নিন তো!’
‘তুলিকা তুমি?’
‘চলুন আপনার ব্যাগ গুছিয়ে নিন। আজকে আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি!’
‘আমি তো তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি মেয়ে আমি আর ফিরবো না। আমি এখানেই বেশ আছি।’
‘সেটা আপনাকে বলতে হবে না। মা আপনি চান না আমার বাচ্চারা একটা সুস্থ, ফুল ফ্যামিলি পাক? একটা হ্যাপি ফ্যামিলিতে বেড়ে উঠুক?’
‘আমি যে পা’প করেছি তার যে ক্ষমা হয় না রে মা। এই পা’পের বোঝা বইতে বইতে আমি যে শেষ হয়ে যাচ্ছি। কি করে এই পা’পের প্রায়শ্চিত্ত করবো আমি?’
‘আপনি পা’পের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান? ওকে চলুন।আমার সন্তানদের দেখাশোনা করে না হয় সবকিছুর প্রায়শ্চিত্ত করবেন। চলুন চলুন কোনো কথা নয়।’
শাপলার চোখ ভিজে যায়। অবাক পানে তাকিয়ে থাকেন তুলিকার পানে। তাকে জোর করেই বাড়ি নিয়ে এলো তুলিকা। সবাই তার সঙ্গে এমন ব্যবহার করলো যেনো কোনো দিন কিছুই হয়নি। শুধু রৌফ সুলতান ছিলেন নির্বিকার। কোনো কথায় বলেন নি তিনি। চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে বসে ছিলেন। তুলিকা জানে আস্তে আস্তে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
মাইজিন অফিস থেকে এসে শাপলাকে দেখে খুশি হলো। সম্পুর্ন সময় স্বাভাবিক ব্যবহার করলো। তুলিকা আগে থেকেই জানিয়েই রেখেছিলো তাকে। তুলিকা এই কাজ টা না করলেও মাইজিন নিজেই করতো।
‘ভালো আছেন মা?’
শাপলা আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। মাইজিনকে স্নেহের পরশ দিয়ে বললেন, ‘এতো কিছুর পরেও তুমি আমায় মা বলছো?’
‘পুরনো কথা ছাড়ুন। মাকে মা বলবো না তো কি বলবো? তবে আপনি না চাইলে বলবো না।’
‘পাগল ছেলে এভাবে বলিস না। তুই আমাকে ক্ষমা করিস বাবা।’
‘ক্ষমা করবো একটা শর্তে!’
‘কি শর্ত?’
‘আমার সন্তানদের সঙ্গে শেষ অব্দি থাকতে হবে। তাদের রোজ রুপকথার গল্প শুনিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতে হবে। পারবেন?’
‘খুব পারবো।’
তুলিকা আড়াল থেকে সবটাই দেখলো। মাইজিনের মতো স্বামী পেয়ে সে অনেক গর্ব করে৷ গর্বে তার বুক ভরে যায়। তার স্বামীর মতো মানুষ হয় না এটা সে বার বার উপলব্ধি করেছে। আজও করে।
•
পরিশিষ্ঠঃ
‘আচ্ছা ধরেন সমুদ্রে ডু’বে আমি মা’রা গেলাম আপনি কী করবেন?
‘এতো রাস্তা থাকতে সমুদ্রে কেন গিয়ে ম’র’বে মিষ্টি?’
‘ওও তার মানে আপনি চান আমি ম’রে যায়! এই ছিলো আপনার মনে?’
‘আরে বলে কি? সেটা কখন বললাম? তুমিই তো বললে সমুদ্রে ডু’বে ম’র’বে!’ রসিকতা করে বললো নাফিস।
মিষ্টি হাউমাউ করে কাঁন্না করতে লাগলো। ফ্লোরে বসে কপাল চাপড়ে জপতে থাকে, ‘হায় হায় আল্লাহ এই ছিলো আমার কপালে? একটা বুড়ো বর জুটলো সেও নাকি এখন চাই আমি সমুদ্রে ডুবে ম’রি? বিয়ের আগে যে ঘুরঘুর করতো সেসব বুঝি মিথ্যা? আর এখন বিয়ের বছর দুই ঘুরতে না ঘুরতেই সব ফুশ!’
‘আল্লাহ শান্ত হোও তুমি। রোজ রোজ একটা প্রশ্নই করো কি বলবো আমি আর?’
‘আপনিও বা কেমন মানুষ? বলতে পারেন না আমি মরলে আপনি কি করবেন?’
‘আমি পাগল হয়ে যাবাে।’
‘মিথ্যা কথা বলেন আপনি নাফিস। আপনি যে আবার বিয়ে করবেন তা আমি জানি।’
‘হ্যাঁ পাগলে কী না করে বলো?’
‘এক্কেরে মাইরা দিমু তোরে নাফিসসার বাচ্চা! তোর আবার বিয়ের সাধ ঘুঁচিয়ে দিবো!’
‘বিয়ে করবে না বলেছিলে ওটাই ঠিক ছিলো এখন আমার জীবনটা জ্যান্ত শেষ না করে ছাড়বে না।’
‘এতো বড় কথা? আজই আমি চলে যাবো আপুর বাসায়!’
