এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব-২০+২১

0
219

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২০

ময়না পাখি কাঁধে বসে নিজের মতো বলে চলেছে, আরু পাখি, আরুপাখি আর আরুপাখি। চোখ গরম করে তাকালে তার সুর থামিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে আরেকদফা। অন্যদিকে তাকালে পুনরায় আরুপাখি বলে সুর ধরছে‌। আমি হেসে ফেললাম। ময়না হাসল কি-না জানা নেই। আজ তিস্তা আপুর গায়ে হলুদ। সেদিনের পর পেরিয়ে গেছে কয়েকমাস। পিছিয়ে গিয়েছিল তিস্তা আপুর বিয়ের তারিখ। শাড়িতে কুঁচি করতে করতে বললাম, “ময়না তুই কেন মানুষ হলি না? তুই মানুষ হলে আমাকে শাড়ি পরতে সাহায্য করতে পারতি।”

ময়না আবার বলে উঠে আরুপাখি আরুপাখি, আরুপাখি। আমি নিজের কাজে মগ্ন হলাম। দরজায় টোকা পড়ল। সেদিকে না তাকিয়ে বললাম, “তুর, শেফুকে কখন বলেছি তোকে ডেকে দিতে। এতক্ষণে ডেকে দেওয়ার সময় হলো। তাড়াতাড়ি আয়, কুচিগুলো গুছিয়ে দে।”

দরজা ভিড়িয়ে দিলে খ্যাঁচ খ্যাঁচ শব্দ হয়। শুনতে পেলাম শব্দটা। ধীরে ধীরে আমার পেছনে এসে দাঁড়ালো সে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললাম, “খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে কাছে আয়। কুচি ধর।”

পেছনে ফিরতেই অপূর্ব ভাইকে দেখতে পেলাম। হাঁটু গেড়ে বসলেন পায়ের কাছে‌। পিছিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করতে কোমর জড়িয়ে ধরে থামার নির্দেশ দিলেন। আমি থেমে গেলাম। কুচিগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে বললেন, “সেফটিপিন দে।”

হাতের সেফটিপিন এগিয়ে দিতেই গুছিয়ে লাগিয়ে দিলেন। আমি হেসে বললাম, “ভাবীকে সবসময় শাড়ি পড়িয়ে দিবেন। সুন্দর লাগবে।”

“আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আয়। তিস্তা ডাকছে।” দরজা খুলে গেল। তিস্তা আপু এসেছেন। অপূর্ব ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি এখানে আর আমি কত জায়গায় খুঁজে চলেছি।

“এসেই যখন গেছিস। তাহলে থাক।, আমি বরং যাই। অপূর্ব ভাই চলে গেলেন। আমিও উত্তেজিত হয়ে বললাম, “কীসের জন্য আমাকে খুঁজছিলে আপু?”

আপু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। অদূরে অস্পষ্ট কাউকে দেখা যাচ্ছে। আমি দেখলাম সেদিকে। মামার ফোন তিস্তা আপুর হাতে‌। অথচ দুদিন ধরে এই ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে না। তিস্তা আপু অন্ধকারে ইঙ্গিত করে বলেন, “সুজন এসেছে। আমাকে হলুদ মাখাতে চায়। আমি একবার সুজনের কাছে যেতে চাই। আমাকে সাহায্য করবি?”

“কীভাবে?”

“বলবি, ফুফুর কাছে নিয়ে যাবি আমায়। কেউ অমত করবে না। একটু সাহায্য কর।”

আমি আমতা আমতা করলাম। বাড়ির কাউকে কখনো মিথ্যা বলিনি। আজ মিথ্যা বলতে হবে ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিস্তা আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে ‘না’ করতে পারলাম না। শত আশা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আগেই বেরিয়ে গেলাম। উঠানে মহিলারা গান গাইছে। মামির কাছে গিয়ে বললাম, “তিস্তা আপুকে নিয়ে একটু ঐদিকে যাবো মামি?”

