#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ইভানা মন খারাপ করে বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিল। ফাহিমকে খুব মন পড়ছিল তার। আজ এক মাস হয়ে যাচ্ছে ফাহিম বাসায় নেই৷ ফোনে মাঝে মাঝে কথা হয় অবশ্য কিন্তু তাতে কি আর মনে ভড়ে। ইভানা উদাস মনে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল। অতঃপর বেলকনিতেই আরাম কেদারায় বসে পড়ে। তারপর হঠাৎ কি যেন মনে করে রুমের মধ্যে যায়। রুমে এসেই ফাহিমের ডেস্কের কাছে যায়। ফাহিমের ডেস্কে অনেক গল্পের বই রাখা। ইভানা নিজের একাকীত্ব এই গল্পের বই পড়েই দূর করে। আজো তাই সে তুলে নিলো বিভূতিভূষণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের পাচালি’ উপন্যাস।
গতকালই পড়া শুরু করেছে। হাসি কান্না মিশ্রিত গল্পটি পড়তে তার ভালোই লাগে। পুনরায় বেলকনিতে এসে উপন্যাস পড়ায় মনযোগী হয় সে। এই সময় সে যেন হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। দিন দুনিয়ার কোন খেয়াল থাকে না। পুরো গল্পের মধ্যেই ডুবে যায়। এমন সময়ই কেউ পেছন থেকে এসে তার চোখে হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নেয়। ইভানার প্রচণ্ড ভয় হয়। আচমকা কে এমন করতে পারে ভেবে মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে।
আচমকা আগন্তুক ব্যক্তি ইভানাকে নিজের দিকে করে নেয়। ইভানা চোখ মেলে তাকাতেই স্তব্ধ বিমোহিত হয়ে যায়। কারণ, ফাহিম ফিরে এসেছে।
ইভানা অদর প্রসারিত করে হেসে বলে,
‘আপনি ফিরে এসেছেন!’
‘ফিরে তো আমাকে আসতেই হতো৷ একজন যে আমার অপেক্ষায় শুকিয়ে যাচ্ছিল।’
ইভানা লজ্জা পেল খানিকটা। নুইয়ে নিলো মাথা। ফাহিম আলতো স্পর্শ করে ইভানার মাথা উচু করে। দুজনের চোখাচোখি হয়। ইভানা ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি ফিরবেন আগে তো বলেন নি। আপনার পরীক্ষা কি শেষ হয়েছে?’
‘তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই জানাই নি। হ্যা আমার পরীক্ষা শেষ।’
‘ও।’
‘আর কিছু জানতে চাইবে না?’
ইভানা পিটপিট করে তাকায় ফাহিমের দিকে। ফাহিম হালকা হেসে বলে,
‘তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে।’
‘চলছে চলার মতো।’
ফাহিম এবার ইভানার বাধন হালকা করে। এতক্ষণ ইভানার অনেক কাছাকাছি থাকলেও এবার একটু দূরে সরে এসে বলে,
‘হুম বুঝতে পেরেছি। আমি এতদিন ছিলাম না আর তুমি সেই সুযোগে ফাকিবাজি করেছ। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন আমি ফিরে এসেছি। এখন আর কোন ফাকিবাজি চলবে না। যাও বই নিয়ে পড়তে বসো। যদি আজকে রাতের মধ্যে তোমার ভূগোল বইয়ের ৫ পৃষ্ঠা পড়ে শেষ করতে পারো তাহলে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।’
‘কি সারপ্রাইজ?’
‘সেটা রাতেই জানতে পারবে।’
ইভানা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে চুপচাপ রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে গিয়ে পড়তে বসে।
৩৯.
দিনের আলোকে বিদায় দিয়ে ধরিত্রী স্বাগত জানিয়েছে রাতের অন্ধকারে। আজ আমাবস্যার রাত। তাই অন্ধকার যেন একটু বেশিই প্রকট হয়েছে। তার উপর ঘন ঘন লোডশেডিং এ জনজীবন বিপর্যস্ত।
এত সবকিছুর মাঝে ইভানার পড়া থেকে নেই। সে নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়তে বসেছে। ফাহিমের দিতে চাওয়া সারপ্রাইজ নিয়ে খুব আগ্রহী সে৷ তাইতো পড়ায় কোন ঘাটতি রাখতে চায় না।
ফাহিম বাইরে গিয়েছিল কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। বাড়িতে ফিরে রুমে এসে ইভানাকে পড়ার টেবিলে দেখে বেশ স্বস্তি পেল সে। যাক বুদ্ধি তাহলে কাজে দিয়েছে।
ফাহিম ইভানার টেবিলের পাশে এসে দাড়ালো। একটু ঝুকে ইভানার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘পড়াশোনা কতদূর?’
