ফিলোফোবিয়া পর্ব-২২+২৩

0
497

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২২.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

আজ বৃহস্পতিবার। হাফ ক্লাস। স্কুল বারটা নাগাদ ছুটি হয়েছে। শনিবার থেকে টেস্ট পরিক্ষা শুরু। অনেক প্রস্তুতি বাকি এখনো। স্কুল থেকে বেরিয়ে বাজারের দিক গেল প্রিয়। ফটোকপির দোকানে যেত্ব হবে একবার। জুবাইদা থেকে কিছু নোট কালেক্ট করেছে ফটোকপি করতে হবে সেগুলো। নোট কপি করে বের হতেই আচমকা শোয়েব হককে সামনে দেখে।ক ঘাবড়ে গেল প্রথমে, পরবর্তীতে নিজেকে সামলে ঠোঁটের কোনে হাসি ঠেলে সালাম জানায়। শোয়েব হক সালামের উত্তর নিয়ে বেশ সাবলিল স্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘ স্কুল থেকে ফিরছ?’
‘ জি আঙ্কেল।’
‘ একাই ফিরছ যে? তোমার খালা…’
‘ খালা দেরিতে ফিরবে। আরো একটা ক্লাস আছে।’
প্রিয়’র উত্তরে যেন হতাশ হলো শোয়েব হক। চাতক পাখির মত আশেপাশে চোখ বুলানোটা ক্ষান্ত হলো। ধীর স্বরে বলল,
‘ ওহ! চলো বাড়ি পৌঁছিয়ে দেই তোমায়।’
মাথা নেড়ে নাচক করল প্রিয়। তড়িঘড়ি কন্ঠে বলল,
‘ তার দরকার নেই আঙ্কেল। এইটুকুই তো পথ। যেতে পারবো আমি।’
শুনল না শোয়েব হক। জোরালো কন্ঠে বলল,
‘ আমি বাড়ির দিকেই যাচ্ছি। একসাথে যাই।’
কোন দিকাদিক না পেয়ে শোয়েব হকের জোরাজোরিতে রাজি হলো প্রিয়। যেই গাড়িতে উঠতে যাবে অমনি আচমকা পেছন থেকে হেঁচকা টান দিলো। পেছন ফিরে চাইতেই থমকে গেল প্রিয়। শতাব্দ গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে। শোয়েব হকের দিক তাকিয়ে গম্ভীর শক্ত কন্ঠে বলল,
‘ প্রিয় আমার সাথে যাচ্ছে। আমি বাড়ি পৌঁছে দিবো ওকে।’
শোয়েব হককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইকে চড়ে বসলো শতাব্দ। প্রিয়’র দিক দৃঢ় দৃষ্টি ফেলে গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল,
‘ বাইকে উঠো।’
হতভম্ব প্রিয় আশপাশে চোখ ভোলাল। বাজারের মাঝামাঝি একদম। আশেপাশে অনেক পরিচীত লোকজন। কেমন জানো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন তামাশা চলছে কোন। ছোট ঢোক গিলল প্রিয়। কিন্তু কিন্তু করে বলল,
‘ রিকশায় করে যেতে পারবো আমি। আপনি না হয়…’
প্রিয়কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে জোরালো ধমক দিলো শতাব্দ। রাগী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ আমি বাইকে উঠতে বলেছি প্রিয়।’
কেঁপে উঠল প্রিয়। তড়িঘড়ি করে বাইকের পেছনে চড়ে বসলো। বাইক চলছে ক্ষিপ্রগতিতে। চোখমুখ চেপে বসে আছে প্রিয়। ভয়ে চোখ মুখ চুপসে গেছে একদম। আশেপাশে কত লোক দেখছে। গ্রামে শতাব্দ বেশ পরিচীত মুখ। তার বাইকের পেছনে এভাবে ঘুরে বেড়ানোটা নিশ্চয়ই ভালো চোখে দেখবে না সবাই। এক হাতে ইউনিফর্মের সাদা স্কার্ফ টেনে মুখ লুকাতে ব্যস্ত সে। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড ভীতি কাজ করছে।
বাইক বাড়ির গলিতে না ঢুকে অন্যদিকে যাওয়ায় ঘাবড়ে গেল প্রিয়। বিমূঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ বাড়ির রাস্তা তো পেছনে ফেলে এলাম। কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
