#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_২৭
সকালের এই নির্ভেজাল পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করবে।রাতে বৃষ্টি হওয়ার দরুণ সব রাস্তা ভেজা রয়েছে।প্রকৃতি যেন নতুন করে সেজেছে।তাদের মধ্যে এসেছে সজীবতা।আলো ফোটার সাথে সাথেই মিহুরা বেরিয়ে পড়েছে।জব্বার রিক্সা চালাতে লাগল।মিহু মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখতে লাগল আরেক জন মুগ্ধ হয়ে মিহুকে দেখতে লাগল।মিহু এমনিতেও সকালেই উঠতো কিন্তু মাথার মধ্যে মানসিক চাপ থাকলে প্রকৃতির সৌন্দর্য সেখানে চোখে পড়ে না। বর্তমানে মিহুর মধ্যে কোনো চাপ নেই তাই সে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারছে।জনভানব শূণ্য রোডে রিক্সা চলছে শা শা করে।মিহু আরফানকে হাতের ইশারা করে কত গুলো পাখি দেখালো । আরফান সেদিকে তাকিয়ে বলে
-পাখি কি ভালোলাগে?
-অনেক ভালো লাগে
কিছুক্ষণ পরে রিক্সা এসে থামলো সেই জায়গায় । যেখান থেকে ওরা রিক্সায় উঠেছিল । ওদের গাড়িটাও ওখানেই ছিল । আরফান নেমে গিয়ে গাড়ি থেকে কিছু বের করল তারপর জব্বার কে দিয়ে বলল
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কালকে আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য । এইটা আমাদের থেকে ছোট্ট একটা উপহার
জব্বার জিনিস টা হাতে নিয়ে দেখে একটা কার্ড । কিন্তু কার্ডটা কিসের তা বুঝতে পারে না । তাই জিজ্ঞেস করে
-স্যার কার্ড ডা কিসের?
– আপনি আমার অফিসে গিয়ে এই কার্ডটা দেখালে আপনার যা প্রয়োজন তা তারা দিয়ে দেবে । এই যেমন ধরুন আপনার আর্জেন্ট কোনো জিনিস প্রয়োজন সেটা ঐ জায়গায় গিয়ে চাইলেই দিয়ে দেবে ।
-স্যার আমার তো এডার প্রয়োজন নাই । আমরা গরিব মানুষ , আমরাই তো প্রয়োজনের সোমায় জিনিস পামু না । আমরা যদি হেইয়ার বিপরীত হই তাইলে তো আমরা আর গরিব থাকমু না । এইডা আপনেই নিয়ে যান ।
আরফান বুঝলো জব্বার আর যতই হোক অনেক আত্ম সম্মানীয় । কারো কাছ থেকে চেয়ে খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকাটাই তার কাছে প্রিয় । আরফান মুচকি হাসলো তারপর জব্বার কে উদ্দেশ্য করে বলল
– আপনার প্রয়োজন না হলেও রেখে দেন । ওটা দিয়ে আপনার যা খুশি তাই করেন । আপনি না রাখলে আমার খুব খারাপ লাগবে । আরফানের কথায় বাধ্য হয়েই জব্বার কার্ড টি রেখে দিল।
আরফান ড্রাইভিং সিটে বসে দেখলো মিহু তার মায়ের ডায়েরির বক্স টি জড়িয়ে আছে । আরফানের দিকে তাকিয়ে বলল
– বুঝলেন আমার কেনো যেন মনে হয় মায়ের এই ডায়েরি টা আগের মতো নেই । আগে এটা ধরলেই একটা কেমন অনুভূতি আসতো কিন্তু এখন মনে কেন যেন অনুভূতি টা আসে না।
আরফান কিছু বলল না শুধু মিহুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । মিহু ঠিকই ধরেছে বক্সের ভেতরে আসল ডায়েরি টি নেই । আর যার কাছে এত বছর ধরে ডায়েরি টি ছিল সে নিশ্চয়ই ডায়েরি চিনতে ভূল করবে না! কিন্তু আরফানের মাথায় একটা বিষয় আসলো যে মিহু পরে এই বিষয় নিয়ে ভূল বুঝবে নাতো ? তারপর আবার নিজেই বলল – ও তো ডায়েরি টা পড়েই আবার মিহুর কাছে রেখে দিবে তাতে কোনো সমস্যা হবে না।
————————–
পিহু সকাল বেলা খুব লজ্জিত বোধ করল । পিহুর ভাই এসেছে আর সেটা পিহু জানতো কিন্তু তারপরেও পিহু ঘুমিয়ে গেলো । মাহিনকে বলল
-ভাইয়া তুমি রাগ করো না । আমি আসলে বুঝতে পারি নি । ঠান্ডার কারণে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই আর খেয়াল করতে পারি নি ।
– আরে না না সমস্যা নেই । আমি জানি তো তোর ও ঠান্ডায় সমস্যা আছে । এখন আমাকে যেতে হবে । আচ্ছা নীলু কোথায়?
