গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৮
রাত প্রায় বারোটা। সেঁজুতি,আনিলা আর রেনু মিলে কালকের জন্য সব কিছু আগাম তৈরি করে রাখছে। সাজির জ্ঞান ফিরেছে শুনে সবাই দেখতে আসবে কাল। এতো এতো মেহমান আসবে তাই সব কিছুই গুছিয়ে রাখছে তিনজন মিলে।
এইদিকে সাদ অফিসের পাট চুকিয়ে বাড়ি ফিরলো। মামুনী আর মাকে কিচেনে ব্যাস্ত দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এতো রাত ওবদি এই দুই রমনী কিচেনে খুন্তি নাড়ছে কেন সেটাই ভেবে পায় না সাদ। নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।
সাদ কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে গলা খাকিয়ে বললো,, কি হচ্ছে এইখানে? তোমরা এখনো ঘুমাওনি কেন? দিনে সময় পাওনা না-কি?রাত জেগে খুন্তি নাড়ছো কেন?
সাদের প্রশ্নের বহর দেখে বিরক্ত হলো অনিলা। ছেলেটা এতো ইন্টারোগেট করছে কেন ভেবে পায় না?
সেঁজুতি কষানো মাংসের পাতিল চুলা থেকে নামিয়ে রেখে বললো,, কাল মেহমান আসবে।সেই জন্য আগ থেকে মাং*স গুলো কষিয়ে সব ঠিক করে রাখছি।
মেহমান আসবে শুনেই সাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। সরু চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,, কোন মেহমান?
অনিলা রহমান ছেলের প্রশ্নের কারন বুঝতে পেরে বললো,, বাইরের কেউ না। তোর নানু বাড়ি থেকে সবাই আসবে। সাথে সাজির নানু বাড়ি থেকে ওর নানু ,মামা, মামী আসবে।
মায়ের কথা শুনেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো সাদ। রাগে দাঁতে দাঁত চে*পে বললো,, এতো মানুষ কেন আসবে? তোমরা জানো না, সাজি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এর ভিতরে বাড়িতে এতো ঝা*মে*লার কি দরকার?
সেঁজুতি সাদের রাগ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বললো,, নিশান আসবে না সাদ। মা , ভাইয়া আর ভাবী আসবে শুধু।
সাদ সেঁজুতির দিক থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
অনিলা সাদের রাগটা বুঝতে পারছে।সাদ চায়না তার নানুর বাড়ি থেকে এমন কেউ আসুক যে সাজির ক্ষ*তি*র কারণ হবে। অনিলা নিজেও চায় না। কিন্তু কিছুই করার নেই সবাই তো সবটা জানে না।
অনিলা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে সেঁজুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ইহান যেন সাজির আশেপাশে ঘেঁষতে না পারে সেঁজুতি। সাজির জন্য ইহানের উপস্থিতি সেইফ না!
অনিলার কথায় আচম্বিত হলো সেঁজুতি। সাজির জন্য ইহান সেইফ না! তার মানে ইহান তার মেয়ের কোনো ক্ষ*তি করেনি নিতো? উৎকণ্ঠা হয়ে অনিলার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল সেঁজুতি,, কি বলছো আপা? ইহান কি করেছে আমার মেয়ের সাথে?
অনিলা সেঁজুতির হাত ধরে আস্বস্ত করে বললো,, কিছুই করেনি এখনো ওবদি। তবে ইহান সাজিকে অপ্রস্তুত করে তোলে। সাজির প্রতি ইহানের হাবভাব ভালো না। সাদ ব্যাপারটা প্রথম থেকেই জানে তাই তো এতো রেগে আছে।
~আগে বলোনি কেন আমাকে?
~ বললে তুই ওইবাড়িতে যেতি? এমনিতেই এতো তিক্ততা তার উপর এমন কিছু শুনলে সেই তিক্ততা বাড়তো ব-ই কমতো না। তাছাড়া একজনের জন্য সবাইকেতো আর দো*ষী করা যাবে না বল!
