#সাতরঙা প্রজাপতি
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:১৩||
বাড়ির উঠোনে ননদকে দেখে চমকে গেলো সম্পা। মিহাদ দৌড়ে এসে জ্যোতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললো,”মা মা ফুপি এসেছে।”
জ্যোতি স্মিত হেসে মিহাদকে কোলে নিলো। পেছনে ঘুরে শোভনকে দেখতেই মিহাদ আবারো উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,”এই লোকটাকে তো আমি চিনি ফুপি।”
জ্যোতি প্রতিত্ত্যুরে বললো,”তাই নাকি? তা বলো তো কে উনি?”
“এই লোকটাই তো তোমাকে অনেকগুলো মানুষ এনে নিয়ে যেতে এসেছিল।”
শোভনের দৃষ্টি মিহাদের দিকে। জ্যোতি বেশ মজা পেলো মিহাদের কথায়। বললো,”তাই বুঝি?”
“হুম। আবারো কী তোমায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল ফুপি?”
জ্যোতি মিহাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,”হুম। আবারো আমায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জানিস লোকটা না ছেলেধরা।”
“তুমি তো মেয়ে ফুপি। তাহলে তোমায় কেন নিয়ে গেলো?”
“ছেলে-মেয়ে সবাইকেই ধরে নিয়ে যায়।”
মিহাদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একবার শোভনের দিকে তাকালো তারপর জ্যোতির কোলে মুখ লুকালো।সম্পা ঘর থেকে একটা চেয়ার এনে শোভনের সামনে রাখলো। বললো,”এখানে বসেন।”
জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললো,”মিহাদরে নামা। ওর সঙ্গে পরেও গল্প করতে পারবি। জামাইরে নিয়ে ঘরে যা। ফ্যানের নিচে বসা।”
শোভন তার হাতের প্যাকেট গুলো সম্পার হাতে দিলো। সম্পা প্যাকেটগুলো নিতেই শোভন সম্পার উদ্দেশ্যে বললো,”এত বিচলিত হওয়ার দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।”
“তা বললে তো হবে না। এতটা পথ এসেছেন, ঘরে গিয়ে বসুন আমি শরবত আনছি।”
সম্পা রান্নাঘরে যেতে যেতে জ্যোতির উদ্দেশ্যে আবারো কড়া গলায় বললো,”তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
জ্যোতি মিহাদকে কোল থেকে নামিয়ে শোভনকে নিয়ে ঘরে এলো। ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে বললো,”ব্যাগ থেকে পোশাক বের করে বদলে নিন। আমি মা’কে দেখে আসছি।”
শোভন উঠে দাঁড়ালো। বললো,”চলো আমিও দেখা করে আসি তারপর না হয় বাকি কাজ করা যাবে।”
“আচ্ছা চলুন।”
জায়েদা খাতুন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। শোভনকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের ঘরে এলো জ্যোতি। মায়ের মাথায় হাত রেখে ডেকে বললো,”মা কী জেগে আছো?”
মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে চোখ খুললেন জায়েদা খাতুন। এতক্ষণ জেগেই ছিলেন তিনি।মেয়েকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠল। মেয়ের পেছনে মেয়ের জামাইকে দেখতেই হাসিটা আরো প্রশস্ত হলো।শাশুড়ির চাহনি লক্ষ্য করে শোভন উনাকে সালাম দিলো। জায়েদা খাতুন অস্পষ্ট স্বরে সালামের জবাব নিলেন। সেই যে বিয়ের সময় মেয়ের জামাইকে দেখেছিলেন তিনি, তারপর আর দেখা হয়নি। এ কারণেই সবসময় মেয়েকে নিয়ে খুব চিন্তিত থাকতেন তিনি। যদি মেয়ের অবস্থাও উনার মতো হয়? কী হবে তখন? যখনি জানতে পারলেন শোভন জ্যোতিকে সঙ্গে নিয়ে গেছে তখন কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেলেন।
শোভন কিছুক্ষণ জায়েদা খাতুনের শিয়রে বসে চলে গেলো। সম্পার ডাক শুনে জ্যোতি রান্নাঘরে এলো। শরবতের গ্লাস ননদের হাতে ধরিয়ে দিলো সম্পা। বললো,”আসার আগে জানিয়ে আসা উচিত ছিলো না তোর? তোর ভাই বাড়িতে নেই, কখন বাজার করে আনবে আর কখন রান্না করবো? এই প্রথম জামাই বাড়িতে এলো ঠিকভাবে আপ্যায়ন করতে না পারলে কী ভাববে? তুই তো সব জানিস বুঝিস তাহলে এমন একটা কাজ কী করে করলি? কেন লজ্জায় ফেললি আমাদের?”
