দীর্ঘ রজনী পর্ব-১০+১১

0
460

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১০
,
,
,
,
,
,
বসন্ত ঋতু রোজ রোজ দরজায় কড়া নাড়ে না। তবে প্রেমিকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন।
প্রেমিকের ক্ষেত্রে বসন্ত ঋতু হচ্ছে তার প্রনয়িনী। যার চেহারার আদল যতবার দৃষ্টিগোচর হয় ততবারই বসন্ত ঋতু হানা দেয়। সাদের ক্ষেত্রেও তাই। তবে তার প্রনয়ীনির কাছে আজ ওবদি ধরা দেয়নি সে, না কাজে! না কথায়!
তীব্র ভালোবাসা বুকে লুকিয়ে দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছিল শুধু। ঘুনাক্ষরেও টের পেতে দেয়নি এটা শুধু দায়িত্ব নয় বরং ভালোবাসাও বটে।

দুইদিন হতে চললো নানু বাড়িতে এসেছে। ফজরের নামাজ আদায় করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে। আবার এতো দূর ড্রাইভ করে আসে সাদ।

অনেক বছর পর সাদ এইবাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তা নাহলে শুধু মাত্র জুবায়েদা খাতুনের সাথে দেখা করেই চলে যায়। সবার কাছে সাদের থাকার বিষয়টি অষ্টম আশ্চর্য বিষয়ের মতো হলেও, কেউ এই বিষয় নিয়ে কথা বললো না। সাদ এই বাড়িতে এসে থাকছে এইটাই অনেক। জুবায়েদা খাতুন ভীষণ খুশি,তাই তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন,এক সপ্তাহ পূর্ন হওয়ার আগে কেউ এই বাড়ি থেকে যেতে পারবে না। ওনার কথায় কেউই দ্বিমত পোষণ করলো না। শুধু রাজিয়া রেগে ফোঁস ফোঁস করেছে যদিও সরাসরি কিছু বলতে পারলো না।

অনিলা রহমান তার ছেলের মন পড়তে পারে। তিনি জানেন ইচ্ছে না থাকার সত্বেও তার ছেলে একটা কারনেই থাকছে। সেই কারনটা তার ছোট ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে সাজিঁ। অনিলা রহমান মনে মনে ঠিক করে রেখেছে ভাইয়ের কাছে সাজিকে চাইবে। ছেলের সুখের জন্য প্রয়োজনে আঁচল পাতবে। সাজিকে ছাড়া সাদ কখনোই ভালো থাকবে না। তাই সাজিকে তার খুব প্রয়োজন। ছেলের সুখ চাইতে দ্বিধা সংকোচ করবেন না তিনি। দরকার হলে ভাইয়ের পা ধরবে।
_______

দুইদিন সাজির খুব ভালোই কাটছিলো। রাফি , চাঁদ,ইরিনা আর সাজি মিলে পুরোটা সময় হই হুল্লোড় করেই কাটাচ্ছে।

এর মধ্যে ইহান বার বার সাজির সাথে কথা বলতে এসেছিল। কখনো অনিলার জন্য পেরে উঠেনি তো কখনো সাজি নিজেই ইগনোর করেছে। ইহানের তাকানো সাজিঁর খুব একটা পছন্দ নয়। কেমন করে যেন তাকায়। এতে সাজি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে । সাজি ভেবে পায় না ইহানের তাকানো আর সাদ ভাইয়ের তাকানোতে আকাশ পাতাল পার্থক্য কেন? দুইজনেই তো তার কাজিন হয়। কই কখনো সাদের তাকানোতে এমন অস্বস্তি বোধ হয়নি যেমনটা ইহানের তাকানোতে হয়!

তাইতো ইহান ঘরে আসলেই সাজি অনিলার আঁচল ধরে ঘুরে বেড়ায়। অনিলা সাজির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাজির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। ইহান ভাইয়ের ছেলে হওয়াতে সরাসরি কিছু বলতে পারে না তাই সাজিকেই চোখে চোখে রাখেন তিনি।

ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সাদ। উদ্দেশ্য নানু বাড়ি।
আজ চেয়ারম্যান নিজেই ম্যানেজারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছেন। ম্যানেজার সাদের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের কান ভারী করতে গেছিলো। চেয়ারম্যান আগ থেকেই সাদের সাথে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলো। যার কারনে ম্যানেজারের ব্যাপারটা বোধগম্য হতে দেরি হয়নি। অতঃপর আজ ম্যানেজারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিয়েছে। চেয়ারম্যানের মতে ,, বাইরের শ*ত্রুর চাইতে ঘরের শ*ত্রু বি*ধ্বং*সী বেশি হয়। তাই ঘরের শ*ত্রু ম্যানেজারকে উপড়ে ফেলেছে।