সেঁজুতি ফুঁসে উঠলো,কষা মাংসের পাতিলের খুন্তিটা জোরে আ*ছাড় মে*রে বললো,, সবাই আর কোথায় আপা? ওই বাড়িতে আম্মা আর বড় ভাইয়া ছাড়া কেউ আমাদের কথা ভেবেছে কখনো? আমাকে কোন ঠাসা করতে করতে ফুরসত পায়নি তোমার বড় ভাইয়ের বউ। শেষে নিজের বাপের বাড়ি থেকে মা বোন ডেকে এনে আমার পিছু পড়েছিলো। আমি সব সয্য করেছি সামনেও করতে পারবো। কিন্তু আমার মেয়ে গায়ে একটা আঁ*চ*ড় লাগলে তখন আমি সব কটাকে মে*রে পুঁ*তে দিবো বলে রাখলাম।
সেঁজুতি হন হন করে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো। এইদিকে অনিলা আর রেনু পড়েছে মহা বিপাকে। অনিলা রেনুর দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, কি আর করা চল সব কিছু গুছিয়ে নেই। সকাল ওবদি রাগ পড়ে যাবে।
রেনু মশলার কৌটা গুছিয়ে রেখে অসহায় হয়ে বললো,, আমিও খালাম্মার দলে। খালাম্মা ওই ব*দমা*শটাকে পুঁ*তে রাখতে চাইলে মাটি আমি খুড়ে দিবো। আমি কম সময় মাটি খোঁড়ার জন্য আমার গ্ৰামে সেরা ছিলাম।
রেনুর কথা শুনে ফুঁসে উঠলো অনিলা। কাকে কার কথা বলছিলো এতক্ষণ! এইটাও যে আরেক পা*গ*ল সেটাই তো ভুলে গেছিলো। অনিলা দাঁতে দাঁত চেপে হিস হিস করে রেনুকে বলে উঠলো,, সেঁজুতি আর সাদ কি কম ছিল? এখন তুই এসে পা*গ*লের সংখ্যা বাড়াচ্ছি! সেঁজুতিকে এইসব যুক্তি দিবি সবার আগে তোকে পুঁ*তে ফেলবো। সব কটা পা*গ*ল এই ঘরে বাসা বেঁধেছে।
রেনু ভয় পেলো না বরং অনিলার কথা শুনে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল। অনিলা যদি তাকে পুঁ*তে ফেলতে চায় তাহলে মাটি খুড়বে কে? বয়স হয়েছে এই বয়সে সাদ ভাইয়ের মাকে দিয়েতো আর মাটি খোঁড়ার কাজ করানো যাবে না। বেচারি কোদাল ধরতেই হাঁপিয়ে উঠবে।
অনিলা রেনুকে গভীর চিন্তায় পড়তে দেখে প্লেট বাটি শব্দ করে রেখে হন হনিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে পড়লো। এই মেয়ে যে তার কথা সিরিয়াসলি নেয় নি তার ডের বুঝতে পেরেছে অনিলা। আপাতত শা*স্তি হিসেবে কিচেন গুছানোর দায়িত্ব দিয়ে গেল।
________
ঘড়িতে ঘন্টার কাটা সবে মাত্র একটায় এসে থমকালো। সাদ মোবাইল হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কোলাহল বিহীন নিস্তব্ধ চারপাশ। অন্য দিন এই সময়ে বুকের ভেতরটায় ইষৎ ব্যা*থ্যা অনুভব করলেও আজ সেই ব্যাথ্যা নেই। আজ সমস্ত হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি বিরাজ করছে। প্রতিটি নিঃশ্বাসে বুকের ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। একদিন আগেও এই সময়টা সাদ সাজির সাথে গল্প করে কাটিয়েছিলো।সাদ সেই গল্প করাটা মনে করতে চায় না ,আর না চায় এমন সময় আবার কখনো আসুক। আচ্ছা আজ কি সাজি ঘুমোচ্ছে?
