#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে
#তানিয়া
পর্ব:১৬
বসার রুমে এসেও তিমির চোখ তুললো না।চোখের সামনে প্রিয় মানুষটা অন্যের হাতে রিং পরাবে এটা যেন তিমিরের গলায় ফাঁস দেওয়ার মতো।তিমির আর শুভা এগিয়ে এলেই একজন মহিলা এসে শুভাকে নিয়ে সোফায় বসেন।তখনি একজন বলে উঠে,
এটা আমাদের শুভ্রর বউ না,ওর চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো,কাঁদছিল নাকি?
তখনি উত্তর ভেসে আসে পেছন থেকে,
হ্যা কাদছিল কারণ আজ প্রিয় বান্ধবীর এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে তারপর একদিন বিয়ে হলে সে চলে যাবে তাই ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে এখন থেকে কাঁদছে।
কথাটা শুনেই তিমির চকিত চোখ তুললো।চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলো সামনের প্রতিটি মানুষকে।সব মানুষের মধ্যে নজর পড়লো পাঞ্জাবি পরা নীলের দিকে তারপর শুভার দিকে।নীল তিমির দুজনে মুচকি মুচকি হাসছে।তাদের হাসি দেখে হুট করে তিমির পেছনে ফিরে তাকালো।দেখলো শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে দুই হাত পেছনে রেখে খুব স্ট্রিট স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছে আর পুরো চেহারায় রয়েছে একটা দুষ্ট মির হাসি।তিমির একবার শুভার দিকে তাকায় তো একবার শুভ্রর দিকে।শুভ্র এগিয়ে এসে তিমিরের পাশে দাঁড়ালো,
কি হলো তিমির আর কতো কাঁদবে? এবার যাও অতিথিদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করো।তোমার সখীর হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসেছে তাদের আপ্যায়ন করার দায়িত্ব তো তোমার তাই না?
তিমির কিছু বুঝলো না।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে আর শুভ্র তার হাসিটা প্রশস্ত করে মায়ের দিকে তাকালো।নিপাও হাসছে ছেলের সাথে। শান্তা এগিয়ে এসে তিমিরের মাথায় হাত বুলালো,
আহা আমার মেয়েটা না হয় বান্ধবীর জন্য কাঁদছিল তাই এমন করা লাগে নাকি।চল মা আমরা মেহমানের নাস্তার ব্যবস্থা করি।
শান্তা নিপা তিমির তিনজনি রান্নাঘরের দিকে গেলো যাওয়ার আগে তিমির একবার শুভ্র ্কে দেখে নিলো।শুভ্র একই ভঙ্গিতে চেয়ে আছে তিমিরকে।নাস্তা খাওয়ার পর্ব শেষ হতে শুভা আর নীলকে এনে তাদের শুভ কাজটা সমাধা করা হলো।তিমির তখনো বাকবিভূতি হয়ে রইলো।তবে এটা বুঝলো আজকে এরা ভাই বোন দুজনি তার সাথে একটা মনের খেলা খেলেছে যা তিমিরের হৃদকম্পন বন্ধ করতে যথেষ্ট ছিল।
রাতের খাওয়া শেষ করে নীলদের পরিবার চলে গেলে। তিমির শুভার রুমে গেলো।শুভা চুলের ক্লিপ খুলতে ব্যস্ত।আয়নায় তিমিরের রাগান্বিত রূপ দেখে সে সরে গিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দিতে তিমির চিৎকার করে উঠলো।
শুভা দরজা খোল, তোকে আজ ছাড়বো না,এত নাটকবাজি কোত্থেকে শিখলি?শুভা দরজা ভেঙে ফেলার আগে দরজা খোল বলছি?
বোন,ভাবি বান্ধবী তোর পায়ে পড়ি,আজ সবে রিংটা পড়িয়ে দিয়েছে এখনো অনেক কিছু বাকি আছে রে।নীলকে নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন তুই এভাবে আমার স্বপ্ন ভাঙিস না।যা করেছে ভাই য়া করেছে তুই ভাই য়াকে জিজ্ঞেস কর আমি কিছু জানি না।
শুভার বাচ্চা আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।আমি আজ তোর নাজেহাল অবস্থা করবো।
ভাবি প্লিজ এমন করিস না তুই যা করার ভাই য়াকে কর প্লিজ?
ভাবি ডাকা হচ্ছে, আমার সাথে এত বড় খেলা খেলে এখন ভাবি ডাকছিস।ওকে আমি আগে তোর ভাই থেকে কৈফিয়ত নিবো তারপর তোকে মজা দেখাবো।
তিমির সর্বাঙ্গে রাগ নিয়ে শুভ্রর রুমে গেলো। শুভ্র ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অপেক্ষা করছিল তিমিরের।তিমির থমথমে আর জ্বলজ্বল করা মুখ নিয়ে সামনে আসতে শুভ্র মিষ্টি করে হাসলো।শুভ্রর হাসি দেখে তিমির রাগে ফেটে পড়লো।
আপনি হাসছেন,লজ্জা করেনা এমন করতে? আপনি আমাকে মিথ্যা বললেন?
