লাল নীল সংসার পর্ব-১২

0
252

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১২_

আদনানের আর সহ্য হচ্ছে নাহ। আচ্ছা! কথাগুলো তো স্নেহার আম্মু বলেছে, এতে স্নেহার কি দোষ? সে স্নেহাকে কেন এভোয়েড করছে? স্নেহা তো চেয়েছিলো তার মা কে থামাতে কিন্তু পারে নি। এতে তো স্নেহার কোনো দোষ নেই।

আদনান তো প্রথম থেকেই জানে স্নেহা আর তার মাঝে অনেক তফাৎ। তাও তো কথা বলেছে, কখনো নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে নি। আর সে ভবিষ্যৎ এ কখনো নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়ও নাহ। কিন্তু, তাই বলে স্নেহাকে এইভাবে এভোয়েড করবে?

আদনান নিজেও জানে সে স্নেহা কে পাবে নাহ। একটা সময় তো স্নেহার বিয়ে হয়েই যাবে, কিন্তু কিছুই করার থাকবে নাহ তার। তাহলে, এখন যতোটা সময় স্নেহা কে পাচ্ছে তাও দুরে কেন সরিয়ে দিচ্ছে সে? শুধু তার মায়ের বলা কথা গুলোর জন্য? এইটা তো তার প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। মেয়েটার কোনো অন্যায় নাহ থাকা সত্ত্বেও বার বার সরি বলেছে, কল দিয়েছে, ম্যাসেজ পাঠিয়েছ, কিন্তু সে ইগনোর করেছে। এইটা তার একদম ঠিক হয় নি। একদম নাহ। আদনান আর এতাল বেতাল নাহ ভেবে স্নেহার ফোনে কল করে।

এইদিকে….
স্নেহা বই পড়ছে। মিসেস. আখির সাথেও খুব একটা কথা বলে নাহ সে। মায়ের উপর বড্ড রাগ জমে আছে। মায়ের কথা গুলোর জন্যই আজ এতো কিছু। মায়ের কথা শুনেই তো আদনান কষ্ট পেয়েছে। আর তাকে এইভাবে এভোয়েড করছে। এমন সময় হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় কিছুটা কেঁপে উঠে স্নেহা। এখন আবার কে কল করলো? ফোন টাহ হাতে নিয়ে চমকে উঠে বসে পড়ে স্নেহা।

আদনান তাকে কল করেছে। কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে নাহ স্নেহার। স্নেহার পুরো শরীর হালকা কম্পিত হচ্ছে। কল টাহও রিসিভ করতে পারছে নাহ। কল রিসিভ করার আগেই কল কেটে যায়। আদনান কি তাকে ভুলে কল দিয়েছিলো নাকি চাপ লেগে কল চলে এসেছে? এমন সময় আবার কল বেজে উঠে। আদনান আবার কল করেছে। স্নেহার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কাপা হাতে কল রিসিভ করে কানে রাখতেই ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে সুরেলা পুরুষালি কন্ঠ। যা শুনে মুহুর্তেই স্নেহার বুক শান্তিতে ভরে উঠে। আদনান বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”

চোখ বন্ধ করে ফেলে স্নেহা। কান্না যেন দলা পাকিয়ে আসছে। স্নেহাকে চুপ করে থাকতে দেখে আদনান বলে ওঠে,
–” আই এ্যাম সরি স্নেহা! আমার তোর সাথে এমন করা একদম উচিত হয় নি। হ্যা, আমি আন্টির কথায় কষ্ট পেয়েছি। আমি স্বীকার করছি কিন্তু তার জন্য তোকে এভোয়েড করা আমার একদম উচিত হয় নি। আই এ্যাম সরি।”

