তুমি আমি দুজনে পর্ব-১৮+১৯

0
682

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব-১৮

-কি হলো নামছ না কেনো

প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের মতো ধমকে উঠলো আহান,তুরা খানিক কেঁপে উঠে গাছের ডালটা শক্তপোক্ত করে ধরল, নিচে তাকাতেই আবারও মাথা টা কেমন করে উঠল। এবার তুরার নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে কোন দুঃখে গাছে উঠতে এসেছিলো, চুমকি বলেছিল দারোয়ান কে দিয়ে বাঁধিয়ে নিবে,তাও যে কেনো পাকনামি টা করতে গেল।

-আপনি এখানে কেনো এসেছেন?

প্রতুত্তরের বদলে উল্টো নিজেই প্রশ্ন করল তুরা

-তোমাকে দেখতে এসেছি ষ্টুপিড!

দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল আহান। তুরা শুকনো ঢক গিলে বলল

-আপনি এখান থেকে যান

-তোমাকে নামতে বলেছি না?

-আব হ্যাঁ নামছি তো এত চেঁচামেচি করার কি আছে আজব

-সকাল বেলা সকালে বাঁদরের মতো গাছে উঠে বসে আছো আবার বলছ চেঁচামেচি করছি, নামো তুমি আজকে বাঁদরামি বের করছি

আহানের ধমকানিতে তুরা বোকা বোকা মুখ করে বলল

-স্বামী, আপনি রেগে কেনো যাচ্ছেন গো। সকাল সকাল এত মাথা গরম করলে তো এ্যাসিডিটি হয়ে যাবে

-সাট আপ, লাস্ট বারের মতো বলছি তুমি নামবে নাকি আমি আসব

তুরা চুপচাপ এক হাতে ডাল আঁকড়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো। আহান শান্ত কণ্ঠে টেনে টেনে বলল

-বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে একটা ধিঙ্গি মেয়ে গাছে উঠে বসে আছে, দৃশ্যটা কেমন দেখায় ভাবতে পারছ?

আহানের ধিঙ্গি বলা শুনে তুরা মুখ ফুলিয়ে নিল, তুরার বিপরীত দিকেই দাঁড়িয়ে আছে আহান, অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উল্টো পথে হাঁটা ধরল। আহানের যাওয়ার দিকে চেয়ে তুরা এক হাতে ডাল ধরে নামতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে ধড়াম করে ডাল ভেঙে পরল মাটিতে,,মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো তুরা,চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো অশ্রুবিন্দুতে। আহান অদূরেই ছিল, দৌড়ে এসে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল

-শান্তি হয়েছে? হয়েছে শান্তি? একটা না একটা ব্লান্ডার না করলে তোমার হয়না?

তুরা অশ্রুসিক্ত চোখের কান্নাভেজা গলায় বলল

-আমিতো ইচ্ছে করে পরিনি,ডাল ভেঙে গেল

চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে আহান হাত বাড়িয়ে দিলো, তুরা এক হাত এগিয়ে খামচে ধরল আহানের হাত। পরার সময় পা টা বেঁকে গেছিল বলে ব্যাথায় টনটন করছে, গোড়ালির দিকটা লাল হয়ে গেছে। আহানের হাত ধরে উঠে দাড়ালেও হাটতে নিলেই হোচট খেল। আহান রেষ পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে কোলে তুলে নিল তুরাকে। ব্যথায় চোখ মুখ খিচিয়ে রইল তুরা। আহান তুরাকে নিয়ে সোজা ঘরের ভেতর ঢুকলো। তুরাকে আহানের কোলে দেখে সবাই হতভম্ব হলেও তুরার চোখে মুখ কান্না ভেজা আর এলোমেলো অবস্থা দেখে কপালে ভাজ পরল সবার। রাইমা কেবলই সিড়ি বেয়ে নামছিল,আহানকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে তুরাকে কোলে নিয়ে আসতে দেখে আঁতকে উঠে দ্রুতপায়ে ছুটে এসে বলল

-একি ভাই,তুরার কি হয়েছে, ও কাঁদছে কেন? আর ওকে তুলে এনেছিস কেন? কি হয়েছে ওর?

রাইমার একদমে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিল না আহান, এগিয়ে গিয়ে তুরাকে সোফাতে বসিয়ে বলল

-সেসব পরে শুনিস,আগে ফ্রিজ থেকে আইসকিউব আন আপি

আহানের কোলে তুরাকে দেখে আমেনা বেগম মনে মনে আশ্চর্যজনক ভাবে খুশি হলেও পরমুহূর্তেই আঁতকে উঠে, ব্যাথা কাতর হাঁটুতে ভর দিয়েই উঠে এসে তুরার পাশে বসে বলেন

-কি হয়েছে দাদুভাই, একটু আগেও তো ভালো ছিল,পায়ে কি হলো নাতবউয়ের

-কি আর হবে, না এক দন্ড নিজে স্থির বসে না অন্যকে সস্তি দেয়। বাঁদরামি করে গাছে উঠে পরে গিয়ে পা মচকেছে