সত্যি টা জানতে চাও।
তিমির নিশ্চুপ।শুভ্র হেসে বললো,
দু কাপ কফি নিয়ে ছাদে এসো।রুমে গরম লাগছে।তাছাড়া সারাদিন অনেক ঝক্কিঝামেলা গেছে এখন ছাদে বসে তোমাকে সবটা বলবো।তুমি ছাদে আসো আমি অপেক্ষা করছি।
তিমির বাধ্য মেয়ের মতো কফির জন্য গেলো।যেতে যেতে ভাবলো নীল আর শুভার বিষয়টা নিয়ে।নিপা যেমন মানুষ কীভাবে এসব হলো কখন হলো,তিমির কিছুই জানলো না আর নিপা মানলো কীভাবে বা তাকে মানালো কে?
শুভ্র ছাদের কর্নিশে হেলান দিয়ে হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পূবদিকে চেয়ে আছে। তিমির কফি নিয়ে ছাদে যেতে শুভ্র তিমিরের দিকে চেয়ে স্মিথ হেসে দিলো।তিমির দেখলো শুভ্রকে কেমন জানি ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হঠাৎ তিমিরের খারাপ লাগলো শুভ্রর জন্য তবে গোপন রাখলো কারণ আজ তার আত্ম নিয়ে যেভাবে টানাটানি করলো তাতে দরদ থাকলেও সেটাকে চাপা দিতে হবে।তিমির কফিটা এগিয়ে দিতে শুভ্র কফিতে ঠোঁট ছুয়ালো।
তিমির চলো দোলনায় গিয়ে বসি।দাঁড়িয়ে থাকতে ক্লান্ত লাগছে।
শুভ্র তিমিরের হাতটা এক হাতে নিয়ে দোলনায় গিয়ে বসলো।
তিমির আমি জানি আজ তুমি আমার ওপর ক্ষেপে আছো।কিন্তু আজকের এ কাজের জন্য আমি বিন্দু মাত্র অনুতপ্ত নই কারণ আমার মনে হয়েছে একজন মানুষকে সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত নাহলে সে বুঝবে না কিছু কিছু ঘটনা এক এক মানুষের জন্য কেমন সিচুয়েশন সৃষ্টি করে,তাকে কোন ধরনের ট্রমার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।আজ আমি যা করেছি তা শুধু তোমাকে বোঝানোর জন্য যে, বিয়ের দিন যখন তুরফার জায়গায় তোমাকে বিয়ে করেছিলাম তখন আমার কেমন লেগেছিল?তুমি তো তাও শুধু একটা ছোট নাটকে এমন করছো অথচ ছোট থেকে আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম যাকে নিয়ে কল্পনার জগৎ তৈরি করেছিলাম তার পরিবর্তে যখন তোমাকে দেখলাম তখন আমার পুরো দুনিয়াটা পাল্টে গেলো।এটা সত্যি যে তুরফা তার স্বার্থে আমাদের ব্যবহার করেছে তবুও তো আমি তাকে ভালোবাসতাম।তখন তো আর সত্যিটা জানতাম না তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল কিন্তু সেটা নিয়ে আমি আমার মনের প্রতিক্রিয়া দেখায় নি।কেনো জানো,কারণ আমি আমার মনের কষ্টকে কখনো প্রকাশ করিনা , কখনো নিজের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করিনা।এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো ভালোবাসো বলে বারবার নিজের অনুভূতি দেখাও সেটা আমি পারিনা আর পারি না বলেই হয়তো তুরফার ভাষ্যমতে আমি মাকাল ফল আর ঠান্ডা পুরুষ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছি।যাই হোক বিয়ে তো একদিনের আবেগ না সারাজীবনের একটা বন্ধন তাই তুরফা নিজের সুখের কথা ভেবে আমাকে ঠকিয়েছে।এর জন্য তুরফাকে আমি দোষ দিব না।আবার এমন না যে তুরফার শোকে আমি পাগল হয়ে গেছি,তাকে ছাড়া আর কাউকে ভাববো না?আমি মনে করে আমি যথেষ্ট একজন ম্যাচিউর পুরুষ তাই আমি সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করি।তুরফার ব্যবহারে কষ্ট পেলেও ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেকে বুঝিয়েছি তুরফা ঠিক করেছে তবে ওর জায়গায় হলে হয়তো আমি এতটাও নিচু হতাম না।যাই হোক তুরফার বিষয়টা আমি সামলে নিয়েছি এখন ওকে নিয়ে আর আগের ফিলিংসটা পাই না তবে খারাপ লাগে মাঝে মাঝে এটাই শুধু! যতই হোক ভালোবাসা বস্তুটা ওর জন্য যতন করে রেখেছিলাম বলে হয়তো।কিন্তু তিমির আমি কখনো লুকোচুরি বিষয় পছন্দ করি না,অথবা তেল দিয়ে মিথ্যা গল্প ফাদি না। আমি যা করি তা হলো সরাসরি সবটা জেনে নেওয়া বা জানিয়ে দেওয়া।তুমি মনে করতে পারো,আমি নিষ্ঠুর নির্দয় বা কঠিন পুরুষ। এটা কিন্তু মিথ্যা নাও হতে পারে কারণ আমি যদি আবেগীয় হতাম বা নরম স্বভাবের হতাম তাহলে হয়তো আজ এতটা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না।