মন বাড়িয়ে ছুঁই ২ পর্ব-২৭

0
547

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_২৭ . ( পর্বাংশ ০১ )
#ফাবিয়াহ্_মমো .

হুল্লোড় উঠেছে দেlশে। চারিদিকে উlত্থাlল অবস্থা। যেই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলো মাহতিম, সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি এসেছে। আসলেই ইতিহাস পুনরাবৃত্তি ভালোবাসে। সেদিনও এরকম হৈচৈ ছিlলো, সবার মধ্যে জ্বাlলামlয়ী অবস্থা সোlচ্চার ছিলো, সেদিন সকলে তৎপর ছিলো ওয়াসিফ পূর্বের জন্য। তবে আজ সেটা বদলে গেছে। এমনভাবেই বদলেছে, সেখানে পাlপীlদের খোlলাlশা হচ্ছে। তবে মাহতিম নেই। মিডিয়া তাকে নিয়ে খবর পেশ করেনি। রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, মুষলধারে বৃষ্টি। আজ যেখানে প্রতিটি চ্যানেলে-চ্যানেলে লাlইভ টেlলিকাlস্ট চলছে, সেখানে বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কম। জlনগlণের মধ্যে চলছে উত্তেlজlনার ঝড়। কেউ-কেউ সাংlবাদিlকের মাlইক টেনে ভlয়াlবহ কথা বলছে। কেউ-কেউ ক্ষোlভে ফেটে পরছে। সাlর্বিক পরিস্থিতি সাlমাল দিতে পুlলিlশ বাlহিনি নেমেছে, কোনো খাlরাlপ অবস্থা দেখতে পেলে কlঠোlর পদক্ষেপ নেবে। শীlর্ষস্থাlনীয় চার নেlতাlর সমস্ত কূlকীlর্তি প্রতিবেদন আকারে বেরিয়েছে। সেখানে চারজনই ক্ষlমতাlর অlপব্যlবহার করেছে বলে প্রমাণিত। দেlশেlর ভাবমূlর্তি নlষ্ট করেছে তাlরা। গোপনে-গোপনে বিভিন্ন র‍্যাlকেlট চালিয়েছে। তন্মধ্যে বহুল ও নিlকৃlষ্ট কাজ ছিলো অlস্ত্র ব্যlবসা। বিভিন্ন অlস্ত্রাlদি দেlশেlর মাlটিতে আlনার জন্য তাদের দলটা বেশ প্রসিদ্ধ। এছাড়া গ্রাম থেকে শিlশু-নাlরী-বৃlদ্ধকে প্রlলোlভন দেখিয়ে অlপহlরণ করা হতো। এরপর তাদের খlদ্দেlর খুঁজে জাlয়গামতো বেlচে দিতো। বৃlদ্ধদের চাlলাlন করতো রান্নাবান্না ও ঘরকন্না দেখার জন্য। আর নাlরীদের দিয়ে করানো হতো নিlষ্ঠুlর ব্যlবlসা। শিlশুlদের কlঠিlন-কঠিন কাlজে পাঠাতো হতো, এছাড়া বিভিন্ন কর্ম তো ছিলোই। এর চেয়েও জlঘlন্য কাজ ছিলো, অভ্যন্তরীণ সlন্ত্রাlসীlদের কাছে অlস্ত্রেlর লেlনlদেন। কুlখ্যাlত আlসাlমি কালাম সরদারকে নানাভাবে সাহায্য করেছে। এসব নিয়ে বিস্তারিত আকারে প্রকাশ পেয়েছে আজ।

সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে রোকনুজ্জামান। হাত-মুখ ধুয়ে আরাম কেদারায় বসেছে। দোল খেতে-খেতে টিভি চালু দিতেই বরফের মতো শক্ত হয়ে গেলো। দু’চোখ বিস্ফোরিত করে টিভির পর্দায় চেয়ে রইলো। ইতিমধ্যে দোল খাওয়াটা থেমে গেছে। নিশ্বাসটা এই বুঝি আঁটকে আসছে! কি দেখাচ্ছে এসব? কি করে সম্ভব!

‘ শীlর্ষস্থানীয় নেlতা হাসান রোকনুজ্জামান, খয়ের শাহ্, আবুল বাশার এবং জনপ্রিয় সlমাজlসেlবক রামচন্দ্র চ্যাটার্জীর বিlরুlদ্ধে লোlমহlর্ষক প্রlতিবেlদন ফাঁlস হয়েছে। সেখানে জানা যায়, তারা বিভিন্ন রকম অlনৈlতিক কlর্মকাlণ্ডের পাশাপাশি গlর্হিlত কাজের সাথে লিlপ্ত ছিলো। তাদের বিlরুlদ্ধে কোনো প্রকার শক্ত প্রlমাlণ পাওয়া যায়নি। দিনের-পর-দিন সেই সুযোগে সকলের চোখে ধূlলো দিয়েছে। দেlশেlর এমন বিশ্বাসভাজন নেlতাlরা যদি নৈlরাlজ্যের পথে শাlমিল হয়, তবে দেlশেlর জlনগlণ কাকে বিশ্বাস করবে? খুব শীঘ্রই তাদের বিlরুlদ্ধে আlইlনী পরোlয়াlনা জাlরি করা হচ্ছে। আমরা এখন আছি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে। আপনারা — ‘

আর কিছু শুনতে পেলো না। থরথর করে সারা শরীর কাঁপছে। নাড়ি স্পন্দন বেড়ে গেছে। গলা দিয়ে একটা শব্দও আসছে না। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। পlরোlয়াlনা জাlরি মানে? গ্রেlফlতার করবে? জেlলে পুlড়lবে? এটা সম্ভব না! কোনোভাবেই সম্ভব না। ওই কুlলাlঙ্গার বাচ্চা তো মlরে গেছে। তাহলে এই কাজ কে করলো? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। সব এলোমেলো লাগছে। কি সর্বনাশ হলো! এখন? এখন কি করবে? পাlলাবে? সবকিছু তার বিlরুlদ্ধে চলে গেছে। এখন দল থেকে বেlর তো করবেই, সেই সাথে কঠিন শাlস্তি দিবে। রোকনুজ্জামান গলা ছেড়ে চাকরদের ডাকলো,

– এ্যাই! কে আছিস? জলদি এদিকে আয়!

ডাক শুনে বিশ্বস্ত চাকরদুটো ছুটে এলো। মাথানত করে বললো,

– জ্বে, স্যার।

রোকনুজ্জামান তাড়াতাড়ি করে আলমারি খুললো। একটা ড্রয়ার থেকে টাকার দুটো বান্ডেল নিয়ে চাকরের দিlকে ছুঁlড়লো। তর্জনী তুlলে ধlমlকের সাথে বললো,

– যদি আমার ব্যাপার নিয়ে পুlলিlশের কাছে মুখ খুলোস, আমি কিন্তু তোদের দুইটাকে বাঁlচlতে দিবো না। টাকা নিয়ে আlন্ডাlরগ্রাlউlন্ডে চলে যা। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে কিচ্ছু বলতে যাlবি না। যদি পুlলিlশেlর গlন্ধ পাস, সাlরেlন্ডার করার টাইমে পাlলাবি। পাlলাlনোর টেlকlনিক জানোস না? বিlষ খাওয়ার নাটক ধরে চিৎ মেlরে শুবি। ঠিকআছে?

