গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২২ (১ম খন্ড)
সাজির সাথে বিন্দুর বেশ ভাব জমেছে। বিন্দু আর সাজি চাঁদকে নিয়ে বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে।রশনি,শেফালি তো আগে থেকেই বাগানে ছিল। তাই বিন্দু সাজিকে রশনির আর শেফালির কাছে নিয়ে গেল।ভেবেছে একসাথে গল্প করলে বেশ মজাই লাগবে।
শেফালী তখন রশনির সাথে সাদের রিলেশনের ব্যাপারে আলাপ চারিতায় ব্যাস্ত।
~ তোর কি মনে হয় আপু সাদ ভাইয়ের কোনো এফেয়ার আছে? আমারতো মনে হয় না। একেতো রাগী তার উপর গম্ভীর । কোন মেয়ে চাইবে এমন একটা হাঁটা চলা প্রেশার কুকারের সাথে রিলেশনশিপে যেতে? তুই চিন্তা করিস না তোর রাস্তা ক্লিয়ার। জেঠিকে পটিয়ে ঝোপ বুঝে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যাবি। ব্যাস কাজ শেষ।
রশনি শেফালীর কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, খবরদার সাদকে নিয়ে এমন কথা বলবি তো। প্রেশার কুকার কাকে বলছিস তুই! থা*ব*ডে দাঁ*ত ফেলে দিবো। সাদকে নিয়ে এইসব বলা আমি মোটেও পছন্দ করিনা। আফ্টার অল হি ইজ মাই লাইফলাইন।কোনো বা*জে কথা নয় ওকে!
বিন্দু চশমা খুলে ওড়না দিয়ে মুছে নিলো। শেফালী কথা শুনে সাজির হাঁসি পেলেও রশনির কথায় ভীষণ রাগ লাগলো। আসার পর থেকেই এর হাবভাব ঠিক লাগছিলো না। এখন তো পুরোপুরি শিওর এই শা*কচু*ন্নী সাদ ভাইয়ের গলায় ঝু*ল*তে এসেছে। ঝু*লা*চ্ছি দাঁড়া। কথা দিয়েই ক*লি*জা এ*ফাড় ওফা*ড় করে দিবো।
বিন্দু গলা খাকিয়ে রশনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, সাদ ভাইয়ের রিলেশন আছে কি নেই এইটা আমাদের জন্য আন্দাজ করা মুশকিল । কারন আমরা সাদ ভাইদের থেকে অনেকটাই দুরে থাকি। বছরে একবার দেখা হয় এতে এতো শিওর হয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
রশনি সাজির দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। শেফালী চেহারার ভঙ্গি না বদলালেও ভেতরে ভেতরে সাজিকে দেখে ভীষণ অখুশি।
চাঁদ সাজির চুল ধরে খেলছে। সাজি চাঁদের দিকে তাকেলেও কান খাঁড়া করে ঠিকই বিন্দুর কথা গুলো শুনছিলো।
বিন্দু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,, ওয়েট!ওয়েট!ওয়েট! সাজিতো সাদ ভাইয়েদের থেকে তেমন একটা দুরে থাকে না। তাছাড়া সপ্তাহে প্রায় আসা যাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সাজিরতো জানার কথা সাদ ভাইয়ের রিলেশন আছে কি নেই!
বিন্দুর কথা শুনে তৎক্ষণাৎ তাকালো রশনি। শেফালী চোখ বড়বড় করে সাজিকে দেখছে।
সাজি ভেতরে ভেতরে খুশিতে লাফিয়ে উঠার জোগাড়। এতক্ষণ এমন একটা প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো। যাক অবশেষে টিউব লাইট জ্বলেছে।সাজি মুখাবয়ব সিরিয়াস করলো। কিছুটা ভয় পাওয়ার ভান ধরলো।
রশনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,, তুমিকি সাদের ব্যাপারে কিছু জানো?