মামি শুনতে পেয়ে কিছু বলার পূর্বেই পাশের বাড়ির তন্বির মা আমাকে বললেন, “বিয়ের কয়েকদিন আগে মেয়েদের বাড়ির বাইরে যেতে নেই। বাতাস লাগবে, জ্বীন পেত্নি আঁচড় করবে।”

মামা তখনই উপস্থিত হলো সেখানে। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যা, তবে তাড়াতাড়ি ফিরিস। আমার বোনটা আমার মেয়েকে হলুদের বেশে দেখবে না, এটা হতেই পারে না। আমার বোনের কাছে গেলে বাতাসও লাগবে না।”

আমি এক চিলতে হাসি উপহার দিলাম। মামাও হাসলেন।

সবাই গানের তালে নাচছে। তিস্তা আপুর বান্ধুবীরা নাচছে। ওড়না শাড়ির অবস্থা ভালো‌ নেই। তাই ছেলেরা সেদিকে নেই। আমি মেহেদী দিতে বসলাম। আমাদের গ্ৰামে বিয়েতে আমিই সবার হাতে মেহেদী দিয়ে দেই। মামির সেলাই করা নকশিকাঁথায় আমি নকশা করে দেই। তাছাড়া দূর দূরান্ত থেকে কাঁথায় নকশা করতে অনেকে ছুটে আসে আমার কাছে। শেফালীর কথায় ঘোর থেকে বেরিয়ে এলাম, “এই আরু আমাকে মাত্র এক হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছিস আর তুরের দুইহাতে। আমাকেও এই হাতে লাগিয়ে দে।”

আমি অধৈর্য হয়ে তাকালাম শেফালীর দিকে। হাতে ব্যথায় টনটন করছে। শরীরটা ভালো নেই। পেটে ব্যথা করছে। মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিন মেয়েদের জন্য কষ্টের হয়। তিস্তা আপুর থেকে শুরু করে তার বান্ধবীদের হাতে পড়িয়েছি। নিজের হাতটা এখনো ফাঁকা। দুই এক ফোঁটা লেগে রঙ হয়েছে। মশা রক্ত চুষে খাচ্ছে। গাল চুলকাচ্ছে। চুলকাতে চুলকাতে বললাম, “কালকে তোর দুই হাতের চার পিঠে দিয়ে দিবো। পায়েও দিবো। চাইলে গলায়, পিঠে, কাঁধে। সব জায়গায় কিন্তু আজ নয়।”

শেফালী কড়া গলায় বলে, “না এখুনি দিয়ে দিবি। কালকে আলতা পড়িয়ে দিবি।”

দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে হাতটা টানটান করলাম। ব্যথায় টনটন। আঙুলগুলো টানটান করতে পারছি না। তখনই হাজির হলেন অপূর্ব ভাই। কিছুটা ধমকের সুরে শেফালীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এখানে কী করছিস?”

“মেহেদী দিচ্ছি।” সংক্ষিপ্ত জবাব দিল শেফালী। পুনরায় অপূর্ব ভাই ধমকে উঠলেন, “মেহেদী দিচ্ছিস? না-কি অন্যেরটা হাতে লাগাচ্ছিস? আমরা নাচব না না-কি। আজ আর মেহেদী দেওয়া হবে না, সোজা ঘুমাবি। যা।
আরু, এখান থেকে যা।”

হঠাৎ করেই চোখটা ঘুমে ভরে গেল। দ্রুত উঠে গেলাম। অপূর্ব ভাই কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় মেহেদীতে চাপ লেগে কিছুটা তার হলুদ পাঞ্জাবীতে লাগল। অপূর্ব ভাই বিরক্ত হলেন। হাত দিয়ে দ্রুত মুছতে গেলে লেপ্টে গেল পুরোটা। হাতেও লাগল। শাড়ির আঁচল দিয়ে দ্রুত মুছতে লাগলাম। ভ্রু কুঁচকে অপূর্ব ভাই বললেন, “দিলি তো নষ্ট করে।”
দ্রুত মুছতে মুছতে বললাম, “বিশ্বাস করুন, আমি বুঝতে পারিনি। সত্যি আপনার পাঞ্জাবিটা নষ্ট করে ফেললাম।”

“আমার পাঞ্জাবির কথায় বলি নি, তোর শাড়ির কথা বলেছি।”