কথাটা বুঝিয়ে দিলো সে। টিভির পর্দায় তাকিয়ে আবার ঢোক গিললো। এবার চ্যাটার্জী মশাইকে ধরা হচ্ছে। তার মানে এখন তাকে ধরার পালা। খুব দ্রুত এখান থেকে পাlলাlতে হবে। তাকে ধlরা পরা যাবে না। এই মাহতিমের বাlচ্চাlকে খুবই আরামের মৃlত্যু দিয়ে ফেlলেছে। এই শাlলাlকে আরো ধুকে-ধুকে খুlন কlরা উচিত ছিlলো। শাlলাlটা চরম ক্ষlতি করলো। রাlগে-ক্রোধে শlরীlরের রlক্ত টগবগ করছে। আজ যদি সময় থাকতো, ওই মেহনূরকে ধরে সমস্ত রাlগ পুlষিlয়ে নিতো। হিংlস্র কুlকুlরের মতো ছিঁlড়ে-ছিঁlড়ে ওই সুন্দlরীকে ধ্বংlস করতো। ওর বউয়ের নাম-নিশানা ভালোমতো ঘুlচিlয়ে দিতো সে। কিন্তু আফসোস! ব্যর্থ হচ্ছে।

.

মেহনূর নিজেকে বোঝালো, অনেক করে বোঝালো। সবকিছু ঠিক আছে, এমনটাই নিশ্চিত করলো। এখনো স্থির হয়নি, মনটা শান্ত হয়নি। রাতটা নির্ঘুম কেটেছে। বিlধ্বlস্ত লাগছে নিজেকে। একমূহুর্তের জন্য চোখদুটো লাগেনি। আয়নায় তাকালো সে। একটু আগে গোসল সেরেছে। এখন স্বাভাবিক দেখাচ্ছে কিছুটা। মেহনূর ফোনটা হাতে নিলো। আকাশটা বড্ড কালো। যদিও বৃষ্টি কম, কিন্তু আবহাওয়া ভালো না। তর্জনী দিয়ে স্ক্রল করতে-করতে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে ট্যাপ করলো। ফোনটা কানে চেপে আয়নায় তাকালো সে, চোখের দৃষ্টি শক্ত করে রেখেছে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই দম ছাড়লো মেহনূর, যেন কঠিন কিছু বলতে সশlস্ত্র কায়দায় প্রস্তত। কন্ঠে শঠতা বজায় রেখে গাম্ভীর্য স্বরে বললো,

– গাড়ি নিয়ে আসুন। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, জিজ্ঞেস করবেন না। আপনার বসের অজুহাত দিবেন না। কৈফিয়ত শুনতে আগ্রহী নই। পাঁচ মিনিটের ভেতর গাড়ি চাই।

নোমান ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো। একদম বসের মতো কথা বলছে, তাঁর স্টাইলে আদেশ দিচ্ছে। এটা কি ম্যাডামের কন্ঠ? তবে বিশ্বাস হচ্ছে না কেনো? বাইরের অবস্থা ভালো না। সlত্যটা ফাঁlস হবার পর তুlমুlল অবlস্থা চলছে। কখন-কোনদিক দিয়ে বিlপlদ আসে, বলা যায় না। রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া বাদে সব এলাকা প্লাবিত। জলাবদ্ধতার জন্য রাস্তা আঁটকে আছে। প্রকৃতির রূঢ় অবস্থা দেখে নোমান অজান্তেই ঢোক গিললো। থাই গ্লাসের বাইরে দৃষ্টি রেখে মলিন স্বরে বললো, ‘ স্যার, সবসময় তো আপনার পাশে থাকলাম। এবারই থাকতে পারলাম না। ম্যামের কথা চিন্তা করে আপনি আমাকেই নিলেন না। আপনার কমান্ড শুনতে-শুনতে এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন কারো কমান্ড মানি না। স্যার, একবার খালি সিগন্যাল দিন। একটাবার! আর কতো ধৈর্য্য ধরবো স্যার? ‘ নোমান আক্ষেপের সাথে চোখ নামালো। মাহতিমের ফোন সুইচড্ অফ। ধৈর্য্য ছাড়া উপায় নেই। যেমনটা বসের বেলায় করে থাকে, তেমনটাই করলো সে। পাক্কা পাঁচ মিনিটের ভেতর গাড়ি নিয়ে পৌঁছলো। এদিকে মেহনূর একা বেরোয়নি, সঙ্গে নীতি এসেছে। নীতি এখনো জানে না, মেহনূর কোথায় যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে মেহনূর ঘরে এসে বলে,

– আপু কি ফ্রি আছো?

নীতি সবে বিছানা গোছাচ্ছিলো। সময় তখন নয়টা। মেহনূরকে দেখে মিষ্টি হাসিতে বললো,

– অবশ্যই ফ্রি। কোথাও যাচ্ছো নাকি?

মেহনূর ভাণ-ভণিতা করেনি। সোজাসাপ্টা বলে দেয়,

– তোমার সঙ্গ লাগবে। যেখানে যাচ্চি, সেখানে একা যাবো না। তোমার ভাইয়া শুনলে পছন্দ করবেন না। যেখানে যাচ্ছি, সেখানে তুমিও চলো। যদি সঙ্গে আসো, আমি খুশি হবো।

নীতি ‘ না ‘ করেনি, গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে রওনা দিয়েছে। কিন্তু মেহনূরের অবস্থা দেখে প্রশ্ন করার সাহস হচ্ছে না। আজ কেমন যেন লাগছে। ‘ পোlল্ট্রি মুlরlগি ‘ উপাধি পাওয়া মেয়েটা আচানক বদলে গেছে। তার দেহভঙ্গিমা প্রগতিশীল নারীর মতো ঠেকছে। মাহতিমের অনুপস্থিতিতে এই রূপটা আগে দেখেনি। আড়চোখে মেহনূরের অবস্থা লক্ষ করলো নীতি। ঠিক বাঁ-পাশে বসেছে মেয়েটা, যেদিকটায় মাহতিম বসতো। গাড়িটা চলতে-চলতেই মেহনূর দিক বাতলে বললো,

– সামনে গিয়ে বাঁয়ে নিবেন। গাড়িটা সেখানেই থামাবেন, যেখানে জাফল উদ্দিনের বাসা।

কথাটা কানে যেতেই চমকে উঠলো নীতি। দৃষ্টি জোড়া বড়-বড় করে মেহনূরের দিকে চাইলো। নোমানও হতবুদ্ধির মতো ব্রেক কষে ফেললো। সেও মাথা ঘুরিয়ে মেহনূরের দিকে তাকাবে, তখনই নীতি ইতস্তত সুরে বললো,

– তু-তু-মি, তুমি কার কাছে যেতে চাচ্ছো?

