ভালোবাসি প্রেয়সী পর্ব-১৩

0
426

#ভালোবাসি_প্রেয়সী [১৩]
#জান্নাতুল_বিথী

‘ওকে ফাইন, আপনার ত্যাড়া বাঁকা কথা শোনার ইচ্ছে নাই আমার! আপনি শুধু এটা বলেন কিভাবে চিনেন আমাকে?আমরা কি আত্মীয় হই?’

‘কিভাবে চিনি সেটা বলতে পারবো না, তবে এটুকু শিওর হয়ে নাও যে আমি তোমার আত্মীয় না!’

আমি মুখে হাত দিয়ে বসে পড়লাম একটা বেঞ্চে। সব কিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে একটু কান্না করতে ইচ্ছে করছে। আমি দু’হাতে মুখ ঢেকেই ইমাদ ভাইকে বললাম,

‘আপনি আমাকে মামার কাছে নিজের হবু বউ বলে দাবী করছেন। কিন্তু এটা তো শিওর জানেন নাকি যে আমি রাজি না হলে আপনি কোনো দিনই আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না।’

‘জানি!’

হঠাৎ এসব বলায় উনি অবাক হয়ে কথার জবাব দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় আমার দিকে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছেন যে কি বলতে চাইছি আমি। তাকে আরো এক ধাপ অবাক করে দিয়ে আমি বললাম,

‘আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।’

উপমার কথায় মনে হচ্ছে আকাশ থেকে টুপ করে নিচে পড়লো ইমাদ। মেয়েটা এসব কি বলছে, কেনো বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখে নেয় সে স্বপ্ন দেখছে কি না। অতঃপর চোখ খুলে উপমার দিকে তাকাতেই সে চোখে চোখ রেখে বললো,

‘কিন্তু একটা শর্ত আছে!’

হয়তো এ কথাটার অপেক্ষাতেই ছিলো ইমাদ। কোনো কারন ছাড়া উপমা কখনোই তাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। তাই তার চোখে চোখ রেখে সুক্ষ্ম হেসে বললো,

‘কি শর্ত সেটা বলো!’

‘আমার বাবা সম্পর্কে আমাকে সবটা বলতে হবে আপনার। কি কি জানেন আপনি!’

অবাক হয়ে চোখ পিটপিট করে সে তাকায় মেয়েটার দিকে। একটা মেয়ের চোখে সীমাহীন স্বপ্ন নিজের পিতা সম্পর্কে জানার। এবং সেটা অবশ্যই পজিটিভ কিছু। পিতৃ ভালোবাসা মেয়েটাকে অ’ন্ধ করে দিয়েছে যে সামান্য একটা ব্যাপার জানার জন্য নিজের জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে মানুষটাকে সে সব চাইতে বেশি অপছন্দ করে তার সাথে সংসার গড়ার কথা বলছে। সে কি একটু স্বা’র্থ’প’র হবে? ভালোবাসাকে নিজের করতে এ উপায় টাকে কাজে লাগাবে? নাহলে যে তার পিচ্চু কে পাওয়া তার কাছে আরো জটিল হয়ে যাবে। পরক্ষনেই এসব চিন্তা মাথা থেকে ফেলে মাথা ঝেড়ে দু’পাশে নাড়িয়ে বললো,

‘দেখো পিচ্চু আমি কখনোই চাইবো না এভাবে বিয়ে করতে! সামান্য একটা ব্যাপার, কিন্তু এ ব্যাপারে আমি শিওর না হয়ে তোমাকে কিছু বলতে পারবো না!’

তার কথা শুনে আমি মুখটা কঠিন করে বললাম,

‘তাহলে আমাকে বিয়ে করার চিন্তা সারা জীবনের জন্য মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন ইমাদ সাহেব।’

কথা শেষ করে তার দিকে এক পলকের জন্য তাকিয়ে দেখি সে কেমন অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে মুখ ফিরিয়ে নেই আমি। তার জন্য একটুও মাথা হচ্ছে না আমার। এ মুহূর্তে তার থেকেও বেশি নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। কি করবো কিভাবে তাদের খোজ নিবো কিছুই মাথায় আসছে না আমার। তাই দুই হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে উঠি।

উপমাকে হঠাৎ এভাবে কাঁদতে দেখে হকচকিয়ে যায় ইমাদ। কিছুটা অপ্রস্তুত স্বরে বললো,

‘এভাবে কাঁদচো কেনো পিচ্চু? বিশ্বাস করো আমি সবটা জানার পরে তোমাকে জানাবো!’

তার এ কথার ফলে উপমার কান্নার গতি আরো বেড়ে যায়। ইমাদ কি করবে উপায় অন্তর না পেয়ে বলেই বসলো,

‘ঠিক আছে, আমি বলার পর কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে হবে।’

তার কথা শুনে চোখ দুইটা চকচক করে উঠে আমার। তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বললাম,

‘বলেন তাহলে!’

ইমাদ অসহায় স্বরে বললো,

‘তখন কিন্তু বলতে পারবে না যে, এ সামান্য তথ্যর জন্য আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। একথা বললে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো মনে রেখো!’

‘আপনি কি বলবেন?’