ম্যানেজারের বিষয়টা রায়হান এনজয় করেছে বেশি।অতি আনন্দে সাদকে এসে বলেই দিয়েছে। চেয়ারম্যানকে সামনে পেলে জড়িয়ে ধরে দুই গালে চারটা চুমু খেতো। রায়হানের এমন কান্ডে হেসে উঠলো সাদ। মেজাজটা অবশ্য এই জন্যই ফুরফুরে বেশি।

বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা।যতটা খুশি নিয়ে এসেছিল ততটা খুশি টিকলো না।
বসার ঘরে সাজি আর ইহান বসে আছে। সাদ আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখেই রেগে গেলো। বারবার মানা করার সত্বেও মেয়েটা কিভাবে তার কথা অমান্য করে! সেটা চিন্তা করেই রাগে ফুঁসছে সাদ।

সাদ এগিয়ে যাবে এমন সময় ইহানের কথা শুনে থামলো।

,, কি ব্যাপার সাজিঁ! তুই মনে হয় আমাকে ইগনোর করছিস? যতবারই কথা বলতে চাইছি ততবারই এড়িয়ে চলছিস ব্যাপারটা কি?

ইহানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো সাজিঁ। ইহানের তাকানোতে তীব্র অ*স্ব*স্তি বোধ করতে লাগলো। ইহান চেহারার দিকে তাকাচ্ছে কম শরীরের দিকে তাকাচ্ছে বেশি।

সাদ দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছে এখনই মাটিতে পুঁ*তে দেই।

সাজি ওড়না দিয়ে ভালো করে নিজেকে ঢাকতে ঢাকতে বললো,, তেমন কিছু না ভাইয়া। আপনি বসুন আমাকে ফুপ্পি ডাকছে। আমি ফুপ্পির কাছে যাচ্ছি।

ইহান সোফা থেকে উঠে এগিয়ে যেতেই সাদ ইহানের সামনে এসে দাড়ালো।
মুচকি হেসে কাঁধ জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,, কি অবস্থা ইহান? পড়ালেখা কেমন চলছে?

ইহান জোর পূর্বক হেসে বলল,, এইতো ভাইয়া ভালো।

সাদ সাজির দিকে তাকিয়েই চোখ রাঙিয়ে ইশারায় যেতে বললো।

আজ সাদের চোখ রা*ঙা*নিতে ভয় পেলোনা সাজি। বরং স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে চঞ্চল পায়ে বসার ঘর ত্যাগ করলো। সাথে মনে মনে সাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগলো। সাদ ভাই না এলে আজ হয়তো দম আটকে ম*রেই যেতো।
_________

রান্না ঘরে হরেক রকম পিঠা তৈরি হচ্ছে। রাজিয়া পানসে মুখে বসে পিঠা বানাচ্ছে। তবে সেঁজুতি আর অনিলার ব্যাপার ভিন্ন। তারা দুইজনেই খোশ মেজাজে পিঠা তৈরি করছে।

সাজি রান্না ঘরে ঢুকতেই অনিলা সাজির হাতে পিঠা ভর্তি প্লেট হাতে ধরিয়ে দিলো।

,, এতো পিঠা কার জন্য ফুপ্পি?

,, আমার ছোট মায়ের জন্য। তাড়াতাড়ি খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে!

সাজি পুলি পিঠায় কামড় বসিয়ে বললো, সাদ ভাই এসেছে। ওনার জন্যেও দাও।

অনিলা মুচকি হেসে আরেক প্লেট সাজির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,, যা দিয়ে আয়!