সাজি ভয় জড়ানো গলায় বলল,, সাদ ভাই জানলে খবর করবে। না বাবা আমি কিছু বলতে পারবো না।
শেফালী সাজির পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কাঁধ জড়িয়ে ধরে। অতঃপর মিহি গলায় ফিসফিসিয়ে বললো,, সাদ ভাই কেন,আমরা চারজন ছাড়া একটা কাক পক্ষিও জানতে পারবে না।
সাজি শেফালীর এমন কাজে মনে মনে ভেংচি কাটলো।
বিন্দু চশমা নাকের ডগায় এনে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, উই আর ফ্রেন্ডস্ ইয়ার। আমরা কোন দুঃখে বলতে যাবো। তাছাড়া বলে থা*প্প*ড় খাবে কে!
সাজি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। চো*রা চোখে আশেপাশে তাকিয়ে কন্ঠ খা*দে নামিয়ে বললো,, সাদ ভাইয়ের রিলেশন আছে মানে!আলবত আছে। একহাজার পার্সেন্ট শিওর।
বিন্দু বাদে আর দুইজনের মুখে যেন আমাবস্যা নেমেছে। বিন্দু রশনির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে মনে মনে বললো,, সাদ ভাই ডিজার্ভ বেস্ট। কিন্তু তুমি বেস্টের মধ্যে পড়োনা রশনি আপু। তুমি সাদ ভাইয়ের যোগ্য নও।
রশনি মুখের অবস্থা থমথমে । পারলে এখনই কেঁদে দেয়।
শেফালী আচম্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো ,, তুমি এতোটা শিওর হয়ে বলছো কি করে?
সাজি দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে বললো,, আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সাদ ভাইকে পছন্দ করে। তার প্রপোজাল নিয়ে সাদ ভাইয়ের কাছে গেছিলাম। জানো!সাদ ভাই রেগেমেগে একাকার , পারলে আমাকে মে*রেই ফেলে। পরক্ষনে শান্ত হয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,, “আমার ভালোবাসার মানুষ আছে।যাকে আমি খুব ভালোবাসি।”
রশনি কম্পিত গলায় বলল,, সত্যি কি আছে?
বিন্দু রশনির কথায় ফো*ড়ন কে*টে বলল,, সাদ ভাই মিথ্যে বলেনা রশনি আপু, সেটা আমরা সবাই জানি।
শেফালী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, তুমি দেখেছো সেই শা*ক*চু*ন্নীকে?
শেফালীর কথায় দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংযত করলো সাজি। এই মেয়ে তাকেই শা*ক*চু*ন্নী বলছে? শা*ক*চু*ন্নী আমি না শা*কচু*ন্নী তো তোরা। জো*ম্বী কোথাকার!
শেফালী সাজিকে ঝাঁকিয়ে বললো,, কি হলো কিছু বলছো না কেন? মেয়েটা কেমন বলো?
সাজি মুচকি হেসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, মেয়েটা খুব কিউট।একদম আমার মতো কিউট। দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে। এতোটাই কিউট। সাদ ভাই আর তাকে একসাথে দেখে যে কেউ বলে উঠে ” মেইড ফর ইচ আদার। দে লুক কিউট টুগেদার।”
রশনি কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাজি পেছনে ঘুরে স্টাইল মেরে হাঁটা ধরলো। এক একটা শব্দ আর কদম রশনিকে জ্বা*লি*য়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,,
গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২২ (২য় খন্ড)
সন্ধ্যা হতেই আড্ডার আসর বসেছে। কিন্তু সেই আসরটা ঠিক জমে উঠছে না। কারন রশনি, শেফালী,সাজি কেউই নেই। রশনি সাদের রিলেশনের ব্যাপার নিয়ে আপসেট, রশনির জন্য শেফালীও আসনি ঘাপটি মে*রে রুমে বসে আছে।
সাজি সাদের উপর ভীষণ রেগে আছে। যদিও সেই রাগ দেখানোর সাহস তার নেই।হয়তো দেখা গেল রাগ দেখাতে গিয়ে থা*প্পড় খেয়ে মান সম্মান বিসর্জন দিতে হয়েছে। আবার এইটাও মানতে পারছে না রশনি সাদ ভাইকে ভালোবাসে। ভালোবাসে কি! রিতিমত তার জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে।পারলে এখনই কাজী অফিস গিয়ে তিন কবুল পড়ে আসে। ভালোবাসবে কেন?এই মেয়ের এতো সাহস? আর সাদ ভাই!সেতো বোকা মানুষ নয় যে রশনির ফিলিংস সম্পর্কে জানবে না। অবশ্যই জানে জেনে বুঝে মজা নিচ্ছে। সাজি দাঁত কিড়মিড় করে ফুঁসে উঠে মৃদু চি*ৎকার করে বললো,, ধুরন্ধর লোক! সাদ ভাই আপনি একটা গির*গিটি! ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলান। আজ থেকে সাদ নাম আর সাদ নামক ব্যাক্তিকে ব*য়*কট করা হলো। এই লোকের সাথে কথা তো দুর তার সামনে ওবদি যাবো না।সাজি সাদকে ব*য়*কট করলো হুহ! ব*য়কট! ব*য়কট!
