#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[২৮]
এক মেদুর দিনের আদুরে বিকেলের কথা। কিশোরী প্রিয়া তখন সবে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বাবা রেজাউল করীমের প্রতিদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে চা খাওয়ার অভ্যাস। তিনি বাড়িতে থাকলে প্রতি দু’ঘন্টা অন্তর এক কাপ চা খেতেন। যার ফলে রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট থেকে আনা স্পেশাল চা পাতার সুঘ্রাণ নাকে সুড়সুড়ি দিতো সব সময়। একদিন প্রিয়ার ইচ্ছে হলো বাবাকে চা বানিয়ে খাওয়াবে। ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটাতেই বাবার অফিস থেকে ফেরার সময়ে চুপিচুপি রান্নাঘরে ঢুকে চা বানাতে লেগে যায় সে। প্রথমবার নিজ হাতে চুলা জ্বা’লানোর উত্তেজনায় প্রিয়া ভীষণ খুশি ছিল। অভিজ্ঞতা ও পরিমানের আন্দাজ না থাকায় লিকার এবং চিনি হয়েছিল অতিরিক্ত। তিতকুটে মিষ্টি শরবতের অনুরূপ সেই চা খেয়ে বাবা ভীষণ খুশি হলেন। মেয়ের হাতের প্রথম চা বলে কথা! সেই সঙ্গে সাবধানও করলেন কাউকে পাশে না রেখে যেন দ্বিতীয়বার রান্নাঘরে না যায়। অপটু হাতে পাছে কোনো অঘটন ঘটে! বাবা কী জানেন তার মেয়ে এখন রোজ দুবেলা হাত পুড়িয়ে রাঁধে? জেলে দেখা করতে গিয়ে প্রিয়া বাবার সঙ্গে কোনো কথাই বলতে পারে না। বাবাও নতমস্তকে থাকেন। একসময় দেখা হওয়াটা যতটা প্রশান্তির ছিল এখন ততটাই মানসিক অশান্তির, বিব্রতকর। অনুভূতি বদলাতে সময় লাগে না, গতানুগতিক জীবনের স্বাভাবিকতার ছন্দপতন হলেই অনুভূতির ছন্দপতন হয়।
প্রিয়া এলোমেলো ভাবতে ভাবতেই ভাতের মাড় গালছিল। ঢাকনা ফসকে গরম ফেন পড়ে গেল হাতে। প্রবল উত্তাপের জ্ব’লুনিতে চৈতন্য ফিরল ওর। কণ্ঠ নিংড়ে বেরিয়ে আসে আ’র্তনাদ। মুনিরা বেগম পাশেই বসে রান্নার সরঞ্জাম গোছাচ্ছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে গেলেন কয়েক পলের জন্য। এরপর মেয়ের হাত জগের ভেতর চেপে ধরলেন। গজগজ করে বললেন,
“কাজের সময় মনোযোগ কই থাকে? পুড়ল তো হাতটা? এখন বরফ কই পাই?”
প্রিয়া ঠোঁট চেপে চোখ বুজে থাকে। পানির সান্নিধ্যে একটু আরাম লাগছে। কিন্তু হাত বের করলেই আবার জ্ব’লছে। বরফের কথা শুনে দিয়া ছুটে বেরিয়ে গেছে। রঞ্জু তাকে ছুটতে দেখে পিছু ডেকে বলল,
“ও দিয়া, ভাগ মিলখা ভাগ কইরা কই যাও?”
“আপুর হাত পুড়ে গেছে। বরফ লাগবে রঞ্জু ভাইয়া।”
রঞ্জু চমকে উঠল। ফুরফুরে মেজাজ মিলিয়ে গেল নিমিষেই। ব্যস্ত গলায় বলল,
“কী কও! চলো আমার সাথে।”
রঞ্জু দুটো কাঠি আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো প্রিয়ার জন্য। মুনিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“খালাম্মা, এইটা লাগান, আরাম পাইব।”
মুনিরা আইসক্রিমের প্যাকেট খুলে প্রিয়ার ভেজা হাতের কব্জিতে চেপে ধরে। প্রিয়া বলল,
“এটার দরকার ছিল না রঞ্জু ভাই। অল্পই পু’ড়েছে।”
“তুমি সংসারের একমাত্র কাজের মানুষ। অসুস্থ হইলে ক্ষতি। আমার দেওয়া দেইখ্যা সংকোচ কইরো না। অন্যকেউ হইলেও তো দিতাম। দিতাম না?”
প্রিয়ার আর কিছু বলার রইল না। রঞ্জুর নারীপ্রীতি স্বভাবের ফলেই প্রিয়া তাকে এড়িয়ে চলে ঠিক। কিন্তু ছেলেটা কিছুটা উ’শৃংখল, ব’খাটে গোছের হলেও সেবাপরায়ণ। রঞ্জু অবশ্য দাঁড়াল না। সে বস্তির অঘোষিত মুশকিল আসান ধরনের মানুষ। এক জায়গায় বেশি সময় থাকতে পারে না। কোনো কাজের দরকারে ছুটে চলে গেল।
দিয়া বোনের পাশে বসে একদৃষ্টিতে আইসক্রিম গলে গলে পড়া দেখছিল। প্রিয়া তা খেয়াল করল। মেয়েটা আগে আইসক্রিম, চকলেটের জন্য কত পা’গলই না ছিল। এখন তিনবেলা পেট ভরে খেলেই হলো। প্রিয়া অপর আইসক্রিমটা দিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমার আর লাগবে না। খেয়ে নে।”
দিয়া বোনের লাল হয়ে যাওয়া হাতের কব্জিতে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে বলল,
“না, তোমার হাত লাল হয়ে গেছে। এটাও লাগবে।”
“গলে যাচ্ছে তো। শুধু শুধু নষ্ট হওয়ার চেয়ে তুই খেয়ে নে।”
ভাতের মাড় অসাবধানে পড়ে গিয়ে অনেকগুলো ভাতও পড়েছে। প্রিয়া হাড়ির ভাত দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন পুনরায় রাঁধার সময় নেই। ও খেয়ে গেলে মা-বোনের কম পড়বে। মাকে আবার চুলার কাছে আসতে হবে যেটা ভীষণ ককষ্টসাধ্য মানুষটার জন্য। এরপর নিজের অপারগতায় মা সারাদিন গু’মরে থাকবে। কী দরকার! ঘড়িতে সময় দেখল প্রিয়া। কাজে যাওয়ার সময় হয়েছে।
মেয়েকে পোড়া হাতে না খেয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে মুনিরা আঁতকে উঠলেন। নিষেধ করে বললেন,
“আজকে না গেলি। ফোনে বলে দে।”
“মানবে না মা। এমনিতেই পরীক্ষার সময় বন্ধ করেছি।”
“খেয়ে যা, হাতে মলম লাগাতে হবে।”
“ও বাড়ি গিয়ে খেয়ে নেব। মলম পথে যেতে কিনে নেব, তুমি চিন্তা করবে না একদম।”
প্রিয়া অনুভবদের বাড়ি পৌঁছাতেই লিফটের কাছে অনুভবের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। অনুভব ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে তখন। ওকে দেখে মুচকি হেসে বলল,
“কেমন আছো হাসু?”
