আবেগময় সম্পর্ক পর্ব-১১+১২

0
235

#আবেগময়_সম্পর্ক
#১১তম_পর্ব(মহাধামাকা পর্ব)
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল বাড়ির সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,“আপনারা আর দয়া করে আমার থেকে কিছু লুকাবেন না। এবার সত্যিটা বলুন আমায়। রায়ানের সম্পর্কে আপনারা এত উদাসীন কেন?”

আশিক কিছু বলতে চাইলে আমিনা আক্তার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,“আমরা মোটেই উদাসীন নই। ইতিমধ্যে পুলিশকে সবকিছু জানানো হয়েছে। যা করার এবার তারাই করবে। সেখানে আমরা এই বিষয়ে আর কি করব বলো।”

মেহুল বলে, “কিন্তু আপনাদের মধ্যে আমি তো চিন্তার লেশমাত্র দেখতে পাচ্ছি না। নিজের পরিবারের একজন সদস্য নিখোঁজ। অথচ আপনাদের কত স্বাভাবিক লাগছে। এতটা স্বাভাবিক থাকা কি সম্ভব বলুন?”

এমন সময় আকাশ বাড়িতে চলে আসে। আকাশ মেহুলকে বলে, “তাহলে তুমি কি বলতে চাইছ? রায়ান আমাদের কেউ নয়।”

মেহুল আকাশের দিকে এক বার তাকায়। তারপর বলে, “হ্যাঁ আমার সেটাই তো মনে হচ্ছে এখন। সত্য মিথ্যা জানি না। সেটা তোমরাই ভালো বলতে পারবে। আমি শুধু এটুকু জানি যে, সবকিছুর পেছনে অনেক বড় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। আর এই সব রহস্যের মূলে রয়েছে অন্তরা। আর অন্তর চৌধুরী তার কথা আর কি বলব। অন্তর চৌধুরী যে কত ভয়ানক সেটা আমি ইতিমধ্যেই জেনে গেছি।”

আকাশ জিজ্ঞাসা করে, “তুমি অন্তর চৌধুরীর ব্যাপারে কি এমন জানো যে তোমাকে তার ভয়ানক মনে হচ্ছে?”

মেহুল তখন গত কয়েকদিনে ঘটা ঘটনাগুলো মনে করে। কয়েক দিন আগেই, অন্তর চৌধুরী মেহুলকে কিছু ছবি পাঠায়। যেখানে অন্তর চৌধুরী ও পিহুর অনেক ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি ছিল। সেগুলো দেখিয়ে অন্তর চৌধুরী মেহুলকে বলে, “আমার সাথে দেখা করো। আমার কথা শুনে চলো। তাহলেই তোমার সব দিক থেকে লাভ হবে। ভুলে যেও না তোমার বাবার থেকে অনেক টাকা পাবো আমি, আর তাছাড়া তোমার বোনও আমার দখলে। আমার কথা না শুনলে লস হবে তোমারই।”

এমন কথা শুনে মেহুল খুব ভয় পেয়ে গেছিল৷ এরপর একদিন অন্তর চৌধুরীর সাথে দেখা করে। অন্তর চৌধুরী একটা সাদা পেপার মেহুলের হাতে দিয়ে বলে, “এখানে আকাশের সই নিয়ে আসবে।”

মেহুল অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিল, “এভাবে সাদা পেপারে আমি সই আনতে পারবো না। না জানি কি হবে। আমি করতে পারবো না।”

অন্তর চৌধুরী সেদিন মেহুলকে অনেক হুমকি ধমকি দিয়েছিল কিন্তু মেহুল সেসবে পরোয়া করেনি৷ আজ হয়তো সেসবেরই প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে।

মেহুল অতীতের কথাগুলো মনে করে সবার সামনে বলে, “অন্তর চৌধুরী ভালো লোক নয়। সেদিন তিনি আমাকে একটা সাদা পেপার দিয়ে সেখানে আকাশের সই করে নিতে বলেছিলেন। আমার মনে হয় তার কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্য আছে। এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে, রায়ানের অপহরণের পেছনেও তার হাত নেই তো।”