সাজির এমন চিৎকারে চাঁদ ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো। চাঁদের কান্না দেখে নিজের মাথা নিজে চা*টি মে*রে চাঁদের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগল সাজি।
সাদ বার কয়েক চোখ বুলিয়ে সাজিকে খুঁজলো। কিন্তু সেই খোঁজ ব্যার্থ। দুপুরের পর থেকে একবারও মেয়েটা চোখের সামনে পড়েনি। সাদ চিন্তা করে দেখলো তার কোনো কথায় সাজি কষ্ট পেয়েছে কিনা। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। তাহলে এতো লুকোচুরি কিসের! সাদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আজাদ আর জিহাদের সাথে বসে গল্প করছে। যদিও গল্প কম ছোট ভাইদের পরামর্শই বেশি দিচ্ছিলো।
রাতে খাবারের সময় সাজি ছাড়া সবাই খেতে বসেছে। সাদ পাশের চেয়ারটা খালি দেখে মায়ের দিকে তাকালো। অনিলা রহমান ছেলে সমস্যা বুঝে মুচকি হাসলো। মায়ের হাসি দেখে সাদ করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
অনিলা চওড়া হাসি দিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,, অনেক আগেই ক্ষিদে পেয়েছে। সেইজন্য খাওয়া দাওয়া করে ঘুমোচ্ছে।
মায়ের কথায় সাদ হতাশ হলো। এই মেয়ের কোনো কিছুই ইদানিং বুঝতে পারে না। হুটহাট রেগে যাওয়াটা রো*গে*র মতো হয়ে গেছে। কেন রেগে আছে সাজঁবাতি? রেগে আছে নাকি ভয় পাচ্ছে?
সাদ আজ সত্যি বুঝতে পারছে না সাজির হয়েছে কি। একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে খাওয়া কমপ্লিট করলো সাদ। এই মেয়ের একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। অন্তঃস্থলে ক*ঠিন রো*গ বাঁধিয়ে ফেলেছে এই মেয়ে।
খাওয়া শেষ হতেই একে একে সবাই রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।সাজি অনিলার সাথে ঘুমাচ্ছ। তাই রশনি, শেফালী আর বিন্দু সাজি যেই রুমে থাকতো সেখানেই ঘুমাবে। সাদের পাশের রুমটা আজাদ আর জিহাদকে দেওয়া হয়েছে।
রশনি বিছানায় বসে মুখে হাত চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁ*দ*ছে। শেফালী বারবার শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে,তবে কান্নার বেগ বাড়ছে ব-ই কমছে না। একতরফা ভালোবাসা রশনিকে ভীষণ পী*ড়া দিচ্ছে।
বিন্দু রুমে ঢুকে রশনিকে এই অবস্থায় দেখে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। চশমা ঠিক করে লম্বা শ্বাস নিয়ে সাদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করলো। সাদ ভাইকে ভয় পেলেও কিছু কথা ক্লিয়ার করা খুব দরকার।তা না হলে অযথা কেউ আশায় বাসা বেঁধে পরে মৃ*ত্যু য*ন্ত্রনা ভোগ করবে।
কেউ দরজায় নক করছে শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সাদ। এই সময় কে এসেছে তা ভেবে উঠে বসলো। এমনিতেই সাজির টেনশন তার উপর এখন আবার দরজায় নক সব মিলিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে দরজা খুললো।
