#আমায়_একটু ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া
(১৬)
আশোক সাহেব অবাক হলো পর্ণার কথায়।
,কি বলতে চাস তুই? পরিষ্কার করে বল।
,হ্যা, সেটা বলতেই তো এতো আয়োজন। আচ্ছা বাবা, সত্যি করে বলো তো, আমি কি তোমাদের সন্তান?
আশোক সাহেব থমথম খেয়ে গেল। তিনি কি বলবেন ভেবে পাচ্ছে না। আমতা,আমতা করে বলল,
,এমন প্রশ্ন করার মানে কি। তোমরা যে আমার সন্তান, এতে কি কোনো সন্দেহ আছে?
পর্ণা মলিন হাসলো।
,বাবা, শাক দিয়ে আর কতকাল মাছ ডাকবে।আমি সবই জানি।
পাপিয়া বেগম আর আশোক সাহেব অবাক হলো। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। পর্ণা কি বুঝাতে চাচ্ছে, তা তারা ভালো করেই জানে।তারা মাথা নত করে ফেলল।পর্ণা গিয়ে অর্ণাকে জরিয়ে ধরলো।প্রথমে অর্ণা ভ য় পেয়ে যায়। পরে যখন দেখলো পর্ণা জরিয়ে ধরে কান্না করছে, তখন অবাক না হয়ে পারলো না। পর্ণা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
,আমাকে ক্ষমা করিস রে অর্ণা। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব হিং সুটে। আমার থেকে বেশি, আমার আপনজন যদি কাউকে বেশি ভালবাসে। সেটা আমি সহ্য করতে পারতাম না। ছোট থেকেই, আমি চঞ্চল বলে,কেউ আমাকে ততটা আদর করতো না। উল্টো তোকে ভালবাসতো।সেটাই আমার সহ্য হতো না। আস্তে,আস্তে যত বড় হয়, ততই তোর প্রতি ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আমার যখন তেরো বছর বয়স। একদিন মা আমায় পড়া না পারার কারণে খুব মারে। অভিমান করে বাগানে গিয়ে বসে থাকি।সেদিন তোর রেজাল্ট ভালো হয়েছে বলে। সবাই তোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সবাই তোকে অনেক,অনেক গিফট দেয়।রাত হয়ে যায়। মা আমায় নিতে আসে না। খুব ভ য় পাচ্ছিলাম। তবুও সেখানেই বসে ছিলাম। জেদ চেপে গিয়েছিল। যে মা যদি না আসে তবে যাব না। কিন্তু মা এলো না। রাত আটটার দিকে, মেঝো মা এসে আমায় নিয়ে যায়। তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। আমার কান্না দেখে, ওনি ও কেঁদে দেয়। চোখ পানি মুছে দিয়ে, আমায় বলল,
,একটা কথা বলি পর্ণা?
আমি সম্মতি দেয়।
,আজ যে কথাটা বলবো,সেটা কাউকে বলতে পারবিনা কোনোদিন। মনে থাকবে?
,আচ্ছা।
,শোন তবে।যে কথাটা বলবো সেই কথাটা তোর জীবন পাল্টে দেবে।যদিও আমি বলতে চায় না। তবে আজ তোর প্রতি যেই অবহেলা হলো,তা আমাকে বলতে বাধ্য করেছে।
,কি কথা মেঝো মা?