আকাশ বলে, “আমার সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে। অন্তর কোন পেপারে আমার সই নিতে বলবে কেন? আমার তো তেমন কোন সহায় সম্পত্তি নেই। এই বাড়িটাও আম্মুর নামে। আমার আছে বলতে চাকরিটা।”

আমিনা আক্তারের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, “এই ভাই বোন আমাদের আর শান্তিতে থাকতে পারলাম না। বোনটা তো আমাদের মান সম্মান সব শেষ করে একটা বোঝা গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেছে আর আমার বোকা ছেলেটাও সেই বোঝা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এখন ভাইটাও…”

আমিনা আক্তারের পুরো কথা শেষ করার আগেই আকাশ তাকে থামিয়ে দেয়। আকাশ বলে, “যদি থানায় মামলা করা হয়ে গিয়েই থাকে তাহলে এখন আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকা নিশ্চয়ই উচিৎ না। পুলিশ নিজের কাজ করুক, রায়ান যেহেতু আমাদেরই দায়িত্ব তাই আমাদেরও কিছু করতে হবে। আমি নিজের মতো ওকে খুঁজতে যাচ্ছি।”

আকাশ আর অপেক্ষা করল না। নিজের মতো চলে গেল রায়ানকে খুঁজতে। আকাশ যাওয়ার পর মেহুল আমিনা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি তখন কি বলতে চাইছিলেন যা সম্পূর্ণ করতে পারেন নি? প্লিজ আমাকে সম্পূর্ণ কথাটা বলে দিন। আমার জানা দরকার।”

আশিক বলে, “ঠিক আছে আমি তোমাকে সবকিছু বলছি ভাব। অন্তরা ভাবিকে ভাইয়া পছন্দ করত। শুধুমাত্র অন্তরা ভাবির জন্য অনেক কষ্ট করে চাকরি যোগাড় করে নেয়। সেইসময় অন্তরা ভাবির বাবা বেঁচে ছিলেন। তারপর ভাবির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। অন্তরা ভাবির বাবা আমাদের বাবার বন্ধু ছিল৷ আমাদের পরিবার যে কতটা ভালো সেটা তিনি জানতেন, আর তাছাড়া ভাইয়াও যেহেতু চাকরি পেয়ে গিয়েছিল তাই তিনিও রাজি হয়ে যান। এরপর সবার সম্মতি ক্রমে ভাইয়া আর ভাবির বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। বিয়ের একমাস পর আমরা জানতে পারি ভাবি প্রেগন্যান্ট। এটা জেনে আমরা সবাই খুব খুশি হই। আমাদের পরিবারে সেই সময় খুশির ঢেউ বয়ে যাচ্ছিল। ভাই আর ভাবিকে দেখে সবাই বলতো এরকম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খুব কম জনারই আছে। তাদের মধ্যে কত বেশি ভাব ছিল। আমাদের পরিবারের সবার সাথেও ভাবির অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। অন্তরা ভাবি আমাকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখত আর আমিও ওনাকে নিজের বড় বোনের মতোই সম্মান দিতাম। আম্মু-আব্বুও অনেক ভালোবাসত ভাবিকে। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না অতি সুখ কপালে সয়না। ভাবির যখন প্রেগ্ন্যাসির আট মাস চলছিল তখন এক দিন কেউ একজন ভাইয়ার কাছে কিছু ছবি পাঠায়। যেখানে ভাবির সাথে অন্য একটা ছেলের ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি ছিল। সেই ছবিগুলো দেখে ভাইয়া জানতে পারে অন্তরা ভাবির সাথে আকাশ ভাইয়ার বিয়ের আগে অন্তরা ভাবি অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে ছিল। এটা নিয়ে ভাইয়া ও ভাবির মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। ভাইয়া প্রথমবারের মতো ভাবির গায়ে হাত তোলে। ঝামেলার এক পর্যায়ে আকাশ ভাইয়া অন্তরা ভাবিকে বলে, “ তোমার উপর এখন কেন জানি আমার সন্দেহ হচ্ছে। সত্যি করে বলো, তোমার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে সেটা আমার কিনা। নাকি এটা অন্যকারো সন্তান। ভাবি সেদিন বলে ছিল, হ্যাঁ এটা তোমার বাচ্চা নয়।”

মেহুল হতবাক হয়ে বলে, “তার মানে রায়ান আকাশের সন্তান নয়?”

