একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব-১৮

0
295

#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী

|১৮|

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। বিকেলের দিকে একটু বৃষ্টি থেমে এখন আবারো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি থামার নামই নিচ্ছে না যেন। আয়াত, সানিয়া মেহরাব এবং শান ড্রয়িংরুমের ওয়েন্ডো সাইডে বসে লুডু খেলছে। একজন সার্ভেন্ট এসে সানিয়া মেহরাবকে চা এবং আয়াত আর শানের জন্য মিক্সড ড্রাই ফুডস এন্ড নাটস দিয়ে গেলো। তিনজনেই খুব মনোযোগ সহকারে খেলছে। খেলা শেষে শানের মুখটা একটু খানি হয়ে যায়। এই নিয়ে দুবার লুডু খেলেছে ওরা। প্রথমে আয়াত এবং এখন শান হেরেছে। সানিয়া মেহরাবকে টেক্কা দিতে পারেনি ওরা দুজন। খেলা শেষে আয়াত উঠে গেলো কফি বানাতে। এখন সবাই মিলে কফি খাবে আর বৃষ্টি উপভোগ করবে। আয়াত আগে উপরে চলে গেলো। গিয়ে দেখে শ্রাবণ ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের কাজ করছে। মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হলো, এই লোকটা কি অফিসের কাজ ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝে না? আয়াত গিয়ে শ্রাবণের সামনে দাঁড়াতেই শ্রাবণ মাথা তুলে একবার তাকিয়ে আবারো ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। আয়াতের মেজাজটা আরো বেশি খারাপ হলো। শ্রাবণের কোল থেকে ল্যাপটপ নামিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো। শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত কোমড়ে দুহাত গুজে বললো,
–“কাজ ছাড়া কি আর কিছু পারেন না আপনি?”

শ্রাবণ আচমকাই আয়াতের হাত ধরে টান দিয়ে শ্রাবণের কোলে বসিয়ে দিলো ওকে। আয়াতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়াতের চুলে চুমু দিয়ে বললো,
–“পারি তো, আমার বিয়ে করা বউকে আদর করতে পারি।”

আয়াত নিজেকে ছাড়িয়ে শ্রাবণের কোল থেকে দ্রুত উঠে পড়লো। ওর বুক ধরফর ধরফর করছে। নাহ এই লোকটা আগেই ভালো ছিলো। দিনে দিনে চুড়ান্ত লেভেলের অসভ্যে পরিনত হচ্ছে। হুটহাট ছুঁয়ে দিচ্ছে, জড়িয়ে ধরছে, চুমু খাচ্ছে। আয়াত সেসব দূরে সরিয়ে রাখলো। চোখ রাঙিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“নিচে বসে সবার সাথে একটু আড্ডা দিতে পারেন না? সবসময় খালি অফিসের কাজে মুখ গুজে রাখেন। রসকষহীন লোক একটা। সাথে দিনে দিনে চূড়ান্ত লেভেলের অসভ্যে পরিনত হচ্ছেন।”

শ্রাবণ এক ভ্রু উঁচু করে সন্দিহান দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“রিয়েলি? দুপুরের ওই মোমেন্ট’স এর পরেও তোমার মনে হয় আমি রসকষহীন মানুষ?”

আয়াত মুখ বাকিয়ে অন্যদিকে তাকালো। শ্রাবণ বললো,
–“এই শুনো, তোমার বিয়ে করা বরও না ভীষণ রসকষওয়ালা একজন মানুষ। শুধু সেটা কারো সামনে প্রকাশ করে না এই যা।”

আয়াত শ্রাবণকে টেনে তুলে বললো,
–“অনেক হয়েছে, এবার নিচে চলুন।”

শ্রাবণ আর দ্বিমত করলো না। আয়াতের সাথে নিচে চলে গেলো। আয়াত সোজা কিচেনে গিয়ে কফি করে আনলো সকলের জন্য। তারপর সবাই একসাথে বসে কফি শেষ করে। বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে গেছে। তবে ঠান্ডা ঠান্ডা একটা পরিবেশ। আয়াত বললো,
–“আজ রাতের রান্নাটা আমি করি?”