সাজির কথা মনে পড়তেই সাজির রুমে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার কথা মনে পড়লো। তৎক্ষণাৎ মোবাইল অন করে সাজির রুমের ফুটেজ বের করলো। না সাজি ঘুমায়নি। বরং হাত বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সাদ খেয়াল করে দেখলো সাজি পানির গ্লাস নিতে চাইছে। অপেক্ষা করলো না বরং বিছানার উপর থেকে অন্য মোবাইটাও হাতে নিয়ে ছুটলো।
সিঁড়ি বেয়ে ফটাফট নেমে সাজির রুমে হাজির। হড়বড়িয়ে কেউ রুমে প্রবেশ করছে বুঝতে পেরেই চমকালো সাজি। ভয়ে জড়সড় হয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো। সাদ ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সাজির মাথার পাশে বসে। একটা মোবাইল সাজির মাথার পাশে রেখে অন্যটা পকেটে পুরে নেয়। তখনও সাজি চোখ বন্ধ করা। সাদ সাজির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,, আমি ছাড়া কারো এতো সাহস নেই এই রুমে প্রবেশ করার। চোখ খোল বলছি।
সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই তৎক্ষণাৎ চোখ মেলে তাকালো সাজি।সাদ পানির গ্লাসে পানি ঢেলে সাজির মাথার নিচে হাত দিয়ে হালকা উঁচু করে গ্লাসটা মুখের সামনে ধরল।
সাজি অবাক চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাজি বুঝে পায় না এই লোকটা কি করে বলতে পারবে তার এখন পানির তৃষ্ণা পেয়েছে? আচ্ছা সত্যিকি উনি মানুষ?নাকি কোনো জিন ভুত টাইপের কেউ? যদিও জিন ভুতের এতো ঠেকা পড়েনি এতো রাতে এসে আমাকে পানি খাওয়াবে।তাহলে?
সাজিকে ভাবনার জগৎতে খাবি খেতে দেখে গলা খাকিয়ে বললো,, ভাবনকুমারী ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসুন।
সাজি ভীতু চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে গ্লাসে চুমুক দিয়ে পানি পান করলো। সাদ পানির গ্লাস রেখে সাজিকে আবার সুইয়ে দিলো। সাজি চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বললো,, আপনি কি করে জানলেন ?
সাদ কাঁথা টেনে সাজির গলা ওবদি ঢেকে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। সাজির করা প্রশ্ন শুনে বললো,, কিসের কথা বলছিস?
~এইযে এখন আমার পানির প্রয়োজন ছিল সেটা। সত্যি করে বলুন আপনি কোনো জিনটিন নাতো? দেখুন আমি এতো দিন কোমায় ছিলাম ভালো কথা কিন্তু সূরা,দোয়া সব কিন্তু মুখাস্ত। সো ফটাফট বলে ফেলুন?
সাজির এহেন কথায় মুখ চেপে হাসলো সাদ। এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শোনার জন্যইতো অপেক্ষা করেছিল।
সাজি সাদের হাঁসি দেখে ভিরু গলায় বললো,,কি হলো হাসছেন কেন?
সাদ বোকার মত মাথা চুলকাতে চুলকাতে দুই ভ্রু উঁচিয়ে বললো,, ভালোবাসি সাজঁবাতি।
সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই ঘড়িতে সময় দেখে নিলো সাজি। পরক্ষনেই অবিশ্বাস্য নজরে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, মনে হচ্ছে ভুল শুনেছি। আবার বলবেন প্লিজ!