পাশ থেকে সেঁজুতি ভ্রু কুঁচকে বললো,, চোখ খুলে হাটিস। পড়ে গিয়ে ছেলেটার পিঠা গুলো ফেলে দিসনা যেন।

মায়ের এহেন কথায় রেগে নাক ফুলালো।
অনিলা চোখ গরম করে সেঁজুতিকে বললো,, বেশি বলছিস মনে হচ্ছে? এমন করলে মেয়েকে আমিই নিয়ে যাবো।

ফুপ্পির কথায় সাজি খুশিতে গদগদ হয়ে প্লেট নিয়ে বসার ঘরের দিকে গেলো। কিন্তু সাদকে দেখলো না। বরং সেখানে ইহান বসে আছে, তাও আবার তার উপস্থিতি টের পেয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

সাজি প্লেট হাতে করে একছুটে সাদের রুমের সামনে এসে দাড়ালো। জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,যাব্ বাবা বেঁ*চে গেছি। ব*দ*মা*ই*শটার চাইতে চা দোকানে বসে থাকা ছেলে গুলো ঢের ভালো। অন্তত মেয়েদের দিকে এমন করে তাকায় না। লু*চ্চা!!

,,বাইরে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে আয়!

সাদের গলার আওয়াজে চমকে উঠলো সাজি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সাদকে খোঁজার চেষ্টা চালালো। পরক্ষলেই মনে হলো বন্ধ দরজার ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে। কিন্তু আমাকে দেখলোই বা কি করে? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে করতে পা দিয়ে দরজা ধাক্কালো।

ওমনি হাট করে দরজা খুলে গেলো। সাদ গলার টাই খুলতে খুলতে বলল,, এতক্ষণ দরজার বাইরে কি করছিলি?

সাজি একটা প্লেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো,, ফুপ্পি আপনার জন্যে পিঠা দিয়েছে সেটাই নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

,, সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু হড়বড়িয়ে এলি কেন?কেউ পেছনে ধাওয়া করছিল?

,, উঁহু! আসলে ভেবেছিলাম আপনি বসার ঘরে তাই ওইদিকটায় গেছিলাম। কিন্তু সেখানে ইহান ভাইয়া বসা ছিল।তাকে দেখেই,,

সাজির কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদ ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে বললো,, ইহান কি করেছে? তোকে কিছু বলেনিতো?

সাজি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, কিছু বলেনি বরং তাকে দেখেই দৌড়ে এসেছিলাম।

সাদ কপাল কুঁচকে বিছানায় বসে বললো,, ঠিক আছে । প্লেট টেবিলের উপর রেখে সোজা মায়ের কাছে নয়তো রেনুর কাছে যাবি। ইহানের আশেপাশেও যেন তোকে না দেখি। ওর নজর ভালো না।

সাজি টেবিলের উপর প্লেট রেখে বিড়বিড় করে বললো,, হুম একদম লু*চ্চা নজর!

সাদ শুনেও না শোনার ভান করে মুখ টিপে হেসে ওয়াশ রুমে চলে গেল। তার সাজবাতি যে বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক।
*
*

সবাই মিলে একসাথে বসে পিঠা খাচ্ছে।এমন সময় রেনু পিঠা খেতে খেতে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, সাজিঁ আপা আপনার না আরেকটা পরীক্ষা আছে? সেইটা যেন কবে!

রেনুর কথা শুনতেই পিঠা সাজির গলায় আটকে গেলো। একপ্রকার কাঁশতে কাশতে অবস্থা খারাপ।
সেঁজুতি তাড়াতাড়ি পানি গ্লাস এগিয়ে দিলো। অনিলা সাজির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,, আস্তে আস্তে খা। কি করছিস কি!

রেনু অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পারলে এখনই কেঁদে ভাসায়।

সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। জুবায়েদা খাতুন দোয়া পড়ে মাথা ফু দিতে দিতে বললো,, ম*রার পরীক্ষা আমার নাতনিটাকে মে*রে*ই ফেলতেছে।

সাজি পানি খেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,, আম্মু আমার কাল ব্যাবহারিক পরীক্ষা! আমি এখন কি করবো?

সাদ মোবাইল ফোন হাতে তুলে নিয়ে সেঁজুতি হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলল, মামুনী রেডি হয়ে নাও । আমরা এখনই বের হবো।

সেঁজুতি মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। অনিলা সেঁজুতির অবস্থা বুঝতে পেরে কাঁধ হাত রেখে বলল,, তুই থাক আমিই চলে যাই। কাল পরীক্ষা শেষে নাহয় সাজিকে নিয়ে চলে আসবো।

জুবায়েদা খাতুন নাকোচ করে বললো,, দরকার নেই। বরং সাজিকে সাদের সাথে পাঠিয়ে দে। কাল পরীক্ষা শেষে দুটোতে মিলে আবার চলে আসবে।

সেঁজুতি হাসান জুবায়েদা খাতুনের সাথে সম্মতি দিয়ে বললো,, আম্মা ঠিক বলেছেন। সাদ বাবা তুই বরং ওকে নিয়ে যা ।আমি তোদের খাবার প্যাক করে দিচ্ছি।

