হৃদমাঝারে তুমি পর্ব-৩৫+৩৬

0
330

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩৫

– ভাইয়া এসব কি ? তোমার স্মৃতি হারায়নি ? তাহলে তুমি এমন করছ কেন ?

আরফান ভাবেনি এই সময় নীলু এসে পড়বে । এখন রাত একটা বাজে । এই সময়ে বাড়ির প্রতিটি সদস্য ঘুমে কাহিল থাকে । তাই ও আর দরজা বন্ধ করার প্রয়োজন বোধ করেনি । দরজা খোলা রেখেই কাজ করছিল । মিহুর মায়ের সম্পর্কে যে তথ্য জানতে পেরেছে সব নিয়ে একটা ফাইল তৈরি করেছে । মিহুর মায়ের ছবি আর মিহুর ছবি একদম একই রকম । তাই ছবিটা দেখে একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল । মিহুর কথা মনে করে নিজের মনের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেছিল

‘ মিহু আমি জানি তুমি এখন কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছো ? আমিও ঠিক একই রকম আছি । তোমার থেকে দূরে থাকতে আমার যে কষ্ট হচ্ছে এটা আমি কাউকেই বোঝাতে পারব না । তবে কি করব বলো ? আমি এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি কে বা কারা আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে ? ‘

তখনই নীলু এসে পড়েছে । নীলুর এমন চমকিত চাহনি আর অবাক হওয়া দেখে আরফান একটু বিব্রত হয়েছিল কিন্তু ও সিদ্ধান্ত নিল নীলুকে সব বলে দেবে ।

– নীলু তুই শান্ত হয়ে বস আমি তোকে সব বলছি

নীলুর অনেক কথা বলার থাকলেও আগে চুপ করে বেডের কাছে গিয়ে বসল । আরফান প্রথমেই জানতে চাইলো এত রাতে নীলু জেগে আছে কেন ?

– ভাইয়া তুমি কি জানো ভাবি কতটা কষ্ট পাচ্ছে? সে সারারাত জেগে তোমার সুস্থ তার জন্য তাহাজ্জুত পড়ছে । মোনাজাতে তোমার জন্য কান্না করছে । আর সেখানে তুমি তার সাথে এমন আচরণ করছো ?

– নীলু তোর মনে এমন প্রশ্ন হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার । আমি তোকে সব বলছি তবে তার আগে একটু বল তুই এতরাতে কি করছিস ?

– ভাবির কষ্ট আমি দেখতে পারছিলাম না । তাই বের হয়ে এসেছি । কিন্তু তোমার রুমে আলো দেখে কৌতুহল হয়ে এসেছি ।

– তোর ভাবি কি এখনো জেগে আছে ?

– না , আমি তাকে জোর করে ঘুমাতে বলেছি । এখন ঘুমিয়ে আছে ।

আরফান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । কোন জায়গা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না । এমন পরিস্থিতিতে পড়বে তা কখনোই বুঝতে পারেনি ।তবুও একটা বিষয় ভালো যে মিহু জানতে পারেনি ।

– নীলু তোর কি মনে হয় আমি কেন এমন করছি ?

– আমি বলব কীভাবে, তুমি জানো ।

– নীলু এখন একটু শান্ত আর ঠান্ডা মাথায় বিষয় টা ভাব । আমি জানি বিষয় টা তোর মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে । তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভাব

নীলু বিষয় টাকে সিরিয়াস ভাবে নিল । আসলেই তো আরফান তো এমনি এমনি আর এমন করবে না । নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে । তাই একটু নরম কন্ঠস্বরে বলল

– ভাইয়া তুমি কি কোনো সমস্যায় পড়েছো ? আরফানের নিরবতা নীলুকে শিওর করে দিল যে আরফান আসলেই কোনো সমস্যায় পড়েছে । কিন্তু কি এমন সমস্যা?