উত্তর দিলো না শতাব্দ। নিজে গতিতে বাইক চালাতে ব্যস্ত সে। খানিক দূর আমবাগের সামনে বাইক থামলো। গম্ভীর কন্ঠে শতাব্দ বলল,
‘ নামো।’
ভীতি জড়সড় হয়ে বাইক থেকে নামলো প্রিয়। সামনের বেঞ্চে গিয়ে বসলো। চুপচাপ দুজন। শতাব্দের চোখমুখে স্পর্শ রাগ। কি হয়েছে? একবার কি জিজ্ঞেস করবে! না থাক। যদি রেগে যায় আরো।
রাগে মাথা কিড়মিড় করছে শতাব্দের। নিজেকে শান্ত করার যথাযথ চেষ্টা করছে। পারছেনা! পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করল। জ্বালিয়ে, কাঁপাকাঁপি হাতে ঠোঁটে চাপলো।
সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রিয়’র অস্বস্তি হয় খুব। খুকখুক করে কেশে উঠল। ভ্রু কুঁচকে একবার তাকালো শতাব্দ। প্রিয়’র অস্বস্তির কারণটা বোধহয় বুঝল। বেঞ্চ ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
দূর থেকে তাকিয়ে আছে প্রিয়। এখানে কেন নিয়ে এসেছে শতাব্দ। জানতে উশখুশ করছে মন। সেই সাথে ভয়ও লাগছে। হুট করে শতাব্দের এমন আচরণ। শোয়েব হকের সাথে দেখলে এমন রেগে যায় কেন সে?
বেশ কিছু সময় নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে এসে প্রিয়’র পাশে বসলো। সূর্যে তখন বরাবর মাথার উপর। মাঝামাঝি দুপুর। মাটি ফেটে যেন গরম ভাপ বের হচ্ছে। চিন্তা, ভয়, গরমে প্রচন্ড ঘামছে প্রিয়। নাকে মুক্তোদানা মত ঘাম চিকচিক করছে। চুল বেয়ে কপালে ঘাম জমেছে। চোখে মুখে অদ্ভুত ভয়। এমন বি*চ্ছিরি গরমে নাজেহাল অবস্থায়ও বেশ নিদারুণ লাগছে মেয়েটাকে। পকেট থেকে টিস্যু বের করে আলতো হাতে কপাল নাক মুছে দিচ্ছে শতাব্দ। গভীর দৃষ্টিতে আছে প্রিয়। কে বলবে এই দায়িত্ববান মানুষটাই কিছুক্ষণ আগে বাজারে বেশ বড়সড় তামাশা করে এসেছে! আজকাল শতাব্দকে প্রিয়’র গোলক ধাঁধা মনে হয়। যত গোছাতে যায় তত প্যাঁচিয়ে যায়। যখনি মনে হয় শতাব্দকে সে পুরোপুরি ভাবে জানে, বুঝে তখনি এমন কিছু ঘটে যে, সব নতুন মনে হয়।
পিনপতন নিরবতা চললো খানিক। নিরবতা ভেঙে শতাব্দ বলল,
‘ তুমি মামার সাথে কোন প্রকার কথা বলবে না। মুখোমুখি পড়লে ইগ্নোর করবে।’
প্রিয় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অভিভূত দৃষ্টিতে তাকালো। আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ কেন? সে কি ভালো মানুষ নয়!’
‘ ভালো। প্রচন্ড ভালো মানুষ। তবে তোমার জন্য নয়। প্রতিটা মানুষের ভালো খারাপ দুইদিক থাকে। আমি চাইনা তার খারাপ দিক তোমার উপর পড়ুক।’
শতাব্দের কথার আগাগোড়া বুঝল না প্রিয়। প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কিন্তু কেন? কোন কার…
‘ কেন, কি কারণ ওইসব জানার সময় এখন না প্রিয়। আমি বলছি তুমি তার সাথে কোন প্রকার কথা বলবেনা। মানে বলবেনা।’
শতাব্দের দৃঢ় আওয়াজ। কন্ঠে রাগ দেখে আর কিছু বলার সাহস পেলনা প্রিয়। চুপ করে রইল। রাগ দমিয়ে খানিক বাদে, শতাব্দ শান্ত স্বরে বলল,
‘ ঢাকায় যাচ্ছি, আগামীকাল ফিরবো।’
মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে তাকালো প্রিয়। বলল,
‘ আপনার তো ব্রেক তাইনা?’
‘ ক্লাস না কিছু কাজ আছে। যেতে হবে।’
‘ কখন যাচ্ছেন?’