স্নেহা চোখ বন্ধ করে আদনানের কথা শুনতেছে। কিছুই বলতে পারতেছে নাহ। আদনান নরম সুরে আবার বলে ওঠে,
–” আসলে কি বলতো, আমি জানি আমার আর তোর বন্ধুত্বের মাঝে ফ্যামিলি টেনে আনলে অনেক তফাৎ পাওয়া যাবে। শুধু তুই কেন, আমাদের সব ফ্রেন্ডই রিচ ফ্যামিলি তে বিলং করে। তুই, রিয়াদ, মার্জিয়া, সিফাত, শবনম তোরা সবাই রিচ ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু, আমি কখনো তোদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখি নাহ। সব খোলামেলা ভাবে বলে দেয়। তোরা সবাই জানিস, আমি মধ্যাবিত্ত। কিন্তু, আমার আত্মসম্মান অনেক। তাই আন্টির কথা গুলো আমাকে ভিষন ভাবে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু, তোর তো কোনো দোষ নেই। তাহলে আমি তোকে কেন এভোয়েড করলাম? সরি স্নেহা! আমাকে মাফ করে দে প্লিজ!”

স্নেহা কান্না মেশানো কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তুই কেন সরি বলছিস? সরি তো আমার বলা উচিত। আমি জানি আদনান, আমার মামনি তোর সাথে এমন ব্যবহার করা একদম উচিত হয় নি। কিন্তু, কি করবো বল? মা তো, মা যেমনই হোক নাহ কেন, মা তো মা। তার সাথে কি রাগ দেখাবো, বল? আমি আমার মামনির হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আদনান!”

–” ধুর পাগলী! কি বলছিস এইসব? তোর মা তো আমার মায়ের মতোই। হয়তো ওনি বুঝতে পারে নি। আমার হয়তো একটু কষ্ট লেগেছে, কিন্তু আমি আন্টির উপর রাগ করি নি। ওনি একদিন নিজেই বুঝতে পারবেন, দেখিস। একটু সময় দে। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তুই কান্না অফ কর। তুই জানিস নাহ, আমি তোর কান্না দেখতে পারি নাহ। চোখ মুছ, কান্না অফ কর।”

স্নেহা চোখ মুছে একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান!”

আদনান আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। স্নেহার এই কন্ঠ টাহ আদনানের কি যে ভালো লাগে। মনে হয় সব সময় শুনতেই থাকি। কান্না করার পর মেয়েটার এই ভেঙে যাওয়া গলাটাহ এতো সুন্দর শোনায় যে, আদনান যেন হারিয়ে যায়। এতো মিষ্টি লাগে তার কাছে। স্নেহা আবার বলে ওঠে,
–” আদনান শুনতে পাচ্ছিস?”

আদনান মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম! পাচ্ছি বল।”

–” আজ একটু দেখা করবি?”

–” কোথায় আসবো?”

–” ভার্সিটির পাশের পার্ক টায় আই।”

–” আচ্ছা! কখন?”

–” বিকালে ৫:০০ টায়।”

–” আচ্ছা আসবো।”

স্নেহার সাথে আরও কিছু সময় কথা বলে ফোন রেখে দেয় আদনান। মন টাহ বড্ড ফুরফুরে হয়ে গেছে। এই কয়দিন স্নেহাকে এভোয়েড করে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। কিন্তু, সে নিজের অনুভুতি কে প্রোশ্রয় দেয় নি, প্রোশ্রয় দিয়েছে বন্ধুত্বের। স্নেহার কাছে তার বন্ধু হয়ে থাকতে চায় সে। আর তার বার্বিডল একান্তই তার অনুভুতি, আর সেইটার ভাগিদার স্নেহাকেও হতে দিবে নাহ সে।


শিশিরের আজ হাফ টাইম অফিস। তাই দুপুরে এসে গোসল করে, খেয়ে একটু ঘুমিয়েছে। এখন টিভি দেখছে। আহিয়া রহমান শিশিরকে এক কাপ চা বানিয়ে এনে দেন। আজ সকালে ছোয়ার সাথে একটু ম্যাসেজে কথা হয়েছিলো। আর কথা হয় নি। কিন্তু, শিশিরের মন মেজাজ তাতেই ভালো আছে।

আহিয়া রহমান শিশিরের পাশে সোফায় বসেন। তারপর বলে ওঠে,
–” শিশির, বাপ!”

শিশির চা খেতে খেতে বলে ওঠে,
–” বলো মা!”