‘যাবে যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছো, তখন সব শাড়ী গহনা রেখে যেও। আমার আরেকটা বিয়েতে কাজে দিবে।’
‘হ্যাঁ আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই ওগুলো রেখে যাবো। পুড়িয়ে রেখে যাবো তাও ওগুলো থাকবে না। আমার সতীন এসে আমার পোশাক পরবে তা হতে দেবো ভেবেছেন।’
‘না পুঁড়াতে যেও না ভুলেও। আমি আর দ্বিতীয় বার টাকা খসিয়ে বিয়ের মার্কেট করতে পারবো না।ওগুলো দিয়েই নতুন একটি বিয়ে করবো।’
‘তবে রে তুই আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করে ঘরে নতুন বউ আনার জন্য এতোটাই উতলা হয়েছিস? দাঁড়া দেখাচ্ছি।
এইরে ডোজ টা বেশিই হয়ে গেছে। বাচ্চা মরিচ তো দেখি ক্ষ্যাপে বোম্ব। মিষ্টি বিছানার ঝাড়ু হাতে নিতেই নাফিস সোজা খাটের তলায় ঢুকে চিৎ পটাং হয়ে ঢুকে পরলো।
‘এই বেরিয়ে আসেন ওখান থেকে। আজ আপনার একদিন কি আমার যতদিন লাগে।’
‘ক্ষ্যামা দাও মা গো! আমি আর এমন কথা মুখেও আনবো না।’
‘কি বললেন?
‘স্যরি স্যরি বউ। এই এক জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ-ই আসবে না।’
‘এই কথাটাই আজ সারারাত খাটের নিচে শুয়ে শুয়ে জপ করুন। মিষ্টি আমার বউ আছে থাকবে। মিষ্টি আমার বউ আছে থাকবে। এটাই বলতে থাকুন।’
‘আল্লাহ সারারাত আমাকে মশাই আর আস্তো রাখবে না! বউরে এতোটা নিষ্ঠুর হইয়ো না। আমি আর জীবনেও বিয়ের নাম মুখেও নিবো না।’
‘ঠিক তো?’
‘হ্যাঁ একদম পাক্কা প্রমিস।’
‘বেরিয়ে আসুন এবার।’
‘মা’রবে না তো?’
‘নাহ!’
‘প্রমিস?’
‘প্রমিস! আসুন। একটু পর থেকেই তো ভ্যালেন্টাইন্স শুরু। তাই দয়া করলুম।’
নাফিস বেরিয়ে এলো। মিষ্টি নাফিসের গা থেকে ময়লা, ঝেড়ে দিলো। এরপর বারোটা বাজতেই মিষ্টি নাফিসকে একটা চ’মু দিলো। নাফিস খুশিতে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বিরবির করলো,
‘ভ্যালেন্টাইন্স তোকে ধন্যবাদ। আজ বুঝেছি বিয়ের পর বউয়ের মা’র কতটা মিষ্টি হয়।’
•
‘আজ তো ভালোবাসা দিবস। আমার জন্য কি এনেছেন?’
‘কিছুই না। কি আনবো আর?’
‘হ্যাঁ আমি তো পুরনো হয়ে গেছি তাই না? চার চারটে বাচ্চা এখন আমার। আমার কি আর সেই রুপ আছে!’
‘আহা ওই দেখো কেমন রেগে যায়। তুমি কি জানো যত বাচ্চা হচ্ছে তোমার রুপ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে? চলো না আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার জন্য ট্রাই করি!’
‘এবারে বাচ্চাটা নিজের পে’টে নিতে পারলে বাচ্চা নিন। নিবেন? আর কত বাচ্চা চাই আপনার? আঁতুরের বয়সের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তৃধা এলো পেটে। এরপর নিহাল, নিহাত হলো। ওঁদেরও এক বছর পরলো। এক হালিতেও সাধ মে’টেনি? দুই মেয়ে দুই ছেলের বাপ হয়েছেন ভুলে যাবেন না।’
মাইজিন হেসে তুলিকা জড়িয়ে ধরে৷ দুষ্টু হেসে বলে, ‘আমার তো ক্রিকেট টীম বানানোর প্ল্যান আছে! চলো না প্ল্যান টা সাকসেসফুল করি?’
‘আপনার মাথা করুন।’ সরিয়ে দিলো তুলিকা মাইজিনকে। মাইজিনকে খেয়াল করলো তুলিকা। সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছু করছে।
‘পকেটে হাত দিয়ে কি করছেন? ভালোবাসা খুঁজছেন নাকি?’ তুলিকা মশকরা করলো।
‘তোমার জন্য গিফট এনেছি এই দেখো!’ মাইজিন গিফট বের করে তাকে দিলো।
‘আমার জন্য প্লাস্টিকের এই নকল ফুল আনলেন শেষ পর্যন্ত?’
‘আসল ফুল যে বেশিক্ষণ তাজা থাকে না জানো না? তাই বুদ্ধি করে এই প্লাস্টিকের ফুল এনেছি! ঠিক আমার ভালোবাসাও এমন তাজা থাকবে। শুধু তুমি পাশাপাশি থেকো।’
‘আমি তো সব সময় আপনার পাশে আছি। আপনি ছাড়া কে আছে আমার?’
‘ভালোবাসি আমার বাবুদের আম্মু!’
‘ভালোবাসি!’
মাঝে মধ্যে সুখের কথা বলতে বলতে হেসে উঠছিলো তারা দুজনেই। কখনো বা অভিমানে নাক ফুলাচ্ছিলো তুলিকা। আর সেই অভিমান ভাঙাতে ব্যস্ত হয়ে যেতো মাইজিন। এভাবেই তাদের সুখের সংসার উল্লাসে, অজস্র ভালোবাসাময় মুহুর্ত নিয়ে কা’ট’তে লাগলো। সত্যিই ভালোবাসা সুন্দর! ভীষণ ভীষণ ভীষণ সুন্দর!
সমাপ্ত।