প্রেমের পরশ পর্ব-৩১+৩২

0
282

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ৩১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়াকে নিয়ে লোকগুলো যাবে তার আগেই পুলিশের আগমন ঘটলো সেই স্থলে। পুলিশ এসেই থাই ভাষায় কিছু একটা বলল যা ছোয়া কিছুই বুঝতে পারল না। তবে এটুকু বুঝল যে, পুলিশরা হয়তো এখন তাকে বাচানোর জন্য দূত হয়ে এসেছে। ছোয়া মনে মনে আল্লাহকে লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করল এই জন্য।

পুলিশের সদস্যরা সবগুলো লোককেই ধরে নিয়ে গেল। লোকগুলো অনেক অনুরোধ করেও কোন লাভ পেল না।

একজন পুলিশ অফিসার ছোয়ার কাছে এসে ইংরেজিতে বলল,
‘আপনি ঠিক আছেন তো? ঐ লোকগুলো নারীদের নিয়ে ব্যবসা করে, আপনাকে দেখে তো বিদেশি মনে হচ্ছে, তাহলে আপনি কি কোনভাবে ওদের জালে ফেসে গেছেন?’

ছোয়া বুঝল এখন যদি সে সব সত্য বলে তাহলে তার বিপদ হতে পারে। কেননা, তার কাছে এই দেশের পাসপোর্ট ভিসা কিছুই নেই। তাই সে কিছুটা ছল করে বলল,
‘আমাকে আমার দেশ থেকে এখানে পাচার হয়েছে। আমি একজন বাংলাদেশী। প্লিজ আমাকে আমার দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।’

পুলিশ অফিসার তখন বলে,
‘আপনি একটু অপেক্ষা করুন। এটা যেহেতু খুব সিরিয়াস একটি বিষয় তাই এত সহজে মিটমাট করা যাবে না। আমাদের দেশের সরকার আপনাদের দেশের সরকারের সাথে কথা বলার মাধ্যমে আপনাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে।’

ছোয়া এবার একটু ভরসা পেলো। এই ভিনদেশে সে সত্যিই ভীষণ অসহায়। এখন এখান থেকে দেশে ফিরতে হবে সবার প্রথমে। অতঃপর আমান ও আব্দুল হোসেনকে কিভাবে বের করে আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।


আকাশের কালো মেঘ যেমন দূর হয়ে যায় মানুষের জীবনে বিপদও তেমনি ঠিকই একসময় দূর হয়ে যায়। সুখের পরেই দুঃখ, এবং দুঃখের পরেই সুখ-কথাটা মিথ্যা নয় মোটেই। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই তো আমাদের জীবন তাই তো বিপদে দিশেহারা হতে নেই। ধৈর্য ধরলে বিপদ ঠিকই দূর হবে।

ছোয়া ভালো ভাবে দেশে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই আমান ও আব্দুল হোসেনও সম্পূর্ণ নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে সসম্মানে দেশে ফিরে আসে। দেশের মধ্যেই তাদের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বিদেশী কোম্পানির সাথে সব চক্রান্ত করেছিল তবে এখন সব সমস্যার অবসান ঘটে গেছে। এর সমস্ত কৃতিত্ব আব্দুল হোসেনের কোম্পানির ম্যানেজার শাহিনের। সেই সমস্ত প্রমাণ জোগাড় করে বাচিয়ে নিয়েছে। নাহলে যে কি হতো! তাই তো আব্দুল হোসেন তাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। এমনকি আজকে নিজেদের বাড়িতে ডিনারেও ইনভাইট করেছে।

৬১.
রাতে খাবারের টেবিলে উপস্থিত হয়েছে বাড়ির সবাই। ছোয়া, মতিয়া বেগম এবং জান্নাতুল খাতুন সবাইকে খাবার দিচ্ছে। এর মধ্যে সবার মধ্যে কথাবার্তাও চলছে। আব্দুল হোসেন শাহিনের ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন,
‘তুমি অনেক ভালো কাজ করেছ। তোমার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব শাহিন।’

