এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব-৩৪+৩৫

0
212

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৪

অপূর্ব ভাই এগিয়ে এলেন। আমি হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বসে আছি। হাঁটু গেড়ে বসে কোলে তুলে নিলেন আমায়। চমকে গেলাম আমি। তার এমন কাজটি আমার প্রত্যাশার বাইরে অবস্থান করছিল। দ্রুত হাতে অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরলাম। ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলেন সিড়ি পেরিয়ে। পর্যাক্রমে উপরে উঠার কারণে তার চিবুকের সাথে আ/ঘাত লাগল। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গেঁথে গেল ললাটে। একহাত দিয়ে গাল ধরতেই আইসক্রিমের প্যাকেট মাটিতে পড়ল। অপূর্ব ভাই হাঁটু গেড়ে আলতো ঝুঁকে তুলে আইসক্রিমের প্যাকেট। ভ্রু কুঁচকে বললেন, “কোমরে ব্যথা বলে হাঁটতে পারবি না, হাতে তো পাস নি‌। তাহলে কেন আইসক্রিম হাত থেকে খসে পড়ল। হম?”

নত হলাম আমি। আমতা আমতা করে বললাম, “পায়ে ব্যথা নির্দিষ্ট, বেদনা তো সারা শরীরের। তাই না?”

উপরে উঠছেন ক্রমশ। তার চিবুকের সাথে আমার ললাটের সংঘর্ষ হচ্ছে। আমি ততবারই কেঁপে উঠছি। এক সময়ে অনুভব করলাম তিনি হাঁপাচ্ছেন। দরজায় ১৪০৩ ফ্লাট নং দেখে চমকে উঠলাম আমি। যেখানে একা এতটা পথ হেঁটে আসা কষ্টকর। দরজা খোলা ছিল। সোজা সোফায় বসিয়ে দিলেন। আমাকে একা রেখে গেলেন ড্রাইনিং রুমে। ফ্রিজ থেকে আইস নিয়ে হাজির হলেন। সাথে ওষুধের বক্স নিয়ে এলেন। হাঁটুর কাছে বসতেই উঠে গেলাম আমি। তার নিয়ে আসা ঠান্ডা পানির বোতলটা তার হাতে দিয়ে বললাম, “আপনি পান করুন, গরমে ঘেমে গেছেন।”

“তারমানে এতক্ষণ অভিনয় করছিলি? সোজাসুজি বললেই তো হতো, আমার কোলে উঠতে চাস। আগে বোন ছিলি, কোলে উঠতে পারতিস না, এখন বউ। বউ হিসেবে তোকে কোলে নিয়ে চেম্বারে যাবো, আবার ফিরেও আসব।” বলেই রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন ঘরে। পানির গ্লাসটা এখনো আমার হাতে। গ্লাসটা টেবিলে রেখে সেদিকে গেলাম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। পা উল্টে গেল। মচকে গেল। ব্যথায় টনক নড়ে উঠল। দু’হাতে পা জড়িয়ে ধরে মৃদু আর্তনাদ করলাম, ‘আহ’।

অপূর্ব ভাই ঘাড় কাত করে এক পলক তাকিয়ে বলেন, “ঢং করিস না, তোর নাটকে আমি আর ভুলছি না। চুপচাপ উঠে পড়।”

বলেই হাঁটতে শুরু করলেন। তৎক্ষণাৎ খেয়াল করলাম তিস্তা আপুকে। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন, “আরু মাটিতে গড়াগড়ি করছিস কেন? কী হয়েছে পায়ে?”

“ব্যথা। পড়ে ব্যথা পেয়েছি। মনে হয় মচকে গেছে।” কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি। তিস্তা আপু আমাকে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন। বিছানায় বসিয়ে রেখে ওষুধের বক্স সহ যাবতীয় জিনিস পত্র নিয়ে গেলেন। আইস পায়ে চে/পে ধরে রাখলেন কিছুক্ষণ। বালিশটা ঠিক করে দিয়ে পাখা দিয়ে হাওয়া করতে করতে বললেন, “বিদ্যুৎ আসবে বলে মনে হয় না। তুই শুয়ে পড়। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন) তা কিছু খেয়েছিস?”

“হম। একটু খেয়েছি।”

“ভাইয়া খেয়েছে?”