মেহনূর ভাবলেশহীন। জানালার বাইরে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় বললো,

– মেজর জাফর উদ্দিন, বাংlলাlদেlশ সেlনাবাlহিlনীর প্রাlক্তন সদlস্য। আমি তাঁর কাছে যেতে চাচ্ছি।

একইসাথে ঢোক গিললো নোমান ও নীতি। দুজনই অবাকের শেষ সীমানায় বসে আছে। নোমান দৃষ্টি ঘুরিয়ে নীতির পানে চাইলো, নীতিও একইভাবে নোমানের দিকে তাকালো। চক্ষু ইশারায় গাড়িটা চালাতে বললো নীতি। নোমান সেই মতো সম্মতি জানিয়ে ইন্ঞ্জিন চালু দিলো। গাড়িটা ঠিকঠাক মতো গন্তব্যে এসে থামলো। ছয়তলা দালানের কাছে সোনালী নামফলকে ‘ Jafor Uddin লেখা। সেখান থেকে চোখ সরিয়ে ভেতর ঢুকলো ওরা। নোমান কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে গিয়ে দরজায় বেল ঠুকলো। ভেতর থেকে একজন চাকর গোছের ছেলে উজবুক গলায় বললো,

– কে আপনারা? কি চান?

নোমান কিছু বলতে নিচ্ছিলো, তার আগেই বাঁধা দিলো মেহনূর। নিজের পেশকৃত জবাবটা ছেড়ে দিলো সে,

– জাফর উদ্দিনকে ডাকুন। বলুন, মাহতিম আনসারীর সহধর্মিনী এসেছে।

মেহনূর এবার নোমানের দিকে ফিরলো। আদেশসূচক কন্ঠে শক্ত গলায় বললো,

– নিচে গিয়ে অপেক্ষা করুন। এ পযর্ন্ত আসার জন্য ধন্যবাদ নোমান ভাই। আপনি এবার যেতে পারেন।

মেহনূরের মুখে যাওয়ার কথা শুনে অবাক হয় নোমান। নীতিও হতবুদ্ধির মতো থম মেlরে আছে। মেহনূরের একেকটা কীর্তিকলাপ প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নোমান চলে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় জাফর উদ্দিন আসে। ভদ্রলোক বেশ অপ্রস্তুত মুখে তাকিয়ে আছে। আজ পযর্ন্ত মেহনূরকে দেখেনি সে, তাও এমন আকস্মিক আগমন দেখে কিছুটা ভড়কে গেছে। গায়ে সাদা লুঙ্গির উপর পাতলা ফতুয়া চাপিয়েছে। সামনে আগত মেয়েটির দিকে আপাদমস্তক তাকালো, দৃষ্টি বুলানো শেষে কৌতুহল গলায় বললো,

– তুমিই আনসারীর বউ?

মেহনূর এক পা এগুলো। সম্ভ্রান্ত অবস্থা বজায় রেখে মার্জিত সুরে বললো,

– জ্বী। আমি আপনার বন্ধু মেহেদি আনসারীর পুত্রবধূ। আমি কি একটু বসতে পারি? আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো, সেগুলো জেনেই চলে যাবো।

ভদ্রলোক সৌজন্যসূচক হাসি দিলো। যেমনটা তিনি আনসারীর মুখে শুনেছিলো, মেয়েটার আচরণ তার চেয়েও চমৎকার। নিজের জন্য সঠিক মেয়েটি নির্বাচন করতে ভুলেনি আনসারী। আত্মগরিমাসুলভ ব্যক্তিত্ব, কথাবার্তায় বিচিত্র ধরনের শোভা টের পাচ্ছে। জাফর উদ্দিন প্রফুল্ল হয়ে সোফায় বসতে বললো। কন্ঠস্বর নরম করে প্রসন্ন হাসিতে বললো,

– তোমার আগমনে বেশ অবাক হয়েছি। আমার এই বাড়িটায় তোমার স্বামী একদিনও আসেনি। আগেরটায় এসেছিলো। কতো করে বললাম, ‘ একবার আসো ‘ ; কিন্তু ও ব্যস্ত মানুষ। বোসো মা। গিন্নিকে একটু চা-পানির জন্য —

তৎক্ষণাৎ বাঁধ সাধলো মেহনূর। মেহনূর কুশলী ব্যাপারটা নিতে চাচ্ছে না। মোদ্দাকথায় ফেরার জন্য আনচান করছে মনটা। নীতির সামনে শুরু করবে কিনা দ্বিধায় আছে সে। কোনো গড়পড়তা না-করে স্পষ্ট গলায় বলে,

– আপনি আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানবেন। জানানোর কাজটা কে করেছে আমি জানি; কিন্তু আপনার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। শুধু জানি, আপনি আমার শ্বশুরমশাইয়ের বন্ধু। বয়সে আমি খুবই ছোট। তাই আপনাকে ‘ কাকা ‘ বলে ডাকবো। আজ আপনার কাছে এসেছি, কেননা সত্য জানাটা প্রয়োজন। ‘ কাকা ‘ বলে যেহেতু ডেকেছি, দয়াকরে সেই মানটুকু রাখবেন। যা জানেন সব খুলে বলবেন। আমার শ্বশুরমশাইকে কেন মাlরা হলো? দুই নাম্বার, এ সংক্রান্ত ব্যাপারে আপনি কি কি জানেন? দুটো প্রশ্নের উত্তর দ্রুততার সাথে দিবেন। আমি সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।

প্রশ্নগুলো ছিলো এমন, যেন গালে কেউ সপাটে চlড় মাlরlলো। আকস্মিকভাবে চlড় খেlলে কানটা যেমন ভোঁ-ভোঁ করে, মস্তিষ্কে তেমনই ঠেকলো। যেই ঘটনা কোনোদিন ঘাঁটাতে চায় না, জানাতে চায় না, সেটা নিয়েই আগমন। তবে কি সব বলবে? খুলবে বলবে? কয়েক মূহুর্ত চুপ থেকে চিন্তাভাবনা রলো। পরক্ষণে অধর কামড়ে নিরুদ্যম সুরে বললো,