– নীলু এখন আমি যা বলব আগে সব শুনবি তারপরে কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে জিজ্ঞেস করবি ঠিক আছে ?

নীলু সম্মতি জানালো । আরফান মিহুর মায়ের একটা ছবি নীলুর হাতে দিল । নীলু ছবিটার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে আছে

– আমি জানি তুই কি বলতে চাইছিস ? এত মিল কি করে হয় তাইতো ?

– হুম

– আচ্ছা একটা কথা বলতো তোর ভাবি কি তার মায়ের সম্পর্কে কিছু বলেছে তোকে ?

– বলেছিল জন্মের সময় নাকি তার মা মারা গিয়েছে যার কারণে সবাই তাকে বলত সে নাকি তার মাকে মেরেছে । আর তার দাদুই নাকি একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা ভাবিকে আগলে রেখেছে

আরফান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল – এসবের কিছুই সত্যি না । সব মিথ্যা

– ভাবি আমাকে মিথ্যা বলবে কেন ?

– কারণ তোর ভাবিও এটাই জেনে এসেছে । আর একটা কথা এখন যা কিছু বলব কেউ যেন বিষয় টা জানতে না পারে ঠিক আছে ? বিশেষ করে তোর ভাবি যেন এই বিষয়ে না জানে

– ঠিক আছে

– শোন মিহুর মা ওদের জন্মের কারণে মারা যায় নি । তাকে ষড়যন্ত্র করে মারা হয়েছে। মিহুর নানা ছিল তাদের গ্রামের এক বিশিষ্ট মানুষ । অনেক জায়গায় জমি আর সুনাম ছিল । মিহুর মায়ের নাম প্রিয়ন্তি । তার একজন ফুফু ছিল একদম তার মতোই দেখতে । আর প্রিয়ন্তির একজন ছোট চাচা ছিল যিনি এখানে এসে পড়াশোনা করেছেন আর ব্যবসাও করেছেন । আর সেই চাচাই হচ্ছে মিহুর দাদু ।

আমি এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি সেটা হলো মিহুর দাদুর কোনো অনৈতিক ব্যবসা বা কার্যালাপ আছে যেটা সম্পর্কে কেউ জানে না । সম্ভবত মিহুর মা এই সম্পর্কে জেনে গিয়েছিল তাই তাকে মেরে ফেলেছেন । আর আমার মনে হয় মিহুর পরিবারের অনেকেই এই বিষয় সম্পর্কে অবগত আছে ।

-কিন্তু ভাইয়া তুমি এসব জানলে কীভাবে ?

এরপর আরফান নীলুকে মিহুর মায়ের ডায়েরি সম্পর্কে সব বলেছে । নীলু চিন্তিত হয়ে বলল

– কিন্তু ভাইয়া ডায়েরি টা তো উধাও হতে পারে না । আমার মনে হয় ডায়েরি টা ভাবির দাদুই সরিয়েছেন ।

– আমার ও তাই মনে হয়

– ভাইয়া আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে । আমি ভাবির বাবার বাসায় গিয়ে দাদুর রুমে তল্লাশি চালাতে পারি

– তুই যাবি কীভাবে ? আর তাছাড়া ও তিনি ডায়েরি নিয়ে থাকলেও ডায়েরি তো আর যেখানে সেখানে থাকবে না ।

– তবুও আমি একবার খোজ করে দেখতে পারি । ডায়েরি না পাই কিছু তথ্য তো পেতে পারি ?