দরজা খুলতেই বিন্দু মৃদু হেসে বলল,, দুঃখিত ভাইয়া এই সময় বিরক্ত করছি।
বিন্দুকে দেখে সাদের বিরক্তির রেশ কে*টে গেল। এই ছোট্ট বোনটা বড্ডো প্রিয় তার। ছোট হলেও তার আচার ব্যবহার বিজ্ঞব্যক্তির মত। বয়সের তুলনায় অনেকটাই বুঝের সে। বড়দের সম্মান,শ্রদ্ধার পাশাপাশি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে। যার দরুন সাদ বিন্দুকে খুব স্নেহ করে।
সাদ দরজা ছেড়ে মুচকি হেসে বলল,, কোনো সমস্যা নেই। তা ছাড়া এমন বিরক্ত ভালোই লাগে। ছোট বোন থাকবে আর বিরক্ত করবে না তাকি হয়? বাইদা ওয়ে, আমি যতটুকু জানি আমাদের বিন্দু কাউকে বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত করার মত মেয়ে না।
সাদের কথায় বিন্দু মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো’ আসলে ভাইয়া কিছু কথা ছিলো।
~আগে বস পরে শুনবো।
বিন্দু কাউচে গুটিসুটি মে*রে বসে আমতা আমতা করে বলল ,,যদিও আমি ছোট মানুষ এইসব নিয়ে আলোচনা করা আমার সাজে না তাও বাধ্য হয়ে এসেছি। খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ব্যাপার ভাইয়া।
বিন্দুর কথায় চিন্তিত হলো সাদ।কি এমন কথা যার জন্য এইসময় বিন্দু এইখানে এলো!এতোটা দ্বিধা সংকোচে ভুগছে যে বলতেই পারছে না।
বিন্দু ঠিক করা চশমা দ্বিতীয় বার ঠিক করলো। বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, আসলে ভাইয়া রশনি আপু তোমাকে খুব পছন্দ করে তাও অনেক আগ থেকেই। যদিও ওর পছন্দ একতরফা। কিন্তু আজ তোমার রিলেশনের কথা শুনে ভীষণ ভে*ঙে পড়েছে। আমি জানি না বিশ্বাস করেছে কিনা। কিন্তু যদি সত্যি তোমার রিলেশন থেকে থাকে! তাহলে রশনি আপুকে ক্লিয়ার করে বলে দিলে ভালো হয়। এখনো খুব একটা দেরি হয়নি। এখন জানলে অন্ততপক্ষে বেশি কষ্ট পাবেনা।
বিন্দুর কথা শুনে সাদ বিস্মিত হলো। সাদ রশনির ব্যাপারটা আন্দাজ করেছে ঠিক। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেনি । সাদ সব সময় ব্যাপারটাকে হাওয়ায় উঠিয়ে দিয়েছে। এখন বিন্দুর মুখে শুনে ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে। হুট করে সাদের মস্তিষ্ক জুড়ে তার রিলেশনের কথাটা বেজে উঠলো।রশনি কিভাবে জানলো তার রিলেশনের কথা?
সাদ চোখ ছোট ছোট করে বললো,, আমার রিলেশনশিপের কথা শুনার পর বলতে? সেটা কে বলেছে রশনিকে?
বিন্দু কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,, আসলে ভাইয়া আজ বিকেলে তোমার রিলেশনের কথা হচ্ছিল। আমরা দুরে থাকি যার দরুন শিওর ছিলাম না। কিন্তু সাজির তো জানার কথা তাই সবাই মিলে সাজিকে জিগ্গেস করলো। এক কথায় ফোর্স করার পর জানতে পারি তোমার লাইফে কেউ আছে।
বিন্দুর কথায় সাদ হতবাক হলো। সাজি বলেছে এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।
~ তা কি কি বলেছে আমার রিলেশনশিপের কথা?