শাহিন মৃদু হেসে বলে,
‘কি যে বলেন না স্যার! আমি আপনার কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী। আপনার জন্য এটুকু তো করতেই পারি। আমার জন্য আপনি কি করেছেন সেটা তো আমি এত সহজে ভুলব না। আমি যেই সময় বেকার হয়ে ঘুরছিলাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরেও পরিচিত কোন চাচা,খালু না থাকায় চাকরি পাচ্ছিলাম না সেইসময় আপনি আমায় নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছেন। সেখানে আপনার বিপদের সময় যদি আমি কিছু না করতাম সেটার জন্য আমি নিজেই অনেক আফসোস করতাম।’

এভাবে টুকটাক কথা চলতে থাকে। তন্মধ্যে আলিয়া নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। আলিয়া আসতেই তার দিকে তাকায় শাহিন। মুহুর্তেই একরাশ ভালো লাগা এসে গ্রাস করে তার মনকে। ‘লাভ এট ফাস্ট সাইট’ বা প্রথম দেখায় ভালোবাসা নামক এক অনুভূতি খেলে যায় শাহিনের মনে। আলিয়া ডিনার টেবিলে এসে শাহিনের সামনেই একটি ফাকা সিটে বসে পড়ে।

আলিয়া সেখানে আসতেই আব্দুল হোসেন তাকে জিজ্ঞেস করে,
‘তোর আসতে এত দেরি হলো কেন?’

আলিয়া চোখের চশমা ঠিক করে জিভ কে’টে বলে,
‘সামনে তো আমার পরীক্ষা। তাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম একটু।’

আব্দুল হোসেন খাবার গলঃধরণ করতে করতেই বলেন,
‘আমি জানি তুই পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। কিন্তু তাই বলে এভাবে নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়লে তো চলবে না।’

জান্নাতুল খাতুন তাদের মাঝে বলে উঠল,
‘এটা তুমি কেমন কথা বলছ? আগামী সপ্তাহ থেকে ওর প্রি টেস্ট পরীক্ষা। সামনের বছরেই এসএসসি দেবে। এখন যদি ভালো করে না পড়ে তাহলে ভালো রেজাল্ট করবে কিভাবে?’

‘পড়াশোনা করা অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিন্তু নিজের ডেইলি রুটিনও ঠিক রাখতে হবে। যাইহোক আলিয়া তুই খাওয়া শুরু কর।’

আলিয়া আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করল। শাহিন আলিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল অপলক। যদিও তার একটু কেমন জানি লাগছে কারণ মেয়েটা দশম শ্রেণীতে পড়ে তার মানে শাহিনের থেকে ১০ বছরের ছোট। তবুও কেন জানি শাহিন নিজের বেহায়া চোখকে সরিয়ে নিতেই পারছিল না!

৬২.
রাতে আমান ও ছোয়া একই সাথে রুমে চলে এলো। আমান রুমে এসেই ছোয়াকে বলল,
‘তোমার জন্য একটা উপহার আছে।’

ছোয়া ভ্রু কুচকে জানতে চায়,
‘কি উপহার?’

আমান ধীরে ধীরে ছোয়ার কাছে আসে। অতঃপর ছোয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে কাছে টেনে নিয়ে ভালোবাসার উষ্ণতায় ঠোট ডুবিয়ে দেয় ছোয়ার ঠোটে। ছোয়া উপভোগ করতে থাকে আমানের প্রত্যেকটি স্পর্শ। সময় যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। এভাবে কিছু সময় সুন্দর ভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর আমান ছোয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। অতঃপর ছোয়ার হাতে একটি ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘এটা তোমার জন্য। হানিমুনেই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু যা সব হয়ে গেল,,’

ছোয়া মাদকতামিশ্রীত কন্ঠে বললো,
‘অতীত নিয়ে আর না ভাবি৷ অতীতের কালো ছায়া দূর হয়ে যাক আমাদের জীবন থেকে৷ এটাই আমার প্রত্যাশা।’

