#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী
|১৩|
এরমাঝে কেটেছে দুটো সপ্তাহ। শ্রাবণ আর আয়াতের সম্পর্কের সমীকরণ অনেকটাই বদলেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে দুজনের মাঝে। শ্রাবণ এখন প্রয়োজন ছাড়াও আয়াতের সাথে কথা বলে। দুজনে একসাথে সময় কাটায়। বলতে গেলে অনেক কিছুই বদলেছে এই ক’দিনে। শানের ভার্সিটিতেই আয়াত ভর্তি হয়েছে। আজ থেকে ক্লাস শুরু করবে ও। তাই খুব সকাল সকালই ঘুম থেকে উঠলো। নতুন ভার্সিটি নতুন মানুষ এই নিয়ে আয়াত প্রচুর এক্সাইটেড হয়ে আছে। আয়াতের বরাবরই নতুন নতুন মানুষদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে ভাল্লাগে। সেই এক্সাইটমেন্টেই কাল রাতে ঘুমাতে পারেনি ভালো করে। আয়াত ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখলো শ্রাবণও ঘুম থেকে উঠে গেছে। আয়াতকে দেখে প্রশ্ন করলো,
–“খুশি মনে হচ্ছে ভীষণ?”
আয়াত হাসলো। চোখমুখে খুশির ঝলক স্পষ্ট। হাসিমুখেই বললো,
–“আসলে আজ থেকে ভার্সিটি যাবো তো তাই বেশ এক্সাইটেড আমি।”
শ্রাবণ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয়ে বললো,
–“হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।”
প্রত্যুত্তরে আয়াত কিছু বললো না। শ্রাবণও উত্তরের আশায় না থেকে দরজা আটকে দিলো।
অতঃপর সকলে একসাথে নাস্তা করে নেয়। আয়াত আর সানিয়া মেহরাব সোফায় বসা ছিলো। এমন সময় উপর থেকে শ্রাবণ ক্ষানিকটা চেঁচিয়ে বললো,
–“আয়ু? আমার ঘড়ি পাচ্ছি না। কোথায় রেখেছো?”
দ্রুত উঠে পড়লো আয়াত। এক ছুটে নিজের ঘরের দিকে গেলো। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সানিয়া মেহরাব। যাক অবশেষে তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। আয়াত ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে ঘড়ি বের করে শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিলো। শ্রাবণ ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,
–“তোমাকে না বলেছি আমার জিনিস গোছাতে হবে না? শুধু শুধু কষ্ট করে গোছাও কেন? আমি নিজেরটা নিজে করতে পারি তো।”
আয়াত মৃদু হেসে বললো,
–“ভালো লাগে আমার, তাই।”
–“এরকম চলতে থাকলে তো তোমার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবো আমি। তখন কিন্তু তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্তও চলবে না।”
হাসলো আয়াত। একগাল হেসেই বললো,
–“আপনার বিয়ে করা বউয়ের উপরই নির্ভরশীল হবেন, ক্ষতি কি এতে?”
কথাটা শুনে শ্রাবণ ক্ষানিকটা সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আয়াতের দিকে। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়লে রেডি হতে৷ রেডি হয়ে বললো,
–“তা আমার বিয়ে করা বউ কি আমার সাথে যাবে ভার্সিটি? নাকি তার দেবরের সাথে যাবে?”
শ্রাবণের কথায় আয়াত অনেকটা হকচকিয়ে যায়। লোকটা খুব কম ওর সাথে এভাবে কথা বলে। তাই একেক সময় অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বড়বড় চোখ করে কিছু সময় শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে থাকলো আয়াত। পরমূহুর্তেই আয়াত নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বললো,
–“আপনি যা বলেন।”
–“রেডি আছো তো? তাহলে চলো আমার সাথেই, আসার সময় শান আর রাফিয়ার সাথে চলে আসবে।”
আয়াত সম্মতি জানালো। শ্রাবণ শানকে টেক্সট করে দিলো ভার্সিটিতে চলে যাওয়ার জন্য, আয়াতকে ও ড্রপ করে দিবে৷
–
ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করালো শ্রাবণ। শানকে ম্যাসেজ করে বললো গেটের কাছে আসতে। আয়াত গাড়ি থেকে নেমে শ্রাবণের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। শানকে আসতে দেখা যাচ্ছে। তা দেখে শ্রাবণ বললো,
–“তাহলে আমি আসছি?”
আয়াত সম্মতি জানালো। শ্রাবণ গাড়িতে উঠতে গিয়েও উঠলো না। আয়াতের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললো,
–“কোনো ছেলে দের পাল্লায় পড়ো না আবার। মনে রেখো তোমার বিয়ে করা বর আছে কিন্তু।”
শ্রাবণের কথা শুনে আয়াত এবার ফিক করে হেসে দিলো। তা দেখে শ্রাবণও মৃদু হেসে গাড়িতে উঠে বসলো। শান আসতেই ওকে কয়েকটা কথা বলে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো শ্রাবণ।
আয়াত আর রাফিয়া ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শেষ করে বের হতেই দেখলো শান ওর বন্ধুদের সাথে পার্কিং এরিয়ায় বাইকের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছে। শান আয়াতের এক ব্যাচ সিনিয়র, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। শান মাঝে মধ্যে বন্ধুদের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে দু/একটা টান দিচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে ফেললো আয়াত৷ শান সিগারেট ওর বন্ধুদের হাতে দিয়ে সামনে তাকাতেই আয়াত আর রাফিয়াকে দেখতে পেলো। শান আয়াতকে ডাকলো কাছে। আয়াত রাফিয়াকে নিয়ে শানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়াত কোমড়ে দুহাত দিয়ে ছোট ছোট চোখে শানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তুমি স্মোক করো?”
শান ইনোসেন্ট চোখে তাকালো আয়াতের দিকে। বোকাসোকা গলায় বললো,
–“নাউজুবিল্লাহ, স্মোক আর আমি? কেমনে সম্ভব?”
–“দেখো একদম মিথ্যে বলবা না আমি কিন্তু স্পষ্ট দেখেছি।”
এবার আর শান মিথ্যে বলার চেষ্টা করলো না। জানে আয়াত দেখে ফেলেছে। তাই হালকা হেসে বললো,
–“মাঝে মধ্যে একটু আধটু হয়ে যায়।”
শানের কথা শুনে রাফিয়া বললো,
–“না রে আয়ু, মাঝে মধ্যে না। ও রেগুলার স্মোক করে। বাড়িতেই শুধু ভোলাভালা সেজে থাকে।”
শান চোখ কটমট করে তাকালো রাফিয়ার দিকে। রাফিয়ার মাথায় থাপ্পড় মেরে বললো,
–“একদম উল্টাপাল্টা বলবি না হারামি।”
রাফিয়া পালটা থাপ্পড় মারলো শানের বাহুতে। শান কাঁদোকাঁদো চোখে তাকিয়ে আয়াতকে বললো,
–“স্যরি আর হবে না, তবুও___”
শান পুরো কথা শেষ করার আগেই শানের বন্ধু জিহাদ বললো,
–“কিরে শান? এত করে স্যরি ট্যরি বলছিস যে? কে এটা? আমাদের ভাবী নাকি? জানালিও না___”
শান জিহাদের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“হ্যাঁ তোদের ভাবী, সাথে আমারও ভাবী।”
জিহাত থতমত খেয়ে গেলো শানের কথায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
–“মা্ মানে? শ্রাবণ ভাই বিয়ে করে ফেলেছে?”
শান মাথা নাড়ালো। জিহাদ হালকা হেসে আয়াতকে বললো,
–“স্যরি ভাবী, আমি বুঝতে পারিনি।”
–“ইট’স ওকে।”
এই টুকু বলে আয়াত শানের দিকে তাকালো। এমন একটা লুক দিলো যাতে শান ক্ষানিকটা ভরকে গেলো। শান আমতা আমতা করে বললো,
–“ভাইয়াকে কিছু বলো না আয়ু ভাবী, নয়তো তোমার ওই এ্যারোগেন্ট বর আমাকে গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে মারবে।”
শানের কথা শুনে আয়াত আর রাফিয়া উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। শান রাফিয়ার মাথায় আবারো থাপ্পড় মারতেই রাফিয়া কয়েক ঘাঁ বসিয়ে দিলো শানের পিঠে। শান চোখমুখ কুঁচকে বললো,
–“তোকে তো আমি দেখে নিবো, আর আয়ু ভাবী ভাইয়ার বউ বলে ছাড় পেলো।”
সেসময়ে তুশি এসে দাঁড়ালো শানদের ওখানে। তুশি শানদের ফ্রেন্ড সার্কেলেরই একজন। শানের মুখে ওই কথা শুনে জিজ্ঞেস করলো,
–“আয়ু ভাবী কে?”
শান আয়াতকে দেখিয়ে বললো,
–“এই সে আয়ু ভাবী, তোকে বরং সহজ ভাবে বোঝাই, যেভাবে বললে তুই বুঝবি।”
শানের কথায় আয়াত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে। এখানে সহজ ভাবে বোঝানোর কি আছে সেটা বুঝে আসলো না আয়াতের। শান বললো,
–“ও হচ্ছে আয়াত, ইনসিয়া আয়াত। আরো একটা পরিচয় আছে। তা হলো, মিসেস শ্রাবণ মেহরাব।”
কথাটা তুশির কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই তুশি চিৎকার করে বললো,
–“অসম্ভব, শ্রাবণ ভাই বিয়ে করতে পারে না।”
রাফিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কেন বিয়ে করতে পারে না?”
–“কারণ উনি বলেছিলেন কখনো বিয়ে করবে না, আর যদিও বা করে তাহলে আমার বিষয়ে ভাববেন।”
আয়াতের ভ্রু জোড়া আপনা-আপনি কুঁচকে গেলো। তুশির দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বললো,
–“কি বিষয়?”
–“আমি ভালোবাসি উনাকে। এটা অনেক বার বলেছিলাম আমি। উনি ফিরিয়ে দেন সবসময়। কিন্তু লাস্ট টাইম যখন অনেক পাগলামি করেছি তখন বলেছিলো___”
–“নিশ্চয়ই তোমার পাগলামি থামাতেই বলেছিলো৷”
–“ভালোবাসি আমি উনাকে। উনি___”
তুশি শ্রাবণকে ভালোবাসে কথাটা আয়াত ঠিক নিতে পারছে না। ওর রাগ হচ্ছে কোথাও একটা। শ্রাবণ এবং তুশি দুজনের উপরই রাগ হচ্ছে। বিশেষ করে তুশির উপর। বারবার শ্রাবণকে ভালোবাসি কথাটা সহ্য হচ্ছে না আয়াতের৷ ওর স্বামীকে অন্যকেউ কেন ভালোবাসবে? আয়াত এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। তবে কি শ্রাবণকে নিয়ে জেলাস ও? শ্রাবণের উপর কোনো টান জন্মেছে ওর? বিয়ে তো পবিত্র সম্পর্ক। তবে কি এই বন্ধনে আটকা পড়েছে ও? শ্রাবণের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে ওর মনে? মনে মনে এসব ভাবলো আয়াত। পরমূহুর্তেই আবার ভাবলো, হলে হোক অনূভুতি, ওরই তো স্বামী। ও তো চায় অতীতটা পেছনে ফেলে শ্রাবণকে নিয়ে ভালো থাকতে। ও জানে ফারাবীকে পাওয়া ওর ভাগ্যে ছিলো না। তাই এরকমটা হয়েছে। এখন যেহেতু শ্রাবণ আছে তাহলে শ্রাবণকে নিয়েই ভালো থাকবে ও। কিন্তু শ্রাবণ? শ্রাবণের মনে কি কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে ওর জন্য? এই ভেবে সামান্য মন খারাপ হলো আয়াতের। পরমূহুর্তেই আবার নিজেকে সামলে নিলো। তুশিকে কাটকাট গলায় বললো,
–“খবরদার, আমার স্বামীর দিকে একদম ওরকম নজরে তাকাবেন না। ভুলেও আর ভালোবাসি কথাটা বলবেন না নয়তো খুব খারাপ হবে।”
এই বলে আয়াত রাফিয়ার হাত ধরে হনহনিয়ে চলে এলো ওখান থেকে। শান ওর বন্ধুদের বাই বলে আয়াতের পিছনে ছুটলো৷
–
ব্যালকোনিতে বসে আছে আয়াত৷ নিচে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ সবেই বাসায় ঢুকলো। আয়াত রুমে চলে এলো। শ্রাবণ এসে গায়ের কোর্ট খুলে সোফার একপাশে রেখে গলার টাই ঢিলে করে সোফায় বসে পড়লো। পকেট থেকে ফোন বের করে টি-টেবিলের উপর রাখলো। আয়াত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। শ্রাবণ ক্লান্ত চোখে তাকালো আয়াতের দিকে। তারপর মৃদু হেসে পানিটুকু খেয়ে নিলো। এই মেয়ে দিনে দিনে ওর এতদিনকার অভ্যাস পালটে ফেলছে৷ সবকিছু হাতের কাছে এগিয়ে দিচ্ছে চাওয়ার আগেই। আয়াত বললো,
–“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিতে বলছি টেবিলে৷”
শ্রাবণ সম্মতি জানিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়াত রুম থেকে বেরোনোর সময় শ্রাবণের ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো সেদিকে। ম্যাসেজ দেখার জন্য এগোতেই বিড়বিড় করলো,
–“আমি কি অন্যান্য সব টিপিকাল বউদের মতো নিজের স্বামীকে সন্দেহ করছি? উনার ফোন যখন আমার কাছে ছিলো তখনো তো উনার ফোন চেক করার কথা চিন্তা করিনি। তাহলে এখন কেন?”
আপন মনে এসব আওড়ালো আয়াত৷ নিজেই নিজেকে কয়েকটা গালি দিলো এরকম চিন্তাভাবনা মনে আসার জন্য। রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবারো ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আয়াতের এবার তুশির কথা মনে হলো। চট করে গিয়ে ফোন হাতে তুলে নিলো। কিন্তু ফোন লক করা৷ এখন ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ম্যাসেজ চেক করবে কিভাবে? পরমূহুর্তে আবারো একটা ম্যাসেজ আসলো। আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ। স্ক্রিনে ভেসে থাকা ম্যাসেজটা পরে রাগে ফেটে পড়লো আয়াত৷ এটা তুশির ম্যাসেজ, আয়াত নিশ্চিত। ম্যাসেজটা ছিলো এরকম,
–“শ্রাবণ ভাই? আপনি আমার ম্যাসেজের রিপ্লাই করছেন না কেন? আপনি কি সত্যিই বিয়ে করে নিয়েছেন? আপনি বিয়ে করতে পারেন না৷ আমি জানি আপনি বিয়ে করেননি, আমার বিশ্বাস আছে আপনার উপর।”
ম্যাসেজটা পড়ে আয়াতের রাগে শরীর জ্বলে উঠলো। দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে কয়েকটা কটু কথাও শোনালো। এবারে তুশি ফোন করে বসলো। আয়াত রেগে ফোন রিসিভ করে বললো,
–“কি সমস্যা আপনার? ভার্সিটিতে সাবধান করে আসিনি আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকবেন? বলিনি নজর দিবেন না উনার দিকে? তারপরও বারবার ম্যাসেজ ফোন করে কেন বিরক্ত করছেন? এসময়ে তো আমরা ব্যক্তিগত সময়ও কাটাতে পারি। আপনি কেন বিরক্ত করছেন আমার স্বামীকে? উনি যখন রিপ্লাই করছিলো না আপনার বোঝা উচিত ছিলো উনি হয়তো বা ব্যস্ত আছে। ব্যস্ত থাকতেই পারে, ঘরে বউ আছে বলে কথা।”
শ্রাবণ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসব শুনে অবাক হয়ে গেলো। চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। খেয়াল করলো আয়াত শ্রাবণের ফোন দিয়েই কথা বলছে কারো সাথে। আয়াতের নজরে শ্রাবণ পরতেই আয়াত এগিয়ে গিয়ে ফোনটা শ্রাবণের হাতে দিয়ে বললো,
–“মেয়েটা যেন নেক্সট টাইম আপনাকে ভুলেও ফোন ম্যাসেজ না করে বলে দিলাম। নয়তো, নয়তো খুব খারাপ হবে।”
এটুকু বলেই রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আয়াত। শ্রাবণ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। তারপর ফোন কানে নিয়ে বললো,
–“কে বলছেন?”
–“আমি তুশি, শ্রাবণ ভাই। এত তাড়াতাড়িই ভুলে গেলেন আমাকে? সত্যি সত্যি আপনি বিয়ে করে নিয়েছেন? আমার কথা একবারো ভাবলেন না? আমি খুব ভালোবাসি__”
–“স্টপ দিস ননসেন্স। আমি একবারো বলেছি তোমায় ভালোবাসি আমি? তাহলে আমার বিয়ে করা বা না করাতে তোমার কি? আমার বিয়ে করা বউ কি বলে গেলো শুনলে না? একদমই ফোন দিবে না আমায়।”
–“আমার কথাটা শুনুন।”
–“রিডিকিউলাস।”
এইটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো শ্রাবণ। তারপর সাথে সাথেই নাম্বার ব্লক করে দিলো। ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ম্যাসেজ দেখে চক্ষু কপালে উঠে গেছে। এত্ত এত্ত ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছে মেয়েটা। ম্যাসেজগুলো ডিলিট করে দিলো শ্রাবণ। তারপর একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,
–“আমার বিয়ে করা বউয়ের রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে৷ কি হুমকি ধমকিই না দিলো তুশিকে। একদম পাক্কা বউ বউ লেগেছে তখন। স্বামীর সাথে তেমন গভীর সম্পর্ক হোক বা না হোক, স্বামীর পাশে অন্য কাউকে মানা যাবে না। না মানে একদমই না। কি জেলাস ভাবা যায়?”
একা একা কথাগুলো বলে বাঁকা হাসলো শ্রাবণ৷ ফাইনালি তাহলে ওদের সংসারটা ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে তাহলে? এবার শুধু একে অপরের অনুভূতি গুলো জানার পালা।
চলবে~