তুরার ডান পা টা সন্তপর্ণে টি টেবিলের উপরে তুলে রাখতে রাখতে ব্যস্ত স্বরে বলল আহান।

-এই নে আইস কিউব

বলেই বাটিতে রাখা কয়েকটা বরফ আর একটা কাপড় এগিয়ে দিল আহানের সামনে। আহান পাতলা কাপড় টার মাঝে বরফের টুকরো রেখে পেঁচিয়ে খুব যত্নসহকারে ধরল তুরার পায়ের গোড়ালিতে

-বাবু কি হয়েছে বউয়ের,রাইমা বলল পায়ে ব্যথা পেয়েছে নাকি

রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো মিনু আর রুবি। বাড়িতে মেহমান আসা উপলক্ষে রান্নাঘর জুড়ে বেশ ব্যস্ততা আজ। তাই রুবি আর চুমকির সাথে মিনুও হাতে হাতে সব কাজ এগিয়ে দিচ্ছিলো। রাইমা তুরার কথা বলে বরফ আনতে গেলে তারাও চিন্তিত হয়ে বেরিয়ে আসে রাইমার পিছু পিছু

-পা টা তো অনেক খানি ফুলে গেছে। কি করে হলো এসব তুরা?

রুবির কথার পৃষ্ঠে তুরা চুপচাপ তাকিয়ে থাকাই উত্তর হিসেবে দিল। আহান পায়ে বরফ চাপতে চাপতে বলল

-গাছ থেকে পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে

এক লাইনের উত্তর দিয়েই প্রসন্ন হলো সে। কিন্ত প্রসন্ন হলো না তুরা, সে কি ইচ্ছে করে পরেছে? ডালটাই তো একাই ভেঙে গেল। সে কি বলেছিলো ডাল তুই ভেঙে পর সাথে আমাকেও ফেল, অত্যন্ত ব’জ্জাত লোকটা। তার উপর পায়ে বরফ চাপায় ভীষণ যন্ত্রণাও করছে৷ কিন্তু একটা টু শব্দ করার সাহস হচ্ছে নাহ,একবার পা সরিয়ে নিতে নিলেই চোখ রাঙানো খেয়েছে আহানের।

-কি যে কর তুমি বউ,সবসময় ছুটোছুটি। এই যে এখন মেহমান এসে দেখবে বাড়ির বউ পা ভেঙে বসে আছে, এসব কি ভালো দেখায়

মিনুর কথার প্রেক্ষিতে শুধু দীর্ঘশ্বাস ই ফেললো রুবি। তুরা চোখ ভরা পানি নিয়েই বলল

-কিন্ত আমারতো পা ভাঙেনি ফুফু আম্মা, শুধু একটু মচকেছে।

-ওমা দেখ মেয়ের কথা। বলি টাসটাস কথা না বলে একটু দেখে শুনে চললেও তো পারো

তুরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহান বলে উঠলো

-স্প্রে করলে ব্যথা চলে যাবে। উঠতে পারবে তুমি?

তুরা সামান্য ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলেও উঠে একপার বেশি এগোতে পারল না, ব্যথাটা গোড়ালি তে হওয়ায় দাড়াতে অক্ষম হলো। আহান ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে চেয়ে ‘স্টুপিড মেয়ে’ বলে বিড়বিড়িয়ে ভরা ডাইনিং রুমে মা ফুফু দিদুন কাওকে তোয়াক্কা না করে তুরাকে আবারও কোলে তুলে গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। ঘরে এসে তুরাকে খাটের উপর বসিয়ে, ড্রয়ার থেকে স্প্রে বের করে পায়ে স্প্রে করে দিয়ে তুরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-দিস ওয়াজ দ্যা লাস্ট টাইম। এরপর থেকে যদি আর কোন রকম পাকনামি করেছ তো আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে নাহ,মাইন্ড ইট

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আহান। তুরা আহানের যাওয়ার পানে হা করে চেয়ে ভ্রু কুচকে বলল

-এমনেও আপনার চেয়ে খারাপ কেও নাই ও। ব’জ্জাত বেডা মানুষ

•••••

বাথরুমের দরজা খুলে এক হাতে দেওয়ালে ভর দিয়ে এক পা উচিয়ে খুব আস্তে ধীরে বেরোলো
তুরা, আস্তে আস্তে খাটের কাছে এসে বসে চুলের পানি গুলো মুছতে লাগল। ঘড়ির কাটার স্থান ঠিক দুপুর একটা জানান দিচ্ছে। তুরার পায়ের ব্যথাটা অনেকটাই কমে এসেছে, সকালের পর আর ঘর থেকে বের হয়নি সে,হয়নি বলতে আহান বেরোতে দেয়নি। ওর খাবার রাইমা এনে দিয়েছে উপরে। এতক্ষণ রাইমা ওর সাথেই ছিল,কিন্তু দুপুর হওয়াই সেও গোসলে গেছে, মেহমান আসার সময় ও হয়ে এসেছে। কোথায় ভেবেছিল আজ মা কে সব রান্নায় সাহায্য করবে উল্টো নিজেই পা তুলে বসে আছে খাটে, নিজের কাজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তুরার।

-আসব তুরা?