– সর্ষের ভেতর ভূত ছিলো, যেটা মেহেদি বুঝতে পারেনি। মেহেদি খুব ভালো ছিলো। তার চেয়েও বড় কথা, ওর মতো ইমানদার লোক আর দেখিনি। একসাথে ট্রেনিং, একসাথে প্রোমোশন, সবকিছু একসাথে করেছি। আমাদের প্ল্যান ছিলো, দুই বন্ধু একই দিনে বিয়ে করবো। কিন্তু মেহেদি গ্রামের একটা মেয়েকে বিয়ে করলো। বিয়ের পর সবই ঠিকঠাক ছিলো। যেমনটা সব পরিবারে ঘটে থাকে। মারজা ভাবীও অমায়িক মানুষ, ততদিনে আমিও সংসার ধর্মে ব্যস্ত। মেহেদি কোনোদিন ভাবতেও পারেনি, ওর কাছের মানুষগুলো মিlথ্যুক ছিলো। আমার প্রাণের বন্ধুটা যাদের বিশ্বাস করতো, তারা একেকটা ঘাlতlকের চাইতেও নিlষ্ঠুlর। প্রায় কয়েক যুগ আগের কথা। তখন কোনো একভাবে অlস্ত্রেlর চালাচালিটা জানতে পারে। অনেক জানার চেষ্টা করেছি, ওকে অনেকবার শুধিয়েছি, ও মুখ খুলেনি। জিজ্ঞেস করেছি, ‘ কিভাবে জানলি খুলে বল্ ‘; ও আমায় বলেনি। একবার শুধু বিরসমুখে বললো, সরষের থাকে ভূত থাকে বন্ধু। ততদিনে ওর কথা আমি —

কথার মাঝপথে থামিয়ে দিলো মেহনূর। অন্যদিকে নীতি উন্মুখ হয়ে আছে। চরম কিছু সত্য কথা জানতে পারছে। আরো কিছু কথা যুক্ত করলো মেহনূর, সাবলীল প্রশ্নে বললো,

– শ্বশুরমশাই কি জানতেন, লোকটা আমার দাদা ছিলো? হান্নান শেখ ভালোমানুষি সেlজে ধোঁlকাবাlজি করতো, জানতেন?

জাফর উদ্দিন দু’চোখ বুজলেন। হত্যদম নিশ্বাসটুকু ছাড়তে-ছাড়তে বললেন,

– হ্যাঁ, মা।

মেহনূর কিছুই বললো না। তার বুক ফেটে কান্না চলে আসছে। কেমন দুনিlয়ায় বাlস করছে? কার কাছে বড় হলো? সবকিছু তাহলে মিlথ্যে ছিলো? ওর পুরো জীবনটাই মিlথ্যে বানিয়ে দিলো? মেহনূর চোখদুটো নিচু করে ফেললো, কোলের দিকে দৃষ্টি রেখে চুপ হয়ে গেলো। জাফর উদ্দিন কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবার বলে উঠলো,

– সব জানতো ঠিকই, প্রমাণ করতে পারেনি। শক্ত প্রমাণ ছিলো না। তখনকার আlইlন তো আজকের মতো নড়বড়ে না। তখন অনেককিছুই দেখাতে হতো। আর এখন টাকা ফেললেই কাজ শেlষ। মাহতিমকে প্রচুর বারন করেছি। ছেলেটা শোনেনি। মেহেদির রেখে যাওয়া সূত্র ধরে-ধরে সবকিছু ঘেঁlটেlছে। মাহতিম ওর বাবাকে খুব ভালোবাসতো। কোনোদিন কোনো সন্তানকে নিজের বাবার কেlসে তlদlন্ত করতে দেখিনি, ও করেছে। তারপরও মেহেদির কেlসে শক্ত এ্যাlলিবাlই পায়নি। কতটা দুঃখ নিয়ে কাজটা করেছে সেটা শুধু আমি জানি। ওর ভেতরটা ঝাঁlঝlরা করে দিয়েছে। ওকে তো তোমরা সুস্থ মানুষের মতোই দেখো, হাসিখুশি ব্যক্তির মতো চলতে দেখো, ওর আসল সময়টা শুধু আমি দেখেছি। আমার অপজিট সোফায় বসে চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতো। আমি ড্রিlঙ্কlসের গ্লাস নিয়ে বকবক করতাম, আর ও চুপ করে শুনতো। মাঝে-মাঝে অন্যমনষ্ক গলায় বলতো, ‘ মেlজlর? আমি যদি তখন কোয়ালিফাই হতাম, বাবাকে বাঁlচাlতে পারতাম। আজ এই চাকরি করে কি লাভ? ‘ মারজা ভাবী এখনো মেহেদির বিষয়ে কিছু জানে না। তাকে জানানো হয়নি। শুধু আমি, মাহতিম আর একজন ব্যাচম্যাট জানতো। সেও গতবছর হার্ট এ্যাlটাlকে মাlরা গেছে। এখন এই সত্য শুধু তুমি, নীতি আর মাহতিম জানো। দ্যাখো মা, আজ যে এখানে এসেছো, এই বিষয়ে বাইরে কখনো বোলো না। ছেলেটা তোমাকে নিয়ে খুব চিন্তা করে। কালও যাওয়ার আগে আমাকে বারবার সlতlর্ক করে গেছে, আমি যেন তোমার দিকে নজর রাখি। তুমি আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছো শুনলে খুব চlটে যাবে। আর বিlপদ ডেকো না মা। আজ শীঘ্রই চলে যাও। বাইরের অবস্থা এমনেতেই খারাপ। কাল থেকে আবহাওয়াটাও ভালো না। নোমানকে নিয়ে যত দ্রুত পারো, ফিরে যাও।

মেহনূর চোখ বন্ধ করে ফেললো। হাতের উপর একফোঁটা অশ্রু ঝরে পরলো। ক্ষুদ্র বিন্দুটা দেখতে পেলো ভদ্রলোক। মেয়েটার যে খুব কষ্ট হচ্ছে, সে অনুভব করতে পারছে। মাথায় কি একটু স্নেহের হাত বুলিয়ে দিবে? একটু সান্ত্বনার বাক্য বলবে? মেয়েটার মুখে করুণ ছাপ পরেছে। তারও বড়-বড় দুটো মেয়ে আছে। মেয়েদের চোখে পানি দেখলে ভেতরটাই মুষড়ে যায়। জাফর উদ্দিন নরম গলায় বললো,

– উপরে আল্লাহ্ আছেন মা, ভlয় পেও না। কোনো ভlয় নেই। দুটো হাত তুলে এমনভাবে তাঁর কাছে চাও, যেন মূল্যবান চাওয়াটা তিনি কবুল করে। তুমি আমার ছোট মেয়ে ছোঁয়ার বয়সী। তোমাকে দেখে আমার মেয়েটার কথা মনে পরলো। তুমি কেঁদো না। আজ তো দেlশেlর অবস্থা ভালো না। তোমাকে বাড়ি থেকে তাlড়িlয়ে দিচ্ছি এরকমটা ভেবো না। মাহতিম যদি অনুরোধ না-করতো, তাহলে তোমাদের দুজনকে জোlর করে রেখে দিতাম। গিন্নিকে এতোক্ষনে চুlলোlর ধারে রাখতাম। আমাকে খাlরাlপভাবে নিও না।