সাদ মুচকি হেসে বললো,, অবাক হওয়ার কিছু নেই সাজঁবাতি।ওই বি*দঘুটে রাতের পর থেকে এমন কোন রাত যায়নি যখন আমি তোকে ভালোবাসি বলিনি।হাজার গল্পের ভীড়ে এই একটা কথাই বার বার বলতাম। শুধু শোনার মানুষটা নিরুত্তর ছিলো।
সাদের কথা শুনে চোখ বুজে নিলো সাজি। কম্পিত গলায় বলল,, আপনি এখন যান,আমি ঘুমাবো।
সাজির কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো সাদ। সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, মাথার পাশে মোবাইল রেখে যাচ্ছি। প্রয়োজন পড়লেই কল দিস। আমি এসে পড়বো।সাদ জানে সাজি এখন কোনো উত্তর করবে না।তাই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো । সাদ এইটাও জানে সাজি এখন কাঁদবে, খুব কাঁদবে।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৯
সাদের ব্যাস্ততম সপ্তাহ শেষ হলো আজ। সাজি অসুস্থ থাকার কারণে নিজেকে টেনশন ফ্রী রাখতে চাইছিল। যার দরুন নিজের উপর কাজের এক্সট্রা প্রেশার নিয়েছিলো। এখন সব ঠিক আছে শুধু কাজ গুলো শেষ হওয়ার নাম নিচ্ছে না। বিগত একসপ্তাহ ধরে এক ধ্যানে সব গুলো কাজ শেষ করেছে। সাদের কাজ শেষ হয়নি যেন রায়হান মুক্তি পেয়েছে। রায়হানের মতে দুই তিন ঘন্টার জন্য বাড়িতে যাওয়ার কি দরকার! অফিসের স্টাফ রুমে সংসার পেতে ফেললে কি হতো? রায়হানের কথা শুনে সাদ বরাবরের মতো বিরক্তে কপাল কুঁচকে ফেলতো। অবশেষে আজ সব গুলো কাজের ইতি টানলো দুজন মিলে।
মধ্যে রাতে বাড়ি ফিরলো সাদ। ক্লান্তির আভাস চোখে মুখে স্পষ্ট। কাঁধে কোট ঝুলিয়ে রাখা শার্টের হাতা উপর নিচ করা আর টায়ের নট খুলে গেছে প্রায়। সাদ এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো। সাদের বিন্দু পরিমাণ ধারনা নেই তার অপেক্ষায় একজন পথ চেয়ে আছে। সেই অপেক্ষারত একজোড়া চোখ ঈষৎ আলোতে সাদকে অবলোকন করছে। সাদ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই পুরো ডাইনিং হলের লাইট জ্বলে উঠলো। চমকে উঠলো সাদ, বাড়ানো পা জোড়া থমকে গেছে। এতো রাতে কেউ জেগে থাকার কথা না তাহলে? সাদ পেছন ফিরে তাকালো। সাজি সুইচ বোর্ডের পাশ থেকে গুটি গুটি পায়ে সাদের পাশে এসে দাঁড়াল।সাদ কিছু বলবে তার আগে হাত টেনে ডাইনিং টেবিলের কাছে নিয়ে গেল।
নির্বাক সাদ, শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সাজি সাদের হাত থেকে কোট নিয়ে অন্য চেয়ারে রাখলো।
খাবারের বাটির উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে রাখতে রাখতে বলল,, এতো কাজ দিয়ে কি হবে? একসপ্তাহে আমি হাটা শিখে গেলাম কিন্তু আপনার চেহারা ঠিক হলো না সাদ ভাই। এখনো আপনাকে বুড়োই লাগে।
সাদ সাজির কথা শুনে মুচকি হাসছে। দুইদিন হলো সাজি আগের মতোই স্বভাবিক চলাফেরা করছে। চলা ফেরা শুরু হয়নি যেন বাড়ি মাথায় তোলার লাইসেন্স পেয়ে গেছে।পুরো বাড়ি জুড়ে ঘুর ঘুর করে বেড়াচ্ছে মেয়েটা।
সাজি ভ্রু কুঁচকে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, কি হলো কোথায় হারালেন?
সাদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, কোথাও না। তুই খেয়েছিস?
সাজি সন্দিহান গলায় বলল,, সাদ ভাই আপনি বদলে গেছেন। ভীষণ বদলে গেছেন।
~ হুট করে এমন মনে হলো কেন?
