#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৬
বিয়ের আনন্দে পরিবেশ খাঁ খাঁ করছে। ভিড় ভাট্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বোরখা পরে বাড়িতে ঢুকে সর্বপ্রথম নানী জানের মুখশ্রী দর্শন করলাম। নানা জানের পাশে নানা ভাই বসে আছে। থমকে গিয়ে এক মিনিটের জন্য নানা ভাইয়ের দিকে এক পলক তাকালাম। নানা ভাই বড়ো মামাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “দেখ খোকা, আমাদের তিস্তা একটা ভুল করেছে তার শা/স্তি কেন আমার অন্য নাতনি পাবে? তাছাড়া তুরের বয়স কম। ও মানিয়ে নিতে পারবে কি-না, কি তাই তো”
বলেই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বড়ো মামার দিকে প্রশ্ন ছুঁ/ড়ে দিলেষ। বড়ো মামা গম্ভীর গলায় বলেন, “আমি এতকিছু জানি না বাবা। বিয়েটা না হলে আমাদের বাড়ির মান সম্মান সব ন/ষ্ট হয়ে যাবে। প্রয়াসেরা হুমকি দিয়েছে, বিয়ে না হলে থা/নাতে মা/ম/লা করবে। আমাদের আহসান পরিবারকে থা/নায় যেতে হবে, এটা কী সম্মানের?”
দরজার বাইরে থেকে কথপোকথন শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিস্তা আপুর কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা হতে লাগল। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত অনুভব করলাম। অপূর্ব ভাইকে সত্যিটা জানাতে চেয়েও কেন জানালাম না। চোখ জোড়া ছলছলিয়ে করে উঠল। আমার একটি ভুলের জন্য তুরের জীবনটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাহুতে স্পর্শ পেলাম। ঘাড় কাত করে তাকাতেই দেখলাম অপূর্ব ভাই। অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, “কী হয়েছে?”
নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে হাত রেখে বলেন, “হিসস! আস্তে কথা বল। তোর গলা শুনতে পাবে।”
বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন অন্যপাশে। ভিড়ের মাঝে কেউ লক্ষ্য করল না আমাকে। চলে গেলাম আমাদের ঘরে। দরজা বন্ধ করে বসে আছে শেফালী ও তুর। অপূর্ব ভাই তিনবার দরজা টোকা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন, “তুর,শেফু দরজা খোল। দেখ কে এসেছে।”
তুর ভেতর থেকে চিৎকার করে বলে উঠে, “প্রয়াস এসেছে তাই না? আমি ও
ঐ ছেলেটাকে বিয়ে করব না। আপনি দাদি জানের সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। আমাকে বারবার বলে, ‘প্রয়াস ভাই সুদর্শন, সুপুরুষ। আমার সাথে ভালো মানাবে।’ এতই যখন সুদর্শন, আমার সাথে মানাবে। তাহলে আগেই বিয়ে ঠিক করতে। আমি বিয়ে করব না বলে দিচ্ছি।”
তুরের অভিমানী কণ্ঠে আমি হাসলাম। দরজায় আলতো করে টোকা দিয়ে বললাম, “এই তুর পাহাড়, এই মিষ্টি কুমড়ার ফালি। দরজা না খুললে একদম ভেঙে ফেলব। তোর বাবা চাচাদের টাকাই নষ্ট হবে।”
ওপাশে তুর হেসে ফেলেছে। অবিলম্বে দরজা খুলে আমার দিকে দুই সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। বোরখা পরার দরুন আমাকে চিনতে পারে নি। আমি আর অপূর্ব ভাই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। নিকাব খুলতেই জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমি জড়িয়ে ধরলাম। জড়িয়ে ধরে আওড়ায়, “তুই এসেছিস। আমি ভেবেছি আসবি না। সেদিন তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম দেখা করতে। মিহিরের বাচ্চা তোকে আসতে দেয়নি। ইচ্ছে করছিল ..