– না নীলু । তোর এসবের কোনো দরকার নেই । তুই এসব জেনে ফেলেছো এটাই অনেক । আর শুধু শুধু বিপদের মুখে পড়তে যাবি কেন ? মিহুর দাদুকে যা বুঝলাম একজন ভয়ংকর মানুষ । তিনি চাইবেন আমার ক্ষতি করতে । তাই আমি চাইনা তুই ইচ্ছা করে ওখানে যাস ।

– আচ্ছা ঠিক আছে । তবে ভাইয়া তুমি এই অভিনয় টা করছো কেন আমি সেটা বুঝতে পারছি না ।

– তিনটা কারণ । এক মিহুর দাদুর কথার স্বীকারোক্তি । তার কথার রেকর্ডিং আমার কাছে আছে । দুই আমার আরেকজন শত্রু সম্পর্কে আমি ধারণা করছি । তবে তাকে দিয়ে আমি এটা আশা করি না । তিন মিহুর যাতে ক্ষতি না হয় আর মিহু যাতে এই সম্পর্কে কিছু না জানতে পারে ।

————

সময় বহমান । কারো জন্য কখনো অপেক্ষা করে না । সবার জীবনেই সময় গুলো অতি ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র কিন্তু সেগুলো মিলিয়ে ফেললে একটা অনেক বড় সময় পাওয়া যাবে । আরফানের কম্পানির পারফিউম টা ওখানের মধ্যে সেরা হয়েছে । বাজারে এখন পারফিউমের চাহিদা আকাশ চুম্বী । আরফান ওর কেবিনে বসে কম্পানির গ্রোথ দেখছিল । তখন ওর কাছে একটা নোটিশ আসে । নোটিশে লেখা

‘ আমি আরফান আদিত্য ডবল এ ফারিশের কাছে হস্তান্তর করলাম । ডবল এ এর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই । কম্পানির সব কিছুর দায়িত্ব এখন ফারিশের । এমনকি আমি আর কখনোই এখানে আসতে পারব না । ‘

উপরোক্ত স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরফান আদিত্য আজকে থেকে এই কম্পানি থেকে সরে যেতে বলা হলো । আর ফারিশকে এই কম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হলো ।

– শুভ বিদায় বন্ধু । আবার পরে দেখা হবে । এখন থেকে এই কম্পানির দায়িত্ব আমার । তুই আজকে যত খুশি তত কম্পানি টা দেখে রাখ । কারণ এরপর থেকে আর কখনোই এখানে আসতে পারবি না

আরফান আগে থেকেই সন্দেহ করেছিল । কিন্তু ফারিশ ওকে এইভাবে ধোকা দেবে কখনোই ভাবতে পারেনি । শান্ত ভঙ্গিতে বলল

– এরকম টা কেন করলি ?

– আমি কৈ করলাম । তুই নিজেই তো সাক্ষর দিলি । তোর অনক কিছুই মনে নেই । তুই তখন আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিস । ভালো করে দেখ তুই সাক্ষর দিয়েছিস ।

– তোকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম । কিন্তু বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলি তুই ? তবে একটা কথা মনে রাখিস সত্যের জয় সব সময় হয় । একদিন তুই আমার কাছে আসবি কিন্তু সেদিন আমি তোকে এইদিনের কথা মনে করিয়ে দেবো

– ইন ইউর ড্রিম

# চলবে

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩৬

সবাই তোড়জোড় করে সবকিছু গুছাচ্ছে । প্রথমে যাওয়া হবে মিহুদের বাসায় । তারপর রাতে রওনা হয়ে বিদিশা দের বাসায় যাওয়া হবে । ঐখানে ঈদ কাটানোর প্লান করা হয়েছে । সব কিছু গুছিয়ে নীলু মিহুর কাছে গিয়ে বলল

– ভাবি ভাইয়া কি যাবে ?

– উনি যাবেন কীভাবে? উনি তো বললেন ওনার নাকি অফিসে কি সমস্যা হয়েছে । তাই যেতে পারবেন না । কিন্তু ঈদের দিন নাকি যেতে পারেন

– তাহলে কী এখন তুমি ভাইয়া কে ছাড়া যেতে চাচ্ছো ?