~কেন মনে হবে না? অন্য সময় হলে থা*প্পড় মে*রে দাঁত ফেলে দিতে চাইতেন, কিন্তু এখন মুচকি মুচকি হাসছেন। বদলাননি বলুন!
সাদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,, হুম তা ঠিক। তবে আগের আর এখনকার সময়ের মধ্যে পার্থক্য আছে সাজঁবাতি।
সাদের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে মুখ বে*কা*লো সাজি। এখন বাংলা ব্যাকরণের মত চলিত আর সাধু ভাষার পার্থক্য বুঝাবে সাদ।যা সাজির একদম অপছন্দ।
সাজির বে*কানো মুখ সাদের চোখ এড়ায়নি। সাদ হাত ধুয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললো,, কাল ঘুরতে যাবি? অনেক দিন হলো বাড়িতেই আছিস। নিশ্চয়ই বোরিং লাগছে?
সাজি আড়চোখে সাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,, আপনার অফিস আবার মাইন্ড খাবে। দরকার নেই যাওয়ার । বোরিং লাগলেও বাড়িতে থাকবো।
সাদ ঠোঁট চেপে হাসলো। পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে সাজির দিকে বাড়িয়ে দিলো। সাজি বুঝে উঠলো না। সাদ ভাত চিবোতে চিবোতে সাজির সামনে মোবাইল রেখে বললো, রায়হানকে কল দিয়ে কথা বলে দেখ।
সাজি বিরক্ত হয়ে বলল,মোবাইল দিয়েছেন ভালো কথা।লক খুলে দেননি কেন? এখন লক খোলার জন্য তো হ্যাকার প্রয়োজন।
~তার দরকার হবেনা। পাসওয়ার্ড তুই নিজেই। একবার ট্রাই করে দেখ।
সাদের কথা শুনে সাজি কয়েক সেকেন্ড ভেবে “সাজঁবাতি” টাইপ করলো। ওমনি লক খুলে গেল। সাজি মুচকি হেসে মিনমিনে গলায় বলল,, নাহ্!বেটা খা*টাস হলেও রোমান্টিক আছে।
সাদ পানির গ্লাস টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,খা*টা*সের দৃষ্টি শক্তি+শ্রবণ শক্তি দুটোই খুব প্রখর সাজঁবাতি।রইলো রোমান্টিক হওয়ার কথা সেটা না হয় পরে সময় করে বুঝালাম।
সাদের কথা শুনে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো সাজি। লোকটা সব শুনে ফেলে কেন?
সাদ সাজির মুখের অবস্থা দেখে মনে মনে বলে উঠলো,, যে সময় গত হয়েছে তার জন্য আফসোস করবো না সাজঁবাতি। বরং সামনের দিন গুলোকে এতোটা সুন্দর করে তুলবো যাতে করে পেছনে ফেলে আসা সময়ের আফসোস বিন্দু পরিমাণ না থাকে।
সাদের চিন্তা ভাবনার মাঝে টেবিল ছেড়ে পালালো সাজিঁ। সাদ ভাইয়ের কথায় ভয় নয় বরং তার তাকানোর ধরন দেখে পালায়। তী*ক্ষ্ণ চোখজোড়ায় আজ ভালোবাসা উপচে পড়ছে।সেই চোখে চোখ মেলানোর ক্ষমতা এখনো সাজির হয়ে ওঠেনি। সাজি বুঝতে পারে তার ভালোবাসার চাইতে সাদের ভালোবাসার গভীরতা বেশি। সাদ ভালোবাসা আগলে রাখতে জানে,যত্ন করতে জানে।যার যত্ন আর ভালোবাসার কাছে তার ভালোবাসা রং খুব ফিকে লাগে।
সাজির যাওয়ার পর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো সাদ।এই মেয়ে সব সময় পালাই পালাই করে কেন?একটু বসলে কি হয়?একটু চোখে চোখ রাখলে কি হয়? না তা করবে কেন?উল্টো পাল্টা কথা আর কাজে ওস্তাদ তিনি। খাওয়া শেষ হতেই ধুপধাপ পা ফেলে রুমে চলে গেল সাদ। যেখানে প্রেয়সী নেই সেখানে দু’দন্ড বসে থাকা মুশকিল।