আহিয়া রহমান একটু সময় নিয়ে বলে ওঠে,
–” তোর তো বিয়ের বয়স হচ্ছে। আর আমারও বয়স হচ্ছে। আমারও তোর মন চাই, বাড়িতে বউমা আসুক। নাতি নাতনি দিয়ে ঘরে ভরে উঠুক। আমি তাদের গল্প বলবো, খাওয়াবো, খেলবো।”

শিশির কোনো কথা বলছে নাহ। চুপচাপ মায়ের কথা শুনছে। আহিয়া রহমান আবার বলে ওঠে,
–” শিশির! বাপ! বলছিলাম যে, তোর বাবার বন্ধু রায়হান শিকদার আছে নাহ? ওনার মেয়ের নাম রিফা! এইবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে উঠেছে। তোর যদি পছন্দ হয় তাহলে আমরা ওর সাথে তোর বিয়ের কথা বলতে পারি।”

আহিয়া রহমানের কথা শুনে চমকে উঠে শিশির। কি বলছে এইসব তার মা? বিয়ে? শিশির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! আমি এখনও বিয়ের জন্য প্রস্তুত নাহ। আর আমি এইসব নিয়ে এখন ভাবছি নাহ। পরে দেখা যাবে।”

আহিয়া রহমান একটু রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” পরে কবে শুনি? আমি মরে গেলে?”

শিশির একটু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! কি বলছো তুমি এইসব?”

আহিয়া রহমান দাঁড়িয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তাছাড়া আর কি বলবো? পোড়া কপাল আমার। এ জন্মে আর তোর সংসার দেখা আমার কপালে নাই। যাহ খুশি কর। আমার কথার কোনো দাম আছে তোর কাছে? তোর বাপই কোনোদিন দাম দিলো না, আর তোরা কি দিবি? যাহ, আমার কথা আর কারো শোনা লাগবে নাহ।”

আহিয়া রহমান রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়। শিশির মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। ভাগ্যিস! আদনান আর সাঝ কেউ বাসায় নেই। আদনান বাহিরে আর সাঝ কোচিং গেছে। শিশির টিভির দিকে তাকালো। কিন্তু টিভি দেখতে ভালো লাগছে নাহ তার। তাই টিভি অফ করে নিজের রুমে চলে আসে শিশির।

বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন হাতে নিয়ে ডাটা অন করে দেখে ছোয়া অনলাইনে আছে কি না। ছোয়া অফলাইনে। শিশির আবার ডাটা অফ করে দেয়। তারপর চোখ বন্ধ করে মায়ের কথাগুলো ভাবে। বউ? এমন সময় ছোয়ার মায়াবী মুখ খানা ভেসে উঠে শিশিরের সামনে।

তাড়াতাড়ি চোখ খুলে শিশির। আচ্ছা! ছোয়া কি তার বউ হতে পারে না? নাহ, পারে না। ছোয়ার হয়তো আরও ভালো জায়গায় বিয়ে হবে। তার থেকে অনেক রিচ ফ্যামিলির মানুষ হয়তো ছোয়াকে বিয়ে করবে। তাতে ছোয়া অনেক সুখে থাকবে বলে আশা করা যায়। তার এই টানাটানির সংসারে ছোয়াকে কেন আনবে?

ছোয়ার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাবে? আধশোয়া থেকে উঠে বসে শিশির। ছোয়ার প্রতি নিজের অনুভুতি কে আনতে চায়নি শিশির, কিন্তু নিজেকে আটকাতেও পারছে নাহ। ছোয়ার অন্য জায়গায় বিয়ে হবে, ছোয়া অন্য কাউকে নিয়ে মগ্ন থাকবে, মাঝরাতে ছোয়ার গরম নিশ্বাস অন্য কেউ উপভোগ করবে, ছোয়াকে স্পর্শ করবে অন্য একজন পুরুষ, ভাবতেই শিশিরের বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে।

এ কোন মায়ায় আটকালো সে? যদি ছোয়াকে নাহ পায়, তাহলে? ইশশশ,,, নিজের অবস্থান যদি আর একটু ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারতো শিশির, তাহলে নিঃসংকোচে ছোয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারতো। মায়ের ইচ্ছেও পুরন হতো আর নিজের….

