#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৫
_________________
আকাশ জুড়ে ঘন বর্ষণ। হুট করেই মাঝ রাস্তায় যাওয়ার পথে নেমেছে বর্ষণ। প্রিয়তা আনমনাই তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে বৃষ্টির ফোটা রাস্তায় গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখছে সে। এই বৃষ্টি, এই বৃষ্টি যেন কিছু মনে করায় তাকে সেই রাতে বিয়ের আসর থেকে পালানো, বাসে ওঠা, অপূর্বের পাশ বসা, মতলবের ভয়ে অপূর্ব হাত ধরা তার কাছে সাহায্য চাওয়া, তাকে বিশ্বাস করা আরও কত কি? সেদিনের অপূর্ব আর আজকের অপূর্বের মধ্যে কত পার্থক্য। সেদিনের অপূর্ব ছিল বড্ড অচেনা, আর দূরের মানুষ আর আজকের অপূর্ব কতটা চেনা, কতটা প্রিয় মানুষ। কিন্তু তারপরও কোথাও গিয়ে বড্ড দূরত্বতা। প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। অপূর্ব কোনোদিনও তার হবে না অপূর্ব যে রাজনীতিবিদ। যা প্রিয়তা চরমভাবে হেট করে।’
অন্যদিকে,
প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে অপূর্ব। কি যেন ভাবছে সে, বৃষ্টির রিমিঝিমি শব্দে যেন তাকেও কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই বৃষ্টিই যেন প্রিয়তাকে তার কাছে এনে দিয়েছে। বৃষ্টিই যেন প্রিয়তা আর অপূর্বের প্রথম সাক্ষাৎতের সাক্ষী। হঠাৎই অপূর্ব বললো,
‘ এভাবে মন খারাপ করতে নেই, জীবন যে খুব সুন্দর এটা তো মানতে হয়।’
প্রিয়তা ঘুরে তাকালো অপূর্বের দিকে। কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে এটা বুঝেছে প্রিয়তা। প্রিয়তা ফট করেই অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ এতই যখন বুঝেন তাহলে আমার মন ঠিক করার দায়িত্ব কেন নিচ্ছেন না অপূর্ব?’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব হুট করেই প্রিয়তার কাছাকাছি গেল। চোখে রাখলো চোখ এতে যেন প্রিয়তা খানিকটা ঘাবড়ে যায়। বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে তার, বুকের ভিতর ধড়ফড় শুরু করে মুহূর্তেই। অপূর্ব প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষন তারপর শীতল ভেজা কন্ঠে বলে,
‘ আমাতে বেশি আসক্ত হয়ে যেও না মেয়ে, এতে কষ্ট ছাড়া কিছু মিলবে না।’
প্রিয়তা যেন হতাশ হলো তবে কিছু বললো না। সে তো সত্যি আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাকে আসক্ত করেছে অপূর্ব নামক এক রাজনীতিবিদ।’
অতঃপর সময় গড়ালো, বৃষ্টি থামলো, কাছাকাছির থেকে দূরত্ব বাড়লো, বাড়ি ফেরার পথ এগিয়ে এলো।’
গ্র্যান্ডমাদের বাড়ির আগের গলির মুখে গাড়ি থামালো আকিব। প্রিয়তাও বেশি না ভেবে দ্রুত গাড়ি থেকে নামলো। তারপর বললো,
‘ আপনি আর আমার সামনে আসবেন না অপূর্ব। আমার সত্যি কষ্ট হয়। আমি আপনায় ভুলে যাবো। আপনার আমার কোনো ভবিষ্যত নেই। নিজের যত্ন নিয়েন আর ভালো থাকবেন।’
বলে আকিবের দিকে তাকিয়েও বললো প্রিয়তা,
‘ আপনিও ভালো থাকবেন ভাইয়া। আর হ্যাঁ দ্রুত আরোহী আপিটাকে বিয়ে করে নিবেন। আপনার ভাইয়ের আশায় থাকলে আর করা লাগবে না।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে গেল প্রিয়তা। না আর এমনটা হবে না, প্রিয়তা আর অপূর্বকে ভালোবাসা নিয়ে কোনোদিন কিছু বলবে না। একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে যেখানে তুই জানোস প্রিয়তা অপূর্ব তোর নয়। তাহলে, দূর্বল হওয়া ঠিক হচ্ছে না। ছ্যাচড়া মনে হয় নিজেকে। নিজের জীবন আর পড়াশোনার ওপর ফোকাস করতে হবে এখন। প্রিয়তা আর অপূর্বকে নিয়ে ভাববে না, অপূর্বের সামনেও আর পড়তে চায় না। এই রকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে অগ্রসর হলো প্রিয়তা। আর ঘুরে তাকালো না সে।’
অন্যদিকে অপূর্ব।
প্রিয়তা তাকে ভুলে যাবে কথাটা শোনা মাত্রই বুকে যেন ব্যাথা উঠলো তার। প্রিয়তার বলা শেষ কথাগুলো যেন এখনও কানে বাজচ্ছে। অপূর্ব চুপচাপ বললো,
‘ তুমি আমায় সত্যি ভুলে যাবে তুমি পারবে আমায় ভুলতে।’
আকিব শুনলো অপূর্বের কথা। বললো,
‘ ভাই ভুলতে তো আপনায় হবেই কেননা প্রিয়তাকে পেতে হলে রাজনীতি ছাড়তে হবে আপনি কি এটা ছাড়বেন ভাই।’
অপূর্ব জবাব দেয় না। শুধু বলে,
‘ বাড়ি যাবো আকিব গাড়ি চালাও।’
আকিবও শোনে বেশি না ভেবেই দ্রুত ছুটে যায় দূরে। আকিবও মন থেকে চায় এদের মিল হোক। প্রিয়তার শর্তের কথা আকিব শুনেছিল অপূর্বই বলে ছিল তাকে। রাজনীতি, এই রাজনীতি অপূর্ব ভাইকে কতজন ছাড়তে বলেছিল তার হিসাব নেই অপূর্ব ভাইয়ের বাবা, তার মা, তার ভাই এছাড়াও আরো কতজন ছিল অপূর্ব ভাইয়ের দাদিমাও পর্যন্ত বলেছিল কিন্তু অপূর্ব শোনে নি। কারন সে বলেছিল কোনোদিনও রাজনীতি ছাড়তে পারবে না। কিন্তু আজ ভাগ্যের কি পরিহাস ভালোবাসার মানুষটা পর্যন্ত রাজনীতির জন্য কাছে আসতে পারছে না। অপূর্ব ভাই ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রিয়তাকে তার জীবনে আনছে না। নিজেও কষ্ট পাচ্ছে প্রিয়তা মেয়েটাকেও দিচ্ছে।’
এখন দেখা যাক সামনে কি হয় ভাই রাজনীতি নাকি ভালোবাসা কোনটা আনে আর কোনটা ছাড়ে তার জীবনে।’
____
বৃষ্টির পানিতে কাঁদায় মাখোমাখো চারপাশ। প্রিয়তা খুব সাবধানে নিজের বোরকা ধরে বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে চলেছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে প্রায়। চারপাশ নির্জন আর চুপচাপ। প্রিয়তা গেট থেকে ভিতরে ঢুকে উঠোন পেরোতেই তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো আয়মান,
‘ সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি প্রিয়তা?’