মিহু মুখটা কালো করে বলল – এখন আমি কি করতে পারি ? ওনার তো কিছুই মনে নেই

মিহুর চোখ ছলছল করছে । নীলু মিহুকে রেখে আরফানের রুমে গেল । আরফান ল্যাপটপ এ কিছু একটা দেখছিল । নীলু রুমে গিয়েই আরফানকে টেনে ছাদে নিয়ে গেল

– ভাইয়া তোমার কি হয়েছে আমাকে বলবে ? কালকে থেকে দেখছি তোমার মুড ভালো নেই । আর এখন তুমি আমাদের সাথেও যাচ্ছো না

– নীলু ফারিশ আমাকে ধোঁকা দিয়েছে ।

নীলু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে । ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ফারিশ আরফানকে ধোঁকা দেবে

– ভাইয়া আমার বিশ্বাস হচ্ছে না । ফারিশ ভাই এমন কেন করবে ?

– আমি জানিনা । ও আমার থেকে কম্পানি ছিনিয়ে নিয়েছে ।

– তারমানে তোমার সেই শত্রু ফারিশ ভাই ছিল ?

– হ্যাঁ

– ওয়াও । গ্রেট । একটা দিকে ভালো হয়েছে যে এখন আর ভাবিকে নিয়ে টেনশন করা লাগবে না । কারণ ফারিশ ভাই যা চেয়েছেন তা পেয়ে গেছেন । এখন নিশ্চয়ই ভাবির আর কষ্ট পাওয়া লাগবে না । তুমি এখন ভাবিকে সব জানাতে পারো

– হ্যাঁ সে বিষয়ে ও আমি চিন্তা করেছি । কিন্তু কীভাবে কি করব বুঝতে পারছি না । আর তাছাড়া ও মিহু তো তোদের সাথে যাচ্ছে ।

– সেটা নিয়ে টেনশন করো না । আমি ভাবিকে কিছু একটা বলে বাসায় পাঠিয়ে দেবো । বিদিশাদের ওখানে যাওয়া লাগবে না ।

– ঠিক আছে ।

আরফান স্বাভাবিক কথাবার্তা বললেও ওকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে । নীলু সেটা দেখে আরফানের হাত ধরে বলল

– ভাইয়া তুমি এত টেনশন করো না । তুমি চাইলে ওরকম হাজার কম্পানি তৈরি করতে পারবে । তুমি একবার নিজেই মনে করো তো তুমি কীভাবে ঐ কম্পানি তৈরি করেছিলে? সেই সময় তোমার পাশে কেউ ছিল না । কিন্তু এখন আমরা সবাই আছি

– নীলু এই কথাটা প্লিজ কাউকে বলিস না । আমি শুনেছি ফারিশ ওর নামে আরো তিনটা পারফিউম বাজারে নামিয়েছে আর সেটাও ভালো রেসপন্স পাচ্ছে । ফারিশের ব্যপারটা পড়ে দেখছি । কিন্তু তুই কাউকে এই কথা বলবি না

– ঠিক আছে ।

– তবে ঐ বাসায় গেলে একটু সাবধানে থাকবি । আর তুই নিজে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাবি না । খবরদার বলে দিলাম ।

নীলূ নিজের মাথা নাড়ালো । কিন্তু ও আরফানের কথায় সম্মতি জানিয়েছে না অসম্মতি তা বোঝা গেল না ।

——————-

সব আত্মীয় স্বজন মিহুদের বাসায় অপেক্ষা করছে । রাতে সবাই মিলে বিদিশাদের বাসায় যাবে । কিন্তু কি জন্য যাবে তা কেউ ই ভাবতে পারছে না । নীলু এ বাসায় আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছে মাহিন ওকে এড়িয়ে চলছে । কিন্তু কি কারণে এটা করছে সেটা বুঝতে পারছে না । যেহেতু ঘর ভর্তি মেহমান তাই সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে । রেবেকাও তুলির মায়ের সাথে কাজ এগিয়ে দিচ্ছে । তখন কেউ একজন তুলির মাকে বলে

– এই কি পিহু আর তুলির শ্বাশুড়ি ?

