ইতির সংসার পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
422

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
শেষ পর্ব

নাঈম ক্লিনিক থেকে বের হয়ে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে কিছুক্ষণ হাঁটতে থাকে। বারবার নিজের মা বোনের কৃতকর্মের জন্য নিজের উপরই রাগ হচ্ছিল। ক্লিনিকের বেডে ইতি ওর জন্য অপেক্ষায় না থাকলে হয়তো কোন দুর্ঘ/টনা ঘটিয়ে বসত। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আগে ঠিক করে নেয় পরবর্তী কাজ কোনটা জরুরি। তারপর শুরু করে বাড়িভাড়া নোটিশ দেখলেই খোঁজ নেয়া। এভাবে ২/৩ ঘন্টা ঘুরে একটা বাসা পছন্দ করে আসে, ইতিকে না দেখিয়ে ফাইনাল করেনা।

ক্লিনিকে ফিরে দেখে ইতির পাশে একজোড়া কাপল বসে। খুব চেনা চেনা লাগলেও চট করে চিনতে পারেনা। পরমুহূর্তেই মনে পড়ে এদের সাথে সামনাসামনি দেখা না হলেও ভিডিওকলে দেখা হয়েছে ও কথাও হয়েছে। এরা হল ইতির ভাই ইমন ও তার স্ত্রী মিলি। হঠাৎ ওদের দেখে অবাক হয়ে যায় নাঈম।

ইমন এসে নাঈমকে জড়িয়ে ধরে। শালা দুলাভাইয়ের মধ্যে এটাই প্রথম দেখাসাক্ষাৎ তাও এমন পরিস্থিতিতে। ইতির বিয়ের আগেই ইমন স্কলারশিপ নিয়ে ইউকে পড়তে যায়। সেখানেই পরিচয় আরেক বাঙালি মুসলিম পরিবারের মেয়ে মিলির সাথে। মিলি জন্মগত ভাবে বৃটিশ নাগরিক। ওর বাবা-মা অনেক আগে থেকেই ইউকে প্রবাসী। ওর বাবাও বগুড়ারই ছেলে।

প্রবাসে যেখানে একই দেশের মানুষ পেলেও আপন লাগে সেখানে একই জেলার ছেলে পেয়ে মিলির বাবা-মা সহজেই ইমনকে আপন করে নেন। পরবর্তীতে ইমনের আচরণ আদব আখলাক দেখে মুগ্ধ হয়ে ইমনের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে নিজের মেয়ের সাথে ইমনকে বিয়ে দেন। মিলির এবারই প্রথম শ্বশুরবাড়ি আসা কিন্তু একটা অভ্যর্থনাও সে পায়না সবাই ক্লিনিকে থাকায়।

মুরাদের মতো একজন ভদ্র ও দায়িত্বশীল ছেলে ইউকে যাওয়ায় ইতির মা খুব খুশি হয়। ইমনও একজন আত্নীয় পেয়ে যায়। যদিও থাকা হয় দূরে দূরে কিন্তু ফোনে বা অনলাইনে নিয়মিত যোগাযোগ হয়।

ইতির জ্ঞান ফিরে এলে ভাইকে দেখে প্রথমে খুশি হয়। তারপর হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। বাচ্চাদের মতো অভিযোগ করে -“ওরা আমার বাচ্চাকে মে/রে ফেলল। তুই মামা হতে পারলিনা ভাই।”

মিলি এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। বলে -“আপুনি তুমি অস্থির হইওনা, দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন কত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা বের হয়েছে। তুমি ভয় পেয়োনা, কিচ্ছু হবেনা। দরকার হলে আমি তোমাকে ইউকে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাবো ইনশাআল্লাহ।”

