তোমার জন্য এক পৃথিবী
রেশমী রফিক
১৩।
মাসের শেষ বলা চলে। এই সময়ে হাতে টাকাপয়সা খুব একটা থাকে না। আমিনার হাত আরও খালি। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বাইরেও দুইটা টিউশনি করে সে। বাবা-মা বা খালা কাউকেই এই টিউশনির কথা বলেনি। শুধু বলেছে, স্কুলের সময় দুই ঘন্টা বেড়েছে। সত্যি কথাটা শুধু আমিরাকে বলেছে। তাও বলত না। আচানক ধরা পড়ে গেছিল একদিন। পরে মানা করেছে, কাউকে যেন না বলে। আমিরা লক্ষী মেয়ে। ওর পেটে কথাও হজম হয় ভালো। এমনিতেও সে বলত না কিছু। পরিবারের অবস্থা বা নিজেদের স্ট্যাটাসের দিকটা সে নিজেও বুঝে। তবু সরাসরি নিষেধ করেছে। বলা যায় না, কখন কোন ফাঁকে বলে ফেলে। আসলে স্কুলের বেতন দিয়ে খুব একটা সচ্ছ্বল ভাবে চলা যায় না। যা পায়, পুরোটাই সংসারের কাজে লাগাতে হয়। হাতখরচ বলতে কিছুই থাকে না। সেজন্যই মুলত টিউশনি করাচ্ছে। এই টাকাটা সে নিজের পেছনে ব্যয় করে। প্রতি মাসে একবার পারলারে যাওয়া, স্কুলের কলিগদের সাথে পিকনিক করা, বা কোনো উপলক্ষ্যে ডে-আউটে যাওয়া, আবার কখনো নিজেই নিজেকে ট্রিট দেয়া, উপহার দেয়া ইত্যাদি। মাঝেমধ্যে বোনদের জন্যও এটা-সেটা কিনে। আমিরা আর আনিসার আলাদা কোনো চাহিদা নেই। আজগর আলী যখন পঙ্গু হলেন, ওরা বেশ ছোট। কিশোরী বয়সে চাহিদা বা আবদার বলতে যে কিছু আছে, ওরা জানেও না। অনেক সময় জানলে বা বুঝলেও চুপ থাকে। পরিবারের দুর্দশা তো লুকোনো কিছু নয়। নাসিমা বানু লুকিয়েও রাখেন না। তার মতে, মেয়েরা এখন থেকেই শিখুক জীবন কতটা কঠিন হয়। মানসিকভাবে শক্ত হোক। তাতে করে ভবিষ্যতে নিজেদের পথ নিজেরাই তৈরি করে নিতে আগ্রহী হবে। বাবা-মায়ের ছায়াতলে থাকলে তাদেরই ক্ষতি। একদিন এই ছায়া থেকে বের হয়ে এসে আচানক রাস্তার মধ্যিখানে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা হবে। ডানে কী বায়ে কোথায় যাবে, কোন পথে হাঁটবে, কিছুই বুঝে উঠবে না। আর মেয়ে তো! পরের বাড়ি গিয়ে লাত্থিগুতা খেয়ে দিন পার করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না জীবনে। আমিনা ফিরে আসার পর এই ব্যাপারটা আরও প্রকট হয়েছে। নাসিমা বানু এখন কথায়-কথায় আমিরা আর আনিসাকে তাদের বড় বোনের উদাহরণ শোনান। হয়তো আমিনার সামনে খুব একটা বলেন না। তবে কিছু কথা তো কানে চলেই আসে। বড় খালাও আড়েঠারে শোনাতে ছাড়েন না।
এসব কারণে নিজের চাহিদা বা নিজের পেছনে ব্যয় করার কথা মুখ ফুটে বলতে খুব সঙ্কোচ হয়। এই টাকাটাও সে লুকিয়ে রাখে। বেতনের টাকা প্রায় শেষের দিকে। অন্তত যা আছে, তা দিয়ে আজকের বাজার করা যাবে না। ভালো হতো টিউশনির টাকা ব্যাগে নিতে পারলে। কিন্তু ওটা ওদের শোবার ঘরে, যেখানে শফিক আর আমিরা বসে কথা বলছে। এই সময়ে ওদিকে যাওয়া সম্ভব না। আমিনা তাই মাকে বলল,
– তুমি কি কিছু দিতে পারবা?