‘ একটু পর।’
‘ ওহ’ ঠোঁট গোল করে আলতো আওয়াজে বলল প্রিয়।
প্রিয়’র গালে হাত রাখলো শতাব্দ। মাথা তুলে, ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চোখে চোখ রাখল প্রিয়। শতাব্দ নিভৃত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই প্রাণবন্ত নিষ্পাপ চোখে। গভীর কন্ঠে আওড়াল শতাব্দ,
‘ নিজের খেয়াল রাখবে।’
হ্ঠাৎ অদ্ভুত অনুভূতি হলো প্রিয়’র। কেমন জানো যন্ত্রণা করছে বুক। ভীষণ ঝাঁজালো অনুভূতি। কেন জানো মনে হচ্ছে দূরে চলে যাচ্ছে শতাব্দ। অনেক দূর। গলায় অজানা এক কষ্ট দলা বাঁধলো। ঝাপসা হয়ে এলো চোখ। চোখের কোণে অশ্রু এসে জমলো।
প্রিয়’কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে। গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল শতাব্দ। দূর বারান্দা থেকে তাকিয়ে আছে প্রিয়। অস্বাভাবিক এক ভয় উঁকি দিলো মনে। নিজের মনকে বুঝানো জন্য বলল,
‘ একদিনই তো! চলে আসবে সে।’

আগামীকাল থেকে প্রিয়’র টেস্ট পরিক্ষা। জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। রাত দেড়টা। এখনো প্রিয় ঘরে পড়ার আওয়াজ ভাসছে। আয়েশা বেগম কলেজের পরিক্ষার খাতা নিয়ে বসেছে। হাতে কাজ অনেক, সময় কম। এখন রাত জেগেই সব খাতা দেখে শেষ করতে হবে। আচমকা কলিং বেল বাজলো। আয়েশা বেগম বিরক্ত হলো। গভীর রাতে কে এলো! দরজা খুলবে কি, খুলবে না তা নিয়ে বিহ্বলে পড়লো। কলিং বেল অনবরত বেজেই যাচ্ছে। এবার বিরক্তির চুড়ান্তে পৌঁছালো আয়েশা বেগম। বিরক্ত হয়ে দরজাটা খুলল। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা মানুষটাকে দেখেই কেঁপে উঠল আয়েশা বেগম। আতঙ্*কিত চোখ মুখ। কাঁপাকাঁপি কন্ঠে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,’ শোয়েব’
ঘরে ঢুকে ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো শোয়েব হক। ভয়*ঙ্কর লাল চোখ। আয়েশা বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন শোয়েব হক। রাগী গর্জন দিয়ে বলল,
‘ কেন? আমার সাথে কেন এমন করলে আয়শা।’
শোয়েব হকের গা থেকে বি*চ্ছিরি এক গন্ধ আসছে। ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারছেনা টলমল করছে। শোয়েব কি মদ গিলে এসেছে? ভেবেই নাকে মুখে কাপড় চাপল আয়শা বেগম। গলার স্বর কঠোর করার চেষ্টা করল। বলল,
‘ এখানে কেন এসেছ শোয়েব। আমার বাড়ি থেকে এক্ষুনি বেরিয়ে যাও।’
জোরালো ধমক দিয়ে বলল শোয়েব,
‘ যাবোনা আমি। কি করবে? কি করবে তুমি! গত সতের বছর ধরে তোমাকে ঘৃ*ণা করে এসেছি। আর এখন সত্যি জানার পর পুড়ছি। কেন মিথ্যা বলেছিলে? কেন?’
