গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৬
সেই বি*ভী*ষিকাময় দীর্ঘ রজনীর প্রভাব এতোটাই প্রখর ছিলো যে প্রতিটা মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে। বদলে গেছে ড্রাইভারের পরিবারের জিবন।
বদলে গেছে সাজিকে ঘিরে থাকা আর সবার জিবন।
সেই রাতে প্রায় চার ঘণ্টা পর অনিলা রহমানকে সাকসেসফুলি OT থেকে বের করা হয়। ডাক্তার অনিলা রহমানকে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তখনও সবাই থমথমে অবস্থায় বসে ছিল। অনিলা রহমানের জন্য খুশি হবে নাকি সাজির জন্য দুঃ*খ প্রকাশ করবে কিছুই কারো বোধগম্য হলো না।
সাদ ধীর পায়ে উঠে মায়ের শিয়রে বসলো। অনিলার পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ আর ডান হাতে প্লাস্টার করা। সাদ মায়ের দিকে তাকিয়ে আলতো হাতে মায়ের মুখে হাত ছুঁইয়ে ডুকরে কেঁ*দে উঠলো। বাবার পরে এই একজনই আছে যার কোলে মাথা রেখে জগতের সব সুখ দুঃখ প্রকাশ করা যায়। আর সে কিনা তাকে ছেড়ে যেতে চাইছে! সাদ মায়ের বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,, সবাই কেন আমাকে একা করে দিতে চায় মা? কেন সবাই একা করে দিতে চায়?সাদ ছোট বাচ্চাদের মতো করে কাঁদতে শুরু করলে ডাক্তার এসে সাদকে বাইরে নিয়ে যায়।
অনিলার সার্জারিতে চার ঘণ্টা লাগলেও সাজির সার্জারির সময় কাল ছিলো দীর্ঘ। OTথেকে ডাক্তার বের হওয়ার পর সাদ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে ডাক্তারের চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিল। না হাসি, না আত্মবিশ্বাস আর না ছিলো সফলতার ছিটে ফোটা, যা ছিল তা এক রাশ হতা*শা ব-ই কিছুই না। জুবায়ের হড়বড়িয়ে ডাক্তারের সামনে গেলেও সাদ থেমে থাকা পা জুগল বাড়ালো খুব বেশি ধীর গতিতেই। সাদ জানে কিছুটা সময় পর ডাক্তারের বলা কথা তাকে ভে*ঙ্গে গু*ড়ি*য়ে দিবে।
জুবায়ের উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তারের কাছে সাজির কথা জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার চশমা খুলে মাথা নিচু করে ফেললো। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বললো,, ডাক্তাররা কখনোই চায় না অপারেশন থিয়েটার থেকে হ*তা*শ হয়ে বের হতে। আমরা সব সময় চাই আমাদের কাছে আসা প্রতিটি পেশেন্ট সুস্থ সবল হয়ে ফিরুক। আজকেও তাই চেয়েছিলাম। আমরা আমাদের বেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাট ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞা*ন না ফিরলে কো*মা*য় চলে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। আপাতত ICU তে শিফ্ট করা হবে।প্লিজ প্রে ফর ইউর ডটার ।
দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর সাজিকে OT থেকে ICU তে শিফ্ট করা হয়। সাজির অবস্থার কথা শোনার পর জুবায়েরের কাঁ*দতে শুরু করলেও অন্যদিকে সেঁজুতি অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে পড়ে। তবে সাদের তেমন একটা ভাবাবেগ হলো না। সাদ জানে ডাক্তারের কথায় ঠিক কতটুকু সত্যতা ছিলো।
ভারোরের আলো ফুটতেই ড্রাইভারের ম*রা দে*হ তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরে তার একমাত্র মেয়ে ছাড়া কেউই ছিলনা, আর না আছে দুকুলে কেউ। ড্রাইভারকে দা*ফ*ন করার পর তার মেয়েটাকে রায়হান সাথে করে সাজিদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় সাদ।
দা*ফ*ন শেষে হাসপাতালে ফিরে আসে জুবায়ের আর সাদ। ততক্ষণে অনিলার জ্ঞান ফেরে। কিন্তু সাজির জ্ঞান ফেরার অপেক্ষার সময় ২৪ ঘন্টা গড়িয়ে বারো মাসে পদার্পন করলো। সেইদিন মায়ের শিয়রে বসে কেঁদেছিলো সাদ এরপর আর একবারও চোখের জল ফেলেনি। বরং তার অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলো। তার সাথে দীর্ঘ হলো চেহারার মলিনতা।