নাসিমা বানু অবাক সুরে বললেন,
– কেন? তোর কাছে নাই? বেতনের টাকা এত তাড়াতাড়ি কেমনে শেষ করলি? কোথায় খরচ করছিস?
আমিনা কিছু বলল না। মা মাঝেমধ্যেই অবুঝের মতো কথা বলে। এই মাসে বড় খালা তাকে কোনো ইভেন্টে নিয়ে যায়নি। তাই ইভেন্ট থেকে টাকা মিলেনি। বড় খালা সাধারণত ইভেন্ট থাকলে আলাদা করে সংসারের খরচ দেন না। তিনি জানেন, এই টাকায় সংসারের খরচ উঠে আসার পরেও আমিনার হাতে বেশ কিছু টাকা থাকে। তবে যে মাসে ইভেন্ট থাকে, তিনি সংসারের খরচ বাবদ টাকা দেন। এই মাসে দেননি। হয়তো ভুলে গেছেন। হয়তোবা ইচ্ছে করেই দেননি। আমিনাও হাত পেতে চাইবার দরকার মনে করেনি। অন্যের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে তার খুব লজ্জ্বা হয়। হোক আপন খালা!
নাসিমা বানুর কাছেও নেই। তবে মানইজ্জতের ব্যাপার। তাই গোপন সঞ্চয় থেকে কিছু টাকা বের করে দিলেন। আমিনা তাই নিয়ে বের হয়ে গেল বাসা থেকে। এই সুযোগে মায়ের গোপন সঞ্চয়ের কথা তার কাছে ফাঁস হয়ে গেল। মা সবার থেকে লুকিয়েছিল, যেমনটা সেও লুকিয়েছে। একই সংসার, এক পরিবার। অথচ মা-মেয়ের মধ্যে কতইনা দুরত্ব। মাও সঞ্চয় করে গোপনে, মেয়ে আর স্বামীর থেকে লুকোয়। মেয়েও তাই। কী অদ্ভুত না বিষয়টা?
রাস্তায় আপনমনে হাঁটতে-হাঁটতে আমিনা মুখ লুকিয়ে হাসতে লাগল। এদিকে নাসিমা বানুও বসে নেই। ঘরে যা আছে, তাই দিয়ে রান্নার আয়োজন করতে লেগে গেলেন। আমিনা ফিরতে-ফিরতে কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখা যাক। এক ফাঁকে অবশ্য্ বোনের সাথেও কথা বললেন। শাহীনা বানু মিটিংয়ের ব্রেকে আছেন। তাই কলটা রিসিভ করতে পারলেন। তবে ওপাশের কথা শোনার ধৈর্য বা সময় তার নেই। ফোন কানে ঠেকিয়েই বললেন,
– শোন নাসু, আমার অনেক লেট হবে। আমি মনে হয় না, আজকে আসতে পারব।
– বড়াপা, এই কথা বললে আমি এখন হার্টফেল করব। শফিক বাসায় এসে বসে আছে। আর তুমি না আসলে কেমনে হয়?
– শফিক এসছে, ভালো কথা। ওর সাথে কথা বল। মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিস তুই। কথাবার্তা না বললে কীভাবে চলবে?
– আমরা তো বলতেছি। কিন্তু তুমি আসলে ভালো হইত। আমি কেমনে কী করব, কী বলব, বুঝতেছি না। ছেলেটা মনে হয় রাতে খেয়ে যাবে। তার আয়োজনও করা লাগতেছে। যা কথা বলার, আমিনার আব্বাই বলল।
– তুইও বল। তোর বরের সাথে গিয়ে বস। কথার ফাঁকে ফাঁকে দুই চারটা প্রশ্ন করার যোগ্যতা কি তোর নাই? এত বয়স হয়েছে। তিন মেয়ের মা হয়ে গেছিস। এখনো আমি শিখিয়ে পড়িয়ে দিব নাকি?
বোনের ঝাড়ি খেয়ে দমে গেলেন নাসিমা বানু। আমতা আমতা করে বললেন,
– শিখায় দেয়া লাগবে না। কিন্তু তুমি আসলে বুকে বল থাকত। তুমি তো অনেক বুদ্ধি বিবেচনা করে চলতে পার। অনেক মানুষজনের সাথে মিশো। তুমি জানো কেমনে কী বলতে হয়। আমি কি এইসব করছি কোনোদিন?
