তুমি আমি দুজনে পর্ব-৩৭+৩৮

0
712

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব: ৩৭-৩৮

-লোকটা দিনদিন চূড়ান্ত পর্যায়ে অসভ্য হচ্ছে, ছি ছিহ কথা শুনলে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। আগে তো জল্লাদ ছিলই এখন নির্লজ্জ অসভ্যও হয়েছে এর থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততটাই ভালো

-তুরা, কই ছিলি চল এদিকটাতে যাই

আহানের থেকে ছাড়িয়ে এদিকটাতে সরে এসেছিল তুরা,আপন মনেই বিড়বিড় করতে করতে এগোচ্ছিল তখন রাইমা এসে তুরার হাত ধরে বলল। তুরা ভ্রুকুটি করে রাইমাকে বলল

-তুমিই তো আমাকে উপরে এনে কোথায় উধাও হয়ে গেলে, আমিতো এখানেই ছিলাম।

-সরি রে,আসলে আমার ননদের শ্বশুড়বাড়ি থেকে লোক এসেছিল ওদের সাথে কথা বলার জন্যেই ইমান ডেকেছিল। বুঝিস ই তো!

বলেই তুরাকে নিয়ে এগোলো সামনের দিকে। বিশাল বড় ছাদটার একপাশে সুইমিংপুল, তাতে হরেক রকমের বাতি জ্বালানো, আরেকপ্রান্তে ছোট খাটো একটা বার, অল্পবয়সী অনেক গুলো ছেলেমেয়েরা বসে ড্রিংকস করছে, তুরা একটু ভেতরে আসতেই উপস্থিত অনেকজনের নজর কাড়লো। তুরা ওদের এমন নজরে বেশ অস্বস্তি বোধ করলো, কাচুমাচু মুখ করে রাইমাকে বলল

-ওরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছে কেনো আপু?

-তোকে এতো সুন্দর লাগছে যে তাকাবে তো বটেই। দেখিস আমার ভাইয়ের কপাল টা পু’ড়াস নাহ

বলেই হেসে উঠলো, তুরাকে নিয়ে রাইমা ভেতরে অনেকগুলো ছেলেমেয়েদের মাঝখানে পরিচয় করিয়ে দিলো। সকলে অনেক খোলামেলা মানসিকতার বেশ,তুরার সাথে সহজেই মিশে গেলো। এক পর্যায়ে লাইটিং সিস্টেম চেঞ্জ হয়ে মিউজিক আরও লাউড হলে সকলে মিলে কাপল ডান্স শুরু করলো।
তুরার একবার আহানের কথা মনে পরতেই এদিক ওদিক তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলো। পরক্ষণেই ভাবল,তার কপালে তো জুটেছে একটা আনরোমান্টিক ব’জ্জাত লোক।
তুরা অত লোকজনের মাঝ থেকে বেরিয়ে এসে পুলের পাশে দাঁড়াল। গলাটাও শুকিয়ে গেছে। আশেপাশে তাকাতেই দেখল বারের সামনে একটা চেয়ারে আহান বসে গ্লাস হাতে।
তুরা সেদিকে এগোতে নিলেই হুট করে একটা ছেলে এসে দাঁড়াল সামনে

-হেই, লেটস ডান্স?

বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো তুরার সামনে,এরকম ফালতু ছেলে একদম ভাল্লাগে না তুরার এমনিতেই ভালো লাগছে না। কোত্থেকে এসে জুড়ে বসল হ্যাংলাদের মতো, তুরা শক্ত গলায় বলল

-আমি পারিনা ডান্স

-নো প্রবলেম আমি শিখিয়ে দেবো

তুরার ইচ্ছে হলো সুইমিংপুলে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে বদমাশ টাকে,কিন্তু তুরা কিছু বলার আগেই একটা হাত দৃঢ় ভাবে আটকে ধরল তুরার কোমর। চোখ তুলে তাকাতেই আহানকে নিজের খুব কাছে আবিষ্কার করল, এক হাত তুরার কোমরে রেখে শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে সামনের ছেলেটির দিকে, আহানের এরূপ দৃষ্টিতে তুরা খানিকটা ভড়কে গেলো।

-হাউ ডেয়ার ইউ!