শিশির ওয়াড্রোব থেকে টিশার্ট আর জিন্স বের করে পরে নিলো। বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে, চুল ঠিক করে মাকে বলে বেরিয়ে গেলো একটু হাঁটার উদ্দেশ্যে।


আদনান পার্কের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে তার বার্বিডলের জন্য। একটা রিকশা এসে থামে তার পাশে। রিকশার দিকে তাকিয়ে থমকে যায় আদনান। তার কাছে মনে হচ্ছে, রিকশা থেকে কোনো পরি হয়তো নামছে। স্নেহাকে যেন তার কাছে পরির মতো লাগছে।

স্নেহা একটা টাইম ফুল কালারের ঘাগরা সাথে কমলা কালারের ফতুয়া, আর গলায় অফ-হোয়াইট কালারের স্কার্ফ পরেছে, ছেড়ে দেওয়া চুল সাথে চোখে টানা কাজল, ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক। আদনানের কাছে যেন পরীর মতো লাগছে তার বার্বিডলকে।

স্নেহা এগিয়ে এসে আদনানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। কিন্তু, স্নেহার চোখে পানি এসে ভিড় করতে থাকে। এই মানুষ টাহ তার মায়ের কথায় কষ্ট পেয়ে তাকে এভোয়েড করতে চেয়েছিলো। আদনানের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ন শরীরের উপর দিনের শেষ বেলার রোদ পড়ে আছে। এক অন্য রকম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে আদনানের শরীরে।

আদনান তো একভাবে তাকিয়ে আছে তার বার্বিডলের দিকে। আদনান কে এরকম ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নেহা কিছুটাহ লজ্জা পায়। তাও নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে? এখানে দাড়িয়ে থাকবি নাকি? ভেতরে যাবি নাহ?”

স্নেহার কথাই আদনানের ধ্যান ভাঙে। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” চল।”

আদনান আর স্নেহা ভেতরে চলে যায়। দুইজনে মিলে অনেক গল্প করলো, হাটা হাটি করলো, হালকা বুট, বাদাম, ছোলা খেলো। স্নেহার প্রিয় ফুচকাও বাদ গেলো নাহ। রাত ৭:৩০ স্নেহাকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আদনান বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।


সময়ের স্রোত চলমান। চলতে থাকে নিজ গতিতে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে নাহ। সে তার মতো করে চলতেই থাকবে। সেকেন্ড যায়, মিনিট যায়, ঘন্টা যায়, দিন – রাত চলে যায়। আর এই সময়ের সাথে চলতে থাকে মানুষ গুলো।

শিশির আর ছোয়ার এই কয়দিন ম্যাসেজে বেশ ভালোই কথা হয়েছে। কিন্তু সব কথা হয়েছে চ্যাটিং এর মাঝে, শিশির ছোয়ার প্রতি কেমন জানি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে আটকাতে চাইছে কিন্তু পারছে নাহ। আদনানের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা মাঝ পথে। আর কয়েকটাহ দিলেই শেষ হয়ে যাবে। স্নেহাকে কফিশপ, পার্কে গিয়ে পড়ায় অনেক হেল্প করেছে আদনান। আর স্নেহার পরীক্ষা গুলো ভালোই হচ্ছে। আগামীকাল থেকে সাঝের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু।

সাঝ নিজের রুমে বসে পড়ছে। আগামীকাল বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। মারাত্মক চিন্তা হচ্ছে সাঝের। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে পড়ছে। এই কয়দিন অনেক খেটে পড়াশোনা করেছে। সব সময় নিজের রুমে বই নিয়ে বসে থেকেছে। প্রতিদিন কোচিং করেছে। কিন্তু, তাও চিন্তা তো হয়ই।

শিশির সাঝের রুমে এসে দেখে সাঝ পড়ছে। সাঝের কাছে এসে দাড়াতেই সাঝ শিশিরের দিকে তাকায়। শিশির সাঝের মাথায় হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” ভয় লাগছে?”

সাঝ মলিন মুখ করে বলে ওঠে,
–” হুম!”

শিশির মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ভয়ের কিছু নেই। আমি জানি, আমার বোন বেস্ট স্টুডেন্ট। সে ঠিক ভালো রেজাল্ট করবে ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ তাকে নিরাশ করবেন নাহ।”

সাঝ মুচকি হাসি দেয়। শিশির সাঝের কপালে একটা ভালোবাসার স্নেহমাখা পরশ একে দিয়ে বলে ওঠে,
–” পড়! মন দিয়ে পড়।”

–” হুম!”