আমিনা আক্তার বলেন, “হ্যাঁ, জানো তুমি, ঐ মেয়ের জন্য আমার সোনার সংসারে কত অশান্তি নেমে এসেছিল। সুখ, শান্তির অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে সময় যায়। সন্তান জন্ম দিয়ে দুই মাস পর ঐ অন্তরা তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে আকাশকে একটি চিঠি লিখে দিয়ে যায়। যেখানে লেখা ছিল, “আমি আমার প্রেমিকের কাছে ফিরে যাচ্ছি। সে আমায় বলেছে, যদি তার কাছে ফিরে যাই তাহলে সে আবার সব ভুলে আমার সাথে সম্পর্ক শুরু করবে। কিন্তু সে বলেছে যে এই সন্তানের দায়িত্ব সে নিতে পারবে না। তাই আমি এই বাচ্চাটাকে তোমার হেফাজতে রেখে গেলাম। যদি পারো ওকে দেখে রেখ নাহলে ওকে চাইলে অনাথ আশ্রমেও রেখে আসতে পারো।”

এসব কথা শুনে মেহুলের মনে অন্তরার জন্য ঘৃণা জন্ম নেয়। একটা মা কত নিচু হলে এমন কথা বলতে পারে। আমিনা আক্তার বলেন, “জানো আমার ছেলেটা খুব বোকা আর ভালো মানুষ। তাই তো এতকিছুর পরেও সে ঐ অন্তরার ছেলেটাকে নিজের বাচ্চার মতো মানুষ করেছে। ভেবে দেখ ছেলেটা আমার কত কষ্টে ছিল৷ আমার ছেলের এই অবস্থা দেখে আমার স্বামীও একদিন স্টোক করেন। যার ফলে তার মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পর অন্তরার বাবাও একটা এক্সিডেন্টে মারা যান।”

মেহুল সব গুলো ঘটনার বর্ণনা শোনে। সব শুনে তার কাছে স্পষ্ট হয় রায়ানকে নিয়ে সবাই এত উদাসীন কেন।

#চলবে

#আবেগময়_সম্পর্ক
#১২তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

আকাশ হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়ির সবাই তখন অসহায় দৃষ্টিতে আকাশের দিকেই তাকিয়ে থাকে। আকাশ সবার সামনে আশাহত গলায় বলে, “আমি রায়ানকে কোথাও খুঁজে পাইনি। পুলিশও কোন সন্ধান দিতে পারিনি।”

কথা বলতে বলতে একসময় আকাশের চোখে জল চলে আসে। তবে সে সবার অলক্ষ্যে সেই জল মুছে নেয়। আর কেউ না দেখলেও মেহুলের দৃষ্টি এড়ায় না। মেহুল আকাশের পাশে এসে তার কাধে হাত রেখে বলে, “আমি জানি তুমি রায়ানের প্রতি ভালোবাসা কখনো প্রকাশ না করলেও তুমি ওকে অনেক ভালোবাসো। আজ আমি রায়ানের ব্যাপারে অন্তরার ব্যাপারে সবকিছু জানতে পেরেছি। আমি জানি অন্তরা তোমাকে ঠকানোয় তোমার ওর প্রতি অনেক রাগ, রায়ান তোমার সন্তান নয় জন্যই হয়তোবা তুমি ওর সাথে সহজ ভাবে মিশতে পারো না। ওর প্রতি তোমার এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে, কিন্তু আমি জানি, রায়ানকে তুমি কম ভালোবাসো না। সব সম্পর্ক কি আর রক্তের হয়? কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের না হয়েও অনেক বেশি নিবিড় হয়। যা আবেগময় সম্পর্ক।”

আকাশ বলে, “তুমি চিন্তা করো না। রায়ানকে আমরা খুঁজে পাবোই। ওর কিছু হবে না।”

মেহুল বলে, “হ্যাঁ আমরা সবাই মিলে খুঁজব ওকে। প্রয়োজনে নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও ওকে ফিরিয়ে আনব।”

