#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_১৪
#মোহনা_হক
‘ইজহানের কথায় পদ্ম ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কখনো এই লোক ভালো হবে না, সে ভালো করেই জানে। তার কি একটুও লজ্জাবোধ নেই? একটা অসহায় মেয়ে কে পেয়ে এসব বলে। ইজহান পদ্মের মলম লাগানো শেষ করে আবার জায়গা মতো মলম রেখে দেয়।’
“শুনো এটা আবার লাগিয়ে নিও। প্রত্যেকবার যে আমি লাগিয়ে দিবো সেটা ভেবো না।”
‘ইজহানের কন্ঠ স্বাভাবিক। পদ্মের ভিষণ অভিমান হলো কথাটি শুনে। দ্রুত পায়ে রুম থেকে চলে আসলো। নিচে হায়াৎ শেখ আর মুনিরা শেখ বসে কথা বলছেন। পদ্ম তাদের কাছেই গেলো।’
‘পদ্মকে দেখে হায়াৎ শেখ বললেন-‘
“কি গো তোমার বরের সেবা শেষ হয়েছে?”
‘পদ্ম সৌজন্যবোধক হাসি দিলো তবে কিছু বললো না। মুনিরা শেখ পদ্মকে ওনার পাশে বসিয়েছেন।’
‘মুনিরা শেখ পদ্মের চিবুক ধরে বললো-‘
“পরের বার দেখে শুনে হাঁটবে। বড় হয়েছো বিয়ে হয়েছে সবদিকেই খেয়াল রাখতে হবে।”
‘পদ্ম মাথা নাড়িয়ে বললো-‘
“জ্বী মা।”
‘হায়াৎ শেখ পদ্মের কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘
“মুনিরা তোমার ছেলের বউকে কিন্তু আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।”
‘পদ্ম মুচকি হাসলো। ছোট থেকেই কেউ যদি তার সামনে তাকে নিয়েই প্রশংসা করে তাহলে সে খুব খুশি হয়। মন চায় প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে।’
‘তাদের তিনজনের মাঝে ইজহানের আগমন ঘটলো। ইজহান পদ্মের পাশে বসেছে। শুধুমাত্র এখানে মুনিরা শেখ আর হায়াৎ শেখ আছেন বলে উঠে যেতে পারছে না। নাহলে তার শ্বাশুড়ি শত প্রশ্ন করবেন। ইচ্ছে করছে উঠে যেতে পরিস্থিতি এমন যে সে উঠতে পারছে না।’
‘হায়াৎ শেখ ইজহানের উদ্দেশ্যে বললেন-‘
“ইজহান কি তোমার ওই ফ্ল্যাটে থাকো?”
‘ইজহানের কোনো হেলদোল নেই। সোফায় একেবারে আধশোয়া হয়ে বসেছে।’
“হুম থাকি তবে অন্য কোথাও চাকরি নিলে হসপিটাল থেকে কাছে হলে থাকবো নাহলে এখানে পদ্মকে রেখে যাবো আমি আলাদা থাকবো।”
‘ইজহানের কথায় মুনিরা শেখ আর পদ্ম দু’জনেই অবাক হয়ে যায়। পদ্ম মনে মনে বলছে এই লোকটা এমন বলছে কেনো? কি আবোলতাবোল বলা শুরু করেছে?
‘মুনিরা শেখ অবাক কন্ঠে বললো-‘
“অন্য কোথাও চাকরি মানে? কি বলছিস তুই এসব?”
‘ইজহান যে অবস্থায় ছিলো ওই অবস্থায় থেকে উত্তর দিলো।’
“এই হসপিটালের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। অন্য কোথাও চাকরি নিবো।”
“কোথায় নিবি এখন?”