আয়েশা বেগম না বোঝার মত করে বললেন,
‘ কোন মিথ্যার কথা বলছো? ‘
শোয়েব হক রেগে গেলেন আরো। দাঁতে দাঁত চিপে বলল,
‘ তোমার বিয়ে হয়েছে? সুখে আছো খুব? কেন মিথ্যে বলেছিলে সেদিন। সামান্য একটা চিঠি লিখে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে সব শেষ করে দিলে। তুমি আমার স্ত্রী ছিলে আয়শা।’
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আয়েশা বেগম। রাগে দাঁত চেপে বলল,
‘ স্ত্রী? কোন স্ত্রীর কথা বলছো শোয়েব। যদি তাই মানতে তাহলে ছবিকে কি করে বিয়ে করলে? তখন আমার কথাটা একবার মনে পড়েনি? তুমি ভালো আছো তোমার বউ সংসার নিয়ে। সেখানে আমি কেন বাঁধা হবো। দূর্বল হবো। তখন আমার মনে হয়েছে তোমাকে মিথ্যা বলে আমি জিতে যাবো। ভালো থাকবো। তাই বলেছি। আর হ্যাঁ তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই।’
শোয়েব অসহায় নরম স্বরে বলল,
‘ আমার হাত পা বাঁধা ছিল। আমি বাধ্য ছিলাম। আমার বোনেত সংসার ভাঙ্গার পথে ছিল।’
‘ তাই বলে নিজের সংসার ভেঙ্গে তুমি তা গড়বে? আসলে, সত্যি হচ্ছে তুমি একজন প্রতারক, বেইমান। আগে থেকেই ছবির দিক কু’নজর ছিল তোমার। সুযোগ পেতেই তা কাজে লাগিয়েছ।’
টলমল চোখ নিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল আয়েশা বেগম। শোয়েব যেন আরো আহত হলো। আগের মত অসহায় কন্ঠে বলল,
‘ বিশ্বাস করো আমি আজও তোমাকে….
‘ প্লিজ শোয়েব! বন্ধ করো। এতবছর পুরানো আষাঢ়ের গল্প শুনতে চাইছিনা। পাশের রুমে প্রিয় এখনো জেগে। কোনরকম সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে উপকার করো আমার উপর।’
শোয়েব খিলখিল করে হেসে ফেলল। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আয়েশা বেগম। এমন ছন্নছাড়া অগোছালো রূপে দেখেনি আগে। আজ দেখে প্রচন্ড ভয় করছে। প্রচন্ড! মন কু ডাকছে।
হাসি থামিয়ে শোয়েব হক বলল,
‘ সত্যি করে একটা কথা বলোতো! হুবহু তোমার মত দেখতে এই কার্বনকপিটাকে কোথায় পেলে? দেখলাম আমার ভাগিনা সাথে প্রেম করছে। তোমার ভয় করেনা আয়েশা। যদি তোমার মত ঠকতে হয় প্রিয়কে?’
আয়েশা বেগম এবার ভ*য়ঙ্কর রেগে গেলেন। শোয়েব হকের কলার চেপে ধরলো। চিৎকার করে বলল,
‘ আমার সাথে যা হয়েছে। প্রিয়’র সাথে তোমরা তা করার কথা চিন্তা করলে আমার ভ*য়ঙ্কর চণ্ডী রূপ দেখবে। খু*ন করে ফেলবো সবাইকে।’
গাল বাঁকিয়ে হাসল শোয়েব হক। আয়েশার গলা চে*পে ধরল। বলল,
‘ এতটান তো শুধু একজন মায়েরই হয়। সত্যি করে বলতো প্রিয় কি আমার আর তোমার মেয়ে? আমি কেবল সত্যিটাই জানতে চাইছি আয়েশা।’
দম বন্ধ হয়ে আসছে আয়শার। হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে করতে বলল,
‘ তোমার সন্তানকে আমি গর্ভেই মে*রে ফেলেছি। তোমার অংশকে কেন দুনিয়ায় আনবো! কেন? ডিভোর্স পেপারের সাথে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। দেখনি? প্রিয় আমার ভাগ্নী। অনেক বেশি প্রিয়। ওর থেকে দূরে থাকো তোমরা।’
‘ শতাব্দ! ও মানবে? কখনোই না! বিয়ে করে ওই পরিবারে আসলে সবকিছুর সম্মোখীন ওকে হতে হবে। প্রতি মূহুর্ত প্রিয় পুড়বে।’
আয়েশা বেগম এবার নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। ডুকরে কেঁদে ফেললেন। এলোপাথাড়ি হাত ছুড়াছুড়ি করে শোয়েবের বুকে আঘা*ত করতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
‘ ও বাচ্চমানুষ , নিষ্পাপ ওকে তোমরা এমন শা*স্তি দিয়ো না। সহ্য করতে পারবেনা ও। শেষ হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে আমার প্রিয়….

আচমকা কারো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল প্রিয়। আড়াইটা বাজছে ঘড়িতে। পড়তে পড়তে কখন যে টেবিলেই চোখ লেগে গেল। চোখ ঢলতে ঢলতে হল ঘরের দিক গেল। এদিক থেকেই আসছে কান্নার আওয়াজ। হল ঘরে ঢুকে খালাকে শোয়েব হকের পায়ের কাছে দেখে আঁ*তকে উঠল প্রিয়। চোখের সব ঘুম আচমকাই উঁড়ে গেল। বিস্ময়ে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়। এমন সময়ই আবারো কলিং বেল বাজলো। এতো রাতে আবার কে এলো?