“যত্তসব ঢং!” শেফালীর এরূপ কথায় আমাদের আলিঙ্গনে ব্যাঘাত ঘটল। দুজনার থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম। শেফালী ভেংচি দিয়ে প্রস্থান করল ঘর থেকে। মনে অভিমান জন্মাল। তুর আমার মন পড়ে বলে, “রাগ করিস না, তোর জন্য আমাকে আর শেফালীকে বাবা অনেক রাগারাগী করেছে। এজন্য ওর মন ভার।”
“ওহ্!” সংক্ষিপ্ত জবাব। ততক্ষণে বড়ো মামি উপস্থিত হলেন আমাদের কক্ষে। আমাকে দেখে জড়িয়ে নিলেন বক্ষ মাঝারে। অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বলেন, “অবশেষে আমার মেয়েটা আমার কাছে এসেছে। কেমন আছিস মা?”
“তোমাদের খুব মিস্ করছি মামি। আমি আর তোমাদের ছেড়ে যাবো না, সেখানে আমার একদম থাকতে ইচ্ছে করে না।”
“কিছু করার নেই মা। তোর বিয়ের পর আমাদের ছেড়ে থাকতে হবে। তাই আগে থাকতেই অভ্যাস কর মা।” মামির কথায় দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। মামির কাছে ছোটো করে আবদার করলাম ‘তার কোলে মাথা রাখার।’ মামি অমত করলেন না। বিছানায় শুয়ে পড়লেন। তার দুই কোলে আমরা দু’জন মাথা রাখলাম। পরম শান্তি অনুভব করলাম। পাঁচ মিনিটের ভেতরে শেফালী ফিরে এলো। তবে সঙ্গী হয়ে এলো অনেকে। তড়িগড়ি করে উঠে বসলাম। বড়ো মামা আমাকে দেখে রেগে গেলেন প্রচণ্ড। গম্ভীর গলায় বলেন, “ওকে নিয়ে উঠানে এসো।”
বলে মামারা উঠানে গেলেন। আমি অপূর্ব ভাইয়ের দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকালাম। অপূর্ব ভাই ইশারা করলেন। ধীর পায়ে হেসে উপস্থিত হলাম উঠানে। নতজানু হলাম। মামা গম্ভীর গলায় বলেন, “তুই এখানে কেন এসেছিস? কোন পরিচয়ে এখানে এসেছিস?”
অপূর্ব ভাই এগিয়ে এসে বললেন, “আমি ওকে এখানে এনেছি বাবা।”
“কেন?”
“কারণ ওকে আমি ওর বন্ধুর পরিচয়ে এখানে এনেছি। বন্ধুর বিয়েতে বন্ধু আসতে পারবে না বাবা?” অপূর্ব ভাইয়ের দৃঢ় কণ্ঠস্বর। মামা রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, “তারমানে তুই ওকে এনেছিস? আমাকে বলার প্রয়োজনও বোধ করিস নি? আমি তোর থেকে এটা আশা করি নি। যেই মেয়ের জন্য আমাদের মান সম্মান নষ্ট হয়ে গেল, তাকে আবার নিয়ে এলি। এবার তুরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করবে এই মেয়ে।”
সেজো মামি এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। শেফালীর পাশে। শেফালীর মুখে হাসি। মামি তা সহ্য করতে পারলেন না। প্রকাশ্যে তার গালে চ/ড় বসিয়ে দিলেন। সবাই থমকে গেল। চমকে তাকাল মামির দিকে। এক চ/ড়েও ক্ষান্ত হলেন না। মেজো মামি ও ছোটো মামি ধরলেন। বড়ো মামি প্রতিক্রিয়া করলেন না। উল্টো সুরে বলেন, “থামলি কেন, আরও কয়েকটা দে। নাহলে আমাকে কয়েকটা দিতে দে। মেয়েটা আমাদের যৌথ পরিবারে থেকেও স্বার্থপর হয়েছে। (মেজো মামিকে উদ্দেশ্য করে) তোর মেয়েকে আমার সামনে আসতে বারণ করে দিবি।”