হাসির বিপরীতে প্রিয়া মুখটা ম্লান করে বলল,
“হাসু কেমন আছে জানি না, প্রিয়া ভালো আছে।”
“আমার তো তা মনে হচ্ছে না। মুখটা শুকনো কেন?”
“ভেজা কবে ছিল?”
প্রিয়া স্বাভাবিক সুরেই বলল। অনুভব মুখ কুচকাতে গিয়েও হেসে ফেলল। এই মেয়েটার এমন গম্ভীর সুরের কথাগুলো আজকাল তার ভালো লাগে। বিপরীত স্বভাবের মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতে মন্দ লাগে না। অনুভব বলল,
“তুমি খুব ভদ্রভাবে ত্যাড়া জবাব দিতে জানো। অপরপক্ষকে অপ্রস্তুত করতে যা অব্যর্থ।”
“আমি যাই।”
প্রিয়া হাতের চিনচিনে ব্যথা সামলে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। অনুভব হাত ধরে ওকে আটকাতে গেলে মুখ থেকে ক্ষীণ আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। অনুভব খেয়াল করে বলল,
“কী হয়েছে হাতে?”
প্রিয়া হাত সরিয়ে নিতে চাইলে সে ছাড়ল না। তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। প্রিয়া বলল,
“ভাতের মাড় গালতে গিয়ে গরম ফেন পড়েছে।”
“মেডিসিন লাগাওনি?”
“লাগিয়ে নেব পরে।”
অনুভব ধমকে বলল,
“তোমার পরের জন্য ক্ষতের জ্বা’লা থেমে থাকবে? সবকিছুতে ভাব দেখানো বন্ধ করো।”
অনুভব ওকে টেনে নিয়ে লিফটে উঠে গেল। বাড়িতে নিওবার্নিয়া মলম ছিল। অনুভব নিজের হাতে সেই মলম ওর হাতে ফু দিয়ে দিয়ে লাগিয়ে দিল। বলল,
“পাকামো করবে না একদম। জাইমকে কোলে কম রাখবে। দোলনায় বসিয়ে খেলা কোরো। আর বেশি খারাপ লাগলে বুড়ি তো আছেই সুস্থসবল। তার কাছে রেখে বাড়ি চলে যেয়ো।”
প্রিয়া কোনো জবাব দিল না। তাচ্ছিল্য ভরা দুনিয়াতে একটুখানি যত্ন পেয়ে ওর চোখজোড়া আড়ালে ভিজে উঠল বোধহয়। অনুভব প্রিয়ার মাথায় আলতো হাত রেখে চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে ছুটে এসে ওর ওপর হা’মলে পড়লেন অন্তরা আপার মা। বাজখাঁই সুরে বললেন,
“তোমার আব্বা নাকি অ’প’রাধী? কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের দায়ে জে’লে গেছে?”
কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই প্রিয়ার সর্বাঙ্গে কাঁপুনি ছুটে গেল। আব্বা অপ’রা’ধী! এমন জঘন্য শব্দ ইহজগতে দুটি হয়? প্রিয়ার কেমন দমবন্ধ লাগে। মানসপটে ভেসে ওঠে বাবার ভারী মুখখানা।
রেজাউল করীম সারাজীবন কন্যাদের কাছে ছিলেন এক আদর্শ পিতা, স্ত্রীর নিকট আদর্শ স্বামী, পরিবারের নিকট একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব। স্ত্রী যখন প্যারালাইজড হলেন রেজাউল করীম যথেষ্ট সেবা করেছেন বলতে দ্বিধা নেই। মেয়েদুটোকেও আগলে রেখেছেন৷ কখনো গায়ে হাত তোলা তো দূর অন্যকেউও কন্যাদের দিকে বক্র চোখে তাকালেও বরদাশত করতেন না। স্বল্পভাষী প্রিয়া সারাক্ষণ চুপচাপ থাকলেও বাবার সামনে তার গল্পের অন্ত ছিল না। ছিল না জীবনে কোনো বিষাদের হাতছানি। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে রোজ রাতে তারা ঘুমাতে যেত। এরপর হুট করেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। লোভের ঝকঝকে মোহে পড়ে রেজাউল হক ভুল করলেন, অথবা পাপ। প্রিয়া দেখতে পেল বাবাকে কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে বাকি তিনটি মানুষের ভাগের সকল সুখ। চেনা পৃথিবীটা সেদিন থেকেই আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। বড়ো চাচি অ’প’রাধীর মেয়ে-বউকে বাড়িতে রাখতে চাইলেন না। একই রক্তের ধারা, তাদের দ্বারাও অন্যায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নিজের সন্তানদের সঙ্গে ওদের দুই বোনকে রাখা বিপদজনক। বড়ো চাচির দুটি মেয়ে বিবাহযোগ্যা। এসব রটনা ছড়ানোর পর তাদের বিয়ে দিতেও ঝামেলা হবে। সুতরাং সব সমস্যার সমাধান অ’প’রাধী রেজাউল করীমের অস্তিত্বদের বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলা। বড়ো চাচি নিজের সন্তানদের প্রতি সচেতনতা প্রকাশের সাথে সাথে অন্যের সন্তানের প্রতি নি’র্ম’মতার পরিচয় দিলেন।