চলবে……..

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২৩.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

কলিং বেলটা বেজে যাচ্ছে অনবরত। দরজা খুলতেই আচমকা গালে সজোরে এক থা*প্পড় পড়ল। হতভম্ব প্রিয়। টলমল দৃষ্টিতে বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাগী হাঁক ছাড়ছে ছবি বেগম। পেছন চেয়ারম্যান বাড়ির বড়রা সবাই। সোফায় ঢুলে পড়ে আছে শোয়েব হক। নেশায় জ্ঞান হারিয়েছে বোধহয়।
কি হয়েছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা প্রিয়। ছবি বেগম রাগী ভারী নিশ্বাস ফেলে প্রিয়’র দিক আসছে। চুলের মুঠি ধরতেই ব্যাথাতুর আওয়াজ করে উঠল প্রিয়। অশ্রু গুলো গাল বেয়ে ঝরে পড়লো। আয়শা বেগম ছুটে এলো। ছবি থেকে হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে। বুকে জড়িয়ে নিলো প্রিয়’কে । ক্রোধান্বিত গর্জন করে বলল,
‘ প্রিয়’র গায়ে হাত তোলার সাহস পেলে কি করে?’
ছবি বেগমের রাগ আরো বেড়ে গেল। চিৎকার করে বলল,
‘ এইসব ছেলেবাজ মেয়েদের কি করবো শুনি? খা**! এক ছেলে দিয়ে হয়না তোর ? এখন বাপের বয়সি ব্যাটাও লাগবে।’
অভিলাষা বেগম ছবিকে চুপ করানোর চেষ্টা করলো।জোরে ধমকালো। বলল,
‘ বুঝেশুনে কথা বলো। কার সম্পর্কে কি বলছো।প্রিয় তোমার মেয়ের বয়সী। এখানে কি হয়েছে আগে ঠান্ডা মাথায় শুনো। তারপর….
অভিলাষা বেগমের কথা কে*টে ছবি বলল,
‘ কি শুনবো ভাবি। এখানে দেখাদেখির কি আছে? এতবছর ধরে তোমার ভাইয়ের সাথে সংসার করছি। তার চরিত্র ভালো করে জানি। মাসের পর মাস দুবাই পড়ে থাকে কেন? এসব কুকাজ করার জন্য। এখানে এসে সুন্দর জুয়ান মেয়ে দেখেছে কুকাজ শুরু করে দিয়েছে। সন্দেহ তো আমার সেদিন ছাদেই হয়েছিল। যখন দুজন হেসে হেসে কথা বলছিল। আর এই বাজে মেয়েকে নিয়ে কি বলবো। মামা ভাগিনা দুইজনের সাথে ফস্টিন…
আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়েশা বেগম প্রচণ্ড জোরে এক চড় দিলো ছবি বেগমের গালে। স্তব্ধ সকলে। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলো আয়েশা বেগমের। চিৎকার করে বলল,
‘ প্রিয়’র জন্য না। শোয়েব আমার জন্য এখানে এসেছিল। সেই কখন থেকে তোমার সব জ*ঘন্য কথা শুনছি। বলে এই না যে আমরা অপ*রাধী। তোমার স্বামী দুশ্চরিত্রা।’
ছবি যেন নিজের হাবভাব হারিয়ে ফেলল। ক্ষি*প্ত হয়ে আয়েশা বেগমের দিক এগিয়ে আসতে চাইল। অভিলাষা বেগম জুবাইদার মা তাকে আটকালো। রেগে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘যেমন খালা তেমন ভাগ্নী। দুইজনই ব্যা*। ভাগ্নী ভাগিনাকে ফাঁসিয়েছে আর খালা মামাকে। রাতবিরেতে বাড়িতে পুরুষ আসে। ব্যা* বাড়ি!’