-নীলু মেবি ঘুমিয়ে আছে । কেন কিছু বলবে?
-না মানে কালকে আমাকে সাহায্য করার জন্য একটু ধন্যবাদ জানাতাম । কিন্তু ঠিক আছে , পরে জানিয়ে দেবো । আমি এখন উঠি
বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাহিন একবার চারদিকে ব্যর্থ নজর বুলালো নীলুকে দেখতে পাওয়ার আশায় কিন্তু দেখতে পেল না তাই রওনা দিল । এদিকে লুকিয়ে নীলু সব কিছুই শুনছিল ওর খুব লজ্জা লাগে মাহিনের সামনে যেতে । কেন যেন ও মাহিনের দিকে তাকাতেই পারে না । নীলু দৌড়ে ওর রুমে গেল । তারপর বেলকনি থেকে তাকিয়ে দেখল মাহিন চলে যাচ্ছে । মাহিন কি মনে করে এদিকে তাকাতেই নীলু লুকিয়ে পড়ে । মাহিন আবার সামনে চলতে থাকে । ঠিক তখনই একটা গাড়ি মাহির পাশ দিয়ে ঢোকে । মাহিন সেদিকে না তাকিয়ে চলে যায় ।
মিহু গাড়ি থেকে নেমে চলে যায় নিজের ঘরে । আরফান মিহু নামার পরে ওর সিটের নিচ থেকে একটা বক্স বের করে । এটার মধ্যে আসল ডায়েরি টা রেখেছিল । অনেকক্ষণ বক্স এর দিকে তাকিয়ে থেকে বক্স টা খুলতেই ওর চোখ জুড়ে বিস্ময় নেমে এলো । বক্স টি ভালো করে দেখল এমন কি সারা গাড়ি ভালো করে খুঁজে দেখল কোথাও ডায়েরি টা নেই । আরফানের মাথা হ্যাং হয়ে গেল । কে নিতে পারে এই ডায়েরি ?
পিয়াস আজকে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছে কারণ ওর দেওয়া ছবি গুলো সেলেক্ট করা হয়েছে । আজকে বিডিতে বসেই একজনের সাথে সাক্ষাত করতে হবে । তার সাথে কথা বলে বিডিতেই সাতদিনের একটা প্রতিযোগিতা হবে । সেখান থেকে যে প্রথম হবে তাকে কানাডার জন্য সিলেক্ট করা হবে । সে বিডির প্রতিনিধিত্ব করবে । পিয়াস এই কথা ওর বাবাকে জানিয়ে ছিল কিন্তু তিনি সোজা না বলে দিয়েছেন । বলেছেন ওর যদি এতোই শখ থাকে তাহলে যেন ঘর থেকে বের হয়ে যায় । তার এমন অকর্মণ্যের দরকার নেই । পিয়াস সেটা শুনেই বের হয়ে গিয়েছে । কিন্তু অনেক দূরে আসার পরে পিয়াসের খেয়াল এলো ও টাকা পয়সা বলতে কিছুই আনে নি । ওর তো এখন আপাতত পাঁচ হাজার টাকা লাগবে । সেটা পাবে কোথায়? আরফানের অফিসের একটা কার্ড আছে কিন্তু আরফান ওকে সেটা খুব বড় বিপদ না হলে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে । তাই প্রথমেই আরফানের কথা বাদ । এখন হাতে আছে নেহাল আর নীলু । নীলুর কথাও বাদ কারণ নীলুর কাছে তো টাকা থাকার কথা না । তাই নেহালকে ফোন দিল ।
– হ্যাঁ পিয়াস বল ।
– ভাই আমাকে আর্জেন্ট পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে পারো ? আমার এখনি লাগবে ।
-আচ্ছা দিচ্ছি কিন্তু এখন টাকা দিয়ে কী করবি ?