“কতো হসপিটাল বসে আছে আমার জন্য। বাদ দাও এসব কথা, আমারটা আমাকে ভাবতে দাও।”
‘পদ্ম পিছন ফিরে ইজহানের দিকে তাকালো। ইজহান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইজহানের দৃষ্টি যেনো খুব গভীর। তৎক্ষনাত পদ্ম আবার সামনে ফিরে গেলো।’
‘মুনিরা শেখ অসহায় কন্ঠে বললো-‘
“তোকে নিয়ে আমি আর পারি না। কেনো যে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিস। আমি শুধু তোর ভালো চাই। ”
ইজহান পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“ভালোই আছি যে বউ বিয়ে করিয়েছো।”
‘সবাই একদম পদ্মের দিকেই তাকালো। যা দেখে পুদ্মের অস্বস্থি লাগা শুরু করলো। মাথা টা নিচু করে ফেললো।’
‘হায়াৎ শেখ বললেন-‘
“এরকম সুন্দরী বউ বিয়ে করলে তো ভালো থাকার কথা। ”
‘ইজহান হেসে বললো-‘
“এইজন্যই তো ভালো আছি।”
‘হঠাৎ ক্রলিং বেজে উঠলো মুনিরা শেখ উঠে তাড়াতাড়ি দরজা খুললেন। হুমায়ুন শেখ এসেছেন। পদ্ম হুমায়ুন শেখের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। তিনি খুব অমায়িক একজন মানুষ তা দেখলেই বোঝা যায়। পদ্মকে ওনার মেয়ে মতোই স্নেহ করেন। বুঝতেই দেন না যে ওনি পদ্মের শ্বশুড় ঠিক তার বাবার মতোই ভালোবাসেন। পদ্মের বাবা চলে যাওয়ার পর এই প্রথম পদ্মের কোনো আফসোস হয়নি এই বাড়িতে এসে কারণ হুমায়ুন শেখ যেনো বুঝতেই দেননি কিছু। ওনি রুমে চলে গেলেন। ওনার পিছন পিছন মুনিরা শেখ ও গেলেন। শুধু রয়ে গেলো ইজহান, তার ফুপ্পি আর পদ্ম।’
‘হায়াৎ শেখ পদ্মকে উদ্দেশ্য করে বললেন-‘
“তা পদ্ম আমরা দাদি ডাক শুনবো কবে?”
‘পদ্ম তো যেনো লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পদ্মকে লজ্জা দিতে ইজহান আরও বললো-‘
“তুমি কবে দাদি ডাক শুনতে চাও বলো?”
“যেদিন তোমরা শুনাবে সেদিনই তো শুনতে পারবো তাই না!”
“আহহা ফুপ্পি থাক তুমি বেশি টেনশন নিও না তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি দাদি ডাক শোনানোর দায়িত্ব নিলাম।”
‘পদ্ম তো রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে। তারা কিসব কথা শুরু করেছে। লজ্জা করছে না তাদের। পদ্মের মন চাচ্ছে এখান থেকে উঠে চলে আসতে।’
‘হায়াৎ শেখ হেসে বললেন-‘
“বিয়ের আগে তো ইজহান শেখ এমন ছিলে না। হঠাৎ কিভাবে বদলে গেলো? ”
“বউয়ের সঙ্গ পেয়ে বদলে গিয়েছি ফুপ্পি।”
‘হায়াৎ শেখ আরও কিছুক্ষণ বসে ইজহানের সাথে কথা বললেন। তিনি এবার উঠে নিজের রুমে গিয়েছেন। পদ্মও উঠে গেলো আর সাথে সাথে ইজহান পদ্মের হাত ধরে ফেললো।’
“উঠে যাচ্ছো কেনো?”
“তা নাহলে এখানে বসে কি করবো? আপনার লাগামহীন কথাবার্তা শুনবো?”
“আশ্চর্য আমি কি আগে শুরু করেছি নাকি?”
“হাত ছাড়ুন আমার।”
“ছাড়লে কোথায় যাবে?”