ভীষণ চড়াও গলায় বলল আহান, লাউড মিউসিক চলায় কেও আহানের গলা শুনতে না পেলেও সামনে দাঁড়ানো ছেলেটি ভড়কে গেলো, তুরা ভীতু দৃষ্টিতে তাকালো আহানের দিকে, এই লোক কখন রেগে যায় বলা মুশকিল, কি দিয়ে কি করবে নিজেও জানে নাহ। আহান ছেলেটার দিকে এগোতে নিলেই তুরা দুহাত দিয়ে আহানের বাহু চেপে ধরে আটকে দিলো। বারবার মাথা ঝাকিয়ে না বোধক অনুরোধ করল, এত লোকজনের মাঝে কোনো প্রকার সিন ক্রিয়েট চাইনা তুরা। আহান তুরার অনুরোধ অগ্রাহ্য করে আবারও এগোতে নিলে তুরা আহানের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে

-হোয়াট দ্যা হেল, ছাড়ো আমাকে। ডান্স আজ আমি ওকে শেখাব, হাউ ডেয়ার হি!!

রাগে ফুসতে ফুসতে আহান বলল দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে। তুরা আহানের কথা না শুনে টেনে বারের সামনে এনে দাঁড় করালো

-আমাকে টেনে আনলে কেনো তুমি, ওকে আজ দেখাতাম মেয়েদের সাথে বেয়াদবি করার ফল

-থামুন,ভুলে যাবেন না এটা আপুর শ্বশুড়বাড়ি, এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট হলে আপুর উপরে কেমন প্রভাব পরবে ভাবতে পারছেন?ওসব যা বলার বলুক। আপনি শান্ত হোন!

তুরার কথা যথাযথ যুক্তিযুক্ত,ব্যাপার টা উপলব্ধি করতে পেরেও মেজাজ টা সামাল দিতে পারছে না যেনো, শক্ত চোখে তাকাল তুরার দিকে, সাহস কি করে হলো ছেলেটার ওর বউকে এসব বলার! তবুও পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে শান্ত করল আহান। এদিকটাতে কেও নেই আপাতত, সবাই পুলের ওই সাইডে ডান্স করাতে ব্যস্ত।
আহান ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চেয়ার টাতে বসল। কপাল বেয়ে মৃদু ঘামের বিন্দু কণা গুলো টপকে পরছে। তুরা সেটা লক্ষ্য করে সামনের টিস্যুবক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে আহানের সামনে দাঁড়াল। আলতো স্পর্শে আহানের কপাল থেকে গলা পর্যন্ত বয়ে পরা ঘাম মুছিয়ে দিলো। আহান অপলক চেয়ে আছে তুরার দিকে, এক পর্যায়ে কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো তুরাকে। আহানের মুখটা একদম তুরার পেটের কাছাকাছি হওয়ায় ঝড়ের বেগে টানা উষ্ণ শ্বাস গুলো আছড়ে পরে শুলের মতো বিঁধে যাচ্ছে তুরার জামা ভেদ করে।
আলতো হাতে সরানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হলো তুরা, ঠোঁট ভিজিয়ে ধিমি স্বরে বলল

-আ..আমার পিপাসা পেয়েছে!

-আমারও

আরেকটু দূরত্ব ঘুচিয়ে বলল আহান। চোখে মুখে কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি৷ এলোমেলো অবস্থা তুরার,কিন্তু আহান তখনও নির্লিপ্ত, স্থির। তুরার এমন অস্থিরতা দেখে বেশ মজাই লাগছে আহানের। আবারও কিছু বলতে যাবে তখনই বিকট শব্দে ফোন ভেজে উঠল, হাতের বন্ধন সামান্য আলগা হলেই ছিটকে সরে গেলো তুরা। আহান ফোন কানে ধরে দুই তিনবার হ্যালো হ্যালো বললেও নেটওয়ার্ক এর ভীষণ সমস্যা করছিল বলে ফোন নিয়ে পেছনের দিকে গেলো।

তুরা ঘুরে ঘুরে বারটা দেখতে লাগল, পিপাসা পেয়েছে খুব,বারের লোকটাওএখানে নেই কিছুক্ষণ আগেই তো ছিল কোথায় গেছে কে জানে! সারি সারি কাঁচের বোতল গুলো সাজানো, দেখে তুরার ভীষণ খেতে ইচ্ছে হলো। ভেতরে লাল জাতীয় পানিয়ের একটা বোতল হাতে তুলে নিলো উপরে লিখা ‘গ্রেপ জুস’।

-গ্রেপ জুস? এটা আবার কেমন হয় খেতে!