সেঁজুতির কথা শুনে অনিলা সাদের দিকে ইশারা করে যেতে বললো।

সাদ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলে,, আমি গাড়ি বের করছি রেডি হয়ে আয়। এখন না বের হলে যেতে যেতে রাত দুইটা বাজবে।

সাদের কথায় অনিলা সাজিকে নিয়ে রুমে চলে গেল। সেঁজুতি হাসান খাবার প্যাক করে দেয়ার তাগিদে কিচেনে ছুটলো। সব দেখে ফুঁসে উঠলো রাজিয়া।

রেনু রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, কু*টনি মহিলা কোথাকার। ভালো কিছু দেখলেই গা জ্ব*লে।

সাজিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সাদ।

সাজি আর সাদ বের হতেই রাজিয়া সেঁজুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, রাত বিরাতে একটা ছেলের সাথে মেয়েকে দেওয়াকি ঠিক হলো সেঁজুতি? এতো বিশ্বাস ভালো লাগে সেঁজুতি। পুরুষের মন কখন কোন ভুল হয়ে যায় বলা যায় না।

রাজিয়ার কথা শুনে ফুঁসে উঠলো সেঁজুতি।

অনিলা রহমান সেঁজুতির দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলের নামে খারাপ কথা শুনেছে ঠিক আছে,তবে অনিলা দেখতে চাইছে সেঁজুতি কি বলে।

জুবায়েদা খাতুন বড় ছেলের বউয়ের কথায় চোখ রাঙ্গালেন। এই কা*ল সা*পের কারণে তার সংসার শেষ। এখন আবার বাকিদের সংসারে আ*গু*ন লাগাচ্ছে।

ইরিনা তার মায়ের এমন ব্যাবহার দেখে লজ্জায় রুমে চলে গেলো। রেনু বসে আছে সেঁজুতির কি বলে তা শোনার জন্য।রেনু পারলে এখনই রাজিয়াকে খু*ন করে দেয়।

সেঁজুতি রে*গে আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো,, আর একটা কথাও বলবেন না ভাবী! আমি আমাকে নিয়ে বা*জে কথা হযম করেছি আরও করতে পারবো। কিন্তু সাদকে নিয়ে একটা বাজে কথাও শুনবো না।
অবশ্য বলার অধিকারো নেই আপনার! আমি আমার মেয়েকে কার সাথে পাঠাবো, নাকি না পাঠাবো সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে এইসব নিয়ে টেনশন করতে হবে। আমি আমার আর আমার মেয়ের ক্ষেত্রে যা উত্তম তাই বাছাই করে নেই। আপনার মতো মানুষের রায় আমার দরকার হয় না।

আর রইলো বিশ্বাসের কথা! শুনে রাখুন ভাবী আমি সাদকে এতোটাই বিশ্বাস করি যে, আমি যদি এখন মা*রা যাই!মা*রা যাওয়ার আগে অবশ্যই আমার মেয়ের দায়িত্ব সাদের হাতেই দিয়ে যাবো।সে ক্ষেত্রে বড় আপা কি বলে সেটাও দেখবো না আমি।
সুতরাং আজকের পর থেকে কখনো সাদ কিংবা সাজিকে নিয়ে কোনো প্রকার ভালো বা খারাপ কথা আপনি বলবেন না। বললে আমার চাইতে খা*রাপ কেউ হবে না।

সেঁজুতি রাগে হন হন করে রুমে চলে গেলো। জুবায়েদা খাতুন হা হুতাশ করতে করতে সেঁজুতির পেছনে পেছনে গেলো।

রাজিয়া দাঁতে দাঁত চেপে সেঁজুতির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। ছোট জায়ের হাতে এতো বড় অ*পমান মেনে নিতে পারছেন না।

অনিলা রহমান মৃদু হেসে রাজিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,, আমার ছেলের এক একটা নিঃশ্বাসের সাথে আমি পরিচিত ভাবী।
আমি জানি আমার ছেলে এমন কোনো কিছুই করবে না যেটাতে আমার কাছে আমার ছেলেকে অপরিচিত লাগবে।
আর হ্যা গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলি!! অন্যের ছেলেকে নিয়ে গবেষণা করার আগে নিজের ছেলের চরিত্র সম্পর্কে অবগত হওয়া ভালো। আমি কিন্তু আমার ছেলের চরিত্র সম্পর্কে অবগত। সামনে থেকে আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো প্রকার বা*জে মন্তব্য করবেন না। ভুলে যাবো আপনি আমার বড় ভাইয়ের বউ। তখন জি*ভ টেনে ছিঁ*ড়ে ফেলতেও দুবার ভাববো।