শিশির চলে যায়। সাঝ শিশিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ ভাইয়ের ভালোবাসাময় কথাগুলো শুনে কেমন জানি জোর পাচ্ছে সাঝ। মুচকি হাসি দিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়া শুরু করে সাঝ।


সাঝের পরীক্ষা গুলো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো। পরীক্ষার দিন গুলো তে আদনানের পরীক্ষা নাহ থাকলে আদনান নিয়ে যেতো নিয়ে আসতো আর নাহলে শিশির নিয়ে যেতো নিয়ে আসতো। সাঝের পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।

সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। সাঝ বড্ড চুপচাপ হয়ে খাবার খাচ্ছে। শিশির সাঝের ব্যাপার টাহ খেয়াল করে। শিশির সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাঝ! বোন! কি হয়েছে তোর? এতো চুপচাপ কেন?”

সাঝ মলিন হেসে বলে ওঠে,
–” কিছু নাহ ভাইয়া! আমি ঠিক আছি।”

শিশিরের যেন কথাটাহ বিশ্বাস হলো নাহ। কিন্তু, এখানে বাবা, মা আছে তাই হয়তো সাঝ কিছু বলছে নাহ। শিশিরও আর কিছু নাহ বলে খাবার খেতে থাকে।

সাঝ নিজের রুমে মন মরা হয়ে বসে আছে। শিশির সাঝের রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কিছু সময় বোন কে খেয়াল করে। সাঝের এই চুপচাপ ভালো ঠেকছে তার। কি হয়েছে তার বোনের? শিশির এগিয়ে আসতেই সাঝ শিশিরের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দেয়। শিশির যেন সাঝের এই হাসিতে তৃপ্তি পায় নাহ। শিশির সাঝের পাশে বসে বলে ওঠে,
–” সাঝ! কলিজা! কি হয়েছে তোর?”

সাঝের চোখ টাহ ছলছল করে উঠে। সাঝকে এমন ভাবে দেখে শিশিরের বুক টাহ ধুক করে উঠে। কি হয়েছে তার বোনের? শিশির সাঝকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” বোন আমার! বলনা, কি হয়েছে তোর?”

সাঝ আর আটকাতে পারে নাহ। ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শিশির অনেক ভয় পেয়ে যায়। শিশির বোনকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে সোনা? বল কি হয়েছে?”

সাঝ শিশিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! জানো? আমি মেডিকেল কোচিং এ খোঁজ নিয়েছিলাম। ওরা প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন চেয়েছে। শুধু তাই নাহ, ওখানে ভর্তি হওয়ার জন্যও বারো হাজার টাকা চেয়েছে।”

শিশির কিছুটাহ চমকে উঠে। এতো টাকা? শিশির সাঝের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এর জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছিস? আর তাছাড়া আমাকে বলছিলি নাহ কেন? আমি আগামীকাল রাতেই তোকে টাকা দিয়ে দিবো।”

সাঝ কান্না বন্ধ করে ছলছল চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। শিশির সাঝের মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া কে নাহ বলে একা একা কষ্ট পাচ্ছিলি। আমি আছি নাহ? তোকে বলেছিলাম নাহ? আমি রক্ত বেঁচে হলেও তোকে টাকা জোগাড় করে দিবো। এরপর থেকে টাকা নিয়ে আর ভাববি নাহ। এসে আমাকে সব বলবি। ঠিক আছে?”

সাঝ আবার শিশিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শিশির সাঝের মুখ ধরে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” আমার কলিজার চোখে যেন আর পানি নাহ দেখি। ঠিক আছে?”

–” হুম!”