‘পদ্ম একটু মজা করে বললো-‘
“আপনার থেকে দূরে চলে যাবো।
‘সাথে সাথে ইজহান পদ্মকে বুকে টেনে নিলো।’
” উহুম কোথাও যেতে দিবো না। আমার বক্ষঃস্থলে একেবারে লুকিয়ে রেখে দিবো।”
“এ্যাহ ভালো লাগছে না এসব। ছাড়ুন কেউ এসে পড়লে কি ভাববে।”
‘ইজহান ছেড়ে দিলো পদ্মকে।’
“যাও এই ইজহান আর আটকাবে না তোমাকে।”
‘ছাড়া পেয়ে পদ্ম ছুটে চলে গিয়েছে। আর ইজহান একা একা বসে ফোন টিপছে।’
‘রাতে সবাই একসাথে ডিনার করলো। ডিনার শেষে সবাই বসে বসে কথা বলছে। ইজহান কে হুনায়ুন শেখ বললেন-‘
“তুমি নাকি অন্য হসপিটালে চাকরি নিবে? তোমার মা বললো।”
“হ্যাঁ।”
“এই কথা কেনো বলছো? ওই হসপিটালে সমস্যা কোথায়? আর তুমি তো প্রথম থেকে ওখানে আছো হঠাৎ কি এমন হলো যে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছো। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”
” না আসলে আমি চাচ্ছি না ওখানে থাকতে, অবশ্যই কোনো সমস্যা হয়েছে দেখেই তো আমি থাকতে চাচ্ছি না।”
“কি হয়েছে খুলে বলো।”
“আমার বিষয়ে আমাকে ভাবতে দাও সব ম্যানেজ করে নিবো।”
“এসব ছাড়া আর কিইবা বলবে? শুনো ইজহান তুমি ভুলে যেও না পদ্ম কিন্তু তোমার জীবনের সাথে এখন জড়িয়ে আছে। সব সময় নিজের কথা কে বেশি গুরুত্ব দিলে হবে না। মেয়েটা তোমার ভরসাই থাকবে সারাজীবন। তার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও। বাবা মা কে তো পাত্তা দাও না। তুমি তো মনে করো আমরা তোমার ভালো চাইনা। কখনো আমার কথা পাত্তা দিয়েছো?নিজের যা মনে আসে তাই করো। কেয়ারলেস ছেলে কোথাকার।”
‘ইজহান খুব কষ্ট করে কথাগুলো হজম করলো।’
“কে বলেছে আমি তোমাদের কথা পাত্তা দিই না? তোমার কথায় আমি পদ্মকে বিয়ে করেছি। হ্যাঁ মানছি আমি তোমার শুধু একটা কথা শুনি নি তুমি চেয়েছিলে আমি সেনাবাহিনী তে জব করি এই কথাই তো শুনিনি। কিভাবে তুমি আমাকে এসব অপবাদ দিচ্ছো? এমন না তো তোমাদের কোনো কথা আমি কখনো পাত্তাই দিই না। আর পদ্ম তাকে কি আমি অসুখে রেখেছি? ওই হসপিটাল থেকে আরও ভালো হসপিটালে চাকরি করবো। কেনো ওই হসপিটালে থাকবো না সেটা নিয়ে আর যেনো কেউ মাথা না ঘামায়। এসব কথা শুনতে পারি না আমি। আর কি বলেছো কেয়ারলেস ছেলে কোন ভিত্তিতে এটা বলেছো? কি এমন করেছি তোমার সাথে যে তুমি আমাকে এরকম উপাধি দিয়েছো। আমি বাচ্চা ছেলে না যে এসব কথা মেনে নিবো। যদি নেক্সট টাইম এসব কেউ আমাক বলে আমি কিন্তু এসব শোনার জন্য বসে থাকবো না।”
‘ইজহান হনহন করে চলে গেলো উপরে। পদ্ম ভয়ে চুপসে গিয়েছে। কখনো ইজহান কে এভাবে কথা বলতে দেখেনি সে। তার জন্যই তো এসব হচ্ছে। মাথা কাজ করছে না। যদি বাসার সবাই জেনে যায় তার জন্য ইজহান এমন করেছে তাহলে তো সবাই তাকে ভুল বুঝবে। অনুশোচনায় পদ্মের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আবার কেউ দেখে ফেলার আগেই মুছে ফেলছে।’
‘হুমায়ুন শেখ রেগে বললেন-‘
“এই ছেলে সব সময় এমন করে। ছেলে কে ঠিকমতো শাসন করতে পারো নি মুনিরা। তোমার ছেলে তার বাবার সাথে এভাবে কথা বলেছে একটিবার ডাক ও দাওনি। নিজের মর্জিমতো চলবে সে। দুনিয়া এতো সোজা না। তোমার আশকারা পেয়ে ইজহান এমন অভদ্র হয়েছে।”
‘হুমায়ুন শেখের কথা মুনিরা শেখ কেঁদে ফেললেন। হায়াৎ শেখ বললেন-‘