শূন্য হস্তে বিতাড়িত হয়ে ঠাঁই পাওয়ার আশায় প্রিয়ারা ছুটল মামা বাড়িতে। সেখানে থেকে এইচএসসি পরীক্ষাটা দিতে পেরেছিল প্রিয়া। কিন্তু তিনটি মানুষকে ঘাড়ে বসিয়ে খাওয়ানোর ঝামেলা কে নিতে চায়? তার ওপর একটি মেয়ে সমাজের চোখে প্রায় বিবাহযোগ্য। মামার আর্থিক অবস্থাও আহামরি নয়। মামীর মিষ্টভাষী স্বরটা অল্প কয়দিনেই নিমের মতো তেতো হতে থাকল। আশেপাশের মানুষের কটুক্তি তো ছিলই। মামা চাইলেন ভাগ্নীকে বিয়ে দিয়ে দেবেন। জোগাড় করলেন একজন মুদি দোকানওয়ালাকে। প্রিয়া বুঝে গেছিল বিয়েটা করে নিলে নিজে কেমন থাকবে আর মামার বাড়িতে মা-বোনও কেমন থাকবে। মুনিরা বিয়েতে আপত্তি তুললেন। উনার নিজেরই বিয়ে হয়েছিল একুশ বছর বয়সে। মেয়েকে আঠারোতে দেবেন তাও আবার অশিক্ষিত ছেলের কাছে! মামা-মামী রূঢ় হতে শুরু করলেন। স্বামী জেলে গেছে, অর্থ আত্মসাতের মা’মলায় তিন বছরের জে’ল-জরিমানা হয়েছে। তার পরিবারের এত দে’মাগ কোত্থেকে আসে? কোনো উচ্চশিক্ষিত, সম্রান্ত ঘর এই পরিবারে আত্মীয়তা করবে না। ওরা বুঝল মামা বাড়িতেও দিন ফুরিয়েছে। আর কেউ নেই মাথার ওপর ছায়া হওয়ার। পায়ের নিচে জমি দেওয়ার।
সকলের হীন দৃষ্টি থেকে বাঁচতে, একটা ভালো বাড়ির ভাড়া বহন করার ক্ষমতাটুকুও কপালে নেই বলেই বাধ্য হয়েই বস্তিতে উঠতে হয়েছে ওদের। প্রিয়ার মন তাগিদ দিয়েছে বড়ো হতে হবে। সংসারের ছায়া হতে হবে। সেই থেকেই তার কৈশোরের কোমলতা ধীরে ধীরে গম্ভীরতায় ঢেকে গেছে। বস্তিতে ওরা কাউকেই বাবার অ’প’রাধের কথা জানায়নি। এ নিয়ে খুব সচেতন থেকেছে। তারপরেও অন্তরা আপার মা কী করে জেনে গেল প্রিয়ার মাথা কাজ করছে না। তবে উনি যে প্রশ্নটা করেছেন তার উত্তরে প্রিয়া বলতে পারে তার বাবা অপ’রাধী নয়। বাবা সত্ত্বাটা কখনো তাদের সঙ্গে অ’ন্যায় করেনি। ব্যক্তি রেজাউল করীম অপ’রা’ধী হতে পারেন। যাকে প্রিয়া অস্বীকার করে। স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় বাবা সত্ত্বাটাকেই।
জবাব না পেয়ে বৃদ্ধা চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন,
“কি অবাক কান্ড! জেল খাটা আ’সামীর মেয়ে হয়ে ছদ্মবেশে চাকরি নিয়েছো? তোমার মতলব তো ভালো না। চু’রি, ডা’কাতি করতে ঢুকেছো? প্রথমে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করবে এরপর সব নিয়ে ভেগে যাবে।”
“আমি ছদ্মবেশ নেইনি।” প্রিয়া ভাঙা সুরে কোনোমতে উচ্চারণ করে।
“আবার মুখে মুখে কথা! এখন তো সন্দেহ হচ্ছে বাড়ির সবকিছু সহিসালামত আছে কিনা। আল্লাহ গো আল্লাহ, দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষছিলাম বাড়িতে! বাড়ির ছেলের দিকেও তো হাত বাড়িয়েছ। দিনে-দুপুরে ফাঁকা বাড়িতে ফ’ষ্টিন’ষ্টি করে বেড়াচ্ছ। ভেবেছ বুড়ো মানুষ চোখে কিছু দেখি না? আর কী কী ধান্দা জানো? তাই তো বলি এমন ভেজা বেড়াল হয়ে থাকে কেন?”
প্রিয়ার কানে কেউ গরম সিসা ঢালছে বোধহয়। মনে হচ্ছে অদৃশ্য এক হাত গলা চেপে ধরেছে। মুখ ফুটে একটা প্রতিবাদও করতে পারছে না। এরপরের বাকিটা সময় প্রিয়া ঘোরগ্রস্তের মতো রইল। হাজারটা নোংরা বাক্য তার কান ছুঁয়ে গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে পারল না। শুধু মনে মনে হিসেব করতে লাগল এই চাকরিটা যাওয়ার পর কত বড়ো ধাক্কাটা আসবে? কতদিন আধপেটা খেয়ে থাকবে? নতুন কাজ আদৌ জুটবে তো? আর পড়াশোনা? একসময় বৃদ্ধা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার আগে পোশাক খুলে শরীর চেক করে দেখতে চাইল বাড়ি থেকে কোনোকিছু সরিয়ে নিয়েছে কিনা। প্রিয়া লজ্জায় অপমানে মাটিতে মিশে যাচ্ছে প্রতিক্ষণে। সেই লজ্জার কাছে পো’ড়া স্থানের ব্যথা নস্যি হয়ে গেল। বন্ধ চোখের কবাট হতে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল বিরামহীন। অবস কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলল,
“আল্লাহ, শক্তি দাও, ধৈর্য দাও।”
চলবে…
#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[২৯]
অনুভব বাড়ি ফিরল ঘন্টাখানেক পর। ভার্সিটির উদ্দেশ্যে অর্ধেক পথ যাওয়ার পরই জানতে পেরেছে সকালের ক্লাসটা ক্যান্সেল হয়েছে। টুকটুকি বাড়ি ফিরে গেছে, দিগন্ত আজ ক্যাম্পাসে যায়নি। আর নন্দিনীর কোনো খবর নেই। অনুভবেরও আর ইচ্ছে হলো না যাওয়ার। মাথায় ঘুরেফিরে ভাসছিল প্রিয়ার ম্লান মুখটা। মাঝপথ থেকে বাড়ির পথ ধরল আবার। নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে ভ্রু কুচকে যায় ওর। দরজাটা খোলা, সামনে একজন প্রতিবেশী আন্টি এবং ছুটা বুয়া দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে যেতেই ভেতর থেকে বুড়ির ভাঙা গলার কর্কশ স্বর শোনা গেল। তিনি প্রিয়াকে ধমকে বলছেন,
“কাপড় খুলো। কিছু যদি নাই নিয়া থাকো তাহলে কাপড় খুলতে অসুবিধা কই?”