এমন সময় কারো হাত তালি দেওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। মেহুল, আকাশ ওরা সবাই সদর দরজার দিকে তাকায়। অন্তর চৌধুরী হাত তালি দিতে দিতে ভেতরে আসছে। অন্তর চৌধুরী সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল, “বাহ, কত সুন্দর ফ্যামিলি ড্রামা চলছে। দিল খুশ হো গেয়া। আমার ভাগ্নেকে অপহরণ করে এখন সবাই মিলে নাটক করছ।”

অন্তরের মুখে এমন কথা শুনে আকাশ রাগী গলায় বলে, “এসব কি বলছ তুমি? আমরা কেন রায়ানকে অপহরণ করব? ভুলে যেও না রায়ান আমার সন্তান।”

অন্তর চৌধুরী বাঁকা হেসে বলে, “কিচ্ছু ভুলিনি আমি দুলাভাই। রায়ান তোমার নিজের সন্তান নয়। সে অন্তরা আপু এবং তার বয়ফ্রেন্ডের সন্তান। এইজন্যই তো তোমাদের এত রাগ তার উপর। আমি শুধু এতদিন নিজের বোনের সম্মান রক্ষার্থে তোমাদের কারো বিপক্ষে কিছু বলিনি। কিন্তু এখন আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর আমি চুপ থাকবোনা। তোমরা এত নিচে নেমে গেছ যে ছোট বাচ্চাটার ক্ষতি করতে চাইছ।”

আশিক অন্তর চৌধুরীর সার্টের কলার ধরে বলে, “একদম বাজে কথা বলবে না। কি ভেবেছ তোমার অপকর্মের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। মেহুল ভাবিকে দিয়ে তুমি কি কি করাতে চাইছিলে সব আমরা জানি। তাই তুমি আর অন্তত এখানে এসে এত বড় মুখ করে কথা বলার যোগ্যতা রাখো না।”

অন্তর চৌধুরী এক ঝটকায় আশিককে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। তারপর নিজের শার্টের কলার হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “আমি এত কিছু জানতে চাই না। তোমাদের এত বাজে কথা শোনার আমার টাইম নেই। আমার ভাগ্নেকে যেহেতু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমি চুপ করে বসে থাকবো না। আমি এখনই পুলিশকে ফোন করছি৷ পুলিশ এসে আকাশকে আগে থানায় ভড়ুক। তারপর এমনিই আমার ভাগ্নের সন্ধান পাওয়া যাবে।”

মেহুল আর চুপ থাকে না। অন্তর চৌধুরীর সামনে এসে তার সামনে আঙুল তুলে বলে, “একদম আমার হাজবেন্ডের কোন ক্ষতি করার কথা ভাববেন না। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”

অন্তর চৌধুরী মেহুলের কানে ফিসফিস করে বলে, “তুমি বেশি পাওয়ার দেখিও না। ভুলে যেও না তোমার পরিবারকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার।”

“আমি ভয় পাই না আপনাকে। আর আপনিও ভুলে যাবেন না, এখন এটাও আমার পরিবার। আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার বরকে জেলে ঢোকানোর কথা বলছেন, আর আমি চুপ করে থাকবো। এমনটা ভাববেন না।”

অন্তর চৌধুরী এবার বলে, “আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা। আমার ভাগ্নেকে আমার সামনে হাজির করো, নাহলে আমি যা বলেছি তাই করব।”

মেহুল কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহুলের ফোনে একটা ম্যাসেজ আছে। মেহুল সেই ম্যাসেজটা সিন করে। সেখানে লেখা, “যদি রায়ানকে ফেরত পেতে চাও তাহলে তাড়াতাড়ি নিচে দেওয়া ঠিকানায় চলে আসো। আর হ্যাঁ, একদম চালাকি করে পুলিশকে নিয়ে আসবে না। নিজে একা আসো, নাহলে রায়ানকে খ**তম করে দেওয়া হবে।”