~বলেছে কারো সাথে রিলেশন আছে। ইভেন একহাজার পার্সেন্ট শিওরিটির সাথে মেয়েটার বর্ননা দিয়েছে।
সাদের যেন অবাকতার রেশ কাটছেই না। কিন্তু ছোট বোনের সামনে ঠিক করে এক্সপ্রেস-ও করতে পারছে না। তাই শান্ত কন্ঠে বললো,, কেমন বর্ননা?
বিন্দু মুচকি হেসে বলল,, মেয়েটা নাকি খুব কিউট। একদম সাজির মতো কিউট। দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে, এতোটা কিউট। সাথে এটাও বলেছে,যে কেউ তোমাদের দুজনকে দেখলে বলে যে” মেইড ফর ইচ আদার।দে লুক কিউট টুগেদার।”
বিন্দুর কথা শুনে সাদের চোয়াল ঝুলে যাওয়ার জোগাড়। সাজির উপর রাগবে নাকি হাসবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
সাদ নিরেট স্বরে বলল,, ঠিক আছে। আমি দেখছি কি করা যায়। রশনির ব্যাপারটা আমি সামলে নিবো। তুই বরং ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।
বিন্দু উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,, ভাইয়া একটা কথা বলি? যদিও আমার পার্সোনাল ওপেনিয়ন।
~ হ্যা বল!
বিন্দু মুচকি হেসে বলল, ইউ এন্ড সাজি মেইড ফর ইচ আদার। অলসো লুক কিউট টুগেদার।
বিন্দুর কথা শুনে মুচকি হাসলো সাদ। বিন্দুর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,, পাকা বুড়ি যা ঘুমোতে যা।
বিন্দু যেতেই সাদ দরজা আটকে দিলো। সাজির বলা কথা গুলো ভেবে ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো।
~হুম!দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে তাইনা! আর কি বললো যেন!ও হ্যা মেইড ফর ইচ আদার,দে লুক কিউট টুগেদার। সাজঁবাতি রেগে আছে। রাগের কারনটা স্পষ্ট। রশনির কারনেই রেগে আছে। ভীষণ রেগে আছে। রেগেই রশনিকে জ্বা*লা*তে এইসব বলেছে।লাইট অফ করে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো সাদ। চোখ বুজে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, এই মেয়েটা কি করছে টা কি? ভ’য়ং’ক’র অ*সুখ বাঁধিয়ে খান্ত হয়নি। এখন আবার ধৈর্যের বাঁধ ভা*ঙার জন্য কেন উঠে পড়ে লেগেছে!
_________
সকাল সকাল উঠে রশনিরা বেরিয়ে পড়লো। আরো একটা দিন থাকার কথা ছিলো কিন্তু রশনি থাকবেনা বলায় আর কেউ আগ্ৰহ প্রকাশ করলো না।
সাদ দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে তাদের সাথে দেখা করতে পারেনি। কিন্তু সাজির সাথে দেখা হয়েছিল।
ঘড়ির কাঁটা এগারোটা বরাবর। সাজি অনিলার রুম থেকে মাথা বের করে সাদের রুমের দিকে চাইলো। দরজা বন্ধ দেখে গুটি গুটি পায়ে সাদের রুম ক্রস করে যেইনা সামনে এগোবে ওমনি হাতে টা*ন পড়লো। একটানে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা লক করে দিলো সাদ।
এই দিকে হঠাৎ এমন কান্ডে ভয় পেলো সাজি। চমকে উঠে যেইনা চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই মুখ চেপে ধরলো সাদ।
সাজি চোখ বড় বড় করে সাদের দিকে তাকালো। ভয়ে ভয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে ছাড়তে বলল। কিন্তু সাদ তো সাদই। ছাড়ার কথাতো দূর উল্টো দেয়ালের সাথে চেপে আরেকটু কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো।