অনুভব হতবিহ্বল হয়ে ভেতরে ঢোকে। প্রিয়া মুখ নামিয়ে নিরবে কাঁদছে। সামনে মূর্তিমান হয়ে জেরা করছেন বৃদ্ধা। গতকাল রাতেও মেয়ে-জামাইয়ের সামনে যিনি ঠিকমতো উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা পাচ্ছিলেন না, আজ কোমড়ে আঁচল গুজে সটান দাঁড়িয়ে আছেন। অবশ্য অনুভব খেয়াল করেছে ভাইয়া-ভাবী বাড়িতে উপস্থিত থাকলেই উনার অসুস্থতা, বাতের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং বার্ধক্যজনিত সকল রোগের উৎপাত হয়। অনুভব মনোযোগ আকর্ষণ করে জানতে চাইল,
“এখানে কী হচ্ছে?”
প্রিয়া চোখ তুলে চেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুখ নামিয়ে নেয়। লজ্জার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়। আরও অপমান বাকি ছিল তার! ঠোঁট ভেঙে চিৎকার করে কান্না আসতে চাইছে। কিন্তু পরিস্থিতি গলা চেপে ধরেছে। ঠোঁট চেপে চুপচাপ দেখছে নিজের দুরবস্থা। বৃদ্ধা দমে না গিয়ে বললেন,
“দেখো অনুভব, দুধ-কলা দিয়া কালসাপ পুষতাছি বাড়িতে। জেল খাটা আ’সা’মীর ঘরের মেয়ে বাড়িতে ঢুকিয়েছি। কে জানে কতকিছু সাফাই করেছে বাড়ি থেকে।”
অনুভব বিস্ময়ে তাকায় প্রিয়ার দিকে। সেই দৃষ্টির সামনে প্রিয়ার অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে অলৌকিক কিছু হোক, সে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাক। আচ্ছা, অনুভব এসব বিশ্বাস করবে? সবার মতো বাবার দোষের ভাগ সন্তানের ওপর চাপিয়ে তাকে খারাপ ভাববে? অনুভব বলল,
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না। প্রিয়া, তুমি কী একটু সরাসরি বলবে ঘটনা কী?”
অনুভবের মুখে নিজের সঠিক নামটা শোনার ভীষণ ইচ্ছে ছিল প্রিয়ার। শোনা হলো, কিন্তু বড্ড অসময়ে। যখন সমস্ত পৃথিবী চাইছে সে কাঁদুক, মুখ লুকিয়ে বাঁচুক। অ’প’রাধীর পরিবারের নিষ্পাপ সদস্যদের ভালোমতো বাঁচার অধিকার নেই। আশেপাশের মানুষ তাদের ভালো থাকা দেখতে পারে না। বৃদ্ধা বললেন,
“ও কী বলবে? আমি বলতেছি শুনো। এই মেয়ের বাপ বছরখানিক আগে কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের দায়ে জেলে গেছে। এদেরও স্বভাব চরিত্র ভালো না দেখে দাদার বাড়িতে টিকতে পারে নাই। বের করে দিছে। পরিচয় গোপন করে আমাদের জাইমের কেয়ারটেকারের কাজ নিছে। কত্ত বড়ো ধা’ন্দা’বাজ চিন্তা করছো!”
অনুভব প্রিয়ার দিকে তাকায়। প্রিয়া প্রতিবাদ করল, “আমি কখনোই পরিচয় গোপন করিনি।”
“চুপ, বে’য়া’দব মেয়ে। আমার অন্তরাকে ভোলাভালা পেয়ে সুযোগ বুঝে ঢুকে গেছো বাড়িতে। আল্লাহ জানে এতদিনে কত কত জিনিস বাড়ি থেকে পাচার করছো। সেদিনই খেয়াল করছিলাম ওড়নার তলে পোটলা করে কি জানি নিতাছে। আমার তখনই এই মেয়েরে সন্দেহ হইছে।”
প্রিয়ার দিশেহারা লাগে। বোনের জন্য সে এ বাড়ি থেকে খাবার নিয়েছে কয়েকবার। কিন্তু সেটা নিজের ভাগেরটুকু। এছাড়া আর একটা দানাও এদিক থেকে ওদিক করেনি। আর সেটাই আজ তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে!
“জাইমের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখিনি। আপনি নিজেই সব সময় চোখে চোখে রেখেছেন আমায়। কখনো দোষ ধরতে পারেননি। আজ শুধু বাবার পরিচয়ে আমার সকল নিষ্ঠা কলুষিত, আন্টি?”
“পরিচয়েই মানুষের চেনা যায়। হারাম খেয়ে বড়ো হইছ বলেই তো মায়ের চলাফেরার শক্তি নাই। মাথার উপরে ছাদ নাই।”
কথাটা প্রিয়াকে সজোরে ধাক্কা দেয়৷ সত্যিই কি তাই! বাবার হারাম টাকা পেটে গেছে বলেই এমন দুরবস্থা ওদের! অনুভব এক দৃষ্টে প্রিয়ার পরাজিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে আগেই বুঝেছিল প্রিয়া উচ্চবংশীয় পরিবারের। কিন্তু পরিচয়টা এতটা রূঢ় হবে ভাবেনি। দ্বিধা নেই অনুভবের সত্যিটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। আবার এটাও সঠিক বাবার পরিচয়ের জন্য প্রিয়াকে সে খারাপ ভাবতে পারছে না। মেয়েটির মার্জিত রুচিবোধ, স্পষ্টভাষী ও দৃঢ় আচরণ অনুভবের চেনা। স্বভাবে কোনো ধোয়াশা, ভণ্ডামি, কপটতা নেই। বিগত মাসগুলোতে একবারও তাকে স্বভাবের বিচ্যুতি ঘটাতে দেখেনি। বরং বিষন্ন মুখটায় অব্যক্ত য’ন্ত্র’ণা লেপ্টে থাকে সর্বদা। অল্প বয়সে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে কৈশোরের কোমলতা ভুলে নিজেকে চরম বাস্তবতায় ঠেলে দিয়েছে। শুধু বাবার পরিচয়টাকে মূখ্য করে দেখে মেয়েটির নিজস্বতাকে উপেক্ষা করতে পারে না অনুভব। হতে পারে প্রিয়া পরিস্থিতির শিকার। প্রতিবেশীরা উৎসুক হয়ে বিনোদন দেখছিল। বৃদ্ধা ততক্ষণে আবারো চেঁচিয়ে বলতে লেগেছেন,
“এখনো দাঁড়ায় আছো কোন সাহসে? কাপড় খুলতে বলছি না।”
“আপনি অহেতুক সন্দেহে এমনটা করতে পারেন না।” প্রিয়া দুর্বল কন্ঠে শেষ চেষ্টা করে। তাতে বৃদ্ধার গলার তেজ আরো বাড়ে,
“আমিও দেখি কাপড় চেক না করিয়ে কেমনে বাড়ির বাইরে পাও রাখো।”
নানির চিৎকারেই বোধহয় জাইমের ঘুম ভেঙে গেছে। বাচ্চাটা তারস্বরে কাঁদছে। প্রিয়া ওকে নিতে যেতে চাইল। বুড়ি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলল,
“খবরদার তোমার নোংরা ছায়া আমার নাতির উপরে ফেলবা না।”
অনুভবের মেজাজ খারাপ হলো এবার। বলল,
“তো আপনার শুভ ছায়া কেন ফেলছেন না? ছেলেটা কী কেঁদেই যাবে?”