– আমি বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি ।
– কিন্তু কেন?
– ফটোগ্রাফির প্রতিযোগিতার কথা বাবাকে বলেছিলাম কিন্তু তিনি না করে দিয়েছেন । আর বলেছেন যদি এতি শখ থাকে তাহলে যেন বাসা থেকে বের হয়ে যাই ।
– ঠিক আছে দিচ্ছি । কিন্তু সাবধানে থাকিস , আর ফোন দিয়ে আপডেট জানাস
-থ্যাংকস ভাই
– ধুর এই সামান্য কিছুর জন্য থ্যাংকস লাগে না । আর শোন বেস্ট অফ লাক
পিয়াস ফোনটা কেটে দিল । আনন্দে ওর চোখে পানি চিক চিক করছে । ওর এখন খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যে মা দেখো । তুমি বলেছিলে বিপদে পড়লে কেউ সাহায্য করবে না কিন্তু তোমার কথা ভুল । সব সময় মায়েরা ঠিক হয় না ।
কিন্তু সব সময় যে মায়ের কথা ভুল এটাও কিন্তু না । কারণ মায়েরা আগেই এই পরিস্থিতিতে পড়ে এসেছে । তারা তাই চায় তাদের সন্তানরা যেন এই পরিস্থিতিতে না পড়ে । কিন্তু সন্তানেরা তা বোঝে না ।
#চলবে
#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_২৮
কেটে গেছে কয়েকদিন । দুপুরের কড়া রোদে বোঝা যায় না যে গত কয়েক দিন ধরে আবহাওয়া এমন খারাপ ছিল । রোজার দিন থাকার কারণে এখন কফি শপে তেমন একটা মানুষের আমেজ নেই । যতই কেউ রোজা না রাখুক রোজার দিনে এভাবে খাওয়াটা একটা কেমন খারাপ লাগার বিষয় । তবে এই বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে একটা গরম ধোঁয়া উড়া কফি সামনে নিয়ে নীলু বসে আছে। ওর চোখে মুখে উদ্বেগ অথবা অস্থিরতা বোঝা যাচ্ছে না । খুব শান্ত ভঙ্গিতেই কফিতে এক চুমুক দিয়ে টেবিলে রেখে দিচ্ছে । আবার কতক্ষণ ঘড়িতে টাইম দেখছে ।টাইম তো হয়ে এসেছে , তার তো এখনি আসার কথা । কিন্তু এখনো না আসায় নীলু বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না।আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে অবশেষে সে এলো । এসেই নীলুর সামনের সিটে বসল । তাকে দেখে নীলু বিন্দুমাত্র অবাক হয় নি বরং নীলুকে অবাক না হতে দেখে সে অবাক হলো
-তুমি আমাকে দেখে অবাক হওনি?
– কেন অবাক হওয়ার কথা বুঝি
নীলুর এমন স্বাভাবিক ব্যবহার দেখে সে আরো অস্থির হয়ে পড়লো। নীলু তার দিকে তাকিয়ে কফিতে এক চুমুক দিয়ে তাকে বলল
-তো আপনি নাকি প্রুফ দিতে পারবেন ? সেটা কোথায় ( একটু থেমে) মিস তুলি?
-হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই দেখাবো । আর এর জন্যই তো এখানে এসেছি। তবে তার আগে কয়েকটা কথা বলি সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে শোনো
– বলুন
– মিহু আসলে আরফানকে ঠকাচ্ছে। ও আসলে তোমাকে আরফানের কাছ থেকে দূরে সরাতে চাচ্ছে । কিন্তু ও আরফানকে ভালোবাসে না । ও আমার ভাইকে ভালোবাসে । আর মাহিন ভাইও ওকে ভালোবাসে
মাহিন মিহুকে ভালোবাসে শোনার পরে নীলুর মনটা খচ করে উঠলো । চারদিকে বিষাক্ত ধোঁয়া অনুভূত হতে লাগল । হৃদপিন্ড টা অশ্বের থেকেও দ্রুত গতিতে দৌড়াতে লাগল । কিন্তু নীলু নিজেকে শান্ত রেখেছে । বাহির থেকে বোঝা যাবে না ওর ভেতরে কি ঝড় চলছে।
নীলুকে এমন চুপ থাকতে দেখে তুলি একটু বেশিই অস্থিরতা বোধ করল । এই কয়েক দিনে নীলুর সাথে কথা বলার ফলে তুলি বুঝেছিল যে নীলু হয়ত মিহুর বিরুদ্ধে তাই ও ধরা দিয়েছে । কিন্তু এখন নীলুর মৌনতা তুলিকে ভিষণ ভাবাচ্ছে । নীলু তুলি দিকে তাকিয়ে বলল
– আপনার মুখের কথায় তো আর বিশ্বাস করব না । আমি প্রুভ চাই ।
– ওকে তোমাকে দেখাচ্ছি বলে তুলি ওর ফোনে একটা ভিডিও চালু করে নীলুর চোখের সামনে ধরল । নীলু সেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে গভীর রাতে মিহু ছাদে যাচ্ছে আর তার একটু পরেই মাহিন ও ছাদে যাচ্ছে । তারপর অনেকক্ষণ পরে মাহিন নেমে আসছে আর তারপরে মিহু ।
– কি এইবার তো বিশ্বাস হলো
-সে না হয় বুঝলাম কিন্তু আপনি চাইছেন টা কি? এই যে ভাবি আর ভাইয়ের বিচ্ছেদ হোক আর তারপরে ভাবি আর মাহিন ভাই একসাথে থাকুক?
– হ্যাঁ আমি এটাই চাচ্ছি
-কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না যে মেয়েটা প্রতারণা করছে তাকে আপনি আপনার ভাইয়ের গলায় ঝুলাতে চাচ্ছেন?
– কি আর করব ভালোবাসায় তো আর প্রতারণা দাগ কাটতে পারে না । আর তাছাড়াও আমি মাহিন ভাইয়ের এই কষ্ট দেখতে পারছি না । বোন হয়ে ভাইয়ের কষ্ট কীভাবে দেখি?
– তাহলে একটা কথা ভাবুন আপনি যদি বোন হয়ে আপনার ভাইয়ের লাইফে প্রতারণা কারী একজনকে দিতে চান তাহলে আমি বোন হয়ে কীভাবে আমার ভাইয়ের ভালো থাকাটা কেড়ে নেই ?