অনিলা রহমান পুরোপুরি সুস্থ হতে হতে দুমাসের ও বেশি সময় লেগেছে। তখনও সাজি নি*র্জী*ব হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল তার শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া ভেন্টিলেশনে মধ্যেই চলছিলো । এইদিকে আত্মীয় স্বজনদের অপ্রাসঙ্গিক কথা বার্তার ফলে জুবায়ের সবার প্রবেশ এই বাড়িতে নি*সি*দ্ধ করে দেয়।কারন তাদের কথা শুনে শুনেই সেঁজুতি অ*সুস্থ হয়ে পড়ে। অনিলা রহমান সেঁজুতির অবস্থা দেখে নিজ বাড়ি ছাড়লেন।তিনি জানেন এখন সেঁজুতির পাশে তাকেই দাঁড়াতে হবে। অনিলা রহমান তার বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে জুবায়েরের বাড়িতে এসে উঠলেন।
সেঁজুতি সাজির ফেরার আশায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো। সাজির মুখ চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুহাত তুলে মেয়েটার সুস্থতার দোয়া কামনা করতে ভুললো না সেঁজুতি।
সবার জিবনের গতি সময়ের সাথে বাড়লেও সাদ সেই রাত্রিতেই আটকে রইলো।বছর পেরুতে দেরী নেই তবে একটা বছর সাদকে কেউ হাসতে দেখেনি না দেখেছে কারো সাথে প্রাণ খুলে কথা বলতে।
সেই দিনের থেকে প্রায় একমাস পর সাজিকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে শিফ্ট করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাজির প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট বাড়িতে আনা ব্যবস্থা করে সাদ। সাথে একজন নার্স রাখা হয়েছিল।
যদিও সেই নার্সের সময়কাল একমাসের বেশি স্থায়ী হয়নি।সাজির বেডশিট চেন্জ করার সময় ভুল বসতো সাজির হাতে চাপ লাগে,যা দেখে সাদ পুরোবাড়ি মাথায় তুলে ফেলে ।পরে সাদ নিজেই তাকে বের করে দেয়।
এই একটা বছরে সেঁজুতি অবাক নয়নে শুধু মাত্র সাদের কার্যক্রম দেখে আসছে। সেঁজুতি সব দেখে অবাক হলেও অবাক হলোনা জুবায়ের। জুবায়ের জনে সাদ সাজির ক্ষেত্রে ঠিক কতটা ডেস্পারেট।
সাজির এই অবস্থা সাদের জিবনে কঠিন প্রভাব ফেলেছে। এখন সাদ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কারো সাথেই কথা বলেনা। না ঠিক করে কারো দিকে তাকায়। সাদের গম্ভীর মুখায়বব দেখে কেউ দুইকথা বলার সাহস করে উঠে না। রায়হান মাঝে মাঝে সাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।সাদকে এইভাবে দেখতে তার খুব বেশিই কষ্ট হয়।
অফিসে থাকা অবস্থাতেও সাজিকে দেখতে ভোলে না সাদ। সাজির সেফটির জন্য সাজির পুরো রুম জুড়ে ক্যামরা লাগানো হয়েছে। যার দরুন অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ দুটিতেই সাজিকে মনিটর করে সাদ।
তাছাড়া অফিস থেকে যতক্ষনেই ফিরুকনা কেন,নিয়ম করে সাজির পাশে বসে ঘন্টা খানেকের গল্প জুড়ে দেওয়া তার রেগুলার রুটিনের মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ম করে নিজের ইচ্ছে, অনিচ্ছে,ভালো লাগা মন্দ লাগা সবটাই সাজির কাছে ব্যাক্ত করে সাদ। সাদ জানে না এই অপেক্ষার সময় ঠিক কতোটা লম্বা হবে। শুধু জানে সে অপেক্ষা করবে।তার সাজবাতির জন্য অপেক্ষারত থাকবে সাদ। হোক না পুরো জিবন।
_____
ভোরের আলো ফুটতেই বেরিয়ে পড়লো। অফিসের কাজে শহরের বাইরে যেতে হবে।যার দরুন রায়হান সহ ভোরেই রওনা দিলো। জানালার কাঁচ ভেদ করে বাইরে দৃষ্টি রাখলো সাদ। বসন্ত ঋতু আগমন ঘটেছে আজ অনেক দিন। বছর খানেক আগেও ছিল বসন্ত। তবে সেই বসন্তে আর আজকের বসন্তের পার্থক্য অনেক। সেই বসন্ত ঋতুর পুরোটা সময় জুড়ে সাদের কাছে সাজি ছিলো। প্রানচ্ছল সাজিঁ ,যে স্থীর হয়ে এক জায়গায় থাকতো না। কিন্তু এই বসন্তে সাজি প্রাণচ্ছল নয় বরং ঘুমন্ত। যার ঘুম আধো ভা*ঙ্গ*বে কিনা সন্দেহ। সাদ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে ফাইল গুলো চেক করতে লাগলো।
রায়হান সাদের দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো, তার স্যার যে ভালো নেই,একদম ভালো নেই।