মিলির কথায় খানিকক্ষণ চুপ থাকে ইতি। নাঈমের উপর চোখ পড়লে আবারও কেঁদে উঠে -“আমার বাচ্চাকে ওরা মে/রে ফেলল।” নাঈম এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে -“ইতি আমি একটা বাসা দেখেছি। তুমি সুস্থ হও, আমরা সেখানে গিয়ে উঠব। আর কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবেনা। তুমি আগে সুস্থ হও।”

দুদিন পরে ইতিকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ করলে ওর মায়ের বাড়ি নিয়ে যায়। নাঈম প্রথমে রাগ করে ওদের বাসায় যেতে না চাইলে ইলিয়াস সাহেব ওকে বুঝিয়ে রাজি করান। নাঈম মায়ের সাথে কথা বলেনা কিন্তু বাসায় থাকে। প্রতিদিন একবার করে ইতির সাথে দেখা করে আসে।

একদিন রাতে, ইলিয়াস সাহেব গ্রামে গেছেন, তুলি ওর শ্বশুরবাড়িতে। নাজমা বেগম বাসায় একা। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয় নাঈমের বাসায় ফেরার সময়েই। সে ফিরে দেখে তার মা এই মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাথায় একটা ছাতা আর হাতে একটা ছাতা নিয়ে। নাঈম রিকশা থেকে নামতেই ওর দিকে ছাতা এগিয়ে দেয়। দুজনে বাসায় ঢুকে দেখে নাঈমের গা অর্ধেক ভেজা। সাথে সাথে তোয়ালে এনে ছেলের গা মুছে দেন নাজমা বেগম। এরপর গরম সরিষার তেল এনে নাঈমের বুকে পিঠে মালিশ করতে করতে নিজের মনেই বলে যান -“বাবারে কত কষ্ট করে যে তোকে মানুষ করছি সেটা যদি ভিডিও করে রাখতে পারতাম। তাহলে ভিডিও দেখে হলেও আমার উপর রাগ রাখতে পারতিনা। ৭ মাসের ইমম্যাচি না কি বলে সেই বাচ্চা হইলি তুই, চোখও ফুটেনি তখন। তুলার মধ্যে রেখে রেখে, ড্রপার দিয়ে একটু একটু করে দুধ খাওয়াইয়া তোকে বাঁচায় রাখছি বাবা। সেই তুই আজ বউয়ের কথা শুনে মাকে ভুলে যাস। তোর মা কি এতো খারাপ বাবা যে তোর সন্তানকে মেরে ফেলবে? তুলির শাশুড়ির চাপে তুলি ভয়ে কি বলতে কি বলছে আর তুই সেসব বিশ্বাস করে বসে আছিস বাপ? এই চিনলি তোর মা কে? আমার আর কিছু বলার নাই।”

চুপচাপ সব শুনে উঠে ঘরে চলে যায় নাঈম। নাজমা বেগম খাবার খেতে ডাকলে, চুপচাপ খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে। এপাশ ওপাশ করে কিন্তু ঘুম আসেনা। আজ সারাদিন বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনেছে। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। মায়ের কথা বিশ্বাস করবে নাকি অন্যদের কথা? দ্বিধায় পড়ে যায়। ইতিকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠতে চেয়ে একটা বাসায় এক মাসের ভাড়া অগ্রিম করে সেই টাকাটা পানিতে ফে/লা হল। ইতির কাছে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে কিন্তু সে একটা কথাও বলেনা, জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না। অফিসে এক কলিগ হঠাৎ করে বলে -“নাঈম ভাই, জীবন অনেক বড়। আবেগ দিয়ে চলে না। আজ আপনার কাছে মনে হচ্ছে ভাবি ছাড়া সব পর কিন্তু একটা সময় দেখবেন সবচেয়ে আপন হল মা। বউ গেলে বউ পাবেন ভাই, মা গেলে মা পাবেন না। আপনি যান, ভাবি কথা বলেনা। আপনার উপর কিসের রাগ? আপনি কি অপরাধ করছেন? জন্ম মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে। আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে আপনার সন্তান রক্ষা পেত, যে যা খুশি করুক। আমার স্ত্রী রিকশা থেকে পড়ে গেল তারপরও বাচ্চার কিছু হলনা। আপনার কপালে ইতি ভাবির সন্তান লেখা থাকলে এসব কিছুই হত না। আপসেট থাকিয়েন না আর। আমি বলি কি ভাই, ভাবি যেহেতু আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন না, উনি আর মাও হতে পারবেন না তাহলে কেন এই বন্ধন ধরে রাখা। আপনার মতো ভালো ছেলে একটা কমপ্লিট ফ্যামিলি ডিজার্ভ করে ভাই। বলা তো যায়না এবার যাকে বিয়ে করবেন তার সাথে হয়তো আপনার মায়ের সম্পর্ক ভালো হল। কে বলতে পারে।”