শিশির সাঝের কপালে একটা চুমু দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। সাঝ শিশিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঝ তো ভেবেছিলো তার আর মেডিকেল পড়া হবে নাহ। এতো খরচ কেমনে সামলাবে তার ভাই? তাই ভাইয়াকে বলতেও পারছিলো নাহ সে। কিন্তু, তাও তার ভাই জেনে নিয়েছে। সাঝের চোখে পানি আর মুখে হাসি ফুটে উঠে।


শিশির নিজের রুমে আধশোয়া হয়ে আছে। ফোন টাহ নিয়ে ডাটা অন করতেই ছোয়ার ম্যাসেজ টুংটাং করে আসে। শিশিরের সাথে ছোয়ার বেশ ভালোই কথা হয় চ্যাটিং এ। ছোয়ার সাথে শিশিরের মাঝে দুইদিন বাস স্টপে দেখাও হইছে। এছাড়া ওরা আলাদা দেখাও করে নি, ফোন কলেও কথা বলে নি। ওদের সব কথা চ্যাটিং এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

শিশির ছোয়ার ম্যাসেজ সিন নাহ করেই অফলাইন হয়ে যায়। আগামীকালের মাঝে এতো টাকা কোথায় পাবে সে? ভাবছে শিশির। পাশে আদনান ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু, শিশিরের চোখে ঘুম নেই। শিশির আবার অনলাইনে এসে ছোয়ার ম্যাসেজ সিন করে।

ছোয়া = ” Assalamualaykum!”
শিশির = ” Walaykum assalam…”
ছোয়া = ” Mon kharap naki cintito?”
শিশির = ” Amon mone hoyoar karon ki?”
ছোয়া = ” Shob shomoy salam dea akta flower emoji den…aaj den nai..tai mone holo..hoito apnar mon kharap…..”
শিশির = “…………”
ছোয়া =” Ki hoyeche?”
শিশির =” serokom kichu nah…..amni aktu cintito…shavabik niomer cinta….”
ছোয়া = ” Oh!”

এরকম আরও কিছু সময় কথা চললো তাদের। তারপর ছোয়া অফলাইনে চলে যায়। শিশিরের চোখে ঘুম আসছে নাহ। কি করবে ভেবেই পাচ্ছে নাহ শিশির। আগামীকাল যে ভাবেই হোক বারো হাজার টাকা জোগাড় করতেই হবে।

সকালে উঠে শিশিরে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে তার। সারা রাত সেরকম একটা ঘুম হয়নি তার। টাকার চিন্তা করেছে সে। মাকে বলে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয় শিশির।

অফিসে এসে বসতেই তার কলিগ মি. সাইফুল এগিয়ে আসেন। মি. সাইফুলের সাথে শিশিরের সম্পর্ক টাহ অনেক ভালো। মি. সাইফুল শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মি. শিশির! প্রোমোশন লিস্ট নিয়ে চিন্তিতো মনে হচ্ছে।”

শিশির হালকা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,
–” প্রোমোশন?”

মি. সাইফুল কিছু টাহ অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” কেন আপনি জানেন নাহ?”

শিশিরও অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” কি জানবো?”

–” হায় হায়! এই অফিসের ম্যানেজার পদ বেশ কিছুদিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। এতোদিন সবার কাজের পারফরম্যান্স দেখা হয়েছে। আজ এই অফিসের যে কোনো একজনের প্রোমশন হবে আর তাকে ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।”

শিশির চুপ করে মি. সাইফুলের কথা শুনছে। এমন সময় একজন অফিসের লোক এসে সব স্টাফ কে ডাকছে। সবাই হল রুমে দাড়িয়ে আছে। এমন সময় তাদের বস আসে। সবাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে তাদের বস মি. সাজিদের দিকে। মি. সাজিদ স্পিকারের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” গুড ইভিনিং লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান। আজ আপনাদের এখানে জড়ো করা হয়েছে একটি উদ্দেশ্যে, একটি সুখবর নিয়ে। আপনারা জানেন, আমাদের অফিসে গত তিন মাস কোনো ম্যানেজার নেই। আমি চাইলেই বাইরে থেকে ম্যানেজার নিতে পারতাম। কিন্তু, পরে আমি ভাবলাম, যে তার থেকে বড় কাজ হবে আমার অফিসের স্টাফদের মাঝে যে বেশি এক্টিভ কাজে তাকে ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া। তাই আমি এই তিন মাস আপনাদের কাজের গতিবিধি লক্ষ্য করছিলাম। আমি সবার কাজের ভিত্তিতে বলছি, আপনাদের আজ থেকে নতুন ম্যানেজারের নাম। মি. শিশির রহমান আজ থেকে এই কম্পানির নিউ ম্যানেজার। ওয়েলকাম মি. শিশির রহমান!”