অনিলা হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। রেনু মুখে সামনে হাত নাড়িয়ে মশা তাড়ানোর ভান করে মুখ বেঁকিয়ে অনিলার পেছনে পেছনে গেলো। এই খা*রা*প মহিলার সামনে বসে থাকতেও তার বিবেকে বাঁধছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১১
,
,
,
,
,
,
গ্ৰাম পেরিয়ে শহরের রাস্তায় উঠলো গাড়ি। এতোটা সময় পেরুলো অথচ দুইজনের মধ্যে কারো মুখেই কোনো কথা নেই।
সাদ এক পলক সাজির দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।
জানালার কাচ নামানো, সেই খোলা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে দূরে দৃষ্টি রাখলো সাজি। বেনি করা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে চোখ মুখে আঁচড়ে পড়ছে। কি জানি কি চিন্তা করছে যার ফলে চুল গুছানোর সময় পাচ্ছে না।

সাদের কাছে সাজিকে কল্পনাবিলাসী মনে হচ্ছে। যে বাস্তবে থেকেও নেই। যার বসবাস তার নিজস্ব কল্পনা জুড়ে। সেই কল্পনাবিলাসী মেয়েটাকে নিয়ে হাজার স্বপ্ন আঁকছে সাদ। আচ্ছা তার কল্পনাগুলো কি আমিময়!
নিজের করা অবান্তর প্রশ্নে নিজেই হাসলো সাদ।

রাত গভীর হচ্ছে তার সাথে নিস্তব্ধ হচ্ছে চারপাশ।
সাজি চোরা চোখে সাদের দিকে তাকালো। বিশ্বাস হচ্ছে না,, এই সাদ ভাই নামক গম্ভীর লোকটাই সেই দিন তার কোলে মাথা রেখে ঘুম জড়ানো গলায় বলেছিলেন,”” ভালোবাসি সাজঁবাতি! বড্ডো বেশি ভালোবাসি “”
সাজি হাজার বার নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার মন এক কথা বললেও মস্তিষ্ক বার বার স্বরন করিয়ে দিলো,”” সাজি তুই ভুল শুনিস নি”
এই ঠিক ভুল বিবেচনা করতে গিয়ে পুরো কল্পনা জগতটায় সাদ ভাই নামক মানুষটা জেঁকে বসলো।
আজকাল নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে সাদ ভাইকে নিয়ে ভাবতে হয় রাত দিন।

আচ্ছা সত্যিকি ভালোবাসে? কই কখনো তো এমন কিছুই চোখে পড়েনি! তাহলে?
লোকে বলে,, প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারে মেয়েদের এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। কেউ তাকে সেই চোখে দেখলে সে তা চট করে ধরে ফেলে। তাহলে আমার কি সেই অদ্ভুত ক্ষমতা নেই? নাকি আমিই ভুল ভাবছি!
প্রশ্নের জটলায় ফেঁ*সে গেছে সাজি। মন মস্তিষ্কের বাকবিতন্ডা চলছে।

এর মাঝে সাদ নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো,, ঠান্ডা লাগছে? গ্লাস উঠিয়ে দিবো?

সাদের এমন কমল গলায় ইষৎ চমকালো সাজি। পরক্ষনেই মন মস্তিষ্ক শান্ত হয়ে এলো। সাদের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি স্থির করলো। এমন কোমল কন্ঠ শোনার সৌভাগ্য সব সময় হয় না। এই নিয়ে তিনবার এমন গলা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে তার। সাজি গুনে ওবদি রেখেছে।
সাদের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আনমনে প্রশ্ন করে বসলো সাজি,, সব সময় এমন কোমল করে কথা বলেন না কেন সাদ ভাই?

