এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব-০৯

0
227

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৯

মাথানত করে রইলাম। অপূর্ব ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, “ইচ্ছে হলে ঘরে গিয়ে পোশাক বদলে নিস। নাহলে না। আর মাত্র কিছু ঘণ্টা।”

বলেই অপূর্ব ভাই চলে গেলেন। ঠান্ডায় কাঁপুনি এবার গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। মাথা নিচু করে ঘরে গেলাম। তুর শেফালী আমার জায়গা দখল করে ফেলেছে। এখানে শোবার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। ড্রয়ার থেকে পোশাক বের করে পরিধান করলাম। ভেজা জামা কাপড় সেভাবে রেখে বিছানার কাছে গিয়ে বললাম, “তুর শেফু ঠিক করে শো।”

বিনিময়ে আরও ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পরল। বিরক্ত হলাম অনেকটা। অগ্রসর হলাম তিস্তা আপুর ঘরের দিকে। দরজা খোলা, তবে ঈষৎ ভিরিয়ে রাখা। কাঁপতে কাঁপতে লেপের নিচে ঢুকে গেলাম। তিস্তা আপুর উষ্ণ পায়ের উপর আমার আর্দ্র পা পড়তেই ধরফরিয়ে উঠে বসল। ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে বলে, “সমস্যা কী তোর? এখানে কী করছিস? পা সরা। বরফের ভেতরে ছিলি এতক্ষণ?”

তিস্তা আপু নিজ হতেই সরলেন। কাঁপতে কাঁপতে বললাম, “আপু তুমি কি ঘুমিওছ? একটা কথা বলব?”

“ঘুম তো চান্দে পাঠিয়েছিস। তাড়াতাড়ি বল কি‌ বলবি?” চোখ বন্ধ করে বলে। আমিও ইঙিয়ে বিঙিয়ে বললাম, “ধরো, শেফালীর হবু বর মাঝরাস্তায় বৃষ্টির কারণে আটকে গেছে। ফোন করে বিষয়টা তুরকে বলেছে। তুর কি বাড়ির কাউকে না জানিয়ে মাঝরাতে যেতে পারে তাকে আনতে?”

তিস্তা আপু চোখ বড়ো বড়ো করে বললেন, “পা/গ/ল নাকি তুই। মাঝরাতে বেরিয়ে যাওয়ার অসম্ভব। বিপদের হাত পা নেই। যদি লোক জানাজানি হয়। ভাবতে পারছিস কী হবে? তুরের নামে তবে বাজে কথা রটাবে।
এমন কিছু কখনো ঘটলে অবশ্যই আগে বড়দের জানবি। হুট করে সিদ্ধান্ত নিবি না। তোর মতো সহজ-সরল কিন্তু গ্ৰামের লোক নয়।”

মাথা নেড়ে কম্বলের নিচে ঢুকলাম। খুশ খুশ করছে ভেতরটা। ইচ্ছে করে ছুটে যাই অপূর্ব ভাইয়ের নিকট। দু’জনের মাঝে প্রয়াস ভাই নামক অদৃশ্য বাঁধা। ঠান্ডায় অবিলম্বে ঘুমে নিমজ্জিত হলাম।

ছয়টা নাগাদ ঘুম ভাঙল আমার। ওড়নাটা বালিশের পাশ থেকে নিয়ে হাঁটা দিলাম। বৃষ্টির পর আকাশ পরিচ্ছন্ন। নিমের ডাল নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে বের হলাম উঠানে। মোরগ ডাকছে। অপূর্ব ভাইকে দেখতে পেলাম উঠানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করছে। আগে কখনো দেখিনি। অবশ্য এত সকালে ঘুম ভাঙে না। তার সাথে কথা বলা জরুরি। থু থু ফেলে নম্র ভদ্র গলায় বললাম, “অপূর্ব ভাই, আমি স্যরি।”

অপূর্ব ভাই আমাকে না দেখার ভঙ্গিতে একটু দূরত্ব বজায় রাখলেন। দু’হাতে ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যায়াম করছে। গ্ৰামে থাকি বিধায় নাম জানি না। যন্ত্রটা কেড়ে নিয়ে বললাম, “আমি বুঝতে পারিনি। আর এমন হবে না। রাগ করে থাকবেন না। বাড়ির কাউকে কিছু বলবেন না। নানি মা বকবে।”

অপূর্ব ভাই হাতটা পুশ আপ করতে করতে বলেন, “আমি কেন রাগ করব? আমি রাগ করি না।”

কোমরে হাত দিয়ে বললাম, “কানা মানুষকে ল্যাট্রিনের সামনে নিয়ে হাইকোর্ট বোঝাবেন না। আমি অবুঝ নই, তবে মাঝে মাঝে অবুঝের মতো কাজ করে ফেলি।”

“ল্যাট্রিন? ইয়াক থু। এগুলোও ভাষা? শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে বলছি। ওয়াশরুম বলবি।”

“ল্যাট্রিন শব্দটা আগের মানুষ ব্যবহার করত। তারা যখন খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করত। নানি মা বলেছেন আগে কমড ছিল না। সবাই গাছে উঠে প্রাকৃতিক কাজ করত। সেখানে বস্তা দিয়ে আড়াল করত। কত কত মানুষ গাছের ডালে বসে করত। বৃষ্টির সময় গাছ পিচ্ছিল হয়ে যেত না? তখন পা পিছলে উল্টে পরত। গলা পর্যন্ত ডুবে যেত পটিতে। দেখতে কেমন লাগত, বুঝতে পারছেন?”