আমান ছোয়ার গালে, কপালে অনবরত চুম্বন খেতে লাগল। অতঃপর নেশাতুর গলায় বলল,
‘আজ কত দিন পর তোমায় পাশে পেলাম। আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। তোমাকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছা করছে।’

ছোয়া আমানের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
‘আমি তো তোমারই। আমাকে যখন খুশি, যতো খুশি কাছে টানতে পারো। কোন বাধা তো নেই।’

‘তবুও, আমি তোমার অনুমতি চাইছি।’

ছোয়া মুচকি হেসে বললো,
‘অনুমতির দরকার নেই। আমার কাছে আসার জন্য কোন অনুমতি লাগবে না।’

আমান যেন খুব খুশি হলো। অতঃপর একটু শয়তানী করে বললো,
‘আজ সারারাত কিন্তু তোমাকে জ্বালাবো, একটুও ঘুমাতে দেব না।’

ছোয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
‘আমিও প্রস্তুত আছি, সারা রাত জেগে কা’টিয়ে দেওয়ার জন্য।’

ব্যস, শুরু হলো আরেকটি মধুচন্দ্রিমার রাত। ছোয়া এবং আমানের মিলনের সাক্ষী হলো আরো একটি রাত। বাইরে জোনাকিরা জ্বলছে তো নিভছে এ যেন এক ভালোবাসার সাক্ষ্য দিচ্ছে। যেই ভালোবাসার মাঝে হারানোতেই লিপিবদ্ধ প্রকৃত সুখ। যেই ভালোবাসায় হারাতে চায় প্রত্যেকটা মানব-মানবী।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ৩২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে অবলোকন করল যে আমান তার পাশে নেই। ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে ছোয়া। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সকাল ৯ টা বেজে গেছে। ছোয়ার আপনা আপনি মাথায় হাত উঠে যায়। সে জিভ কে’টে বলে,
‘ইস এত দেরি করে ফেললাম। ভার্সিটিতে মনে হয় এতক্ষণে ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। কেউ আমাকে ডাকলোও না।’

ছোয়া আর বেশি সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল। অতঃপর রওনা দিল ভার্সিটির দিকে। ছোয়া ভার্সিটিতে পৌছানো মাত্রই আমান তাকে কল দিল। ছোয়া ফোন রিসিভ করেই নিজের সব ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলল,
‘তুমি আমায় ডাকলে না কেন? তোমার জন্য আমার ভার্সিটিতে পৌছাতে দেরি হয়ে গেল।’

আমান মশকরা করে বলে,
‘আসলে সারারাত তুমি যেভাবে কষ্ট করে জেগে কা’টিয়ে দিয়েছ তাই আমি তোমার মায়াবী চেহারা দেখে তোমার ঘুম ভাঙ্গাই নি।’

আমানের কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল ছোয়া। তার মানসপটে ভেসে উঠলো গত কালকের রাতের মধুর স্মৃতি। আমান মৃদু হেসে ফোন রেখে দেয়। কারণ সে বুঝতে পেরে গেছে ছোয়ার এখন লজ্জায় রাঙা অবস্থা হয়ে গেছে।

ছোয়া নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়ে ভার্সিটিতে ক্লাসের দিকে রওনা দিলো। ইতিমধ্যে দুটো ক্লাস হয়ে গেছে। ছোয়ার আফসোসের পরিমাণ বাড়ল।


ক্যান্টিনে মুখোমুখি বসে আছে ছোয়া ও নাদিয়া। ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই ছোয়াকে একপ্রকার জোরপূর্বক টেনে ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছে নাদিয়া। ছোয়া বিরক্তির সুরে বলল,
‘কি জন্য আনলি এখানে বলবি তো।’

নাদিয়া বলতে শুরু করল,
‘তুই তো স্বামীকে পেয়ে বেস্টুকে ভুলে গেছিস। না বলেছিস নিজের বিয়ের কথা আর না হানিমুনের। আমাকে কি তুই নিজের বান্ধবী মনে করিস না?’