অফিসের কাজ শেষ করে গাড়ি নিয়ে বাড়ির গেইটে প্রবেশ করতেই সাজিঁর ডাক্তারের গাড়ি দেখতে পেলো।সাদ যতক্ষনে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে গাড়িটা নাগালের বাইরে চলে গেল। রায়হানকে গাড়ি থামাতে বলে তৎক্ষণাৎ ডোর আনলক করে বেরিয়ে হড়বড়িয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো। সবাই সাজির রুমের বাইরে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে।
রেনু সাদকে দেখে মুচকি হেসে দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো। ইতিমধ্যে ঘেমে গেছে সাদ। কপালে হাত দিয়ে ঘাম মুছে নিলো। অতঃপর ধীর পায়ে রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো।সবাই সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মধ্যে বোহু প্রতিক্ষিত একজোড়া চোখ সাদকে দেখছে। সেই চোখ জোড়া দেখে থমকালো সাদ। কথা বলার শক্তির সাথে চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৭
সাদের পুরো শরীর হিম ধরে গেলো। চোখ জ্বা*লা করছে খুব,গলা থেকে বুক ওবদি জায়গাটা প্রচন্ড ব্যা*থা করছে। সাদ বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো, অনবরত ঠোঁট জোড়া কেঁপে চলেছে,বাম হাত কোমরে চেপে দাঁড়ালো। দাঁত দিয়ে ডান হাতের তর্জনী কা*ম*ড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা বৃথা চালাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এই চোখ জোড়া দেখে নিজেকে সামলানোটা মুশকিল ঠেকছে। এই চোখ জোড়া যে তার বড্ডো বেশি প্রিয়। সাদ বিশ্বাস করতে পারছেনা তার সাজবাতির ঘুম ভেঙ্গেছে।সাদ বুকে হাত চেপে আসফাস করে মনে মনে পন করে বসলো, এই মেয়েকে আর ঘুমাতে দেবে না। কখনোই ঘুমাতে দেবে না। আজ থেকে নির্ঘুম রাখবে।
জুবায়ের সাদের অবস্থা বুঝতে পেরে সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে সেঁজুতিকে ইশারায় উঠে যেতে বললো। সেঁজুতি বিনা বাক্যে সাজির মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে উঠে পড়লো। জুবায়ের আর সেঁজুতি যেতেই অনিলা ছেলের হাত ধরে টেনে সাজির পাশে বসিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রেনু এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। রেনু জানে সাদ ভাইয়ার মতো রাগী মানুষটা তার সাজি আপাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। রেনু বুক ফুলিয়ে প্রশান্তি ভরা নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর মুচকি হেসে দরজা টেনে বন্ধ করে দিলো। রেনুর আজ মন ভীষণ ভালো তাই সব রকমের রান্না আজ নিজ হাতে করবে বলে হেলেদুলে কিচেনে চলে গেল। রেনুর পেছনে পেছনে ড্রাইভারের মেয়ে লতাও ছুটলো। লতা এতো দিনে এইবাড়ির সব কিছু রপ্ত করে ফেলেছে। লতা এখন বুঝতে পারছে কেন তার বাবা এই বাড়ির মানুষের এতো ভক্ত ছিলো।লতার মতে এমন মানুষজনের ছায়াতলে আশ্রয় পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।
সাজি নিঃপলক দৃষ্টিতে সাদকে দেখছে। যাকে বলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা। সাদের এমন পরির্বতন দেখে বুক কেঁপে উঠলো। এই মলিন নিঃপ্রাণ সাদ ভাইকে সাজি চেনে না। সাদ ভাই কেমন জানি হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে, চোখ জোড়ায় আগের সেই তেজ নেই বরং চোখ জোড়া স্থীর হয়ে আছে। উঁহু! এই সাদ ভাইকে সাজি একটুও চেনে না। মোটেও চেনেনা।
সাদ অধীর আগ্রহে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে। সাদ চায় তার সাজবাতি তার সাথে দু’দন্ড কথা বলুক। জিজ্ঞেস করুক তাকে ছাড়া এই সাদ কেমন আছে।সাদ আসফাস করে টাইয়ের নট ঢিলে করলো। বার বার পলক ফেলে চোখের জল গড়িয়ে পড়া থেকে আটকানোর চেষ্টা চালাতে লাগলো। সাজি সাদের অবস্থা বুঝতে পেরে আস্তে করে ডেকে উঠলো,, সাদ ভাই!