নিজে নিজেই বলল তুরা, আহান ফোন নিয়ে গেলো এখনো ফেরার নাম নেই। আগামাথা না ভেবে তুরা বোতলের মুখ খুলে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল অনেকটা। চোখ মুখ কুচকে এলো, কেমন জেনো টেস্ট এটার, আগে তো খাইনি এমন। কিন্তু খেতে ভালই লাগলো, আবারও ঢকঢক করে খেয়ে এবার অর্ধেক বোতল টাই শেষ করে ফেলল তুরা।
আহান ফোনে কথা বলে ফেরার সময়ই ইমানের সাথে দেখা হলে ওর কিছু বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো ইমান। আহান সকলের সাথে সৌজন্য সূচক কথা বলে আসতে আসতে অনেকটা সময় লেগে গেলো। বারে এসে তুরাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ভ্রু জড়ো হলো। এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরাতেই পুলের দিকে চোখ যেতেই হতবিহ্বল হয়ে গেলো, তুরা পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে নাচাচ্ছে, আর হাত তালি দিচ্ছে। এক ছুটে সেখানটাই গেলো

-এখানে কি করছো তুমি? ওঠো এখান থেকে

বিনিময়ে তুরা হিহি করে হেসে উঠলো, আহান চোখ গরম করে বলল

-হাসছো কেনো ষ্টুপিড, ওঠ এখান থেকে

ধমকে বললেও তুরা কান দিলো না,পা নাচাতে নাচাতেই আবারও খিলখিলিয়ে বলল

-এমন করছেন কেনো স্বামী। এখানে এভাবে পা ডুবিয়ে থাকতে খুউউব ভাল্লাগছে। আসুন আসুন আপনিও বসুন।

বলেই আহানের হাত ধরে টান দিয়ে পাশে বসালো। আহান বিব্রতকর চেহারা করে আশেপাশে চোখ বুলালো। ভাগ্যিস লাইট গুলো বন্ধ করে টিমটিমে আলো জালিয়েছে,সবাই নাচতে মগ্ন থাকায় তুরার এসব কার্যক্রম কেও খেয়াল করেনি।

-এসব কি শুরু করেছো তুমি ইডিয়ট! কেও দেখলে নির্ঘাত পাগল ভাববে

চাপা স্বরে ধমকে বলল আহান,তুরা রসগোল্লার মতো গোলগোল চোখ করে আহানের দিকে তাকিয়ে বলল

-আমাকে বকছেন কেনো স্বামী, আপনার সাথে কোনো কথা বলব না আমি, আমি আঙ্গুরের জুস খাবো

-হোয়াট! আঙ্গুরের জুস মানে

-মানে এইটা! গ্রেপ জুস। খুউউব ইয়াম্মিইই!!

বলেই খিলখিল করে উঠলো তুরা, তুরার হাতের বোতলটা দেখে আহানের চোয়াল আলগা হয়ে গেলো, সর্বনাশ!! এবার হয়েছে! এই মেয়ে এটা খেলো কিভাবে!

-তুমি এটা কেনো খেয়েছ? কোথাই পেলে তুমি এটা

প্রত্যুত্তর না করে তুরা উঠে দাঁড়িয়ে আহানের হাত ধরে টানতে টানতে বলল

-চুপ করুন,উঠুন, চলুন না আমরাও নাচি

-তুরা স্টপ ইট,কি যা তা শুরু করেছ?

তবুও তুরার থামাথামির নাম নেই, আহানের হাত ধরে টানতেই আছে। আহান পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে তুরাকে টেনে কোলে তুলে নিলো।

-কি করছেন, ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন। আমি নাচতে চাই

বলেই হাত পা ছোড়াছুড়ি করা শুরু করলো, আহান তুরাকে শক্ত করে চেপে ধরে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগল। উপর থেকে নিচে বসার ঘরে তাকিয়ে দেখল আপাতত বসার ঘরটা ফাঁকা এই সুযোগ! এখনই এইটাকে নিয়ে নামতে হবে না তো লোক সম্মুখে তুরার এমন পাগলামি আর কোলে নেওয়া দেখলে মান সম্মান সব যাবে
চুপচাপ সিড়ি বেয়ে নেমে বেরোতে গেলে তুরা চেঁচিয়ে উঠে বলল

-এই আপনি এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?? আমি নাচতে চাই ছাড়ুনন!!