নারী কণ্ঠের কথায় তুরা চুল মুছা থামিয়ে দরজায় তাকিয়ে দেখল রুবি খাতুন দাঁড়িয়ে আছে, গাল প্রসারিত করে হেসে তুরা বলল

-মা,আসুন না। অনুমতি নেওয়ার কি আছে

-অবশ্যই আছে, প্রত্যেকের ই প্রাইভেসি থাকে। যাই হোক গোসল হয়েছে?

কথা বলতে বলতে তুরার পাশে বসল রুবি।

-জ্বি মা হয়েছে

-পায়ে কি এখনো ব্যাথা করছে?

-না মা ঠিক আছে, শুধু হাঁটতে গেলে একটু চিনচিন করছে আরকি,কাল সকাল হতে এটুকুও চলে যাবে

-গেলেই ভালো, হ্যাঁ যেটা বলতে এসেছি। তোমাদের বিয়ের তো অনেকদিন ই হলো। বিয়ের পর তো নিয়মানুযায়ী তোমাকে কিছুই তো দেওয়া হয়নি। এটা নাও

বলেই তুরার হাতে একটা মোটা পারের সোনালী সুতির কাজ করা খয়েরী রঙের শাড়ি তুলে দিলো। যেটা রুবি আসা থেকেই তুরা লক্ষ্য করছিল।

-এটা কি মা?

-এই শাড়িটা তোমার দিদুন দিয়েছিল আমায় বৌভাতের দিন। সেই সূত্রানুসারে এটা আমার তোমায় আরও আগেই দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তা তো জানোই,সেরকম পরিস্থিতি হয়ে ওঠেনি।

তুরা কোনো উত্তরহীনা রুবির কথা শুনছে, সে আবারও বলল

-আজ রাইমার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে, আহানের বিয়ের ব্যাপার টা সম্পর্কে তারাও অবগত। তুমি রাইমার ভাবি আর এ বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। তাই আমি চাই আজ তোমাকে তারাও বাড়ির বউ বেশেই দেখুক। এই শাড়িটাই আজ পরবে কেমন? ব্লাউজ আর পেটিকোট এর ভেতরেই আছে, মাপ টা তোমার শরীরে বেমানান হবে নাহ হয়ত। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

-না না মা। এ তো আমার সৌভাগ্য, এটাকে আমি আপনি আর দিদুনের আশির্বাদ স্বরূপ নিলাম।অবশ্যই পরব আমি।

হাস্যজ্বল চেহারায় তুরার উত্তরে বেশ সন্তুষ্ট হলেন রুবি,যেন এমনটাই আশা করেছিলেন, মিষ্টি হেসে তুরার কপালে মমতাময়ী একটা চুমু দিয়ে বলল

-তুমি তাহলে তৈরি হয়ে নাও। আহানকে পাঠিয়ে একটু পর তোমায় নিচে নিয়ে যাব কেমন?

ছেলের মতই চাপা স্বভাবের রুবি খাতুন, তুরাকে মনে মনে স্নেহ করলেও বাহ্যিক ব্যবহারে তার প্রকাশ কম ই করে, আজ প্রথম শাশুড়ীর কাছে মায়ের আদর পেয়ে তুরাও অনেক বেশি আপ্লুত হয়। প্রজ্ব্যলিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
রুবি খাতুন আর সময় ব্যয় না করে বেরিয়ে আসে,নিচে এখন অনেক কাজ তার।
রুবি বেরতেই তুরা এক হাতে ভর দিয়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা নিজের গায়ে ধরলো। পাতলা সুতি কাপড়ের উপর খুব সুন্দর ডিজাইনের কাজ করা, আগের যুগের হলেও শাড়িটি বেশ নজরকাড়া। কিন্তু কথা হচ্ছে শাড়ি তো সে পরতে পারেনা,তখন রুবিকে তো বললও না সে,এখন কি করবে?
কিছুক্ষণ চিন্তিত হয়ে ভেবে তুরার মনে হলো সেদিন আহান যখন শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছিল পরার ধরন টা সে দেখেছে ভালো করে, চেষ্টা করলে নিশ্চয় পারবে। শাড়ির ভাজের ভেতর থেকে ব্লাউজ আর পেটিকোট বের করে পরে নিল। ব্লাউজের ফিটিং খারাপ না,তবে তার গায়ের মাপের ও নাহ। গলা টা বেশ বড়,, কাধ বেয়ে নেমে যাচ্ছে। তবুও আঁচল দিয়ে তো ঢেকেই রাখবে এই ভেবে শাড়িটা হাতে নিয়ে পরতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে শাড়ির এক পাশ কোমরে গুঁজলো।
দীর্ঘ বিশ মিনিট সময় ব্যয় করে হাজার বার পরে খুলে অবশেষে শাড়িটা কোন রকমে পরতে স্বার্থক হলো তুরা। খুব একটা ভালো করে পরেনি তবে খারাপ ও লাগছে নাহ। কাধ থেকে আঁচল টা নামিয়ে আঙুলের ভাজে এক এক কুচি করে কাধের উপর রাখল। সব শেষে চুল গুলো আচড়ে নিয়ে কানের দুল পরতে নিলে খট করে দরজার নব মুচড়ানোর শব্দ হলো। আহান ঘরে ঢুকে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে তুরার দিকে এক পলক চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও ধপ করে তাকালো। গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়ি তুরার ফর্সা গায়ে বেশ নজরকাড়া লাগছে, কোমর সমান চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলো আহান,ইদানীং মেয়েটাকে যেন তার চোখে একটু বেশিই সুন্দর লাগে।পরমুহূর্তেই আবার নিজের ভাবনার ইতি টেনে ঘুরে অন্যদিকে পা বাড়াল আহান