নাঈম রেগে যায় তার উপর। -“এসব কি বলছেন ভাই? আমি ইতিকে ভালোবাসি, অন্য কাউকে কেন বিয়ে করব?”

-“ভাবিকে বিয়ের আগে থেকেই ভালোবাসেন?”

-“কি বলেন এইসব ভাই? আমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ। বিয়ের পর থেকে ওর আচার আচরণ কথা বার্তায় ওকে ভালোবেসে ফেলি।” উত্তরে বলে নাঈম।

-“ভাই, আমি যা বলি বাস্তব বলি। যে আপনার স্ত্রী হবে তারজন্য ভালোবাসা এমনিতেই সৃষ্টি হয়ে যাবে। আপনাকে এভাবে মনমরা দেখতে ভালো লাগেনা। বিয়ে করেন ভালো থাকবেন। আমি যাই, আমার কাজ আছে। কিন্তু আপনি ভেবে দেখবেন আমি যা বললাম।”

এদিকে বাসায় ফেরার পরে মাও এভাবে বলল যে মায়ের প্রতি অবিশ্বাস কেটে গেছে। মা কি কখনো মিথ্যা বলতে পারে? কখনোই না। এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুম এসে গেছে টেরই পায়না নাঈম।

ছোট থেকেই নাজমা বেগম নাঈমের সাথে এমনভাবে কথা বলতেন বা নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেন তাতে করে নিজের সিদ্ধান্ত কিভাবে নিজে নেয়া যায় তা নাঈম শিখেনি। খুব দ্রুতই সে অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়। বউ যখন যা বলে ঠিক মনে হয়, মা যা বলে সেটাও ঠিক মনে হয়। দুইজনের কথা যাচাই করে সত্যতা বের করার মতো মানসিক শক্তি নাঈমের নাই। সারাজীবন মায়ের মনের কথার ছায়ায় থেকেছে, বিয়ের পরে ইতির মনের ছায়ায়। এখন ইতির অনুপস্থিতিতে আর নির্বাক থাকায় সে আবারও ফিরে যাচ্ছে মায়ের মনের ছায়ায়। এখন মনে হচ্ছে মাই ঠিক। উনি কখনোই নাঈমের সন্তানকে খু/ন করতে পারেন না। সব দোষ ইতির একার। মা তো মাই। নাঈমের এখন নিজের উপরেই ধিক্কার হয় কেমনে সে পেরেছিল এই মমতাময়ী মাকে ছেড়ে থাকতে?