“না, এসেই তিনি ওয়াশরুমে চলে গেছেন।”

“ঠিক আছে, আমি তার জন্য খাবার দিয়ে যাচ্ছি। আর ভাইয়াকে বলবো আজকে যাতে সে নিচে ঘুমিয়ে পড়।
একটা কথা বলি তোকে আরু, তুই একটা অবিবাহিত মেয়ে, ভাইয়া একটা অবিবাহিত পুরুষ। দু’জনে এক ঘরে থাকা ঠিক নয়। জানাজানি হলে লোকে চর্চা করবে, ছিঃ ছিঃ করবে। আমরা যতোই তোদের বিশ্বাস করি। সমাজ তোদের বিশ্বাস করবে না। ভাইয়াকে বলে বোঝানোর সাহস আমার নেই, তুই একটু বলে দিস।” বিশ্লেষণ করে চলে গেল তিস্তা আপু। তিস্তা আপুর গমন পথের দিকে তাকিয়ে ভাবছি। তিনি সঠিক। কিন্তু আমরা বিবাহিত। অপূর্ব ভাই কেন সবার থেকে লুকিয়ে রাখলেন ব্যাপারটা? একান্ত তিনি জানেন।
__

“তোর না-কি পা মচকে গেছে। দেখেছিস মিথ্যা বাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না।” ফোলা পা দেখতে দেখতে বললেন অপূর্ব ভাই। হাউসী তুলে নিভু নিভু চোখে দেখলাম। কোনো ভাবাবেগ প্রকাশ করলাম না। মাথা ব্যথায় শরীর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ এখনো আসেনি। আলো নেই ঘরে। মোম জ্বলে হলদেটে আলো ছড়াচ্ছে। মশা রক্ত চুষে খাচ্ছে। মশারী টাঙাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। চাদরের নিচে মশারি গুঁজে দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। আমার রেসপন্স না পেয়ে কপালে এপিঠ ওপিঠ দেখে পুনরায় বলেন, “শরীর তো গরম দেখছি। জ্বর আসবে রাতে।”

“হম।”

“ঘুমা, খেয়েছিস কিছু?”

“পায়ে ব্যথা করছে।”
অপূর্ব ভাই উঠে যাওয়ার চেষ্টা করতেই হাত ধরে ফেললাম। দৃষ্টি সরিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বললাম, “তিস্তা আপুকে আপনি কেন বলেন নি, আমরা স্বামী স্ত্রী? যদি পরিচয় দিতেই নাইবা পারেন। তবে কেন বিয়ে করেছিলেন?”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি যে?”

“তাহলে কী করব? বাইরে জানাজানি হলে লোকে আমাকে ছিঃ ছিঃ করবে।” অপূর্ব ভাই জবাব না দিয়ে আলগোছে বেরিয়ে গেলেন। প্রশ্নটা আমার কাছে রয়ে গেল।

পরদিন সকালেও বৃষ্টি থামল না। সূর্য মামা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড় চলছে। ‘৭’ নং সিগন্যাল চলছে সারাদেশে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। গরম গরম পপকর্নের সাথে লুডু বেশ মজেছে। সুজন ভাইয়ের ছয় তিন পড়তেই চ্যাঁচিয়ে উঠলেন। তিস্তা আপুর সবুজ গুটি খেয়ে ফেললেন। তিস্তা আপু মন ভার করে রাগী দৃষ্টিতে সুজন ভাইকে দেখছেন। দম দিয়ে মিনিট পাঁচ বসে থেকে উঠে গেলেন। পপকর্নের বাটিটা হাতে নিয়ে বলে, “তোমরা থাকো। আমি পপকর্ন বানিয়ে নিয়ে আসছি।”

“খেলবে কে?” সুজন ভাই।

“তুমি খেলে চাল দিয়ে দাও। চারটা গুটি কম করে‌ হলেও চল্লিশ বার খেয়েছো।” অভিমানী গলায় বলে তিস্তা আপু রান্নাঘরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সুজন ভাই গেলেন তিস্তা আপুর পিছনে পিছনে। আমি আর অপূর্ব ভাই বসে আছি। চারটা গুটি আমার হাতে রয়েছে। তিনজনে আমার কোটের সামনে পাহারা দিচ্ছে। উঠলে ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছু একটা করতে হবে। এমন সময়ে অপূর্ব ভাইয়ের ফোন এলো। বড়ো মামী ফোন করেছে। অপূর্ব ভাই রিসিভ করে বলেন, “আসসালামু আলাইকুম আম্মা। বৃষ্টিতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে?”