এবার নীতির মুখে এক টুকরো হাসি ফুটলো। জাফর উদ্দিনের দিকে ম্রিয়মাণ চাহনিতে বললো,

– আঙ্কেল, আপনি তো সবাইকে ভুলে গেছেন। আগে তো প্রায়ই আসতেন, আমাদের সাথে কতো আড্ডা দিতেন। মামা চলে যাওয়ার পর আর এলেন না। দিনগুলো খুব মিস করি। অতীতটা এতো সুন্দর ছিলো। আজ আপনার মুখে যা যা শুনলাম, নিজের কানকেও বিশ্বাস করাতে পারছি না। মামার মৃlত্যু নিয়ে —

কথাটুকু বলার পূর্বেই চোখ নামালো সে। চট করে ওড়নাটা চোখে চাপে। গলার কাছে কান্নার কুণ্ডলী জমে আছে, নীতি সেটা প্রাণপণে আঁটকাচ্ছে। সামান্য তথ্য জেনেছে বলে মেlরেlই ফেললো? মানুষের বুকে এতটুকু দয়া নেই? এতোটা নিlর্দlয় কিভাবে হয় মাlনুlষ? হঠাৎ পাশ থেকে মেহনূরের গলা ভেসে এলো, কিছুটা পরিশ্রান্ত সুরে জাফরের উদ্দেশ্যে বললো,

– কাকা, আপনাকে খুব কlষ্ট দিলাম। আমার আচরণে যদি আlঘাlত পেয়ে থাকেন, ছোট ভেবে মাফ করবেন। আমার মনটা ভালো নেই। কি বলতে যেয়ে কি বলে ফেলি, নিজেও জানি না। আল্লাহ্ রহম করলে আবার আসবো। আজ চলি। ভালো থাকবেন। আর উনার কথা —

কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই ফোনটা পৈlশাlচিক সুরে কাঁপছে। যেন হিংlস্র পশুর মতো নীরব হুlঙ্কাlর দিচ্ছে। একইসাথে নীতির ফোনটাও বাজতে শুরু লাগলো। ক্রমাগত দুটো ফোনই বিকট শব্দ শুরু করলো। দুজনই একে-অন্যের দিকে আশ্চর্য চাহনিতে তাকিয়ে আছে। এটা কি কাকতলীয়? একই সাথে কল আসাটা নরমাল? মেহনূর চোখ ঘুরিয়ে কল রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে নোমান অlপরাlধীlর মতো বললো,

– সরি, ম্যাম —

বুকটা ধ্বlক করে উঠলো। কি কারণে সরি বললো? কেন বললো? কি করেছে সে? মেহনূর ঝট করে দাঁড়িয়ে পরে। ওপাশ থেকে গাড়ির হর্ণ ভেসে আসছে। নোমান তাহলে কোথায়? তাকে তো নিচে অপেক্ষা করতে বলেছে। প্রচণ্ড উৎকন্ঠার সাথে মেহনূর জিজ্ঞেস করলো,

– কি হয়েছে নোমান ভাই? আপনি কোথায়? আপনি কোথায় আছেন? হ্যালো?

ফোনটা ‘ টুট টুট ‘ আওয়াজ শুরু করলো। মেহনূর কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখলো, ‘ The call has ended ‘ লেখা।

চলমান .

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_২৭ . ( সমাপন )
#ফাবিয়াহ্_মমো .

মেহনূর স্থির হয়ে গেলো। বরফের মতো জমে গেলো। চোখের অবস্থা নিষ্পলক হলো। নোমান কেন সরি বললো? কোথায় যাচ্ছে সে? কিছু কি জানতে — । সাথে-সাথে দাঁত শক্ত করলো মেহনূর। ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। ধারণাটা সত্যি না-হোক। কোনোভাবেই সত্যি না-হোক। চোখ ঠেলে পানি চলে আসছে। বেlহায়া অশ্রুর কাছে ঝুঁকতে চায় না মেহনূর। দ্রুত নিজেকে সংবরণ করলো। নিচের ঠোঁটে শক্ত করে দাঁত বসালো। দূর্বল-ক্ষুণ্ন-ভঙ্গুর সত্তাকে অক্ষুন্ন-অটুট চেতনায় বদলে নিলো। নীতিকে নিয়ে জাফর উদ্দিনের কাছে বিদায় জানালো সে। বাইরের মানুষকে একচুল বুঝতে দেবে না, ভেতরটা কি হয়ে যাচ্ছে। যতই বুকের ভেতরটা খান-খান হয়ে যাক, আজ চূর্ণবিlচূর্ণ মেহনূরকে কোনোভাবেই প্রকাশ করবে না। গেটের কাছে দাঁড়াতেই সিএনজি ধরলো ওরা। কোয়ার্টারমুখো হতেই নীতির উদ্দেশ্যে বললো,

– কলটা কোত্থেকে দিয়েছিলো?

কন্ঠ শুনে বিষম খেলো নীতি। একটু যেন ঢোকও গিললো। মেহনূরকে নরম-শরম দেখতে-দেখতে এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, আজ এই কাঠিন্য রূপটা নেওয়া যাচ্ছে না। নীতি কথাটা মিথ্যা বলবে কিনা একবার চিন্তা করলো। পরক্ষণে সেটা বাতিল করে নিচু গলায় বললো,

– কলটা সিয়াম ভাই দিয়েছে ভাবী।

উত্তরটা পছন্দ হলো না ওর। এটা জানতে চায়নি মেহনূর। সরাসরি নীতির দিকে তাকালো সে। এমন দৃষ্টিতে তাকালো, যেন ওই দৃষ্টির মাঝে টগবগে ক্ষোভ লুকিয়ে আছে। সিএনজির জালযুক্ত জানালা দিয়ে দমকা হাওয়া ঢুকছে। নীতি তখন মুখের উপর চুল সরাতে ব্যস্ত ছিলো, হঠাৎই ওমন চাহনি দেখে হাত থামিয়ে ফেললো। মেহনূরের দিকে আমতা-আমতা করে কিছু বলবে, মেহনূর ঠোঁটে আঙ্গুল বসিয়ে চুপ হতে বললো। নিজের দিকটা দুর্বোধ্য করে পরিষ্কার কন্ঠে বললো,

– কোনো মি:থ্যে না। আমি ভড়ং শুনবো না নীতি আপু। তোমার ভাই কোথায়? হাlসপাlতাlলে, না অন্যখানে? কলটা কোত্থেকে দিয়েছে? একটা কথাও মিlথ্যে বলবে না তুমি! কলটা কাটার পর যে অবস্থা হয়েছিলো, সেটা আমি দেখেছি। কাজেই —