আমি হাসলাম। পাঁচ মিনিটে রঙ হওয়া মমতাজ মেহেদী দিয়ে হাত লাগিয়েছি। গাঢ় হয়ে গেছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছিয়ে দিলেন অপূর্ব ভাই। হাত টেনে বললেন, “অন্যদের হাতে কত ডিজাইন অথচ লেপ্টে যাওয়া মেহেদী দিয়ে তোর হাত সাজানো।”
.
খালের পাশে বাশ দিন বাঁধানো ছোটো সাঁকো। শাড়িটা মুঠো করে ধরে তিস্তা আপু এগিয়ে যাচ্ছে। আমি এগোনোর প্রচেষ্টা করতে তিস্তা আপু থামিয়ে দিলেন‌। ব্যস্ত হয়ে পাড় হতে হতে বললেন, “তুই ওখানে থাক, আমি দেখা করেই আসছি।”

“আমার এখানে ভয় করছে। তাড়াতাড়ি এসো। আমি ঝোপের ভেতরে আছি।” বলেই ঝোপের আড়ালে বসলাম। চেয়ারম্যান বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা। মানুষের যাতায়াত চলছে। ঘুম ঘুম লাগছে চোখের পাতা। অপেক্ষা করতে করতে রাত বাড়ছে। ভয় ক্রমশ বেড়ে চলেছে। মাথার নিচে হাতটা রেখে শুয়ে পড়লাম। ঘুমেরা জড়িয়ে নিল আমায়। রাত পেরিয়ে ভোরের সূচনা হলো। খালে জোয়ার বইছে। পানি অনেকটা উপরে উঠে গেছে। আশেপাশে তিস্তা আপু নেই। ‘আমাকে খুঁজে না পেয়ে চলে গেল না-কি’- বুঝতে পারলাম না। ধ্যাত। বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। থমথমে বাড়ির পরিবেশ‌। উঠানে বসে আছে সবাই। আমাকে দেখে চমকে গেছে অনায়াসে। সবার প্রথমে তিয়াস ভাই থমথমে গলায় প্রশ্ন করেন, “তিস্তা কোথায় আরু?”

আশেপাশে দেখতে দেখতে আমতা আমতা করলাম, “তিস্তা আপু…

হুংকার দিয়ে বললেন অপূর্ব ভাই, “তুই আর তিস্তা একসাথেই বের হয়েছিলি, তুই আসলে তিস্তা কোথায় গেল? কোথায় ও?”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২১

অপূর্ব ভাইয়ের হুংকার শুনে আশেপাশে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিস্তা আপুকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। তিস্তা আপুর ছায়াটিও অনুপস্থিত। কোথায় সে? ভীত গলায় বললাম, “তিস্তা আপু কোথায়?

“সেটা তুই আমার কাছে জিজ্ঞেস করছিস? ওকে তো তুই নিয়ে গিয়েছিলিস। তুই ‘বাবা মায়ের কাছে’ না-কি কখনো মিথ্যা বলিস নি। তাহলে এটা কী?” অপূর্ব ভাইয়ের কথা কান্না পেয়ে গেল। মাথানত করে নিলাম। অপূর্ব ভাইয়ের হুংকার থেকে আজ মামি আমাকে রক্ষা করছে না। বরং দূর থেকে দাঁড়িয়ে আছে অশ্রুসিক্ত চোখে। একদিকে পরিবারের সম্মান অন্যদিকে ভাগ্নি। মামি বিচলিত হয়ে বলে, “আরু, তুই যদি কিছু জানিস তাহলে বলে দে।”

“স্যরি তিস্তা আপু। তুমি এটা আমার সাথে একদম ঠিক করলে না। আমার কিছু করার নেই। স্যরি।” মনে মনে বাক্যগুলো আওড়ালাম। অতঃপর নম্র গলায় বললাম, “তিস্তা আপু সুজন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। যাওয়ার সময় আমাকে এসে বলে, শেষবারের জন্য সুজন ভাইয়ের সাথে দেখা করবে। আমরা খালপাড়ে গিয়েছিলাম। আমি পুলের এই পাড়ে ছিলাম। তিস্তা আপু আমাকে ‘একটু থাকতে’ বলে চলে গেলেন। রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে কিন্তু তিনি এলেন না। বাড়িতে এসে জানতে পারি, আপু আসেনি।”

মামা চেয়ারে বসে ছিলেন। আমার কথা থামতেই উঠে দাঁড়ালেন। নানা ভাই থমথমে গলায় বলেন, “তারমানে সুজনের সাথে তিস্তার সম্পর্ক ছিল। তুই জানতি এই সম্পর্কের কথা?”