“হ্যাঁ-রে অপু। বাড়ির সামনের কড়াই গাছটা বৃষ্টিতে নুইয়ে পড়েছে।”

অপূর্ব ভাই কথা বলতে ব্যস্ত। আলগোছে তিনটা গুটি পাকার কোটে ফেলে দিলাম, আরেকটা তিন লাগবে পাকতে। এবার আমিই জিতবো! হি! হি! হি! 🧛🏿‍♀️

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৫

বিরতিহীন ধারায় ঝরছে হিলশে গুঁড়ি। জানালা দিয়ে দমকা হাওয়া ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছে। অপূর্ব ভাই জানালা ঘেঁষে কথা বলছেন ফোনে। ভালো লাগছে না। তিস্তা আপুর কাছে গেলাম। রান্নাঘরে দুজনের রোমান্টিক দৃশ্য দেখে ফিরে এলাম। কাবাবের হাড্ডি হওয়ার ইচ্ছে নেই। ঘরে ফিরে এলাম। প্রেমময় দৃষ্টিতে অপূর্ব ভাইয়ের দিকে দেখলাম। অপূর্ব ভাই আর আমার সম্পর্কটা ঠিক থাকলে..। অন্য জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। পরপর কয়েক গাড়ি এসে থামল বাড়ির সামনে। বড়ো চাচা ও মিহির ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমেছে। পেছনে অনেক মানুষ। আমি চমকে গেলাম। অপূর্ব ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম, “জানালা দিয়ে দেখুন, চাচা আর মিহির ভাই। তারা আমাদের এখানে কী করছে?”

“কোথায়, দেখি।”
অপূর্ব ভাই কল বিচ্ছিন্ন করে আমার দিকে তাকালেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে হতভম্ব হলেন তিনিও। চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারি করলেন ঘরে। উচ্চে স্বরে ডাকলেন, “তিস্তা, সুজন এদিকে আয় জলদি।”

অবিলম্বে হাজির হলেন দু’জনে। তিস্তা আপু ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, “কী হয়েছে ভাইয়া?”

“আমাদের খোঁজে কেউ আসলে বলবি, ‘অপূর্ব আহসান বা আরু নামের কাউকে তোরা চিনিস না। একজন মনোচিকিৎসক এখানে থাকতো, এখন আর এখানে থাকে না। আমরা থাকি। বউ নিয়ে অন্য কোথাও থাকে।”

“বুঝলাম না, আপনাদের খোঁজে কে আসবে।” সুজন ভাই।

“আরুর চাচারা এসেছে আমাদের খোঁজে। ফোন বন্ধ করে রাখবো। তোরা কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করবি না। অতি প্রয়োজন পড়লে পাশের ফ্লাটে ফোন দিবো। নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলবো।” বলেই অপূর্ব ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল ফ্রেমবন্দি ছবিটা সোফার ভেতরে লুকিয়ে রাখলেন। আলমারির সিন্দুক থেকে টাকার বান্ডিলটা পকেটে নিয়ে আমার হাত ধরলেন। দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। অপূর্ব ভাই রেলিং বিহীন বারান্দায় গেলেন। আমার হাত ধরে পনেরো তলার বারান্দায় উঠে গেলেন। সেই ফ্লাটের বারান্দা দিয়ে ভাড়াটের ঘরে গেলাম। কেউ নেই, দরজা খোলা। আলগোছে ঘর থেকে দু’জনে বেরিয়ে গেলাম। পনেরো তলার থেকে লিফট ধরে সোজা চব্বিশ তলায় পৌঁছে গেলাম। পুরোটা সময় অপূর্ব ভাইয়ের হাত খামচে ধরে রেখে ছিলাম। ‘কাঁপা ঘরে’ কেঁপে কেঁপে উঠেছি। পৌঁছে গেলাম সেখানে, যেখানে ছাদের অবস্থান। ছাদে ফুলের গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ফুলের গন্ধ নাকে ভেসে আছে। বৃষ্টি এখনো অঝোর ধারায় ঝরছে। গাছ ধরে রেলিং-এ উঠে গেলেন। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “দ্রুত হাত দে। আমাদের অনেকটা পথ পেরিয়ে যেতে হবে।”

“বৃষ্টিতে ছাদ পিচ্ছিল। পরে আধম/রা হবো না, একদম আরও উপরে উঠে যাবো।”

“আমি তো উপরেই যেতে চাই। পালিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পারব? পারব না। তারচেয়ে শান্তিতে চলে যাই।” ভীত হলাম আমি। দুকদম পিছিয়ে গেলাম তৎক্ষণাৎ। অপূর্ব ভাই কপাল কুঁচকে ফেললেন। হাতটা এগিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, “বিরক্ত করিস না। তাড়াতাড়ি হাত দে। তোর বাবা চাচারা তো আস্ত একটা ডা/কা/ত। মেয়ে আনার অপ/রা/ধে এসে আমাকে..