ওনি আমার গালে হাত রাখে। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,
,সেদিন ছিল ঝড় বৃষ্টি রাত। আশোক সাহেব আর পাপিয়া বেগমের কোল আলো করে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় অর্ণা আর পর্ণা। পর্ণা ছিল ছোট।দুটো দেখতে পুরো একরকম ছিল।কেউ আলাদা করতে পারতো না, কে অর্ণা আর কে পর্ণা। সবকিছু ভালোয় ছিল। কিন্তু দুদিনের মাথায়, হঠাৎ পর্ণার শ্বাস কষ্ট দেখা দিল।ভর্তি করা হলো আইসিওতে।কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ডাক্তার জানায়,পর্ণা আর বেঁচে নেই।এই কথা শুনে পাপিয়া ভাবি পুরো পা গ লের মতো হয়ে যায়। কারো কোনো কথা শুনে না। হাতে থাকা ক্যানলা টেনে খুলে ফেলে। দৌড়ে হাসপাতালে থেকে বেরিয়ে যায়। কোনো রকমেই তাকে সামলানো যায় না। ঠিক তখনই তোর অস্তিত্বের খোঁজ মিলে। একজন নার্স এসে জানায়, অর্ণা আর পর্ণা জন্মের দিনই তোর জন্ম হয়। কেউ একজন তোকে,বাথরুমের কমোডের ভেতর ফেলে দিয়ে চলে যায়।
কিন্তু রাখে আল্লাহ মা রে কে।তুই সেদিন বেঁচে গিয়েছিলি।মেঝো ভাই কে ডাক্তার বলে,আপনি চাইলে এই বাচ্চাটাকে দত্তক নিতে পারেন।আপনার স্ত্রী কে বলবেন, আপনাদের সন্তান বেঁচে আছে। তখন ভুল শোনানো হয়েছে।
শারীরিক অসুস্থ থাকার কারণে, ভাবী তখনও তার তুই মেয়ের চেহারা দেখতে পায়নি। তাই ভাই সিদ্ধান্ত নেই,এটাই করবে।পরবর্তী তাই হয়। পর্ণা মা রা যাওয়ার পর তুই হোস,নকল পর্ণা।এভাবেই কিছুদিন যায়, কিন্তু মায়ের মন। ভাবী ঠিকই ধরে নেই, তুই যে তার আসল মেয়ে না। কিন্তু কি আর করবে। ওই মেয়ের দুঃখ ভুলতে তোকে নিজের মেয়ের মতো লালন-পালন করতে থাকে।আর বাড়ির সবাইকে বলা হয়, এই কথা যাতে তোরা কেউ না জানিস!
মেঝো মায়ের কথাগুলো শুনে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। মা-বাবা যে আমার আসল বাবা মা নয়। তা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল ঐদিন।সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসি রুমে। এসেই দরজা বন্ধ করে কাঁদতে থাকি। জানিস অর্ণা?ঐদিন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার মতো কেউ ছিল না। মনটা বারবার বলছিল, যে একবার যদি মা এই রুমে আসতো।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো।কিন্তু না কেউ আসেনি। এমন কি আমি খেয়েছি কিনা, সেটাও কেউ জিজ্ঞেস করেনি।সারা রাত শুধু ভেবেছি, যে আমার আপন বাবা মা কে। কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। যখন ধীরে ধীরে বড় হয়। বুঝতে পারি। তখন অবশ্য এর উত্তর পেয়ে গিয়েছি,আসলে আমি নিশ্চয়ই কারো পা পের ফল।যাকে কিনা। পরিচয় দেবার ভয়ে।মে রে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি ম র লা ম না।ঠিকই বেঁচে রইলাম। অন্যের জীবন ধ্বংস করার জন্য। আসলে কি জানিস।জা র জ
মানুষ গুলোই হয়তো এমন। উচ্ছিষ্ট!
একদমে কথাগুলো বলে থামলো পর্ণা।উপস্থিত সকলের চোখে পানি। অর্ণা জরিয়ে ধরলো পর্ণাকে।মেয়ে টা ছোট থেকে যে কি যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠছে।
আশোক সাহেব আর পাপিয়া বেগম ও এসে জরিয়ে ধরলো। পাপিয়া বেগম কাঁদতে, কাঁদতে বলল,,
,তুই সারাটা জীবন আমাদের ভুল বুঝেই এলি রে মা। হ্যা তোর থেকে অর্ণাকে একটু বেশি প্রাধান্ন দিয়েছি।কারণ ও ছিল চুপচাপ ধরণের । কখনো নিজের জন্য চেয়ে কিছু নেয়নি তাই।তুই ছিলি চটপটে। তাই তোকে নিয়ে এতটাও মাথা ঘামায়নি।এর বেশি কিছুই নয়। আমার আল্লাহ জানে,তোদের দুজন কে কখনো আলাদা নজরে দেখিনি। আমি সবসময় ভাবতাম,যে আল্লাহ আমার মৃ ত মেয়ে রূহ তোর মাঝে স্থাপন করেছে।
চলবে,,,,