আয়েশা দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বলল,
‘ তোমাদের বাড়ির ছেলেকে বেঁধে রাখতে পারোনা কেন? আমার ভাগ্নীর পেছনে কেন আসে? তোমার স্বামী রাতবিরেতে মদ খেয়ে মানুষের বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে। কেমন স্ত্রী তুমি। নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে জানোনা তুমি। আমাদের দিক আঙুল তুলার আগে নিজেদের দিকে তাকাও।’
ছবি রাগে উসখুস করছে। স্বামীকে নিয়ে এখন অতো মাথা ঘামায় না। বিয়ে করেছে। যেদিকেই মুখ দিক না কেন, দিন শেষে সেই ঘরেই আসবে। তার সব রাগ জেদ প্রিয়’র উপর। এই মেয়েটার জন্য শতাব্দের সাথে লুবনার বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে পারছেনা। আজ যে করেই হোক এই মেয়ের কিচ্ছা শেষ করতে হবে। হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো ছবি তেড়ে এলো প্রিয়’র দিক।
দরজার সাথে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে প্রিয়। কি থেকে কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এত মানুষের ভেতর শুধু একজনকেই খুঁজছে। কোথায় শতাব্দ? আজতো তার ফেরার কথা ছিল। এখানো কি ফিরেনি তবে!
ছবি কাছে এসে প্রিয়’র মুখ চেপে ধরলো। যেই তার গায়ে হাত তুলবে অমনি আচমকা কোথা থেকে যেন শতাব্দ সামনে চলে আসলো। থা*প্পড়টা শতাব্দের উপর পড়ল। পুরো ঘর স্তব্ধ। কোনো সাড়াশব্দ নেই কোথাও।
হাত মুঠিবদ্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দ। রাগে শরীর কাঁপছে থরথর। রাত দশটায় ইমান্দিপুরে এসে পৌঁছেছে। মাথা ব্যথা থাকায় বিশ্রাম নিচ্ছিলো ঘরে। এদিকে এতো কিছু হয়ে গেল টের পায়নি কোন। মাত্রই সমুদ্র ডেকে এনেছে তাকে। নিজের উপর রাগ হচ্ছে প্রচন্ড আরেকটু আগে আসলে এতকিছু ঘটতে দিতোনা কখনো।
ছবি বেগম শতাব্দকে দেখে থতমত খেয়ে গেলেন। কিছু বলতে উদ্ভব হলো। অমনি শতাব্দ গর্জন করে উঠল। রাগী গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ ওর দিকে হাত বাড়ালে ভালো হবেনা কারো। অনেক তামাশা করেছেন এবার আপনার মাতাল স্বামীকে নিয়ে বাড়ি যান।’
ছবি বেগম রাগে হুরহুর করে আগে বেড়িয়ে গেলেন। ভাইকে সোফা থেকে তুলল অভিলাষা বেগম। সাহায্যের জন্য সাথে আছে জুবাইদার মা। শতাব্দের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের দিক রাগী গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল শতাব্দ। ছেলের দিক অসহায় করুন দৃষ্টিতে তাকালো অভিলাষা বেগম।
আস্তে আস্তে ঘর খালি হলো। শতাব্দ যাওয়ার সময় অশ্রু স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিয়। পিছন ফিরে একবার তাকালো না শতাব্দ। হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।
এতো রাতে হৈচৈ শুনে পাড়ার সব লোক জড় হয়েছে। দোতলার সিড়ি অবধি উঠে এসেছে। এতো মানুষ দেখে রাগী চিৎকার করল শতাব্দ,
‘ কি হচ্ছে এখানে। তামাসা?’
সাথে সাথে সব লোক হুরাহুরি করে চলে গেল।

সকাল হয়েছে অনেক আগে। বাহিরে উজ্জ্বল আলো। তবুও যেন সবকিছু আঁধারে মাখানো। থেমে গেছে যেন সব। সকাল থেকে গ্রামের অলিতে-গলিতে হাটবাজারে দোকানে কাল রাতেরই চর্চা চলছে। এক কান দুকান হতে সবাই জানে এখন। ছিছি করছে সবাই। প্রিয়দের বাড়িকে ব্যা* বাড়ি বলে উপেক্ষা করছে। এই সমাজটা বড়ই বিচিত্র! সবসময় কি শুধু নারীর দোষই?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়। স্কার্ফ দিয়ে কাল রাতের থাপ্পড়ের দাগ ডাকতে ব্যস্ত। চোখজোড়া ফুলে টকটকে লাল। মাথাটা ভার হয়ে আছে এখনো। বাড়ি থেকে বের হতে ভয় করছে প্রচন্ড, যেতে হবে তবুও। টেস্ট পরিক্ষা আজ। না গেলে দুইবছর কষ্ট বিফলে যাবে সব।