শিশির যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। কি শুনলো এইটা সে? তার প্রোমোশন হয়েছে? নিজের জায়গা কে পাকাপোক্ত করতে পেরেছে? বিশ্বাস হচ্ছে নাহ শিশিরের। চারিদিকে করতালি ভেসে আসতেই শিশির চমকে উঠে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মি. সাজিদ এগিয়ে এসে শিশিরের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে ওঠে,
–” ওয়েলকাম, মি. শিশির রহমান!”

শিশির চোখে পানি মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
–” Thank you, sir!”

মি. সাজিদ নিজে শিশিরকে তার নতুন কেবিনে দিয়ে আসে। আর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এইটা তোমার এই অফিসের নতুন জায়গা। তোমাকে আর অন্য সবার সাথে কাজ করতে হবে নাহ। নিজের একটা পার্সোনাল রুম হয়ে গেলো। ওয়েলকাম! মন দিয়ে কাজ করো।”

মি. সাজিদ চলে গেলো। শিশির চোখে পানি নিয়ে পুরো রুম ঘুরে দেখলো। তার কতোদিনের স্বপ্ন আজ পুরন হলো। নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে সে। আর কোনো সমস্যা থাকবে নাহ তার। কোনো অভাব থাকবে নাহ, টানাটানি থাকবে নাহ। স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবে।

শিশির ভাবছে কাকে ফোন দিয়ে জানাবে। পরে ভাবলো নাহ আগে থেকে কাউকেই জানাবে নাহ। সবাইকে বাসায় গিয়ে জানাবে। সবার আনন্দ টাহ নিজের চোখে দেখবে। হঠাৎ শিশিরের মনে পড়লো, ছোয়ার কথা। আচ্ছা! এখন তো সে নিজের জায়গা শক্ত করতে পেরেছে। এখন কি ছোয়াকে নিজের কাছে আনতে পারবে নাহ?

শিশির অনুভব করতে পেরেছে, সে ভালোবেসে ফেলেছে সেই হঠাৎ দেখা মেয়েটিকে। এতোদিন কথা বলায় আরও বুঝেছে নাহ চাইতেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে। এখন নিশ্চয় আর কোনো বাঁধা নেই। এইটা কি হলো তার সাথে? সব সুখ যেন একসাথে ধরা দিলো তার হাতে। শিশির কেবিনে থাকা সোফার পর বসে মুখে হাত দিয়ে ফুফিয়ে কান্না করে উঠে। কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে তার। তাহলে, এইটাই কি সুখের কান্না?


সবাই মাঝের রুমে বসে আছে। আদনান ফোন চালাচ্ছে, আজিজ রহমান টিভি দেখছে, আহিয়া রহমান আর সাঝ গল্প করছে। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে সাঝ গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখে শিশির হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। সাঝ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম! ভাইয়া!”

শিশির সাঝের মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম!”

সাঝ খেয়াল করে শিশিরের হাতে দুই বক্স মিষ্টির প্যাকেট। সাঝ শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! মিষ্টি কেন?”

শিশির কোনো কথা নাহ বলে মুচকি হেসে ভেতরে আসে। সাঝের কথা শুনে সবাই শিশিরের দিকে তাকায়। আজ শিশিরকে একটু বেশিই আনন্দদিত দেখা যাচ্ছে। আহিয়া রহমান এগিয়ে আসতেই শিশির আহিয়া রহমানকে জড়িয়ে ধরে। সবাই কিছুটা অবাক হয়ে আছে। কি হয়েছে আজ শিশিরের?