আচমকাই আয়মানের কন্ঠটা কানে বাজতেই পিছন ঘুরে তাকালো প্রিয়তা। বললো,
‘ কেন গ্র্যান্ডমা আপনায় কিছু বলে নি আমি তো ফোন করে জানিয়ে ছিলাম তাকে।’
‘ হুম বলেছো তো তুমি নাকি জরুরি কাজে খুলনা গিয়েছিলে তোমার দুলাভাই নাকি মারা গেছে।”
উত্তরে প্রিয়তাও বলে,
‘ হুম। সব তো জানেন দেখছি তাহলে আবার প্রশ্ন করছেন কেন?’
বলেই এগিয়ে যেতে লাগলো প্রিয়তা। প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো আয়মান,
‘ তোমার সাথে গাড়িতে থাকা ওই ছেলেটার কি সম্পর্ক প্রিয়তা?’
প্রিয়তা আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। বেশ অবাক স্বরেই বললো,
‘ আপনি কোন ছেলের কথা বলছেন বলুন তো?’
‘ কতক্ষণ আগে গলির মোড়ে যে ছেলের গাড়ি থেকে নেমেছো তুমি।’
প্রিয়তা ভড়কালো, খানিকটা চমকালো। তার মানে আয়মান তাদের দেখে ফেলেছে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে আবারও বললো আয়মান,
‘ কি হলো তুমি কিছু বলছো কেন?’
প্রিয়তা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ ছেলেটা আমার অনেক প্রিয় মানুষ। এতটুকু শুধু জেনে রাখুন।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে ছুটে গেল প্রিয়তা। আর আয়মান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তার কি হৃদয় ভেঙেছে, বোধহয় একটু ভেঙেছে। কারন সে যে সামনের রমনীকে কেবল মাত্র ভালোবাসতে শুরু করেছিল। এমন সময় আয়মানের ফোনটা বেজে উঠল তার বাবা ফোন করেছে। আয়মান বেশ বিরক্ত হলো ফোনটা না তুলেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সে।’
___
গোসল সেরে নিজের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বড্ড আঘাত লাগছে তার। প্রিয়তাকে চায় আবার চায় না। ভালোবাসা, বিয়ে, কাউকে সবসময় নিজের কাছাকাছি রাখার আকাঙ্খা যেন দিনকে দিন খুব বাড়ছে অপূর্বের। কিন্তু রাজনীতি কি করে ছাড়বে অপূর্ব আবার রাজনীতি নিয়ে প্রিয়তাকেও কিভাবে চাইবে অপূর্ব। যদি কেউ প্রিয়তার ক্ষতি করে দেয় তারওপর আহিল। অপূর্বের কেমন যেন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। অপূর্ব তার ফোনটা নিলো। একটা কল করে বললো,
‘ কোথায় আছো তুমি?’
উত্তরে অপরপাশের ব্যক্তিটিও বললো,
‘ কেন কি হয়েছে?’
‘ রুমে আসো কথা আছে।’
বলেই ফোন কাটলো অপূর্ব।’
অপূর্ব ফোন কাটার চার মিনিটের মাথাতেই অপূর্বের রুমে হাজির হলো তার বাবা। কারন অপূর্ব তার বাবাকেই এই মাত্র ফোন করেছিল। অপূর্বের বাবা ভিতরে ঢুকেই অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমায় ডেকেছো কেন?’
‘ বিছানায় বসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।’
অপূর্বের বাবা বসলেন বিছানায় তারপর বললো,
‘ কাল সারারাত কোথায় ছিলে তুমি? এভাবে হুটহাট যে বেরিয়ে যাও বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করো না। তুমি জানো সকালে তোমার মায়ের কত বকুনি শুনতে হয়েছে আমায়।’
অপূর্ব বাবার কথা শুনলো তবে কিছু বললো না। বিছানায় বসে বাবার কোলে মাথা দিয়ে নীরব স্বরে বললো,
‘ আমি খুব খারাপ তাই না বাবা?’