তারপর দাঁড়িয়ে তুলির দিকে হালকা ঝুকলো । বেশ কড়া গলায় ই বললো
– আর মিস তুলি আপনি এইবার আপনার এইসব ন্যাকামো আর নাটক বন্ধ করুন । নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন আমার এমন ব্যবহার দেখে ? অবাক হওয়ার ই কথা । কারণ আমি যেমন তেমনটা কাউকে দেখাই না । আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন আমার ভাই আর ভাবির মাঝে আসার চেষ্টা করলে না, আপনার সব এমনকি জীবন শেষ । আমাকে আপনি চিনেন নি । আমি যদি আমার ভাইকে আমার ইমোশন দিয়ে সব কিছুতে রাজি করাতে পারি তাহলে তার ভালো থাকার দায়িত্ব টাও আমি নিতে পারি। বলে পেছন ফিরে চলে গেল। তুলি দাঁড়িয়ে গেল । নীলু আবার ফিরে এসে বলল
– আর নিজের লিমিটে থাকার চেষ্টা করুন । লিমিট ক্রস করলে কিন্তু তা ভালো হবে না ।বিশেষ করে একবার যেহেতু আমাকে অনুষ্ঠানে অপদস্থ করতে চেয়েছিলেন । আপনি জানেন না আমি কে ! আমি হলাম আরফান আদিত্যের বোন আফরিন নীলু ।
বলে নীলু চলে গেল । তুলি রাগে ওখানের গ্লাস জোরে আছাড় মারল । কফি শপে যে কয়েকজন লোক ছিল সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে । সবার সামনে কড়া গলায় ওকে হুমকি দিয়ে গেল আবার সেখানে বয়সে ওর চেয়ে ছোট ।
– নীলু কাজটা তুমি ভালো করলে না । ছোটদের নিজের গন্ডির মধ্যে থাকতে হয়। বড়দের গন্ডির ভেতরে প্রবেশ করার অধিকার তাদের নেই । তুমি আমাকে ইনসাল্ট করেছো । এরফল ভালো হবে না।সামনে যা হবে তার জন্য আফসোস করলেও লাভ হবে না কারণ আফসোস করার অবস্থায় তুমি থাকবে না।
‘অতি বাড় বেড়ো না ঝরে পড়ে যাবে’
____________________
আরফান আবার তার কাজে মনোনিবেশ করেছে । সে হাজার চেষ্টা করেও ডায়েরি টা উদ্ধার করতে পারেনি । বাধ্য হয়ে মিহুর দাদুকে ঘটনাটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি আবার তার কাজের জন্য কোথাও গিয়েছেন । তাই এই কয়েকদিনে মিহুর মায়ের সম্পর্কে ও কিছুই জানতে পারেনি । যে দুদিন আরফান অফিসে যেতে পারেনি সেই দুদিনে অফিসের বেহাল দশা হয়েছে । কাজ ঠিক মতো হচ্ছিল না । একে তো ফারিশ এসব বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞ না তার ওপর সব দায়িত্ব ছিল ওর ওপরে তাই সব সামলিয়ে উঠতে পারেনি ।
আরফান এখন নিজে দায়িত্ব নিয়ে একটা পারফিউম তৈরি করছে টেস্টিং এর জন্য । বেলী ফুলের ফ্রাগ্রান্স দিতেই ওর মিহুর কথা মনে পড়লো । এই বেলী ফুল একমাত্র মিহুর জন্যই সৃষ্টি ।বেলী ফুলের সুবাস একমাত্র একটি বেলী ফুলের শরীর থেকেই আসবে আর সেটা হলো আরফানের বেলী ফুল । বর্তমানে যে পারফিউম টা আরফানের হাতে আছে এইটা একমাত্র মিহুর জন্যই মনে হচ্ছে । তাই সে এটার কোনো তথ্য ই রেকর্ড রাখল না । খুব সুন্দর করে যত্ন সহকারে আরফান এই পারফিউম টা একটা স্প্রের মতো তৈরি করল । তারপর সেটা রেখে দিল একটা সুরক্ষিত জায়গায় । আরফান আগে চাচ্ছিল সব গুলো পারফিউম ই বেলী ফুলের ফ্রাগ্রান্সে হোক কিন্তু এখন সে মত পাল্টিয়ে গন্ধরাজের ফ্রাগ্রান্স সেলেক্ট করল । আরফানের হঠাৎ মত পাল্টানোয় ফারিশ অবাক হলো।
– তুই তো বেলী ফুল সব থেকে বেশি ভালোবাসো তাহলে হঠাৎ চেঞ্জ করলি কেন?
– কারণ সবাইতো আর বেলী ফুলের যোগ্য না
-মানে ?