সাজির করা প্রশ্নে থমকালো সাদ। গাড়ির গতি কমিয়ে চট করে সাজির দিকে তাকালো। সাজি কেমন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হয়তো ঘোরের মধ্যে আছে। সেই ঘোর ভাঙ্গালো না সাদ। বরং মুচকি হেসে কোমলমতি গলায় বলল,,সব সময় আমার “তুমিটা” পাশে থাকেনা বলেই কোমল করে কথা বলা হয়ে উঠে না।

সাজি স্থির দৃষ্টি জোড়া আরো স্থির হলেও হৃৎপিণ্ড ঢিব ঢিব শব্দ করে পরিবেশটাকে অস্থির করে তুলল। কল্পনা এমন হাজারটা প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি। তবে কেন আজ এই প্রশ্নের সাথে উত্তরের ছড়াছড়ি! আচ্ছা,, এই কোমল গলা শোনার মতো সৌভাগ্যবতী “তুমিটা” কে?

সাদ হাত বাড়িয়ে সাজির এলোমেলো চুল গুলো আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,, ঠান্ডা লাগছে? জানালার কাঁচ তুলে দেই?

সাদের হাতের স্পর্শ আর আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করা দুটো প্রশ্নে আচম্বিত হয়ে মাথা নিচু করলো সাজি। এতোটা সময় সাদ ভাইয়ের সাথে কি কি কথা বলে ফেলেছে সে!! তা ভেবেই একরাশ লজ্জা হানা দিলো।
সেই লজ্জা নিবারণের প্রচেষ্টায় নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে চপলা কন্ঠে বলে উঠলো,, উঁহু ঠান্ডা লাগছে না।

সাদ বুঝতে পেরেছে তার সাজ বাতি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে।

লজ্জায় আ*ড়ষ্ট হওয়াতে দুগালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে।

সাদ ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসলো। সেই লাজুকতাকে আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছা বুকে চেপে রাখলো।
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,, তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার সেই রজনী দীর্ঘ হোক প্রিয়তমা! সেই রজনী হোক নিস্তব্ধ আর গভীর!
*
*
*
সাজিদের বাড়ি পৌঁছাতেই রাত বারোটা বেজে গেছে। সেই জড়োসড়ো অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো সাজি। সাদ গাড়ি থেকে নেমে সাজির পাশের দরজা খুলে দিল। চুল আর ওড়না ঠিক করে দিয়ে কয়েকবার ডেকে উঠলো।

সাজি চোখ মুখ কুঁচকে সোজা হয়ে বসে চার পাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। অতঃপর সাদের দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।

সাজির পরীক্ষার ফাইল পত্র সব এইবাড়িতে। সেই জন্য সাজিকে নিয়ে মামার বাড়িতেই এলো সাদ। সাদের কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। সাজিকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে নিজেও চলে গেলো।

সাজি হাত মুখ ধুয়ে খাবার গুলো গরম করে প্লেটে সাজিয়ে বসে পড়লো।

সাদ টাওয়েল গলায় ঝুলিয়ে সিড়ি বেয়ে নামতেই সাজির দিকে চোখ পড়লো,মুগ্ধ হলো সাদ!সাজি টেবিলে খাবার নিয়ে সাদের অপেক্ষা করছে।

দৃশ্যটা দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে উঠলো, সম্পর্টাকে একদিন এমন রূপ দিবো যেখানে প্রতিদিন এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে। সাদের জন্যে তার সাজবাতির অপেক্ষারত দৃশ্য।

নিজেকে ধাতস্থ করে বাকা হেসে টেবিলে বসে পড়লো।দুইজন একসাথে খাওয়া শুরু করলো। সাজি একমনে খাবার খাচ্ছে। ঘুমে চোখ দুটো খুলে রাখা দায়।
সাদ খেতে খেতে বললো,, ফাইল পত্র ব্যবহারিক খাতা সব গুছিয়ে রাখিস।আমি পাশের রুমেই থাকবো, কোনোরকম প্রয়োজন হলে বলিস। আর হ্যা সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে কিন্তু।বুঝেছিস?

সাজি সাদের কথা তেমন আমলে নিলো না। ঘুমের ঘোরে প্লেটের উপর পড়ার দশা।
সাদ সাজির উত্তর না পেয়ে মাথা নিচু করে দেখে,সাজি চোখ বন্ধ করে ভাত চিবোচ্ছে। সাদ ঠোঁট টিপে হেসে বলল,, পাগলী একটা। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাচ্ছে।

টেবিলের উপর শব্দ করে গ্লাস রাখতেই চোখ মেলে তাকালো সাজি। সাদ পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বললো,, আর খেতে হবে না। যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