হঠাৎই অপূর্বের এহেম কান্ডে চমকে উঠলো অপূর্বের বাবা। ছেলেটা আবার ইমোশনাল হয়ে পড়লো নাকি। কিন্তু কেন? সেদিন আকিব তো কিছু করে নি তবে আজ যেন একটু বেশি ইমোশনাল লাগছে। অপূর্বের বাবা অপূর্বের মাথায় হাত বুলালেন। বললো,
‘ কি হয়েছে অপূর্ব? তুমি ঠিক আছো তো।’
উত্তরে শান্ত স্বরেই জবাব অপূর্বের,
‘ জানো বাবা একটা মেয়ে আমায় ভালোবাসে আমিও তাকে চাই কিন্তু আবার চাই না। তুমি তো জানো বাবা আমার রাজনীতির জীবন যদি কেউ ওর ক্ষতি করে দেয় তখন।’
এতক্ষণে যেন ছেলের অবস্থা বুঝলেন অপূর্বের বাবা। তার মানে তার ছেলে প্রেমে পড়েছে। আর প্রেমে পড়ে এখন আঘাতও পাচ্ছে। অপূর্বের বাবার ভাবনার মাঝে আবারও বললো অপূর্ব,
‘ জানো বাবা ও না আজ আমায় বলেছে ও নাকি আমায় ভুলে যাবে। কথাটা শুনে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে আমি আঘাত পেয়েছি। তুমি জানো বাবা মেয়েটার নাম প্রিয়তা। খুলনা থেকে ফেরার পথে আলাপ আমাদের। ওর বাবাও একজন রাজনীতিবিদ ছিল বাবা। ও আমায় বলেছে ওকে পেতে হলে আমায় রাজনীতি ছাড়তে হবে আর আমিও রাজনীতি নিয়ে ওকে একসেপ্ট করবো না তাহলে আমার কি করা উচিত বাবা।’
‘ তুমি কি সত্যি মেয়েটাকে ভালোবাসো অপূর্ব?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। উল্টো বলে,
‘ ও আমায় কোনোদিন ক্ষমা করবে না, ও কিছু জানলে আমায় অপরাধী ভাববে। আমায় মেনে নিবে না।’
অপূর্বের বাবা যেন এবার অবাক হলেন। বললেন,
‘ ক্ষমা কেন করবে না কি করেছো তুমি?’
অপূর্ব জবাব দেয় না এবারও চুপ থাকে। গভীর রাতের কিছু ঘটনা মনে পড়ে তার। একটা লোক, সারা শরীরে রক্তে জর্জরিত, অপূর্ব দেখলো না আর ভাবলো না অপূর্ব। চোখ বন্ধ করে নিলো নিমিষেই।’
___
মাঝপথে কাটলো দু’দিন। আজ প্রিয়তা ভার্সিটি এসেছিল। দুপুরের মধ্যভাগ তখন, আজ আর বেশি ভালো না লাগায় আজকের মতো ক্লাস সেরে বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে নিলো প্রিয়তা। ভার্সিটির করিডোর বেয়ে যেতেই পিছন থেকে কেউ তাকে ডাকলো। বললো,
‘ প্রিয়তা দাঁড়াও তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে?’
প্রিয়তা পিছন ঘুরে তাকালো তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সেদিনের সেই স্যারটা আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি। কিন্তু কথা হলো প্রিয়তার সাথে এই স্যারের কি কথা থাকতে পারে?’
প্রিয়তা একটু একটু করে এগিয়ে গেল সামনে। খুব অবাক স্বরে বললো,
‘ জ্বী বলুন স্যার।’
#চলবে….
#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৬
_________________
রাত তিনটে। বিছানায় শুয়ে আছে অপূর্ব অনেক ভেবে দেখেছে সে এইভাবে থাকা যায় না। প্রিয়তাকে তার লাগবে, লাগবে মানে লাগবেই। আর রাজনীতি এটাও ছাড়লে চলবে না। প্রিয়তাকে বোঝাতে হবে, খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই মেয়েটা বুঝবে তার কথা। প্রিয়তা তার জীবনে আসলে খুব সাবধানেই চলবে অপূর্ব, সবসময় প্রিয়তাকে চোখে চোখে রাখবে আর নিজেরও খেয়াল রাখবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো মৃত্যু তো একদিন হবেই সে আজ হোক বা কাল। আর সত্যি তো ভবিষ্যতে কি ঘটবে সেটা ভেবে এখনই কষ্ট পেলে চলবে নাকি। অপূর্ব নানা কিছু ভেবে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ফোনটা বের করলো একটা ফোন করতে হবে তাকে। অপূর্ব প্রথমেই ফোন করতে নিলো প্রিয়তার নাম্বারে। কিন্তু পরক্ষণে ভাবলো এত রাতে ফোন দিবে এখন নিশ্চয়ই প্রিয়তা ঘুমাচ্ছে। এটা ভেবে অপূর্ব কল না করে মেসেজ লিখলো প্রিয়তাকে।’
‘ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, অনেক তো হলো দূরত্ব আর ভালো লাগছে না। আমার কথাগুলো শুনবে প্লিজ। আমি আজ সত্যি নিরুপায় তোমায় অনেক কিছু বলতে চাই। আজ বিকেলে তোমাদের ভার্সিটির ডান দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে আসবে আমি তোমার জন্য দূরের এক নির্জন মাঠে অপেক্ষা করবো। আসবে কিন্তু অনেক কিছু বলবো তোমায়।’
লিখেই প্রিয়তাকে পাঠিকে দিলো অপূর্ব। অপূর্ব মেসেজ দেওয়ার চার সেকেন্ডের মাথাতেই রিপ্লাই আসলো ‘আমি আসবো’!