স্বাভাবিক লাইফ লিড করতে পারতাম না,তুরফার শোক নিয়ে দেবদাস হয়ে থাকতে হতো।তাহলে বলো আমার মেন্টাল সাপোর্ট আমাকে কতটা স্ট্রং করেছে!তোমার মনে জমে থাকা অনুভূতি প্রেম তুমি আমাকে জানিয়েছো, আমি সবটা শুনেছি।এখন যদি আমি তোমাকে তুষ্ট করতে তোমার সাথে তাল মিলিয়ে বলি আমিও তোমাকে ভালেবাসি ব্লা ব্লা তাহলে কি ভালো হবে?তিমির যদি আমি এমনটা করতাম তাহলে হয়তো কখনো আমার মন খারাপ থাকলে তুমি ভাবতে আমি তুরফার জন্য এমন করছি,তখন না তুমি সুখে থাকতে আর না আমি তোমাকে বোঝাতে পারতাম বাস্তবতাটা?সত্যি অর্থে আমার মন থেকে আমি সবকিছুকে সরিয়ে দিছি না সেখানে তুরফাকে রেখেছি আর না অন্য কাউকে।তাহলে কেনো শুধু শুধু তোমায় মিথ্যা আশ্বাস দিব?তুমি যেভাবে আমাকে সময় নিয়ে ভালোবেসেছো আমিও একিভাবে তুরফাকে সময় নিয়ে ভালোবেসেছিলাম।আফসোস সে আমার কপালে ছিল না তাই মনকে বুঝিয়েছি সে যেন ভেঙে না পড়ে।আজ সামান্য আমার এনগেজমেন্ট হওয়ার কথা শুনে তুমি নিজের কি হাল করেছো আর আমার তো বিয়েই হয়ে গেছিল যা চাইলেও ভাঙা যেত না।এসবের পরও তুমি যদি আশা করো আমি তোমাকে আর পাঁচ ্টা সাধারণ পুরুষের মতো ভালোবাসার গল্প ফাদবো তাহলে ভুল?আমি যেমন, ঠিক তেমন ভাবে তোমাকে মানতে হবে।তোমাকে নিয়ে আমার মনে কোনোদিন প্রেম ভালোবাসা এসব ছিল না তাই হুট করে ভাবতেও পারবো না।তবে আমি নিজেকে সময় দিব তোমাকে নিয়ে ভাবার,তোমার সাথে আমার পথ চলার পথটা আমি তৈরি করবো।তবে আমি তোমাকে ঘটা করে নিশ্চিয়তা দিতে পারবো না যে তোমাকে আমি ভালোবাসি।মন এমন এক অদৃশ্য জগৎ সেখানে যত তাড়াতাড়ি স্থান নেওয়া যায় চাইলে তত তাড়াতাড়ি স্থান থেকে বাদ দেওয়া যায়। এতমাস তোমার সাথে আমি সংসার করছি সে হিসেবে তোমাকে আমার কিছুটা ভালো লাগে কিছুটা মায়া লাগে কিন্তু ভালোবাসি কিনা বা ভালোবাসা আছে কিনা জানি না তবে আমি সত্যি কথা বলতে চাই একটা?সেটা হলো তোমার সঙ্গ আমার ভালো লাগে,তোমার অনুপস্থিতিতে আমি বিরক্ত হয়,আর আমার দৈনন্দিন জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তুমি একদম ভালোভাবে অভ্যাসে পরিণত হয়েছো।তাই তুমি চাইলে আমার জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারো তবে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি কখনো তোমার মতো করে তোমাকে বলতে পারবো না ভালোবাসি,কারণ ওসবে আমার মনটা ভেঙে গেছে তাই চট করে আমি আর কোনোকিছুতে জড়াতে চাই না।আর তুরফার বিষয়টা দেখে হঠাৎ করে শুভাকে নিয়ে আমি চিন্তায় ছিলাম।শুভা যতই শান্ত আর নম্র হোক একবার যখন প্রেমে পড়েছে সে যে তুরফার মতো কাজ করবে না এটার গ্যারান্টি কি?তাই আমি নিজ দায়িত্বে মাকে রাজি করিয়ে নীলকে সিলেট থেকে আনিয়ে তাদের এক হওয়ার প্রথম ধাপটা পূরণ করলাম।আশা করি এবার দুজনে সুন্দর জীবনের লোভে হলেও ভালো করে লেখাপড়ায় মন দিবে।আর হ্যাঁ তুমিও আমাকে নিয়ে ভেবো না।আমি এখন আর কাউকে নিয়ে ভাবার সময় পাবো না,তুমি তোমার মতো চলো আমি আমার মতো।তবে আমি প্রত্যাশা করবো এই যে মুখে ভালোবাসা বলা নিয়ে আমার প্রতি তোমার যে আক্ষেপ সেটা এখনের সব কথা শোনার পর তোমার আর থাকবে না।আর থাকলেও আমার কিছু করার নেই। সামনে পরীক্ষা ভালোমতো পড়াশোনা করো আর হ্যাঁ দুষ্টমির মাত্রাটা কমাও।যাও অনেক রাত হয়েছে, সারাদিন কাজ করেছো এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
শুভ্র ছোট ছোট পা ফেলে চলে গেলো তবে সিড়ির কাছে গিয়ে একবার পেছনে তাকালো দেখলো তিমির চোখ মুছছে।শুভ্র একটা নিঃশ্বাস ফেলে নেমে গেলো।
