#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৩৮
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
সুজানা আটকে রাখা দম হালকা করে ছেড়ে দিল। পেটের ভেতর গুড়-মুড়, গুড়-মুড় শব্দ করছে। তাকে আসতে বলেছে আর সেও চলে এল। এখন জিজ্ঞেস করছে কার বিয়ে ভাঙতে এসেছে। তাকে ইচ্ছে করে লজ্জায় ফেলছে। পাজি লোক। এদিকে সে কথামতো শাড়িটাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসেছে তা দেখেনি।
ওর সাড়াশব্দ না পেয়ে অভিক ফিসফিসিয়ে আবারও বলল,
চুপথাকা মানে হ্যা। তারমানে সত্যি বিয়ে ভাঙতে এসেছেন?
সুজানা মাথা হালকা দুলিয়ে বলল
আমি সবসময় বিয়ে ভাঙতে আসি নাকি?
আচ্ছা! তাহলে কেন আসেন?
সুজানা হালকা হালকা ফিরলো তার দিকে। মুখ বড়ই সরল তার। চোখদুটো তুলে একবার তাকিয়ে আবারও চট করে নামিয়ে বলল
আপনি বলেছেন তাই তো এসেছি।
অভিক হাসলো শুধু। কিছু তার বলার ছিল না তখন। পাশাপাশি দুটো কাজ তো করা যায় না।
কয়েক সেকেন্ড পরেই বলল,
আপনি দেরী করে এসেছেন তার পানিশ আছে। আমি কখন এসে বসে আছি আপনার কোনো ধারণা আছে?
সুজানা মাটির দিকে তাকিয়ে বলল,
আমার তো দেরী হবেই।
কেন দেরী হবে?
সুজানা চোখতুলে আবার চাইলো। আবার নামিয়ে নিল। বলল
শাড়ি পড়েছি। শাড়ি পড়তে সময় লাগে। তারপর চুল বাঁধা। তারপর…
থেমে গেল সে অভিকের দিকে তাকিয়ে। অভিক কপাল তুলে বলল
আর?
সুজানা হেসে ফেললো। অভিকও হাসলো। শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলল,
আপনাকে একটা কমপ্লিমেন্ট দিতে ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে।
সুজানা লজ্জা পেয়ে টুলের কাছাকাছি চলে গেল। দিঘীর জলে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য মাছের ডুবডুবি। সুজানা টুলের উপর একটা মাঝারি সাইজের বর্গাকার বাক্স রেপিং করা দেখতে পেল। পেছনে ফিরতেই অভিক সেটি নিতে বলল তাকে। সুজানা টুলে বসলো। বাক্সটা নেড়েচেড়ে দেখলো। বেশ ভারী। আবারও তাকালো সে অভিকের দিকে।
অভিক এসে কাঠের বানানো টুলের হেলান দেয়া অংশে হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে দাঁড়ালো। বলল
এটা আপনার জন্য। ইচ্ছে হলে খুলুন নাহলে দিঘীর জলে ভাসিয়ে দিন। ভাসিয়ে দেবেন নাকি?
সুজানা হেসে বলল
অ্যাহ, কচু। কখন বলেছি? সত্যি খুলবো?
আমি কখন থেকে মিথ্যে বলছি নিজেও বুঝতে পারছিনা। তবে করিমের আন্টির কাছে অবশ্যই মিথ্যে বলেছি।
সুজানা হাসলো। বাক্সটা খুলতে খুলতে বলল,
আম্মা আপনাকে খুঁজে বের করবেই।
তার আগেই আমি সমর্পণ করব।
সুজানা বাক্স খোলা থামিয়ে তাকালো। অভিক চোখ নিভিয়ে হেসে বলল
হুমম।
সুজানা বাক্সটা খুলতে সক্ষম হলো। খুলতেই কাগজের মোটা প্যাকেট দেখতে পেল দুটি। একটির উপর শাড়ির ছবি অন্যটির উপর চুড়ি। অভিকের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকালো। অভিক বাম কান ঢলতে ঢলতে বলল
এখন আপনি আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন না?