অপূর্ব যেন বিষয়টায় চমকিয়েছে প্রিয়তা এত রাতেও সজাগ আছে ঘুমায় নি। অপূর্ব কি ভেবে যেন প্রিয়তার নাম্বারে কল করলো।’
রুম জুড়ে বিষন্নতা। কারেন্ট আছে তাও লাইট জ্বালানো হচ্ছে না। মোমবাতির বিন্দু বিন্দু আলোকে সামনের রেখে টেবিলের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে প্রিয়তা। মোমবাতির আগুনের মাঝে আঙুল নাড়াচ্ছে সে, কখনো এদিকে তো কখনো ওদিকে। বেশ অনেকক্ষন থেকেই ওভাবে বসে আছে সে। অপূর্ব যখন মেসেজ দিয়েছিল তখন প্রিয়তাও অপূর্বকে মেসেজ দিতে নিয়েছিল তাই তো এতদ্রুত রিপ্লাই দিলো। ফোন বাজলো, প্রিয়তা কিছুক্ষন চেয়ে রইলো ফোনটার দিকে তারপর কল রিসিভ করে বললো,
‘ জ্বী বলুন,
উত্তরে অপরপ্রান্তে থাকা অপূর্ব বললো,
‘ তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন?’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তার স্ট্রিট জবাব,
‘ এমনি ঘুম আসছিল না।’
‘ ওহ,
‘ জ্বী। তা কাল কি বলবেন আমায়?’
‘ তা না হয় কালই বলি।’
‘ ঠিক আছে।’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ আচ্ছা অপূর্ব আপনি যখন কাউকে মারেন তখন কি আপনার খারাপ লাগে না।’
অপূর্ব কি অবাক হলো প্রিয়তার কথা শুনে এটা ঠিক বোঝা গেল না। অপূর্ব খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো,
‘ মানে?’
‘ না কিছু না ঘুমান কাল দেখা হবে।’
বলেই ফোন কাটে প্রিয়তা। তারপর চুপচাপ আবারও তাকিয়ে রয় জলন্ত মোমবাতির আগুনের দিকে।’
এদিকে,
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থেকে আর বেশি ভাবলো না। তবে ফোন করলো আরেকটা তবে সেটা প্রিয়তাকে নয় আকিবকে।’
___
কোলবালিশ জড়িয়ে আরোহীকে নিয়ে সুইমিংপুলের সামনে সাঁতার কাটছে এমন স্বপ্ন নিয়ে ঘুমে বিভোর আকিব। আকিব সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে আর বলছে,
‘ আমায় ধরতে পারে না, আমায় ধরতে পারে না।’
উত্তরে আরোহী বললো,
‘ তোরে ধরমু পড়ে তুই আগে ফোন ধর গাঁধা।’
‘ তুমি এসব আমায় কি বলছো আমায়?’
এমন সময় আচমকাই বিকট শব্দে ফোনটা বেজে ওঠায় ধড়ফড়িয়ে উঠলো আকিব। ফোনটা তুললো তক্ষৎনাত, উপরের অপূর্বের নাম্বার দেখে আটপাঁচ কিছু না ভেবেই থরথর করে বলে উঠল সে,
‘ ভাই আমি এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে আসছি আমার একটু লেট হয়ে গেছে আমি আর সুইমিংপুলে সাঁতার কাটবো না।’
আকিবের কথা শুনে হতাশ অপূর্ব। হতাশ হয়েই বললো,
‘ কুল ডাউন আকিব এখন রাত তিনটে বাজে কোথায় গাড়ি নিয়ে আসবে তুমি আর সুইমিং পুল।’
অপূর্বের কথা শুনে এবার আকিবের হুস আসলো ফোনের টাইম আর ঘড়ির টাইম দেখে আশেপাশে তাকালো আকিব সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। কি স্বপ্নরে বাবা, তাই বলি আরোহী ওভাবে কখনো তাকে তুই করে বলে নাকি। আকিবের ভাবনার মাঝেই বলে উঠল অপূর্ব,
‘ তুমি এই রাতের বেলা সুইমিংপুলে কি করছো আকিব?’
উত্তরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আকিব,
‘ ইয়ে না মানে সরি ভাই স্বপ্ন দেখছিলাম আমি সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছি।’
অপূর্ব হাসে হাল্কা শব্দ করেই হাসে সে। এই আকিব আসলেই অদ্ভুত আর ঠিক হওয়ার নয়। অপূর্ব হাসতে হাসতেই জবাব দেয়,
‘ তা সাঁতার কি একা কাটছিলে নাকি সঙ্গে কেউ ছিল আকিব?’
আকিব মাথা চুলকায়। বলে,
‘ না মানে ভাই।’
‘ হয়েছে আর বলতে হবে না।’
‘ ঠিক আছে ভাই কিন্তু এত রাতে ফোন কেন দিলেন?’
‘ তোমার ভাবিকে কাল প্রপোজ করবো আকিব?’