অফিস থেকে ফিরে ইতিকে দেখতে যায় নাঈম। আগের মতোই চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ হাত ধরে পাশে বসে থাকে নাঈম। ইতির কোন ভাবান্তর হয়না। ইতিকে ক্লিনিক থেকে বাসায় আনা হলে নাঈমকেও বলেছিল ওর সাথে থাকতে কিন্তু নাঈম রাজি হয়নি। প্রতিদিন অফিস থেকে আসে, বসে থেকে রাত হলে চলে যায়। সন্তান হারিয়ে বর্তমানের মানসিক অবস্থায় ইতির প্রয়োজন ছিল নাঈমের সম্পুর্ণ সাপোর্ট কিন্তু বরাবরের মতো সে সেটা দিতে ব্যর্থ হয়। আস্তে আস্তে নাঈমের প্রতি প্রচন্ড অভিমানে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ইতি। নাঈমও চেষ্টা করেনা ওকে কথা বলানোর বা নিজেও কিছু বলেনা। মনে হয় দুজনেরই কথা ফুরিয়ে গেছে চিরতরে।

ইতির সাথে দেখা করে বাসায় ফিরতেই নাজমা বেগম নাঈমকে বলেন -“বৌকে কতদিন আর ফেলে রাখবি মায়ের বাসায় বাবা? নিয়ে আয় ওকে। তোর বউ ছাড়া বাসাটা খালি লাগছে একদম। যা কালই গিয়ে ওকে নিয়ে আয়। দেখিস এবার ওকে আমি মাথায় করে রাখব।”

নাঈম গলে যায় মায়ের কথায়। ভাবে পরদিনই গিয়ে ইতিকে নিয়ে আসব। এটা ভাবেনা যে ওর মা কখনও শুধরানোর নয়। অন্য ধাতুতে গড়া।

নাঈম আজ অফিস থেকে ফিরে ইতির মায়ের বাড়ি গিয়ে ইতিকে সাথে করে নিয়ে যেতে চায় ওদের বাসায়। ইতির রুমে গিয়ে ইতির হাত ধরে বলে -“ইতি বাসায় চল। মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। উনি আর তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবেনা বলছে আমাকে। চল উঠ, রেডি হও। ব্যাগ গুছাও। তাড়াতাড়ি কর, উঠ।”

ইতি কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকে নাঈমের মুখের দিকে। তারপর আস্তে আস্তে হাত ছাড়িয়ে নেয়। বলে -“কই যেতে বলছ তুমি? সরি নাঈম। আমি আমার সন্তান হারিয়েছি ঐ বাসায়। যাদের জন্য সন্তান হারিয়েছি তাদের মাঝে আরতো আমি ফিরে যাবোনা। কখনোই না। আমি এখানেই ভালো আছি। সন্তান হারিয়ে বুঝেছি কি কষ্ট, তাই তোমাকে কখনোই বলব না তুমি তোমার মাকে ছেড়ে আমার কাছে আসো। উনি আমার সাথে যা করছে তারজন্য তো উনাকে আমি সন্তান হারানোর সাজা দিতে পারিনা। তাহলে তো উনার সাথে আমার কোন পার্থক্য রইল না। সরি নাঈম। আমি তোমার জন্য কারো সাথে দড়ি টানাটানি খেলা খেলতে পারবোনা। তোমার মা আমার এই কয়দিনের অনুপস্থিতিতে আবারও তোমার মগজে অন্ধভাবে ঢুকে গেছেন। তুমি উনার ব্যাপারে, তুলির ব্যাপারে পুরো অন্ধ। তোমার অন্ধত্ব ঘোচাতে গিয়ে আমি হলাম সন্তানহারা। প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন মা ডাক শুনার, সেই স্বপ্ন ভেঙেচুরে গুড়া করে দিয়েছেন উনারা। তোমার অন্ধত্ব তোমাকেই মুবারক হোক। আমি তোমার সাথে কোথাও যাবোনা। সত্যি বলতে তোমার সাথে কথা বলতে আমার আর ইচ্ছে করে না। তুমি আগেও যেমন দম দেয়া পুতুল ছিলে, এখনও তাই আছ, মাঝখান থেকে তছনছ হয়ে গেল আমার জীবন। তুমি তোমার পুতুল জীবন নিয়ে ভালো থেকো। যদি কোনদিন মনে হয় তোমার স্ত্রী হিসেবে আমার প্রাপ্য সম্মান আমাকে দিতে পারবা সেদিন তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়াবা। এখন তুমি যাও নাঈম। তোমার এই পুতুল মার্কা চেহারা আমার আর সহ্য হচ্ছেনা। যাও প্লিজ। আর কখনও আসবেনা এখানে।”