সাজির এইটুকু আওয়াজ সাদের জন্য যথেষ্ট ছিলো। সাদ তৎক্ষণাৎ সাজির গলায় মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সাজি স্তব্ধ হয়ে গেছে সাদের কান্না দেখে। সাদ ছোট বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। সাদের চোখের পানিতে সাজির গলার পাশ পুরো ভিজে গেছে। সাজি চাইছে সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামাতে কিন্তু চেয়েও পারছে না।ডাক্তার বলেছে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সপ্তাহ খানেক সময় তো লাগবেই। সাজি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ধরা গলায় বলে উঠলো,, দুঃ*খে কাঁদছেন নাকি সুখে? আমি যাওয়ার পর নতুন গার্লফ্রেন্ড হয়েছে বুঝি? আমি চলে এসেছি না!এখন-ত তাকে আবার ছাড়তে হবে সেই দুঃ*খেই কাঁদছেন আমি জানি।
সাজির কথা কর্ণগোচর হতেই সাদ সাজি থেকে সরে বসলো। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে কম্পিত গলায় সুধালো,, মানে? কি বলতে চাইছিস?
সাজি মুচকি হেসে কিছুটা ক*টাক্ষ করে বললো,, যদিও সন্দেহ হচ্ছে!আধো কি কেউ পটেছে? অবশ্য গার্লফ্রেন্ড থাকলে চেহারা এমন হতো না। সত্যি করে বলুন নতুন কাউকে গার্লফ্রেন্ড বানাননি তো?রাত জেগে কথা বলে বলে চেহারা এমন হয়েছে তাইনা? বাইদা ওয়ে গার্লফ্রেন্ড বানালেও পস্তাতে হবে ।কারন আমি ছাড়া আপনার মতো বদরাগী ,ঘাড় ত্যাড়া মানুষকে কেউ সয্য করবে না। এখনো সময় আছে তাড়াতাড়ি ব্রেকআপ করে ফেলুন।
সাদ সাজির মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলো।সাদ রাগ করলো না বরং মুচকি হেসে সাজির দুহাত নিজের মুঠোবন্দী করে নিলো। সাজির দিকে ঝুঁকে পর পর কয়েকবার সাজির ললাটে অধর ছুঁইয়ে নাকে নাক ঘসতে ঘসতে আদুরে গলায় বলল,, আমি অমন ছেলে নই সাজবাতি। আমার অলরেডি একজন আছে তাই অন্য কারো প্রয়োজন পড়েনি। তাছাড়া আমার মতো ব*দরা*গী,ঘাড় ত্যাড়া মানুষকে সয্য করার ক্ষমতা শুধু একজনের আছে। তবে এইটা ঠিক যে তার সাথে রাত জেগে কথা বলতে বলতে চেহারা এমন হয়েছে। বাট স্যরি তার সাথে ব্রেকআপ করা কখনো পসিবল না। তুই চাইলে থাকতে পারিস,তার পাশে একটু জায়গা খালি আছে।
সাজি চোখ বন্ধ করে সাদের কথা গুলো শুনছিলো। সাজি উপলদ্ধী করতে পারছে এই নরম গরম মানুষটা তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।সাদকে দেখে সাজি বুঝতে পেরেছে এতো দিন সাদ ভাই নামক মানুষটা ভালো ছিল না। একটুও ভালো ছিল না। সাজির দুই চোখের কোন বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। সাদ সেই জল আলগোছে মুছে দিলো। অতঃপর সাজির পিঠের নিচে হাত গ*লিয়ে সাজিকে বুকের সাথে চেপে ধরে পুনরায় বলে উঠলো,, এইখানটা শূন্য ছিলো সাজি। এইখানটা শূন্য ছিলো।কতো শতো না বলা কথা জমা হয়েছে এইখানে। কতো ব্যা*থা জমাট বেঁধেছে এইখানে। শুধু তুই জেগে ছিলিনা বলে। তোর নিস্তেজ হয়ে থাকা ঠিক কতোটা পু*ড়ি*য়েছে জানিস!তোর জেগে উঠার অপেক্ষা যে কতো লম্বা ছিল আমার জন্য, সেটা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। তুই ছাড়া আমার এইখানটা শূন্য লাগে। সব কিছু বি*দঘু*টে লাগে। নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হয় সাজি। খুব বেশি অসহায় মনে হয়।
সাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাজি শব্দ করে কেঁদে উঠলো। সাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আলতো করে সাজির পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,, কেন কাদছিস তুই!একদম কাদবিনা।কেঁদে কেঁদে আমার কোট শার্ট সব কেন ভেজাচ্ছি? তুই ধুয়ে দিবি নাকি?