সাদের এমন কাজে সাজি সাদের চোখে দিকে তাকালো। সাদ মুচকি হেসে সাজির চোখে চোখ রেখে ধীর গলায় বলল,, কে যেন বলেছিল আমার গার্লফ্রেন্ড দেখতে পুরোই সাজির মতো কিউট।
সাদের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করলো সাজি। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে শুরু করলো সাজি।না জানি কয়টা থা*প্পড় খেতে হয়।
সাজির ভিতু মুখাবয়ব দেখে মুচকি হেসে সাজির কপালে চুমু আটলো সাদ। অতঃপর আদুরে গলায় বলল,, ইউ নো হোয়াট?দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে এতোটা কিউট।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৩
সপ্তাহ খানেক আগে সেঁজুতি হাসান সাজি আর রেনুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়ির অবস্থা দেখে পুরো বাড়ি পরিস্কার করায় লেগে পড়লো। বাড়িতে মানুষ না থাকলে সেই বাড়ি আর বাড়ি থাকে না।ধুলো ময়লা জমে একাকার হয়ে যায়।পুরো এক সপ্তাহ ধরে গুছিয়েছে সব।
সাজি বাড়ি ফিরেছে ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি ফিরতে পারেনি।তার মন আটকে আছে ওই বাড়িতে। সাদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়তেই মন খারাপ করছে বারবার। এই একসপ্তাহে সাদ ভাইকে কে একবারও দেখতে পায়নি সাজি,না পেরেছে কথা বলতে। আশেপাশে থাকলেই শুধু হুটহাট ভালোবাসা জেগে উঠে তা না হলে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। একটা কল কি দেওয়া যেতো না! আমার মোবাইল নেই তো কি হয়েছে মায়েরটাতে দিতে পারতো। হু নোছ!হয়তো ওই রশনি শা*কচু*ন্নীর সাথে আড্ডা দিচ্ছে।সাজির মনে অভিমানের পাহাড় জমা হতে লাগলো। মনের ঈশান কোণে ঈষৎ কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। অভিমান হবেই বা না কেন! মন মস্তিষ্ক জুড়ে জেঁকে বসা মানুষটা ভুলতে বসেছে তাকে। সব মিলিয়ে বসন্তে বর্ষার আগমন।
নির্দিষ্ট কক্ষে বসে ফাইল চেক করছে সাদ। আজ চেয়ারম্যানের সাথে মিটিং আছে। এগারোটায় কনফারেন্স রুমে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। এতো শত ব্যস্ততার মাঝেও মোবাইলের স্ক্রীন লক খুলে ওয়াল পেপার দেখতে একটুও ভুল করছে না। প্রতিবার মুচকি হেসে ওয়াল পেপারে দেওয়া ছবিটা দেখছে। ওয়াল পেপারে সাজির শাড়ি পরা ছবি দেওয়া যা রিমির বার্থডেতে তোলা হয়েছিল। যেখানে সাজি শাড়ির আঁচলটা ছড়িয়ে বসে মুচকি হেসে কানের পাশে গুঁজে দেওয়া ফুল ঠিক করছে,ঠিক তখনই ছবিটি ক্লিক করা হয়েছে। ছবিটাতে সাজিকে অনন্য লাগছে। সব মিলিয়ে ছবিটা সাদের খুব প্রিয়। তা ছাড়া শাড়ি পরা ছবির অভাব নেই। কয়েকটা ছাড়া প্রায় সবই ক্যানডিড ছবি। বুঝাই যাচ্ছে কেউ লুকিয়ে চুরিয়ে তুলেছে।
স্ক্রীন লক খুলে ওয়াল পেপারে হাত বুলোয় সাদ। বিড়বিড় করে বার কয়েক বলে উঠলো,,” আমার প্রিয়তমা”একটা সপ্তাহ সাজঁবাতিকে দেখেনি সাদ। ব্যাস্ত সময় পার করার কারনে খোঁজ খবর নেওয়ার জো নেই। আচ্ছা এই সাময়িক দূরত্বে প্রিয়তমা-কি খুব বেশি অভিমান করবে? নাকি রেগে যাবে।সাদ মুচকি হেসে ফাইলে চোখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, যার সকল রাগ অভিমান আমাতে সীমাবদ্ধ সে রাগলেই-বা কি? রাগুক ,অভিমান করুক, অভিযোগের ঢালি সাজাক। প্রিয়তমার রাগ অভিমান ভে*ঙ্গে দেওয়ার দায়িত্বটা নাহয় আমিই নিলাম।