“বাচ্চা মানুষ কাঁদবেই। দুই এক মিনিটে কোনো ক্ষতি হয় না। আগে এই মেয়ের বিহিত করি।”
অনুভব বিরক্ত হয়ে প্রথমে সপাটে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করল। এরপর জাইমকে কোলে করে এনে বলল,
“কোনো রকম ইমবেরেসিং ঘটনা ঘটবে না। ভাইয়া-ভাবী আসুক। তাদের সামনে ঠান্ডা মাথায় খোলাখুলি কথা হবে।”
“খোলাখুলির কিছু নাই। অন্তরাই একটু আগে আমায় ফোন করে সব জানিয়েছে। এই মেয়ের বড়ো চাচি নেহাৎ ভালো মানুষ। তাই আগেভাগে সাবধান করে দিছে। এখন আমি যা করব তাই।”
প্রিয়া বিস্ময়ে নির্বাক। বড়ো চাচি! শায়লা চাচি এতটা নিচে নামতে পারলেন! শুধুমাত্র উনার ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে সম্বন্ধ করতে রাজি না হওয়ায়! চেনা মানুষের আর কত অচেনা রূপ দেখা বাকি আছে!
অনুভব ঠান্ডা স্বরে বলল,
“আপনি কী সিদ্ধান্ত নিতে চান?”
“ওকে এই মুহূর্তে কাজ ছাড়া করব।”
“এত অপমানের পর প্রিয়া এমনিতেও এই বাড়িতে কাজ করতে আসবে না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। প্রিয়া, তুমি চলো।”
বৃদ্ধা অবাক হয়ে বললেন, “চলো মানে? আমি ওরে চেক না করে বাড়ির বাইরে যাইতে দিব না।”
অনুভবও শক্ত কণ্ঠে বলল, “আপনার কোন জিনিস হারিয়েছে?”
“কী হারিয়েছে সেইটা তো ওকে চেক করেই বুঝব।”
“আমিও ওকে চেক করতে দেব না। যদি কিছু হারিয়েই থাকে তো বলুন। এরপরে সিদ্ধান্ত নেব।”
জাইম অনুভবের কোল থেকে বারবার প্রিয়ার দিকে হাত বাড়াচ্ছে। আধো বুলিতে আতি আতি বুবুবু করে ডাকছে। বাচ্চাটা পুরোপুরি ওর ন্যাওটা হয়ে গেছে। শত অপমানের মাঝেও প্রিয়ার বুকে মমতা জাগে। কিন্তু সেই মমতাকে আশকারা দিয়ে অবুঝ শিশুটির ডাকে সাড়া দিতে পারে না।
বৃদ্ধা অনুভবের কথায় বেজায় চটেছেন,
“সব জেনেও তুমি এমন কথা কি করে কও। এই মেয়ের প্রতি কীসের এত টান তোমার? কী দিয়ে বশ করছে?”
“বশ যে প্রিয়া করতে পারে না আপনিই তো তার জ্ব’লন্ত প্রমাণ। নয়তো এভাবে একজনকে শুধু বাবার পরিচয়ের জন্য হ্যারাস করেন।”
“তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করতেছো অনুভব। থাকো তো আমার মাইয়ার সংসারে। পরের কান্ধে ব’ন্দু’ক দিয়ে চলো। সংসারের ভালোমন্দ তুমি কী বুঝবা?”
অনুভবের মেজাজ আরো চড়ে গেল। ভাইয়ের সংসারে থাকা নিয়ে এই মহিলা তাকে উঠতে বসতে ইশারা-ইঙ্গিতে খোঁটা দেয়। নিরবে হজম করতে করতে তারও দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভদ্রতা ভুলে সেও পাল্টা বলল,
“আমাকে নিয়ে তো আপনার মহা সমস্যা। আমি কি আপনার এক টাকা খসিয়েছি কখনো? আপনি কার কাঁধে বন্দুক দিয়ে চলেন বলুন তো? সংসারটা তো আপনারও না।”
বৃদ্ধা মাথায় হাত দিয়ে বলেন,
“দুই দিনের পোলা, রাস্তার মেয়ের জন্য তুমি আমারে খোঁটা দেও?”
“আপনি মনে হয় ফুল ছুঁড়তেছিলেন! আর রাস্তার মেয়ে কাকে বলছেন? এই যে এতক্ষণ নিজের আসল কদর্য চেহারাটা দেখালেন মেয়েটা কিন্তু বিপরীতে আপনাকে একটা কটূ কথাও বলেনি। এখানেই পার্থক্য কে কোন স্ট্যাটাসে বিলং করে।”
অনুভব বৃদ্ধাকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে আবার বলল,
“আর কি যেন বলছিলেন শুরুতে, দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষছেন! আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন এই মেয়েটা শ্রমের বিনিময়ে খেটেছে। হাত পেতে কারো দয়া নেয়নি। আপনার মতোও জামাইয়ের সংসারে এসে পায়ের ওপর পা তুলে খায়না।”
অনুভবের এমন রাগ, উদ্ধত স্বভাব প্রিয়া বা অন্তরার মা কেউ আগে দেখেনি। ফলে দুজনেই হতচকিত। অনুভব কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে জাইমকে বৃদ্ধার কোলে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার মান্ধাতা আমলের অলস, মরচে ধরা ব্রেইনটার বুদ্ধি মেয়ে-জামাইয়ের সামনে নাটুকে অসুখ করাতেই ভালো মানায়। অনেক তো আরাম করে ঝুল চামড়ায় চর্বি ধরাইলেন। এখন নেন আপনার নাতি, গতর খাটিয়ে লালন-পালন করেন। আর আপনার মেয়ের সংসার গলায় ঝুলায় রাখেন।”
প্রিয়ার হাত ধরে বেরিয়ে এলো অনুভব। মনে মনে বদ্ধপরিকর এই বাড়িতে আর সে থাকবে না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেকটা দূর এসে প্রিয়ার হাতের টানে থামতে হলো তাকে। প্রিয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমার জন্য আপনি কেন ঝামেলা করতে গেলেন?”
