#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৬
ঘুমের কারণে চোখ ঠিকমতো মে*ল*তে পারছে না আরশি। ঢু*লু ঢু*লু পায়ে চোখ ড*লতে ড*লতে রুম থেকে বের হলো সে। এমন সময় কারোর সাথে জো*রে*শো*রে ধা*ক্কা লেগে ফ্লোরে পড়ে গেলো আরশি। ব্য*থা*য় চোখ মুখ কুঁ*চ*কে গেলো তার। কারোর হাসির শব্দে চোখ মে*লে সামনে তাকালো সে। দেখলো আবরার হাসছে। হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে এসেছে আবরারের। কপাল কুঁ*চ*কালো আরশি। সারারাত এক ফোঁটা ও ঘুমাতে পারে নি সে। তারা চার বান্ধুবী এক রুমেই ঘুমিয়েছিল। আরশি ঘুমিয়েছিল কর্নারে। তিন বান্ধুবী ঘুমের মাঝে তাকে এমন ঠে*লা দিয়েছে যে আরেকটু হলে বেড থেকেই পড়ে যেতে। বেড থেকে পড়ে যাওয়ার ভ*য়ে আর ঘুমায় নি আরশি। উঠে বেলকনি তে গিয়ে বসে ছিলো। আর সেই এখন আবরার তাকে ধা*ক্কা দিয়ে ফে*লে তো দিলোই আবার হাসছেও। আরশি ফ্লোরে বসে থেকেই ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,
— এতো হাসার কি হলো? একে তো ধা*ক্কা দিয়ে ফে*লে দিয়েছেন আর এখন হাহা হিহি করছেন।
আবরার হাসি থামিয়ে নিজের হাত টা আরশির দিকে বাড়িয়ে দিলো। বললো,
— আগে ফ্লোর থেকে ওঠো। অনেক ঠান্ডা ফ্লোর। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
আরশি মুখ বাঁ*কা*লো। আবরারের হাত ধরবে কি ধরবে না করতে করতে শেষমেষ ধরলো। আবরার এক টা*নে উঠিয়ে আনলো আরশি কে। বেশ জো*রে টা*ন দেয়ায় আরশি আবরারের একেবারে নিকটে চলে আসলো। আরশির এক হাত এখনো আবরারের হাতের মাঝে ব*ন্দি। আরশি তাকালো আবরারের চোখের দিকে। দেখলো লোকটা গভীর ভাবে তার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করছে। আরশি আবরারের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো আসলে আবরার কি দেখছে। হঠাৎ করে আরশির মুখে আলতো করে ফুঁ দিলো আবরার। চোখ বন্ধ করে ফে*ল*লো আরশি। আবরার আরশির দিকে আরও একটু ঝুঁ*কে ফিসফিস করে বললো,
— তোমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে জানো? মনে হচ্ছে নে*শা করেছো তুমি। নে*শা করে মা*তা*ল হয়ে ঢু*লছো। এই যে তোমার লাল লাল, ফো*লা ফো*লা চোখ? এই চোখ জোড়া কতো টা নে*শা*লো লাগছে তা জানো?
আবরারের কথাগুলো কানে যাওয়া মাত্র চোখ খুলে ফে*ল*লো আরশি। চোখ বড় বড় করে তাকালো আবরারের দিকে। দেখলো আবরার কেমন নে*শা*লো দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন চাহনি দেখে সারা শরীরে মৃদু ক*ম্প*ন সৃষ্টি হলো আরশির। ভাবতে লাগলো,
— লোক টা এভাবে কেনো তাকায় আমার দিকে? এভাবে তাকালে যে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কিছু তো একটা আছে লোকটার দৃষ্টিতে, যা আমার মাঝে ক*ম্প*ন সৃষ্টি করে। আচ্ছা সে কি নিজের চাহনি দ্বারা আমাকে কিছু বোঝাতে চায়? কিন্তু আমি তার চাহনি তে যা অনুভব করি তা কি আদোও সম্ভব?
আরশির ভাবনার মাঝে আবরার আরশির চোখে চোখ রেখে বললো,
— নিজে মা*তা*ল হয়েছো ভালো কথা কিন্তু অন্য কাউকে এই রূপ দেখিয়ে মা*তা*ল করে কি ঠিক কাজ করলে? এখন যদি সে কোনো ভু*ল করে ফে*লে? কতো ক*ষ্টে সে নিজেকে নি*য়*ন্ত্রণ করে জানো?
চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরশি। আবরারের কথা গুলো মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে তার। আরশি চোখ মুখ গম্ভীর করে বললো,
— আপনি যে কা*না, তা*র*ছি*ড়া তা কি জানেন? আমি নাহয় মা*তা*ল হয়ে ঢুলছিলাম কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কেনো ধা*ক্কা দিলেন? ধা*ক্কা দিয়ে আমাকে ফে*লে দিলেন, ব্য*থা দিলেন, আবার হাসলেন আর এখন কিসব গাঁ*জা*খু*রি কথা বলছেন। আচ্ছা আপনার মতো পা*গ*ল, তা*র*ছি*ড়া লোক এমপি কিভাবে হলো আমাকে একটু বলেন? হাউ এটা পসিবল হইলো? আপনাকে এমপি কে বানালো তাকে আমি একটু দেখতে চাই।
আবরার রা*গ করলো না আরশির কথায়। বাঁ*কা হাসলো। ভ*ড়*কে গেলো আরশি। সে বোঝে না এই লোকের মাথায় আসলে কখন কি চলে। আবরার ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বললো,
— আগেরবার কা*না বলায় শা*স্তি স্বরূপ ক’বার যেনো কি*ড*ন্যা*প করিয়েছিলাম?
থ*ত*মত খেলো আরশি। সে তো প্রায় ভু*লেই গিয়েছিলো এই লোকের কর্মকান্ড। আরশির রিঅ্যাকশন দেখে বেশ মজা পেলো আবরার। স্লো ভয়েসে বললো,
— আগের বার তো শুধু কিছু সময়ের জন্য কি*ড*ন্যাপ করিয়েছিলাম। এবার যদি সারাজীবনের জন্য তোমাকে আমার কাছে ব*ন্দি করে রাখি?
মুখ বাঁ*কা*লো আরশি। ব্যা*ঙ্গ করে বললো,
— আমার কাছে ব*ন্দি করে রাখি? বললেই হলো? মনে হয় আপনি ব*ন্দি করে রাখবেন আর আমিও থেকে যাবো হুহ।
হাসলো আবরার। বললো,
— সেটা সময় বলে দিবে। এবার বলো এই ভোর সকালে কোথায় যাচ্ছিলে?
আবরারের প্রশ্নে চোখে মুখে একরাশ চ*ঞ্চ*লতা ভ*র করলো আরশির। চ*ঞ্চ*ল কণ্ঠে বললো,
— বেলকনি থেকে দেখেছি নিচের বাগান। বাগানে অন্নেক অন্নেক ফুল হয়েছে। ওগুলো সামনাসামনি দেখার লো*ভ সামলাতে পারলাম না। তাই তো বেড়িয়েছি ওগুলো সামনাসামনি দেখার জন্য, একটু ছোয়ার জন্য, ঘ্রাণ নেয়ার জন্য।
আরশির বাচ্চামি দেখে আবরার বুঝলো আরশির হয়তো বাগান, ফুল অনেক পছন্দ। সে মজা করে বললো,
— তুমি জানো ওই বাগানের মালিক কে? সে যদি তোমাকে ওখানে যাওয়ার অনুমতি না দেয়, তোমাকে ফুল ছোয়ার অনুমতি না দেয়?