‘শেষ হয়েছে৷ এখন একটু রিভাইজ করছি।’
‘আচ্ছা, রিভাইজ পরে করিও। এখন নিচে চলো ডিনারটা সেরে নেই। দেন আমি তোমাকে এই পড়াগুলোর মধ্য থেকে প্রশ্ন করব। সঠিক উত্তর দিতে পারলেই সারপ্রাইজ দিবো।’
ইভানা বাধ্য মেয়ের মতো ফাহিমের কথা মেনে নেয়। সর্বপ্রথম পড়ার টেবিলে বই সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে। এরপরই ফাহিমের সাথে নিচে চলে যায় ডিনার করতে।
ফারজানা বেগম, ফাহিম ওরা ডাইনিং টেবিলেই বসে ছিল ডিনারের উদ্দ্যেশ্যে৷ রহিমা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিল। ফাহিম ও ইভানাও এসে বসে পড়ে সবার সাথে। ফারহান ফাহিমকে দেখে প্রসন্ন চিত্তে বলে,
‘অবশেষে তুই ফিরলি। তোকে ছাড়া বাড়িটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছিল।’
ফারজানা বেগমও তালে তাল মিলিয়ে বলেন,
‘হ। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে এহন আমার শান্তি।’
এভাবেই খুশির সাথে সবাই ডিনার শেষ করে নেয়। অতঃপর যে যার রুমের দিকে পা বাড়ায়। ফাহিম রুমে এসে বিছনায় গা এলিয়ে দেয়। ইভানা টেবিলে বসে পরে পড়াগুলো রিভাইজ দেওয়ার আকাঙ্খায়। পড়া রিভাইজ দেওয়া শেষ হলে মৃদু আওয়াজে ফাহিমকে ডাকে। বলে,
‘শুনছেন। আমার সব পড়া হয়ে গেছে। আপনি এখন আমাকে যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন।’
ফাহিম ইভানার এমন আত্মবিশ্বাস দেখে খুশি হয়। এটাই তো দেখতে চেয়েছিল সে। ফাহিম বিছানা থেকে উঠে বসে একটি চেয়ার নিয়ে ইভানার সম্মুখে বসে পড়ে। এরপর তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। ইভানা সবগুলো প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দেয়। ফাহিম ভীষণ প্রসন্ন হয় ইভানার উপর আর বলে,
‘তুমি আজ আমাকে খুশি করে দিয়েছ। তাই অনেক ভালো একটা সারপ্রাইজ পাবে। এখানেই বসে থাকো আমি আসছি।’
বলেই ফাহিম কোথাও উঠে চলে যায়।
৪০.
ইভানা টেবিলে বসেই ফাহিমের জন্য অপেক্ষা করছিল৷ কিছু সময়ের মধ্যেই ফাহিম রুমে প্রবেশ করে। ইভানা দরজার পানে তাকাতেই থমকে যায়। ফাহিম হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। গোলাপগুলো যে তার উদ্দ্যেশ্যেই আনা হয়েছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারে ইভানা। তবুও জিজ্ঞেস করে,
‘এগুলো কার জন্য?’
ফাহিম কোন জবাব না দিয়ে এক পা এক পা করে ইভানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ইভানার হৃদস্পন্দন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আবেগপ্রবণ মন কোন অঘটনের সংকেত দিচ্ছিল! যেনতেন অঘটন নয় ভালোবাসার অঘটন।
ফাহিম ইভানার সম্মুখে এসে দাড়ায়। অতঃপর হাটু গেড়ে বসে পড়ে তার সামনে। লাজুক হেসে বলে,
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি ইভানা। তুমি কি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকবে?’
ইভানার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। হৃদস্পন্দন এত বেড়ে গিয়েছে যে শ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়। সে নিজের আখিযুগল বন্ধ করে নেয়। জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। ফাহিমকে নিজের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরো বেশি নার্ভাস হয়ে পড়ে।
কোনরকমে কম্পনরত হাতটা বাড়িয়ে গোলাপগুলো স্বহস্তে নিয়ে বলে,
‘থাকব।’
ফাহিম এই জবাবের অপেক্ষাতেই ছিল যেন। ইভানার জবাব কর্ণপাত হওয়া মাত্রই তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় ফাহিম এগিয়ে এলো ইভানার দিকে। ইভানা তটস্থ হলেও নড়লো না নিজের স্থান থেকে। ফাহিম নিজের অধর দিয়ে ইভানার কোমল অধরজোড়া দখল করে নিল। অতঃপর নিজের তৃষ্ণা মেটাতে লাগল। ইভানা পুরো স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে যেন। কোনরকম কথাই সে বলতে পারছে। যেন এক অন্য জগতে অন্য ঘোরের মধ্যে বিরাজ করছে সে।
সময় যত এগোতে থাকে ফাহিমের প্রতিটা স্পর্শ ঠিক ততোটাই গভীর হতে থাকে। একসময় ইভানাকে কোলে তুলে নেয় ফাহিম। অতঃপর তাকে নিয়ে এসে সযত্নে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তৃষ্ণার্ত কন্ঠে বলে,
‘আজ আমি আর নিজের মধ্যে নেই ইভানা। আই নিড ইউ। আর নিড ইউ ব্যাডলি৷ প্লিজ বি মাইলেস্ফ।’
‘আ’ম অলওয়েজ ইওরস।’
ফাহিম ইভানাকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে দিতে লাগল। দুজনে আজ দুজনের মাঝে সম্পূর্ণ বিলীন হতে প্রস্তুত। কোন বাধা, কোন দূরত্ব নেই তাদের মধ্যিখানে। একে অপরের উষ্ণতায় উষ্ণ হতে থাকে দুজনে। দুটি দেহ আজ যেন এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