-ফর গড সেইক চুপ করো তুরা,এই অবস্থায় কেও দেখলে আমার প্রেসটিজের ফালুদা হবে

-কেনো চুপ করব। আপনি এভাবে আমাকে চুরি করে কোথায় পালাচ্ছেন বলুন। আপনি আমাকে বিক্রি করে দিবেন না তো? আমি বিক্রি হতে চাইনা আমাকে দয়া করে সন্ত্রা’সীদের হাতে তুলে দেবেন নাহ। আমি আর টুনিকে দিয়ে আপনাকে জালাবো না

বলেই ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে দিলো তুরা। আহান পরল মহা ফ্যাসাদে। এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার, কেনো যে এই বলদ টাকে একা রেখে অন্যদিকে গেলো। দ্রুত পায়ে তুরাকে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে ওকে বসিয়ে নিজে উঠে বসতে বসতে রাইমাকে ফোন করে বলল হঠাৎ আর্জেন্ট কোনো কাজ পরে যাওয়ায় সে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাইমা কিছু বলতে নিলেও আহান খট করে লাইনচ্যুত করল কল। আপাতত কিছু বলার মতো সময় নেই। গাড়িতে উঠে চালানো শুরু করলেই তুরার আবল তাবল বকা আবারও শুরু হলো

-শুনুন, আপনি অনেক জল্লাদ আর ব’জ্জাত। এরও এতখানি গোমড়ামুখো

বলে হাত ছড়িয়ে দেখালো। আহান সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে গাড়ি চালাতে লাগল। এবার তুরা ক্ষিপ্ত স্বরে বলল

-কি হলো কথা বলছেন না কেনো। ধন্যবাদ বলুন

-ধন্যবাদ কেনো বলব আজব

-কেনো বলবেন না।আমি আপনার প্রসংশা করলাম আর আপনি ভাব দেখিয়ে চুপ করে আছেন, শিগগিরী ধন্যবাদ বলুন আমাকে

আহানের রীতিমতো নিজেকেই পাগল মনে হচ্ছে, একেই তো এই মেয়ের মাথার তার দুটো ছেড়া আছে তার উপর খেয়েছে ছাই পাশ।

-এসব আমি বলতে পারব না,আর তুমি হাত ধরে টানা বন্ধ করো,গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করবে!!

খিটমিট করে বলল আহান।তুরা গাড়িটাও চালাতে দিচ্ছে না ওকে,গায়ের ভেতর সরে এসে হাত ধরে টানাটানি করছে

-কেনো পারবেন নাহ বলুন। আপনি কি পাতাল থেকে এসেছেন। আপনি কি বনমানুষ? শিগগিরী বলুন আজ আপনার মুখ থেকে ধন্যবাদ না বের করতে পারলে আমিও মিসেস.উগান্ডা নাহ

গাড়িটা এসে থামল বাড়ির সামনে। এতক্ষণে আহানের পাগল প্রায় অবস্থা, তুরা সারা রাস্তা তাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, শেষ পর্যন্ত আহানের ধৈর্য ভাংলে বেশ জোরে সোরে ধমক দিলে তখন থেকে আবার কান্না শুরু করেছে কিন্তু সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তুরার দিকের দরজা খুলে দাঁড়াল আহান

-বের হও

গাল ফুলিয়ে বসে আছে তুরা, একটু পরপর কাঁদছে আর আহানের দিকে ছলছল নয়নে তাকাচ্ছে। এক পর্যায়ে এসে আহানের ভীষণ হাসি পেলো। একদম পাগল বাচ্চার মতো করছে মেয়েটা,তবুও উপরে কঠোরতা বজায় রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলল

-বের হতে বলেছি তোমাকে?

আহানের শক্ত গলায় তুরা মুখ খানা চুপসে বলল

-আমি দাঁড়াতে পারছি না

-কেনো

-আমার পা হারিয়ে গেছে

-তোমার পা জায়গা মতই আছে, তাড়াতাড়ি নামো নাতো এই অন্ধকারে তোমাকে একা ফেলেই আমি বাড়ি চলে যাবো কিন্তু

এ পর্যায়ে এসে তুরা চোখ মুখে অসহায়ত্ব এনে বলল

-সত্যি বলছি বিশ্বাস করুন,আমার পা হারিয়ে গেছে। আমি কিছু অনুভব করতে পারছি নাহ

আহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে নির্জীব হয়ে তাকালো তুরার পানে। আজ তাকে জ্বালিয়ে মারবে এই মেয়ে,কোন দুঃখে তাকে নিয়ে গেলো সে।
তুরাকে কোলে তুলে হাটা ধরল বাড়ির ভেতর। বাড়ির ভেতরটা অন্ধকার, মা আর দিদুন হয়তো ঘুমিয়ে গেছে, মনে মনে হাজার শুকরিয়া করল আহান, না তো আজ এই মেয়ের জন্য তার ইজ্জতভ্রষ্ট হতো সবার সামনে।
ঘরের ভেতর ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দিলো তুরাকে। কিন্তু তুরা এখনো আহানের গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরেই রেখেছে

-কি হলো ছাড়ো?