ছোয়া আমতাআমতা করে বলল,
‘আসলে সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে,,,আচ্ছা যাইহোক তোকে কেন জানি খুব সিরিয়াস লাগছে। কিছু কি হয়েছে?’

নাদিয়া ছোয়ার প্রশ্নের জবাবে বিষন্নতা নিয়ে বলল,
‘জানিস আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আগামী সপ্তাহেই আমার বিয়ে।’

ছোয়া খুশি হয়ে গিয়ে বলে,
‘বাহ, এটা তো দারুণ খবর। তোর বিয়েতে কিন্তু অনেক মজা করব।’

‘মজা পরে করিস। আগে আমার কথা শোন। আমি বিয়ে নিয়ে অনেক দ্বিধা দ্বন্দে আছি। কারণ যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে তাকে চিনি না পর্যন্ত। বাবার নাকি কোন বন্ধুর ছেলে। বারকয়েক দেখা হয়েছে তার সাথে। ছেলেটা এমনিতে ভালো, একজন ডাক্তার। কিন্তু এভাবে কি বিয়ে হয়?’

‘কেন হয়না?’

নাদিয়া আফসোস করে বলল,
‘এই দেখ যেমন তোর সাথে তোর চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে হলো৷ তোরা আগে থেকেই একে অপরকে চিনতি, তাই তো এত ভালো বোঝাপড়া তোদের মধ্যে।’

ছোয়া নাদিয়াকে বুঝিয়ে বলল,
‘দেখ এরেঞ্জ ম্যারেজ খারাপ কিছু না। বিয়ের আগে যতটুকু খোজ নেওয়া সম্ভব নে। একে অপরের ভালো লাগা, মন্দ লাগা জেনে নে। এটুকুই এনাফ। এমন হতে পারে বিয়ের পর তোদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক হবে। প্রেমের পরশে স্নিগ্ধ হবি দুজনে।’

নাদিয়া সহমত প্রকাশ করে বলে,
‘হয়তো তুই ঠিকই বলছিস।’

অতঃপর দুজনে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।

৬৩.
এক সপ্তাহ যেন চোখের নিমেষেই অতিবাহিত হলো। আজকে নাদিয়ার গায়ে হলুদ। সেই উপলক্ষে নাদিয়ার বাড়িতে এসেছে ছোয়া৷ তবে একা আসেনি৷ সাথে করে নিয়ে এসেছে আলিয়াকেও। জান্নাতুল খাতুনই তাকে আসতে বলেছে কারণ পড়াশোনা নিয়ে সারাদিন এত ব্যস্ত থাকে যে অন্য কোথাও মনও দেয় না।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসে শাহিনকে দেখে অবাক হয়ে যায় ছোয়া। পরবর্তীতে জানা যায় শাহিনের চাচাতো ভাইয়ের সাথেই নাদিয়ার বিয়ে হচ্ছে।

শাহিন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসেছে থেকে আলিয়াকেই দেখে যাচ্ছে। আলিয়াও এক সময় তাকায় শাহিনের দিকে। মেয়েদের দৃষ্টি অনেক সজাগ হয়। আলিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটে নি। সে শাহিনের চোখের দৃষ্টি দেখেই বুঝে ফেলেছে তার মনের কথা। তাই তো তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। শাহিনের দৃষ্টির অগোচরে যাওয়ার জন্য নাদিয়ার বাড়ির ছাদে চলে আসে আলিয়া।

তবে কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয়, সেখনেই সন্ধ্যা হয়। এক্ষেত্রেও তাই হলো। শাহিনও আলিয়ার পিছু পিছু ছাদে চলে এলো। আলিয়া একটু স্পষ্টবাদী মেয়ে। তাই সে সরাসরি শাহিনের সামনে গিয়ে বললো,
‘আপনি কি আমায় পছন্দ করেন?’