নীতি স্তব্ধ চোখে তাকালো, দু’ঠোঁট ফাঁক করে চোয়াল ঝুলাতে লাগলো। কলের ব্যাপারটা কিভাবে আঁচ করলো কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর এমন অদ্ভুত আচরণ সত্যিই ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। নীতি বিষ্ময় চোখে নিচু স্বরে বললো,

– তো-তো-তোমার বিহেiভিয়াiরটা অদ্ভুত লাগছে ভাবী। ইউ আর বিহেভিং লাইক এ্যা স্ট্র‍্যান্জার।

মেহনূর দৃষ্টি সরিয়ে সামনের পানে চাইলো। সি-এন-জিটা বেশ দাপটের সাথে ছুটছে। আজ স্পিড কমাতে বলার জন্য কেউ নেই। যেই শান্ত-নম্র পুরুষটা বেগতিক স্পিড দেখলে নোমানকে একচোট অ;পমাlন করে বসতো, সেই মানুষটা পাশে নেই। আম্মা যেদিন চলে গেলো, সেই দিনটা আবারও স্মৃতির দুয়ারে হাজির হচ্ছে। কলেজ থেকে প্র‍্যাকটিক্যাল খাতা সাইন করিয়ে কেবল বাড়ি ফিরলো। বাড়ির ভেতরে কতো কতো মানুষ! গিজগিজ ভীড়টা ঠেলে প্রবেশ করলো মেহনূর। এরপরই খাটের উপর নিlথর দেহটা দেখতে পেলো। গর্ভধারিণী ব্যক্তিটা আর নেlই। চারিদিকে মৃlত্যু-মৃlত্যু গন্ধটা যেন হাহাকার করছে। স্পর্শে-স্পর্শে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘ এবার তুই নিঃস্ব মেহনূর, এবার তুই একা। তোর পাশে বাবা নেই, তোর সাথে মা-ও নেই। যার মাধ্যমে দুনিয়ায় তুই এলি, তারাই তোকে এতিম বানিয়ে চলে গেলো। ‘ কলেজ থেকে ফিরেই প্রাণহীন শরীরটা ছুঁয়ে দেখলো। যেই মহিলার নাড়ি ছিঁlড়ে এই পৃথিবীর আলো দেখলো, সেই মহিলাই পৃথিবীর বুক থেকে দুঃখ বয়ে বিiদায় নিলো। আজও সেই ক্ষণটুকুর কথা মনে পরলে থরথর করে শরীর কাঁপে। যদি ওসময় মাহতিম না-থাকতো, যদি সে বুকের মধ্যখানে তার উষ্ণ আশ্রয়টুকু না-দিতো, যদি ভরসার হাত বাড়িয়ে আস্থা না-দিতো? তবে কি করতো মেহনূর? কি হাল হতো ওর? কেমন মানসিক দুরবস্থায় উপনীত হতো? নীতির মুখ থেকে কিছুই শুনতে চায় না। আজ নীতি চুপই থাকুক। মাথাটা ডানে হেলান দিলো মেহনূর। চোখদুটো বন্ধ করে পানি ছেড়ে দিলো। এই নীরবতার ভাষা সে কাউকে বোঝাতে পারে না। তার ভেতরকার কোনো অনুভূতি অপর মানুষকে বোঝাতে বড়ই অক্ষম। আজ নিজের উপর খুবই ধিiক্কার জন্মাচ্ছে। কেন এইরকম অন্তর্মুখী স্বভাবের বৈশিষ্ট্য পেলো? কেন এই অiভিশiপ্ত স্বভাবটা পেয়ে বসলো? আশেপাশের নিরঙ্কুশ মানুষ নির্দ্বিধায় মনের কথা ব্যক্ত করছে, নিজেকে হালকা করে নিচ্ছে, সবার সাথে মিলেমিশে যাচ্ছে, তবে সে কেন পারলো না? এইযে নীতি পাশে বসে আছে, সে তার কাছেও বলতে পারলো না। সে বলতেই পারলো না,

‘ তোমার ভাইকে আমার প্রতিটা মূহুর্তে দরকার নীতি আপু। আমার দাদা, আমার মা, আমার বাবার মৃjত্যু শুনেও যেই চোখ আমি ভিজাইনি, আমি হাউমাউ করে কাঁদিনি, আজ ওই মানুষটার মৃlত্যু সংবাদ শুনলে আমি মlরে:ই যাবো। আমি চিৎকার করে-করে কাঁদবো। আমাকে নিয়ে কে কি ভাববে, কে কোন নজরে দেখবে, আমি কোনো কিচ্ছু প:রো:য়া করবো না। আমাকে বুঝতে পারা সবচাইতে প্রাণের মানুষটা তিনিই ছিলেন, উনার কিছু হলে আমি কিছুতেই শান্ত হবো না। আমি নিজের কাছে নিজেকে থামাতে পারবো না আপু। আমি যথেষ্ট ভঙ্গুর, আমি নিঃস্ব, শুধু আমার বাইরের আবরণটুকু তাঁর পরশে শক্ত ছিলো ‘।

মেহনূর মনের কথাগুলো নিজের কাছেই রাখলো। মনের গোপন বাক্সে সযতনে ফেলে দিলো। চোখ বন্ধ করে ফিসফিস সুরে বললো,

– Being an introvert is a cur-se. Can’t tell anyone. Can’t explain anything. Our own people never understand us. People leave us alone. We lose them by mistake.

কথাটুকু শেষ হতেই গভীর দম ছাড়লো। বন্ধ চোখের পাপড়ি চুয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরলো। আজ যে কি পরিমাণ ক;ষ্ট হচ্ছে, কি দুঃসহ য;ন্ত্র;ণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, একেকটি মূহুর্ত কিভাবে গুজরান করছে মেহনূর, কেউ জানে না। মনেহচ্ছে বুকের মধ্যে কোনো দা;নো ঢুকে তার ছোট্ট হৃদয়টা টুক:রো-টুক:রো করে দিচ্ছে। ধা:রালো ছু:ড়ি দিয়ে ক্রমাগত কুlপিlয়ে যাচ্ছে। মেহনূর চোখের উপর আঁচল চেপে কাঁপা-কাঁপা সুরে বললো,

– আমি ওখানটায় যেতে চাই নীতি আপু। তুমি ওখানটায় নিয়ে চলো।

পাশ থেকে নীতি ব্যথিত চোখে তাকালো। হাত বাড়িয়ে মেহনূরের মাথায় আলতোভাবে রাখলো। যতটুকু কোমল হলে একটা মানুষকে শান্ত করানো যায়, ততটুকুই নরম হলো নীতি। স্নেহার্দ্রের সুরে বললো,

– তুমিতো আমাদের আদরের মানুষ ভাবী। আমরা যাদেরকে ভালোবাসি, তাদের চোখে এতটুকু পানি দেখতে পারি না। তোমাকে যেমন চুপচাপ দেখে অভ্যস্ত, তেমনি তোমার হাসিতে আমরা খুশি হই। দুনিয়াতে কিছু মানুষ থাকে; যাদের মুখ, যাদের হাসি, যাদের একটুখানি আচরণ দেখলে মনটা শান্তিতে ভরে যায়। মনেহয় তাদের সঙ্গটা খুব মধুর। ওরকম মানুষের সান্নিধ্য পেলে জীবনটা সৌভাগ্যবান লাগে। তোমাকে পেয়ে শুধু মাহতিম ভাই না, আমরা সবাই সৌভাগ্যশালী। আজ যদি তুমিই এরকমটা করো, তাহলে কিভাবে হবে বলো? আমার ভাইটা তোমার আদর-যত্নে সামান্যতম খুঁত রাখেনি, তার সামনে তুমি এভাবে যাবে?