তিমির রুমে আসতেই দেখলো শুভা শুয়ে পড়েছে।তিমির বিছানায় শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ শুভ্র যা বলেছে তার সবগুলো তিতা সত্য।আসলেই তো শুভ্রর জায়গায় দাঁড়িয়ে আজ তিমিরের মনে হলো ভালোবাসার মানুষ হঠাৎ অন্য কারো হয়ে যাওয়া বা তাদের কাছ থেকে ঠকিয়ে যাওয়ার মতো বড় কষ্ট আর নেই। তিমিরের সাথে হালকা একটু ঘটনা হওয়াতে সে নিজের ভেতর যে কষ্ট পেলো তাহলে শুভ্র তো তারচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছে।এভাবে তার কাছে নিজের চাওয়াটা বলা মানেই মানসিক ভাবে তাকে প্রেশার দেওয়া।তিমিরের চোখ থেকে জল পড়ছে।সে নিজের মনকে বোঝালো, আজকের পর থেকে সে শুভ্রকে আর বিরক্ত করবে না,শুভ্রকে তার মতো করে থাকতে দিবে,কখনো জোর করবে না ভালোবাসার কথা বলতে।তিমির নিজেকে গুটিয়ে নিবে।মানুষ ্টা মনের কষ্টকে চেপে রেখে যে তাকে বারবার সুযোগ দিচ্ছে সেটাও বেশি।বিয়ের পর থেকে শুভ্র তাকে কতভাবে সুযোগ দিলো কিন্তু তিমির সামান্য শুভ্রর একটা বিষয়ে তাকে কতটা কঠিন কঠিন কথা শুনালো?তিমির শুভার দিকে তাকাতে দেখলো, ঘুমের মাঝেও শুভা হাসছে।তিমির চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।আসলে ভালোবাসার মানুষ ্কে নিজের করে পাওয়াতেও সুখ সেটা তিমির বুঝে গেছে। না বলুক শুভ্র তাকে ভালেবাসে,না জাগুক শুভ্রর মনে প্রেম তবুও তিমির তাকে ভালোবাসবে,এক পাক্ষিক ভালোবাসা নিয়ে কি সংসার চলে না?তাহলে শত শত মানুষ যারা প্রেম বিসর্জন দিয়ে অন্যজনের সাথে সংসার করে তারা কীভাবে চলে?এত হিসাব নিয়ে চললে তো তিমিরকে বাধ্য হয়ে শুভ্রকে ছাড়তে হবে কিন্তু তিমির সেটা করবে না?শুভ্রকে বড্ড ভালোবাসে তবে চেষ্টা করবে শুভ্রর মনে তার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করার যদি সম্ভব না হয় তবে সে একাই ভালোবাসবে।তবে এটা তো সত্যি শুভ্রর মনে তুরফা বা তিমির কেউ নেই তাই সেখানে তিমিরকে বসতে হলে বিপরীত চরিত্র ্টা বেচে নিতে হবে তিমিরের।এতদিন সে শুভ্রর সাথে নিজের দুষ্টমির চরিত্র ্টা দেখিয়েছে এখন দেখাবে নিজের রূঢ় ব্যবহার ্টা।এবং গায়ে পড়াটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে যদিও শুভ্রর থেকে দূরত্ব সে নিতে পারবে না তবুও এ পুরুষের মনে জায়গা নিতে তাকে এবার পন্থা পরিবর্তন করতে হবে।
,
,
,
চলবে……….
#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে
#তানিয়া
পর্ব:১৭
শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে ঠিকই তবে ঘুম যেন বিছানা অবধি আসার আগেই হারিয়ে গেছে।একটু আগে সারা শরীর ভর করে যে ঘুমটা এসেছিল বিছানায় গা এলাতেই তা যেন হাওয়া। শুভ্র উঠে বসলো।না অযথা গড়াগড়ি করলে হয়তো মাথা ধরবে বরং বারান্দার ইজিচেয়ারে বসা যাক তাতে যদি ঘুম ধরে। সে বারান্দায় বসে আকাশে চোখ দিতেই চোখ গুলো আটকে গেলো চাঁদের সৌন্দর্যতা দেখে।যদিও সে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করেছে কিন্তু সাহিত্যের দিকে কিছুটা ঝোঁক ছিল এখন সেসব হ্রাস পেয়েছে।কিন্তু আজকে এ খোলা আকাশে এত বিশাল চাঁদ দেখে শুভ্রর কেমন জানি ভালো লাগলো।চাঁদের দিকে নজর দিয়ে সে ভাবলো আজকে বলা তিমিরকে বলা কথাগুলো।শুভ্রর মনে হলো কথাগুলো একটু কড়া হয়েছে কিন্তু এগুলো বাস্তব আর সেটা তিমিরকে মানতে হবে।যদি সে তিমিরকে খুশি করার জন্য শুধু তাকে মিথ্যা বলতো তাহলে দুজনের জন্যই বিষয়টা বিপদের হতো।শুভ্র এ কথাগুলো আগে থেকে তৈরি করে রেখেছিল কারণ সে জানতো এক সময় না এক সময় এসব কথা তিমিরকে বলতেই হবে তাই আগে থেকে সে সতর্ক করে দিলো।নিজেকে হালকা লাগলো শুভ্রর।তবে নীল আর শুভার শুভ অনুষ্ঠানটাও শুভ্রর ভালো লাগলো। যদিও শুভাকে বিশ্বাস করে তারা তবুও প্রেম ভয়াবহ রোগ একবার ধরলে জীবন্মৃত করে ছাড়ে।যেমন তুরফা ঠকালো শুভ্রকে,তিমির পাগল হলো শুভ্রর প্রেমে আর সেই প্রেমে তুরফা নিজের পরিবারকে আঘাত করলো। এ ধাঁধায় পড়ে বলা যায় প্রেমের মরা জলে ডুবে। কারণ প্রেমে অন্ধ হয়ে কে কি করে সে হুঁশ থাকে না।সত্যি কি শুভ্রর মনে তিমিরের জন্য কোনো ফিলিংস নাই, তাহলে সেদিন মায়ের কাছে শুভ্র তিমিরকে চেয়ে কাদলো কেনো?