গালে হাত দিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে শেফালী, “চাচি।”
“নেই চাচি।” বড়ো মামি বলতেই বড়ো মামা থমথমে গলায় বলেন, “হচ্ছে টা কী? তুমি শেফালীর সাথে এমন করছ কেন? ও আমার কাছে বলে, ভালোই করেছে।”
অপূর্ব ভাইকে মামা ব/কছেন, আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। নানা ভাই বড়ো মামার মুখের উপরে কোনো কথা বলতে পারছেন না। বংশের বড়ো নাতিকে বকছে তার মুখ বন্ধ। আমি দুফোঁটা পানি ছেড়ে বললাম, “আমি আর আসবো না মামা। আপনি কাউকে ব/কবেন না।”
অপূর্ব ভাইকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ” তুই বাড়ির ছেলে হলে আরুর মতো মেয়েকে নিয়ে আসতি না। বেরিয়ে যা আমাদের বাড়ি থেকে।”
কিছু বলতে চাইলাম। অপূর্ব ভাই আমাকে থামিয়ে বললেন, “কেন বাবা? ও কেন যাবে? তোমরা সবাই স্বার্থপর। বোনটা বেঁচে ছিল, তার মেয়েকে মাথায় তুলে রেখেছো। বোনটা চলে গেল অমনি মুখোশ খুলে বেরিয়ে এসেছো। তুমি তোমার বংশের মেয়েকে মানুষ করতে পারো নি, অন্যের মেয়ের দোষ কেন দিচ্ছো। থাকব না, এই বাড়িতে। চল আরু।”
অপূর্ব ভাই চললেন বাড়ি ছেড়ে। তার আদেশ মেনে বড়ো মামির দিকে তাকালাম। তিনিও ইশারা করলেন। গতিশীল পা জোড়া এগিয়ে চললাম। গন্তব্য আমার অজানা নয়, ঢাকার পথে।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৭
লঞ্চ টার্মিনাল। সারিবদ্ধভাবে সাজানো লঞ্চগুলো। কয়েকটা ভিরেছে টার্মিনালে, কয়েকটা ভাসমান। অপূর্ব ভাই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম, “অপূর্ব ভাই, আমরা নৌ পথে কোথায় যাচ্ছি?”
“ঢাকাতে।” সংক্ষিপ্ত জবাব। আমাদের বাড়ির লোকজন আমার জন্য চিন্তা করবে এতে সন্দেহ নেই। আপত্তি স্বরুপ কণ্ঠে বললাম, “না, আমি ঢাকাতে যাবো না। আপনি বাড়িতে ফিরে যান, আমিও আমার নিজের বাড়িতে ফিরে যাই।”
অপূর্ব ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। ভীত হলাম আমি। লঞ্চ তখন দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমশ। উদ্দেশ্য গন্তব্যের পথে। অপূর্ব ভাই লাফ দিয়ে লঞ্চে উঠে গেলেন। ডান হাতের করতল মেলে আমাকে ইশারা করলেন লঞ্চে উঠতে। দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে হাত রাখলাম হাতে। লাফ দিয়ে লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চে ভিড়। জেনারেল বা কেবিন কোনোটাই খালি নেই। জনগনে ভর্তি। সিঁড়ি পেরিয়ে ছাদে গেলাম। লোহার বেঞ্চিতে বসলাম দুজনে। লঞ্চ ততক্ষণে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। রেলিং থেকে নিচে উঁকি দিলাম। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি নদীর জলে মিশে গেল। অন্য এক ফোঁটা গড়িয়ে পড়তেই অপূর্ব ভাই ধরে ফেললেন। অস্বাভাবিক গলায় বলেন, “তুই কি আমার সাথে যেতে চাইছিস না আরু?”