“এতো বড় ছেলে কে কি শাসন করবে? তুই কি মাকে কম জ্বালিয়েছিস নাকি? কেমন বদ ছিলি আমি কি কিছু জানি না?আর ইজহান যে ডক্টর ও ভালো হসপিটালে চাকরি করতে পারবে। তুই কেনো মুনিরা কে বকাবকি করছিস। অবুঝের মতো ব্যবহার। আর তোর ছেলে তোর মতোই হয়েছে বাপ ক্যা বেটা। হুদাই ক্যাচাল বন্ধ কর। তোর ডাক দেওয়া উচিৎ হয়নি ওর ভালো ও ছাড়া কেউ বুঝবে না।”
‘হায়াৎ শেখের কথা হুমায়ুন শেখ একেবারে চুপ হয়ে গেলেন। তিনি ধপাধপ পায়ে চলে গেলেন। মুনিরা শেখ পদ্মকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে দিলো। যাই পদ্ম এতোক্ষণ আড়ালে কেঁদেছে এখন তার শ্বাশুড়ির কান্না দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।’
‘মুনিরা শেখ পদ্মকে জড়িয়ে ধরে বললো-‘
“আমার কপাল টা খারাপই ছিলো মা। আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে তোমার জীবনটা ও খারাপ করে দিলাম। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও পদ্ম।”
‘বেশ কিছুক্ষণ মুনিরা শেখ পদ্মকে জড়িয়ে ধরে নানা কথা বললো। হায়াৎ শেখ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ বউ আর শ্বাশুড়ির কান্না দেখলো।’
“তোমরা দু’জন গিয়ে এখন তাদের রাগ ভাঙ্গাও। ওদের বোঝাও। আর কান্না-কাটি করো না অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।”
‘
‘পদ্ম পা টিপে টিপে রুমে আসলো। রুম পুরো অন্ধকার করে রেখেছে ইজহান। বাহিরের আবছা আবছা আলো বারান্দায় এসে পৌঁছেছে। পদ্ম ভয় পেয়ে দৌড়ে ইজহানের কাছে আসলো।’
‘পদ্ম ইজহন কে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। ইজহান হাত সরিয়ে দিলো। আবারও পদ্ম ইজহানকে একই ভাবে জড়িয়ে ধরেছে। তাও আগের থেকে আরও শক্ত করে।’
‘ইজহানের গম্ভীর কণ্ঠ শোনা গেলো।’
“পদ্ম তোমাকে আমার থেকে ছাড়াতে এক মিনিট ও লাগবে না। সো জোরাজোরি করার আগেই ছেড়ে দাও।”
‘পদ্ম মোলায়েম কন্ঠে বললো-‘
“উফফ ডাক্তার সাহেব এতো রাগ করছেন কেনো? ভালোবাসি তো।”
‘ইজহান আর ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না এভাবেই কিছু সময় দু’জনে দাঁড়িয়ে থাকলো। পদ্ম ইজহানকে ছেড়ে সামনে দাঁড়া করালো।’
‘পদ্ম ইজহানের চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো-‘
“সব সময় রাগ করলে হয় না। অনেক সময় কিছু কথা শুনে থাকতে হয়। বড়রা কখনো খারাপের জন্য বলেন না আর বাবারা তো একদমই না। এভাবে হুটহাট মেজাজ গরম করা উচিৎ নয়।”
‘ইজহান চোখ ছোট ছোট করে পদ্মকে দেখলো। কিভাবে পদ্ম ছেলেমানুষী ছেড়ে একদম একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো কথা বলছে? ইজহান পদ্মকে টেনে দেয়ালের পাশে দাঁড়া করালো। যদিও সে ব্যাথা পেয়েছে তাও টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। মুখ খিঁচে রইলো।’
‘ইজহান পদ্মের পাশে দেয়ালে হাত রেখে বললো-‘
“তারপর?”
‘পদ্ম ঘাবড়ে গেলো।’
“তারপর আরকি!”
“আর বলবেন না ম্যাডাম? আপনার কথা বলা শেষ।?”
‘পদ্ম আমতা আমতা করে বললো-‘
“ঘুমাবো চলুন না।”
‘ইজহান পদ্মের কথা শুনলো। পদ্মের হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলো। পদ্ম এক কোণায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে৷ ইজহান তা দেখে পদ্মকে টেনে তার কাছে নিয়ে আসলো। পদ্মের মাথাটা তার বক্ষে মিশিয়ে বললো-‘
“পদ্ম তোমার ডাক্তার সাহেব দিনদিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছে। সে আর ভদ্র বরের মতো সেজে থাকতে পারছে না। মনে খুব প্রেমের পিপাসা পেয়েছে পদ্মফুল। কেনো এমন হচ্ছে বলো তো?”
#চলবে…
#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_১৫
#মোহনা_হক
‘পদ্ম ইজহানের কথা শুনছে। কিছুক্ষণ আগে যে ঝামেলাটা হয়েছে তা যেনো ইজহানের মনেই নেই। বোঝাই যাচ্ছে না একটু আগে শেখ বাড়ির উপর যুদ্ধ বয়ে গিয়েছিলো। পদ্মের খুব হাসি পাচ্ছে। শুয়ে শুয়ে ইজহানের কথা শুনছে আর হাসছে। রুমটা অন্ধকার তাই পদ্মের হাসি ইজহান দেখছে না।’
‘পদ্ম কথা বলছে না দেখে ইজহান পদ্মকে ছেড়ে দিয়ে বললো-‘
“কথা বলছো না কেনো?”
‘পদ্ম হেসে হেসে বললো-‘
“কি বলবো?”
“ওয়েট ওয়েট তুমি কি হাসছো?”
‘পদ্মের চোখগুলো আচমকা বড় হয়ে গেলো।সাথে সাথে হাসি বন্ধ হয়ে গেলো তার।’
“কোথায়, কখন না তো আমি একটুও হাসি নি।”
“তাই হাসো নি?”
“না। ”
“তাহলে লাইট অন করে দেখি?”
“আরে তার দরকার নেই হ্যাঁ আমি একটু হেসেছিলাম।”
“দেখেছো ইজহান তোমার হাসি অন্ধকারেও অনুভব করতে পারে।”
‘পদ্ম এসব কথা না শোনার জন্য বললো-‘
“আচ্ছা আপনি কেনো ওই হসপিটালে আর চাকরি করবেন না? আমার জন্য কি?”
‘ইজহান গম্ভীর কণ্ঠে বললো-‘
“জ্বী। সেজন্যই করবো না।”
“আচ্ছা আমি বলি কি আপনি ওই হসপিটালের চাকরিটা করুন। এভাবে তো হয় না।”
‘ইজহান পদ্মকে পুরো কথা শেষ করতে দিলো না, তার আগেই চুপ করিয়ে দিলো।’
“তোমার কোনো রকম কথা এ বিষয়ে শুনতে চাই না। যখন তুমি আমার জীবনে ছিলে না আমার সব সিদ্ধান্ত আমি একাই নিয়েছি। যদি আমার সাথে ঝামেলা না করতে চাও তাহলে আর কথা বলবে না এগুলো নিয়ে।”
‘পদ্ম একেবারে চুপসে গেলো। এতো ত্যাড়া সে কখনো দেখেনি। ইজহান অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। পদ্ম পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। ইজহান নিজেও ধরলো আবার কিছু বললো না।’
‘সকাল ৯টা।’
‘ইজহানের ঘুম ভেঙেছে। ঘুম থেকে উঠে পদ্মকে পাশে পেলো না সে ভালো করেই জানে পদ্ম এখন থাকবে না। নিশ্চয় নিচে মুনিরা শেখ আর হায়াৎ শেখের কাছে গিয়েছে। ইজহান উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। তারপর চশমা পড়ে ফিটফাট হয়ে নিচে নেমেছে।’
‘পদ্ম মুনিরা শেখের সাথে নাস্তা বানাচ্ছে। আর ইজহান তার ফুপ্পির সাথে কথা বলছে বসে বসে। মুনিরা শেখ পদ্মকে বলেছে ইজহানের জন্য নাস্তাটা নিয়ে যেতে পদ্ম তাই করলো। ইজহানের নাস্তাটা টেবিলে রেখে আসলো।’
“খেতে আসুন।”
‘ইজহান উঠে নাস্তা করতে গেলো। পদ্ম সাথে দাঁড়িয়ে আছে। ইজহান পদ্মের হাত ধরে বললো-‘
“তুমি নাস্তা করেছো।”
‘পদ্ম মাথা নাড়িয়ে বললো-‘
“হ্যাঁ করেছি।”
‘ইজহান পরোটা মুখে দিয়ে বললো-‘
“আমাকে ছাড়াই খেয়ে নিলে?”
