রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব-১২

0
268

#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১২

❤️

নিস্তব্ধ রাত! চারিদিকে অন্ধকার বিরাজমান। শুধু বারান্দা থেকে আসা আলোয় রুমটা হালকা আলোকিত হয়ে আছে। বাহিরের হালকা বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে।জানান দিচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি হতে পারে। রাত হয়তো ৩ টার কাটা পার হয়েছে। আমার চোখে ঘুম নেই। সাদির উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আমার গলা,ঘাড় ছুঁয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর শান্তির ঘুম দিচ্ছেন উনি। কিন্তু আমার চোখ নিদ্রাহীন। মনের মাঝে অনেক ধরণের চিন্তা। আজ সাদির সাথে নিজের আত্মার একটা বন্ধন জুড়ে নিলাম।কিন্তু আমি ওনাকে ভালোবাসতাম না। ভালোবাসতাম অয়নকে।১ মাস আগে এঙ্গেজমেন্ট হওয়ার দুদিন পর ওরা চট্টগ্রামে চলে যায়। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ।কথা হয়নি। হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে।ওকে ভালোবেসে পেয়েছিলাম কষ্ট আর সাদিকে ভালোবেসে পেলাম সুখ।ওর জন্য এখন মনে শুধু ঘৃণা।কিন্তু জীবনের মোড় কখন কোথায় দাঁড়াবে বলা মুশকিল।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। বক্ষে থাকা সাদির কপালে চুমু দিয়ে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। হঠাৎ একটা ঘুমঘুম কন্ঠ শুনলাম,

___” ঘুমাস না কেন?”

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি চোখটা অর্ধেক খুলে বললেন,

___” ঘুমিয়ে পড়।”

___” আপনি ঘুমান।”(নিম্নস্বরে)

উনি মাথা তুললেন। ভ্রু কুঁচকে আমার কপালে হাত রেখে বললেন,

___” অসুস্থ লাগছে নাকি!”

আমি ওনার হাতটা সরিয়ে মুচকি হেসে বললাম,

___” না ঠিক আছি বললাম তো।”

___” আচ্ছা। চুল টেনে দে।আর তাড়াতাড়ি ঘুমাবি।”

বলেই উনি আবারো চোখ বন্ধ করলেন। আমি ওনার চুল টানতে টানতে ভাবলাম,

___” শেষমেশ এই রাক্ষস টা আমাকে নিজের করেই নিলো। আবার আমাকে ধমকায়ও। মনে হয় নিজের প্রোপার্টি। ”

ভেবেই চুলে হালকা টান দিলাম। উনি বিরক্ত হয়ে ‘চ’ শব্দ করে বললেন,

___” মারছিস কেন ধূর।”

___” উফস সরি সরি সরি।”

বলেই জিভে কামড় দিলাম আমি।উনি চোখ-মুখ কুঁচকে বললেন,

___” ধ্যাত। ঘুমাবি তুই?”

___” আপনি ঘুমান না!”

উনি বুক থেকে উঠে গেলেন। আমার চোখে চোখ রেখে শয়তানী হেসে বললেন,

__” আই থিংক তোর ঘুম আসছে না রাইট?”

___” হুমম..”(ঠোঁট উল্টে)

___” তাহলে শুধু শুধু রাতটা বিফলে যেতে দেয়া যায় না বল?”

ওনার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। উনি চোখ টিপে বললেন,

___” শুরু করা যাক?”

আমি চাদর টেনে ওপাশে ফিরে গিয়ে বললাম,

___” না না আমি ঘুমাবো।”

বলেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললাম। উনি মানবার পাত্র নন। আমার চাদর সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই আমি টেনে বললাম,

___” ঘুমাচ্ছি তো।”

___” আমাকে জাগিয়ে এসব চলবে না।”

আমি অসহায় চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি সেটাকে পাত্তা নিয়ে আবারো টেনে চাদরটা সরিয়ে দিলেন। মুখ গুঁজলেন গলায়।কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারো নিজেকে ওনার মাঝে অনুভব করতে লাগলাম আমি। ভেসে যেতে লাগলাম আলাদা অনুভূতিতে। যেখানে শুধু আমার আর সাদির অস্তিত্ব…

🌹
.
.

দেখতে দেখতে কেটে গেলো সাতটা দিন। এই সাতটা দিনে সাদির প্রতি আমার ভালোবাসা যেনো বাড়ছে।ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি যে আমি ওনাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছি।আসক্ত হয়ে গেছি ওনার প্রতি। ওনার না থাকাটা আমাকে কষ্ট দেয়।ওনার ভালোবাসাটা আমাকে আনন্দ দেয়। ওনার কেয়ারটা আমাকে আলাদা অনুভূতি জাগায়।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম আমি। অতীতটাকে পেরিয়ে আমি এখন বর্তমান সুখে আছি।সাদি আপাতত হাসপাতালে আছে।আর ফুপি ফুপার সাথে ফোনে কথা বলছে।প্রাইভেসি দিতেই আমি বারান্দায় চলে এসেছি। আচমকা আমার ফোনটা বেজে উঠলো। সানিয়ার ফোন।কলটা রিসিভ করে কানে দিতে ও বলে উঠলো,

___” বিবাহিত মেডাম?”

___” বাজে কথা বন্ধ করবি?”

সানিয়া হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই বললো,

___” ওহ বিবাহিত মেডাম,রাগবেন না প্লিজ। আজকের ওয়েদারটা দেখেছিস হুম? কি হচ্ছে? ”

আমি চোখ-মুখ কুঁচকে বললাম,

___” কি আবার হবে? ফুপির সাথে আড্ডা হচ্ছিল। ”

এতে মনে শুনে হয় সানিয়া ৪২০ ভোল্টের ঝটকা খেলো। বোয়াল মাছের মত মুখটাকে হা করে বললো,

___” রিয়ালি? জিজু কই?”

আমি বারান্দার দোলনায় বসে দোল খেতে খেতে বললাম,

___” ওহ উনি তো হাসপাতালে।”

___” ইয়ার!এই ওয়েদারে হাসপাতালে?”

___” এই!এসব চিন্তা নিয়া ডক্টর হতে চাস? ডক্টর হতে দায়িত্ব পালন করতে হয় ওকে?”(ভাব নিয়ে)

সানিয়া মুখ ভেংচি কেটে বললো,

___” হইছে শোন!তোকে একটা খবর দিতে ফোন করলাম।”

___” কিসের খবর?”

___” পিকনিক।”

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,

___” রাখি রে। তোর ফালতু আলাপ শোনার টাইম নাই।”

সানিয়া মুখ গোমড়া করে বললো,

___” আরে সত্যি। আমরা বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাচ্ছি। তুই আর জিজু আসবি। আর তোরা হলি স্পেশাল কাপল আমাদের মধ্যে। ”

আমি একটু অবাক হলাম। এতদিন পর পিকনিক?

___” এতদিন পর!আইডিয়াটা কার?”

___” আইডিয়া যারই হোক। তোরা আসছিস এটাই ফাইনাল।”

ওর কথা শুনে আমি খুশি হয়ে বললাম,

___” আমার যে ঘুরতে ভালো লাগে এটা তো জানিসই। আবার জিগাস।অফ কর্স আসবো।”

___” হ্যা দোস্ত।তুই আসবি কিন্তু। আর শপিং ও তোর সাথেই করবো।”

এভাবেই টুকটাক কথা বলে কল কাটলাম আমি। বাহ!এতদিন পর ঘুরাঘুরি।সবাই মিলে বেশ মজা করবো। কিন্তু পরমুহূর্তেই আমার হাসিটা মিলিয়ে গেলো এটা ভেবে যে সবাই বলতে কি অয়নও…।কেনো যেনো ওর চেহারাটা দেখতেও ইচ্ছে করে না আমার।আর ও আসবে আদৌ?কিন্তু ও তো শহর ছেড়ে চলে গেছে। এতদিনে বিয়েও নাকি হয়ে গেছে। ধূর!ওর এসে কাজ নেই। আমি বরং প্ল্যানিং করি। ভেবেই খুশি মনে ফুপির কাছে চলে গেলাম।ফুপিকে পিকনিকের কথাটা বলতেই ফুপি খুশি হয়ে বললো,

___”বাহ!খুব ভালো সংবাদ তো। তাহলে তোরা গিয়ে ঘুরে আয়।”

___” হুম।তোমার মত আছে তো ফুপি?”

___” আমার মত লাগে নাকি পাগলী মেয়ে।আমাদের টা পরে ভাবা যাবে।তোরা যাবি আর ঘুরে আসবি। ঠিক আছে?”(মুচকি হেসে)

___” হ্যা সাদি আসলে বলবো।”

ফুপি হঠাৎ আতংকিত গলায় বললো,

___” এই রে!সাদি কি তোকে যেতে দিবে?”

___” দিবে না?(অবাক হয়ে)

___” ও তো এসব পিকনিকে খুব একটা যায় না। আর নিজে না গেলে যে তোকেও যেতে দিবে না এটা তো জানিসই।”

আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।ঠোঁট উল্টে বললাম,

___” সবাই প্ল্যান করলো আর আমি যাবো না? আমরাই নাকি স্পেশাল কাপল।”(মন খারাপ করে)

___” মন খারাপ করতে হবে না। তুই বলে দেখিস। যেতে দিবে।”

___” তাই যেনো হয়।”

.
.

সন্ধ্যায় সাদি বাসায় ফিরে আমাকে রুম গুছাতে দেখে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন,

___” পড়তে বসতে দেখি না।”

আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,

___” আজ ইচ্ছে হচ্ছে না।”

বলতে বলতে হঠাৎ একটা শয়তানি বুদ্ধি মাথায় এলো। মাথায় কাপড় দিয়ে ওনার সামনে দাঁড়ালাম। উনি তখন এপ্রোন খুলছিলেন। আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছি। উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

___” কি?”

আমি বার কয়েক চোখের পলক ফেলে লজ্জা পাওয়ার ভান করে বললাম,

___” ইশশ,আপনি এত ভালো কেন?”

উনি একটা ভ্রু উঁচু করে বললেন,

___” তোর কাহিনীটা কি বল তো?”

___” মানে?”(লজ্জা পেয়ে)

___” এমন নাটক করছিস কেন? আমি টায়ার্ড হয়ে এলাম, আর তুই নটাঙ্কি শুরু করে দিলি?”

আমি মাথা থেকে কাপরটা ফেলে নাক টেনে বললাম,

___” হ্যা আমি তো নাটকই করি। হুহ।”

উনি কিছু না বলে ওয়াশরুম যাচ্ছিলেন ফ্রেশ হতে। ঠিক তখনই আমি দৌড়ে ওনার গলা জড়িয়ে বলতে লাগলাম,

___” আজকে আপনাকে কত্ত টায়ার্ড লাগছে।আমি ফ্রেশ করিয়ে দি?”

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বললেন,

___” আজকাল তো এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়ার কথা না। মতলব কি?”

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,

___” অলওয়েজ আমাকে সন্দেহ! আমি কি এতটাই খারাপ যে আপনার খেয়ালও রাখবো না?”

উনি হাসলেন। কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,

___” না রে আমার ধানিলংকা। তুই তো সবসময় আমার খেয়াল রাখিস।কিন্ত আজ একটু বেশি কেন?”

আমি ওনার শার্টের বোতাম নিয়ে খেলতে খেলতে বললাম,

___” না মানে…”

___” কি?”

___” আমার একটা আবদার আছে।”

উনি হেসে আমার বাঁধা চুলগুলো খুলে দিয়ে বললেন,

___” আর সেটা কি?”

আমি এক্সাইটেড হয়ে বললাম,

___” পিকনিকের আয়জন করা হয়েছে্।আমার বন্ধুরাই করেছে।বলেছে স্পেশালি আমাদের যেতেই হবে।আপনি তো জানেনই আমি ঘুরতে কত ভালবাসি। তারমধ্যে পিকনিক। উফ কত্ত মজা হবে।প্লিজ চলুন আমরা যাই?”

উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আমি ওনার মুখের অবস্থা ঠিক বুঝতে না পেরে করুণ চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছি। উনি হঠাৎই গম্ভীর হয়ে বললেন,

___” একদম না।”

চলবে……❤️

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)