শিশির মিষ্টির প্যাকেট টাহ আহিয়া রহমানের হাতে দিয়ে সেখান থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে আজিজ রহমানের সামনে বসে। আজিজ রহমানও বেশ অবাক হয়ে আছে ছেলের কান্ডে। শিশির মুচকি হেসে আজিজ রহমানকে একটু মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আব্বু! আপনার ছেলের পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়েছে। সে নিজের স্থান তৈরি করতে পেরেছে। নিজের সংসারের সব টানাটানি দুর করার ক্ষমতা পেয়ে গেছে সে।”

সবাই অবাক হয়ে শিশিরের কথা শুনছে। কারোর মাথায় কিছু ঢুকছে নাহ। শিশির আবার বলে ওঠে,
–” আব্বু! আজ আমার প্রোমোশন হয়েছে। আমি এই বিশাল কম্পানির ম্যানেজার হয়ে গেছি।”

আদনান শিশিরের পাশে এসে বসে উৎফুল্ল কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! কি বলছিস তুই এইসব? সত্যি?”

শিশির মুচকি হেসে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়। আজিজ রহমান শিশিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শিশিরও নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছলছল চোখ নিয়ে। আহিয়া রহমানেরও মুখে হাসি চোখে পানি। এরপর শিশির নিজের হাতে সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। সবার মাঝে যেন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।

শিশির ফ্রেস হয়ে আসলে সবাই একসাথে খেতে বসে। শিশির খেতে খেতে বলে ওঠে,
–” মা! আজ আমি একটা বাসা দেখে এসেছি। আর এই জন্যই আমার আসতে লেট হয়েছে। আমি ঠিকানা দিয়ে যাবো, আগামীকাল তুমি আর সাঝ গিয়ে বাসা টাহ দেখে এসো। চারটাহ বেডরুম, একটা ডাইনিং + ড্রইং, একটা কিচেন, বেডরুমের সাথে এট্যাচ্ড বাথ আর বারান্দা।”

আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তাহলে তো অনেক বড় ফ্লাট। অনেক টাকা ভাড়া নিশ্চয়।”

–” আব্বু! চিন্তা নেই। আপনার ছেলের এ্যাবিলিটি হয়েছে। এই বাসাটাহ আমি অনেক আগেই দেখেছিলাম। কিন্তু সামর্থ ছিলো নাহ। আজ আর নিজেকে সামলাতে পারি নি। তাই সোজা বাসার মালিকের সাথে কথা বলে এলাম।”

আদনান বলে ওঠে,
–” ভালোই হলো! আমার তো অনেক ভালো লাগছে।”

সাঝ আনন্দের সাথে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! আমরা নতুন বাসায় কবে উঠবো?”

শিশির বলে ওঠে,
–” তোদের পছন্দ হলে পরের মাসেই উঠবো।”

সবাই হাসি মুখে খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়। কিছু সময় পর শিশির সাঝের রুমে এসে দেখে সাঝ একটা বই পড়ছে। শিশিরকে নিজের রুমে দেখে সাঝ বলে ওঠে,
–” ভাইয়া!”

শিশির এগিয়ে এসে সাঝকে বারো হাজার টাকা দিয়ে বলে ওঠে,
–” তোর কোচিং এ ভর্তি হওয়ার টাকা।”

সাঝ টাকাগুলো নিয়ে ছলছল চোখে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে। শিশির সাঝকে আগলে নিয়ে বলে ওঠে,
–” মন দিয়ে পড়াশোনা কর। অনেক বড় ডক্টর হতে হবে ইনশাআল্লাহ! বুঝলি?”

–” হুম!”

শিশির নিজের রুমে চলে যায়। সাঝও মুচকি হাসি দিয়ে টাকাটা তুলে রাখে। আসলে আজ শিশিরকে অফিস থেকে ত্রিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অভিনন্দন উপহার হিসাবে। আর তাতে শিশিরের অনেক উপকার হয়ে গেলো। সব সমস্যার সমাধান। এখন শুধু ছোয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসা বাকি। এখন তার জীবন কে পরিপূর্ণ করতে ছোয়াকে লাগবে। কারন শিশির বুঝে গেছে, তার জীবনে ছোয়াকে দরকার। শিশির বুঝে গেছে, নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলছে মেয়েটিকে। আর অনেক অনেক বেশি ভালোবাসে সেই হঠাৎ দেখা মায়াবী কন্যাকে। যাকে নিয়ে বাঁধবে #_লাল_নীল_সংসার_!!!!!!

#_চলবে…………🌹