মুখ টা অ*ন্ধ*কার হয়ে গেলো আরশির। সে তো খুব করে চায় ফুলগুলো কে ছুঁয়ে দিতে। আবরার আরশির ম*লি*ন মুখ টা দেখে বললো,
— থাক থাক কাঁ*দা লাগবে না। তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। বাগান টা আমার বুঝলে মেয়ে? আমার অনেক শখের তৈরি বাগান। আর আমার দি*ল আবার অনেক বড়, মায়া দ*য়ায় ভর্তি। কিছু কিছু মানুষের ম*লি*ন মুখ স*হ্য হয় না। তাই যাওয়ার পারমিশন দিলাম। তবে বেশি ফুল ছি*ড়*বে না।
চোখ মুখ খুশিতে ঝ*ল*ম*ল করে উঠলো আরশির। দৌড় দিয়ে নিচে চলে গেলো। আবরার নিজের এ*লো*মে*লো চুলের মাঝে হাত চা*লি*য়ে আরশির পিছু নিলো।
বাগানে এসে আরশির মনে হলো সে খুশিতে পা*গ*ল হয়ে যাবে। এতো এতো ফুল? আগেরদিন রাতের বেলা আসায় অ*স্পষ্ট দেখেছে সে। বাহারি বাহারি রঙিন ফুল, ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পা*গ*ল করে তু*ল*ছে আরশি কে। সে উৎফুল্ল মনে বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর ফুলগুলো স্পর্শ করছে। কখনো বা ফুল ছিঁ*ড়ে কানে গু*জ*ছে। এই মুহূর্তে আরশি কে দেখে মনে হচ্ছে সে এক অন্য আরশি। যার মাঝে বাচ্চামি, চ*ঞ্চ*লতায় ভ*রা। এসবের তা*লে আরশির দীঘল কালো কেশ কখন মু*ক্ত হয়ে গেছে তাও টে*র পায় নি আরশি। মৃদু বাতাসে তার উন্মুক্ত কেশ দু*ল*ছে। আর এইসব কিছু মুগ্ধ হয়ে দেখছে এক জোড়া চোখ। চোখের মালিক এই সুন্দর মুহূর্ত কে নিজের মস্তিষ্কে ব*ন্দি করে নিলো। তারপর ছু*ট*লো নিজ কাজে।
——
বেশ বেলা করে রুমে ফিরলো আরশি। সে কতক্ষন বাগানে ছিলো সে জানে না। তবে রোদের তে*জ আর বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার পর মানুষদের জা*গ্র*ত অবস্থায় দেখে ধারণা করে নিলো বেশ বেলা হয়েছে। সে যখন বাগানে এসেছিলো তখন কেউই জেগে ছিলো না।
আরশি ওড়নায় করে সব ধরণের ফুল একটা একটা করে নিয়ে এসেছে। রুমে প্রবেশ করে দেখলো সবাই জেগে গেছে। আহি আরশি কে দেখে প্রশ্ন করলো,
— কিরে কই ছিলি তুই? ঘুম থেকে উঠার পর তোরে দেখলাম না। আর তোর ওড়নায় কি?
আরশি ওড়নার ফুলগুলো বেডের উপর ছ*ড়ি*য়ে দিলো। বললো,
— তোরা আমারে যেই ঠে*লা দিসোস রাতে একটুও ঘুমাইতে পারি নাই। তাই ভোরের আলো ফু*ট*তেই বাগানে গেছিলাম। দেখ কতগুলো ফুল নিয়ে আসছি।
আহির মুখ টা হা হয়ে গেলো। সে অবাক হয়ে বললো,
— দোস্ত তুই ভাইয়ের গাছের এতগুলো ফুল ছিঁ*ড়*সোস? জলদি লু*কা ভাই দেখলে তোর হাত না ভে*ঙে দেয়। সে তো তার গাছের ফুল আমারে ছিঁ*ড়*তে দেয়া তো দূর, ধরতেও দেয় না। মাঝে মাঝে বহুত রিকোয়েস্ট করে, গলা ধরে ঝু*লে পড়ে তাকে মা*না*ইতে হয়। আর তুই কিনা এতো ফুল….
আরশি ফুলগুলো ছুঁয়ে দিতে দিতে বললো,
— কিছু বলবে না তোর ভাই। সেই পারমিশন দিয়েছে হুহ।
আহি অবাক হয়ে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই একজন কর্মী দরজা ন*ক করে জানালো ব্রেকফাস্ট করতে ডাকা হয়েছে তাদের। তাই আহি আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারলো না। মোহনা পেটে হাত বুলিয়ে বললো,
— চল ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে। ব্রেকফাস্ট করে আসি। অনেক ক্ষু*ধা লেগেছে।
আহি মোহনার মাথায় চা*টি মে*রে বললো,
— পে*টু*ক মহিলা একটা। বান্ধুবীর বাসায় আইসোস কই মা*ই*পা মা*ই*পা খাবি তা না খাওয়ার কথা শুনতেই খাইতে দৌ*ড়া*ই*তাসোস। বলি তোর কি কোনো স*র*ম নাই?
মোহনা মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো করে ফেললো। বললো,
— তুই আমারে খাওয়ার খো*টা দিলি? ওই বেডি তুই বান্ধুবী নামের ক*ল*ঙ্ক।
আহি বললো,
— চল চল আর ঢং করা লাগবে না। আমি জানি তুই দুই মিনিট পর আবার কবি ক্ষু*ধা লাগছে।
——
ব্রেকফাস্ট করতে নেমেছে সবাই। আবরার ও রেডি হয়ে নেমেছে। বাইরে যাবে হয়তো। আবরার টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টে*নে বসতে যাবে এমন সময় এক জোড়া মেয়েলি হাত পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আবরার কে।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৭
কেউ এভাবে জড়িয়ে ধরায় চো*য়া*ল শ*ক্ত হয়ে আসলো আবরারের। এক ঝ*ট*কায় হাত জোড়া ছাড়িয়ে ধা*ক্কা দিলো সে। মেয়ে টা ছি*ট*কে পড়লো আবরারের মা মিসেস বন্যার গায়ে। আবরার পিছন ফিরে দেখলো মেয়ে টা আর কেউ নয় তার একমাত্র মামাতো বোন ইশা। বি*র*ক্তি তে কপাল কুঁ*চ*কে আসলো আবরারের। অন্যদিকে আহি বিড়বিড় করে বললো,
— শা*ক*চু*ন্নির আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম। ধু*রু কিসের শুভেচ্ছা, কিসের স্বাগতম। ভাবলাম শা*ক*চু*ন্নি টা আসবে না বিয়েতে। কিন্তু ঠিকই ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে আসলো। আর আসতে না আসতেই আমার ভাইয়ের গায়ের উপর ঝাঁ*পি*য়ে পড়লো। অ*সভ্য বেডি একটা।
আহি বিড়বিড় করে বললেও আরশি, মুন, মোহনা তিনজনই শুনতে পেলো। ওদের মনে প্রশ্ন জাগলো মেয়ে টা কে? কিন্তু এটা জিজ্ঞাসা করার সময় না তাই চুপচাপ থাকলো।
মিসেস বন্যা ইশা কে জড়িয়ে ধরলেন। আবরার কে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
— এটা কি ধরণের ব্যবহার আবরার? এভাবে ধা*ক্কা দিলে কেনো মেয়েটা কে? দেখে তো নিবে পেছনে কে আছে? এখন যদি ও নিচে পড়ে যেতো তাহলে কতো ব্য*থা পেতো বুঝতে পারছো?
আবরার মাথা নিচু করে বললো,
— স*রি মা। আসলে ওভাবে জড়িয়ে ধরায় রা*গ হয়েছিল তাই ধা*ক্কা দিয়ে ফেলেছি।
ইশা মিসেস বন্যার গলা জরিয়ে ধরে বললো,
— ইটস ওকে ফুপ্পি। তুমি আবরার কে ব*কো না। ও তো না বুঝে ধা*ক্কা দিয়েছে।
মিসেস বন্যা ইশার কথায় আলতো হাসলেন। আদুরে কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
— কেমন আছো ইশা মা?
ইশা মিসেস বন্যা কে ছেড়ে হেসে বললো,
— অন্নেক ভালো আছি। আর এখন তো আরও ভালো আছি। তোমাদের সাথে দেখা যে হলো?
শেষের কথা আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো ইশা। আবরারের ভীষণ বি*র*ক্ত লাগছে। ইশার ন্যা*কা*মি স*হ্য হচ্ছে না তার। সে নিজের মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
— মা আমার জরুরী কাজ আছে। আমি যাই তাহলে?
মিসেস বন্যা বললেন,
— বাবাই নাস্তা তো করে যাও?
আবরার নিজের মায়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— বাইরে খেয়ে নিবো। তুমি চি*ন্তা করো না। নিজের খেয়াল রেখো। আসি তবে?
মিসেস বন্যা মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিলেন। মৃদু হেসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো আবরার। মায়ের সাথে কখনোই উঁচু আওয়াজে বা ক*ড়া গলায় কথা বলে না আবরার। মিসেস বন্যা একটু ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। কারোর কোনো কথায় বা কোনো কাজে ক*ষ্ট পেলেও কখনো প্রকাশ করেন না। নিজের মাঝে চে*পে রাখেন। তাই আবরার বাবার সাথে ফ্রি ভাবে কথা বললেও মায়ের সাথে খুব সাবধানে কথা বলে। আবরার চায় না তার মা তার কোনো কাজে বা কথায় ক*ষ্ট পাক।
গেটের কাছাকাছি আসতেই আবরারের দেখা হলো মামা ইরফান চৌধুরী এবং তার স্ত্রী মিসেস মনার সাথে। আবরার নিজের মামা কে জড়িয়ে ধরলো, দুজনের সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের ভেতরে যেতে বললো।
গাড়ি তে বসে আবরার আরশি কে একটা টেক্সট পাঠালো। ফোন ভাইব্রেট করতেই আরশি দেখলো আবরারের মেসেজ। তাকে বাইরে যেতে বলছে। আরশি আহি কে বুঝিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো। গেটের কাছে এসে দেখলো আবরার গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে তার জন্য। আরশি আসতেই গাড়ির ডোর খুলে দিলো আবরার। আরশি কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলো। গাড়ি নিজের বাড়ির রাস্তার দিকে যেতে দেখে অবাক হলো আরশি। কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করলো না। বাসার কাছে গাড়ি থামতেই আরশি কৌতূহল নিয়ে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— বাড়িতে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেস্ট নাও। বিকালের দিকে আবার আমাদের বাড়িতে চলে যেও।
একরাশ প্রশান্তি অনুভব করলো আরশি। সে বুঝতে পেরেছে আবরার কেনো তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। আবরার হয়তো বুঝতে পেরেছে সে সারারাত ঘুমায় নি।তাই তো লোক টা তাকে রেস্ট করতে বললো। ওখানে থাকলে সে মোটেও রেস্ট নেয়ার সুযোগ পেতো না। আরশি মৃদু হেসে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো। আবরার ও আলতো হাসলো আরশি কে হাসতে দেখে। আরশি চলে গেলো নিজের বাড়িতে আর আবরার চলে গেলো নিজ গন্তব্যে।
——-
রাতে ডিনার করতে বসেছে সবাই। আরশি ও চলে এসেছে আহিদের বাসায়। আজ আহির মেহেদী অনুষ্ঠান। ডিনার করার পর সবাই ছাদে যাবে। সেখানেই মেহেদীর অনুষ্ঠান, নাচ, গান হবে।
— আমি চাই কাল আহির সাথে আবরারের ও বিয়ে হোক।
সবাই খাবার খাওয়াতে মনোযোগী ছিলো এমন সময় মিসেস বন্যার কথায় ইরফান চৌধুরীর পরিবার ছাড়া বাকি সবার মাথায় যেনো বা*জ পড়লো। সবাই চোখ বড় বড় করে তাকালো মিসেস বন্যার দিকে। মিসেস বন্যা পুনরায় বললেন,
— হ্যা আমি চাই আবরারের সাথে ইশার বিয়ে দিতে। আর সেটা কালকেই। আপাতত কাবিন টা করিয়ে রাখবো। পরে অনুষ্ঠান করে ঘরে তু*ল*বো ইশা কে।
মিস্টার আব্বাস বললেন,
— এসব তুমি কি বলছো বন্যা? হুট করে এমন একটা ডিসিশন নেয়ার মানে টা কি? আবরারের ও তো পছন্দ অ*পছন্দ থাকতে পারে তাই না?
মিসেস বন্যা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
— এটা আমার হুট করে নেয়া ডিসিশন না। মাস খানেক আগেই ইরফান আমাকে এই প্রস্তাব টা দিয়েছে। আমারও ভালো লেগেছে প্রস্তাব টা। আর আবরারের পছন্দ থাকলে তো এতদিনে বিয়ে টা করেই নিতো। বয়স তো কম হলো না। ইশা ও আবরার কে ভালোবাসে। আমি চাই ওদের বিয়ে টা হোক।
চো*য়া*ল শ*ক্ত করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আবরার। রা*গে শরীর কাঁ*প*ছে। তাই হাত মু*ষ্টি*ব*দ্ধ করে রেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে। আর চুপ থাকতে পারলো না আবরার। মাথা নিচু রেখেই শ*ক্ত কণ্ঠে বললো,
— আমি বিয়ে টা করতে পারবো না। আমি একজন কে ভালোবাসি।
মুখ টা অ*ন্ধ*কার হয়ে গেলো ইশার। মিসেস বন্যা কণ্ঠে ক*ঠো*রতা মিশিয়ে বললেন,
— বিয়ে টা না করার জন্য এসব বাহানা করছো আমি জানি। আগেও পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এসবের বাহানা দিয়েছো তুমি। আমিও কিছু বলি নি তোমাকে। অনেক সময় দিয়েছি। যদি তোমার কাউকে পছন্দ হয় সেজন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু এখন তোমার বয়স বাড়ছে। আর ইশার ও পর্যাপ্ত বয়স হয়েছে। আগামীকাল ই তোমাদের বিয়ে হবে এটাই আমার ফাইনাল কথা। আশা করছি তুমি আমার সিদ্ধান্ত কে অ*সম্মান করবে না।
মিসেস বন্যা খাওয়া শেষ করে টেবিল ছাড়লেন। সবাই এখনো স্ত*ব্ধ হয়ে বসে আছে। আর ইশা তো পারলে নাচে। আবরার খাবার রেখেই টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো। সোজা নিজের রুমে চলে গেলো সে। এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিস্টার আব্বাস। অন্যদিকে, মূর্তির মতো বসে আছে আরশি। বুঁকের ভেতর টা বড্ড জ্বা*লা করছে তার। আরশি কিছুক্ষন খাবার না*ড়া*চা*ড়া করে বললো আর খেতে ইচ্ছা করছে না। আহির নিজেরও খেতে ইচ্ছা করছে না। সেও খাবার শেষ না করেই আরশি কে নিয়ে উপরে চলে আসলো। ওদের চলে যেতে দেখে ওদের বাকি বন্ধুরাও চলে আসলো না খেয়েই।
নিজের রুমে ঢুকেই সর্ব শ*ক্তি দিয়ে দেয়ালে দুই তিনটা ঘু*ষি দিলো আবরার। রাগে মাথা খা*রা*প হয়ে যাচ্ছে তার। আবরার দুই হাতে নিজের চুল টে*নে ধরে বিড়বিড় করলো,
— মা ইচ্ছা করেই এমন টা করেছে। শেষ মুহূর্তে এসে বিয়ের কথা বলছে। যাতে আমি বিয়ে ভা*ঙা*র কোনো সুযোগ না পাই। কিন্তু আমিও আজওয়াদ আবরার। এতো সহজে হাল ছাড়ছি না। ওই মেয়ে কে আমি কখনোই বিয়ে করবো না। ইম্পসিবল। কতো সুন্দর একটা প্ল্যান বানিয়েছিলাম। মায়ের জন্য প্ল্যান টা ফ্ল*প হয়ে গেলো। হোক ফ্ল*প কিন্তু ওই মেয়ে কে আমি বিয়ে করবো না মানে না। কিন্তু কি করবো আমি? রাত পো*হা*লেই কাল বিয়ে। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে আমাকে। কিছু একটা ভাবতে হবে। যাতে মা আমাকে ভু*ল না বুঝে আর ওই মেয়েকেও আমার বিয়ে করা না লাগে।
কিছুক্ষন ভাবতেই কিছু একটা মাথায় আসলো আবরারের। বাঁ*কা হাসলো সে। বললো,
— ইশা বেবি অনেক শখ না তোমার আমাকে বিয়ে করার? এবার দেখবো কিভাবে তুমি আমাকে বিয়ে করো।
আবরার নিজের ফোন টা বের করে একজন কে ফোন করলো। কিছু একটা বলে কল কে*টে দক্ষ হাতে ফোন টা ঘো*রা*তে লাগলো। আর বলতে লাগলো,
— ভালোয় ভালোয় প্রথম প্ল্যান কাজ করে গেলে হয়। নাহলে প্ল্যান নাম্বার দুই এ যেতে হবে।
——–
রুমে এসে অনবরত পা*য়ে*চা*রী করছে আহি। ওকে এভাবে অ*স্থি*র হতে দেখে মোহনা বললো,
— কিরে তোর কি হইলো? এমন করোস কেন?