সুজানা হেসে ফেলল। মাঝেমাঝে এমন কথা বলে না। সে শাড়ির প্যাকেটটা খুলতে নিয়ে বলল
আপনিও লজ্জা পান জানতাম না।
আপনার সাথে মিশতে মিশতে ভাইরাসটা আমাকে ধরেছে।
সুজানা আবারও হাসলো। এত হেসেছে সে কখন নিজেই জানেনা। শাড়ির প্যাকেট খুলতেই শাড়িটা দেখা গেল। অভিকের দিকে আবারও তাকালো। অভিক ভুরু উঁচিয়ে বলল
আপনাকে লাল কালোয় ভালো মানিয়েছিল নাহিদের মেহেদীর সন্ধ্যায়। তাই কেনা।
সুজানা লজ্জা পেল কিন্তু অবাক হয়ে জানতে চাইলো,
আপনি সবকিছু পরখ করেন?
সবসময় করি। কিন্তু সত্যি বলতে ওই সময় করিনি। ওটা আপনার রাগী আন্টির মুখে শুনেছি আপুকে বলার সময়। তাই।
রাগী আন্টি মানে আপনার…
হুম। মা।
সুজানা কি বলবে খুঁজে পেল না। রাগী আন্টি তাকে দেখে!
আজকের বিকেলটা এত সুন্দর! তার জন্য এত আনন্দের। তার মাস্টারমশাই তার পাশে থাকলেই সবটা আনন্দের হয়।
সে চুড়ির বাক্সটা খুললো। বারোটা লাল চুড়ি, বারোটা কালো চুড়ি।
দেখে আবারও তাকালো। অভিক বলল
হুম আপনার জন্য।
শাড়িটা বের করুন ওখানের নীচে একটা জিনিস আছে। সুজানা চুড়িগুলো রেখে শাড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে বের করলো শাড়িটা। ভীষণ ভারী শাড়িটা। তার এত্ত এত্ত পছন্দ হয়েছে। একদম সুন্দর মানুষটির মতো।
শাড়িটা তুলতেই নীল রঙের একটা চিরকুটের দেখা পেল সেখানে। চোখ তুলে পেছনে তাকাতেই ততক্ষণে অভিক অনেক দূরে হেঁটে চলে গিয়েছে।
সে ডাকলো,
আপনি চলে যাচ্ছেন?
অভিক ফিরে তাকালো। বলল
আমি আছি।
সুজানা মনোরম হেসে সামনে ফিরে চিরকুটে মনোযোগ দিল। চিঠিটার ভাঁজে সেই হাতের স্পর্শ। সুজানার অদ্ভুত অনুভূতি হলো।
এত নতুন সে এই প্রত্যেকটা অনুভূতির কাছে।
এই শেষ বিকেলে দিঘীর পাড়ে একলা একা খুবই নির্জনে এত সুন্দর একটা চিরকুট তার হাতে তাও তার নামে লেখা। এই চিরকুট আর সেই টিস্যু প্যাকেট সে কখনোই হারাবে না। কভু নয়।
চিরকুটটা মেললো সে। ও-ই দিনের মতো লেখাগুলো এবড়োখেবড়ো নয়। সুন্দর গোছানো। দেখলেই বুঝা যায় এই চিঠিটা সেই রোদে পুড়ে খেলার মাঠের এককোণে বসা লিখা হয়নি। নীরবে নির্জনে লেখা হয়েছে। লেখার শুরুটা তার নাম দিয়ে হয়েছে।
সু—জা—না।
সাহিত্যচর্চা বেশ জোরালোভাবে করা হয়নি বলে শুরুতেই কোনো বিশেষণ যোগ করতে পারিনি। সত্যি! অনেক ভেবেছি। আপনাকে একটা প্রিয় নাম দেব। কিন্তু না। আপনাকে যখনই আমার সকাল বলে সম্বোধন করতে যাব ঠিক তখনি বিকেলটা রাগ করে বসে। আপনাকে যখন আমার অষ্টপ্রহর বলে ডাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখনি রজনী রাগ করে বসে। তারা সবাই আপনার নাম হতে চায় সুজানা।
আমি বাগানের ফুলগুলোর নাম দেব বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু আমার বাগানে তো অনেক ফুল। আমি কার নাম রেখে কার নাম বাদ দেব?