-শুনুন?

তুরার ডাকে থেমে তাকায় আহান,তুরা একটু এগিয়ে এসে আহানের সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল

-আমাকে কেমন লাগছে?

তুরার নিকট হতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন শুনে আহান কিছুক্ষণ প্রতিক্রিয়া হীন তাকিয়ে থেকে বরাবরের মতো ছোট শব্দে উত্তর দিল

-যেমন লাগে

এত টুকুই বলে যেন সে প্রসন্ন, আহানের এই স্বভাব টা তুরার ভীষণ অপছন্দ। সবসময়ই এমন ছোট ছোট গোমড়া কথা বলা লাগে, একটু ভালো করে তো দেখলও নাহ। শেষে যদি ক্যাবলাকান্ত সেজে মেহমানের সামনে যাই তো তারই তো প্রেস্টিজ খারাপ হবে, বউ তো তার

-একটু ভালো করে দেখে বলুন নাহ।

ভালো মতো উত্তর না দিলে যে এই মেয়ে চুপ করবে না সেটা বুঝতে পেরে বিরক্তি নিয়ে তাকাল তুরার দিকে, হঠাৎ তুরার পেছনের আয়নায় চোখ যেতেই নজর আটকে গেল আহানের। ঢিলেঢালা ব্লাউজের ফিতা না লাগানোর ফলে পিঠের অর্ধেকাংশই উন্মুক্ত। টকটকে রঙের আবরণে মেদহীন বাকানো পিঠ একদম জ্বলজ্বল করে উঠল আহানের চোখে। দৃষ্টি সরিয়ে নিল তৎক্ষনাৎ
অন্যদিকে ফিরেই বলল

-আ আম,ওইটা ঠিক করো

আহানের এমন আমতাআমতা কথার মানে না বুঝে তুরা বলল

-কি ঠিক করব?

-উফ তুমি আসলেই ইরিটেটিং যেটা পারো না পরতে যাও কেনো

তুরা মুখটা শুকনো করে বলল

-কিন্তু আমিতো ঠিকঠাক ভাবেই পরলাম

-হ্যাঁ তো পেছনের মানচিত্র যে পুরোটাই দেখা যাচ্ছে সেটা ঢাকবে কে

আহানের এমন কথার জন্য তুরা মোটেও প্রস্তুত ছিল না, হাত বাড়িয়ে পিঠের পেছনে হাত দিতেই দেখল বড় গলার ব্লাউজ টার পিঠ বেশিরভাগ ই উন্মুক্ত যার ফলে পিঠ সহ তার ভেতরের অন্তর্বাস টাও স্পষ্ট। তড়িৎ গতিতে ঘুরে দাঁড়ালো তুরা,লজ্জায় তার গাল গরম হয়ে গেলো।
কিন্তু তুরা পিঠ লজ্জা থেকে বাচতে আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেও অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে পিঠ টা আহানের দিকেই করে রেখেছে। আহান ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। এই মেয়ে তাকে পাগল করে ফেলবে! শুকনো ঢক গিলে গলা ভিজিয়ে এগিয়ে এলো। কাঁপা হাতেই তুরার ব্লাউজের ফিতায় হাত দিতে কেঁপে উঠলো তুরা। ঘাড় ঘুরিয়ে আহানের চোখে চেয়ে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মিনমিন করে বলল

-আ আমি পারব,থাক।

-সাট আপ, মুখটা বন্ধ রাখো

বলেই ব্লাউজের ফিতাটা বেধে দিলো। আহানের উষ্ণ গরম শ্বাস আর ঠান্ডা হাতের মৃদু স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে তুরা। পুরুষালি স্পর্শে বারবার তার শরীরে ঝংকার তুলছে,চোখ মুখ খিঁচিয়ে খামচে ধরল পরনের শাড়ি
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৯