সাজি হাত ধুয়ে পানি মুখে নিয়ে হেলেদুলে দোতলায় উঠে গেলো।
সাদ টেবিল গুছিয়ে প্লেট বাটি ধুয়ে রাখলো। দরজা জানালা ঠিক মতো লাগানো হয়েছে কিনা তা চেক করেই ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে যথা সময়ে সাদ আর সাজি বেরিয়ে পড়লো। সাজিকে দিয়েই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
রায়হানকে সবটা বুঝিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো। এই দিকে সাজির পরীক্ষা সময়ের আগেই শেষ হলো। বাইরে দাঁড়িয়ে রিমির সাথে গল্প করছে। রিমিকে সবটা বলার পর রিমি সাজির কাঁধে হাত রেখে রসিকতা করে গেয়ে উঠলো ,, প্রেমে পড়েছে সাজি,, প্রেমে পড়েছে,,,সাজির ফুফাতো ভাই তাকে পাগল করেছে।

গানের এমন বিশ্রী ভার্সন রিমি দ্বারাই সম্ভব। সাজি রেগে হিসহিস করে রিমির পিঠে ধুম করে কি*ল বসিয়ে দিলো। রিমি চোখ মুখ খিচে বলে,, প্রেমে পড়িসনি ঠিক আছে। এতে আমার দোষ কি? মা*র*ছিস কেন ইয়ার?

সাজি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, কিসের প্রেম? যতসব ফালতু কথা। তোর সাথে কোনো কথা শেয়ার করাই বেকার।

রিমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,, বেকার টেকার কিছুনা জানু। এই গরীব তোকে ব*দদোয়া দিচ্ছে অতিসত্বর তুমি প্রেমে আ*ছা*ড় খেয়ে মুখ থু*ব*ড়ে প*ড়*বা হুহ!!

সাজি কিছু বলতে নিবে তার আগেই পেছন থেকে সাদ বলে উঠলো,, কে কার প্রেমে আ*ছা*ড় খাচ্ছে?

সাজি আর রিমি চমকে উঠে পেছনে ফিরলো। সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে দেখেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে দুইজনেই একসাথে বলে উঠল,, আপনার প্রেমে।

সাদ দুইজনের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,, কিহ!!!!

রিমি জোর পূর্বক হেসে বলল,, ইয়ে মানে ভাইয়া সাজির কথা বলছিলাম। মানে সাজির প্রেমে আরকি। আমি আর ও একসাথে সব সময় থাকি তো তাই দুইজন দুইজনের প্রেমে পড়ার কথা বলছি।

রিমির কথায় সাজির কাশি উঠে গেলো।সাদ সাজির দিকে তাকিয়ে বলল,, ঠিক আছে!! আপাতত বিশ্বাস করলাম।

রিমি ঢোক গিলে বললো’ ভাইয়া আমি তাহলে আসি। আব্বু অপেক্ষা করছে।
রিমি কথা শেষ করেই দৌড় দিলো।

সাজি কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সাদ সাজির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। মেয়েটা ঠিক করে মিথ্যা ওবদি বলতে পারে না। নিশ্চয়ই দুইটাতে মিলে কোনো খিচুড়ি পাকাচ্ছে।
সাদ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সাজির হাতে একটা ‘কোন’ আইসক্রিম ধরিয়ে দিলো।

সাজি মুচকি হেসে আইসক্রিম খাচ্ছে। এইটা নতুন নয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এমন প্রতিদিনই আইসক্রিম চকলেট কিছু না কিছুতো তার জন্য নিয়ে আসবেই। কখনো গাড়িতে বসে খেতে দেওয়া হয় ,তো কখনো গাড়ি থেকে নামার সময় হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নরম গরম মানুষ সাদ ভাই। কিন্তু কখন কোন রূপে আসে তা বলা দায়। সব ভাবনার মাঝে হুট করে রিমির গাওয়া সেই গানটাই মনে পড়লো। মনে মনে বার কয়েক সেই গান আওড়ালো সাজি। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, নির্লজ্জ তুই সাজি। বড্ডো বেশি নির্লজ্জ।

সাদ আড়চোখে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
সাদ জানলোইনা তার পাশে বসে থাকা মেয়েটার ধ্যানেজ্ঞানে আজকাল সে জেঁকে বসেছে।
_______

বাড়ির গেইটের কাছে আসতেই নিজের মা আর মামুনীকে দেখতে পেলো সাদ। তার মায়ের কোলে রেনুর মেয়ে চাঁদ ঘুমিয়ে আছে। রেনু পেছনে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে নামছে। মামুনী রাফির হাত ধরে গেইটের ভেতরে ঢুকছে।