সাদের এমন কথা শুনে ফুঁসে উঠলো সাজি। দাঁতে দাঁত চেপে সাদের বুকের সাথে নাক মুখ ঘষে বললো,, এইবার ঠিক আছে। এখন ময়লা হয়েছে।
সাজির এহেন কান্ডে হকচকিয়ে গেল সাদ। সাজি মুখ ফুলিয়ে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,, তুই কি কখনো বড় হবি না!
সাজি দুই ভ্রু নাচিয়ে বলল,, আমি বড়-ই আছি ।আপনি বুড়ো বলে আমাকে চোখে লাগে না নাকি?
~ কি!আমি বুড়ো?
সাজি মুখ বাঁকিয়ে বললো, ছেহ্ চেহারার যে অবস্থা দেখে বুড়োই লাগছে।
সাদ সাজিকে বিছানায় সুইয়ে দিতে দিতে বললো,, যে চেহারা দেখবে সে তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলো তাই এই অবস্থা। যাষ্ট এক সপ্তাহ! এক সপ্তাহে দেখবি আগের মতো হয়ে গেছি। তখন শুধু বুড়ো বলে দেখিস। থা*প্পড় মে*রে দাঁত ফে*লে দিবো।
সাজি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো,, থা*প্প*ড় মা*রা*টা ভোলেনি। ঘাড় ত্যাড়া লোক!
সাজি বিড়বিড়িয়ে বললেও সাদ সাজির কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে।সাজির কথায় মুচকি হাসলো অতঃপর দরজার দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বললো,, আমি সব শুনতে পাই কিন্তু।
সাজি জিভ কামড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। ইস! শুনে ফেলেছে।ভাগ্যিস অ*সুস্থ নয়তো দাঁ*ত ফেলে দিতো।
সাদ বুক ফুলিয়ে প্রশান্তি ভরা নিঃশ্বাস নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে সাজির আগের রুমে চলে গেল। যেখানে প্রায় একটা বছর ধরে সাদ থাকে।
জুবায়ের আর সেঁজুতি সাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সেঁজুতি জুবায়েরকে চিমটি কে*টে বললো,, জুবায়ের আমি যা দেখছি তুমি কি তা দেখতে পাচ্ছো?
জুবায়ের মুচকি হেসে সেঁজুতির বাহু জড়িয়ে ধরে বললো, হুম! সাদের হাসি খুশি মুখ দেখতে পাচ্ছি। কতোদিন পর দেখলাম বলো!
জুবায়েরের কথায় বিরক্ত হলো সেঁজুতি। লোকটা এতো বেরসিক কেন? উফ্ অ*সয্য!
সেঁজুতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, আমি সেটা দেখিনি। বরং আমি আমার মেয়ে জামাই দেখতে পাচ্ছি।
সেঁজুতির কথায় জুবায়ের হ*তা*শা ভরা নিঃশ্বাস ফেললো। তার বউযে অন্য জগতের মহিলা সে প্রায় ভুলেই গেছিলো।
সেঁজুতি খুশিতে গদগদ হয়ে চপলা কন্ঠে বললো,,ভাবতেই অবাক লাগে এতো তাড়াতাড়ি শ্বাশুড়ি হয়ে যাবো জুবায়ের।তাও আমার খুব বেশি পছন্দের ছেলেটাই আমার মেয়ে জামাই হবে। আজকেই আপার সাথে কথা বলে ফেলি ?
জুবায়ের তীব্র হ*তা*শা ভরা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, সেঁজুতি একটু আস্তে! মেয়েটা এখনো ওবদি পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ডাক্তার কি বলেছে শোনোনি! স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া সাজির মতামত ছাড়া কিছুই হবেনা। এই মূহুর্তে আমি আমার মেয়েকে কোনো প্রকার স্ট্রেস দিতে চাই না।আমি জানি সাদ সাজির জন্য বেষ্ট চয়েস। কিন্তু ওদের একটু সময় দিতে হবে। বুঝেছো?
জুবায়েরের কথা ঠিক হলেও সেঁজুতি পাত্তা দিলো না। বরং মুখ বেঁকিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলো। লোকটা আসলেই বেরসিক টাইপের। কোথায় মেয়েটাকে ছেলেটার প্রেমে কি করে ফেলবে সেই প্ল্যান করবে! তা না করে লেকচার ঝাড়তে আসছে।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,