লেকের পাড়ে তিমিরের বলা কথাগুলো শুভ্রকে অনেক ভাবিয়েছে।সেই সাথে ভেবেছে শুভার কথাগুলো।তাই শুভ্র মাথায় ক্যালকুলেশন করে ঠিক করলো সিলেট যাবে। তিমিরের বাসা থেকে বাড়িতে আসার পর শুভ্র দুদিনের ছুটি নিয়ে চলে যায় সিলেট।সাস্টের কাছাকাছি একটা হোটেলে উঠলো।নীলের আড়ালে তার সব বন্ধুদের সাথে কথা বললো। নীলকে শুভ্র আগে থেকে ভালো ছেলে হিসেবে চিনে তবুও বোনের ভালোর জন্য সে সব রকমের খোজখবর নিলো।শেষ দিনে সে নীলের হোস্টেলে গিয়ে তাকে ডেকে পাঠালো।নীল আগন্তুক ব্যক্তির ডাকে এসে খোঁজ করতে শুভ্রকে দেখে থেমে যায় সেই সাথে ভয় দানা বাধে মনে।শুভ্র নীলকে দেখে হাসি দিয়ে এগিয়ে যায়।
নীল এমন জুবুথুবু হলে কেনো,এসো আমার সাথে বসে চা খাবে,তোমার সাথে আমার কথা আছে।
নীল কিছু না বলে শুভ্রর পেছন পেছন গেলো।দুজনে ক্যান্টিনে বসে চা নিলো।
নীল তোমার সাথে শুভার বিষয়ে কথা বলতে এসেছি,আমি জানতে চাই তুমি কি সত্যি শুভাকে ভালোবাসো?
শুভার কথা শুনে নীল চোখ নিচু করলো।শুভ্র তীক্ষ্ণ চোখে নীলকে দেখছে,সে জানতে চায় নীলের মতামত।এখানে তার বোনের জীবন জড়িয়ে আছে তাই বোনের সুখের জন্য তাকে যেভাবে জেরা করা দরকার সব করবে।
নীল চোখ তুলতে শুভ্র চমকে গেলো। নীলের চোখ ভর্তি জল, অথচ শুভ্র তাকে তেমন কোনো কঠিন প্রশ্ন করে নি।আসলে সব প্রশ্ন সবার জন্য এক হয় না, তিমিরের জন্য ভালোবাসা বলাটা যত সহজ আবার শুভ্রর জন্য তা তত কঠিন।
ভাইয়া আপনি যদি আমাকে শুভার জন্য আগুন পথে পা বাড়াতে বলেন আমিও তাও করবো।আমি শুভাকে আজকে বা এ ক মাস দেখে ভালোবাসিনি, ছোট থেকে ভালোবেসেছ।তবে পারিবারিক অবস্থা আর অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে ছিলাম বলে এতবছর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম।আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না,আমি যে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি শুধু মাত্র শুভাকে পাওয়ার জন্য। আমি জানতাম আপনাদের উঁচু অবস্থা আমাকে ধাবিয়ে রাখবে তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ভালো একটা জায়গায় পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর শুভাকে বিয়ে করবো।অনেক বছর দেখা ছিল না শুভাকে কিন্তু সেবার বাড়িতে দেখে ভয় পেলাম যদি শুভা কোনো সম্পর্কে জড়ায় তাই শুভাকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করতে সে জানালো এসব বিষয় এলাউ না কিন্তু ভয় পেলাম যদি আমিও সে বাধায় আটকে পড়ি।তাই শুভাকে নিজের সিদ্ধান্ত জানায় এবং এটাও বলি আমার জন্য অপেক্ষা করতে।আমি ভেবেছিলাম শুভাকে নিয়ে এখন হয়তে বাড়িতে বিয়ে নিয়ে ভাববে না তাই আমি নিজের পড়াটা ভালো করে চালাতে শুরু করলাম।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আপনি আমাদের ধরে ফেললেন।শুভা আপনাকে খুব ভয় পায়,সেই যে আমাকে ব্লক দিয়েছে এরমধ্যে আমার কল মেসেজ কিছুরই রিপ্লাই করে নি।বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি শুভাকে অনেক ভালোবাসি আর এতটাই ভালোবাসি যে ওকে পাওয়ার জন্য আমি নিজেকে ছোট থেকে তৈরি করার চেষ্টা করছি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার কপালে শুভা নেই।
নীল কথাটা শেষ করার সাথে সাথে চোখ ঝাপিয়ে কান্না শুরু করলো।এ বিষয়ের জন্য শুভ্র প্রস্তুত ছিল না।ক্যান্টিনের কয়েকজন তাদের দেখছে।শুভ্রর হঠাৎ লজ্জা করলো,একটা ছেলে তার সামনে এভাবে কাঁদছে ব্যাপার ্টা বেশ বাজে লাগলো তার।সে নীলকে কান্না থামানোর জন্য অনুরোধ করলো।
নীল প্লিজ কান্না বন্ধ করো।তোমাকে কাদানোর জন্য আমি দুঃখিত।তবে তোমার বোঝা উচিত আমি একজন ভাই। আর বোনের ভালোমন্দ দেখার জন্য আমাকে সবটা বিবেচনা করতে হয়।তোমাকে ছোট থেকে চিনি, জানি তবে বোনের জীবন সঙ্গী হিসেবে সিলেক্ট করতে হলে দেখতে হবে তুমি তার কতটা উপযুক্ত। টাকার বা অর্থ ্পর বিষয় ্টার চেয়ে সততা বিষয়টা জানা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে তুমি বর্তমানে ভালো একটা সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছো আশা রাখি ভালো কিছু করতে পারবে।যদি তোমার চিন্তা ধারা সত্যি শুভাকে পাওয়ার মতো হয় তবে আমি নিজে এ দায়িত্ব নিব।এখন বলো তুমি ভবিষ্যতে কি সত্যি শুভাকে নিয়ে থাকতে চাও?