বসার ঘরে সোফাতে একসাথে বসে সবাই। ইনসাফের ডান পাশে আমেনা খাতুন, আর বাম পাশে রুবি। মিনু পাশের চেয়ারটাতে বসা। সামনে বসা সফেদ পাঞ্জাবি পরিহিত দুজন মাঝ বয়সী ভদ্রলোক একজন ভদ্রমহিলা। ইসহাক চৌধুরী চায়ের কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে বলল

-আমরা সামনের সপ্তাহেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছি, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে

-না না,আমাদের এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই,আমরাও চাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হোক।

সরল সোজা জবাব ইনসাফ মাহবুব এর,পাশ থেকে আমেনা খাতুন মৃদু কেশে বলল

-আমার দিদিভাইয়ের বিয়ে বলে কথা, সুষ্ঠু ভাবে তো অবশ্যই সম্পন্ন হতে হবে। তবে ইমানের তো খবর পেলাম নাহ। আমরা যতই আলোচনা করি,বিয়েটা তো ওদের দুজনের। ইমান তো এখনো দেশে ফিরেনি

-ও খুব শীঘ্রই ফিরবে খালাম্মা,ওর সাথে প্রতিনিয়ত ই কথা হচ্ছে,,আমরা সব ঠিক করতে করতে ও চলে আসবে

সাবলীলভাবে হাস্যকর মুখে আমেনা খাতুনের কথার জবাব দিলো ইসহাক চৌধুরীর ভাই মারুফ। তার কথায় রুবি খাতুন ও আস্বস্ত হলো। ইমানের দেশে ফেরার ব্যাপার টা নিয়ে সেও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে ছিল।

-সেসব না হয় মানলাম। কিন্তু আমার মামনী টা তো কিছুই বলছে নাহ। এই যে সকলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এতে তোমার কোনো মতামত নেই রাইমা?

রাইমার থুতনি ধরে আদুরে গলায় বলল আজমেরি চৌধুরী। ইসহাক চৌধুরীর সহধর্মিণী আর ইমানের মা। অপরপাশের সোফাতেই রাইমার পাশে বসে তিনি। বড়দের আলাপে এতক্ষণ মাথা নিচু করেই শুনছিল রাইমা। হবু শাশুড়ীর প্রশ্নে মুখ তুলে মৃদু মাথা ঝাকিয়ে বলল

-আপনারা যেমনটা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি তাতেই খুশি আন্টি

রাইমার নরম কণ্ঠের মিষ্টি কথা শুনে আজমেরি চৌধুরী এক হাতের আলিঙ্গনে ধরলেন রাইমাকে। মমতা মিশ্রিত স্বরে বলল

-আমার ঘরের লক্ষীকে বরণ করে নেওয়ার জন্য তো সেই কবে থেকেই আমরা ব্যকুল।শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। এখন সুযোগ টাও পেয়েছি। একটুও দেরি করব না। কি বলেন আপা?

বলেই একদম তার সামনে বরাবর বসা রুবি খাতুনের দিকে তাকালেন। রুবি খাতুন মুখের হাস্যকর রেখা বহমান রেখে সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়িয়ে বলল

-তা তো। মেয়ে তো আমার আপনার ঘরের ই সম্বল এখন। আপনারা নিতে চাইলে কি আর আপত্তি করতে পারি।

-আহান কই ভাই সাহেব? আসার সময় কুশল বিনিময় করে গেল, তারপর ওকে তো আর দেখছি না

ইসহাক চৌধুরীর কথায় রুবি খাতুন আজিমেরির সাথে আলাপচারিতা ভেঙে তার দিকে তাকিয়ে বলল

-এইতো চলে আসবে এক্ষুনি, উপরে গেছে কোনো দরকার ছিল হয়তো

-বউমার মুখ টা তো এখনো দেখার সৌভাগ্য হলো না আপা। আহানের বউ দেখার জন্যেই তো অর্ধেক উৎকণ্ঠা নিয়ে আসলাম আমরা

আজমেরি চৌধুরীর কথায় রুবি সৌজন্য সূলভ হেসে উঠে দাড়ালো,

-আমি দেখে আসছি

বলে পেছনে ফিরে যেতে নিলেও সিড়ির দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। আহান এক হাতে তুরাকে আগলে ধরে সিড়ি বেয়ে নামছে। ভীষণ যত্নসহকারে আগলে রেখে নামছে যেন ব্যথা তুরার না তারই লেগেছে। এক মুহুর্তের জন্য রুবির মনটা প্রশান্ত হয়ে গেল যেন।

-ওই তো আসছে আহান

ইনসাফ মাহবুবের কথায় রুবি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আবারও নিজের জাগায় এসে বসল। আহান আস্তেধীরে তুরাকে নিয়ে এগিয়ে এসে সোফাতে বসিয়ে বাবার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল

-ও তুরা, আহানের স্ত্রী, আসলে আজ সকালে পা মোচকে ব্যাথা পেয়েছে তো তাই আহান ওকেই আনতে গেছিল

ইনসাফ মাহবুব এর কথা শেষেই তুরা সকলের উদ্দেশ্য সালাম দিল। আজমেরি সালামের উত্তর দিয়ে উঠে তুরার পাশে বসল। তুরার গালে হাত রেখে বলল