“তোমাদেরকে চমকে দেওয়ার জন্যই তো না জানিয়ে এসেছি। তুমি অত চিন্তা করো না তো ভাবী। উনি এসব বিষয় নিয়ে কিছুই মনে করবেন না। আর হ্যাঁ এই নিয়ে কিন্তু উনার প্রথম নয় বরং দ্বিতীয়বার এখানে আসা বুঝেছো।”
“প্রথমবার যখন এসেছিল তখন তোকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে এসেছিল ওই আসা কী আর আসা হলো? এখন যা শরবত নিয়ে জামাইকে দে।”
শোভন বাহিরের পোশাক বদলে হাতমুখ ধুয়ে বিছানায় বসলো। জ্যোতি ঘরে এলো। শরবতের গ্লাস শোভনের হাতে দিয়ে বললো,”এটা খেয়ে নিন।”
“এর কোনো প্রয়োজন ছিলো না।”
“প্রয়োজন না থাকলেও ভাবী কোনো কথা শুনছে না। তাই খেয়ে নিন।”
খালি গ্লাস নিয়ে আবারো রান্নাঘরে এলো জ্যোতি। জাহিদ ব্যাগ ভর্তি বাজার হাতে বাড়ি চলে এসেছে। ভাইকে দেখে জ্যোতি কিছুটা চমকে গেলো। প্রশ্ন করল,”তুমি তো সেই রাতে ফিরো ভাইয়া। এই সময় চলে আসলে যে? আবার সঙ্গে এতগুলো বাজার!”
গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জাহিদ উত্তরে বললো,”তোর ভাবী ফোন করেছিল। তা তোর কী আসার আগে জানানো উচিত ছিলো না? ঠিক করে তো আয়োজনই করতে পারলাম না।”
“তুমি অন্তত ভাবীর মতো কথা বলো না তো।”
“তুই কী বুঝবি? তা জামাই কোথায়?”
“ঘরে আছে।”
“আচ্ছা আমি দেখা করে আসি।”
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে শোভনকে দেখতে লাগলো মিহাদ। তাকে দেখতেই মুচকি হাসলো শোভন। বললো,”ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?এদিকে এসো।”
মিহাদ গেলো না ভেতরে। শোভন বললো,”ভেতরে এলে তোমায় চকলেট দিবো।”
মিহাদ এবার দৌড়ে সেখান থেকে পালালো। তার এমন আচরণে চমকে গেলো শোভন। মনে মনে বললো,”এই বাচ্চাটার আবার কী হলো? চকলেট দিবো বলার পরেও এলো না?”
জাহিদ দরজার সামনে এসে অনুমতি চাইলো, “ভেতরে আসবো জামাই?”
“হ্যাঁ আসুন। অনুমতি নেওয়ার কী আছে?”
জাহিদ হাস্যজ্জ্বল মুখে ভেতরে প্রবেশ করল। প্রশ্ন করল,”তা আসতে অসুবিধে হয়নি তো?”
“না ভাইয়া কোনো অসুবিধে হয়নি। তা কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
বেশ কিছুক্ষণ ধরে জাহিদ শোভন একসঙ্গে বসে গল্প গুজব করল। সম্পা রান্না বসিয়েছে। জ্যোতি তাকে হাতে হাতে সাহায্য করছে। রান্না শেষে একটি প্লেটে খাবার বেড়ে উঠে গেলো জ্যোতি। সম্পার উদ্দেশ্যে বললো,”আগে মা’কে খাইয়ে আসি ভাবী।”
“হুম যা।”
জায়েদা খাতুনের ঘরে এসে একটা চেয়ার টেনে সম্মুখে বসলো জ্যোতি। ভাত মাখিয়ে এক লোকমা মায়ের মুখের সামনে ধরতেই জায়েদা খাতুন প্রশ্ন করলেন,”জামাই বাবা খাইছে?”
“না মা। তুমি আগে খেয়ে নাও তারপর সবাই খাবে।”
জায়েদা খাতুন আফসোস করে বললেন,”কী একটা কপাল আমার। মাইয়ার জামাই বাড়িত আইলো অথচ সামনে বসাইয়া জামাইরে আপ্যায়ন করতে পারলাম না। কে জানে কী না কী মনে করে জামাই বাবায়।”
“আহা মা,এসব চিন্তা করে মাথা নষ্ট করার কোনো দরকার আছে বলো? উনি তো জানেন তুমি অসুস্থ।তোমাকে দেখার জন্যই তো আমায় এতটা পথ নিয়ে এসেছেন তাহলে উনি কেন কিছু মনে করবেন?”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জায়েদা খাতুন। যেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে এলো বুকে জমে থাকা হাজারো দুঃখ। জায়েদা খাতুনকে খাবার এবং ওষুধ খাইয়ে বেরিয়ে এলো জ্যোতি। সম্পা খাবার বেড়ে বসে আছে। জ্যোতি আসতেই বললো,”জামাইকে ডেকে নিয়ে আয়।”
“হুম। ভাইয়া কই?”