সপ্তাহ গড়িয়ে মাস পেরুলো।সাদের সাথে সাজিঁর কথা হয়না এই একমাস। সাদ অনেক বার এবাড়ি এসেছে কিন্তু সাজি কথা বলেনি। এমন ভাবে এড়িয়ে গেছে যেন সামনে কেউ ছিলোই না। সাদের প্রতি অভিমান হয়েছে খুব। রাগে অভিমানে কথা বলা বন্ধ করলেও ঠিকই মায়ের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে সাদ ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করে নেয় সাজি।
সকাল থেকেই দরজা আটকে বসে আছে সাজি। ভ*য়ে হাত পা অসাড় হয়ে গেছে। হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। টেনশনে দাঁত দিয়ে নখ কা*টতে কা*টতে নখ ভোতা করে ফেলেছে সাজি। খবরে ব্রেকিং নিউজ দেখেই এই অবস্থা। বড় বড় করে এইচএসসি রেজাল্ট প্রকাশের খবরটাই দিচ্ছে। সেই থেকেই সাজির অবস্থা শোচনীয়। সেঁজুতি হাসান বার কয়েক দরজায় ক*রাঘা*ত করে গেছেন। কিন্তু সাজিঁ সব শুনে বসে আছে। আজ পণ করেছে দরজা খুলবে না। বাই এনি চান্স রেজাল্ট খারাপ হলে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে আজীবন এই রুমেই কাটিয়ে দিবে। তাও দরজা খুলবে না।
সেঁজুতি হাসান রাগে গজগজ করতে করতে জুবায়েরকে কল দিলো। মা মেয়ে ঝগড়া হোক, কিংবা টেনশন সব কিছুতেই জুবায়ের ফেঁ*সে যায়।
না বউয়ের হয়ে কথা বলতে পারে ,না মেয়ের হয়ে কথা বলতে পারে। দুই দিকেই বিপদ।
জুবায়ের কল রিসিভ করতেই সেঁজুতি ফে*টে পড়লো,, তুমি তোমার মেয়েকে কিছু বলবে? সকাল থেকে দরজা আটকে বসে আছে। রেজাল্ট দিচ্ছে না যেন তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে।
জুবায়ের ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। মেয়েটা একদম তার মায়ের জেরক্স কপি। জুবায়ের কোমলমতি গলায় বলল,, তুমি একটু শান্ত হও। মেয়েটা টেন*শনে আছে তাই দরজা আটকে বসে আছে। তুমি যে ভাবে চি*ল্লা*চিল্লি করছো এতে করে আমার বাচ্চাটা ভ*য় পাবে সেঁজুতি।
সেঁজুতি দাঁত কিড়মিড় করে বললো,, তুমিতো আমাকে খ*লনায়িকা বানিয়ে দিচ্ছো। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ওর সৎ মা। সমস্যার সমাধান দিতে বলেছি, আমাকে ব্লেম করতে বলিনি।
জুবায়ের হতাশা ভরা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, তুমি শান্ত হও আমি সাদকে বলছি। সাদকে ছাড়া তোমার মেয়ে কাউকে ভয় পায় না। ও এসে তোমার মেয়েকে ঠিক করবে। তুমি শান্ত থাকো।মেয়েটার সাথে একদম চিল্লফাল্লা করবে না।
~তোমার জং*লি মেয়ের জন্য ছেলেটা অফিস ফেলে আসবে? আমাকে জ্বা*লা*চ্ছে সাথে ছেলেটাকেও শা*ন্তি দিচ্ছে না।স্ত্রীর কথায় মুচকি হাসলো জুবায়ের।
সেঁজুতি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে নরম গলায় বলল,, স্যরি জুবায়ের।
~ স্যরি বলতে হবে না। আমি জানি তুমি সাজিকে নিয়ে চিন্তিত।
~ কি করবো বলো সকাল থেকে দরজা আটকে বসে আছে। নাস্তা ওবদি করেনি। রেজাল্ট নিয়ে আমার টেনশন নেই খারাপ হোক ভালো হোক একটা হলেই হবে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে বসে আছে। শরীর খারাপ করবে না বলো?