উল্টো সুরে বললাম, “দাদি জান আমার জন্য চিন্তা করছেন অপূর্ব ভাই। আমার সন্ধান না পেলে আবুল চাচার উপর বিপদ নেমে আসবে। তার চাকরিটাও চলে যেতে পারে। প্লীজ ফিরে চলুন।”
অপূর্ব ভাই উঠে চলে গেলেন। দোতলা অতিক্রম করে আসার সময় একটা ক্যান্টিন নজরে পড়েছিল। নিশ্চয়ই খেতে গেছেন। হাতটা মাথার নিচে রেখে হেলান দিলাম। মামাদের বাড়ি থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত হেঁটে এসেছি বিধায় পায়ের পাতা ব্যথা করছে, হাঁটু ব্যথা করছে, টাকনুও যোগ হয়েছে সাথে। অপূর্ব ভাই দুই কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন। ওয়ান টাইম চায়ের কাপ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলেন, “সকাল থেকে না খেয়ে আছিস। দুপুর গড়িয়ে গেছে। খেয়ে নে, ফ্লাটে যাওয়ার আগে পেটে আর কিছু পড়বো না। টাকা নেই, যা আছে ভাড়ায় চলে যাবে।”
ভেংচি দিলাম। নদীর দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে গাছ রোপণ করা। দখিনা বাতাসে দুলছে গাছের পাতা। হিম হয়ে গেছে চা টুকু। পেটে ক্ষুধা লেগেছে। গম্ভীর গলায় বললাম, “এই পানিটুকু খেলে ক্ষুধা শেষ হবে?”
“আমি কি বলেছি, যে চিনির পানিটুকু খা? বিস্কুট এনেছি সাথে। নে।” বলেই কাগজে পেঁচানো দু’টো বিস্কুট এগিয়ে দিল। আমি নিজ মনে খেতে লাগলাম। শরীরটা ভালো লাগছে না। অপূর্ব ভাইয়ের গায়ে হেলান দিয়ে বসে রইলাম। কত কত মানুষ নিজেদের মতো ছবি তুলছে। ইচ্ছে করছে একটু শুতে কিন্তু তার উপায় নেই। কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে অবিলম্বে ঘুমিছে গেলাম হৃদমাঝারে।
সূর্য ডুবেছে। আকাশের বুকে চাঁদ উঁকি দিয়েছে। মিটিমিটি তাঁরা জ্বলছে। লঞ্চ যখন জঙ্গল পেরিয়ে ছুটে যাচ্ছিল নিজ গন্তব্যে তখন পথ আটকে দাঁড়াল বড়ো একটা জাহাজ। লঞ্চের সাথে সংঘর্ষ হতেই অপূর্ব ভাইয়ের বুক থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম নিচে। সবকিছু বুঝে উঠার আগেই নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটল। চারপাশে তাকিয়ে সবকিছু দেখছি। অপূর্ব ভাইও হতভম্ব হয়েছেন। আমাকে না তুলে লঞ্চের রেলিং দিয়ে উঁকি দিলেন বাইরে। চিন্তিত হয়ে বলেন, “এরা কারা? মুখোশ পড়ে আছে কেন?”
ঘুম ঘুম ঝাপসা চোখে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললাম, “কে মুখোশ পড়ে আছে বাইরে। আমরা তো লঞ্চে?”