শুভ্রকে চমকে দিয়ে নীল সবার সামনে শুভ্রর পা ধরে নিলো।
ভাই য়া আপনি যা বলবেন সব করবো তবুও আমি শুভাকে চাই। শুভা বলেছে আপনি যদি তার পক্ষে থাকেন তবে আমাদের সম্পর্ক বাস্তবে রূপ নিতে সমস্যা হবে না।ভাইয়া আমি শুভাকে চাই প্লিজ।
শুভ্র বুঝলো নীল শুভার জন্য একেবারে পাগল হয়ে গেছে। যদি সে না করে তবে হয়তো নীলের জীবনটা নষ্ট হবে অন্য ্দিকে শুভা তাদের দিকে চেয়ে হয়তো সব কষ্ট মেনে নিবে।শুভ্র নীলকে জড়িয়ে ধরে সাত্বনা দিলো
নিপা বেগম শুভ্রর মুখ থেকে সব কথা শুনে এটম বোমার মতো ফেটে পড়লেন।যার বাপ দাদা সারাবছর তাদের ক্ষেতে কাজ করে তার ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে দিবে এমনটা তিনি কখনো মানবেন না।তাছাড়া একমাত্র মেয়েকে তো তিনি চাইলে জলে ভাসিয়ে দিতে পারেন না।কিন্তু শুভ্র শুভার বিষয়টা গুছিয়ে এমনভাবে তুললো যে নিপা কি বলবে খুঁজে পেলো না।তাছাড়া তুরফার বিয়ের কথাটা প্রমাণ হিসেবে দেখাতেই নিপা যেন নরম হলো।কারণ যতই হোক একে তো অল্প বয়স তার ওপর চাপা স্বভাবের কখন কি করে সে ভয়ে তিনি শুভ্রর সাথে মত দিলেন।শুভ্র মায়ের সম্মতি পেয়ে খুশি হলো সেই সাথে মায়ের কাছে অন্য আবদার সেধে বসলো যা নিপা কখনো ছেলের কাছে আশা করেনি।
মা তোমার সাথে আমার আরেকটা বিষয় নিয়ে কথা বলার আছে, তিমিরকে নিয়ে?
তিমিরকে নিয়ে কথা আছে শুনে নিপা একটু তীক্ষ্ণ হলো।শুভ্র তিমিরকে নিয়ে কি এমন কথা বলবে যে ঘটা করে অনুমতি চাইছে?
শুভ্র তুই কি তিমিরকে ডিভোর্স দিবার কথা নিয়ে ভাবছিস?
ডিভোর্সের কথা শুনে শুভ্র মায়ের চোখে চোখ রাখলো।
মা আমি এ বিষয় নিয়ে কথা বলা তো দূরে থাক ভাবনাতেও আনিনি?
ছেলের কথার ধরণটা হঠাৎ নিপার কাছে স্বাভাবিক মনে হলো না।তিনি চোখ জোড়া আরো কটকটে করে তাকালেন ছেলের দিকে।
শুভ্র তোর বিষয়টা আমি বুঝলাম না, তুই আসলে কি বলতে চাস?
মা আমি তিমিরকে কখনো ডিভোর্স দিব না,এমনকি তিমিরকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করার কথা ভাববো না, শুধু আমি না তুমিও আমাকে কখনো এটা নিয়ে কথা বলবে না?
শুভ্র? হঠাৎ তোর এমন সিদ্ধান্তের কারণ কি?তুই কি তিমিরকে ভালো.