শাহিন থতমত খেয়ে গেল৷ তবে নিজের মনের কথা লুকিয়ে রাখার অভিব্যক্তি তার ছিল না৷ সেই কারণে স্বীকার করে নেয় নিজের অনুভূতি। শাহিন বলল,
‘হ্যা পছন্দ করি।’

আলিয়া নিজের চোখের চশমা ঠিক করে নিয়ে বলে,
‘এটাই সন্দেহ করেছিলাম। হোয়াটএভার, ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এসব প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করি না। আমি মন দিয়ে স্টাডি করতে চাই। তাই ভালো হবে যদি আপনি আমার পিছু নেয়া ছেড়ে দেন।’

কথাটা বলেই ছাদ থেকে নেমে আসে আলিয়া। শাহিন আনমনে হেসে দেয়। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলে,
‘বাহ, তোমার এই তেজ দেখে তো আরো বেশি প্রেমে পড়ে গেলাম। এখন আমার কি হবে? হাটুর বয়সী একটা মেয়ের প্রেমে এভাবে হাবুডুবু খেতে হবে ভাবতেও পারিনি।’

৬৪.
নাদিয়ার বিয়ে হয়ে গেল! বেশ জাকজমক ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। বিয়েতে ছোয়া, আমান, আলিয়া সকলেই উপস্থিত ছিল। আলিয়া আজও লক্ষ্য করেছে শাহিন তাকে বারবার দেখছে৷ ব্যাপারটায় খুব বিরক্ত বোধ করল সে। তাই বিয়ের পাট মিটতেই আলিয়া শাহিনের কাছে এলো। শাহিনের চোখে চোখ রেখে রাগী গলায় বলল,
‘আপনাকে কাল কি বলেছি মনে নেই? দূরে থাকুন আমার থেকে।’

‘আমি তোমার কাছে কখন গেলাম?’

‘অদ্ভুত,,আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন কেন?’

শাহিন বললো,
‘এমনিই। তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না। তোমার পাশে যেই মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল তাকে ভালো লেগে গেছে।’

আলিয়া একবার পিছনে ফিরে তাকায়। সে যেখানে দাড়িয়ে ছিল তার পাশেই খুব রূপসী একটি মেয়ে দাড়িয়ে। আলিয়ার হিংসা হলো এবার। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘আপনি কেমন মানুষ? কালকে বললেন আমাকে ভালোবাসেন আজকে আবার অন্য মেয়ের উপর ফিদা হয়ে যাচ্ছেন?’

শাহিন অনেক কষ্ট করে নিজের হাসি দমিয়ে রেখে বললো,
‘তুমি তো আমায় পাত্তা দিলে না। তাই,,,’

আলিয়া এবার বললো,
‘আমারও আপনাকে ভালো লেগেছে কিন্তু আমার পড়াশোনা,,’

‘আমি তোমার পড়াশোনায় ডিস্টার্ব করব না, বরং কোন হেল্প লাগতে করতে পারি। আমি কিন্তু অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম।’

আলিয়া গলে গেল যেন। চটপট করে নিজের ফোন নম্বর বিনিময় করে নিল শাহিনের সাথে। এখান থেকেই যেন মন বিনিময়ের শুরুটা হয়ে গেল।


ছোয়া খুব টেনশনে আছে। সামনে তার ইয়ার চেঞ্জিং এক্সাম। কিন্তু পড়াশোনার অবস্থা খুব খারাপ। মাঝে যেই ঘাটতি তৈরি হয়েছে সেটা পূরণ করার জন্য অনেক পড়তে হবে তাকে।

আমান এক কাপ কফি এনে ছোয়ার ডেস্কে রাখল। অতঃপর বলল,
‘আমার ভরসা আছে তোমার উপর। তুমি চাইলেই সব পড়া কমপ্লিট করতে পারবে। আর রেজাল্টও ভালো হবে।’

ছোয়া বলল,
‘হুম আমাকে পারতেই হবে। আমার আব্বুর ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। আমি চাই পড়াশোনা কমপ্লিট করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে কোন জব করতে।’

আমান ছোয়ার হাতে হাত রেখে বলে,
‘আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। তোমার স্বপ্ন শুধু তোমার নয় আমারও।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