‘পদ্ম ইজহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-‘
“মা আর ফুপ্পি জোর করেছিলো।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই।”
‘ইজহান নাস্তা শেষ করে উঠে চলে গেলো উপরে। পদ্ম রান্নাঘরে মুনিরা শেখ আর হায়াৎ শেখের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে আর উপরে যায়নি। নিচেই তাদের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।’
‘ঘড়িতে ১২টা বাজে। ইজহান তাকালো ঘড়িতে। পদ্ম এখনো পর্যন্ত রুমে আসেনি। ইজহানের খুব রাগ হলো, পদ্ম একবারও রুমে আসলো না।’
‘অবশেষে দীর্ঘ সময়ের পর পদ্ম রুমে আসলো। ইজহান ফোনে কথা বলছে। পদ্ম তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকলো। একেবারে গোসল করে বের হলো। ইজহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে গ্রিল ধরে। যেনো দেখে মনেহচ্ছে কতো কষ্টে আছে। পদ্ম পিছন থেকে ইজহানকে দেখছে। গালের সেই দাড়ি আর চশমা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।’
‘রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পদ্ম চুলগুলো তোয়ালে থেকে খুলে দিলো। ইজহান পদ্মের পাশাপাশি এসে দাঁড়িয়েছে। পদ্ম সোজাসুজি ইজহানের দিকে না তাকিয়ে আয়নায় দেখছে।’
‘ইজহান পদ্মের ভিজা চুলে হাত দিয়ে বললো-‘
“এতো তাড়াতাড়ি গোসল করেছো কেনো?”
“এমনি করে ফেলেছি।”
“রুমে আসোনি কেনো একবারও?”
‘পদ্ম ইজহানের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“আসলে কি হতো?”
‘ইজহান মজা নিতে বললো-‘
“আদর দিতাম।”
“সারাদিন এগুলোই ভাবেন তাই না!”
“না। তোমাকে যখন দেখি তখনই ভাবি বুঝেছো সুন্দরী?”
“একবার ম্যাডাম, একবার পদ্মফুল, আরেকবার সুন্দরী। এতো নামে ডাকেন কেনো?”
“ভালোবেসে ডাকি। তুমি তো ছোট মানুষ তাই বুঝো না আমার ভালোবাসা।”
‘ভালোবাসার কথা শুনেই পদ্ম হেসে দিলো।’
“তাই কতটুকু ভালোবাসেন?
” ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না। আমি চাইও না পরিমাপ করতে। ”
‘পদ্ম হেসে দিলো।’
“পদ্ম তোমার ভেজা চুলে একটা চুমু দিই?”
‘পদ্ম মনে মনে বললো ‘সবই তো করে আমার অনুমতি ও নেয়।’ পদ্ম কিছু বলছে না। পদ্ম বুঝে উঠার আগেই পদ্মকে টেনে তার ভেজা চুলে একটা চুমু এঁকে দিলো।’
“এখন তো অনুমতি নিচ্ছি পরে এটাও নিবো না।”
‘পদ্ম দৌড়ে নিচে আসলো। ইশ লোকটার সামনে এক মিনিট ও থাকা যায় না। কিছু না কিছু বলে তাকে লজ্জা দিবেই ইজহান। দিন দিন বয়স হচ্ছে আর নির্লজ্জ হচ্ছে।’
‘বিকেল ৫টা।’
‘ইজহানের হসপিটালের সিআই রাসেদুল ইসলাম এসেছে শেখ ভিলায়। তিনি বসে চা খাচ্ছেন। কিন্তু ইজহান এখনো আসছে না। হুমায়ুন শেখ তার পাশের সোফায় বসেছেন। যখন থেকে রাসেদুল ইসলাম জেনেছে ইজহান কাউকে কিছু না বলে তার স্ত্রী কে নিয়ে সাজেক থেকে চলে এসেছে তখন থেকেই তিনি ভেবে রেখেছেন ইজহানের সাথে সরাসরি কথা বলবে। কখনো ইজহান এমনটা করেনি। তিনি ভাবতেই পারছেন না যে ইজহান তাকে কিছু না জানিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছে। মূলত তিনি ইজহানকে খুব ভালো জানেন দেখেই আজ শেখ ভিলায় এসেছেন। হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে। হসপিটালের তিনজন ডাক্তার কে দিয়ে রাসেদুল ইসলাম কল দিয়েছিলো ইজহানকে, কিন্তু সে ধরেনি। বুঝেছে কিছু একটা হয়েছে কারণ ইজহান কখনো এমনটা করেনি। যতোবার হসপিটাল থেকে ঘুরতে যেতো সে কোনো সমস্যা হলে সর্বপ্রথম রাসেদুল ইসলাম কে জানাতো। ইজহানের এমন কান্ডে রাসেদুল ইসলাম অবাক প্রায়।’
‘মুনিরা শেখ পদ্মকে উপরে পাঠিয়েছেন ইজহান কে নিচে নিয়ে আসার জন্য। যেহেতু ইজহান ঘুমাচ্ছে তাই পদ্ম ইজহানকে ডাকতে গিয়েছে।’
‘পদ্ম ইজহানের হাত নাড়িয়ে বললো-‘
“শুনছেন?”