না মা আমি জানি না আধো ওর প্রতি আমার মনে কি আছে কিন্তু আমি এটা বুঝেছি আমার জীবনে ওকে লাগবে।মা ওর প্রতি এখনো ভালোবাসা জন্মায়নি তবে মায়া জন্মেছে। ও ছোট থেকে অনেক কষ্ট করেছে তার সবটা আমি না জানলেও তুমি হয়তো দেখেছো।মা একজীবনে মানুষ সব পায় না আবার যা পায় তার সাথে সমঝোতা করে চললে কিন্তু না পাওয়া বস্তুর চেয়ে অনেক ভালোকিছু পাওয়া যায়। মা আমি তিমিরকে একটা সুযোগ দিতে চাই, আমার বিশ্বাস ওর সাথে থাকতে পারলে হয়তো আমার জীবনে ভালো হবে সবটা।তাছাড়া
ছেলের কথাগুলো শুনে নিপা বিমূঢ় হয়ে গেলো।ছেলের শেষ কথায় তিনি আরো সতর্ক দৃষ্টি তাক করলেন।শুভ্র মাথা নিচু করে আবারও চোখ তুললো।এবার নিপা ভয় পেলেন।ছেলের চোখ থেকে অশ্রু গড়াতে দেখে নিপা বুঝলেন ব্যাপার সহজ না।
মা আমার জীবনে তিমির থাকুক,আমি চাই ওই হোক আমার সঙ্গীনি।মা মেয়েটার নামের মতো মেয়েটার জীবনটাও অন্ধকারে ছিল এত বছর। সেই অন্ধকার আমি দূর করতে চাই। এখনো তিমিরকে কিছু জানাই নি তবে আমি নিজের মনকে আগে গুছিয়ে নিই তবেই না হয় যা হওয়ার হবে।
শুভ্র চোখ থেকে জল পড়তে থাকলো।নিপার কলিজাটা যেন কেউ ছিড়ে নিচ্ছে। তিনি বুঝলেন এ ছেলে একবার যখন মুখ থেকে বের করেছে তিমিরকে চায় তবে পৃথিবী ধ্বংস হলেও আর পরিবর্তন হবে না।কারণ শুভ্রর কচ্ছপ কামড়ের অভ্যাস রয়েছে যা একবার দাঁত দিয়ে চেপে ধরে তা থেকে আর কখনো ছাড়ে না।আর নিপা চাইলেও এ সিদ্ধান্তের কোনো এসপারওসপার করতে পারবে না তবে তিনি এটা বুঝলেন শুভ্রর মাথায় তিমির ঢুকে পড়েছে নাহলে এ চাপা ছেলে সামান্য একটা মেয়ের জন্য চোখের জল ফেলে?
আযানের শব্দটা কানে আসলেই শুভ্র বিছানা ছাড়ে।গতরাতে এটা ওটা ভাবতে ভাবতে ঘুমটা এসে গিয়েছিল আর খুব ভালো একটা ঘুমও হলো।
তিমির শুভার আগের মতো বসলেও, কলেজ গেলেও আগের মতো কথা বলে না।শুভা কষ্ট পাচ্ছে তবে তার কাজটা যে অন্যায় সেটা তো আর অস্বীকার করা যায় না।কিন্তু কি করবে শুভ্রই যে মানা করলো।
তিমির সরি, সব ভাইয়া করেছে। সে আমাকে ট্রেট করেছে যাতে তোকে কিছুই না বলি।প্লিজ বিষয়টা বোঝার চেষ্টা কর
এসব কখন হয়েছে?
শান্ত দৃষ্টি আর শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো তিমির।
শুভ্র শুভার রুমে যেতেই দেখে শুভা হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। শুভাকে দেখে শুভ্রর মায়া হলো।মেয়েটা এমনিতেই তাকে ভয় পায় সহজে কথা বলে না কিন্তু সেদিন নীলের বিষয়টা নিয়ে কথা বলার পর থেকে একদম মিইয়ে গেছে। আগে তাও দেখলো কথা বলতো এখন লুকিয়ে থাকে সামনে আসতে চায় না।শুভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেললো,সে যতটা সহজ হয়ে চলে তবুও কেনো যে সবাই শুভ্রকে অহংকারী আর নিষ্ঠুর বলে শুভ্র তা বুঝে না।শুভা বলে ডাকতে শুভা চমকে মুখ তুললো।নিজের রুমে হঠাৎ ভাইয়ের আবির্ভাব দেখে শুভা বিস্মিত হলো সেই সাথে ভয় পেলো।
ভাইয়া তুমি আমার রুমে হঠাৎ কিছু হয়েছে কি?
হ্যাঁ হয়েছে তবে তোর চেহারার এ অবস্থা কেনো,কেমন শুকনো?
কই এমনি ভালো লাগছে না।তিমির নেই ফাঁকা লাগছে সবটা।কি হয়েছে ভাই য়া?
বলবো তা শুধু তিমির না থাকাতে এমন মুখ করে রেখেছিস নাকি নীলকেও ভাবছিস?
নীলের নামটা ভাইয়ের মুখ থেকে শুনে শুভার মুখটা পাংশুটে হয়ে গেলো।সে মাথা নামিয়ে ফেললো।শুভ্র বোনের নিচু মাথা দেখে কিঞ্চিৎ হাসলো।এগিয়ে গিয়ে শুভার মাথায় হাত রাখলো। শুভা চট করে চোখ তুলে চাইলো।ভাই তার কখনো এতটা নিকটে এসে আদর করেনি।শুভ্র দেখলো শুভার চোখে জল জমছে।
শুভা তুই কি নীলকে ভালোবাসিস?
শুভ্র তাকে এ প্রশ্ন করবে শুভা চিন্তা করে নি। ভাইয়ের সাথে এসব প্রেম ভালোবাসার আলাপ করার মতো সাহস শুভা কখনো পায় নি তাই ভাই য়ার প্রশ্ন ্টা শুনে লজ্জা পেলো।
শুভা যা সত্যি তাই বল কারণ তোর কথার ওপর ডিপেন্ড করে যে নীল এ বাড়ির জামাই হবে কি হবে না?