“ইয়াক থু! থু! তোর চিন্তা ভাবনা ইদানীং খুব বাজে হচ্ছে। তোরও পরতে ইচ্ছে করছে?”

কালো কাক উড়ে গাছের ডালে বসল। কর্কট‌ গলায় কা কা করে দু ডাক দিল। সবুজ পাতা থেকে উষ্ণ এক ফোঁটা জল গালে পরল আমার। বামহাত দিয়ে লেপ্টে গাল ভরিয়ে ফেললাম। আর্দ্র হাওয়ার বিপরীতে উষ্ণ হাওয়া। অপূর্ব ভাই ঘাড় কাত করে বললেন, “ধর তুই আদিম যুগে। পটি করতে গাছের উপর উঠে গেলি। বৃষ্টি ছিল। পিচ্ছিল হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করে নেমে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলি। আচমকা পিছলে গেল পা। মুখ থুবড়ে পরলি পটির ভেতরে। ডুবে গেলি পুরোপুরি। শ্বাস নিতে পারলি না। দম বন্ধ হয়ে মা/রা গেলি। ভাবতে পারছিস কী হতো?
‘প্রথমবার মানুষের পটির ভেতরে পরে প্রাণ গেল এক কিশোরীর’ এটাই নিউজ হবে। সংবাদপত্রে বের হবে।”

অক্ষরে অক্ষরে কল্পনা করে আঁতকে উঠলাম আমি। মধ্যম আওয়াজে বললাম, “নাহহহ। আমি পরব না। তলিয়ে যাবো না। আমি লিলিপুট নই।”

“আমি যদি বলি তুই বেঁটে তখন? ছাপ্পান্ন পাটির দাঁত বলেছি বলে দাঁত টেনে তুলে ফেলেছিস। লম্বা বললে নিশ্চয়ই নিজেকে কে/টে ছোটো করবি।
তাই বেঁটে বলেছি। এবার কী করবি?”

ভাব নিয়ে বললাম, “আমি মোটেও বেঁটে নই। তাছাড়া আমি পরব না।”

অপূর্ব ভাই একটু ঝুঁকে বললেন, “গালে হাত দিয়ে দেখ। অর্ধেক পরেছিস।”

গালে হাত দিলাম। তরল পদার্থটি দৃষ্টিগোচর হলো সাদা বর্ণের। কাকটি তার প্রাকৃতিক কাজটি সমাপ্ত করেছে আমার উপর। ছুটে গেলাম ঘরের দিকে। পা গেল পিছলে। কাঁদায় মাখামাখি হলাম বিলম্বে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন অপূর্ব ভাই। কিছুটা বিদ্রুপ করে বললেন, “দেখছিস। ইতোমধ্যে আমার ধারণা সত্যি হতে চলেছে।”

কোমরে ব্যথা পেলাম বেশ। নড়াচড়া করে বললাম, “দাঁত রোদে দিয়েন না। ধরুন। ব্যথা পেয়েছি।”

অপূর্ব ভাই এগিয়ে এলেন। হাত এগিয়ে দিয়েন। ধরলাম না। জখমটা একটু জোয়াল। নড়তে বেগ পেতে হচ্ছে‌। অপূর্ব ভাই আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করলেন। কাক ডাকা ভোর, কেউ নেই। হুট করে কোলে তুলে নিলেন আমায়। এগিয়ে গেলেন বাড়ির ভেতরে। গালে থাকা সাদা বর্ণের পদার্থটি ঘসে ঘসে অপূর্ব ভাইয়ের শার্টে লাগিয়ে দিলাম। সোফার উপর রেখে বললেন, “মা, দেখো তো কোথায় ব্যথা পেয়েছে? তেল দিয়ে মালিশ করে দিও। ঠিক হয়ে যাবে।”

অপূর্ব ভাই চলে গেলেন। মামিরা ব্যস্ত হলেন আমায় নিয়ে।
___
ক্লাস চলাকালীন সময়ে গালে হাত রেখে অশান্ত মন নিয়ে বসে আছি। প্রয়াস ভাইয়ের কথাটা সবার থেকে লুকিয়েছেন অপূর্ব ভাই। সবাই জানে অপূর্ব ভাই রাতে তাকে এনেছে। তিনি যে মুখ ভার করে আছেন, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

তিনজন মেয়ে ও একজন স্যার ম্যাম ঢুকলেন ক্লাসে। সালাম বিনিময় করলাম। তারা সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললেন, “আগামীকাল থেকে তোমাদের স্পোর্ট শুরু। তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি রিচ্যুয়ালের সাথে তোমরা পূর্ব পরিচিত। যারা যারা অংশগ্রহণ করতে চাও। নাম লেখিয়ে দিও।”

অতঃপর চলে গেল। দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রব ঘটেছে। মশা মা/রার উদ্দেশ্যে চ/ড় দিয়ে বললাম, “অপূর্ব ভাইকে কীভাবে মানাই বলতো?”

শেফালী পড়তে পড়তে বলে, “স্পোর্টে নাম দে। প্রথম হয়ে পুরষ্কার নিয়ে আয়। দেখবি ভাই কত খুশি।”

তুর তাল মিলিয়ে বলে, “ঠিক বলেছিস। ভাইয়া অনেক খুশি হবে।
মাঠের তিনটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১. গোলক নিক্ষেপ, ২. একশ মিটার গোল দৌড়। ৩. মার্বেল দৌড় ৪. নাচ ৫. গান।
সবগুলোতেই চেষ্টা করবি। দেখবি একটা না একটা ঠিক পাবিই। একবার না পারিলে দেখো শতবার।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]