-না!

-ছাড়ো ফ্রেশ হবো আমি

-ছাড়ব না,ছেড়ে দিলেই তো দূরে চলে যাবেন। একটু থাকুন নাহ প্লিজ

ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস টেনে নিলো আহান, ভীষণ নরম কণ্ঠে বলল

-আমি ঘেমে গেছি তুরা, একটু ছাড়ো প্লিজ

কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে আহানের গলা থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো। আহান উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের কালো রঙের ব্লেজার টা খুলে রাখল। গলার দিকের দুটো বোতাম খুলে হাতা গুটিয়ে নিলো। হাতঘড়িটা খুলতে খুলতে তুরার দিকে তাকালেই দেখল তুরা কাত করে শুয়ে মাথায় নিচে হাত দিয়ে তার দিকেই চেয়ে আছে অপলক।
চোখ মুখ চিকচিক করছে,মুখশ্রী জুড়ে লালাভ আভায় ছড়ানো। গা থেকে ওড়না টা পরে গেছে। কালো রঙের জামাটার হাতা গলা বেয়ে নেমে আছে, বুকের অর্ধেকাংশ প্রায় উন্মুক্ত। একভাবে ঘোর লাগা চাহনিতে তাকিয়ে আছে আহানের দিকেই।শার্টের হাতা গুটিয়ে তুরার কাছে গিয়ে ওকে তুলে বসিয়ে বলল

-ড্রেস চেঞ্জ করে নাও তুরা, এটা পরে থাকলে ঘুম আসবে না

তাও নড়চড় করল না তুরা, আহানের বুকের সাথে হেলান দিয়ে রইল। আহান তুরাকে আবারও শুইয়ে দিতে গেলেও ঠাঁই বসে রইল। আহান এক হাত এগিয়ে এসিটার পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো। তুরা চুপচাপ আহানের বুকে হেলান দিয়ে এক আঙুল দিয়ে ওর বুকে আঁকিবুঁকি করছে।

-তুমি কি সারারাত এভাবেই বসে থাকবে তুরা?

তুরা আহানের আরও কাছে সরে এসে ওর দিকে তাকিয়ে বলল

-আমাকে একটু কোলে নিন না?

-আমার কোলে উঠেই তো আসলে তাও মন ভরেনি?

-উহু,আমাকে আবারও কোলে নিন

বলেই হুড়মুড়িয়ে আহানের কোলে উঠে বসে গলা জড়িয়ে ধরল। তপ্ত শ্বাস ফেলল আহান। মেয়েটা ক্রমাগত তাকে বেসামাল করে দিচ্ছে। জড়িয়ে ধরে আহানের কাঁধে মাথা রাখায় তুরার উষ্ণ গরম শ্বাস আহানের ঘাড়ে আছড়ে পরে শিউরে দিচ্ছে সারা শরীর। বার দুয়েক সরাতে গেলেও তুরা ঝাপটে ধরেই রইল। বোকা বোকা মুখ করে বলল

-আমাকে সবসময় সরিয়ে কেনো দেন,আমি কি এতই খারাপ?

আহান চোখ ছোট করে তাকাল তুরার দিকে। তুরা আহানের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আবৃত গালটাতে ওর নরম আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলল

-আমাকে কেনো ভালোবাসেন না মাস্টার মশাই, আমি কি খুব খারাপ? একটু খানি ভালোবাসা যায়না? আপনার থেকে দূরে থাকতে আমার একদম ভাল্লাগে না জানেন। আপনি কবে আমায় ভালোবাসবেন, বলুন না স্বামী বলুন না বলুন না!

বলেই আহানের কলার ধরে ঝাকালো। তুরা, তুরার শরীর, মুখ নাক চোখ সবটাই আহানের ভীষণ কাছে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে অন্যদিকে চাইল, ঢক গিলার সাথে কণ্ঠনালির অ্যাডাম আপেলের উঠানামা টা স্পষ্ট চোখে বাধলো তুরার। চিকন আঙুলের স্পর্শে আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিলে চোখ বন্ধ করে ফেলল আহান,খামচে ধরল তুরার পরনের জামা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে ধাতস্ত করার অদম্য প্রচেষ্টা করে তুরাকে ছাড়িয়ে ধরা গলায় বলল

-ঘুমাও তুরা

তুরা ফট করে আহানের কোল থেকে উঠে দাঁড়ালো, আহান প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দিয়ে তাকাতেই তুরা বলল

-আমি নাচবো। গান ছাড়ুন আমি নাচব

-কি করছ তুরা পরে যাবে, বসো

আহানের কথায় কান না দিয়ে খাটের এক কোণায় গিয়ে লাফাতে লাগল তুরা। আহান উপায় না পেয়ে কোমর জড়িয়ে তুরাকে চেপে ধরে নামিয়ে কোলের উপর বসিয়ে বলল

-আরেকবার লাফালাফি করলে ঠ্যাং খোরা করে দেবো

আহানের ধমকে তুরা রাগে গাল ফুলালো। আহানকে খামচে ওর থুতনিতে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলো। ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ফেলল আহান, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করে নিলো দাঁতের তীক্ষ্ণ কামড়ের যন্ত্রণা।
তুরা গোলগোল চোখ করে আহানের দিকে তাকিয়ে বলল

-খুব লেগেছে?

-হু

-সরি

-এটার শোধ আমি তুলব তুরা রাণী, তোলা থাকল।

আগামাথা কিছুই বুঝল না তুরা। আহান এবার তুরাকে চিত করে শুইয়ে দিলো বিছানায়, আবারও উঠতে গেলেই চোখ রাঙিয়ে থামিয়ে দিলো, কম্বল টেনে গায়ের উপর দিয়ে বলল

-চুপচাপ ঘুমাও।আরেকটা শব্দ করলে তোমাকে বাইরে অন্ধকার বারান্দায় আটকে রাখব

তুরাও ভয়ে ভয়ে শান্ত হয়ে শুয়ে রইল,আহান উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে তুরার পাশে শুতেই তুরা এক হাত আর এক পা আহানের গায়ের উপর তুলে ওর বুকে মাথা রাখলো।

-কি করছ তুরা,সরে যাও

-নাহহ,আমাকে ভূত নিয়ে যাবে। আমাকে ধরে রাখুন স্বামী

নিঃশব্দে হেসে উঠলো আহান, এক হাত দিয়ে আগলে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো তুরার। তুরাও আর কোনো পাগলামি না করে আহানের টি-শার্ট খামচে ধরে ঘুমে তলিয়ে গেলো।

~

সকালে ঘুম ভাঙতেই মাথাটা ব্যথায় টনটন করে উঠল তুরার, চোখ মুখ কুচকে আধবোজা চোখে উঠে বসল। আস্তেধীরে চোখ খুলে ঘুমের ঘোর কাটলে নিজের অবস্থা দেখে কপালে ভাঁজ পরলো অসংখ্য।
গায়ে কালকে পরা গাউনটা কুচকে যা তা অবস্থা, মাথাটা ঝিম ধরে আছে, কাল কি হয়েছিল? রাইমার বাড়িতে গেছিল তো! তারপর কি হলো? বাড়িতে কখন আসল,এই পোশাকেই ঘুমিয়েছে?!
মাথাটা গুলিয়ে আসছে তুরার কিচ্ছুটি মনে করতে পারছে নাহ, তার উপর মাথার পেছনের দিকটাই প্রচন্ড ব্যথা করছে। দুহাতে কপাল ধরে উঠতে যাবে তখনই ঘরে ঢুকল আহান

-বাহ ঘুম ভাংলো তাইলে!

তুরা নিস্ক্রিয় দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায়ই আহান আবারও বলল

-নে’শা কেটেছে নাকি আরও কোনো অঘটন ঘটানোর ইচ্ছে আছে?

আহানের কথায় তুরার চোখ ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম। নে’শা কেটেছে মানে!সে নে’শা করল কখন?

-মানে কি বলছেন? নে’শা কাটবে মানে? আর কিসের অঘটন?

নিরেট স্থুলবুদ্ধি ভঙ্গিতে বলল তুরা, আহান ভীষণ আধ্যাত্মিক রকমের রাশভারি মুখাবয়ব করল। খেদোক্তির স্বরে বলল

-কিসের আবার অঘটন, কাল আপির বাসায় থেকে ওয়াইন খেয়ে যা সব করেছ ওসব আর মুখে আনা যায়না

তুরার চোখ কপালে! কি বলছে আহান?ভেতরের ধুকপুকানি মাত্রা ছাড়াচ্ছে, কি করেছিলো সে? ওই গ্রেপ জুস তার মানে!

-কি করেছি আমি বলুন না?

অপরাধী চেহারা করে তুরা বলল, আহান এক পলক চাইল তুরার কাঁদো কাঁদো মুখে, আক্ষেপ আর ক্লেশ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল

-আমার মান সম্মান লু’টে নিয়েছ তুরা, আমি তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম।নে’শা করে যে তুমি এসব..

বলেই থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। দম ফাটা হাসি পাচ্ছে তার তুরার মুখাবয়ব দেখে, কোনো রকমে খিঁচিয়ে আটকে রেখেছে

-এসব মানে? ক্ কি করেছি আমি?

তুরার ভাঙা ভাঙা গলায় কথা শেষ হতেই আহান ঘুরে দাঁড়ালো, থুতনির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল

-এটা দেখেও বুঝতে পারছ না?

খোঁচা খোঁচা ছোট দাড়ির মাঝেও ছয়টা দাঁতের কামড়ের দাগ স্পষ্ট, তুরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল! অস্ফুটে বলল

-এ এটা ক্ কীভাবে!

-যেভাবে দিয়েছ সেভাবেই

মুখ কুচকে বলল আহান,এদিকে তুরার অবস্থা বেহাল,লজ্জা বিমূঢ়তায় মাটির নিচে চলে যাচ্ছে যেন। কি দিয়ে কি করল সে কিছুই তো মনে পরছে নাহ।

-যা সর্বনাশ করার আমার তো করেছই সাথে জনসম্মুখে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছো

-মানে..কেনো?

আহান কপট রাগ দেখিয়ে বলল

-এটা কি হ্যাঁ? থুতনিতে দাগ নিয়ে আমি ভার্সিটি যাবো কি করে? স্টুডেন্টস বই ছেড়ে আমাকেই দেখবে

নিগূঢ় অপরাধবোধে কুণ্ঠিত তুরা কিছু বলবে তার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আহান। তুরার মুখটা দেখে আর হাসি আটকে রাখা যাচ্ছিল নাহ।
মুখ টিপে হেসে সিড়ি বেয়ে নামছিল তখনই সামনে পরল প্রেমা। আহানকে অহেতুক একাকী হাসতে দেখে কৃত্রিম সাজিয়ে রাখা চোখ ভ্রু কুচকে এলো প্রেমার

-আহান তুই একা একাই হাসছিস কেনো?

-নাহ এমনিতেই

নিজেকে স্বাভাবিক আচরণে বহিঃপ্রকাশ করে বলল আহান, প্রেমা কৌতুক করে বলল

-তোর বউয়ের সাথে থেকে তোর ও মাথাটা যাচ্ছে দিনদিন

আহান শার্টের ফুল স্লিভ হাতার বোতাম টা কব্জিতে লাগাতে লাগাতে হাসলো অল্প বিস্তর, অক্লেশে বলল

-বউয়ের সাথে থেকে নাহয় হলাম তার মতো, ক্ষতি কি!

উস্কানীমূলক উক্তিতে জ্বলজ্বল করা চোখ নিভে গেলো প্রেমার আহানের এরূপ সহজ স্বীকারোক্তিতে। ইদানীং বেশ বউ বউ করা শিখেছে আহান,প্রেমার একদম সহ্য হচ্ছে নাহ। কলেজ থাকাকালীন কম চেষ্টা করেনি আহানকে প্রেমের জালে ফেলতে কিন্তু ওর প্রখর দাম্ভিক্যের ব্যক্তির জন্যে প্রতিবার বিফল হয়েছে।
এত বছর পর আহানকে দেখে পুরোনো অসমাপ্ত ইচ্ছেটা বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। আহানের মতো এমন সুদর্শন,স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের পুরুষ শুধু প্রেমার কেনো যেকোনো মেয়েরই কামনা হতে পারে!
চটজলদি নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে পরলো আহান,আজকে আর তুরাকে সাথে যাওয়ার কথা বলেনি,মেয়েটা যে পরিমাণ লজ্জা পেয়েছে এবার ওকে ধরে বেঁধেও আহান সাথে নিতে পারবে নাহ আর এমনিতেও আজ তুরার ক্লাস দেরিতে শুরু হবে।

~

বারোটা বাজতেই ক্রিংক্রিং শব্দে বেল বাজলো, আর তৎক্ষনাৎ ই বরাবরের মতো সময়নিষ্ঠায় কাঠকাঠ ব্যক্তিত্বের লোকটার আগমন ঘটলো। তবে আজ সকলেই অবাক আহানকে দেখে। কারণটা আহানের আগমন নয়,ওর মুখ ঢেকে রাখা মাস্কটা!
“এখন তো করোনার ও প্রকপ নেই,তাহলে আহান স্যার মাস্ক কেনো পরে এসেছে? ”
আশেপাশের ফিসফিসানির শব্দ স্পষ্ট তুরার কানে আসছে, আর তার দরুন লাজের গ্লাণিতে গাল মুখ চিকচিক করে উঠছে। ক্লাসের মাঝের একজন তো কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্নই করে ফেলল

-স্যার আপনি মাস্ক কেনো পরে আছেন?