আমি অনেক অনেক অনেক ভেবেছি সুজানা। একটা নামও পেলাম না আপনার জন্য।
কিন্তু তারা আমাকে বলেছে আপনি যদি তাদের নাম হয়ে যান তাহলে সব সমস্যা সমাধান।
তারা আমার দিবারাত্রি, সকাল-সন্ধ্যা, আমার যত্নে তোলা ফুল। তারা আপনাকে চায় সুজানা। এবং ভালোবাসে। ভীষণ! সত্যি। তিনটা।
অতঃপর
আমি সেই ছাতার নীচের বৃষ্টিভেজা দ্বিপ্রহর থেকে আছি। আছি আমি এই সেগুনবাগিচায় প্রথম দেখার দিন থেকে । আপনি রাজী থাকলে প্রতিদিনের মতো আজটাও আপনার পাশাপাশি হেঁটে কাটিয়ে দিতে আমি আছি সুজানা। আপনি থাকবেন তো?
টুপটাপ শব্দে দু ফোঁটা সুখবর্ষণ হলো সুজানার চোখ থেকে।
চিরকুটটা সে পড়ে মুঠো করে বুকের সাথে জড়িয়ে চুপচাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর পেছনে ফিরতেই অভিককে দেখতে পেল। তার হাতে হাওয়ায় মিঠাই অনেকগুলো। কাছে এগিয়ে এসে সুজানার বসা টুলের পেছনের অংশে হাত রেখে ঝুঁকলো ঠিক আগের মতো।
সুজানা ভেজা গাল মুছার সময়টুকু পেল কই? হাতের উল্টো পিঠে চোখের কোণা মুছে বলল,
কিন্তু আমি শুনেছি ভালোবাসা রঙ পাল্টায় মাস্টারমশাই।
অভিক এইরূপ সম্বোধনে চমৎকার হাসলো। কপালে কপালটা আলতোকরে মিলিয়ে বলল,
পাল্টায় তো । নীল থেকে লাল।
সুজানা সেকথা শুনে ডুকরে ডুকরে উঠলো। আর অভিক হাসলো।
চলবে………
#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৩৯
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
তারপরেই কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতায় সময় ফুরোলো। চুপিসারে। বন্ধ চোখে। তাকিয়ে থাকা তাদের পক্ষে কভু সম্ভব নয়।
অন্ধকার ধীরে ধীরে তার ঝাঁপি নামিয়ে দিতে শুরু করেছে। শেষ বিকেলকে সাক্ষী রেখে দুজনেই চোখ মেলে একটুখানি হাসলো। একজনের চোখে খানিকটা জল ছিল অপরজনের চোখে সেই জল দেখার মুগ্ধতা।
ব্যস!
তারপর ফোন বেজে উঠলো। অভিক রিসিভ করে দেখলো আর কেউ না। সাজিয়া বেগম ফোন করেছেন। সে সুজানাকে ফোনের স্ক্রীন দেখালো। সুজানা গাল মুছলো দ্রুত। বলল,
আম্মা? আপনাকে কেন ফোন করেছে? জানতে পেরেছে আমি এখানে এসেছি?
উফফ!
অভিকের এমন শব্দে সুজানা থেমে গেল। অভিক বলল
এটা করিমের ফোন সুজানা। অভিক ফারদিনের নয়।
সুজানা ভাবতে সময় নিল। তারপর মৃদু হেসে উঠলো। অভিকও হাসলো। বলল
কি চালাক করিমুল্লাহ সাহেবের মেয়ে!
সুজানা এবারও হাসলো।
অভিক ফোনটা কেটে নিজ থেকে করলো। লাউড করে সালাম দিতেই সাজিয়া বেগম সালামের জবাব দিয়ে বলল
ভালো আছ বাবা?
জ্বি। আপনার শরীর ভালো আছে? মন ভালো আছে?
সাজিয়া বেগম হেসে বললেন
হ্যা হ্যা সব ভালো। সকাল থেকে ফোন দেব দেব করে দেয়া হয়ে উঠেনি। মনেও পড়েনি। এখন মনে পড়লো তাই দিলাম। বলছিলাম যে কাল আমাদের এদিকে এসো না।
অভিক বলল,
আমি?
হ্যা তুমিই তো। সাথে নিখিলদেরও নিয়ে এসো।
সুজানা মুখ চেপে ধরে হাসলো। অভিক বলল
হ্যা যাব না কেন? একেবারে বড় সাইজের ইলিশ মাছ নিয়ে যাব।
আমি কি বলেছি ইলিশ মাছ নিয়ে আসতে হবে? তোমার রুইমাছ তো এখনো খাওয়া হয়নি।
সেটা বড় কথা নয়। ইলিশ মাছ নিয়ে যাব সেটা বড় কথা।
সাজিয়া বেগম হেসে ফেললেন আওয়াজ করে। বললেন
আচ্ছা! তাহলে কাঁটা বেছে ভাতটাও খেয়ে যেও।
সেটা না খেয়ে ফিরছি না।
তাহলে তো ভালোই। বলো কবে আসবে?
অভিক সুজানার দিকে তাকালো। সুজানাও সরু চোখে উৎসুক হয়ে তাকালো। অভিক হেসে বলল
আসব। কিন্তু কবে সেটা বলব না।
এমা এটা কোনো কথা হলো? আচ্ছা যাইহোক এসো কিন্তু।
আচ্ছা।
সালাম বিনিময় শেষে ফোনটা কেটে গেল।
ফোনটা রেখে পকেটে রেখে অভিক হাসলো সুজানার সাথে।
সুজানা হেসে মাথা নামিয়ে শাড়ি, চুড়ি প্যাকেট করতে করতে বলল
একটা কথা বলব?
অভিক তার পাশে এসে বসতে বসতে বলল,
একশটা বলুন।
এগুলো আমি অন্যদিন নিয়ে যাই?
আজ নয় কেন?
আম্মাকে কি বলব?
বলবেন করিম দিয়েছে।
করিম আমাকে এসব কেন দেবে?
সেটা আবারও বুঝাতে হবে? এই ছোট্ট চিরকুটের পেছনে অনেকগুলো রাত জাগা ছিল সুজানা।
সুজানা প্যাকেটটা বুকে জড়িয়ে বলল
মজা করেছি। আমি নিয়ে যাব। এগুলো আমার।
অভিক দিঘীর জল থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে মুখ ফেরালো। সুজানা তাকে তাকাতে দেখে মাথা নামিয়ে নিল। অভিক বলল
পড়লেই তবে পুরোপুরি আপনার। আর যে পড়বে সে আমার।
রাঙা অনুভূতিরা লজ্জা দিয়ে রাঙিয়ে দিল সুজানাকে। সে আর তাকাতে পারলো না।
অভিক তাকে অমন দেখে হাসলো নিঃশব্দে।
তারপর আর কথা হলো না তাদের।
বুকের সাথে শাড়ি চুড়ি জড়িয়ে দাঁড়ালো সুজানা। চুপচাপ হেঁটে দু’জনেই পার হলো সেগুন বাগিচা।
একজনের চোখেমুখে নিদারুণ লজ্জা, এরপর কি হবে তা নিয়ে ভয়, নানান আকাশ পাতাল ভাবনা। অন্যজন এই পাশাপাশি হাঁটার ব্যাপারটা অনুভবে ব্যস্ত।
যতদূর গেল ততদূর তারা অনুভব করলো এই পথচলায় তারা দুজন দুজনের পাশাপাশি কাছাকাছি থাকলেই ভালো থাকবে। পথের ধুলো, আর ঝড়াপাতাদেরও তাতে আনন্দ। তারা উড়ে যাবে, আর মড়মড় শব্দ করে আনন্দ প্রকাশ করবে আজকের মতো।
_________________
অভিক বাড়ি ফিরেই দেখলো বসার ঘরে আড্ডা বসেছে। মাগরিবের নামাজ কালাম পড়ে সবাই চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে। অনেকগুলো গল্প তাদের জমা পড়ে আছে।
অভিককে দেখে আড্ডায় ভাটা পড়লো বৈকি তবে কিয়ৎক্ষণ পর বাচ্চাদের হৈচৈ বেড়ে গেল। অভিক দুজনের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে আদর করলো তাদের। জিনিয়া ভাইয়ের বাচ্চা ভিকিকে কোলে করে নিয়ে এসে বলল
আরেহ তোমার কথাই হচ্ছিল এখানে। ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেন? সবাই চিন্তা করছে। মামি আজ তোমাকে পেয়েছে।
অভিক ভিকিকে কোলে তুলে নিল। বলল
সে কথা পরে। বাবু হিসু করে দেবে না তো।
সবাই তার কথা শুনে হেসে উঠলো। আনিকা বলল
অনা আবিদ তো হিসু করে দেয়ার জন্য তোকে পাইনি। ভিকি তো পেয়েছে। ভিকি সোনা একটু হিসু করে দাও তো চাচ্চুকে।
অভিক হাসলো। বলল
ভয় পাচ্ছি না। হুম।
সালমা বেগম এসে বললেন
অভি এসেছিস? হ্যা রে একটু ঘুম দিচ্ছিলাম। তুই সেই সুযোগে না বলে বেরিয়ে যাবি?
আনিকা বলল
পেয়েছে তোকে। ছোটমা তোর উপর ভীষণ ক্ষেপেছে।
অভিক নিষ্পাপ চোখে তাকিয়ে বলল
মা আমি এখনো বাচ্চা আছি?
তাই বলে ফোনটাও অফ রাখবি?
ফুপু জেসমিন বেগম বললেন
বলে যেতে হয় অভি। তারউপর ফোন বন্ধ। এমনটা কেউ করে?
সরি ফুপী।
আর সরিইইই মাআআআ। ফোন অফ করাটা জরুরি ছিল। ওই সময় কোনো ঝামেলা এলাউ না।
সালমা বেগম রান্নাঘরে পা বাড়িয়ে বললেন
তুই আমার সাথে কথা বলতে আসবি না অভি। আহনাফকে বললাম সেও বলল ছোটমা অভির ফোন এখনো বন্ধ। সিজানকে বললাম সেও একই কথা বললো। নাহিদকে বললাম সেও একই কথা।
অভিক বাবুকে আদর করে আনিকার কোলে দিয়ে মায়ের পেছন পেছন ছুটলো। বলল
মা মা ফোন বন্ধ থাকলে সবাই তো এরকমই বলবে। শোনো না তোমার জন্য গুড নিউজ আছে।
তোর গুড নিউজ তোর বাপকে শোনা।
না তোমাকে শুনতে হবে।
সবাই তাদের মা ছেলের কান্ড দেখে হাসলো।
অভিক মায়ের পেছন পেছন ছুটলো। রান্নাঘরের দরজার কাছে গিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বলল
মা উঠবস করব?
কর।
অভিক উঠবস না করেই গুনতে লাগলো।
এক, দুই, তিন, চার….
সালমা বেগম ফিরে তাকাতেই অভিক সোজা হয়ে গেল। উনি ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন
কোথায় গিয়েছিলি? খুব বড় হয়ে গিয়েছিস তুই? আমি জিজ্ঞেসও করতে পারব না? আমাকে বলে যেখানে ইচ্ছে যা।
অভিক অসহায় গলায় বলল
লাইসেন্স আনতে গিয়েছিলাম মা।
সালমা বেগম কফির জন্য দুধটা চুলায় বসাতে বসাতে হঠাৎ থেমে গেলেন। ঘাড় ফিরিয়ে চোখ বড় বড় তাকালেন।
অভিক মাথা দুলিয়ে বলল,
হুমম।
সালমা বেগম কি জিজ্ঞেস করবেন ভেবে পেলেন না। অভিক বলল
আর পেয়েও গিয়েছি।
সালমা বেগম সামনে ফিরে নিঃশব্দে হেসে নিলেন ছেলের আড়ালে। বললেন
আমি ওর মাকে এখন বলতে পারি?
কি বলবে?
বলব আমার রান্নাঘরে একটা বাসন অবহেলিত পড়ে থাকে। বিশেষ আয়োজন ছাড়া খাবার টেবিলের একটা চেয়ারও।
চলবে,