.
ঝড় আসার আগে প্রকৃতি ঠান্ডা হয়ে যায়। নিমিষের ভেতর নিজেকে শান্ত করে নেয়। যেন সবকিছু স্বাভাবিক এমনটাই বুঝিয়ে দেয়। অথচ প্রকৃতি আমাদের সাথে অদ্ভুত চাlতুlরী করে। আমাদের চোখে চরম ধূলো দিয়ে বসে। বিlপlদের বেলায় আরেক ঝাlমেলা ছুঁড়ে দেয়। আকাশটা গুড়ুম-গুড়ুম শব্দ করছে। চারপাশটা ঝুপ করে ঠান্ডা হয়ে গেছে। এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিচ্ছু দেখা যায় না। আকাশের বুক ফেটে ফর্সা আলো জ্বলছে। আবার দুম করে অকস্মাৎ নিভে যাচ্ছে। গাছের ডালপালাগুলো সাংঘাতিক শব্দ করছে। বাতাসের হৈ-হৈ হুঙ্কারটা কেমন যেন। স্থিরভাবে শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। হঠাৎ ‘ ঘেউ ঘেউ ‘ করে অসংখ্য কুকুর ডেকে উঠলো। শব্দগুলো একদম স্বাভাবিক ঠেকলো না। আজকের আবহাওয়াটা কেমন রহস্য করে আছে। কুহেলীর মতো ধোঁয়াটে, অন্ধকার। মালবাহী ট্রাকটা কয়েক গজ দূরে থেমে আছে। ঠিক সামনে উ:লটে দেওয়া গাড়িটা পরে আছে। নির্বিকার-স্থির গাড়িটার পানে চেয়ে আছে লোকটা। গাড়িটার সমস্ত কাঁচ ভেiঙ্গে চুরমার। সামান্যতম কাঁlচ অবশিষ্ট নেই। রাস্তায় টুকরো-টুকরো কাঁচের নিচে তরতাlজা রlক্তেlর ঢল। রlক্তেlর উপর একটি ক্ষlতবীক্ষlত হাত পরে আছে। ড্রাইভিং সীটে বসা মানুষটা তখনও যুlদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। রlক্তমাখা হাতের আঙ্গুলগুলো ক্ষীণভাবে নড়ছে। একটুখানি সাহায্য, একটুখানি আনুকুল্যের জন্য মানুষটা খুব ব্যাকুল। কতটা অমা:নুষি:ক য;ন্ত্র:ণায় মানুষটা কাlতরাচ্ছে। বাঁlচার জন্য কতটা আকুলিবিকুল করছে মাহতিম। মাথা ফে;টে সবটুকু রlক্ত যেন গলগল করে বেরিয়ে যাচ্ছে। শরীরের দা;নবীয় শক্তিটা একটু-একটু করে নিঃশেষ হচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ প্রাণপণে যুঝতে থাকলো সে। দেহের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে অসম্ভব ব্যiথা করছে। মাথার বাঁদিক থেকে ত;র;ল আঠালো বস্তুটা খুব নিঃসরণ হচ্ছিলো। চোখ খুলে রাখা দায় ছিলো। মৃlত্যুটা খুব কাছাকাছি, তবুও মাহতিম হার মানেনি। রlক্তে সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে, তারপরও বদ্ধ গাlড়ির ভেতরে নড়চড় করেই গেছে। আর কটা মিনিট যlন্ত্রlণার সাগরে হাবুডুবু খেলো, এরপরই শরীরটা আচানক স্থিlর। আর কোনো নড়াচড়া নেই। রiক্তাiক্ত আঙ্গুলগুলোও আর নড়চড় করলো না। দৃশ্যটা দেখে পাlষাlণতুল্য শlয়lতানটা বি;শ্রীভাবে হাসলো। শlয়তাlনটা মনের আনন্দে কল বসিয়ে বললো,

– ম্যাডাম খেলমা শ্যাষ। ট্যাকা পয়সা রেডি করেন। আমি কইলাম ট্যাকা লইয়া দূরে যামু গা। আপনের লগে ক;ন্ট্যাlক্টের কাম কইলাম আজকাই শ্যাষ।

‘ ম্যাডাম ‘ ডাকা ব্যক্তিটা বেজায় খুশি হলো। ঠোঁটের কোণে আকাঙ্ক্ষিত হাসিটা মৃদ্যুভাবে ফুটালো। গম্ভীরতা বজায় রেখে সম্ভ্রন্ত সুরে বললো,

– চলে যাচ্ছো বলে আরেকটা কাজ করো। ট্রাlকটা ওর উপর দিlয়ে নিlয়ে যাও। চাlকা;র নিlচে ওর বlডিটা যেন থাকে। মটlমiট করে হাlড়-সহ খুlলিটা বেরিয়ে যাক, এটুকু পারবে তো? মাল-পানি আরো কিছু বাড়িয়ে দেবো।

আকাশটা চিৎ;কার দিয়ে উঠলো! ব:জ্রপাত শুরু হয়েছে। বাতাসের উত্তেজনা বহুগুণ বেড়েছে। যেকোনো মূহুর্তে দামামার সাথে বৃষ্টি হবে। শlয়তাlনটা বাতাসের জন্য চোখের সামনে হাত রাখলো। চোখকে ধূলো থেকে বাঁচিয়ে গাড়িটার পানে চাইলো। চোখদুটো বাড়তি টাকার জন্য চকচক করছে। নিচের ঠোঁটটায় জিভ বুলালো সে। শlয়lতাlনটা এখনো জানেই না কাকে পিlষlতে চাচ্ছে। যদি সে একটুখানি জানতো, লোকটার আসল পরিচয় কি, কি তার মূখ্য পেশা, তবে শlয়তাlনটা ভুলেও এই সাহস পেতো না। যদি একবার, শুধু একবার প্যান্টের লেফট পকেটে হাত দিতো, তবে রlক্তাlক্ত আইডিটা দেখতে পেয়ে জবাlন বlন্ধ হতো। কিয়ৎকাল ভাবলো শlয়lতাlনটা, বেপরোয়া কন্ঠে বললো,