জুবায়ের কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,, তুমি শান্ত থাকো।এমন তোমার ক্ষেত্রেও হয়েছে সেঁজুতি টেনশন করনা ঠিক হয়ে যাবে। আমি সাদকে বলছি সাদ এসে দেখে নিবে।
সেঁজুতি ফোন কেটে সাজির ঘরের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে লেগে পড়লো।
পরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে সাদ। এই নিয়ে দুইটা মিটিং ক্যানসেল করা হয়ে গেছে। রায়হান ল্যাপটপের সামনে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। সাদ রায়হানের হাঁসি দেখে চোখ রাঙ্গালো। রায়হান ভয় পেলো না বরং মুখটিপে হেসে বললো,, স্যার আমার মনে হচ্ছে ম্যামের নয় আপনার রেজাল্ট বের হচ্ছে। এতো টেনশনে আপনাকে কখনোই দেখিনি।
সাদের যায় যায় অবস্থা। রেজাল্ট থেকে সাজির জন্য টেনশন হচ্ছে বেশি। রেজাল্ট ওর আশানুরূপ না হলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দরজা আটকে রুমে বসে কাঁদবে। যা সাদের একটুও সয্য হবে না।তাইতো টেনশনে পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছিল।সাদ ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। কপালে আঙ্গুল ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,, ফা*ল*তু কথা বন্ধ করে আবার ট্রাই করো।
রায়হান ঠোঁট কামড়ে হাঁসি আটকানোর চেষ্টা করে ল্যাপটপে চোখ বুলিয়ে বললো,, সা*র্ভা*র ডাউন। রেজাল্ট দেখতে সমস্যা হচ্ছে স্যার। আমাদের মতো অনেকেই আছে যারা রেজাল্ট দেখতে চাচ্ছে। আপনি একটু ধৈর্য ধরুন আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সাদ বিরক্তে “চ” শব্দ করে মোবাইলে ট্রাই করতে লাগলো।
চেয়ার ছেড়ে হুট করে উঠে পড়লো সাদ।চেয়ারের উপর থেকে কোট নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো। রায়হান হা করে তাকিয়ে আছে। সাদের এমন কাজে হতভম্ব। রায়হান বুঝতে পারেনা স্যার এতো গম্ভীর হওয়ার সত্বেও মাঝে মধ্যে স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের মতো কাজ করে কেন। হুটহাট ভীষণ আবেগি হয়ে যায় ঠিক যেমন ওইদিন গাড়ির মধ্যে হয়েছিলো,তাও ঘুমের ঘোরে।
এতক্ষণে রেজাল্ট সবাই পেয়ে গেছে হয়তো। আচ্ছা আমিকি ফেইল করেছি? মায়ের কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না কেন? শিওর ফেইল করেছি। সাজি পায়চারি করতে করতে নিজে নিজে বিড়বিড় করছে। একপর্যায়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছে। হাত কচলে পায়চারি করতে করতে কেঁ*দে ভাসাচ্ছে।
দরজায় ঠক ঠক শব্দে থেমে গেল সাজিঁ।চোখ মুছে দরজার দিকে তাকালো। কেউ খুব ভদ্রভাবে দরজায় নক করছে। চোখ ভেঙে কান্না পাচ্ছে সাজির। নাক টেনে দরজার সামনে দাঁড়ালো। ঠিক তখনই মিহি কন্ঠে ডাক পড়লো, সাজঁবাতি!
ইনশাআল্লাহ চলবে,,