রেডি হয়ে খালার ঘরে এলো প্রিয়। গতরাত থেকে খালা জানালার পাশে রকিং চেয়ারে বসে আছে এখনো। আলতো করে ডাকলো প্রিয়। উত্তর এলোনা কোন। অপেক্ষা করল প্রিয়। কোন সারাশব্দ না পেয়ে ঘড়ির দিক তাকালো। দেরি হচ্ছে খুব। বেড়িয়ে যেতে হবে এখন। খালাকে নরম স্বরে ডেকে বলল,
‘ পরিক্ষা দিতে যাচ্ছি খালা।’
এবারো উত্তর এলোনা কোন। আগের মত দূর আকাশে তাকিয়ে আছে আয়েশা বেগম। অপেক্ষা করল প্রিয়। কোন সারাশব্দ না পেয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল।

গলি থেকে বের হবার সময় আশেপাশে চোখ বুলালো। পাড়াপ্রতিবেশিরা সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে। যেন কোন বড় অপ*রাধ করে ফেলেছে প্রিয়। তাকে নিয়ে ফিসফিস করছে অনেকেই। মাথা নুয়ে দ্রুত পা চালিয়ে গলি থেকে বেরিয়ে এলো। রিকশা নিয়ে হুডি তুলে দিলো। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এর আগে এমন জ*ঘন্য পরিস্থীতির স্বীকার হয়নি কখনো।
স্কুলে এসে জুবাইদার সাথে দেখা হলো। ঘন্টা পড়ছে তখন।হলের দিক পা বাড়িয়ে জুবাইদা শুধু এতোটুকু বলল,
‘ ভাই বাড়ি নেই। গতরাতে তুমুল ঝামেলা হয়েছে। ভোর রাতে ভাই চলে গেছে ঢাকায়।’
জুবাইদার মুখে এমন কথা শুনে প্রিয় আরো ঘাবড়ে গেল। কোনরকম পরিক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে শতাব্দের নাম্বারে ফোন করল। বন্ধ বলছে ফোন। চিন্তাটা বেড়ে গেল আরো।

কাপড় পাল্টে খালার ঘরে গেল প্রিয়। খালা সকালের মত এখনো সেই চেয়ারে বসে। প্রিয় ডাকল। এবার আয়েশা বেগম সাড়া দিলো। মাথা তুলে তাকালো। আঁতকে উঠল প্রিয়। এক রাতেই ভয়*ঙ্কর হয়ে এসেছে খালার চোখমুখ। ফোলা চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। চোখের নিচে কালি জমেছে। খালার এই হাল দেখে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে প্রিয়’র। এমন ভেঙ্গে পড়তে কখনো দেখেনি আগে।
আয়েশা বেগম প্রিয়কে নিজের কাছে ডাকলো। প্রিয় কাছে যেতেই। হাত টেনে নিজের সামনে এনে বসালো। প্রিয়’র হাত জোড়া হাতের মুঠোয় নিয়ে গাঢ় করে চুমু দিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলল হ্ঠাৎ । কেন কাঁদছে বুঝল না প্রিয়। শুধু বুঝল খালার এমন কান্না দেখে তার কষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। আজ প্রিয়’র দিক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মায়েরা যেমন করে তাকিয়ে থাকে ঠিক তেমন। প্রিয়’র হাত মুখ আলতো আদুরে হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে খালা। ঠিক যেমন নবজাতক শিশুকে ছুঁয়ে দেয় মা। আচমকা বুকে জড়িয়ে ধরল। প্রিয়’র চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আরো জোরে কেঁদে ফেলল।
বিমূঢ় প্রিয় তাকিয়ে আছে হতভম্ব। খালার এই মমতাময়ী রূপটা দেখেনি কখনো।
খানিক বাদে প্রিয়কে ছাড়ল আয়েশা বেগম। চোখ মুখ মুছে নিজেকে শক্ত করতে চেষ্টা করল। একটু সময় নিয়ে বলল,
‘ আজ তোকে কয়েকটা কথা বলবো। এই কথা গুলো এর আগে কাউকে বলিনি কখনো। না কাউকে কোনদিন বলবো।’
ভ্রু কুঁচকে তাকালো প্রিয়। খালা আবারো বলল,
‘ কথা গুলো আমার কালো অতীত সংক্রান্ত।’
‘ তোমার কালো অতীত?’