অনুভবের রাগ তখনো তুঙ্গে। চকচকে ফরসা মুখটা লাল হয়ে আছে। দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলল,
“তো কি বুড়ির সামনে কাপড় খুলে প্রমাণ দেবে? চলো দিয়ে আসি।”
“ছি!” লজ্জায় প্রিয়ার দু-হাতে মুখ ঢাকে। দিনটা যদি মুছে দেওয়া যেত কিংবা ভুলে যাওয়া যেত! ছোটো জীবনে এহেন নিম্নমানের অপদস্ততার শিকার তাকে কখনো হতে হয়নি।
কিছুটা সময় কেউ কোনো কথাই বলে না। তীব্র অস্বস্তি কাটিয়ে নিজের স্থানটুকু পরিষ্কার করতেই প্রিয়া বলল,
“বিশ্বাস করুন, আমি শুধু নিজের ভাগের খাবারটুকু বোনের জন্য নিতাম এছাড়া আর একটা দানাও না বলে নিইনি আপনাদের বাড়ি থেকে।”
“তোমার উচিত ছিল আগেই আমায় জানানো। আমার ভাইয়া যথেষ্ট বাস্তববাদী। বুড়ির মান্ধাতা আমলের গার্বেজ ব্রেইনের মতো বাপের দোষে মেয়েকে দোষী করত না। আগে যদি বুঝিয়ে রাখতাম এমন পরিস্থিতি হতো না।”
প্রিয়া বিস্ময়ে বলল, “আপনি বিশ্বাস করেন আমায়?”
“একদমই না। তুমি আমায় সত্যিটা বলোনি।”
“এটা তো গর্ব করে বলার মতো কিছু না। তাছাড়া আপনি তো জিজ্ঞেস করেননি।”
অনুভব হাত উঁচিয়ে ইশারা করে বলল,
“ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বললে চ’ড়িয়ে গাল লাল করে দেব।”
“আপনি আমায় মা’রার অধিকার রাখেন না।”
“অবশ্যই রাখি।”
বলে অনুভব সত্যি সত্যিই প্রিয়ার গালে চ’ড় বসিয়ে দিল। যদিও তা আস্তে। প্রিয়া কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে আবারো নিঃশব্দে কেঁদে ফেলে। অনুভবের রাগ পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। হাত টেনে ধরে বলে,
“এই মেয়ে, মোটেও ব্যথা দিইনি।”
“কিন্তু মে’রেছেন। আমায় কেউ কখনো মা’রেনি।”
বেলা তখন দুপুর প্রায়। শীতের সূর্যটার পেলব রোদে দাঁড়িয়ে অনুভব প্রিয়ার পোড়া হাতটা সযত্নে আগলে ধরে। অনুশোচিত স্বরে বলে,
“সরি! সরি!”
চলবে…
#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[৩০]
জরি কৈশোর থেকে রিতা খালার বাড়িতে কাজ করে। তার মূল কাজই ছিল মালকিনের খেয়াল রাখা, রান্নাবান্না করে দেওয়া। পাশাপাশি বাড়িটাকে পরিষ্কার রাখা। এই বাড়িতে এসেও একই কাজ। তবে রিতা তাকে রান্না বিশেষ করতে দিতেন না। কাজটা নিজেই করতেন। তাতে জরি খুশিই ছিল। কাজও কমে গেল আবার রিতা খালার হাতের সুস্বাদু রান্নাও খাওয়া হলো। কিন্তু কিছুদিন যাবত রিতা খালাকে চুলার ধারেকাছেও ঘেষতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে তিন বেলার রান্নার দায়িত্বটা জরির ওপর পড়েছে। কাজ বাড়ায় মেজাজটাও বেড়েছে। আজকাল কাজের লোকেদের মেজাজকে মালকিনদের সমঝে চলতে হবে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে জরি সামান্যতম পাত্তা পাচ্ছে না! পোষালে থাকো নয়তো ভাগে ধরনের একটা মুখ করে থাকেন রিতা খালা। মোটা অংকের বেতন ও পুরাতন কর্মচারী হওয়ায় মায়ায় জরিয়ে গেছে জরি। কিন্তু বিরক্তি যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে রাগে থালাবাসন ঝনঝন করে উঠলে রিতা খালা গলা চড়িয়ে বলছেন,
“কিছু যদি ভাঙে রে জরি, তোর স্যালারি থেকে কা’টা যাবে।”
জরি বিস্ময়বিমূঢ়। এমন স্বভাব রিতা খালার কস্মিনকালেও ছিল না। জরির চেয়েও বিস্মিত নিশীথ। যে কিনা জন্ম থেকে দেখে আসা মাকে চিনতে পারছে না। জরির হাতের অখাদ্য গিলে তার প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায়। এদিকে মা তার সোস্যাল একাউন্ট নিয়ে সারাদিন বিজি। ফলোয়ার, ফ্রেন্ডস জুটিয়ে হইহই কান্ড। নিজের যত্নের দিকে অতিরিক্ত খেয়াল দিচ্ছেন। জরি গতকাল বলল কার সঙ্গে নাকি ফিসফিস করে কথা বলতে শোনা যায়। নিশীথ আজ ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছিল। ফলে সকালের নাশতা একটু দেরিতেই খেতে নামল। আজও তাকে জরির রান্না মুখে তুলে বিরক্ত হতে হলো। নাশতা ঠেলে সরিয়ে একপ্রকার বিরক্ত হয়েই মায়ের কাছে গেল ও। জানতে চাইল,
“তুমি কী একটু বলবে মা, সমস্যাটা ঠিক কোথায়?”
“সারা দেশ জুড়ে তো কতশত সমস্যা। কোনটা বলব?”
“সারা দেশের নয়, আমি বাড়িরটা জানতে চাই। তোমার কি হয়েছে মা? এমন বিহেভ কেন করছ? আমাকে কোন ভুলের শাস্তি দিচ্ছো তুমি?”