অপূর্বের কথা শুনে আকিব হতভম্ব হয়ে তার মুখ চেপে ধরলো। কি বললো তার অপূর্ব ভাই। ভাবিকে প্রপোজ করবে মানে। অপূর্ব আরো বলতে লাগলো,
‘ অনেক ভেবে দেখেছি আকিব জীবনে আসলে একটা বউয়ের দরকার আছে যাই বলো। আমার আমার কিছু ফুল চাই আকিব দুপুরের মিটিংটা সেরে বিকেলে যাবো কেমন। আর শোনো তোমার আর আরোহীর বিষয়টাও জলদি শেষ করছি দাঁড়াও। আচ্ছা এখন রাখি তুমি আবার সুইমিংপুলে সাঁতার কাটো তবে খেয়াল রেখো বেশি সাঁতার কেটো না আবার ঠান্ডা লেগে গেলে তখন।’
বলেই আবারও হেঁসে ফোন কাটলো অপূর্ব।’
অন্যদিকে আকিব এখনো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কি বললো অপূর্ব সে নাকি প্রিয়তাকে প্রপোজ করবে। এটা কেমনে সম্ভব। আকিবের ভীষণ জোরে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,
‘ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ভাই, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’
এমন সময় আকিবের কানের পাশে একটা মশা কতক্ষন ভন ভন করে চলে গেল। যেন খুব জোরে চেঁচিয়ে বললো আকিবকে,
‘ আমিও বিশ্বাস করি না আকিব, আমিও বিশ্বাস করি না।’
_____
বিকেল পাঁচটা। রোদ্দুরের ছিটেফোঁটাও নেই তখন, বিশাল এক মাঠ, মাঠটা পুরো খোলামেলা, গাছের আনাগোনা কম দূর সীমানায় একটা ইটের তৈরি দালান বাড়ি আছে তাও কেউ থাকে না। অপূর্ব অপেক্ষা করছে প্রিয়তার জন্য এই জায়গাটা খুব নির্জন তেমন কেউ একটা আসে না। আজ অপূর্ব তার মনের সব কথা প্রিয়তাকে বলবে সাথে কিছু গোপনীয় তথ্যও গুছিয়ে বলবে প্রিয়তাকে। অপূর্ব জানে প্রিয়তা তাকে ঠিক বুঝবে। তাদের একটা সংসার নিশ্চয়ই হবে। এইরকম নানা কিছু ভাবছে আর একা মনে হাসছে অপূর্ব। সত্যিই অপূর্ব কখনো এসব নিয়ে ভাবে নি কিন্তু আজ যেন এসব ভাবতেই ভালো লাগছে।’
হঠাৎই প্রকৃতি নড়লো এক ধমকানো হাওয়া আসলো অপূর্বকে ছুঁয়ে দিলো সেটা, নাড়িয়ে ছিল একটু, অপূর্বের বুকের হৃদপিন্ড ক্রমশ ওঠা নামা শুরু হলো এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হলো। অপূর্ব তার বুকে হাত দিলো অপূর্ব বুঝতে পেরেছে প্রিয়তা এসেছে। অপূর্ব ধীরে ধীরে পিছন ঘুরে তাকালো, কালো বোরকা, মুখে নিকাব, মায়াবী চোখ দেখেই বুঝেছে অপূর্ব প্রিয়তা আসছে।’
অতঃপর ধীরে ধীরে প্রিয়তা এসে দাঁড়ালো অপূর্বের মুখোমুখি। প্রিয়তা আসতেই অপূর্ব বললো,
‘ আমি জানতাম তুমি আসবে, প্রিয়তা কি আর কখনো পারে অপূর্বকে ভুলতে।’
প্রিয়তা জবাব দেয় না। শুধু নির্বিকার চোখে তাকিয়ে রয় প্রিয়তা অপূর্বের মুখের দিকে। অপূর্বের কিছু বলতে নিতেই কিছু একটা মনে পড়লো সে কিছু ভুলে গেছে। অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি।’
এই বলে এগিয়ে গেল অপূর্ব। তার গাড়ির ভিতর ফুলের তোড়া আছে। আকিবও আছে সেখানে।’
অপূর্ব দু’মিনিটের মাথায় গাড়ির সামনের দাঁড়িয়ে আকিবের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে অগ্রসর হতে লাগলো প্রিয়তার দিকে। হঠাৎই মাঝরাস্তায় পিছন থেকে অপূর্বের মনে হলো কেউ তার পিঠের দিকে চাকু ঢুকিয়ে দিতে চাইছে সঙ্গে সঙ্গে পিছনের ব্যক্তিটির হাত চেপে ধরলো অপূর্ব। পিছনের ব্যক্তির হাতের যন্ত্রণায় কাতার হয়ে হাত থেকে পড়ে গেল চাকু।’
দূর থেকে এমন দৃশ্য খেয়াল করলো আকিব। তাদের আশেপাশে লোক ছিল আকিব সঙ্গে সঙ্গে তাদের ডাকলো দুজন লোক দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মুখ চেপে চাকু দেয়া ব্যক্তিকে ধরে নিয়া গেল। আকিব দৌড়ে আসলো। হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ আপনি ঠিক আছেন তো ভাই?’