তুলির মা একটু রেবেকাকে অপদস্থ করতে টিটকারী মেরে বলল

– না আপা , মিহু আর পিহুর শ্বাশুড়ি । বেয়াইন তো কথা দিয়েছিলেন যে আমার মেয়েকে বাড়ির বৌ বানাবে কিন্তু সেটা মনে হয় উনি মিহুর রুপ দেখে গলে গেলেন ।

– আমাদের তুলি কম কিসে ?

– সেটাই তো । যাক যারা ভালো জিনিসের কদর বুঝে না তাদের এসব বলে লাভ নেই ।

রেবেকার কানে কথাগুলো এসেছে । তিনি সবার জন্য শরবত বানাচ্ছিলেন । মুচকি হাসি দিয়ে বললেন

– আসলেই তো বেয়াইন ভালো জিনিসের কদর বুঝলেন না । মিহু তো কত গুণি মেয়ে । রান্না বান্না আর ঘরের কাজে তো মিহু বলতে গেলে পারদর্শী । তা মাহিনের জন্যই তো মিহুকে রাখতে পারতেন ।

তুলির মা মুখ বাকা করলো । রেবেকা যে ওনার কথার ওপরে কড়া কথা বলবে সেটা ওনি বুঝতে পারেন নি । তুলির মাকে থেমে যেতে দেখে ঐ মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল

– জানেন আমরা যেদিন পিহুকে দেখতে আসি ঐদিন মিহু সব রান্না করেছিল । আর আমি তো সেই রান্না খেয়ে ই মিহুকে বৌ বানাতে চেয়েছিলাম ।

– কিন্তু আমরাতো শুনেছিলাম তুলির জন্য নাকি প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছেন ?

আড় চোখে তুলির মায়ের দিকে তাকিয়ে রেবেকা বলল
– এখন কেউ যদি বলে রান্না তুলি করেছে তাহলে আমি কি করব ? আমি তো আর অন্তর্যামি না যে সব জেনে বসব ।

রেবেকা যে আসল ব্যাপার জানে সেটা ভেবে তুলির মা ওখান থেকে বাহানা দিয়ে সরে গেলেন। রেবেকা তা দেখে কিঞ্চিত হাসলেন

ইফতারির সময় ধুম পড়ে গিয়েছে । যে যেখানে পারছে সে সেখানে বসছে । পিয়াস কোথাও জায়গা না পেয়ে ছোটদের সাথে বসে পড়েছে । সবাইকে বলা হয়েছে যার যা প্রয়োজন নিয়ে খেতে । পিয়াস এক গ্লাস শরবত খাওয়ার পরে মনে হলো তৃষ্ণা মেটে নি তাই ওর ইফতারি রেখে আরেক গ্লাস শরবত আনলো । কিন্তু এসে দেখলো ওর বেগুনি আর আলুর চপ দুই কমে গেছে । ওর স্পষ্ট মনে আছে ও চারটা চপ এনেছিল কিন্তু কমল কি করে ? সামনের বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করতেই বলে পিয়াস নাকি নিজেই খেয়েছে । এবার শরবতের গ্লাস রেখে আরো দুটো চপ আনতে গেল । এসে দেখলো শরবতের গ্লাস মিসিং । এবার ওর সন্দেহ হলো কিন্তু তারপরও খেতে বসল । আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে একটা চপের মধ্যে মরিচ ঢুকিয়ে সবাইকে বলল

– আমি এক গ্লাস শরবত আনতে যাচ্ছি তোমরা সবাই এই চপটা দেখে রেখো

বাচ্চা গুলো সুন্দর করে মাথা নাড়ালো । বাচ্চা গুলোকে দেখে মনে হয় এক এক জন কত নিশ্পাপ । এদের সন্দেহ করে পিয়াসের গিল্টি ফীল হচ্ছে । তারপরও এক গ্লাস শরবত আনলো । এসে যা দেখলো তাতে চক্ষু চড়ক গাছ । একটা মোটা করে বাচ্চা নাক টানছে আর পিয়াসের প্লেট নিয়ে চপটা খাচ্ছে । একটু পরে ঝালে চিৎকার করে উঠলো । তখন পিয়াস ওর দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে দেখিয়ে দেখিয়ে শরবত খেতে লাগল ।