কথাগুলো বলে ইতি ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরে যায়। কথা বলতে বলতে ইতি শেষের দিকে চিৎকার করে উঠে, সেটা শুনে এগিয়ে আসে ইতির মা। নাঈমের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকান। নাঈম মাথা নিচু করে ফেলে। ইতির মা এবার জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? নাঈম ভগ্নকন্ঠে জানায় -“আমি আজ ইতিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আমাদের বাসায়। কিন্তু ইতি যেতে চায়না। আমাকেও এখানে আসতে মানা করে দিল।”

-“বাবা নাঈম, আমার মেয়েটা সদ্য তার সন্তান হারিয়েছে। ওর ক্ষত এখনো টাটকা। সেখানে তুমি ভালোবাসার মলম না দিয়ে সেই ক্ষতটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছ। এটা ঠিক না বাবা।” বলেন ইতির মা।

-“আমি মানছি আমার মা ইতির সাথে ভালো ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাই বলে ইতি যা বলছে সেটাও ঠিক না। মার কাছে শুনেছি আমি। এখানে মার দোষ নেই। তুলি ওর শাশুড়ির ভয়ে কি বলতে কি বলছে ছোট মানুষ, সেটাই সবাই ধরে নিয়ে বসে আছেন। যাই হোক, ইতি যেহেতু আমাকে সহ্য করতে পারছেনা আমি যাই। কখনো যদি ওর মন ভালো হয় আমাকে ফোন দিতে বলিয়েন। আমি গেলাম।” বলেই হনহন করে বের হয়ে যায় নাঈম।

একাই বাসায় ফিরে নাঈম। খেতে বসে দেখে ওর মা ইতির প্রিয় দুইটা আইটেম রান্না করেছে। মনে মনে আরেকবার রেগে যায় ইতির উপর। অযথাই ওর মাকে ভুল বুঝে গোঁ ধরে আছে সে। নাঈমকে একা ফিরতে দেখে নাজমা বেগম ছেলের সামনে কষ্ট পাওয়ার ভান করে কিন্তু মনে মনে খুশি হয়ে যায়। হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়েছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?

পরিশিষ্ঠঃ এভাবেই নাজমা বেগম ও তুলিদের কূটচালে ভেঙে যায় ইতির সংসার গড়ার স্বপ্ন। এটা এখন ঘরে ঘরে আরো বেশি হচ্ছে। যেসব ছেলেরা মানসিক ভাবে নাবালক তাদের কখনোই বিয়ে করা উচিৎ না। মাঝখান থেকে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট। হয়তো কখনো ইতির রাগ পড়ে যাবে নাঈমের উপর থেকে, হয়তো কখনো নাঈম বুঝতে পারবে জীবনে কি হারিয়েছে, নয়তো সারাজীবনই রয়ে যাবে এভাবেই মা বোনের আঁচল ধরা। মা মানেই মহান এই ধারণা ভুল। একজন মানুষ কখনোই ভুলত্রুটির উর্ধ্বে না, এটা বুঝেই সবদিক ভারসাম্য রেখে যে পুরুষ চলতে পারে সেই পুরুষের স্ত্রীর সংসারের স্বপ্ন কখনোই ভেঙে যায় না। সবাইকে ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাসায় থেকে স্ত্রীর সাথে মানসিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা কোন সংসারের সংজ্ঞা হতে পারেনা। নাঈম যেখানে ইতির মন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি সেখানে মানসিক দুরত্ব বজায় রেখে সংসারের ঘানি টেনে যাওয়া আরো অসহনীয় হত। হয়তো ইতি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হয়তো ভুল।

সমাপ্ত।