-মাশা-আল্লাহ!মাশা-আল্লাহ! কি মিষ্টি বউ হয়েছে আহানের৷ একদম পুতুলের মতন সুন্দর

মিশুক স্বভাবের মহিলাটির সমাদরের প্রেক্ষিতে তুরা সামান্য হেসে তাকাল। সকলের সাথে সৌজন্য সূলভ বাক বিনিময় করলে কথার মাঝেই আজমেরি তার ব্যাগ থেকে একটা নীল মখমলি কাপড়ে মোড়া বর্গাকৃতির বক্স বের করল। কোলের উপর রাখা তুরার হাতে বক্স টা রেখে বলল

-আন্টির তরফ থেকে ছোট্ট উপহার

-এসবের কি দরকার ছিল আন্টি

তুরাকে থামিয়ে দিয়ে আজেমেরি বললেন

-অবশ্যই দরকার ছিল। রাইমা তো আমাদের ই মেয়ে,তাই আহান ও তো ছেলেই হয়। ছেলে বউকে দেখে উপহার দেব না? আর এটা তো দোয়া আমাদের তরফ থেকে তোমার জন্য

প্রত্যুত্তরে তুরা আবারও স্মিত হাসলো। ফর্সা গালদুটো প্রসারিত করে বলল

-এই তো বললেন আমি আপনার ছেলে বউ। তাইলে তো আপনিও আমার আরেক মা ই হলেন তাই না,,আর মা কে কি কখনো উপহার দিয়ে তার সন্তানের জন্য দোয়া করতে হয়? মা তো মা ই। মা দুটো হেসে কথা বলাও তো দোয়া

তুরার মিষ্টিসুলভ কথায় উপস্থিত সকলের ভালো লাগল। এতটুকু মেয়ে,অথচ কত সুন্দর কথা বলে দিলো

-বাহ,এত মিষ্টি বউটা কোত্থেকে আনলেন ভাই সাহেব। যেমন চেহারা তেমনি সুন্দর ব্যবহার। আহানের পাশে একদম রাজজোটক। দুজনকে খুব মানিয়েছে

আজমেরি চৌধুরীর কথায় ইসহাকের ভাই মারুফ ও বলল

-তা আহান, কেমন যায় সংসার জীবন। তোমার বউ ও তোমার মতই বুঝদার। আশা করি দুজনে মিলেমিশে সুখে থাকবে

-তা বইকি। থাকবেই তো। আহান তো বউয়ের বেশ খেয়াল রাখে দেখলাম। কত সুন্দর যত্ন করে তুরাকে ধরে আনলো। আল্লাহ তোমাদের সুখে রাখুক বাবা

আজমেরি চৌধুরীর প্রশংসার উত্তরে আহান সৌজন্যমূলক হেসে ছোট ধন্যবাদ দিয়ে তার স্বভাব সুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ জানান দিল। আহানের স্বল্পভাষী স্বভাবের ব্যাপারে সবাই ই অবগত। তাই সেসবে আর মাথা না দিয়ে বিয়ে সম্পর্কিত আলোচনা নিয়ে আবার কথা বলতে নিল। সবার হাসিখুশী আমেজের ভেতরেও রাইমার ভেতরটা মন খারাপে বি’ষিয়ে গেল। মানুষটা আসল না এখনো?তার বাড়ির লোক বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে এসে গেছে অথচ তার দেশে ফেরার ই নাম নেই। দু বছর পার হয়েছে তাদের মাঝে দূরত্বের, রাইমার আর সহ্য হয়না এ ব্যবধান। ভালোবাসার মানুষটার অনুপস্থিতি তাকে প্রতিনিয়ত বিরহ বেদনায় ভুগায়, ব্যথিত হয় মন মন্দির,প্রিয় মানুষটার অপেক্ষায়।তবুও যেন দূরত্বের অবসান নেই