ইমাদ ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে শুরু থেকে সবটা বললো, শুধু সে যে বারো আগ থেকে তাকে চিনে সেটা এবং পিচ্চু কে ভালোবাসার কথাটা স্কিপ করে যায়! সবটা শুনে উপমা নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন, আমাকে বিয়ে কেনো করতে চাইছেন সেসব তো বলেননি!’

‘সেসব তুমি আমার কাছ থেকে জানতে চাওনি। যেটা জানতে চাইছো সেটাই বলছি। বাকীটা না জানলেও চলবে তোমার!’

‘এটা বললে হবেনা, জানতে চাই আমি!’

‘বলছি না জানতে হবেনা? চলো বিয়ে করবো!’

‘এখন কিভাবে?’

‘চলো আমার সাথে!’
.
ইমাদ ভাইয়ের বাড়িতে বসে আছি জড়োসড়ো হয়ে। আমার সামনে ইমাদ ভাইয়ের বাবা শিপন সাহেব আর তার মা পারভীন আরা বসে আছে। তারা ভেবে পাচ্ছে না যে ছেলেটা সেদিন উপমা কে রিজেক্ট করছে সেই ছেলেই কেনো এখন তাকেই বিয়ে করতে চাইছে? পারভীন আরা তার স্বামীকে হালকা গুতো দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘তোমাকে আমি বলেছিলাম না উপমাই রাদিফ ভাইয়ের মেয়ে? বিশ্বাস করোনি তুমি এখন দেখছো? আমার ছেলে ওই মেয়ে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করবে না।’

চিন্তিত মুখে বসে আছে শিপন সাহেব। তিনি সত্যিই চিন্তিত তার ছেলে কেনো হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নিলেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না? স্ত্রীর কথাও তাকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে বারবার। যদি সত্যিই রাদিফের মেয়ে বেঁচে থাকে তাহলে মেয়েটাকে বাঁচতে দিবে না কিছু পশু। হ্যা পশুই তো, একজন মানুষ যখন অন্য একজন মানুষ কে খুন করে তখন তো সে আর মানুষ থাকে না। পশুর কাতারে পড়ে যায়। তারা এখন অপেক্ষা করছে উপমার মামা আর মামির জন্য। মেয়েটা কেমন জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে দেখে মায়া লাগলো তার। স্ত্রীকে চোখ দিয়ে ইশারা করে ব্যাপারটা দেখার জন্য। পারভীন আরা ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে দাড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। ভাবতেই অবাক লাগছে তার এক সময় এই মেয়েটাকেই তিনি হিংসা করেছেন। ভেবেই মনে মনে হাসেন তিনি। উপমার পাশে বসে তার মাথায় হাত রেখে বললো,

‘তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে মামনি? চলো রুমে যাবে আমার সাথে?’

পারভীন আরার কথা শুনে আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানাই। এতো গুলো মানুষের সামনে বসে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছিলো আমার। ইমাদ ভাই সেই যে আমাকে রেখে কোথায় জানি গিয়েছে জানিনা আমি। তার বাবা শিপন সাহেব মামাকে ফোন করে ইমার্জেন্সি ভাবে এ বাড়িতে আসতে বলছে। মামা মনে মনে হয়তো এমন কিছুর অপেক্ষাতেই ছিলেন। সেই মুহূর্তে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে উনি বলেন যা আলোচনা হবে সবটা সরাসরি হবে। তাই উনি মেনে নিয়েছে।

ঘন্টা খানেক পরে আয়েশা রুমে আসে। তাকে দেখে আমি এক পলক তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কখন এসেছিস বাহিরের কি খবর?’

‘ইমাদ ভাইয়াকে তুই ভালোবাসিস কই কথাটা তো আমাকে বললি না?’

তার কথা শুনে আমি চমকে উঠে বললাম,

‘এ কথা কে বলছে তোকে?’

‘ওই তো ইমাদ ভাই বাহিরে বাবাকে কথাটা বললো!’

আমি চোখ বড় বড় করে আয়েশার দিকে তাকিয়ে আছি। তার চোখ মুখ দেখেই মনে হচ্ছে বেচারির কথাটা হ’জ’ম করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। আমি তাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ইমন ভাইয়ের মা এসে আমাকে বাহিরে আসতে বললো। আমি আয়েশার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বললাম,

‘তুই চিন্তা করিস না। এরকম কিছুই না!’

আমার কথায় সে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে বললো,

‘তাই তো বলি, কার দ্বারা কি হবে সেটা আমার ভালোই জানা আছে।’

তার কথায় ভেংচি কেটে বাহিরে বের হই আমি। আমি রুম থেকে বের হতেই ইমাদ ভাইয়ের মা এসে আমাকে ধরে নিয়ে সোফায়বসিয়ে দেয়। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। নিজেকে কেমন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে। যাকে শর্ত দিয়ে বিয়ে করছি তাকে কি ভালোবাসতে পারবো? এই কথাটা ভেবেই ভয় হচ্ছে। তখন মামা বললো,

‘ইমাদ বলছে তোমরা নাকি দুজন দুজনকে ভালোবাসো। কথাটা আমি বিশ্বাস করিনি। তারপরো তুমি যদি চাও এই বিয়েটা হবে উপু। তুমি কি তাকে বিয়ে করতে রাজি আছো?’

চলবে,,,,,,,,