‘ হুম আমি ঠিক আছি।’
‘ আচ্ছা আপনি যান, আমরা দেখছি ভাই।’
অপূর্ব শুনলো এই মুহূর্তটা কিছুতেই সে মিস দিতে চায় না। অপূর্ব এগিয়ে গেল, আর তাকে ঘিরে দূরে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল তার দলের লোকেরা আকিবও ছিল দূরে। আকিবের কাছে খবর আছে তার অপূর্ব ভাইয়ের ওপর আজ এটাক হওয়ার চান্স আছে আর তাই হলো। তবে এই বিষয়টা অপূর্ব জানে না, তাই তো অপূর্বের অগোচরে লোক এনেছিল অাকিব। কিন্তু এটাকের জন্য একজন লোক থাকবে এটা ভাবে নি আকিব।’
প্রিয়তা তখনও পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। পিছনে যে মাত্র কিছু ঘটলো সে দিকটা তার খেয়ালে আসে নি।’
অপূর্ব এগিয়ে এসে প্রিয়তার পিছনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
‘ জানো তো মেয়ে আমি অনেক ভেবে দেখেছি যে তোমায় আমার জীবনে দরকার। তুমিহীন সত্যি আমি ভালো নেই। তোমার শূন্যতা দিনকে দিন খুব বেড়ে গেছে। আমি জানি তুমি হয়তো আমার রাজনীতিকে পছন্দ করো না কিন্তু কি করবো বলো ছোট বেলা থেকেই এই পেশাটা আমার ভালো লাগতো আমি দেশের মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছি সবসময়, তাদের সাহায্য করতে চাই সাথে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো এসব মনোভাব নিয়েই আমার রাজনীতিতে আসা। আমি যেমন তোমায় ছাড়া অথচ, তেমনই রাজনীতি ছাড়া মূল্যহীন। আমি জানি তুমি হয়তো আমায় হারানোর ভয় করো। কিন্তু তুমি একদিন আমায় বলেছিলে ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে আগেই কষ্ট না পেতে। মৃত্যু তো একদিন ঘটবেই তাই আগেই এটা ভেবে কষ্ট পেলে চলবে বলো। দুু’দিন আগে আমায় বাবা বলেছিল, যখন দুটো মানুষ দুটো মানুষকে খুব ভালোবাসে তখন সাময়িক কিছু বাঁধা কোনো ম্যাটারই করে না। তাই এতদিন যে কথাটা তোমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম তা আজ বলছি শোনো, আমি তোমায় ভা…
পুরো কথা বলার আগেই প্রিয়তা অপূর্বের দিকে ঘুরে তাকালো হাতে তার পিস্তল। পিস্তলটা তাক করা পুরো অপূর্বের বুক বরাবর। মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিবেশ গেল থমকে। প্রকৃতি উঠলো চমকে।’
আকিবও দেখলো বিষয়টা সে ভাবতেই পারি নি প্রিয়তা এমন কিছু নিয়ে আসবে সঙ্গে করে। সে কিছু বুঝলো না। প্রিয়তা কেন পিস্তল এনেছে।’
আশেপাশে লোকজনের ভরে গেল অপূর্ব আর প্রিয়তাকে ঘিরে ধরলো অপূর্বের লোকজন। প্রিয়তাকে ধরতে নিবে তার আগেই অপূর্ব হাতের ইশারায় থামতে বললো তারাও থেমে গেল আকিব দৌড়ে আসলো। বললো,
‘ ভাই।’
অপূর্ব জবাব দিলো না। প্রিয়তার দিকে তাকালো, তার আর ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করা হলো না। অপূর্ব বেশ নীরবে হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ তুমি পিস্তল নিয়ে এসেছো মেয়ে? আমায় মারতে নাকি। তুমি আমায় মেরে ফেলবে। পারবে আমায় মারতে?’
এবার অনেকক্ষন পর প্রিয়তা মুখ খুললো। সবার আগে বললো,
‘ আমার বাবাকে কেন মারলেন অপূর্ব?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। আর আকিব অবাক হয় এসব কি বলছে প্রিয়তা? প্রিয়তার বাবাকে অপূর্ব ভাই মেরেছে কিন্তু কিভাবে?’
#চলবে…..
#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৭
_________________
নিস্তব্ধতায় ঘেরা চারপাশ, পরিবেশটা থমকানো। প্রিয়তা এখনও অপূর্বের বুক বরাবর রিভলবার রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আর অপূর্ব তাকিয়ে আছে, তার চোখ যে কিছু বলছে এটা কি প্রিয়তা বুঝতে পারছে না, নাকি বুঝতে চাইছে না। অপূর্ব প্রিয়তার থেকে একপলক চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো সত্যি পৃথিবী যেন গোল অপূর্ব নিজেও ভেবেছিল প্রিয়তাকে কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই প্রিয়তা। আর ভাবতে পারছে না অপূর্ব।’
অন্যদিকে প্রিয়তা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে প্রায় অসহায় শব্দে আবারও বললো,
‘ আমার বাবাকে কেন মারলেন অপূর্ব?’
অপূর্ব চুপ থাকে এবারও কিছু বলে না। অপূর্বকে চুপ থাকতে দেখে প্রিয়তার যেন আরো রাগ হয়। তবে নিজেকে দমিয়ে রেখে শান্ত স্বরে বলে,
‘ কি হলো জবাব দিন তিন বছর আগে কেন মেরেছিলেন আমার বাবাকে? কি দোষ ছিল আমার বাবার অপূর্ব?’
অপূর্ব এবার অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে,
‘ এসব তোমায় কে বলেছে?’
‘ যেই বলে থাকুক না কেন আপনি শুধু বলুন কেন মেরেছেন আমার বাবাকে?’
অপূর্ব এগিয়ে যেতে নেয় প্রিয়তার দিকে। বলে,
‘ তুমি আমার কথাটা শুনবে,
উত্তরের প্রিয়তা বলে,
‘ একদম সামনে আসবেন না অপূর্ব ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুক না হলে আমি কিন্তু গুলি চালিয়ে দিবো।’
অপূর্ব দাঁড়িয়ে পড়ে বলে,
‘ তুমি আমায় মারতে পারবে না মেয়ে, তোমার হাত কাঁপবে।’
‘ আপনি আমার বাবার খুনি অপূর্ব?’
‘ তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আমি তোমার বাবার খুনি?’
প্রিয়তা হাল্কা হাসে। তারপর বলে,
‘ প্রমাণ, আপনি দেখতে চান অপূর্ব?’
বলেই নিজের ফোনটা বের করে একটা ভিডিও দেখায় অপূর্বকে। অপূর্ব দাড়িয়ে পড়ে, কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। অপূর্বকে থেমে যেতে দেখে বলে প্রিয়তা,
‘ কি হলো অপূর্ব এখন থেমে গেলেন কেন? পেয়ে গেছেন প্রমাণ এবার কি বলবে?’
অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ তুমি আমায় মারতে পারবে মেয়ে?’