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চেষ্টা করব আসতে।
– একটু তাড়াতাড়ি আইসো। ঠিক আছে?
– দেখি।
===============
তোমার জন্য এক পৃথিবী
রেশমী রফিক
১৪।
সময় কত গড়াচ্ছে শফিকের খেয়াল নেই। অথবা অবচেতন মনেই তা এড়িয়ে যেতে চাইছে। আমিরার সামনে থেকে নড়তেই ইচ্ছে করছে না ওর। এই মেয়েটা কি জাদু জানে? কোনো মন্ত্র পড়ে কি ওকে সম্মোহিত করে রেখেছে? মাথার একটা অংশ বারবার তাড়া দিচ্ছে, উঠতে হবে। এখান থেকে বের হতে হবে। আরেকটা অংশ বলছে, আরেকটু সময় থাকলে কী এমন অসুবিধে হবে? আশ্চর্যজনকভাবে, এখানে আসার আগে খুব একটা আগ্রহ ওর ছিল না। পাত্রী দেখতে যাচ্ছে, এই নিয়ে মনের মধ্যে সেরকম উচ্ছ্বাস কাজ করেনি। কেবল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেই এসেছে। প্রথম যখন আমিরাকে দেখল বসার ঘরে, খানিক দূরেই বসা ছিল। খুব একটা আহামরি লাগেনি। আবার প্রত্যাখান করার মতোও না। আসলে ওর এখন এমন একটা অবস্থা চলছে, যে কোনো একটা মেয়ে হলেই চলে। একারণে বড় স্যার যখন খুব করে বলছিলেন এই মেয়েটাকে যেন একবার দেখে, এরপর ওর সিদ্ধান্ত জানায়, তখনও মনে মনে ভেবেছিল, গিয়েই দেখা যাক। বড় স্যারের কথা ফেলা যায় না। উচিতও না।
শোবার ঘরে এসে আমিরাকে সামনাসামনি দেখার পর মনে মনে কতবার যে বড় স্যারকে ধন্যবাদ দিয়েছে। এই মেয়েটির সাথে দেখা হবার পেছনে উনার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। বিয়েটা হলে আজীবনকার কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে। আমিরা এমনিতে খুব সাধারণ। তার সঙ্গে না মিশলে, মন খুলে কথা না বললে বুঝার উপায় নেই কতটা অনন্য সে। একটা মেয়ে তার মনের মধ্যে কতশত অনুভূতি আর কথামালা লুকিয়ে রাখতে পারে, কতটা স্নিগ্ধ সেসব, বোধহয় আজই প্রথম জানা হলো। আমিরাকে যতই জানছে, মনে হচ্ছে আল্লাহ অসাধারণ একটা মেয়েকে এই খুব সাধারণ পরিবারে লুকিয়ে রেখেছেন। যেন কাউকে জানতে দিতে চান না। জানলেই বুঝি হুড়মুড় লেগে যাবে!