‘ইজহানের দিক থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। পদ্ম আবারও ডাকলো ইজহান কে। ইজহান হকচকিয়ে উঠে বসে পড়েছে।’
“আসলে আপনার হসপিটালের সিআই এসেছেন।”
‘ইজহান চুলে হাত দিলো।’
“আমার চশমা দাও।”
‘পদ্ম তড়িঘড়ি করে চশমা দিলো ইজহানের। ইজহান নিচে যাওয়ার আগে পদ্ম তাকে উদ্দেশ্য করে বলছে।’
“ওনি যদি চান আপনি হসপিটালে ফিরে যান তাহলে তাই করবেন। নাহলে আমি কিন্তু গ্রামে চলে যাবো হুহ।”
‘ইজহান চোখমুখ শক্ত করে বললো-‘
“এর উত্তর আমি পরে এসে দিবো।”
‘ইজহান নিচে এসে বসে আছে। রাসেদুল ইসলাম ইজহান কে এই পর্যন্ত তিন বার জিগ্যেস করেছে কেনো সে কাউকে কিছু না বলে চলে এসেছে, তিনি ইজহানের কাছ থেকে উত্তরের অপেক্ষায় বসে ছিলো কিন্তু প্রতিবারই ফলাফল শুণ্য এসেছে। ইজহান কিছু বলছে না।’
‘ইজহানের কিছু না বলার কারণ হচ্ছে এখানে হুমায়ুন শেখ বসে আছেন। তার বাবার সামনে এই কথা কোনোমতেই বলা যাবে না।’
‘রাসেদুল ইসলাম আবারও বললো-‘
“দেখো ইজহান আমি তোমাকে সবার থেকে আলাদা ভাবি। সবকিছুতেই তোমাকে গুরুত্ব দেই বেশি। এই পর্যন্ত তোমাকে কয়েকবার জিগ্যেস করেছি কেনো এভাবে না বলে চলে এসেছো কিন্তু তুমি কোনো কিছুই বলছো না। এসব তোমার থেকে আশা করতে পারছি না ইজহান।”
‘ইজহান উঠে দাড়ালো।’
“স্যার আমি আপনার সাথে পার্সোনাল ভাবে কথা বলতে চাই। আমার রুমে আসলে ভালো হয়।”
‘রাসেদুল ইসলাম ইজহানের সাথে তার রুমে গেলো।’
“স্যার আপনার হসপিটালের সিনিয়র ডক্টর শানায়া শাহরিনের ব্যবহারে আমি খুবই লজ্জিত।’
‘রাসেদুল ইসলাম অবাক হলেন কারণ ওনার জানামতে ইজহান আর শানায়ার মধ্যে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো।’
” মানে বুঝছিনা ইজহান। খুলে বলো সব।”
“আসলে স্যার শানায়া ম্যাম আমাকে পছন্দ করতো। তার পছন্দের আকার ভিন্ন ছিলো।আশাকরি বুঝবেন কিসের কথা বলছি। আমার বিয়ে হয়েছে ওনি সেটা জানেন তার পরেও তিনি মেনে নিতে পারছেন না। আমি মিথ্যে বলবো না আমি ওনাকে অপমান করেছি। প্রত্যেক পদে পদে তাকে বুঝিয়েছি আপনাকে মেনে নিতে হবে আমি বিবাহিত। হসপিটালে থাকাকালীন সময়ে তিনি ব্রেক টাইমে আমার সাথে এসে এসব কথাই বলতেন। একটা মেয়ের সাথে আমি কিভাবে কথা বলি বা ঠিক তাদের কি নজরে দেখি সেটা আপনি ভালো জানেন স্যার। ওনি আমার স্ত্রী’র সঙ্গে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যবহারটা করেছেন। কাঁচের গ্লাস দিয়ে পদ্মকে আঘাত করে।