– ঠিকাছে। করতাছি। হাlলায় তো মlইlরাlই গেছে, বাকি অদ্দুর কাম করতে সমুস্যা নাই।

মহিলাটা সম্মতি দিয়ে ফোন রাখলো। নিlষ্ঠুlরটা স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে। এবার রাlক্ষেlসের মতো বিশালদেহী ট্রাকটা এগুচ্ছে, গোগ্রাসে গিlলে ফেলার জন্য ভlগ্ন গাড়িটার দিকে ছুটছে। বজ্রপাতের ‘ গুড়ুম ‘ শব্দে ভূমিটা কেঁপে উঠলো। আকাশ থেকে একের-পর-এক বজ্রপাত হচ্ছে। শlয়তাlনটা যেই স্পিড বাড়াতে উদ্যত হলো, ওমনেই দূর থেকে জ্বলজ্বলে কিছু দেখতে পেলো। দ্রুত ব্রেক কষলো সে! ওটা কি জ্বলছে? দূর থেকে কিছু তো একটা আসছে। দু’সেকেন্ডের জন্য স্থির হলো সে। তুমুল বৃষ্টির জন্য আবছা দেখাচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ দ;ম বন্ধ করে চেয়ে রইলো। এরপরই বিস্ফোরিত নেত্রে বিড়বিড় করে বললো, ‘ সর্বনা;শ! আয়হায়, গাড়ি আইতাছে দ্যাহি! ‘। কথাটা শেষ করতে দেরি, ওমনেই অস্থির হলো সে। উলটানো গাড়িটার পানে ভীতুভাবে চাইলো। এটাকে ভাগ্য বলা উচিত, নাকি দূlর্ভাগ্য? তাড়াতাড়ি ট্রা;কটা ব্যাকে নিতে লাগলো। সম্পূর্ণ ট্রা;ক ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় ছুটালো। বৃষ্টি তখনও থামেনি। আকাশ তখন গর্জন কমায়নি। বৃষ্টির পানির সাথে লাlলlচে স্রোত যাচ্ছে। দূর থেকে আগত গাড়িটা দুর্দম্য গতিতে ব্রেlক কষালো। মাঝপথে থামার কারণে প্রবল ঝাঁকুনি খেলো। সামনের দৃশ্য দেখে ড্রাইভারটা ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,

– সামনে একটা গাড়ি উlলlটে আছে। সাগ্রত স্যার, সামনে একটা গাড়ি…গাড়ির জন্য রাস্তা ব্ল;ক!

বজ্রপাতের ফর্সা আলোয় চারপাশটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য উজ্জ্বল হলো। সাগ্রত একপলকের জন্য গাড়িটা দেখতে পেলো। ওই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে জমে গেলো সাগ্রত। কান থেকে ফোন নামাতে-নামাতে অস্ফুট স্বরে বললো,

– মা-মা-হতিম স্যার —

চকিতে পিছু তাকালো ড্রাইভার। সাগ্রতের মুখে ওইটুকু নাম শুনে ভীষণ চমকে গেলো সে। তাড়াতাড়ি ধাক্কা মেlরে গাড়ির দরজা খুলে ফেলে। পেছন থেকে সাগ্রতও বেরিয়ে আসে। দুজনই হড়বড় করে ছুটে যায়। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির কাছে পৌঁছায়। পুরো রাস্তা লাlলবর্ণে ভেসে গেছে। পায়ের নিচে ‘ থপথপ ‘ শব্দের পানিটা পুরোই লাlল। বৃষ্টির পানির সাথে মিলেমিশে একাকার। সাগ্রত প্রচণ্ড ভয়ে শিউরে উঠলো। ড্রাইভারকে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলতে বললো। রাস্তায় হাঁটু গেড়ে ভেতরটায় চোখ দিলো সে, করুণ অবস্থা দেখতে পেয়ে চ্যাঁচিয়ে উঠে,

– ইকরাম, জলদি! অবস্থা ভালো না। তাড়াতাড়ি সীটবেল্ট কাlটো, দেরি কোরো না। সময় নেই। এখনই বের করতে হবে।

ড্রাইভারটা পকেট থেকে এ্যান্টি-কাlটার বের করে। ঘচঘচ করে মোটা সীটবেল্টটা কাlটে। সাগ্রত এই সুযোগে ধ;রাধরি করে বের করলো। মাহতিমের হাতটা কাধে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসালো। ইকরামও দেরি না-করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। এক ধা;ক্কায় স্পিডের সীমা সত্তর প্লাস তুলে। পেছন থেকে সাগ্রত অস্থির আচরণ করছে। মাহতিমকে জাগানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার চিৎকার করছে সে,

– স্যার, চোখ খুলুন! আপনি কি কিছু শুনতে পাচ্ছেন?

সাড়াশব্দ নেই। রlক্তে নরম গদিটা ভি;জে যাচ্ছে। এখনো ব্লিlডিং হচ্ছে। গায়ের নেভি শার্টটা আস্ত নেই। একবারের জন্যও সাড়া দেয়নি। সাগ্রত কানে ফোন লাগিয়ে জায়গামতো কল বসালো। ড্রাইভারটা সামনে থেকে বললো,

– স্যার, কোথায় নিবো?

সাগ্রত চুপ রইলো। ভাবনার জন্য সময় নিলো। এরই মধ্যে কলটা রিসিভ হলো। সে উৎকণ্ঠার সাথে বললো,

– হ্যালো, অশোক স্যার, জ্বী; মাহতিম স্যারকে পেয়েছি। অবস্থা ভাlলো না। এ্যাটেম টু মাlর্ডাlর। গাড়ি উlলটে ছিলো। আমি স্পlটে যেয়ে উlদ্ধাlর করলাম। মাlরাlত্মক ব্লিlডিং হচ্ছে! কোথায় নিবো?

ঠিকানাটা চুপচাপ শুনে নিলো। সে কলটা কেটে দিলো। বাইরে ঝড়ো-বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে মাহতিমের অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে। একটান দিয়ে মাহতিমের সৌষ্ঠব্য বুক থেকে শার্ট খু:লে ফেললো। রlক্তে ভেজা শরীরে তুলোর ডলা পাকিয়ে মুছলো। হঠাৎ কি ভেবে বাঁ হাতের কবজিটা টেনে আনলো সে, নাড়ি পরীক্ষার জন্য স্থির হতেই চিৎকার দিয়ে বললো,

– ও মাই গড! ইকরাম তাড়াতাড়ি করো, নি;শ্বাস স্লো হচ্ছে।

চলমান .

#FABIYAH_MOMO .

#নোটবার্তা : লেখায় ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই। ❤