প্রিয়তা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
‘ আপনার জন্য আমার বুবুর জীবনটার আজ অসহায়ের দশা, আপনার জন্য আজ আমরা অনাথ। আমাদের মাও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, আমাদের বাড়ি, বাবা মায়ের সাথে কাটানো আমাদের বাড়িটার স্মৃতি সব হারিয়ে গেল আর এসবের মধ্যেও আপনি প্রশ্ন করছেন আমি আপনায় মারতে পারবো না। আজ আমি আপনায় ঠিক মারবো।’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব বেশি না ভেবেই বললো,
‘ ঠিক আছে মারো, তুমি যখন আমার কথা শুনবে না, জানি বুঝবেও না তখন মারো।’
এতক্ষন আকিব অপূর্বদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চুপচাপ সব শুনলেও এবার আর চুপ থাকতে পারলো না হতভম্ব হয়ে অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ এসব কি বলছেন ভাই? ও,
আর কিছু বলার আগেই অপূর্ব হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় আকিবকে। বলে,
‘ থেমে যাও আকিব আর ভালো লাগছে না।’
এতটুকু আকিবকে বলে পুনরায় প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বললো অপূর্ব,
‘ তুমি গুলি চালাও প্রিয়তা, আমি তোমার হাতের গুলির আঘাত পেতে প্রস্তুত।’
অপূর্বের কথা শুনে আশেপাশের সবাই হলো হতভম্ব, চিন্তারা ঘিরে ধরলো তাদের অপূর্ব ভাই পাগল হলো নাকি। অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা আশেপাশে তাকালো কতগুলো মানুষ ঘিরে ধরে আছে তাদের। প্রিয়তাকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে অপূর্ব বলে,
‘ ভয় নেই মেয়ে তুমি আমায় মারলেও আমি তো তোমায় মারতে পারি না তাই ওরা তোমায় কিছু বলবে না।’
প্রিয়তা তাকালো অপূর্বের মুখের দিকে, চোখের দিকে, ঠোঁটে থাকা ওই হাসির দিকে, তার কি মায়া লাগছে না, প্রিয়তার হাত কাঁপতে শুরু করলো কিন্তু প্রিয়তা সামলে নিলো দুই হাতে রিভলবার চেপে ধরলো। অপূর্ব হাসলো প্রিয়তার কান্ডে। বললো,
‘ তুমি একহাতে মারতে পারছো না প্রিয়তা, তাই দু’হাত নিলে।’
প্রিয়তা জবাব দিলো না খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অপূর্বের দিকে। অপূর্বও প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ আমি জানি তুমি আমায় মারতে পারবে না মেয়ে কারন তুমিও যে আমায় ভা…
আর কিছু বলতে পারলো না অপূর্ব। গুলির তীক্ষ্ণ শব্দে পরিবেশ উঠলো কেঁপে, গাছ জুড়ে থাকা পাখিরাও ভয়ের চোটে ডানা ঝাঁপটালো, আশেপাশের সবাই মুহুর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে গেল কারন অপূর্বকে সত্যি সত্যিই গুলি করা হয়েছে প্রিয়তা মেরে দিয়েছে অপূর্বকে। অপূর্ব তার বুকের দিকে তাকালো তাজা রক্ত বের হয়ে আসছে সেখান থেকে অপূর্ব কি খুব আঘাত পেয়েছে, পেয়েছে হয়তো তবে সেটা শারীরিকের চেয়ে মনের আঘাতটা বেশি ক্ষত হয়েছে তার। অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি আমায় সত্যি সত্যি মেরে দিলে মেয়ে তবে কি আমি ভুল ছিলাম হয়তো ছিলাম। তুমি ভালো থেকো। শুধু আফসোস এতটুকুই রয়ে গেল তুমি আমার মুখের ভালোবাসি শব্দটা নিতে পারলে না। আর একটু অপেক্ষা করে শব্দটা তো শুনতে পারতে। তাও শুনলে না। তুমি এত নিষ্ঠুর কি করে হলে মেয়ে?’
ব্যস এতটুকু বলেই নিচে এলিয়ে পড়লো অপূর্ব হাতে থাকা ফুলের তোড়া ছিটকে পড়লো দূরে পাপড়িরা ছিঁড়ে এসে পড়লো প্রিয়তার গায়ের ওপর। প্রিয়তার চোখে পানি জমলো। অপূর্ব দেখলো সেটা, আকিব দ্রুত দৌড়ে আসলো অপূর্বের দিকে। নিচে গড়িয়ে পড়া অপূর্বকে ধরলো সে। অপূর্বের লোকেরা প্রিয়তাকে ধরতে নিতেই আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো অপূর্ব,
‘ প্রিয়তাকে যেতে দেও আকিব ওর যেন ক্ষতি না হয়।’
শেষ, অপূর্ব আর কিছু বলতে পারলো না চোখ বন্ধ হয়ে গেল তার। উপস্থিতি সবাই চমকে উঠলো। আকিব পাগলের মতো চেঁচিয়ে বললো সবাইকে,
‘ দ্রুত গাড়ি আনো অপূর্ব ভাইকে হসপিটালে নিতে হবে।’
আকিবের আর্তনাথে দুজন দৌড়ে গেল গাড়ি আনার জন্য। বাকি কয়জন প্রিয়তার দিকে গুলি তাক করে বললো,
‘ মেয়েটাকে কি মেরে দিবো আমরা?’
আকিব কিছুক্ষন ভেবে বললো,
‘ দরকার নেই ছেড়ে দেও।’
সবাই শোনে রিভলবার সরিয়ে নেয় প্রিয়তার দিক থেকে। অতঃপর গাড়ি আসলো অপূর্বকে নেওয়া হলো গাড়িতে। আকিব লাস্ট বারের মতো প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি কাজটা ঠিক করো নি প্রিয়তা?’
উত্তরে প্রিয়তা কিছু বলে না। পরিশেষে সবাই চলে যায় শুধু থেকে যায় প্রিয়তা। আর তাকে ঘিরে নিচে গড়িয়ে থাকে অপূর্বের আনা ফুলের পাপড়িরা। প্রিয়তা ধাপ করে নিচে বসে পড়ে চেঁচিয়ে উঠে হুট করে। কেঁদে কেঁদে বলে,
‘ আমি আপনায় মেরে দিলাম অপূর্ব?’