অপূর্ব ভাইয়ের জবাব না পেয়ে আমি নিজেই উঠে গেলাম। পাশ থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম মু/খো/শধারী কতজন লোক জাহাজে করে লঞ্চ আটকে আছেন। কয়েকজন উঠেছেন ইতোমধ্যে। অ/স্ত্রও হাতে দেখা যাচ্ছে। অপূর্ব ভাইয়ের হাতটা খামচে ধরে বললাম, “ওরা কারা অপূর্ব ভাই। আমি সিনেমাতে দেখেছি, এরা আসলে ডা/কা/ত। নৌ পথে ডা/কা/ত। আবার কী হবে।”
“কিছু হবে না, শান্ত হ।”
দলবল বেঁধে লঞ্চে ঢুকল তারা। আমরা দুজনে উপরে ঘাপটি দিয়ে বসে আছি। নিঃশব্দে কেঁদে চলেছি আমি। হেঁচকি উঠে গেছে। অপূর্ব ভাই ফিসফিস করে শান্তনা দিয়ে চলেছেন। কিছু হবেনা। কিন্তু আমার বাচ্চা মন তা শুনতে নারাজ। কিছুক্ষণ পেরিয়ে যেতেই পায়ের ছোপ ছোপ শব্দ শুনতে পেলাম। টর্চ জ্বেলে আটজন মু/খো/শধারী হাজির হলো অচিরে। হুম/কি দিয়ে সবাইকে নিয়ে গেল নিচে। ব/ন্দু/ক নিয়ে চায়চারি করছে লঞ্চের অভ্যান্তরীণ জুড়ে। লু/ট/পাট করে নিল যাত্রীদের টাকা পয়সা গহনাঘাঁটি। চলে যাওয়ার সময় এক পর্যায়ে তারা আমার দিকে তাকালো এক জন। উচ্চ স্বরে চ্যাঁচিয়ে বলে, “ওস্তাদ, ওস্তাদ। বোরখা পড়া মাইয়াডারে দেহেন। কী সুন্দর, এককারে চান্দের লাহান।”
সবাই আমার দিকে তাকাল। নিকাব বাড়িতে খুলে রেখে এসেছি। যার দরুন মুখশ্রী প্রদর্শিত। প্রধান লোকটা আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “সুন্দর। কিন্তু নিয়ে কী করব? এই বস্তা বস্তা টাকা পয়সা গুনতে গুনতে রাত পোহাবে। সাথে নিয়ে কী করব?”
আরেকজন বলে, “ওস্তাদ, লইয়া লন। টাকা পয়সা গোনার পর বসে থাকমু নি? শরীরডাও তো কিছু চায়। এমন সুন্দর মাইয়া হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।”
লোকটা কিছুক্ষণ ভেবে সম্মতি দিয়ে বলেন, “নিয়ে তাড়াতাড়ি চল। আমাদের এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ নয়। এতক্ষণে পু/লি/শে খবর চলে গেছে। যখন তখন হাজির হয়ে যাবে।”
তিনজন লোক আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি অপূর্ব ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে গেলাম। তিনজনের একজনের অপূর্ব ভাইকে ধা/ক্কা দিলেন। অপূর্ব ভাই ছিটকে পড়লেন নিচে। আমার হাত ধরে চললেন তারা। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি। অপূর্ব ভাই নতজানু হয়ে বললেন, “প্লীজ ওকে ছেড়ে দিন। ওর কিছু হয়ে গেলে আমাদের দুই পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।”
অপূর্ব ভাইকে আরও একটা ধাক্কা দিলেন। তিনি এবার আর ক্ষান্ত থাকতে পারলেন না। সর্বশক্তি দিয়ে আ/ঘা/ত করল একজনকে। ক্ষেপে গেল ডাকাত দল। হাতের ত/লো/য়ার দিয়ে আ/ঘা/ত করল অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধে। অপূর্ব ভাই সরে গেলেন, তবুও কাঁধে লাগল। শার্ট ছিঁড়ে রক্ত গড়াতে লাগল। সবাই মিলে একত্রে আ/ক্র/ম/ণ করল। সবার হাত থেকে বাঁচতে অপূর্ব ভাই ঝাঁপ দিলেন পানিতে। চিৎকার করে উঠলাম, “অপূর্ব ভাই…”
শেষ রক্ষা হলো না। দুটি মানুষের ব/লিদান হওয়ার কথা ভেবেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। অজানা আমার ভবিষ্যৎ।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]