______
পরদিন যথা সময়ে ঘুম থেকে উঠলো সাজি। রাফিকে নিয়ে সারাবাড়িময় চঞ্চলা পায়ে হাঁটছে। জুবায়ের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। মেয়েটার হাঁটা চলা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সাজির সুস্থ হওয়া দেখে জুবায়ের সৃষ্টিকর্তার কাছে কতো শুকরিয়া আদায় করেছে তার ঠিক নেই। আসলেই উপর ওয়ালা কারো দোয়া ফেরায় না।
এইদিকে আজ দুইদিন সেঁজুতি ইনিয়ে বিনিয়ে অনিলার সাথে সাজি আর সাদের ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা চালাচ্ছে। চেষ্টার মাঝখানে বরাবরের মতো বে*গড়া দিচ্ছে জুবায়ের। কিন্তু সেঁজুতি দমে যাওয়ার পাত্রী না। জুবায়ের অনুপস্থিতিতে ঠিকই অনিলার আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রেনু আর লতা সব দেখে হেসে কুটি কুটি।
অনিলা রহমান আজ সাজির জন্য পুডিং বানাচ্ছে। সেঁজুতি ধীর পায়ে অনিলার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আসফাস করছে।
পেছনে থেকে রেনু লতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,, দেখেছিস লতা সাদ ভাইয়া আর আমাদের সাজি আপাকে একসাথে কতো সুন্দর লাগে?
লতা মুখটিপে হেসে বলল,, আসলে আপু আমি প্রথমে ভেবেছিলাম সাদ ভাইয়ের বউ সাজি আপু। পরে আস্তে আস্তে সবটা জানতে পারি। আসলেই দুজনকে একসাথে খুব মানায়।
রেনু চোখ মুখ ছোট বড় করে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে বলল, দুই জনকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলে খুব বেশি মন্দ হবে না। আমার সাধ্য থাকলে এক্ষুনি দিয়ে দিতাম।
রেনু আর লতার কথা শুনে মুচকি হাসলেন অনিলা। এইদিকে সেঁজুতি খুশিতে গদগদ।যে কথা দুইদিনে তার মুখ থেকে বের হয়নি আজ তা রেনু বলে দিয়েছে। সেঁজুতি পারলে রেনুকে এক্ষুনি মাথায় তুলে নেয়। খুশিতে অনিলার পাশ থেকে সরে এলো সেঁজুতি। রেনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,, রেনু বিকেলে আমি তুই আর লতা বের হবো। অনেক দিন শপিং করা হয় না। আজ তোদের দুইজনের জন্য অনেক কেনাকাটা করবো, কি বলিস?
রেনু আর লতা দুইজন দুইজনার দিকে তাকিয়ে হেসে মাথা নাড়ালো। তাদের কথাযে সেঁজুতির মনে ধরেছে তা বুঝতে বাকি নেই।
বিকেলে সাজিকে নিয়ে বের হলো সাদ। হুডতোলা রিকশায় পাশাপাশি বসেছে দুজন। সাজির ছোট্ট হাত ঠাঁই পেয়েছে সাদের হাতের মুঠোয়। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যেতেই হুড সরিয়ে দিলো সাদ। ক্যালেন্ডারের পাতায় বসন্ত ঋতু আজ শেষ। তবে প্রকৃতি বলছে বসন্ত এখনো বিরাজমান। কিছু গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝড়ে পড়ছে তো কিছু গাছে নতুন পাতা দিচ্ছে।
সাজি আশেপাশে তাকিয়ে সবটা দেখছে। তবে মাঝে মাঝে আড়চোখে সাদের দিকে তাকাতেও ভুল করছে না। এইদিকে সাদের দৃষ্টি তার পাশে বসা রমনীতেই নিবদ্ধ। কারন এই রমনী শুধু তার বসন্ত।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,