অবশ্য আমিরাদের পরিবারটাকেও সাধারণ বলা যায় না। ওর বাবা-মা আর বোনরা সবাই মিশুক, সাবলীল। দারিদ্রতা খানিক টের পাওয়া যায় বাসার হালহকিত দেখলে। এলাকাটাও খুব উন্নতমানের, বলা যায় না। তবু কিছু গুণ এদের মধ্যে কমবেশি আছে। এই বাসায় পা দিয়ে শফিকের মনেই হয়নি আজ প্রথম এলো। আজগর আলীর দরাজ ব্যবহার, নাসিমা বানুর মায়াভরা কন্ঠ সবটাই যেন যাদুর বাক্স। শফিক এর চেয়েও ভালো ব্যবহার পেয়েছে জীবনে। কিন্তু সবটাই স্বার্থে ভরা ছিল। স্বার্থ বিনা কেউ এই দুনিয়াতে আন্তরিক হতেই জানে না। আমিরার বাবা-মাকেও পুরোপুরি নিঃস্বার্থ বলা চলে না। তারা মেয়ের বিয়ে দেবার পায়তারা করছেন। তবু শফিকের মনে হয়েছে, এই মানুষগুলো আদতেই আন্তরিক। এর পেছনে যে স্বার্থ আছে মেয়ে পার করার, তা লোক দেখানোই বলা চলে।
শফিক অনেকটা সময় চুপ করে আছে। জানালার সাথেই পড়ার টেবিল। দু’পাশে দুটি চেয়ার। ওখানেই বসেছে দুজন। সন্ধ্যা নামার পর ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে আমিরা। সেই আলোর চেয়ে বাইরের পরিবেশটাই ঝলমলে খুব। আকাশে খুব বড় চাঁদ উঠেছে। পূর্ণিমা না, তবু চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছে। খোলা জানালা গলে, সেই আলোর খানিকটা চলেও এসেছে ঘরের ভেতর।
শফিকের মনের মধ্যে ঘুটঘুট করছে, এতটা সময় আমিরার ঘরে বসে থাকাটা ভালো দেখাচ্ছে কি না। আমিরার বাবা-মা অন্য কিছু ভেবে বসতে পারেন। যদিও ঘরের দরজা হাট করে খোলা। চৌকাঠে পর্দা লাগানো থাকলেও তা একপাশে সরিয়ে রাখা। ভেতর দিকে আরও একটা জানালা আছে। সেই জানালার পাল্লাও খোলা আছে। অন্যকিছু ভাবার সুযোগ নেই। যখন যে কেউ চলে আসতে পারে এই ঘরে, কোনো বাঁধা নেই। কেউ মানাও করেনি। তবু অস্বস্তি হচ্ছে। আবার আমিরার সান্নিধ্য পাবার লোভ সেই অস্বস্তিকে হারিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে অবশ্য একবার বলেছিল,
– আমি আজ যাই তাহলে!
আমিরা বলল,
– এখনি চলে যাবেন?
– তুমি চাও না আমি যাই?
– বাবা কিন্তু আপনাকে রাতে খেয়ে যেতে বলেছে।
– খেতেই হবে?
– আপনি কি না খেয়েই চলে যেতে চাচ্ছেন?
– খাওয়াটা আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট না।
– তাহলে?
– আমার কেন জানি তোমার সামনে থেকেই সরতে ইচ্ছে করছে না।
আমিরা হেসে ফেলল। ঝনঝনে হাসি। সেই হাসিটুকু শফিকের মনে কতখানি তোলপাড় করল, তার খেয়াল নেই। শফিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমিরার এলোমেলো দাঁতগুলোর দিকে। এই মেয়েটা কি আসলেই সুন্দরী? নাকি ওর চোখেই এই সৌন্দর্য ধরা পড়ে গেছে? কী যেন একটা গান ছিল রবি ঠাকুরের,
চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো…
বাকিটা শফিকের মনে নেই। মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে। তবে ওই গানের ভেতর একটা লাইন আছে, ফুলের বনে যার পাশে যাই, তারেই লাগে ভালো। এই মুহূর্তে চাঁদের বাঁধভাঙ্গা হাসি আছে, তবে ফুলের বন নেই। তবু আমিরার প্রতি ভালো লাগা কাজ করছে। প্রতি ক্ষণে এই ভালো লাগাটা বাড়ছে। শফিক ফিসফিস করে বলল,
– তোমার নাম আমিরা কেন?
আমিরা অবাক সুরে বলল,
– আমিরা হলে কী সমস্যা?
– আমি আগে কখনো এই নাম শুনিনি। ছেলেদের নাম আমির হয়, জানি। কিন্তু মেয়ের নাম আমিরা…
– এই নামটা খুব কমন না, এজন্যই শোনেননি। তবে নামটা আমার খুব প্রিয়।
– তাই?
– হু। আপনি জানেন, আমিরা অর্থ কী?
– না।
– আমিরা অর্থ রাজকন্যা। মানে প্রিন্সেস। অ্যারাবিয়ান প্রিন্সেসদের আমিরা বলা হয়।
– হুম। তুমি আসলেই প্রিন্সেস!
– এটা কিন্তু বাড়িয়ে বললেন।
– মোটেও না। তুমি প্রিন্সেস বলেই তোমার নাম আমিরা।
– কিন্তু আমার বাবা তো রাজা না। আমাদের রাজত্বও নেই।
– রাজত্ব যে সবসময় লোক দেখানো হতে হবে, এমনও না। কিছু রাজত্ব থাকে লুকোনো। যেমন তুমি আর তোমার কিংডম!