“শাস্তি? কীসের শাস্তি দিলাম?” মা যেন আকাশ থেকে সদ্য ভূপতিত হলেন।
“জরির হাতের রান্না খাওয়া কোনো শাস্তির চেয়ে কম? এক সপ্তাহ ধরে ঠিকঠাক খেতে পারছি না।”
“নিজেও তো রাঁধতে জানিস। নাহলে বিয়ে করে বউ এনে তাকে বল রেঁধে দিতে। আমি পারব না। আমার ম্যানিকিওর করা হাত নষ্ট হয়ে যাবে না! বিউটিশিয়ান বলেছে, নিয়মিত যত্ন নিলে হাতদুটো টিনেজার মেয়েদের মতো ঝকঝক করবে।”
নিশীথ নির্বাক চোখে চেয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে মামাকে ফোন করে বলে,
“ভূতের বাড়ির ভূত বোধহয় এবার সত্যি সত্যিই খেল দেখাচ্ছে, মামা। ওঝা আনতে হবে। মায়ের কাঁধে ভূত চেপেছে।”
মামা মুচকি হেসে বললেন, “এই ভূত ওঝা ছাড়াতে পারবে না, ভাগ্নে। বউ আন বউ। বউ-ই এই ভূত ছাড়িয়ে দেবে।”
________________
“সিরিয়াসলি! কখনো মা’র খাওনি?”
“উহু, আমি কখনো দুষ্টুমি করিনি। তাই মা’রার প্রশ্নও আসেনি।”
অনুভব প্রিয়াকে নিয়ে একটি জুস কর্ণারের বাইরের দিককার বেঞ্চিতে বসেছে। উদ্দেশ্য প্রিয়াকে একটু সুস্থির করা। মাথার ওপর খোলা আকাশ, নীলচে আঁচল যেন একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বিছিয়ে আছে। মেঘেরা সেই আঁচলের গন্ধে মেখে উড়ছে। সংকোচে এখনো প্রিয়ার চোখের কোণ ভেজা। স্বাভাবিক গলায় কথা বললেও তাতে অপমানের আ’ঘা’ত লুকাতে পারছে না। ভান না জানা মানুষগুলো খোলা বইয়ের মতো হয়। অনুভূতি স্পষ্ট ভাসে চোখের তারায়। এদিক থেকে প্রিয়া ব্যতীক্রম। সে ভান না জানলেও খোলা বইয়ের মতো অতটা সহজপাঠ্য নয়। নিজের আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পটু। কিন্তু শক্ত ইমারতও ভূমিকম্পের কবলে ভেঙে যায়, মজবুত বাধেও স্রোতের ধাক্কায় ফাঁটল ধরে। যেমনটা একজন নারী নিজের সম্মানের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। আজ প্রিয়ার পটুত্বে ছেঁদ পড়ছে বারবার। কিশোরীসুলভ প্রগলভতা লুকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মনের ভেতর অনেকদিন যাবত শে’কলব’ন্দী থেকে আজ কোমলতারা বিদ্রোহ করছে। ঠেলেঠুলে বেরিয়ে আসছে। অনুভবের স্নেহের আশ্বাস হয়তো আরেকটু উশকে দিচ্ছে। অনুভব বলল,
“গুড গার্ল। আমার মা তো উঠতে বসতে উত্তম-মধ্যম দিতেন। অন্যদের সঙ্গে ঝ’গড়া লাগলে দোষ যদি পরের হতো পি’টু’নি আমিই খেতাম। বাবার সঙ্গে ঝ’গড়া হলে আমাকে পেয়েই ঝাঝ মেটাতেন, খেতে না চাইলে শলার ঝাড়ু সামনে নিয়ে ভাত গেলাতেন, খেলতে গিয়ে দেরিতে ফিরলে পি’টু’নি, দুপুরে ঘুমাতে না চাইলে পি’টু’নি, বিনা দোষে আছাড় খেয়ে পড়ে গেলেও পি’টু’নি। বুঝতে পারছ, কী পরিমাণ স্ট্রাগলের ছিল আমার লাইফটা!”
প্রিয়া কপাল কুচকে তাকায়। বলে,
“আমার তো মনে হচ্ছে আপনার মায়ের লাইফটা স্ট্রাগলের ছিল। উঠতে বসতে পি’টু’নি তারাই খায় যারা মারাত্মক দুষ্টু।”
অনুভব মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে বলল,
“হয়তো ঠিকই বলেছ। মাকে দু-দন্ড শান্তি দেইনি। দিন থেকে রাত সংসারের পেছনে খেটেছেন। মৃ’ত্যুর পরই বোধহয় প্রথম হাঁপ ছেড়েছেন। আচ্ছা সেসব বাদ দাও। গলা শুকিয়ে গেছে। আমি বানানাশেক নেব। তুমি কোন ফ্লেভার নেবে?”
প্রিয়া শুকনো গলায় বলল,
“খাব না।”
“ফর্মালিটি ছাড়ো। বড়োরা আদর করে দিলে ফেরাতে হয় না। নাকি আমি অপতিচিত কেউ?”
তেষ্টায় প্রিয়া ঢোক গিলছে বারবার। সকালে খাওয়াও হয়নি। প্রিয়া আর সংকোচ করল না। মাথা নুইয়ে বলল,
“শুধু লাচ্ছি।”
অনুভব লাচ্ছির সঙ্গে বড়ো এক কাপ ফালুদা আনল। প্রিয়া নিষেধ করার আগেই বলল, “চুপচাপ খেয়ে নেবে, হাসু।”
আবারো সেই নাম! প্রিয়া বিরক্ত গলায় বলল,
“আপনি আমায় প্রিয়া ডেকেছেন। তাহলে আবার এই হাঁসমার্কা নাম কেন?”
“হাঁসমার্কা!” অনুভব যেন মজা পেল শব্দটা শুনে। বলল,
“হাঁস খুব কিউট একটা প্রাণী। তুমিও কিউট। তাই এটাই থাকবে।”
“কেন? এখন তো লোকের উল্টোপাল্টা ভাবার কিছু নেই। চাকরি গেছে আমার।”
অনুভব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে,
“আমার ঠাঁইও গেছে। বুড়ি নিশ্চয়ই রঙ মাখিয়ে মেয়ে-জামাইয়ের ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলেছে এতক্ষণে। নিজের দায়িত্ব এখন থেকে নিজেকেই বইতে হবে।”
“কিছু বলছেন?”
“বলছি এখন কী করবে? কাজ-বাজ কিছু লাগবে তো। তোমার এ মাসের বেতন এনে দেব। কিন্তু পরে?”