“হম।”

“কবে থেকে?” (বড়ো মামা গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন।

“যেদিন প্রয়াস ভাইয়ারা তিস্তা আপুকে দেখতে এসেছিলেন তার পরের দিন।” অপূর্ব ভাই ছুটে এলেন। স্বজোরে এক চড় গালে বসিয়ে দিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে বললেন, “আজ কেন বলছিস? আগে কোন বলিস নি।”

আমি জবাব হারিয়ে ফেললাম। পরিবেশ শান্ত হয়ে গেল। বড়ো মামা ফোন করলেন কাউকে। গম্ভীর গলায় বললেন, “এই মুহুর্তে আহসান বাড়ির ‘সাত ভাই চম্পায়’ আসতে হবে।” বলেই ফোন রেখে দিলেন। কেউ এক চুল নড়ল না। সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট। মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টার কাছাকাছি পৌঁছে গেল। শোঁ, শোঁ করে তিনটা গাড়ি এসে থামল আহসান বাড়ির ‘সাত ভাই চম্পায়’। একের পর এক লোক বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। দেখা গেল ইমদাদুল হোসেন মৃধা অরুপে করে আমার বাবাকে। বুকের ভেতরে ধুকপুক করে উঠল। বাবা এসে দাঁড়াতেই সামনের চেয়ারটা ছেড়ে দিলেন ছোটো মামা। বাবা বসলেন। আমার দিকে তাকালেন। কিছুটা রেগে বললেন, “আমার মেয়ে কাঁদছে কেন?”

বড়ো মামা গম্ভীর থেকে বললেন, “বাবাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না, তাই। আরু আপনার সাথে যেতে চাইছে।”

সবাই চমকে গেল। আমিও চমকে তাকালাম। বড়ো মামি এগিয়ে এসে বলেন, “কী বলছ, কী তুমি। আরু আমাদের ছেড়ে.. মামা হাতের ইশারায় মামিকে থামিয়ে দিলেন। মামা কথা বলার সময় অন্যদের করা বলা নিষেধ। শেফালী ও তুরকে উদ্দেশ্য করে বলে, “শেফু, তুর। তাড়াতাড়ি যা। আরুর সমস্ত জামা কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে দে। আরু আজ থেকে ওর নিজের বাড়িতে থাকবে। আমি গোবরে ফোঁটা পদ্মফুলকে গোলাপ ভেবে ঘরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। ভুলে গেছিলাম, গোলাপের কাঁটা থাকে। গোলাপের কাঁটায় জর্জরিত হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি গোবরে আমার ঘর নষ্ট হয়ে গেছে।”

চোখজোড়া মুহুর্তে ছলছলিয়ে উঠল। ঘরে থাকা ময়না পাখি ছুটে এসেছে। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমার কাঁধে এসে বসল। মামিরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলবে না, বলার সাহস নেই। একমাত্র নানা ভাই পারে মামার সিদ্ধান্ত টলাতে। শেফু নানা ভাইকে বলে, “নানা ভাই।”‌ নানা ভাই শুনেও না শোনার ভান ধরলেন। নিজেকে অসহায় লাগল।

তুর ছুটে গেল অপূর্ব ভাইয়ের নিকটে। অপূর্ব ভাইয়ের হাতটা ধরে বলে, “ভাইয়া, আরুকে কি ফুফা নিয়ে যাবেন? আমরা আরুকে ছাড়া থাকতে পারব না। আপনি আরুকে আটকাতে পারেন। বাবাকে একবার বোঝান।”

অপূর্ব ভাই আলগোছে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলেন। আমি ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকালাম। শুনতে পেলাম অপূর্ব ভাইয়ের গলা, “যে আমার পরিবারের, আমার বংশের, আমার বোনের মুখে চুনকালি লাগিয়েছে। সে আহসান বাড়িতে না থাকুক, এটাই আমি চাই।”