আহি থেমে গিয়ে ক্রো*ধের সাথে বললো,
— মা এমন টা কি করে করতে পারে? ওই ইশা আপু একদম ভালো না। ক্যা*রে*ক্টা*রলেস মেয়ে একটা। সে ইন্টার পর্যন্ত বাংলাদেশে পড়েছে। এর মধ্যেই কতো শত প্রেম করেছে হিসাব নেই। আমিই তাকে অসংখ্য বার বিভিন্ন ছেলেদের সাথে দেখেছি। কিন্তু সেটা তার পার্সোনাল ব্যাপার বলে মাথা ঘা*মা*ই নি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ভু*ল করেছি। আমার উচিত ছিলো তার পিক তু*লে সবাই কে দেখানো। সে ভাইয়া কে ভালোবাসার নাটক করে। ভাইয়া কে ভালোবাসে বলে আর অন্যদিকে একাধিক ছেলের সাথে রিলেসন করেছে। কি করা যায় এখন? আমার এতো ভালো ভাইয়ের গলায় ওই মেয়ে কে ঝু*ল*তে দেয়া যাবে না। আর মা বাবাই কে কি দো*ষ দিবো। তারা তো ওর আসল রূপ টা দেখেই নি। তবে আমার মনে হয় না ভাই ওই মেয়ে কে বিয়ে করবে। কিছু না কিছু তো ও করবেই।
মোহনা আহি কে শা*ন্ত*না দিয়ে বললো,
— চি*ন্তা করিস না তুই। দেখিস আবরার ভাইয়া কিছু একটা করবে। তুই চল মেহেদী দিয়ে নে। ওই ডা*ই*নির জন্য নিজের বিয়ে কেন খা*রা*প করবি?
——-
মেহেদী দেয়া হচ্ছে আহি কে। আরশি এক কোণে চুপচাপ বসে আছে। সে আসতেই চায় নি। কিন্তু বান্ধুবীর খুশির জন্য আসতে হলো। আহির মনটাও ভালো নেই। হো*প মে*রে বসে আছে সে। ইশা ও মেহেদী দিচ্ছে। তার আনন্দ দেখে কে? এক হাতে মেহেদী দেয়া শেষ হতেই সে চি*ল্লি*য়ে বললো,
— আবরারের নাম টা তো লিখে দিন….
আরশি এক পলক চোখ তু*লে তাকালো ইশার দিকে। মেয়ে টা সুন্দর। চোখ র*ক্তি*ম বর্ণ ধারণ করলো আরশির। আরশির ধ্যা*ন ভা*ঙ*লো আবিরের কথায়। আবির বললো,
— চল একটু নাচ গান করি। দেখ এই আহি কেমন পেঁ*চা*র মতো মুখ করে বসে আছে। এই বে*ডি*র নাকি কালকে বিয়ে। চল বে*চা*রির মুড টা একটু ঠিক করে দিয়ে আসি।
সবাই সম্মতি জানিয়ে উঠে গেলো। বাধ্য হয়ে আরশিকেও উঠতে হলো। ছাদে বড় কেউ নেই। সব ছোটরা এসেছে। তাই স্বাধীনভাবে উ*ড়ে বেড়াচ্ছে সবাই। আবির গিয়ে আহি কে ঠে*লে উঠিয়ে নিয়ে আসলো। ওকে ঘিরে নাচানাচি করতে লাগলো। ওকে হাসানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আরশির কেনো যেনো সব অ*স*হ্য লাগছে। সে ঘুরে আবার আগের জায়গায় যাওয়ার সময় ধা*ক্কা লাগলো ইশার সাথে। ইশার দুই হাতের মেহেদী পুরোটা মা*খা*মা*খি হয়ে গেলো। রা*গে ফু*সে উঠলো ইশা। আরশি কে থা*প্প*ড় মা*রা*র জন্য হাত উঠাতেই আরশির সব বন্ধুরা এসে আরশির সামনে দাঁড়িয়ে গেলো। সবার ক*ড়া দৃষ্টি বলে দিচ্ছে আরশি কে কিছু বললে বা আ*ঘা*ত করার চেষ্টা করলে তারা ইশা কে ছেড়ে দিবে না। আহি রা*গী গলায় বললো,
— সা*ব*ধান ইশা আপু যা করতে যাচ্ছিলে তা দ্বিতীয় বার করার চি*ন্তা*ও মাথায় আনবে না। নাহলে আমার চেয়ে খা*রা*প কেউ হবে না। এই আবির সবাই কে নিয়ে নিচে আয়। সেই মেহেদী দিক এখানে। আমার যা বাকি আছে তা আমি রুমে দিবো।
আরশি নামার সময় এক পলক তাকালো ইশার দিকে। দেখলো রা*গী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে ইশা। চুপচাপ নেমে চলে আসলো আরশি।
চলবে?