শুধুমাত্র আমি বিয়ে করেছি বলে। এটা মেনে নিতে পারেননি বলেই এতো বাজে ভাবে পদ্ম কে আঘাত করে। একজন সিনিয়র ডক্টর হিসেবে কিভাবে কাজটা করতে পারেন? হয়তো ভবিষ্যতে দেখা যাবে ওনি আপনার হসপিটালের কোনো পেশেন্ট কে মেরে ফেলেছেন। এটাও সত্য যে আমি ওনাকে আঘাত করি ঠিক একইভাবে। চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতাম তবে আমার মান সম্মান আছে। আমি মেয়েদের সম্মান করি বলেই। আমি শুধু ওনাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম কাউকে ব্যাথা দেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে দেওয়া উচিৎ। আমার মনেহয় ওনার জ্ঞান বুদ্ধি সব টাটা বায় বায় করে চলে গিয়েছে৷ ওনার তো প্রাপ্ত বয়স হয়েছে ওনাকে এসব কাজকর্মে মানায় না। স্যার এখন যদি আপনার মনেহয় আপনি আমাকে আপনার হসপিটালে রাখবেন না তাহলে আমার কোনো রকম অভিযোগ নেই। তবে এই আবদার করতে পারবেন না যে আমিও ওইখানে থাকবো আবার শানায়া ম্যাম ও ওইখানে থাকবে এটা হলে আমি আগেই দুঃখিত।
‘রাসেদুল ইসলামের যেনো শানায়ার প্রতি এক সমুদ্র পরিমাণ ঘৃণা জন্মেছে। তিনি ভাবতেও পারেন নি যে শানায়া এমন একটা কাজ করবে। এরকম ডক্টর থাকার থেকে না থাকা ভালো।’
“আমি বরাবরের মতো চাই তুমিই থাকো আমার হসপিটালে আশাকরি না করবে না।”
‘ইজহান রাসেদুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“তাহলে শানায়া ম্যাম?”
“ওর মতো ডক্টর আমার হসপিটালে থাকলে আমার মান সম্মানই যাবে। কাল থেকে যেনো তোমাকে আমি হসপিটালে দেখি।”
‘ইজহান হেসে বললো-‘
“জ্বী স্যার।”
‘রাসেদুল ইসলাম চলে গেলেন। পদ্মের এতোক্ষণ মন উশখুশ করছিলো কখন রুমে যাবে আর ইজহানের থেকে শুনবে কি হয়েছে। রাসেদুল ইসলাম যাওয়ার পর পরই ইজহান রুমে এসেছে তার পিছন পিছন পদ্মও দৌড়ে চলে এসেছে।’
‘পদ্ম উপরে দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে গিয়েছে। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।’
‘ইজহান পদ্মকে এই অবস্থায় দেখে অস্থির হয়ে বললো-‘
“কি হয়েছে পদ্ম? খারাপ লাগছে তোমার? এভাবে হাঁপাচ্ছো কেনো।”
‘পদ্ম কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলো। ইজহানের হাত ধরে বললো-‘
“ওনি যে এসেছেন কি বলেছে?”
“কাল থেকে ওই হসপিটালেই যাবো। কিন্তু তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছিলে কেনো?”
“আরে ওই যে দৌড়ে এসেছি সেজন্য।”
‘ইজহান পদ্মের দু’টো হাত পিছন দিকে থেকে তার এক হাত দ্বারা আবদ্ধ করে বললো-‘
“তখন কি বলেছো?”
“কখন কি বলেছি?”
‘ইজহান সন্দিহান দৃষ্টিতে পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“তুমি বলোনি গ্রামে চলে যাবে।”
‘পদ্ম ঘাবড়ে গেলো। অপ্রত্যাশিত হাসি দিয়ে বললো-‘
“আমি তো মজা করেছিলাম।”
“এবার মজা করার দাম দাও। যতোবার মজা করবে ততবার এই ধরনের শাস্তি পাবে।”
‘ইজহান পদ্মকে টেনে সম্পুর্ণ তার সাথে মিশিয়ে নিলো একেবারে । পদ্মের ওষ্ঠে গভীর ভাবে তার ওষ্ঠ মিলিয়ে দিলো।’
#চলবে…