ম্যাসেজটা দেখে ভয়ে মেহুলের অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। সে কি করবে সেটা বুঝতে পারছিল না। অবশেষে মেহুল সিদ্ধান্ত নেয় সে এই অপহরণ কারীদের পাঠানো ঠিকানাতেই যাবে আর সেখান থেকে রায়ানকে উদ্ধার করে আনবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মেহুল তাই অন্তর চৌধুরীর সামনে বলে, “আমাকে কিছুটা সময় দিন৷ আজ রাতের মধ্যে আমি রায়ানকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আর যদি সেটা না পারি তাহলে আপনি যা করার করবেন।”

অন্তর চৌধুরী রাজি হয়ে যায় মেহুলের কথায়। সে বলে, “ঠিক আছে। আজকের রাতটা তোমাদের সময় দিচ্ছি। তার মধ্যে যদি রায়ানকে ফিরিয়ে আনতে পারো ভালো। আর নাহলে পুলিশ এনে আমি এই আকাশকে গ্রেফতার করাবো। আমার পাওয়ার সম্পর্কে কিন্তু তোমাদের কারো কোন ধারণা নেই।”

মেহুল আর অপেক্ষা না করে একা বাড়ি থেকে বের হতে যায়। তখন আকাশ মেহুলের সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহুলকে বলে, “এত রাতে তুমি একা একা কোথায় যাচ্ছ? এভাবে একা যাওয়া নিরাপদ নয়। চলো আমিও যাবো তোমার সাথে।”

অন্তর চৌধুরী আকাশকে বাধা দিয়ে বলে, “আমাকে কি বোকা ভেবেছ তোমরা? আকাশকে আমার চোখের সামনে থেকে কোথাও যেতে দেব না। এখন তোমরা রায়ানকে খোঁজার নাম করে পালিয়ে যাবে তাই তো। এমনটা আমি হতে দিবো না।”

আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশিক বলে, “ঠিক আছে তুই থাক ভাইয়া। আমি ভাবির সাথে যাচ্ছি।”

মেহুল আপত্তি করে বলে, “কাউকে আমার সাথে যেতে হবে না। তোমরা কেউ চিন্তা করো না। আমি নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারব। রায়ানকেও আমি ফিরিয়ে আনব।”

কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না মেহুল। এক ছুটে বাড়ির বাইরে চলে গেল। আমিনা আক্তার বললেন, “এসব কি হচ্ছে আমাদের বাড়িতে। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। আমি কোথায় ভেবেছিলাম আমাদের সংসারে সুখ শান্তি আবার ফিরে আসবে। তা না উলটে আরো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সবকিছু হয়েছে ঐ অন্তরার জন্য। নিজে তো আমার সোনার সংসারটাকে জ্বা*লিয়ে দিয়ে গেছেই৷ যাওয়ার আগে নিজের বাচ্চাটাকে রেখে গেছে আমাদের জন্য নতুন নতুন বিপদ তৈরি করার জন্য।”

❤️
মেহুল রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে। একটা ট্যাক্সি দেখে থামতে বলে। ট্যাক্সিতে উঠে ড্রাইভারকে বলে, “তাড়াতাড়ি আমাকে *** ঠিকানায় নিয়ে চলুন।”

ট্যাক্সি ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করে। মেহুলের মনে তখন ঝড় বয়ে যেতে থাকে। মেহুল তখন চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, “আল্লাহ তুমি আমাকে শক্তি দাও। আমি যেন আজ রায়ানকে উদ্ধার করতে পারি। ছোট মাসুম বাচ্চাটার যে কোন দোষ নেই৷ ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়।”

এভাবে সারা রাস্তা প্রার্থনা করেই অতিবাহিত হয়। তারপর মেহুল তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। একটা পরিত্যক্ত গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়ায় মেহুল। কারণ তাকে এখানেই আসতে বলা হয়েছে।

আশেপাশে কাউকে না দেখে মেহুলের অস্বাভাবিক লাগে। সে আপনমনে বিড়বিড় করে বলে, “এখানেই তো আসতে বলা হয়েছিল আমায়। কিন্তু এখানে তো কাউকেই দেখছি না।”

এমন সময় কেউ একজন এসে মেহুলের মাথায় বন্দুক তাক করে। ভয়ে মেহুলের অন্তরাত্মা কেপে ওঠে।

#চলবে