ধীর পায়ে মামার কাছে ছুটে গেলাম। পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম। দু’হাতে পা জড়িয়ে ধরে বললাম, “আমি ভুল করেছি মামা। প্রথমবার তোমার কাছে মিথ্যা বলেছি। আমাকে প্রথমবার ও শেষবারের মতো ক্ষমা করে দাও। ফাঁ/সি/র আ/সা/মী/র শেষ কথাটাও শোনা হয়, আমার হবে না?”

মামা তাকালেন না। আমি সৌজন্য হাসলাম। বাবা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন। আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন, “আপন মানুষ হয় না এই নি/ষ্ঠু/র পৃথিবীতে। ভালো রাখবে বলে আমার থেকে তোদের এনেছিল। এখন আমি আমার জিনিস ফিরিয়ে নিলাম। মনে রাখিস, শক্ত মাটির চেয়ে নরম মাটিতে মানুষ বেশি গাড়ে।”

সেদিন বাবার সাথে একটা কথাও বলি নি। ঘরে চলে গিয়েছিলাম। মামা বুঝে গিয়েছিলেন আমার উত্তর। আজ কেন বুঝেন না? জামা কাপড়ের ব্যাগগুলো নিয়ে এসেছে শেফালী। বাবা ব্যাগগুলো নিতে দিলেন না। উৎফুল্লিত হয়ে বলেন, “আজ থেকে আমার মেয়ে আমার কাছে থাকবে। তার সব চাওয়া আমি মেটাবো। পিতৃত্বের স্বাদ নিবো। তার পোশাকের কোনো কমতি রাখব না। চল।” বাবা আমার হাতটা ধরে এগিয়ে গেলেন। ময়না পাখি কাঁধ থেকে নেমে আমার পিছু পিছু উড়ে আসছে। হঠাৎ করেই তার ডানা ঝাপটানোর শব্দ মিলিয়ে গেল। আমি ঘাড় কাত করে তাকালাম। ময়নাকে খুঁজতে লাগলাম। মামা ময়নাকে ধরে রেখেছে। মামিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ময়না পাখি যাতে বাড়ির বাইরে না যায়। খাঁচায় বন্দী করে রাখবে। আর এই পোশাকগুলো আ/গু/নে পুড়িয়ে ফেলবে।” বলেই মামা ঘরে চলে গেলেন। শেফালীর হাতে ময়না পাখিটা দিয়েছেন। ময়না আমাকে দেখছে।

গাড়িতে উঠে বসলাম। কাঁচটা তুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম সবার দিকে। কেউ তাকিয়ে নেই। মুখ ভার করে রয়েছে। গাড়িটা চলতে শুরু করল। কবরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দু সেকেন্ডে জন্য কাঁচটা নামিয়ে দিল। চোখ ভরে শেষ বারের মতো কবরটাকে দেখে নিলাম। মা অভিমান করে আছে, তার ভাইয়ের কথা শুনি নি হয়তো তাই।

‘মা। তোমার চার ভাই আমাকে আগলে রাখল না। তুমি নেই, তাই আমার প্রতি কারো কদর নেই। এটাই আমার প্রাপ্য ছিল।’
__

চারদিকে গাছপালা সারিবদ্ধভাবে লাগানো। গাছের নিম্ন অংশ চুন দিয়ে সাদা করা। পাক্কা রাস্তা ইট দিয়ে বাঁধানো। সবুজ দিয়ে ঘেরা। গাড়ি এসে থামল বড়ো একটা বাড়ির সামনে। যেন রাজপ্রাসাদ। বাবা আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন। যৌথ পরিবার। আমাকে দেখিয়ে বাবা বলেন, “এই আমার মেয়ে আরশি মৃধা। আরু। এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবে। (আমাকে উদ্দেশ্য করে) আরু দোতলার ঐ ঘরটাতে যা। পরে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।”

আমি মাথা নেড়ে সেদিকে গেলাম। সিঁড়ি পেরিয়ে ঘরে গেলাম। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]