সাজি নিজেও অবাক। যেখানে একসপ্তাহ থাকার কথা সেখানে ব্যাগপত্র নিয়ে চলে এলো কেন! কিছুই মাথায় ঢুকছেনা সাজির।

সাজি প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে সাদের দিকে চাইলো। সাদ গাড়ি থামিয়ে বললো,, আমি সবটা দেখছি তুই ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

সাজি আর কথা বাড়ালো না। গাড়ি থেকে নেমে মায়ের সাথে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো।

সাদ গাড়ি থেকে নেমে তার মায়ের সামনে দাঁড়ালো।

অনিলা রহমান ছেলের চাহনি দেখেই প্রশ্ন আঁচ করে ফেলেছে। এমনিতেই ওই বাড়ির প্রতি সাদের মনে তি*ক্ত অভিজ্ঞতা অনেক।আরো তিক্ততা বাড়াতে চান না তিনি। সাদ কিছু বলার আগেই বললো,, তোরা নেই,মনও টিকছে না। তাই চলে এসেছি।

সাদ ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, ভেতরে যাও। চাঁদকে শুইয়ে দিয়ে রেষ্ট করো। আমি তোমাদের সবার জন্য খাবার অর্ডার করছি। মামুনিকে বলবে যেন কিচেনের দিকে পা না বাড়ায়।

অনিলা রহমান ছেলের কথায় বুঝতে পারলো, তার বলা কথাটা সাদ বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস করেনি।
অনিলা রহমান চাঁপা নিঃশ্বাস ফেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। ছেলেটা তার এমনই এক ধাতু দিয়ে গড়া। যাকে সত্য মিথ্যার ফারাক বুঝাতে হয় না।

রেনু এতক্ষণ মা ছেলের কথা শুনছিলো। অনিলা রহমানের কথায় খুব বেশিই বিরক্ত হলো রেনু। ওই মহিলার কথা গুলো লুকানোর কি আছে! যে খারাপ সে খারাপই থাকবে, তাকে হারপিক লাইজল কোনোটা দিয়ে ধুয়েও পরিস্কার করা যাবে না। রেনু পারলে এখনই সবটা সাদকে বলে দেয়। কিন্তু অনিলা রহমান আর সেঁজুতি মানা করে দিয়েছে, যেন এইসব কথা সাদ বা সাজিঁ কাউকেই না বলে।
তাই রেনু চুপচাপ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে।

অনিলা রহমান গেইটের ভেতরে ঢুকতেই পকেটে দুহাত হাত গুঁজে রেনুর দিকে তাকালো সাদ।

রেনু জোর পূর্বক হেসে ট্রলি ব্যাগ টেনে ভেতরে আসতে নেয়, তার আগেই সাদ সামনে দাঁড়িয়ে নিরেট স্বরে বলল,, রেনু যা সত্যি তা A to Z সব জানতে চাই।

রেনু সাদের এহেন কথায় ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বললো’,, বড় খালাম্মা তো বললোই সাদ ভাইয়া।

সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,, তোকে হাত পা বেঁ*ধে পানিতে ফে*ল*বো, নাকি দোতলা থেকে ফে*ল*বো সেটাই চিন্তা করছি। তাড়াতাড়ি সত্যিটা বলে বিদায় হ। তা না হলে আমি একটা ডিসিশন নিয়েই নিবো।

রেনু ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বললো,, ভাইয়া!!

,, চুপ! একদম চুপ!! ভাইয়া ডেকে মিথ্যা বলতে কলিজা কা*প*লো না তোর? আর একবার মিথ্যা বলবি!তো সত্যি সত্যি হাত-পা বেঁ*ধে পানিতে ফে*ল*বো তোকে।

সাদের ধ*মক শুনে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়ি, কমা, কোলোন,সেমিকোলোন, যা আছে সব সহ পুরো ঘটনাটার পুনরাবৃত্তি করে বললো রেনু। সাথে এইটাও বলে দিলো তাকে সেঁজুতি হাসান আর অনিলা রহমান মানা করেছে কাউকে বলতে।

সাদ সব মনোযোগ দিয়ে শুনে বললো,, ঠিক আছে যা তোকে মাফ করে দিলাম। আর হ্যা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি কাউকে তোর কথা বলবো না।

রেনু ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, ঠিক আছে ভাইয়া।

সাদ ট্রলি ব্যাগ দুটো গেইটের ভেতরে রেখে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,