সানিয়া মেহরাব চোখ রাঙিয়ে বললো,
–“কোনো দরকার নেই। কফি করিস এই অনেক, আর কিচ্ছু করত হবে না তোর।”

–“প্লিজ মা, আমি রান্না জানি তো৷ কোনো সমস্যা হবে না।”

শ্রাবণ থমথমে গলায় বললো,
–“বাড়িতে অনেক সার্ভেন্ট আছে তারা করে নিবে সবকিছু। তোমার কিচেনে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”

–“এই আপনি চুপ থাকুন তো।”

আয়াতের ধমকে শ্রাবণ থতমত খেয়ে যায়। শান ফিক করে হেসে দিলো আয়াত শ্রাবণকে কথাটা বলাতে। যেখানে শ্রাবণ মেহরাব সবাইকে ধমকের উপর রাখে সেখানে ওর বউ কিনা ওকে ধমকাচ্ছে? ভাবা যায় এটা? আয়াত আবারো রিকুয়েষ্ট করতেই সানিয়া মেহরাব সম্মতি জানায়। শান হেসে হেসে ওর মাকে বললো,
–“আম্মু ভাইয়াকে ধমকানোর মানুষ এসে পড়েছে দেখছো? আয়ু ভাবীর এক ধমকে ভাইয়া কেমন থতমত খেয়ে গেছে দেখেছো? এরপর কিন্তু আর টু শব্দও করেনি ভাইয়া।”

শানের কথায় আয়াত আর সানিয়া মেহরাব দুজনেই মুখ টিপে হাসে। শ্রাবণ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই শান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়। শ্রাবণ শানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“আজকাল বড্ড বেশি কথা বলছিস তুই।”

এই বলে হনহনিয়ে উপরে চলে গেলো শ্রাবণ। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সকলেই উচ্চস্বরে হেসে দিলো। আয়াত শানকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি খেতে চাও রাতে?”

শান চট করেই বললো,
–“চিকেন বিরিয়ানি।”

আয়াত মৃদু হেসে বললো,
–“ওকেহ ডান।”

সানিয়া মেহরাব সার্ভেন্টদের ডেকে বললো চিকেন বিরিয়ানির জন্য সবকিছু রেডি করতে। সাথে আয়াত ডিমের কোরমার জন্যও সব রেডি করতে বললো।

কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে রান্নায় ব্যস্ত আয়াত৷ এই লুকে যেন আয়াতকে একদম পাক্কা গিন্নী গিন্নী লাগছে। কিরকম ব্যস্ত হাতে রান্না করছে। বাসায় থাকলে বেশির ভাগ শাড়িই পড়ে আয়াত। আজও ব্যতিক্রম না। সার্ভেন্টদের নিজেদের ঘরে চলে যেতে বলেছে আয়াত। ও নাকি একাই সবটা সামলে নিবে। সানিয়া মেহরাব আর শানও নিজেদের ঘরেই আছে। আয়াতের ফোন বাজছে৷ শ্রাবণ হাতে নিয়ে দেখে ইরার ফোন। রিসিভ করতে করতেই কেটে যায় ফোন। শ্রাবণ ফোন হাতে নিচে নেমে আসে। কিচেনে গিয়ে আয়াতকে ওরকম লুকে দেখে মৃদু হাসে। কি সুন্দর লাগছে আয়াতকে এখন৷ শ্রাবণ কিছু সেকেন্ড আয়াতের দিকে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আয়াতের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়াত বুঝতে পারে শ্রাবণ এসেছে৷ আয়াত বলল,
–“কি চাই এখানে?”

শ্রাবণ কিছু না বলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আয়াতকে। আয়াত রান্না করতে করতেই বললো,
–‘ছাডুন, কেউ এসে এই অবস্থায় দেখলে কি ভাববে বলুন তো?”

–“অন্যের বউকে তো আর ধরিনি।”

–“আজ মশাই হেব্বি মুডে আছে মনে হচ্ছে?”

শ্রাবণ আয়াতের চুলে মুখ গুজে বললো,
–“ওয়েদারটাই তো সেরকম।”

–“হ্যাঁ এরকম ওয়েদার দেখে আপনার রোমান্টিক মুড সুরসুর করে বেরিয়ে এলো তাই না?”

–“বেচারা মুডের আর কি দোষ বলো তো? আজ বউয়ের যে নেশালো রুপ দেখেছি বিয়ের এতগুলো মাসে তো ওরকম রুপ আর দেখিনি তাই তো আজ আর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি, আমাদের মাঝের সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছি। এখন খালি বউকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে৷ আমার কি দোষ?”

–“আপনার কোনো দোষ না, আপনি এখন আমায় ছাড়ুন।”

–“উঁহু।”

এইটুকু বলে শ্রাবণ আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরলো আয়াতকে। এমন সময় কারো পায়ের শব্দ পেয়ে দ্রুত আয়াতকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো শ্রাবণ। কিচেনের বাইরে শান দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে৷ শান ডাইনিংয়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি পান করলো। তারপর শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে মুচকি হেসে বললো,
–“এটা কিচেন ভাইয়া, যখন তখন যে কেউ এসে পড়বে। এখানে দূরত্ব বজায় রাখো, নয়তো ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আয়ু ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকো।”

শ্রাবণ চোখ রাঙিয়ে তাকালো শানের দিকে। শান চলে যেতে নিয়েও আবার বললো,
–“চাইলে এর থেকে বেশি কিছুও করতে পারো।”

শ্রাবণ শানের দিকে এগোতেই শান এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াতের লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। সব ওই লোকটার দোষ, কে বলেছিলো এখানে আসতে?

আয়াতের শরীরটা হঠাৎ করেই খারাপ লাগছে। হাঁচি দিচ্ছে বারবার। শরীরটা গরম। তাছাড়া দুপরের পর থেকেই ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। আয়াত একজন সার্ভেন্টকে ডেকে বললো কিছুক্ষণ বাদেই গ্যাস অফ করে বিরিয়ানির ডিশ নামিয়ে ফেলতে। সার্ভেন্ট সম্মতি দিতেই আয়াত উপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াত গিয়ে সরাসরি বিছানায় শুয়ে পড়লো। শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। আয়াতের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“শরীর খারাপ লাগছে? এভাবে__”

–“এমনি ভালো লাগছে না।”

শ্রাবণ বিচলিত হয়ে আয়াতের কপালে হাত দিতেই দেখলো আয়াতের গা গরম, জ্বর এসেছে ওর। কিছুক্ষণ বাদে বাদে হাঁচিও দিচ্ছে। আয়াত রাগান্বিত স্বরে বললো,
–“বলেছিলাম জ্বর আসবে, শুনোনি তো আমার কথা। এবার ভালো লাগছে তো?”

আয়াত মলিন চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আপনি এখনো বকবেন আমাকে?”

শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“বকবো না, সুইমিংপুলে নিয়ে সাতার কাটাবো দুই ঘন্টা। মনে আছে তো দুপুরে কি বলেছিলাম?”

এই কথাগুলো বলতে বলতেই শ্রাবণের হাঁচি শুরু হয়ে যায়। হাঁচি দিতে দিতে লোকটার অবস্থা কাহিল। নাকের ডগা লাল হয়ে গেলো মূহুর্তেই। চোখ দুটোও রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। কিছুক্ষণ বাদে বাদে নাক টানছে শ্রাবণ। শ্রাবণের এই অবস্থা দেখে আয়াত অসুস্থ শরীরেও ফিক করে হেসে দিলো। বললো,
–“এক কাজ করি চলুন, দুজনে একসাথে গিয়ে সুইমিংপুলে সাতার কেটে আসি।”

শ্রাবণ চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আয়াতের অবস্থা ততক্ষণে নাজেহাল। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসে গেছে। অনেকটা সময় বৃষ্টিতে ভিজে, ভেজা কাপড়ে ছিলো। শ্রাবণ আয়াতকে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে কম্বল বের করে গায়ে দিয়ে দিলো। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো খাবার নিয়ে আসার জন্য। আয়াতকে খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিতে হবে এক্ষুনি। সানিয়া মেহরাব সোফায় বসে বই পড়ছিলো। শ্রাবণ বললো,
–“আম্মু প্লেটে করে খাবার বেড়ে দাও তো।”

–“তুই একা কেন? আয়ু খাবে না? ওকে ডাক।”

–“জ্বর এসেছে আয়ুর, ওর জন্যই খাবার নিতে এসেছি। মেডিসিন দিতে হবে আবার।”

কথাটা বলতে বলতেই আবারো হাঁচি দিলো শ্রাবণ। সানিয়া মেহরাব শ্রাবণকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে বললো,
–“তোর চোখমুখ এমন লাল কেন?”

–“এমনি, তুমি খাবার দাও।”

নাক ডলতে ডলতে কথাটা বললো শ্রাবণ। সানিয়া মেহরাব শ্রাবণের কাছে এসে ওর গায়ে হাত দিতেই চমকে গেলেন। শ্রাবণেরও জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। সানিয়া মেহরাব রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
–“জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তোর, আর তুই বলছিস কিছু হয়নি?”

–“এটা কোনো ব্যাপার না, সেরে যাবে এমনিতেই। আয়াতের জন্য খাবার দাও। আমি ওকে রুমেই খাইয়ে দিয়ে ঔষধ দিয়ে দিবো।”

–“সুস্থ হো আগে দুজনে, তারপর বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধানোর জন্য দুজনকেই পানিশমেন্ট দিচ্ছি আমি।”

সেসময়ে শান উপস্থিত হলো সেখানে। কথাটা শুনে বললো,
–“কে যেন বলেছিলো আমরা জ্বর বাধালে আমাদের সুইমিংপুলে সাতার কাটাবে। এখন এই কথাটা কি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না?”