••••••••

বাড়ির মেহমান ফিরতে বিকেল গড়িয়েছে। আহানের কিছু কাজ থাকাই সে বাইরে গেছিল। সেখান থেকে ফিরতে রাত বেশ হয়েছে। এসেই মিনু খাবার জন্য জোরাজোরি করতে সে বাধ্য হয়েই ঘরে না এসে নিচ থেকে রাতের খাবার সেরে একবারে উপরে উঠে আসলো। হাত ঘড়িটায় চোখ বুলিয়ে দেখলো রাত সাড়ে দশটা। তুরা নিচে ছিলনা। মা বলল তার নাকি পায়ের মধ্যে ব্যাথা করাই সন্ধ্যা থেকেই ঘরে শুয়ে,রাতের খাবারও পরেনি পেটে। কি করছে কে যানে!
ঘরের সামনে এসে সাবধানি হাতে দরজার নব মুচড়ে ঢুকলো ঘরে। বিছানায় এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে তুরা। পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেল আহান তুরার দিকে। বালিশ থেকে মাথা সরিয়ে ঘাড় কাত করে শুয়ে আছে মেয়েটা। এই মেয়েটা এত এলোমেলো কিভাবে ঘুমাই আহান বোঝেনা। আহান ঠিক যতটাই ছিমছাম স্বভাবের, তুরা ঠিক ততটাই অগোছালো অপক্ক স্বভাবের,দুটো দুই মেরুর মানুষ কি করে এক বন্ধনে আবদ্ধ হলো আহান এখনও বুঝে পাইনা। হাত বাড়িয়ে ড্রয়ার থেকে স্প্রে টা বের করে তুরার পায়ে লাগালো। মেয়েটা যত বেপরোয়া নিশ্চয় ব্যাথার ওষুধ লাগাইনি। তাই পায়ের ব্যাথাটা আবারও বেড়েছে। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল আহান। তুরার দিকে এক পলক চেয়ে আলমারি থেকে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। মিনিট কয়েক ব্যয় করে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বেরোলো। আজ সারাদিন যে নিজ কাজে সময় দিতে পারেনি। সকালে তুরার জন্য আর দুপুরে মেহমান আসায়। বেড সাইড টেবিল থেকে ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে সোফাতে গিয়ে বসল। সাটার তুলে জ্বলজ্বল করা স্ক্রিনে তাকিয়ে আঙুলের চালনায় খটখট শব্দ করে নিজ কাজে মনোযোগ দিল।
বেশ ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে ক্লাসের কয়েকটি প্রজেক্ট তৈরি করে ঘাড় পিঠ কেমন টাস ধরল আহানের। স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সোফাতে গা এলিয়ে দিল। এই মুহুর্তে একটা কফির ভীষণ দরকার। অন্যদিন তো তুরাই এসে এই সময়ে কফি দিয়ে যায় বলে তাকে আর কষ্ট করে বানাতে হয়না।
হুট করে কি মনে হতে ঘাত মৃদু কাত করে তুরার দিকে তাকালো আহান,,কয়েক মুহুর্ত এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ধপ করে উঠে বসল। ভীষণ অদ্ভুত অনুভূত হচ্ছে আহানের! তুরা বিছানায় এলোমেলো ভাবে ঘুমে বুদ। এক হাত মাথার কাছে আরেক হাত টান করে রেখেছে। পেটের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে মেদহীন ফর্সা উদরের অর্ধেকাংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে, এক পায়ের উপর থেকে শাড়ি সরে প্রায় হাটু অবদি স্পষ্ট দৃশ্যমান। পা থেকে মাথা অব্দি অবলোকন করল আহান, এবার নিজেকে কেমন বেপরোয়া লাগছে তার, এমন অনুভূতি নিতান্তই নতুন তার নিকট। সামনেই শুয়ে থাকা রমণীর এমন অবাধ স্বরূপে হুট করে কেমন ঘোর লেগে আসলো । বার বার চেষ্টা করেও চোখ ফেরাতে পারল না আহান। তার মাথায় অবাধ্য এক অনুভূতির প্রখরতা ছেয়ে গেল। শুকনো ঢকে গলা ভিজিয়ে উঠে দাঁড়াল।এক পা দু পা করে এগিয়ে আসল তুরার কাছে, এগিয়ে এসে একদম তুরার গা ঘেঁষে দাঁড়াল।
ঘড়ির এ্যালার্মে রাতের ঠিক বারোটার সময় জানান দিলো। মধ্য নিশুতি রাতের নিস্তব্ধতায় তুরার ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ার ফোস ফোস শব্দই বিরতিহীন ভাবে বেজে চলেছে আহানের কানে। আবার চোখ বুলালো তুরার শরীরে। বুক থেকে আঁচল টা সরে গেছে নিঃশ্বাসের সাথে কণ্ঠনালির উঠানামা দেখে আহানের কেন যানি ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। অর্ধ উন্মুক্ত পেটের কম্পন মাত্রা ছাড়িয়ে আহানের সারা বদনে তড়তড় করে নিষিদ্ধ অনুভূতির জোয়ার বইয়ে দিলো। ফট করে চোখ বন্ধ করে নিলো আহান। সে কিছুতেই এমন চিন্তাভাবনা আনতে পারেনা। এ ভুল,চরম ভুল! শরীর ঘুরিয়ে ফিরে দাড়ালো, এ দৃশ্য আর এক মুহূর্তও সে অবলোকন কর‍তে চাইনা। এগিয়ে গিয়ে লাইট বন্ধ করে ডিম লাইট জ্বেলে দিয়ে এসে সটান হয়ে শুয়ে পরল। তবুও না চাইতেও অবাধ্য দৃষ্টি আবারও চলে গেলো তুরার দিকে। মাঝখানের দূরত্ব কমিয়ে এগিয়ে গেলো তুরার কাছে। এক হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে তুরার পায়ের কাছের কাপড় ঠিক করে দিল। হাতটা পা থেকে এনে বুকের আঁচল ঠিক করার জন্য ধরতেই তুরা টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকাল।
শরীরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে তুরার ঘুম ছুটে গেলে চোখ খুলে তাকাতেই নিজের খুব কাছে আবিষ্কার করল আহানকে,যার এক হাত তার বুকের উপর স্থির। অজানা আতংকে অভিভূত হলো তুরা,,আকস্মিক ভয়ে চেঁচাতে নিলেই আহান তার হাত বুক থেকে তুলে তুরার ঠোঁট চেপে ধরল, ভয়ে আতকে ঘনঘন শ্বাস ফেলে বারবার চোখের পলক ফেলল তুরা
আহান তুরার মুখের উপর মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল

-হুসস,ভয় পেয়ো না। আমি শুধু আঁচলটা ঠিক করছিলাম,আর কিছুই না

তুরার বুকের ভেতরের ঢিপঢিপ শব্দ তার নিজ কান অব্দিও স্পষ্ট বাজছে। পুরুষালির স্পর্শের উপস্থিতি এত কাছ থেকে পেয়ে সারা বদনে তার শিহরণ ধরেছে,কথার সাথে আছড়ে পরা আহানের গরম প্রশ্বাস তুরার এলোমেলো অনুভূতির প্রগাঢ়তা বাড়িয়ে স্নায়ুতন্ত্রের তাড়না বাড়িয়ে দিল। কাঁপা কাঁপা হাত উঠিয়ে খামচে ধরল ঠোঁটের উপর রাখা আহানের হাত।
চিকন নরম হাতটার স্পর্শে কেঁপে উঠল আহানের বক্ষস্থল, তুরার হাতের উত্তপ্ততা যেন চামড়া ভেদ করে ভেতরে বিধল আহানের হাতে।
এত গরম কেনো মেয়েটার হাত? জ্বর এসেছে? তুরার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে কপালে রাখল আহান। নাহ,জ্বর তো নেই? তবে এত কেনো গরম মেয়েটার হাত?

-ঠিক আছো?

নরম সুরে বলা আহানের প্রশ্নে তুরা অপলক চেয়ে ভীষণ আস্তে করে বলল

-হু

-পায়ের ব্যাথা কমেছে?

-হু

আবারও একই স্বরে উত্তর দিল তুরা,আহান কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুরা মিনমিনিয়ে বলল

-আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন

-বাইরে একটু কাজ ছিল

-কেনো দেরি করলেন এত?

ভীষণ অভিমানী স্বরে বলল তুরা,,আহানের একদম অন্যরকম লাগল তুরাকে,এভাবে আদুরে স্বরে আগে বলেনি তুরা। হুট করে আহানের শরীরে ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে গেলো। হালকা রঙের ডিম লাইটের আলোয় তুরার জ্বলজ্বল করা চোখের দিকে চাইল আহান। অপলক দৃষ্টি স্থির তার দিকেই, শো করে নিঃশ্বাস টেনে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো, তুরা এখনো স্থির তার দিকে তাকিয়ে, যে চাহনিতে নেই আগের মত অপ্রস্তুততা,বা ভয়।
আহান যেনো নিজের ভেতরের ডানা ঝাপটানো অনুভূতির প্রতিফলন স্পষ্ট দেখল তুরার চোখে, চোখ থেকে দৃষ্টি নামিয়ে আনলো ঠোঁট পর্যন্ত, বুকের বা পাশের ছন্দময় ক্রীয়াটাও যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেলো, লালাভ পাতলা ঠোঁটের বিরামহীনভাবে কম্পন আহানের ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো,,গলা থেকে বুক অবদি শুকিয়ে কাঠ হলো অজানা তেষ্টার চোটে। সরে আসতে নিলেও কোনো অদৃশ্য টান যেন ধরে রাখছে, না দৃষ্টি না সে নিজে কিছুতেই সরতে পারছে নাহ। মন্থর গতীতে একটু একটু করে এগিয়ে নিলো মুখ। একে অপরের নিঃশ্বাসের প্রবল উচ্ছ্বাস আছড়ে পরছে দুজনের মুখে। আহান নিজের মধ্যে নেই আর নাইবা আছে তুরা,,এগিয়ে আসতে আসতে মাঝের দূরত্ব একেবারে ঘুচে গেলো দুজনের নাক ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই,,তুরা নিজের অসম্ভব কম্পন ধরা হাত তুলে আহানের বুকের কাছের টি-শার্ট খামচে ধরল। এমন অসংলগ্ন মুহুর্তে তুরার এই অস্থির স্পর্শ যেনো চুম্বকের মতো আকর্ষণ ধরালো আহানের সারা বদনে! দু চোখ সয়ংক্রীয়ভাবে বুজে এলো, পুরু অধরযুগল ছুঁয়ে দিল তুরার ওষ্ঠ, না চাইতেও অজান্তে দুটো মনের প্রখর উন্মাদনা ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আলিঙ্গন করল। বেসামাল, বেহুশ, বেপরোয়া হয়েই মিশে গেলো দুজনের অধর, পুরুষালি ঠোঁটের চটচটে চুমুতে শুষে নিলো তুরার অধরামৃত
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