মুখ ভেংচি দিয়ে হাত এগিয়ে দিলাম। অপূর্ব ভাই রেলিং পেরিয়ে অন্যপাশের এপার্টমেন্টের গেলেন। আমাকে টেনে তার সামনে নিয়ে গেলেন। ছাদ পেরিয়ে এপার্টমেন্টের ভেতরে গেল। লিফট দিয়ে নেমে গেলাম। নিচে দাড়োয়ান অপূর্ব ভাইকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, “ডাক্তার সাহেব আপনি এখানে? তা কখন এলেন?”

“এইতো একটু আগে। জমিল ভাই ফোন দিয়েছিলেন। তাকে দেখতে এসেছি।”

আমরা এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। বৃষ্টি বাদলের দিনে রাস্তাঘাট শুনশান। কোনো গাড়ি নেই। পানি জমে গেছে। আকাশে মেঘ গর্জে উঠছে। আমরা পানির ভেতরে দিয়ে ছোপ ছোপ করে দৌড়ে চলেছি। পায়ে ব্যথায় ততটা এগোতে পারছি না। দৃষ্টি পেছনে যেতেই লক্ষ্য করলাম একদল লোক আমাদের পেছনে ছুটে আসছে। চ্যাঁচিয়ে বললাম, “দেখুন, তারা আসছে।”

সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছি। তারা অনেক নিকটে এসেছে। পা ব্যথা করছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, “আর পারছি না, একটু দাঁড়ান।”

“আরেকটু পথ। গাড়ি পেয়ে যাবো।”

কিছুদূর যেতেই মালবাহী ট্রাক দেখতে পেলাম। হাত ছেড়ে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন তিনি। পা থেমে গেছে। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছি। অপূর্ব ভাই চিৎকার করে বলেন, “আরু একটু কষ্ট কর, ওরা পিছনে। তোকে ধরে ফেলবে। প্লীজ আরু, আর একটু পথ।”

ধীরে ধীরে হাঁটার প্রচেষ্টা করলাম। ট্রাক চালক অপূর্ব ভাইয়ের গলা শুনে গাড়ি থামালেন। থমথমে গলায় বলেন, “গাড়িতে কে?”

“আমরা একটু বিপদে পড়েছি ভাই। কিছু লোক আমাদের পেছনে পরেছে। একটু সাহায্য করুন। আমার মিসেস কে গাড়িতে তুলে নিন। পরে আমি আপনাকে সবটা খুলে বলছি।” অপূর্ব ভাইয়ের মিনতি মেনে নিলেন তিনি। গাড়ি থামিয়ে দিলেন। আমি তৎক্ষণাৎ গাড়ির কাছে চলে এসেছি। অপূর্ব ভাই হাত এগিয়ে দিতেই ধরলাম তার হাত। বাম পা রেখে গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিলেন চালক। হুমড়ি খেয়ে পড়লাম অপূর্ব ভাইয়ের বুকের উপর। ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে বালুর ভেতরে পড়লেন তিনি। আমি তার বুকে চুপটি করে বসে হাঁপাচ্ছি। ফুল স্পিডে গাড়ি চলছে।
___
বৃষ্টি থামার নাম নেই। এখনো ঝরছে। গাড়ির কাচের উপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে লেপ্টে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। গাড়ির ভেতরে আমরা। শরীরের উপরে অপূর্ব ভাইয়ের শার্ট। জড়িয়ে রেখেছেন আমাকে। ভিজে আমার শরীর জমে গেছে। রীতিমতো কাঁপছি। ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছিলাম, তাই গাড়ির ভেতরে নিয়ে এসেছে। ঠান্ডায় মাথা ভার হয়ে আছে। শহর থেকে অনেকটা দূরে আমরা রয়েছি। গাড়ি থেমেছে।

“কিছু খাবি?”

“ঠান্ডা লাগছে। শীত করছে। ক্ষুদা লেগেছে। একটু বাড়িতে যাবো। প্লীজ আমাকে একটু ঘরে নিয়ে যাবেন। কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাবো।”

গ্লাসে টোকা পড়ল। কাঁচ তুলতেই হেলপার চায়ের ওয়ান টাইম কাপ এগিয়ে দিলেন। শুকনো একটা ধন্যবাদ দিয়ে কাপ গ্রহণ করলেন। ড্রাইভার ও হেলপার গাড়িতে বসলেন। গাড়ি চলতে শুরু করল। ফুঁ দিয়ে আমার মুখের দিকে এগিয়ে দিলেন। এক চুমুক দিয়ে অপূর্ব ভাইয়ের বুকে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে যাচ্ছি। ‘পায়ে ব্যথা ও মাথা ভার’ – যখন তখন জ্বর আসতে পারে। মাথায় ডানহাতের এপিঠ ওপিঠ দিয়ে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর। আশেপাশে দেখি কোথাও থাকার উপযোগী ঘর পাই কি-না?”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]