‘ হ্যাঁ প্রিয়।আমার কালো অতীত।’
একটু চুপ থেকে ছোট নিশ্বাস ফেলে খালা শুরু করল,
‘ ছোট থেকে আমার বাবার আফসোস ছিল। আমরা তিন বোনের মাঝে একজন ছেলে হলাম না কেন! বাবার রগচটা কথা আর অপমানের ধাঁচে ছোটবেলায়ই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম লেখাপড়া করে অনেক বড় হবো। ছেলের কামাই খেতে পারবেনা বলে বাবা এমন আফসোস করে তো? বড় হয়ে অনেক টাকা কামাবো। যেই ভাবনা সেই কাজ। ছোট থেকে সবসময় ছিল স্টার মার্কস। কলেজ শেষে ঢাকায় এডমিশন হলো। স্বপ্নের খোঁজে পাড়ি জমালাম ঢাকায়। নতুন শহরে এসে চারদিকে সব অচেনা মুখ দেখে ঘাবড়ে গেলাম। সেখানে পরিচীত বলতে কেবল শোয়েবই ছিল। কলেজ জীবনে চিনাজানার সুবাদে পরিচয় ছিল টুকটাক। শোয়েব তখন পড়াশোনার পাশাপাশি শতাব্দের বাবার ব্যবসায় দেখাশোনা করে টুকটাক। নতুন শহরে এসে বিভিন্ন সমস্যা, দরকার প্রয়োজনে তার সাথে মাঝেসাঝে দেখা হতো। আস্তে আস্তে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠল। তারপর ধীরেধীরে প্রেম। পড়াশোনা শোয়েব সবকিছু মিলিয়ে দিন ভালোই চলছিল। হ্ঠাৎ একদিন আমার জীবনে কালবোশেখী ঝড় এলো। কেউ একজন আমাদের সম্পর্কের কথা বাবার কান অবধি পৌঁছেছে। শোয়েবদের আর্থিক অবস্থা তখন দূর্বল। দুলাভাইয়ের ব্যবসায় ছোট চাকরিতে কর্মরত। আমার দাম্ভিক বাবা তা শুনে পণ করলেন। এমন ছোট ঘরে মেয়ে দিবেনা কখনো! শোয়েবের মা হাত চাইতে এসেছিলেন। মেয়ে দিবেনা বলে তাড়িয়ে দিলেন। পরিস্থীতি ভীষণ খারাপ যাচ্ছিলো। কোন দিকাদিক না পেয়ে। কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করে ফেলি আমরা। হোস্টেলের নাম করে এক রুমের বাসা নিয়ে থাকতে লাগি ঢাকা। ছোট চাকরি করে সবার অগোচরে চড়ুই সংসার সাজাই। সব ঠিকই চলছিল। অমনি একদিন গ্রাম থেকে খবর এলো শোয়েবের মা অসুস্থ। শোয়েব আমাকে ছেড়ে গ্রামে গেল। এরপর অনেকদিন কাটলো। শোয়েবের চিঠি এলোনা কোন। চিন্তায় কোন দিকাদিক না পেয়ে শোয়েবদের গ্রামে গেলাম। সেখানে গিয়েই জীবনের সবচেয়ে বড় আঘা*ত পেলাম। শোয়েব বিয়ে করেছে ছবিকে। আমি দেড় মাসের অন্তসত্বা তখন। শোয়েবের মায়ের পায়ে পড়লাম। আমার আর আমার সন্তানের জীবনের ভিক্ষা চাইলাম। গললেন না তিনি। তার চোখে তখন বড় ঘর থেকে মেয়ে আনার যৌ*তুকের চমক। সারারাত বসে রইলাম উঠানে। কেউ উঁকি দিলোনা একবার। যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম। সেও মুখ ফিরিয়ে নিলো। হয়তো অর্থসম্পদের মোহে পড়েছিল। পরের দিন ভোর বেলা লোক ডেকে মিথ্যা সালিশ বসিয়ে কুকুরের মত দূরদূর করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলো আমাকে। এরপর আর কোনদিন পিছন ফিরে তাকাইনি শোয়েবের দিকে।’
প্রিয় কাঁদছে। গাল বেয়ে অশ্রু ঝড়ছে।বিমূঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ তোমার গর্ভের সন্তানের কি হয়েছিল?’
আয়েশা মাথা তুলে ছলছল দৃষ্টিতে প্রিয়’র মুখপানে একবার চাইলো। কান্না দলা পাকিয়ে আসলো। ছোট ঢোক গিলে নড়বড়ে আওয়াজটাকে শক্ত করার চেষ্টা করল। বলল,
‘ গ*র্ভে মেরে ফেলেছি তাকে!’
কেঁপে উঠল প্রিয়। গায়ের সব লোম আচমকা কাটাদিয়ে উঠল।

চলবে……..