“তুই জামাইকে আগে ডেকে নিয়ে আয়। তোর ভাইকে আমি ডাকছি।”
জ্যোতি চলে গেলো শোভনকে আনতে। সম্পা জাহিদকে ডেকে আনলো। রাতে সবাই একসঙ্গে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে ঘরে চলে এলো শোভন।সম্পার সঙ্গে এঁটো বাসন গুলো পরিষ্কার করে রান্নাঘর গুছিয়ে ঘরে এলো জ্যোতি। শোভনের উদ্দেশ্যে আবদারের সুরে বললো,”আজ আমি মায়ের সঙ্গে ঘুমাই?”
শোভন নিরবে তাকিয়ে আছে স্ত্রীর দিকে। জ্যোতি পুনরায় জিজ্ঞেস করল,”যাই?”
মুখের উপর না করতে পারলো না শোভন।একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনুমতি দিলো,”হুম।”
“মোবাইল আমার কাছেই আছে। কোনো প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে কল দিবেন। আমি চলে আসবো।”
“হুম।”
জ্যোতি খুশি হয়ে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলো মায়ের ঘরে। শোভনের মুখখানা মলিন হয়ে গেছে। মোটেও ইচ্ছে করেনি হ্যাঁ বলতে। শুধুমাত্র স্ত্রীর হাসি বিলীন হয়ে যাবে ভেবে হ্যাঁ বলে দিয়েছে। জ্যোতি ঘরে এসে জায়েদা খাতুনের পাশে শুয়ে উনাকে ঝাপটে ধরলো।
জায়েদা খাতুন চমকে গেলেন। বললেন,”এ কী তুই এনে ক্যান?”
“আজ আমি তোমার সঙ্গে শোবো মা।”
“সে কী কথা? জামাই বাবা তো রাগ করবো। ঘরে যা মাইয়া।”
“মোটেও রাগ করবেন না উনি।উনার অনুমতি নিয়েই তো এখানে এসেছি।”
জায়েদা খাতুন মেয়েকে আর কিছু বললেন না। আজ অনেকদিন পর মা-মেয়ে একসঙ্গে হয়েছে। মায়ের কাছে শুতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো জ্যোতি। জায়েদা খাতুনের ইচ্ছে হলো মেয়ের মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিতে কিন্তু পারলেন না তিনি। হাতটা যে প্যারালাইসড হয়ে আছে। অনেক চেষ্টার পরেও বিছানা থেকে হাতটা কিছুতেই নাড়াতে পারলেন না।
গভীর রাত অথচ শোভনের চোখে ঘুম নেই। একবার ডানে তো আরেকবার বামে ঘুরছে। বুঝতে পারছে না আজ কেন এমন লাগছে তার। শেষে উঠে বসলো। একবার মনে হলো, নতুন জায়গা তাই হয়তো এমন অস্থির লাগছে তার, ঘুমও আসছে না সম্ভবত এ কারণেই। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলো, না এই অস্থিরতা নতুন জায়গায় আসার জন্যে নয় বরং অন্য কিছুর জন্য। কিন্তু এই অন্য কিছুটা কী? জ্যোতি! তার মানে জ্যোতির অনুপস্থিতিই কী এই অস্থিরতার মূল কারণ? ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো শোভনের। এই মুহূর্তে পানির খুব প্রয়োজন। আশেপাশে তাকিয়েও ঘরে পানির সন্ধান পেলো না। তাহলে কী বাহিরে যাবে? যদি কেউ দেখে ফেলে? অন্য কিছু ভাবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে পূর্বের ন্যায় বিছানায় বসে রইলো শোভন।
তৎক্ষণাৎ মনে একটা প্রশ্ন এলো,”জ্যোতিরও কী আমার মতোই এমন অস্থির লাগছে? নাকি আজও সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে?”
ভাবতে ভাবতেই মোবাইল হাতে নিলো শোভন। ইচ্ছে করল জ্যোতিকে কল দিয়ে ডেকে আনতে। কিন্তু পারলো না। এতদিন পর মেয়েটি তার মায়ের কাছে ঘুমিয়েছে অথচ সে কিনা এই সুখ কেড়ে নিবে তার থেকে? মোবাইলটা আবারো বালিশের পাশে রেখে দিলো শোভন। লম্বা হয়ে শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
শোভনের নির্ঘুমে রাতটি কোনোমতে পার হলো। সকাল হতেই চা নিয়ে ঘরে এলো জ্যোতি। শোভনের মুখশ্রীতে দৃষ্টি দিতেই চমকালো। প্রশ্ন করল,”রাতে কী আপনার ঠিকঠাক ঘুম হয়নি?”