– বুঝলাম না।
– অত বুঝার দরকার নেই। আপাতত তোমাকে আর তোমার কিংডম আমার চাই।
আমিরা আবার হাসল। এই হাসিতে মিশে আছে প্রবল লজ্জ্বা। শফিক খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
– তুমি কি বিয়ের পর আমাকে ভালোবাসবে?
আমিরা মনে মনে বলল,
– ভালোবাসতে শুরু করেছি অলরেডি! আর আপনি বলছেন বিয়ের পর ভালোবাসব কি না!
মুখে কিছু বলল না। শফিক নিজেই আবার বলল,
– আমি কখনো কাউকে ভালোবাসিনি, আমিরা। আমার লাইফে সেই সুযোগ আসেনি বা বলতে পার, আমিই ফিরে তাকাইনি। কারও চোখে ভালোলাগা দেখলেও রেস্পন্স করা হয়নি।
আমিরা বলল,
– কেন?
– জানি না। আমি আসলে খুব নিরামিষ ধরনের। আমার মধ্যে অনুভূতিরা খুব একটা কাজ করে না। এজন্য অনেকেই আমাকে বলে, টিউব লাইট। কেউ বলে, রোবট। তোমার তো হয়তো এরকম মনে হতে পারে।
আমিরা মনে মনে বলল,
– এই অল্প সময়ে আপনি যতটুকু রোমান্টিকতা দেখিয়েছেন, এটুকুই আমার অন্য অনেক। এর বেশি তো আর দরকার নেই। আমি অল্পতেই তুষ্ট থাকার মতো মেয়ে।
তার এই মনের কথা শফিকের কানে না গেলেও মনের মধ্যে জানাজানি হলো। সে বলল,
– এতকাল আমি নিজেও জানতাম। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে…
– কী মনে হচ্ছে?
– মনে হচ্ছে, তোমাকে পেলে আমি চরম রোমান্টিকও হতে পারি।
আমিরা তখনই কিছু বলল না। প্রবল ভালোলাগা তাকে ছেয়ে আছে। তার সামনে বসা থাকা মানুষটাকে পাত্র মনে হচ্ছে না। খুব আপন লাগছে। এই মানুষটার দিকে যতবার তাকাচ্ছে, বুকের ভেতর তিরতির করে কাঁপছে। এটাকেই কি ভালোবাসা বলে? বিয়ের আগে বড়াপার মনেও কি দুলাভাইয়ের প্রতি এরকম অস্থির অনুভূতি জন্ম নিত?
নাহ, আর চলতে দেয়া যায় না এই প্রেমালাপ কিংবা পরস্পরকে কাছে টেনে নেবার কথোপকথন। মন মনকে ছুঁয়ে ফেলেছে। বাকিটা আজকের মতো উহ্য থাকুক। শফিক এদিক-ওদিক তাকিয়ে ঘড়ি খুঁজল ঘরের দেয়ালে। বলল,
– তুমি কি প্ল্যান করেছ, আমাকে আর যেতেই দিবা না?
– যাহ, আমি কখন আপনাকে আটকালাম। আপনিই বারবার যাই যাই করছেন।
– আর তুমি বারবার এটা-সেটা বলে আমাকে ঘুরিয়ে দিচ্ছ।
– আমি ঘুরিয়ে দিলেই আপনি ঘুরে যাবেন কেন?
– কারণ তুমিই আমার জীবনঘড়ি!
আমিরা মনে মনে বলল,
– জীবনঘড়ি! বাহ, তুমি আসলেই রোমান্টিক সুরে কথা বলতে পারো। বিয়ের পরেও এরকম থাকবা তো? নাকি কোনো একদিন বড়াপার বরের মতো তুমিও…
ঘরের বাইরে খানিক শোরগোল। কথাবার্তা হচ্ছে। বাতাসে মশলার ঘ্রাণ। রান্নার সুগন্ধি ছড়িয়ে গেছে সবখানে। শফিক বলল,
– যাই!
– বলুন, আসি। যাই বলতে হয় না তো!
শফিক আলতো করে আমিরার হাত চেপে ধরল। আমিরা কেঁপে উঠল প্রবল। শফিক গাঢ় সুরে বলল,
– আবার আসব। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাব সেদিন।
=================================