– আই মিন সবাই তো বেলী ফুলের ঘ্রাণ পছন্দ নাও করতে পারে । তবে গন্ধরাজের ঘ্রাণ টা কম বেশী সবাই পছন্দ করে
আরফানের এমে লেইম এক্সকিউজ শুনে ফারিশ বলল
– তোর মাথাটা আসলেই গেছে । সবাই বেলী ফুল পছন্দ করবে না এটা ঠিক আছে কিন্তু সবাই গন্ধরাজ পছন্দ করবে এটা বললি কীভাবে ? তুই এখন বাসায় যা । বাকিটা আমি সামলিয়ে নেবো আর যা লাগে সেটা তুই ই ফোনে জানিয়ে দিস ।
ফারিশের কথায় সায় জানিয়ে আরফান বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল । পথিমধ্যে পিয়াসের দেখা পেলে ওকেও গাড়িতে উঠিয়ে নেয় । কিন্তু হাসি খুশি পিয়াস কে এখন দেখতে কেমন মন মরা লাগছে । একটা হাসি খুশি মানুষকে এরকম ভাবে কখনোই মানায় না । তাই আরফান জিজ্ঞেস করল
– কি ব্যাপার? এরকম মুখ গোমরা করে আছিস কেন?
আরফানের এরকম স্নেহ সূচক প্রশ্ন শুনে পিয়াস নিজেকে অতি কষ্টে কন্ট্রোল করল । ওর কান্না পেয়ে যাচ্ছিল তাই কোনো কথা বলতে পারল না । ওকে কথা বলতে না দেখে আরফান ওর কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল
– সিলেক্ট হোস নি ? থাক কোনো ব্যাপার না । সবাই সবার যোগ্যতা বোঝে না । তোর ট্যালেন্ট হয়ত তারা বুঝতে পারেনি । তুই আজকে সেলেক্ট হস নি তো কি হয়েছে? পরে দেখবি একদিন অনেক বড় ফটোগ্রাফার হয়ে গেছিস । আমার এক বন্ধু আছে বুঝেছিস ও এখন অস্ট্রেলিয়া থাকে । খুব শখ ফটোগ্রাফির কিন্তু দারিদ্র্য তার কারণে আর পরিবারের চাপে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে । তারপর যখন টাকা হয়েছে তখন ও একটা ফাউন্ডেশন করেছে । এ সম্পর্কে বেশী কিছু জানি না তবে ও দেশে আসলে তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো । আমাকে খুব ভালো চেনে । ওর নাম মনে নাই তবে আমরা ডাকতাম এ আই গামা ।
– ভাই আমি ওখানে অংশগ্রহণ ই করতে পারি নাই
– কেন !
– আজকে যে ইভেন্ট টা ছিল ঐটায় বাবার সাক্ষর লাগতো ।মানে বাবা এই খানের শর্তে রাজি হতে হবে । কিন্তু বাবাকে ফোন দিলে আমাকে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করেছে
গাড়ি এসে পিয়াস দের বাসার সামনে থামলো । কিন্তু পিয়াস বাসায় ঢুকতে চাচ্ছে না । আর দাড়োয়ান ও ঢুকতে দিচ্ছে না । পিয়াসের বাবা তখন ঘর থেকে বের হয়ে এসে বললেন
– আরফান ওকে বের হয়ে যেতে বলো , আমার কোনো ছেলে নেই ।
– চাচ্চু এভাবে বলেন না । ছেলে মেয়েরা তো একটু আধটু ভুল করবেই তাই বলে মা বাবাও কি রাগ করে থাকবে?
– ভুল কিসের ভুল ? ওকে বার বার মানা করা শর্তেও শুনেনি । এখন যেখান থেকে এসেছে সেখানে যেতে বল
আরফান অনেক বোঝানোর পরে পিয়াসের বাবা একটু নরম হলো । তারপর বললেন
– আমার ঘরে ঢুকতে হলে ওকে ঐ ক্যামেরা বাইরে রেখে আসতে হবে । আর ওয়াদা করতে হবে জীবনেও ও ঐ দিকে যেতে পারবে না । যদি আরেকবার ভুল করে তো ওকে আমি তাজ্য পুত্র করে দেবো।
পিয়াস অনেক কষ্টে তার ক্যামেরাটা আরফানের হাতে তুলে দিল । তুলে দেওয়ার মুহূর্তে ওর অক্ষিদ্বয় থেকে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া তবে একেই বলে ? যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এত কিছু করল আজ ওকে সেই সপ্নকেই দাফন দিতে হচ্ছে । সব কিছু পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতা বুঝি একেই বলে !
#চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন)