তুমি আমি দুজনে পর্ব-৫৭+৫৮

0
657

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫৭

পুরো ক্লাস জুড়ে পিনপতন নীরবতা, টানটান উত্তেজনা সবার মাঝে। তুরা ছেলেটাকে থা’প্পড় দেওয়ায় ক্লাসভরে এতক্ষণ যেই উত্তাপ,উচ্ছ্বাস, দৃঢ়তা ছিল তা মুহূর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেছে।
এক কোণায় ফারিহার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুরা রক্তিম মুখশ্রীতে। সেই পানে চেয়ে বক্ষস্থলের রক্তক্ষরণ দাঁতে চেপে দমিয়ে রাখল আহান। ভেতরে ভেতরে উদগ্রীব, ব্যকুল, উৎকণ্ঠিত হলেও অভিব্যক্তি পানির ন্যায় শীতল।

-তারপর বলো তোমাদের এরূপ দুঃসাহসিকতার কারণ কি? কোন সাহসে তোমরা এমন জঘন্য কাজ করেছ

সামনে দাঁড়ানো থাকা ছেলে দুটোর অবিন্যস্ত, এলোথেলো অবস্থা, গায়ে মাটি কপালে আঘাতের দাগ। ওদের মাঝে একজন বলে উঠল

-ও আমাকে আগে থা’প্পড় দিয়েছে, আমার বন্ধুরা প্রতিবাদ করতে গেলে সাদমান উল্টো আমাদেরই মে’রেছে

আহান চুপচাপ আড়চোখে তাকাল ওদের দিকে,,কপালে, ঘাড়ের রগ গুলো ফুলে টানটান হয়ে আছে। মুষ্টিবদ্ধ হাত কচলাচ্ছে বারংবার। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করবার প্রচেষ্টা করলেও তুরার বিধ্বস্ত মুখশ্রী দেখে তার জন্য দায়ী মানুষ গুলোকে চিরে ফেলার অদম্য ইচ্ছে হানা দিচ্ছে

-শুধু শুধু তো কোনো মেয়ে তোমাকে থা’প্পড় দিবে নাহ। হয়েছিল টা কি?

ভিসির আবারও করা প্রশ্ন ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু তাদের মুখ থেকে শব্দ বেরোলো নাহ।এতক্ষণ মজা নেওয়া ছেলেমেয়ে গুলোও এখন থরথর করে কাঁপছে ভিসি আর সিনিয়র,সহকারী স্যারদের আগমনে। রিফা আর মারিয়া বারংবার কপালের ঘাম মুছছে।

-স্যার পারমিশন দিলে আমি বলতে চাই

সাদমানের কথায় ভিসি নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকাল, মৃদু ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলে সাদমান বলতে আরম্ভ করল

-স্যার ভার্সিটি এসে থেকে আমরা খেয়াল করছিলাম পুরো ক্লাস কিছু একটা নিয়ে কানাঘুষা আর হাসাহাসি করছে,, আর খুবই বাজে কটুক্তি।
তুরা আসলে ওকে উদ্দেশ্য করে ইমন খুবই বাজে কথা বলে যা শুনে তুরা উত্তেজিত হয়ে ওকে চ-ড় দিলে ওর বন্ধুরা এসে তুরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তাই আমি বাধ্য হয়েছি ওদের গায়ে হাত তুলতে

-তুরাকে নিয়ে ওদের কটুক্তির কারণ?

থমকে গেল সাদমান। এবার বলতে খুব দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে,আড়চোখে তাকাল তুরার দিকে। ওর দৃষ্টি নিচে। এভাবে সবার সামনে বলতে যখন সাদমানের আকাশ সমান জড়তা কাজ করছিল তখন কর্ণকুহরে একটা বরফের ন্যায় শীতল বাক্য আসল

-বলতে থাক সাদমান, যা দেখেছ তাই বলো

প্রচণ্ড বিহ্বলিত চোখে তাকাল আহানের দিকে। আহান চোখের মৃদু ইশারায় সম্মতি দিলে আবারও বলতে আরম্ভ করল

-ওদের ফোনে আহান স্যার আর তুরার কিছু ক্যামেরাবন্দী মুহূর্ত ছিল। যেখানে তারা একই গাড়িতে আসা যাওয়া করছে এবং তুরাকে একাধিকবার আহান স্যারের সাথে তার বাড়িতে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে, যেটা দেখেই ওরা জঘন্য মন্তব্য আর বাজে কথা গুলো বলছিল

-ওয়াইফ তার হাসব্যান্ড এর সাথেই যাওয়া আসা করবে আর একই বাড়িতে থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়?

ভিসির বলা কথাটি যেন কর্ণকুহরে বজ্রনির্ঘোষের ন্যায় তরঙ্গিত হলো, বিস্ফোরিত চোখে তাকাল ক্লাসভর্তি একঝাঁক ছেলেমেয়ে। আশ্চর্যান্বিত ভাব ভর্তি হলো প্রতিটি দৃষ্টির কানায় কানায়। শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই গুঞ্জন শুরু হলো একে অপরের। এর মাঝেই একটা ছেলে মুখ ফসকে বলে ফেলল

-হাসব্যান্ড ওয়াইফ মানে?

-মানে আমি তুরার হাসব্যান্ড, আর তুরা আমার বিয়ে করা বউ। সি ইস মাই ওয়াইফ ড্যাম গট ইট!

বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে বলল আহান, এতক্ষণের চাপা রাগ ক্ষোভ উতলে পরল কণ্ঠস্বরে। শব্দের তরঙ্গ কাঁপিয়ে তুলল পুরো ক্লাসরুম। পাশে দাঁড়ান ভিসি আর সিনিয়র প্রফেসরদের পরোয়া না করে তীব্রবেগে এগিয়ে গেল, ভীড়ের মাঝখান থেকে তুরার কব্জি মুষ্টিবদ্ধ করে এনে দাঁড় করাল সবার সামনে।
ক্লাসে টু পরিমাণ শব্দের উপস্থিতি নেই, অত্যন্ত বিমূর্ত দৃষ্টিতে সবাই চেয়ে তুরার হাত চেপে ধরে রাখা আহানের দিকে। মেঘের মতো গর্জন করে আবারও বলল আহান

-এই যে এই মেয়েটা,যাকে নিয়ে যা তা মন্তব্য করছিলে এতক্ষণ, আমার আর যার ছবি উইদাউট পারমিশন ক্যাপচার করে রীতিমতো হ্যা’রাস করেছ যাকে। সে আমার বিয়ে করা বউ, দ্যা লিগ্যাল ওয়াইফ অফ প্রফেসর ইরফান মাহমুদ আহান!

পুনরাবৃত্ত করা কথাটি যেন আবারও অবাকের ঢেউ বয়ে দিল সকলের মাঝে। ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁক সকলের। তুরাও তার ব্যতিক্রম নয়। হতবাকের ন্যায় তাকিয়ে আছে আহানের দিকে। এভাবে সকলের মাঝে যে আহান এভাবে বলে দিবে এটা ভাবতেও পারেনি ও। আর ভাববেও বা কি করে এভাবে বলে কয়ে বেড়ানোর লোক তো আহান নয়। সে নিজেই বলেছিল প্রফেশনাল আর পারসোনাল লাইফ টাকে আলাদা রাখতে চাই। টিচার আর স্টুডেন্ট এর বিয়েটা যে কেও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখবে না, কানাঘুঁষা হবে সেকারণেই এতদিন গোপন রাখা। আর আজ এভাবে!

-আহান, কাম ডাউন। লেট মি হ্যান্ডেল

ভিসির কথায় নিজেকে শান্ত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করল আহান, মুষ্টিবদ্ধ রাখা চিকন হাতটা দৃঢ়ভাবে চেপে ধরল। ব্যাথা লাগলেও তুরা চুপ করে সয়ে নিল। এ মুহুর্তে আহানের ভেতরের ঝড়টাকে সে খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে।
ভিসি বলতে শুরু করল

-তুরা অ্যান্ড আহান আর লিগ্যালি ম্যারিড। আর এ ব্যাপার টা সর্ম্পকে আমরা সকলেই অবগত। অ্যাজ এ প্রফেসর সে তার পারসোনাল লাইফ টাকে হাইলাইট করতে চাইনি বলেই পাবলিক করেনি কথাটা। বাট আমরা সকলেই কিন্তু জানি সে ব্যাপারে। সেখানে ওদের পারসোনাল ছবি ক্যাপচার করে তা ভাইরাল করে রীতিমতো তার ওয়াইফকে হ্যা’রাসের মতো জঘন্য কাজ করেছ তোমরা,এর শাস্তি কি হতে পারে নূন্যতম আইডিয়া আছে?

মুহুর্তেই রক্ত জমে গেল উপস্থিত কয়েকজনের মুখে। তুরাকে কটুক্তি করা ছেলেটার বন্ধু এগিয়ে এসে কম্পিত গলায় বলল

-আমাদের ভুল হয়ে গেছে স্যার, আসলে ছবিগুলো এভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে যে আমরা ভুল বুঝে ফেলেছি। আমাদের ক্ষমা করে দিন তবুও রেস্ট্রিকটেড করবেন নাহ প্লিজ

-তোমাদের প্যারেন্টস কল করা হবে, রেস্ট্রিকটেড করার ও পসিবিলিটি আছে। একজন প্রফেসরের ওয়াইফকে হ্যা’রাস করার শাস্তি কতটুকু জানো তুমি? আর শুধু একজন প্রফেসরের ওয়াইফ কেন, যে কোনো মেয়েকেই এভাবে কোনো শুধুমাত্র ছবির উপর ভিত্তি করে অপ°মান,কটুক্তি করা এক ধরনের ক্রাইম তা জানো? কারো ছবি তার পারমিশন ছাড়া তার ছবি ভাইরাল করাও সাইবার ক্রাইমের মধ্যে পরে

এতক্ষণ নীরব ভূমিকা পালন করা মাহিদ বলল কথাগুলো। সকলের মুখে যেন তালা পরে গেল৷ বলার মতো শব্দ, বাক্য কোনোটাই বোধগম্য হলো নাহ। সিনিয়র একজন প্রফেসর এগিয়ে এসে বলল

-যে বা যারা এই কাজের মূলে তাকে তো অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে, তার আগে ছবিগুলো ডিলিট হওয়া চাই গ্রুপ থেকে। আর যারা বেয়াদবি করেছ প্রত্যেকের বাবা না আসা পর্যন্ত ছাড়া হবে নাহ।

আহান চুপ ছিল এতক্ষণ, এবার নিজেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় শান্ত করে ভরাট গলায় বলল

-কে বা কারা যখন গ্রুপে ছবি গুলো আপলোড করে দিল আর নিমিষেই বিশ্বাস করে নিলে? কোনো ঘটনা নিয়ে মাতামাতি করার আগে তার সত্যতা যাচাই করার প্রয়োজন বোধ টুকুও নেই? নাকি একটা জিনিস পেয়ে গেলেই সেটা নিয়ে কাহিনি শুরু করে দেওয়ার অপেক্ষায় থাকো? কয়েকটা ছবির উপর ভিত্তি করে কোনো যাচাই বাছাই হীনায় চরিত্রহীনার ট্যাগ লাগিয়ে দিলে? একটা মেয়েকে অশ্রাব্য ভাষায় যা নয় তা বলে দিয়েছ? এটাই কি তবে তোমাদের আধুনিক সমাজের নমুনা? এই জন্যে শিক্ষা নিতে আসো যাতে শিক্ষককেই অপদস্ত করা যায়?

এক দমে বলে স্থির হলো আহান। সকলের মাথা তখন নত। লজ্জা নাকি সংকোচে বোঝা গেল নাহ। আহান চোখ সরিয়ে তুরার দিকে তাকাল। চুপচাপ মাথানত করে দাঁড়িয়ে আছে৷ সারামুখে বিধ্বস্ত অবস্থা, কাঁদছে না কিন্তু চোখে স্পষ্ট রক্তিমা ভাব।

আরও দীর্ঘসময় ধরে চলল এসব কথাবার্তা, ছেলে গুলোর গার্জেন কল করা হলো।
এক পর্যায়ে ভিসি এগিয়ে এসে দাঁড়াল আহানের দিকে, ইশারায় ওকে বাইরে আসতে বলল। আহান তুরার হাত ধরেই বাইরে আসলে তিনি বললেন

-যা হয়েছে ব্যাপারটা একেবারেই ভালো হয়নি,আমি দুঃখিত তোমার কাছে। আমার অধিনস্থ প্রতিষ্ঠানে তোমার স্ত্রীর অপমান মানে আমারও অপমান। তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ব্যাপারটা এখানেই শেষ করার,আর অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি দেওয়ার।

-আপনার দুঃখিত হবার কারণ নেই, আমাদের সমাজ টাই এখন হীনমন্যতায় ভরে গেছে। মানুষের মন মানসিকতা এমন পর্যায়ে গেছে যে তারা বাছ বিচার ছাড়াই একটা মানুষকে অপদস্ত করে

বলেই থেমে গেল আহান। আর কিছু বলার ইচ্ছে করছে নাহ আর। ভিসি তুরার দিকে তাকাল, নরম গলায় বলল

-তোমার সাথে যা হয়েছে তা নিয়ে আমরা দুঃখিত, কিন্তু মন খারাপ কর নাহ, জীবনে চলার পথে তো অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়, আমি আশা করছি তুমি স্ট্রং উইমেন এর মত এসব মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেবে কেমন?

বলেই আলতো করে হাত রাখল তুরার মাথায়। ইশারা করে আহানকে বলল তুরাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। এখন এই পরিবেশে থাকলেও ও অসুস্থ হয়ে যাবে। আহান নিঃশব্দে সম্মতি দিয়ে তুরার হাত ধরে হাঁটা ধরল, সোজা সিড়ি বেয়ে নেমে এগোতে লাগল

-তুরা?

মাহিদ দৌড়ে এগিয়ে এল ওদের কাছে। আহান দাঁড়ালে মাহিদ এগিয়ে আসল। তুরার মুখের দিকে তাকাতেই কষ্ট হচ্ছিল ওর। তবুও হাসি মুখ করে বলল

-একদম মন খারাপ করবি না কিন্তু এসব নিয়ে। যা খারাপ ছিল কে’টে গেছে তুই একদম কাঁদবি নাহ, তোর ইয়াজ ভাই আছে তো! আর সবচেয়ে বড় কথা তোর হাসব্যান্ড আছে তো তোর পাশে। যে তোর সে তোকে কতটা সম্মান করে, তোকে নিয়ে কতটা ভাবে তুই শুধু সেটাই আমলে নিবি। কে কি বলল কি করল ওসবে বুদ্ধিমতি মেয়েরা কান দেয়না। তুই না লক্ষী বোন আমার

তুরা ঘাড় নাড়াল শুধু, কথা আর শব্দগুলো কণ্ঠনালিতে আটকে গেছে, কিছুতেই কোনো শব্দ করতে পারছে নাহ। মাহিদ আহানের দিকে তাকিয়ে বলল

-ওকে বাড়ি নিয়ে যাও আহান, এখানে আর এক মুহূর্ত থাকার দরকার নেই

আহান মাহিদের কাঁধে হাত রাখত, স্মিত হেসে বলল

-থ্যাংকস টু ইউ, তুমি আমাকে সময়মত ইনফর্ম না করলে আরও অনেক কিছু হতে পারত।

-সি ইজ মাই সিসটার ব্রো, একমাত্র বোন আমার। ওর অপমান মানে আমার অপমান, কি করে সহ্য করব বলো

আহান আর কথা বাড়াল নাহ। চুপচাপ তুরার হাত ধরে হাঁটা ধরল বাইরে। পুরোটা রাস্তা তুরা না মুখ তুলে চাইল না কিছু বলল। বাড়িতে আসতেই দৌড়ে রাইমার ঘরে গিয়ে দরজা ঠেলে দিল।

•••

মধ্যাহ্নের শেষ সময় প্রায়, নীলাভ আকাশটাতে কমলা রঙের প্রলেপ পরতে শুরু হয়েছে। আকাশের বুকে ছোট ছোট নকশার মতো লাল,হলুদ,কালো পাখিগুলো মিলেমিশে উড়াউড়ি করছে। ক্লান্ত রোদের ধীমি আলো এসে পরেছে বারান্দা ভেদ করে ঘরের অংশ জুড়ে।
নিচে বসে বিছানায় হেলান দিয়ে নিস্তেজ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুরা সেদিকে। মন মস্তিষ্ক জড়ান ম্রিয়মানে। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে সকালের সেই অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যটা

ছেলেটাকে থাপ্প’ড় দেওয়ায় সাথে সাথেই ওর বন্ধুরা হাম’লে পরতে আসে তুরার দিকে, সাদমান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে ওকে ও আ’ঘাত করতে আসলে হাতাহাতি তে এক প্রকার মা’রামারি শুরু হয়। ফারিহা আর তুরা চেষ্টা করেও থামাতে পারেনি, আশেপাশে সবাই শুধু দেখছিল আর মজা নিচ্ছিল। সেই সময়ে মাহিদ এসে তুরাকে ভীড়ের মাঝখান থেকে সরিয়ে এনে সকলকে শান্ত করে। ভয়ে, বিমূঢ় হয়ে মাহিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল তুরা। মাহিদ তুরাকে সামলে আহানকে ফোন করলে দশ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হয়েছিল সিনিয়র টিচারদের সাথে।
এত স্বল্প সময়ে আহান কিভাবে এসেছিল তা তুরার জানা নেই। কিন্তু ওর কল্পনায় বারবার ভেসে উঠছে সকালে দৃশ্য।
ব্যাপারটাতে খুব তাড়াতাড়ি স্টেপ নেওয়ায় ভার্সিটির বাইরে ছড়াতে পারেনি, কিন্তু তবুও তুরার কানে অনবরত বেজে চলছিল অপমান, লাঞ্চনা।
হুট করেই দরজা খোলার শব্দে মাথা ঘুরাল তুরা, দরজার সামনে দু হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আহান। খানিক তাকিয়ে থেকেই চোখ ফিরিয়ে নিল, তীব্র অভিমান জমল মনে, বাড়ি এসে থেকে এতক্ষণ হয়ে গেছে অথচ এখন আসার সময় হলো! এতক্ষণ তুরা ঘরে বসেছিল কিন্তু একবার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না?

আহান দরজা ভিড়িয়ে এগিয়ে আসল, তুরার পাশে বসলে অন্যদিকে ঘুরে বসল তুরা। আহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

-এদিকে তাকাও?

তবুও ফিরল নাহ। ঠাঁই অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। আহান পুনরায় শাণিত কণ্ঠে বলল

-আমার উপরেও রেগে আছ? আচ্ছা আমার দিকে একবার তাকাও তো

অকস্মাৎ ঘুরে আহানকে জড়িয়ে ধরল, ফোঁপানোর শব্দে বুক কেঁপে উঠল আহানের। উষ্ণ দৃষ্টিতে হিমানীর ছাপ পরল। আলতো ভাবে হাত রাখল তুরার পিঠে।
তুরা আহানের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সশব্দে। পারলনা নিজেকে ধরে রাখতে। আপন মানুষটার কাছে ভেঙে পরল, বুক চিরে বেরিয়ে এল তীর্ব আর্তনাদ,দুঃখ। অপমানের আত্মগ্লানিতে নয়ন ভরে উপচে পরল পানিবিন্দু।
কাঙ্ক্ষিত মানুষটির পরম যত্নে আগলে নেওয়াতে আরও ছাপিয়ে উঠল কান্না।

-হুসস,কাঁদে নাহ।আমি আছি নাহ? কে কি বলল ওটা মনে করে কেন রাখছ, আমি আছি তো!

আহানের আদরে আশকারা পেয়ে আরও ফুঁপিয়ে উঠল তুরা, দু’হাতে খামচে ধরল আহানের বুক, নাক টেনে টেনে বলল

-সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে, বাজে মন্তব্য করেছে, আর ওই ছেলেটা তো বলেছে যে আমি..

ফুঁপিয়ে আসা কান্নার হিড়কে বাকিটুকু বলতে পারল না তুরা।আহান সযত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তুরা আবারও ভাঙা ভাঙা গলায় বলল

-সবাই খারাপ বলেছে ওরা, আমাদের সম্পর্কটাকে নষ্ট বলেছে। আপনি তো আমার স্বামী বলুন,ওরা কেন খারাপ বলল, কেন বাজে কথা বলল বলুন!

আহান আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরল তুরাকে, পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-শান্ত হও তুরা, ওরা বললেই কি হয়ে যাবে। যাদের মানসিকতা নোংরা তারা নোংরা কথায় বলবে। তা বলে কি আমাদের সম্পর্ক খারাপ হবে? সত্য একটাই যে তুমি আমার বউ, আমার বিয়ে করা বউ আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। এর চেয়ে বেশি সত্য কিছুই না,পুরো দুনিয়া যা খুশি বলুক আমি আছি সব সামলাতে

তুরা ফুঁপিয়ে গেল আর কিছুই বলল নাহ। বুকের ভেতরে ওঠা তোলপাড় আর অশান্তি হুট করেই হিমানীর প্রলেপে ঠান্ডা হয়ে গেল।বুক চিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস সমুদ্রের ন্যায় শীতল হয়ে গেল। কি আশ্চর্য! এতক্ষণ ধরে নিজেকে হাজারো বার বুঝিয়েও একচুল শান্ত করতে পারেনি সেখানে আহানের এই অল্প আদর আর শান্তবাক্যে সব ঠান্ডা হয়ে গেল, উত্তপ্ত অন্তঃসত্ত্বা কুয়াশাচ্ছন্ন শীতার্ত ভোরের মতো শীতল হয়ে গেল।
হয়তো ভালোবাসা এমনই হয়! স্বামী নামক মানুষটার বুকে মাথা রাখলে হয়তো দুনিয়ায় অশান্তি উবে যায়, স্বামীর দেওয়া ছোট ভরসা আর সাহসে ভেতরের প্রলয়ের ঝড়কেও হয়তো শান্ত করা যায়। আর কিচ্ছুটি ভাবতে পারল নাহ তুরা, প্রশস্ত বুকের মধ্যিখানে মিশে গেল আবরণের ন্যায়,আহানের বুকের ধুকপুকানির শব্দে সব অবজ্ঞা অপমানের শব্দ গুলোও হারিয়ে গেল!

……..

কৃষ্ণাভ প্রহর কাটিয়ে উদর হলো নরম প্রভাতের। পাখির কলরবমূখর পরিবেশে মৃদুমন্দ হাওয়ার সুর। আড়মোড়া ভেঙে টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকাল তুরা, পাশ ফিরে আহানকে দেখতে পেল নাহ। খানিক সময় নিয়ে উঠে বসল, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে নিচে আসতে দেখল ইনসাফ মাহবুব নাস্তা করছেন আর রুবি খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল তুরার, কাল মা আর দিদুন রাইমাকে দেখতে গেছিল বলে সারাদিন বাড়িতে কেও ছিল নাহ। সন্ধ্যা নাগাদ ঘুমিয়ে পরায় রাতে ফিরে তুরার সাথে দেখাও হয়নি। মৃদু পায়ে নেমে এলো সিড়ি ভেঙে

-তুরা,,ঘুম ভেঙেছে? এখন শরীর কেমন মা? আহান বলল কালকে শরীর খারাপ করেছিল নাকি তোর?

তুরা এগিয়ে এসে ইনসাফ মাহবুবের পাশে বসল। আহান নিশ্চয় বাড়িতে ওই ব্যাপার টা জানায়নি। ভালই করেছে, ওরকম জঘন্য একটা ব্যাপার জানিয়ে কাওকে দুশ্চিন্তায় না ফেলায় ভালো।

-একটু মাথা ধরেছিল আরকি,এখন ভালো আছি বাবা

-ভালো আছি বললে হবে! চোখ মুখের অবস্থা দেখেছ? শেষে কি না ঠিকঠাক খেতে দেয়না এমন দুর্নাম নিতে হবে দেখছি।

রুবি খাতুন তুরার প্লেটে রুটি তুলে দিতে দিতে বলল। চুমকি আমেনা খাতুনের এক হাত ধরে এগিয়ে এনে টেবিলে বসতে সাহায্য করে আবারও রান্নাঘরে গেল

-দাদুভাই কোথায় রুবি?

আমেনা খাতুন বসেই আহানের কথা জিজ্ঞেস করলে রুবি খাবার বাড়তে বাড়তে বলল

-কি জানি,কাজ আছে বলেই তো বেরোলো সকাল করে ।

ললাটে ভাঁজ পরল তুরার, এখন কি কাজ হতে পারে? তবে টেবিলে বসে সকলের সাথে কথা বলতে বলতে ব্যাপার টা ভুলে গেল।
শরীর খারাপের দোহায় দিয়ে আজ রুবি তুরাকে ভার্সিটি যেতে দিল নাহ। এমনিতেও তুরার যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তার উপর শরীরটাও খুব দূর্বল লাগছে। ঘরের মধ্যেই এদিক পায়চারি করতে করতে বেল বাজার শব্দ হতেই গিয়ে দরজা খুলল।

-তুই? এখানে?

-কেন আসতে পারিনা?

দরজার সামনে ফারিহাকে দেখে বিস্মিত হলো তুরা, আজ অব্দি ফারিহা কখনো আসেনি এ বাড়িতে

-তুই চিনলি কি করে বাড়ি?

-ওমাহ প্রফেসরের বাড়ি খোঁজা আবার ব্যাপার হলো নাকি, আর ফারিহা সব পারে ইউ নো। আর তুই কি আমাকে দরজায় ই দাঁড় করিয়ে রাখবি নাকি?

সঙ্গে সঙ্গে সরে দাঁড়াল তুরা, ফারিহা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল

-আজকে ক্লাস করার একদম ইচ্ছে নেই বুঝলি। তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু আড্ডা দিয়ে যাই। তুই তো ডাকবি নাহ তাই আমিই চলে এলাম, কি ঠিক করেছি না ডিয়ার?

ফারিহার কথার মাঝেই রুবি খাতুন এলে তুরা ফারিহাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। রুবি খাতুন বেশ খুশি হয়ে বলে

-ওমা বসো বসো,খুব ভালো করেছ এসে, মাঝে মধ্যেই চলে আসবা, ও তো একাই থাকে বাড়িতে

-আসতে বললে তো আসব। ও তো আপ্যায়নের ভয়ে আসতেই বলে নাহ

রুবি হেসে দিল ফারিহার বলার ভঙ্গিমায়, ওদের বসিয়ে দু’একটা কথা বলে রান্নাঘরের দিকে গেলে ফারিহা তুরার কাছে ঘেঁষে বসে, খুব গুরুতর ভঙ্গিতে বলে

-ম্যালা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে দোস্ত, আমাকে হেল্প কর
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫৮

রেলগাড়ীর চাকার মতো বিরতিহীন সময় কেটে পেরিয়ে গেল কতগুলো দিন। এ কয়দিনের মাঝে তুরা একদিন ও আসেনি ভার্সিটিতে। সেদিনের পর থেকে তুরার ভার্সিটি আসার রুচি বা মানসিকতা কোনোটাই হয়নি, আবার দিন কয়েক শরীর টাও ভালো যায় না ওর। রুবি খাতুন এক প্রকার জোর করেই রেখেছে বাড়িতে,যদিও তার নিজেরও ইচ্ছে ছিল না
ভার্সিটির গেইটের সামনে পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে তুরা, ক্লাস শুরু হতে যদিও বেশি দের নেই কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। মিনিটের কাঁটা পাঁচ থেকে আটে গড়াতেই রিকশা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে হুড়মুড়িয়ে দৌড়ে আসল ফারিহা

-এইই সরি সরি,,আসলে একটু লেইট হয়ে গেল। কি আর করব সব দোষ ওই টিনম্যানের। ওই ঢেমনাকে দেখতে গিয়েই দেরি হয়েছে আমার

হড়বড় করে কথা গুলো বলে তুরার সাথে করে এগোতে লাগল ভেতরের দিকে। তুরা শান্তকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল

-সাদমানের বাড়িতে গেছিলি তুই?

-বাড়িতে না, ওইদিক দিয়ে আসছিলাম ভাবলাম বলদ টায় কি করে দেইখা আসি, তাই একটু ঢুঁ মেরে আসলাম। রাস্তায় আন্টির সাথে দেখা হয়েছিল উনি সুহানাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। একটু কথাবার্তা বলতেই দেরি হয়ে গেল

তুরা নিরুত্তর রইল খানিক। সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে উঠতে বলল

-ব্যাপার টা আর কতদিন এভাবে টানবি তোরা, এবার কি মনের কথা গুলো প্রকাশ করা উচিত না?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল তুরা, ফারিহা তৎক্ষনাৎ ই উত্তর করল

-আর কতভাবে প্রকাশ করব বল তো, বাবাকে নিয়ে ওর বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছি। আন্টিরও আপত্তি নেই,উনি বলেছেন ছেলে মেয়ের খুশিতেই তার খুশি।সাদমানের সাথে সে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে মাঝখানেই থামিয়ে দিয়েছে টিনের বাচ্চা। বেটার ভাব বেশি বাড়ছে দিনদিন। আমাকে দেখলে এড়িয়ে চলে, জ্ঞান দেয়। নিজে তো সারাদিন প্রেমপত্রের মতো বই কোলে করে ঘুরে বেড়ায় আবার আমাকেও পড়াশোনায় মন দিতে বলে। আমি বুঝিনা ও কেন এমন করছে,, ওর চোখে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই যা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিন্তু আমাকে দেখলেই গুটিয়ে যায়।

টানা কথা গুলো বলে দম ছাড়ল ফারিহা। এখন নিজেকেও কেমন খাপছাড়া মনে হয় ওর। সাদমান আর কত এমন করবে। তুরা নিরুত্তর কথা গুলো শুনে বেশ খানিক কিছু একটা ভেবে বেশ উৎসাহিত হয়ে বলল

-শোন আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে। এবার দেখিস সাদমাইন্না সিউর গলব, ওর মুখ দিয়ে টেপ রেকর্ডারের মত সব মনের কথা গড়গড় করে বেরোবে

-আইডিয়া? কেমন আইডিয়া?

-চল ক্লাসে চল বলছি।

বলে দুজন হাঁটতে হাঁটতে ক্লাসের সামনে এলো। এতক্ষণ উৎসাহিত, উচ্ছ্বসিত মুখটা ক্রমশ গম্ভীর হয়ে গেল। ক্লাসে ঢুকতেই সেদিনের বিশৃঙ্খল দৃশ্যটা ঝকঝক করে চোখের সামনে ভেসে উঠল তুরা, সেদিনের গ্লাণিবোধ উগড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলেও সামলে নিল। যা হয়ে গেছে তার উপর কারো হাত নেই,বরং এখন সামনের টা ভাবতে হবে।
দুজন এগিয়ে গিয়ে ক্লাসে বসল। সাদমান আজ আসবে নাহ। তাই দুজনই বসে লেকচার সীট বের করলে আচমকা একটা মেয়ে তুরার সামনে আসল, মুখ তুলে সামনে তাকাতেই ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হলো তুরার, ওর সামনেই দাঁড়ান ভীষণ জড়তাগ্রস্ত একটা মুখ, খানিক তাকিয়ে থেকেই মনে পড়ল এই মেয়েটাও ছিল সেদিন যারা তুরাকে কটুক্তি করেছিল। চট করে মুখ নামিয়ে নিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হলে মেয়েটা ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল তুরার সামনে, খানিক চুপ থেকে তুরার কোনো রা করা না দেখে নিজেই বাধাগ্রস্ত কণ্ঠে বলতে শুরু করল

-আসলে আমি সেদিনকার ঘটনার জন্যে ক্ষমা চাইতে এসেছি। জানি আমি ক্ষমা চাইলেও ওটা অনেক কম হবে, তবুও বলছি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমিও ওদের মত ভুল বুঝে তোমায় নানা রকম মন্তব্য করেছি। আমার ভুল হয়ে গেছে

চোখে মুখে অনুতপ্ততা,অপরাধ বোধ উপচে পরছে মেয়েটার, তুরা চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারল নাহ। ওরা যতই খারাপ ব্যবহার করুক,অন্যের সাথে খারাপ স্বরে কথা বলতে ওর বাঁধে।

-যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর মাথা ঘামতে চাইনা। পুরোনো জল ঘোলা করে লাভ নেই, আমি ওসব ভুলে গেছি, ভালো হবে তুমিও ভুলে যাও।তবে হ্যাঁ এতটুকু বলতে পারি ভবিষ্যতে কাওকে নিয়ে কোনো মন্তব্য বা কটুক্তি করার আগে সত্যতা টুকু অন্তত যাচাই করে নিবে

সাবলীল, শানিত কণ্ঠে বলল তুরা, ফারিহা পাশেই বসে আছে চুপচাপ। সামনের মেয়েটা আরও কয়েক পা এগিয়ে এলো এবার ওর সাথে আরও কয়েক এসে যোগ দিয়ে বলল

-আমরা বুঝতে পারিনি তুমি আহান স্যারের বউ। আসলে রিফা আর মারিয়া এভাবে কথা গুলো বলল আর ছবিগুলো উপস্থাপন করল যে আমরা ভেবেছি সত্যিই..

মাথানিচু করে মিনমিনে গলায় বলল মেয়েটা,তুরা প্রথম কথাগুলো স্বাভাবিক ভাবে নিলেও রিফা আর মারিয়ার নাম শুনে চমকে উঠে বলল

-রিফা আর মারিয়া মানে?

-হ্যাঁ, ওরা দুজনই তো আগে বলেছে ছবিগুলোর কথা। আর তার জন্যেই ওদের দুজনকে রেস্ট্রিকটেড করা হয়েছে। আহান স্যার নিজে প্রমাণ সহ দেখিয়েছে যে এগুলো ওদেরই কাজ। তাই সেদিনের পরদিনই ভিসি স্যার ওদের প্যারেন্ট কল করে সব জানিয়েছে

তুরা হতভম্ব হয়ে গেল। ফারিহার দিকে তাকালে দেখল ওউ অনেকটা চমকে আছে। এই কদিন তুরার সাথে ওউ আসেনি ভার্সিটি, তাই এসবের কোনো কিছুই জানে নাহ। ওরা তুরাকে অপছন্দ করে এটা জানতো কিন্তু তা বলে এতদূর!
তবে আরও কিছু বলা বা শোনার আগেই টিচার চলে আসলে ওরা যে যার জাগায় বসে পরে।
প্রথমে অবাক হলেও পরে আর এ নিয়ে মাথা ঘামায় নি তুরা বা ফারিহা। যার যেমন কর্ম তেমন ফল!

………..

-তুমি এখানে কি করছ,আমাকে এভাবে হুট করে ফোন দিয়ে ডেকে আনলে কেন। এভাবে একা মেয়ে এতদূর চলে এসেছ। তুমি কি আমায় হার্ট ফেল করিয়ে মা রতে চাও!

-চুপ করো,,আমাকে বলতে দিবা? এসেছে কে? কথা বলার জন্যে ডেকেছে কে? তোমার তো কোনো খোঁজ নেই। এতদিন যে হয়ে গেল এখানে এসেছ আজ অব্দি বাড়িতে জানাতে পারোনি ওদিকে আব্বু আম্মু আমার জন্য ছেলেও দেখে ফেলছে তুমি কি চাও আমার বিয়ে হয়ে যাক? নাকি এতদিন শুধু টাইম পাস করেছ আমার সাথে? বলো,চুপ করে আছ কেন বলো,উত্তর দাও?

-আমাকে বলার সুযোগ দিলে তো বলব। আর এভাবে রাস্তার মাঝে এমন করলে মানুষ কি ভাববে?

-ভাবুক যা খুশি ভাবুক। তোমাকে চিটার বাটপার ভেবে জেলে দিয়ে দিক।অন্তত তখন তো কারণ হবে যার জন্যে সম্পর্ক টা আগাচ্ছে নাহ

-তোমার মাথা কি সব গেছে, কি দিয়ে কি বলছ..

-তোমরা দুজন কি ঝগড়া করার জন্যে দেখা করেছ?

মাহিদ আর জায়মার কথার মাঝে তুরার গলা শুনে ফট করে ঘুরে দাঁড়াল মাহিদ। তুরাকে দেখে কিঞ্চিত অবাক হলেও বিস্ময় ছাড়িয়ে এগিয়ে আসল, তুরাকে অস্থির হয়ে বলল

-বুড়ি তুই এখানে? আচ্ছা ভালই হয়েছে তুই এসেছিস। এই এইটারে কিছু বল, মাথার তার গুলো সব গেছে। সিলেট থেকে সোজা এখানে চলে এসেছে তাও একা, ভাবা যায়! আমি ক্লাসে ছিলাম ফোন করে বলল এখনই যদি দেখা না করি তাইলে ও ভার্সিটি চলে আসবে। ওকে একটু বোঝা পাগল হয়ে গেছে

হড়বড় করে উগড়ে দিল কথা গুলো মাহিদ। শান্তশিষ্ট ভাইয়ের এমন চঞ্চলচিত্তে তুরা হাসল সামান্য। তা দৃষ্টিগোচর হতেই জায়মা এগিয়ে এসে বলল

-তুমি হাসছ ভাবি? আসতে বললে এসে গেছি এবার কি করার করো না তো তোমার এই ভাইকে আমি ভালোবাসার জালে ফেলে ছ্যাকা দেওয়ার কেসে জেলের ভাত খাওয়াব বলে দিলাম

মাহিদ বিস্মিত হলো। একবার তুরার দিকে আর জায়মার দিকে তাকিয়ে বলল

-মানে? ভাবি আসতে বলেছে মানে কি?

-মানে জায়মাকে আমিই আসতে বলেছি ইয়াজ ভাই

-তুই? তুই কেন বলেছিস ওকে আসতে। এমনেই তো ওর তার কাটা তুই আমার উসকানি দিয়েছিস।

-একদম বাজে বকবে না বলে দিলাম।নিজের তো মুরদ হয়নি এখনো বাড়িতে আমার নাম বলার আবার বড় বড় কথা

জায়মার কথায় মাহিদ চোখ কুচকে আশেপাশে তাকাল। কেও যদি একবার শুনে ফেলে এসব কথা তাইলে বদনাম হয়ে যাবে সে। মেয়েটা তাকে পাগল করে ছাড়বে

-তুমি একটু থামবে?

-কেন ভাই,ও কেন থামবে। তুমি আর কবে বলবা মামনীকে বলো তো। বুড়ো হওয়ার পর বিয়ে করবে নাকি?

মাহিদ দমলো খানিক। ইতস্তত হয়ে বলল

-বলব তো,আমার একটু সময় দরকার
মাকে তো জানিস,পরে যদি রিয়েক্ট করে তখন

-উফ ভাইয়া,তুমি শুধু শুধু বেশি ভাবছ।দুদিন বাদে যখন মামনী হুট করে একটা মেয়ে ধরে এনে বলবে একেই আমি বাড়ির বউ বানাব তখন কি করবে বলো তো?

মাহিদ থতমত খেলো। চশমা ঠেলে নাকের ডগা থেকে তুলে হাসফাস করে তাকালে তুরা বলল

-আমি জানি তোমার পক্ষে মামনীকে বলা পসিবল না,তাই আমি জায়মাকেই ডেকেছি। আমি নিজে কথা বলব আমার ননদিনীর ব্যাপারে। চলো তো এখন গাড়ি স্টার্ট করো

মাহিদ হকচকিয়ে উঠল। বিব্রতস্বরে বলল

-মানে, কোথায় যাবি তোরা?

-তোরা না আমরা, আমি নিজে কথা বলব মামনীর সাথে। না তো আমরা নিজেই চলে যাচ্ছি কিন্তু, তখন আমরা দুজন শুধু কথা বলব মামনীর সাথে!

~

সোফায় বসে দুহাত কোলের উপর রেখে জহুরি দৃষ্টিতে তাকাল সামনে বসে থাকা তিন বান্দার দিকে। মাঝখানে তুরা, বা পাশে জায়মা আর ডান পাশে মাহিদ। তহমিনা বারংবার অবাক হচ্ছে মাহিদের অবস্থা দেখে। একটু পরপর কপালের ঘাম মুছছে। আর হাসফাস করছে।

-কি ব্যাপার মাহিদ, তুই এমন করছিস কেন? কোনো প্রবলেম?

চশামার ফাঁকে গোলগোল নজরে তাকাল মাহিদ
ঘনঘন ঘাড় নাড়িয়ে না বলল। তহমিনা তুরার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকালে তুরা বেশ গুরুগম্ভীর ভঙ্গিমায় খানিক জড়তা নিয়ে বলল

-মামনী তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে

-হ্যাঁ তো সেটা শোনার জন্যেই তো বসে আছি। বল তো, নতুন মেহমান এলো বাসায় একটু কিছু খেতে দিতেও দিলি না গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে বলে। এখন বল তাইলে মেয়েটার ক্ষিদে পাবে তো বেলা কি কম হয়েছে, তুমি দুপুরে খাওনি নিশ্চয় মা? মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে

নরম গলায় বেশ বিচলিত হয়ে বললেন তহমিনা। মাহিদ বেশ বিরক্ত হলো, টানটান গলায় বলল

-কি খাওয়া নিয়ে পরেছ বলো তো। তুরাকে বলতে দাও আগে

তহমিনা অবাক হয়ে তাকাল মাহিদের দিকে। ওর এমন অস্থিরতার কারণ কিছুতেই বোধগম্য হলো নাহ, এদের ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না।কিছু তো একটা ভেজাল আছেই

-তুরা কি হয়েছে বল তো। তোদের চোখ মুখ অন্যরকম লাগছে

-মামনী ও জায়মা। উনার ছোট ফুফুর বড় মেয়ে

-হ্যাঁ তো এই কথা টা তুই এসেই বলেছিস,আগে বল?

-মানে মামনী, মাহিদ ভাই আর জায়মা অনেক আগে থেকেই চেনে একে অপরকে

তহমিনা বিব্রত হয়ে তাকাল ওদের চেহারায়,এদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝছেনা

-আগে থেকে চেনে মানে? কিভাবে চেনে?

-উফ তুরা, এত কাহিনি না করে সোজাসাপটা বল নাহ

ক্ষেপাটে গলায় বলল মাহিদ,তুরা ক্রুর চোখে তাকাল ওর দিকে, ওকে ফাঁসিয়ে দিয়ে এখন গরম দেখাচ্ছে নিজেই। পাশেই জায়মা মাথা নিচু করে বসে আছে, ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ নার্ভাস ও।

-ম্ মানে মামনী ইয়াজ ভাই আর জায়মা বিয়ে করবে

-কিহ,বিয়ে করবে মানে?

-মানে ওরা দুজন চাই

-কি চাই?

তুরা ক্রমশ নিজেই কনফিউজড হয়ে আবল তাবল বলে দিচ্ছে।আর তহমিনা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। এদের থামিয়ে মাহিদ নিজেই জোর গলায় বলে উঠল

-আমি বলছি, থামো তোমরা! মা আমি জায়মাকে ভালোবাসি, ওকে বিয়ে করতে চাই

তহমিনা বিস্ফোরিত নজরে তাকালে মাহিদ থতমত খেয়ে বলে

-ম্ মানে যদি তুমি আর বাবা চাও তবে

তহমিনা বেশ কিছুক্ষণ মাহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর জায়মার দিকে তাকাল। ফর্সা মুখশ্রীতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মেয়েটার। ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গুটিয়ে বসে আছে।

-ও যা বলছে তা কি ঠিক?

জায়মা বিমূর্ত হয়ে তাকাল তহমিনার দিকে, সামান্য ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। তহমিনা অবিলম্বেই আবারও বলল

-ভালোবাসো ওকে?

-হ্যাঁ বাসি

এবার বেশ অকপটেই উত্তর করল জায়মা। তহমিনা নির্লিপ্ত তাকিয়ে রইল দুজনের মুখের দিকে। মাঝখান দিয়ে তুরা পরেছে গ্যাড়াকলে দুজনের মাঝে। তহমিনা গুরুগম্ভীর ভঙ্গিমায় মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি মাহিদ। এর জন্যে তোমাকে এত বড় করেছি? এর জন্য তোমার সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করেছি?

মাহিদের ভীষণ জড়তা হলো। এক প্রকার লজ্জা সংকোচবোধ ও হচ্ছে ভেতরে। মা কি তবে ভুল বুঝল?

-মা মানে আমি আসলে

-চুপ কর! লজ্জা করা উচিত।

তিনজনেই ভয়ার্ত চেহারায় তাকাল সামনে। তহমিনা আবারও বলল

-কি মনে করো বাতাসে বড় হয়েছ? আমি নিজ হাতে পালন করিনি? চিনিনা আমি তোমাকে? তুমি যে জম্পেশ প্রেম করছ এটা কি আমি বুঝিনি মনে করেছ?

তিনজনেই অবাকের শীর্ষে। তখন আবারও তহমিনা বলল

-বেশ কয়েকদিন ধরেই তো বলতে চাচ্ছ কিন্তু সাহস করে উঠতে পারোনি। কেন মাহিদ,আমাকে কি তোমার টিভি সিরিয়ালের জল্লাদ মা মনে হয়? তুমি কাওকে ভালোবাসো এটা জানতে পারলে কি আমি তোমাকে অন্য কোথাও বিয়ে করিয়ে দিতাম? নাকি বকতাম? তুমি কি না শেষে একটা মেয়েকে এতদূর থেকে টেনে এনেছ কষ্ট করিয়ে,আবার ছোট বোনকে দিয়ে বলাচ্ছ,লজ্জা করা উচিত! এই তুমি ভার্সিটির লেকচারার হয়েছ?

মাহিদ কথার খেই হারিয়ে ফেলেছে, কি দিয়ে কি বলবে সব গুলিয়ে গেছে। তার মা যে এমন একটা অভিব্যক্তি করবে ভাবতেও পারেনি। তুরা আর জায়মাও হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তহমিনা তুরার দিকে তাকিয়ে বলল

-হ্যাঁ রে, তুই অন্তত আমাকে বলতে পারতিস? আমি কি এতই পর হয়ে গেছি তোদের কাছে?

-না মামনী তুমি ভুল বুঝছ

-থামো,বোঝা হয়ে গেছে আমার

বলেই উঠে জায়মার পাশে গিয়ে বসলেন। ওর থুতনিতে হাত রেখে বললেন

-আর এই যে তুমি, তোমাকে আমি দেখেই চিনতে পেরেছি। আমার হতচ্ছাড়া ছেলে ফোনের ওয়ালপেপারে তোমার ছবি রাখতে পেরেছে অথচ মাকে মুখ ফুটে বলতে পারেনি

মাহিদ তড়িৎ মুখ ফিরিয়ে নিল।এখন তারই কেমন লজ্জা অস্বস্তি কাজ করছে। তার মানে মা খেয়াল করেছিল সবকিছু! নিজের মাথা নিজের চাপড়াতে ইচ্ছে হলো মাহিদের।

-মামনী তুমি সব জানতে?

-সব আর কি করে জানব। ছেলের চকচক করা মুখ, ফোনের সামনে একটা মেয়ের ছবি দেখেই তো বুঝেছি। কতবার বলতাম তোর কোনো পছন্দ থাকলে বল। বিয়ের বয়স তো হয়েছে। উনি সাধু ছেলের মতো প্রত্যেবার বলত না মা তেমন কিছুই নাহ।

তুরা ফিক করে হেসে দিল। মাহিদের মুখ টা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওর। আর জায়মা তো চোখ মুখ শুকিয়ে জড়ো হয়ে আছে। তহমিনা জায়মাকে উদ্দেশ্য করে বলল

-তুমি সিলেট থেকে একাই এসেছ? বাড়িতে কেও কিছু বলেনি?

-গ্রুপ ট্যুরের নাম করে এসেছি

মিনমনিয়ে বলল জায়মা। তহমিনা মাহিদের দিকে তাকালেই ও মুখ ফিরিয়ে নিল। মুখ টিপে হাসলেন, প্রত্যুত্তর না করে উঠে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল

-সেসব কথা পরে হবে, বেলা অনেক হয়েছে তোরা ফ্রেশ হয়ে আই আমি খেতে দেই

তুরা মাহিদ কে খোঁচা দিয়ে আবারও হাসল। জায়মাকে সাথে নিয়ে ঘরের দিকে গেল ফ্রেশ হতে।

…….

বাড়ি আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে গেল তুরার, তহমিনা অনেক করে বলেছিল আজকের দিনটা থেকে যেতে। কিন্তু বাসায় তো বসে আসা হয়নি বলে থাকল নাহ। তড়িঘড়ি করে রিকশা থেকে নেমে বাড়ি ঢুকে সোজা ঘরের দিকে গেল। ব্যাগ টা রেখেই তোয়ালে আর জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুলে পরল। গোসল করতে হবে, সারা শরীর কেমন গুলিয়ে আসছে।
বেশ সময় নিয়ে গোসল সেরে বেরলো তুরা, চুল ঝাড়তে লাগলে আহান বেলকনি থেকে ঘরের ভেতর আসল, কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখাচোখি হলে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়াল তুরা, আহানের চোখ দুটিতে তাকাতে যেন আকাশ সমান দ্বিধা করে এখনো। আচমকা গাল দুটোয় লালাভ প্রলেপে ভরে গেল, আয়নার দিকে ফিরে চুল মুছতে লাগলে আহান মন্থর পায়ে এগিয়ে এসে পেছনে দাঁড়াল। পেছন থেকে দু’হাতে কোমর জরিয়ে ধরল তুরার। খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে নিজের গাল ঠেকাল তুরার আধভেজা ঠান্ডা গালে।
ঝিলিক দিয়ে কেঁপে উঠল তুরা, চোখ মুদে নিল। আহান আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরল, ভরা গলায় বলল

-এত দেরি কেন করলে বলো তো। অপেক্ষা করছিলাম তো আমি।

ভীষণ আবেদনময়ী শোনালো আহানের গলা। তুরা ভার হয়ে আসা চোখের পাতা খুলে তাকাল আয়নার দিকে। গলায় মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আহান, লোকটাকে যেন আরও সুন্দর লাগছে,বয়স যেন কমে যাচ্ছে দিনদিন। মোহনীয় নজরে তাকিয়ে থেকেই তুরা বলল

-ম্ মামনীর বাড়িতে গেছিলাম

-উমম,,মাহিদ টেক্সট করেছিল

তুরার গলায় মুখ ঘষে বলল আহান, তীব্র ভাবে কেঁপে খামচে ধরল তুরা আহানের হাত। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল

-ছাড়ুন

-উহু, এই কয়দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম সময় দিতে পারিনি। তুমি কি রাগ করেছ বউ?

সারা বদনে শীতল স্রোত বয়ে গেল তুরার, আহানের নেশাগ্রস্ত কণ্ঠ শুলের মতো ভেদ করে যাচ্ছে ওর সমস্ত সত্ত্বা। তুরার উত্তর না পেয়ে আহান আবারও বলল

-সরি বউ, এই যে এখন আছি তো। একচুল ও ছাড়ছি না আর

-ছাড়ুন না প্লিজ, মা ডাকবে আমাকে

-বাড়িতে কেও নেই

ভ্রু যুগল কুচকালো তুরা। ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে ফিরে বলল

-কোথায় গেছে সবাই?

-মা দিদুন আপিকে আনতে গেছে, ওর শরীর টা নাকি খারাপ করেছে একটু। তুমি ও বাড়িতে আছ বলে আর ফোন দেয়নি।

বলে তুরাকে সাথে নিয়েই ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরল। তুরা উঠতে লাগলে হুট করেই আহান বরফ ভেজা গলায় বলে উঠল

-আই লাভ ইউ তুরা, আই লাভ ইউ এভরি মোমেন্ট। সারাজীবন ধরে বাসব, অনেক বেশি ভালো বাসব তোমায়। আমার জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহার তুমি, সারাজীবন তোমাতে মিশে থাকতে চাই।

বলে তুরার বুকে খুব গভীর স্পর্শে দীর্ঘ চুম্বন এঁকে দিল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো ঝমঝমিয়ে উঠল তুরার সমস্ত শরীর। ভালোলাগা, ভালোবাসায় অন্তরসত্ত্বা শিহরিত হয়ে উঠল। দুহাতে বুকের মাঝে চেপে ধরলো আহানকে, খুব যতনে,নিভৃতে, আদরে!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