শোভন চায়ের কাপ নিজের হাতে নিয়ে দৃষ্টি সেখানে নিবদ্ধ করল। খাপছাড়া উত্তর দিলো,”ঘুম হবে না কেন? অনেক ভালো ঘুম হয়েছে।”
“তাহলে চোখ লাল লাল লাগছে কেন?”
“স্বাভাবিক।”
জ্যোতি বিছানায় বসলো। শোভন আড়চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,”কাল রাতে তোমার ঘুম হয়েছে?”
“হুম হয়েছে। কেন?”
“এমনি।”
ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শোভনের। চা খাওয়া শেষ করতেই জাহিদ এলো। শোভনের উদ্দেশ্যে বললো,”চলো জামাই ঘুরে আসি।”
জাহিদের জোরাজুরিতে তার সঙ্গে বের হলো শোভন। রান্নাঘরে আসতেই খুব সতর্ক কণ্ঠে সম্পা প্রশ্ন করল,”নতুন সংসার ঠিক করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিস তো?”
জ্যোতি মৃদু হেসে উত্তর দিলো,”হুম ভাবী।”
“তা তোদের সম্পর্ক আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক হয়েছে তো?”
“হ্যাঁ।”
এবার কিছুটা শান্তি পেলো সম্পা। জাহিদ শোভনকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে গ্ৰাম চেনাচ্ছে আর গল্প করছে। সকালের নাস্তা তৈরি করছে সম্পা।
______
নাস্তা শেষ করে ঘরে বসে আছে শোভন।এখানে এসে কোনভাবেই যেনো সময় পার হচ্ছে না। হঠাৎ করেই শোভনের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল ঘরের পর্দায়। পর্দা নড়ছে অথচ বাহিরে নেই কোনো বাতাস। পর্দার আড়ালে দুটো ছোট্ট পা স্থির দেখতে পেলো। অধরে হাসি ফোটে উঠল। ধীর পায়ে খাট থেকে নেমে শব্দহীন কদমে এগিয়ে গেলো পর্দার কাছে। খপ করে ধরে ফেললো মিহাদকে।
মিহাদ ভয় পেয়ে গেলো। মুখায়ব দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে দিবে। মিহাদকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসালো শোভন। জিজ্ঞেস করল,”আমায় দেখে পালাও কেন বাবু?”
মিহাদ সরল মনে উত্তর দিলো,”তুমি ছেলেধরা।”
ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো শোভন। আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বললো, “আমি ছেলধরা?”
মিহাদ উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। শোভন প্রশ্ন করল,”এ কথাটা কে বলেছে তোমায়?”
“ফুপি বলেছে। তুমি তো ফুপিকেও ধরে নিয়ে গেছিলে।”
আশ্চর্য হলো শোভন। বাড়িতে যে বাচ্চা আছে তা শোভন আগে থেকেই জানতো তাই আসার সময় কিছু চকলেট এনেছিল সঙ্গে করে।দুটো চকলেট বের করে মিহাদের দুই হাতে ধরিয়ে দিলো। বললো,”আমি তো এখন আর ছেলে ধরি না।”
“কেন?”
“তোমার ফুপিকে ধরার পর এসব কাজ ছেড়ে দিয়েছি।”
“ফুপিকে ছাড়বে না?”
“তুমি যদি আমার সঙ্গে যেতে চাও তাহলে তোমার ফুপিকে ছেড়ে দিবো তার বদলে তোমায় সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।”
মিহাদ আবারো ভয় পেয়ে গেলো। বললো,”না আমি যাবো না। তুমি ফুপিকেই নিয়ে যাও।”
হাসলো শোভন। মিহাদের বড়ো দুই বোন আয়রা, মায়রা আজ স্কুলে যায়নি। তারাও এসে শোভনের কাছে বসলো। শোভন সব চকলেট গুলো তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলো। কিছুক্ষণ বাদে ঘরে এলো জ্যোতি। বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললো,”তোরা এখানে কী করছিস? গোসল করতে যা।”
জ্যোতির কথায় সবাই দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে। বাচ্চারা যেতেই শোভন উঠে দাঁড়ালো। জ্যোতির দিকে ক্রোধ মিশ্রিত চাহনিতে তাকালো। শোভনের এমন দৃষ্টিতে কিছুটা চমকে গেলো জ্যোতি। শুকনো ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসলো।
শোভন প্রশ্ন করল,”আমি ছেলেধরা?”
আচমকা এমন একটি কথায় ভড়কে গেলো জ্যোতি। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললো,”না না। আপনি ছেলেধরা হতে যাবেন কেন?”
“তাহলে বাচ্চাটাকে এসব বলেছো কেন?”
“আমি তো মজা করে বলেছিলাম। রাগ করেছেন আপনি?”
“না রাগ করে আর কী করবো।”
চলবে _____