শুভা বুঝলো না শুভ্র তাকে কি বললো বা কি বোঝাতে চাইলো।তার মতের সাথে নীলের এ বাড়ির জামাই হওয়ার সম্পর্ক কি?তাছাড়া সেদিন শুভার জন্য তিমিরকে ভাই য়া চড় দিলো এর পর তো ভয়ে শুভা নীলের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ওর নাম তো দূর কথাও ভাবার চিন্তা করে নি তবুও অবুঝ মন মাঝে মধ্যে তার কথা স্মরণ করতো তখনি সে কাদতো কিন্তু প্রকাশ্যে সে এসব দেখায় নি তাহলে আজ শুভ্র তাকে এটা কোন প্রশ্নের মুখে দাড় করালো।
ভাইয়া তোমাদের অসম্মান হয় এমন কিছু আমি কখনো করিনি আজো করবো না।নীলকে ভালো লাগে ভালোবাসি তবে তোমাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি না।তোমরা আমার বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে।
শুভ্র হাসলো কারণ শুভার গলা ভার হয়ে গেছে সেই সাথে অভিমান ঝরছে গলা দিয়ে।
শুভা আমি মায়ের সাথে সিদ্ধান্ত করেছি বাবাও মত দিয়েছে তোর সাথে খুব তাড়াতাড়ি নীলের এনগেজমেন্ট করাবো।এখন বল তোর আপত্তি আছে?
চকিত চোখ তুললো শুভা তাকালো।হঠাৎ সকল অভিমান ভুলে গিয়ে শুভা ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলো।কান্নার বেগ এতটাই ছিল যে পিঠের ওটানামাতে শুভ্র কি করে সাত্বনা দিবে বুঝতে পারলো না।মেয়েদের এসব ইমোশনাল বিষয় গুলো থেকে বরাবরের মতো শুভ্র দূরে ছিল।শুভ্র শুভার চুলে আঙুল চালিয়ে দিচ্ছে। শুভা কান্না থামাতে শুভ্র হেসে বের হতে গেলো।পেছন থেকে শুভা ডাক দিলো,
ভাই য়া তিমিরকে বলবো এ খুশীর কথাটা?
না এখন ওকে কিচ্ছু জানাবি না।যাই বলার আমি বলবো।তবে তোকে একটু সাহায্য করতে হবে।পরে বুঝিয়ে বলবো।আর হ্যাঁ তিমিরকে নাম ধরে নয় ভাবি ডাকবি,বয়সে এক হলেও মানে এখন সে তোর বড় ভাইয়ের….
কথাটা বলে শুভ্র থেমে গেলো।শুভার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
ভাবি ডাকবি ঠিক আছে?
শুভা অবাক হয়ে মাথা নাড়লো।এই যে তার ভাই সেটা বিশ্বাস করতে বা বুঝতে সময় নিলো শুভা।
পুরো কাহিননিটা শেষ করে করেই শুভা তিমিরের দিকে তাকালো।
এবার বল, তোকে সব না জানাতে আমি যে আদেশ পেয়েছি সেটা পালন করা কি ভুল ছিল ভাবি.?
ভাবি কথাটা শুনেই তিমির হাসলো সেই হাসিতে যোগ দিলো শুভাও।
ক্লাসে পা দিয়ে শুভ্র দেখলো তিমির হাসছে আর তিমিরের হাসিটা দেখে শুভ্রর ভালো লাগলো কিন্তু মুখটা মলিন করলো যখন তিমির শুভ্রকে দেখে হাসি বন্ধ করে চোখ গুলো অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো।শুভ্র নাম ডেকে পড়ানো শুরু করলো ঠিকই তবে তার দৃষ্টি ছিল তিমিরের দিকে।তিমির একবারের জন্যও শুভ্রর দিকে তাকায় নি।শুভ্র বারবার তিমিরের দৃষ্টি কেন্দ্র করে পড়াচ্চছিলো বিধায় তার পড়াটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একসময় ক্লাসের একজন দাড় করিয়ে পড়তে দিয়ে চেয়ারে বসলো।
অফ পিরিয়ডে শুভা আর তিমির ক্লাস রুমের বাইরে হাঁটছিল। শুভ্র অপজিট দিক থেকে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
শুভা আজ বিকেলে তোরা দু’জনে রেডি হয়ে থাকিস আমরা নুহাশপল্লী বেড়াতে যাব।
ভাই য়া হঠাৎ নুহাশপল্লী যাচ্ছো কোনো কাজে নাকি?
হ্যাঁ কাজও বলতে পারিস তবে তোদের তো কোথাও যাওয়া হয় না তাই ভাবলাম তোদেরও সাথে নিয়ে যায়। ওখানে একরাত থাকবো।হোটেল ভাড়া করেছি কলেজ ছুটি হলে দ্রুত তৈরি হয়ে নিস।
শুভা তোর ইচ্ছে হলে তোর যা আমি কোথাও যাব না।তাছাড়া আমার টিউশন আছে , আমি তো আর আমার কাজ বাদ দিতে পারি না?
একদিন টিউশনে না গেলে কি হয়?
শক্ত স্বরে শুভ্র শুধালো।
অনেক কিছু হয়।ঐ টিউশনের টাকা দিয়ে আমার পড়াশোনা চলে যদি কোনোভাবে সেটা হাতছাড়া হয় তবে তো আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে।কারো ঘোরাঘুরির জন্য তো আমি নিজের ক্ষতি করতে পারিনা।
তিমির অন্যদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে।চোখ মুখ পাথর করে আছে। একবারও শুভ্রর দিকে তাকায় নি।শুভ্র অবাক হয়ে তাকাচ্ছে তিমিরের দিকে।তিমির কখনো তার সাথে এতটা রূঢ় হয়ে কথা বলেনি।তিমির শুভ্রকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ক্লাস রুমের দিকে হাটা শুরু করলো।আর শুভ্র চেয়ে রইলো তিমিরের সেই চলনের দিকে।
,
,
,
চলবে………