“আপাতত টিউশন খুঁজব। ফুল টাইম জব করলে পড়াশোনা হবে না।”
“গ্রেইট। আমি খোঁজ নিয়ে জানাব তোমায়।”
প্রিয়া চুপচাপ ছিপ নেয় গ্লাসে। শুষ্ক দেহটি গতরাত থেকে খাদ্যবিনা দুর্বল। এক পশলা বৃষ্টি পেয়ে মরুভূমি যেমন খলবলিয়ে ওঠে, গলা দিয়ে তরলটুকু নামতেই প্রিয়ার শরীরটাও বুভুক্ষের মতো শুষে নিল। সামনের দিনগুলো কেমন কাটবে সেই আশঙ্কায় চিত্ত অস্থির। হয়তো এমনই অনেক না খাওয়া কিংবা আধপেটা দিন যাবে। কিন্তু দিয়া? বাচ্চা মেয়েটার বাড়ন্ত বয়স। আগের সেই স্বাস্থ্যসবল গোলগাল দেহটা শুকিয়ে গেছে। সঙ্গে অসুস্থ মা। ওদের মুখের দিকে চেয়েও প্রিয়াকে শক্ত থাকতে হবে। সহ্যক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। কিন্তু যখনই মনে পড়ছে আজকের এই পরিস্থিতিটার পেছনে তার নিজের মানুষই দায়ী তখন ভেতরটা তেতো হয়ে যাচ্ছে।
অনুভব একদৃষ্টে দেখছে প্রিয়াকে। এই নির্ভীক মুখের দিকে তাকিয়ে ওর এক মুহূর্তের জন্যও মনে সন্দেহ জাগেনি প্রিয়ার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। বরং মেয়েটির দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সেই প্রথম থেকেই ওকে আকর্ষণ করে। দিনের পর দিন সেই আকর্ষণ হয়েছে দুর্বার। এবং আজ, সমস্ত দ্বিধা কেটে গেছে। মানব-মানবীর মধ্যাকার প্রেম-ভালোবাসা, মানসিক আবেগঘন সম্পর্ক বোঝার পর থেকেই অনুভব নিজ মনে প্রেমের প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে। সেই প্রতিচ্ছবিতে খাপ খাইয়ে নিতে জুড়েছে নানান বৈশিষ্ট্য, জেগেছে আকাঙ্খা। আজ অবধি সেই প্রতিচ্ছবির অনুরূপ বাস্তব সে পায়নি। ভালো মেয়ে কি জোটেনি? অবশ্যই জুটেছে। রূপবতী, গুণবতী, নম্র-ভদ্র কত মেয়েই এসেছে। অনুভব একদিন কিংবা দুইদিন ডেট করেছে তাদের সঙ্গে। এরপরই হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিছু না কিছু নিয়ে খুঁতখুঁত করেছে সর্বদা। পায়েল মেয়েটাও সব দিক থেকে পারফেক্ট হওয়া সত্ত্বেও মনের টান তৈরি না হওয়ায় অনুভব এগোতে পারেনি। আর আজ এই অখ্যত জুস কর্ণারের সামনে মুক্ত আকাশের নিচে বসে অনুভব উপলব্ধি করল, ভালোবাসার মানুষটিকে আসলে দেখতে হয় মনের চোখ দিয়ে। যেই চোখ ত্রুটি বিচার করে না। যেই চোখ নিশ্চিত করে অপর মানুষটি তার হৃদয়ের সবচেয়ে কোমল স্থানটিকে আন্দোলিত করে। আসলে সে চর্মচক্ষু দিয়ে বাকিদের দিকে তাকিয়েছে বলেই জাজমেন্টাল হয়ে খুঁত খুঁজে বের করেছে।
প্রিয়া-ই একমাত্র মেয়ে যার প্রতি অনুভব কোনোদিন প্রেম হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে এমন দৃষ্টিতে দেখেনি। কোনোরূপ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাকায়নি। আর না খুঁত খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। বরং বয়সে প্রায় ছয় বছরের ছোটো অষ্টাদশী কন্যা তার অক্ষুণ্ণ স্বভাবের জৌলুশে অনুভবকে আকৃষ্ট করেছে, ভাবিয়েছে, ভড়কে দিয়েছে। মনের চোখটা কখন জাগ্রত হয়েছে টেরই পায়নি। আজকের দিনটা না এলে বোধহয় পেতোও না। তার জন্য কী দুঃসময়কে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত! নাকি মেয়েটিকে কাঁদানোর জন্য তিরস্কার করা উচিত! উচিত-অনুচিত যাই হোক অনুভব এখন নিজেকে সময় দিতে চায়। সম্ভাবনা শতভাগ কিনা নিশ্চিত হতে চায়। আশ্চর্য! বাড়ি ছাড়া হয়ে তার এখন চিন্তায় ডুবে থাকা উচিত, চাকরির পড়া, সেমিস্টারের পড়ার চাপে দিন-রাত ডুবে থাকা উচিত। বিষন্নতায় চোখ ডেবে গিয়ে চোখের নিচে এক ইঞ্চি পরিমান জায়গা জুড়ে কালি পড়া উচিত। অথচ অনুভবের ফুরফুরে লাগছে। মনের দ্বারে ফাগুনের অবিরাম বর্ষণ হচ্ছে। ভিজিয়ে দিচ্ছে সকল অনুভূতিকে।
প্রিয়া খেতে খেতে আবারো কাঁদছে। চোখের পানি আটকাতে মাথা নুইয়ে এদিকে-ওদিক চাইছে। হঠাৎ অনুভব ওর চোখের কার্নিশে আঙুল ছুঁইয়ে বলল,
“দিনটা মুছে ফেলার ক্ষমতা আমার নেই। তবে এমন জঘন্যতম পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। তোমার অশ্রু ছুঁয়ে বলছি।”
প্রিয়া কান্না গিলে সিক্ত গলায় উচ্চারণ করে,
“আপনি তো সব সময় থাকবেন না।”
“দূরে ঠেলে দিচ্ছো?”
“পাশে রাখার কথা?”
“ক্ষতি কী?”
“লড়াইটা আমার একার।” প্রিয়া মুখ শক্ত করে।
অনুভব ওর হাতটা শক্ত করে ধরে মুচকি হাসল,
“আই নো ইউ আর আ ব্রেইভ ফাইটার। আমি নাহয় পাশে রইলাম। আমার সঙ্গ এতটাও খারাপ নয়। ইউ নো সুন্দরীরা আমার সঙ্গ পেতে কতটা মড়িয়া।”
অনুভব ইশারায় অপর এক বেঞ্চির সুন্দরী রমনীদের দিকে ইশারা করে। মেয়েগুলোর সঙ্গে অনুভবের চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে না চাইতেও। প্রিয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে খানিক ঝাঝের সঙ্গেই বলল,
“আমি মড়িয়া নই, বাঁচিয়া থাকতে চাই। যারা মড়িয়া তাদেরকেই সঙ্গটা দিন।”
“আর ইউ জেলাস, হাসু?”
প্রিয়া বিচলিত চোখে তাকিয়ে থাকে। অনুভব ওর মনটাকে ঘোরাতে পেরে সফলতার হাসি হাসে।
চলবে…