সানিয়া মেহরাব চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
–“ভাই-ভাবীর অসুস্থতা নিয়ে ফাজলামি হচ্ছে বেয়াদব?”

শান মায়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে শ্রাবণের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো,
–“নিশ্চয়ই ভেজা শরীরেই রোমান্স টোমান্স শুরু করেছিলে যার জন্য___”

পুরো কথা শেষ করার আগেই শানের পিঠে থা/প্প/ড় বসালো শ্রাবণ। শান চোখমুখ খিচে সরে দাঁড়ালো ওখান থেকে৷ ওর পিঠ যেন একেবারে জ্বলে যাচ্ছে। শান কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
–“সত্যি কথা বললেই মারবে, না? অসুস্থ অথচ গায়ের জোর কমেনি, আহ আমার পিঠ গেলো আজ।”

–“লজ্জা করে না বড় ভাইকে এসব বলতে? দিন দিন অসভ্য হচ্ছিস।”

–“এই কথাটা আয়ু ভাবী তোমাকে বলেছিলো সন্ধ্যার আগে। আমি শুনেছি কিন্তু। এখন নিজের তকমা আমার গায়ে লাগাতে আসবে না।”

শ্রাবণ কিছু বলে উঠার আগেই সানিয়া মেহরাব শানকে ধমকে উঠলেন। শান দৌড়ে উপরে চলে গেলো আয়ুকে দেখতে৷ সানিয়া মেহরাব বললো,
–“তুই ঘরে যা, আমি তোদের খাবার ঘরে নিয়ে আসছি।”

–“আমি নিতে পারবো, আমাকে___”

–“ঘরে যা চুপচাপ।”

শ্রাবণ বাধ্য ছেলের মতো ঘরে চলে এলো৷ ঘরে এসে দেখে শান আয়ুর মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর রুমাল ভিজিয়ে আয়ুর মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে। শ্রাবণ মুচকি হাসলো শানকে দেখে৷ আয়ুকে নিজের বোনের মতোই প্রচন্ড ভালোবাসে ছেলেটা। শ্রাবণকে দেখে শান এগিয়ে এলো। শ্রাবণের গায়ে হাত দিয়ে দেখলো ওর গায়েও অনেক জ্বর। কিন্তু ও আয়ুর মতো ওভাবে নেতিয়ে পড়েনি৷ শান বললো,
–“তোমারও তো অনেক জ্বর ভাইয়া৷ তুমি বসো এখানে।”

–“আমি ঠিক আছি, আমাকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।”

শান তবুও শ্রাবণকে নিয়ে বিছানায় বসালো। সানিয়া মেহরাব খাবার নিয়ে আসতেই শ্রাবণ আয়াতকে ধরে বসালো৷ সানিয়া মেহরাব একসাথেই দুজনকে খাইয়ে দিলো। শানের বায়না ওকেও খাইয়ে দিতে হবে। তাই শান একজন সার্ভেন্টকে ডেকে এ ঘরেই খাবার পাঠাতে বললো৷ অতঃপর সানিয়া মেহরাব পরম যত্নে দুই ছেলে আর ছেলের বউকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়ে চলে যান ঘর থেকে। শান এক গ্লাস পানি আর মেডিসিনের পাতা শ্রাবণের হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে৷ শ্রাবণ পাতা থেকে একটা ঔষধ ছাড়িয়ে আয়ুকে খাইয়ে দিলো৷ তারপর উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো। আয়াত ভাঙা গলায় বললো,
–“আপনি ঔষধ খেলেন না?”

–“আমার ঔষধের প্রয়োজন নেই, আমি একদম ফিট আছি।”

আয়াত চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
–“শীগ্রই ঔষধ খান বলছি, নয়তো আমি কিন্তু যা খেয়েছি সব এখন___”

আয়াত পুরো কথা শেষ করার আগেই শ্রাবণ ঔষধ খেয়ে নিলো। তারপর আয়াতের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আয়াতকে টেনে নিজের বুকের উপর এনে একহাত দিয়ে ল্যাম্প লাইট অফ করে দিলো। আয়াত শ্রাবণের বুকের উপর মাথা রেখে ওর বুকে আঁকিবুঁকি করছে। শ্রাবণ আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি, ঘুমানোর চেষ্টা করো।”

–“আপনি ঘুমাবেন না?”

–“হ্যাঁ।”

আয়াত মৃদু হেসে শ্রাবণকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। শ্রাবণ অনেক যত্নে আয়াতকে বুকে নিয়ে ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ওরও চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জ্বরের মাত্রা বুঝি বেড়ে উঠছে।

চলবে~