___
ফ্ল্যাসবেক,
কাল ভার্সিটি শেষে আব্রাহাম স্যারের ডাক শুনে যখন প্রিয়তা গিয়েছিল তখন।’
দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন চারপাশ। গাছের পাতাগুলো বিন্দু বিন্দু নড়ছে। দূরে পথের গাছ বেয়ে কাঠবিড়ালি দৌড়াচ্ছে। চোখে মুখে অশেষ হতাশার ছাপ প্রিয়তার। প্রায় এক ঘন্টা আগে ভার্সিটি থেকে খানিকটা দূরে একটু জঙ্গল টাইপের গাছপালায় ভর্তি এক নিরিবিলি জায়গায় এসে বসেছিল আব্রাহাম আর প্রিয়তা। আব্রাহাম অনেক কিছু বলেছে প্রিয়তাকে। যেগুলো প্রিয়তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। আব্রাহাম অপূর্বকে চেনে, অনেক ভালোভাবেই চেনে। আব্রাহাম এটাও জানে প্রিয়তা অপূর্বকে ভালোবেসে ভুল করছে। আব্রাহাম বললো,
‘ আমি আর অপূর্ব একসময় ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তু একদিন যখন জানতে পারি ও একটা লোককে মাঝরাতে মেরে দিয়ে খুনি হয়ে গেছে তখন থেকেই ওর সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয় আমার। আমি ওকে আত্নসমর্পণ করতে বলেছিলাম কিন্তু ও শোনে নি তাই আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই ওর থেকে।’
সেই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না তাই আমি কিছু করতে পারি নি কিন্তু আজ আমার কাছে প্রমাণ আছে এই সিসিটিভি ফুটেজ। যেটা অনেক আগেই প্রিয়তাকে দেখিয়েছে আব্রাহাম। ভিডিও টা এমন ছিল রাতের আঁধার, একটা লাইটপোস্টের নিচে একটা লোকের পেটে ছুরির আঘাতে ছটফট করছে একটা ছেলেও ছিল পাশে। আর ছেলেটা অপূর্ব ছিল। অপূর্ব লোকটার পেটের ভিতর থেকে ছুরিটা টান দিয়ে বের করতেই লোকটা আরো ছটফট করতে লাগলো, লোকটার চেহারাটা হাল্কা অস্পষ্ট হলেও হাতের ঘড়িটা দেখে চিনলো এটাই তার বাবা। প্রিয়তা বিশ্বাস করতে পারে নি অপূর্বই তার বাবাকে মারবে। প্রিয়তার কথা শুনে আব্রাহামের ভাবটা এমন ছিল সে নিজেও সেদিন অবাক হয়েছে, সে ভাবতে পারে নি লোকটা প্রিয়তার বাবা হবে।’
এই কথা গুলো আব্রাহাম এই কারণেই বলে প্রিয়তাকে, সে অপূর্বকে প্রমাণসহ পুলিশে দিবে। আর এতে নিশ্চয়ই অনেকদিনের জেল হবে অপূর্বের। তাই অপূর্বের এই পরিনতিতে প্রিয়তা যেন ভেঙে না পড়ে তাই এসব বলা। আর প্রিয়তাও একটা ভিডিও দেখে বিশ্বাস করলো আব্রাহামকে। মনে মনে অপূর্বকে খুন করার ভাবনায় মগ্ন হলো, কারন প্রিয়তা তো অনেক আগে থেকেই তার বাবার খুনিকে মারতে চেয়েছিল। রিভলবারটাও নিজে সংগ্রহ করেছিল প্রিয়তা এতটাই প্রতিহিংসায় জর্জরিত ছিল সে।’
ফ্লাসবেক ওভার__
পর পর কথাগুলো ভেবেই চোখের পানি বিসর্জন দিলো প্রিয়তা। কতক্ষণ আগে আব্রাহামের ভিডিওটাই দেখিয়ে ছিল প্রিয়তা অপূর্বকে। হঠাৎই তার পাশে থাকা রিভলবার দিকে চোখ গেল প্রিয়তার। হাত দিয়ে ধরলো সেটা তারপর কিছু ভাবতেই বললো প্রিয়তা,
‘ আমিই আপনায় মেরে দিলাম অপূর্ব?’
____
মাঝপথে কাটলো দু’দিন। টানা দুইদিন হসপিটালের অবজারভেশনে থাকার পর জ্ঞান ফিরলো অপূর্বের। গুলিটা বুক থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে পড়ায় বেঁচে যায় সে। অপূর্বের বাবা, মা আর অয়ন তিনজনই হতভম্ব ছিল বিষয়টায়। অপূর্বের মা কান্নায় ভেঙে ছিল প্রচুর। কতক্ষণ আগেই অপূর্বের সাথে দেখা করে চলে যায় তারা। অপূর্বই যেতে বলে তাদের। অপূর্বের বাবা মা আর ভাই যেতেই আকিব ঢুকে ভিতরে। বর্তমানে আকিব আর অপূর্ব একসাথে। আকিব ভিতের ঢুকে অপূর্বের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আপনি ঠিক আছেন তো ভাই?’
উত্তরে অপূর্বও বলে,
‘ হুম। তোমরা থাকতে আমার কিছু হতে পারে আকিব।’
আকিব জবাব দেয় না। অনেক্ক্ষণ পর বলে,
‘ আমার এখনও বিশ্বাস হয় না ভাই প্রিয়তা আপনায় মেরেছে।’
আকিবের কথা শুনে অপূর্ব খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
‘ আমায় প্রিয়তা মারে নি আকিব?’
#চলবে….
#TanjiL_Mim♥️