-অ্যালার্জিটিক প্রবলেম

বরাবরের মতোই ছোট্ট জবাব আহানের। এবার সবাই শান্ত হলেও ফারিহা জহুরি দৃষ্টিতে একবার আহানের দিকে আরেকবার তুরার দিকে তাকাচ্ছে।অবশেষে তুরাকে খোঁচা দিয়ে বলল

-কেসটা কি ফট করে বলে ফেলো তো পাখি, এ অ্যালার্জি কি ভাইরাসজনিত নাকি তুরাজনিত হুম!

ব্যসস,এটাই যেন বাদ ছিলো। তুরার এবার নিজেকেই নিজের গায়েব করে দিতে মন চাইলো। এক তো একটু পরপর আহানের আড়চোখের চাহনি তাকে প্রচুর অস্বস্তিতে ফেলছে তার উপর ফারিহার এরূপ প্রশ্ন,জবাব কি দেবে সে!

~

প্রায় দুপুর গড়ালে বাড়ি ফিরল তুরা, স্বাভাবিকভাবেই সে একাই আসল কারণ আহানের সামনে দাঁড়ানোর মতো মুখ ও ওর নেই। কালকের কথা কিছুতেই মনে করতে পারছে না। তার উপর আহান যা বলল!! আহান মিথ্যা বললেও দাগ টা তো আর নকল না। আর তুরা নিজে আহানের সাদা রঙের শার্টটাতে ওর লিপস্টিকের দাগ দেখেছে।
কান মুখ গরম হয়ে আসছে ভাবলেই, এমন কাজটা তুরা কিভাবে করল! কিন্তু আদও কি করেছে, এসব ভাবতে ভাবতেই ঘরে ঢুকলে রুবি খাতুন আর আমেনা বেগমকে সোফাতে বসে থাকতে দেখে ভ্রু যুগল কুচকালো। তবে তার কারণটা আলাদা।

-তুরা, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম

রুবি খাতুন উঠে এসে বলল। তুরা ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে বলল

-আপনারা কি কোথাও যাচ্ছেন মা? না মানে এভাবে রেডি হয়ে বসে আছেন যে?

-হ্যাঁ মা আহানের বাবার চাচাতো ভাইয়ের অবস্থা হঠাৎ করেই খুব খারাপ করেছে, স্ট্রোক করে উনি বিছানাগত, তাই আমাদের এমন হটকারিতা করেই যেতে হচ্ছে, তোমার বাবা ইতোমধ্যে চলেও গেছেন

তুরা সামান্য চমকিত হলো। তবুও স্বাভাবিক ভাবে বলল

-ঠিক আছে মা, আপনারা তাহলে বেরিয়ে পরুন,দেরি করবেন না

-হ্যাঁ তা তো বেরোবো, কিন্তু চুমকি টাও তো আজ সকালে ওর বোনের বাড়িতে গেছে সে অসুস্থ বলে,কবে আসবে ঠিক নেই। আর আহানের দাদাবাড়ীর পথ ও তো সুদূর,তার উপর যে পরিস্থিতি আমরা কবে আসব তারও ঠিক নেই। তুমি একা কীভাবে সামলাবে

-আপনি চিন্তা করবেন না মা, এ আর কি। আমি পারব

-তোমাকে রেখে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছে ছিলো না নাতবউ, তবে আহানকে ফোন করেছিলাম।ও বলল সামনেই তোমার পরীক্ষা এসময়ে তোমার কোথাও যাওয়া ও পছন্দ করবে নাহ

-আপনি চিন্তিত হবেন না দিদুন, অল্প কিছুদিনই তো।

অতঃপর রুবি আর আমেনা খাতুন বেরিয়ে গেলো, তুরা তাদের যাওয়ার পানে চেয়ে প্রশ্বাস ছেড়ে ভাবল মুখে মুখে পারব বললেও মনে মনে তুরার শঙ্কা বাসা বাঁধলো, এবার সে কোথায় পালাবে? সারা বাড়িতে তো শুধু সে আর আহানই রয়ে গেলো!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_♥