– আমার জিনিস খাওয়া । এখন দেখ কেমন লাগে

ওর বলতে দেরি কিন্তু একটা চড় পড়তে দেরি নেই । পাশে তাকিয়ে দেখলো তুলির খালা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ।

– তুই দেকতাছো আমার নাতিডা জালে হোসায় আর তুই এইহানে দারাইয়া দরাইয়া শরবত খাও ।

– কিন্তু খালা ও তো আমার ইফতারি খেয়ে নিচ্ছিল

– হেতে কি এহন তোর শরবত ও খাইবে

বলে এক হ্যাচকা টান দিয়ে শরবত নিয়ে গেল । গিয়ে আদর করে তার নাতিকে খাওয়াতে লাগল ।

ইফতারির পরে কেউ দেরি করল না । সবাই রেডি হয়ে নিল । নীলু সেই নীল শাড়িটা পড়ে নিল । মিহু রেডি হতে নিলে বলে

– ভাবি তুমি একটা কাজ করতে পারো ?

– কি কাজ ?

– আমার ওষুধ গুলো রেখে এসেছি । তুমি একটু বাসায় গিয়ে নিয়ে আসবে ?

– আমি ?

– হ্যাঁ । নেহাল ভাই আর পিয়াস ভাইরা আগেই চলে গিয়েছে । চলো তোমাকে এগিয়ে দিচ্ছি । আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো ।

মিহুকে কোনো মতে বাহানা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিল । নীলু ঘরে যাওয়ার পথে মাহিনের সাথে দেখা হলো । মাহিন অপলক নয়নে তাকিয়ে রইল নীলুর দিকে । নীলু একটু লজ্জা পেল । তারপরে জিজ্ঞেস করল

– কিছু বলবেন ?

নীলুর বলা কথায় মাহিনের ঘোর কাটল । মাথা চুলকিয়ে বলল – একটু ছাদে আসতে পারবে ?

– এখন ?

– হুম

– কিন্তু সবাই তো চলে যাচ্ছে

– আমি বেশি টাইম নেবো না

বলে মাহিন ছাদে চলে গেল । নীলু ছাদে যাওয়ার পথে মিহুর দাদুর রুমের দিকে তাকালো । দেখলো সেখানে কেউ নেই । তাই কৌতুহল হয়ে ওখানে ঢুকল । কিছুক্ষণ এখানে ওখানে কিছু খুঁজল । কিন্তু কিছুই পেল না । তারপরও কিছুক্ষণ দেখলো । হঠাৎ কিছুর আওয়াজে সামনে তাকালো ।

মাহিন নীলুকে ওর সাথেই আসতে বলেছিল কিন্তু নীলু বেশ দেরী করায় নিচে চলে যেতে চাইলেই ছাদের দরজা খোলার আওয়াজে থেমে যায় । পেছনে না তাকিয়েই বলতে থাকে

– নীলু আমি কয়েকটা কথা এই কয়েকদিন ধরে অনেক ভেবেছি । ভেবে দেখলাম যে তুমি হয়ত আমাকে পছন্দ করো বা ভালোবাসো । আমি আরোও ভেবে দেখেছি যে আসলেই আমার দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া উচিত । আর এই কয়েকদিনে আমি তোমার প্রতি একটা অনুভূতি আকর্ষণ করেছি । তাই আমি তোমাকে বলতে চাই আমার সামনের পথ চলায় তোমাকে পাশে চাই । দেবে কি তুমি আমাকে সেই অনুমতি ?

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ।)