#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২৭_
বিনা সজ্জিত বাসর ঘরে বসে আছে স্নেহা। আদনান বাথরুমে ফ্রেশ হচ্ছে। স্নেহা বিছানার উপর বসা। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেই স্নেহা। একদম সাদামাটা রুম আদনানের৷ একটা বিছানা,, পাশেই একটা স্টাডি টেবিল,, যেখানে অনেক বই আছে,, একটা আলমারি,, একটা ছোট্ট ড্রেসিং টেবিল,, আর কিছু নেই।
আজ স্নেহা আর আদনানের বাসর রাত,, কিন্তু রুমে কোনো সাজ সজ্জা নেই। অবশ্য থাকবেই বা কি করে? এমন অপ্রত্যাশিত বিয়েতে সাজিয়ে রাখা বাসর ঘরে পদার্পন করার আশা করাটাই অন্যায়। আদনানের পরিবার যে তাকে সাদরে গ্রহন করেছে এইটাই কি কম?
স্নেহা একটা জোরে নিশ্বাস নেয়। স্নেহা কখনো ভাবেই নি আদনানের পরিবার তাকে এমন ভাবে মেনে নিবে। কত ভালো এরা। যদিও আদনানের বাবা কিছুটাহ রেগে আছে এখনও,, কিন্তু স্নেহার বিশ্বাস সময়ের সাথে সাথে সেই রাগ মিলিয়ে যাবে। সবার মাঝেই কিন্তু ভাব দেখা গিয়েছিল,, হয়তো সে বড় ঘরের মেয়ে সেই জন্য। স্নেহা ভাবতে থাকে কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া কাহিনি গুলো……….
#_Flashback_………..
রহমান পরিবারের সবাই মাঝের রুমে উপস্থিত। শিশির আর আজিজ রহমান সোফায় বসে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। ছোয়া আর আহিয়া রহমান আর একটা সোফায় বসে গল্প করছে। সাঝ মাত্র খাওয়া শেষ করেছে,, ওভার খাওয়ার হয়ে গেছে তাই পায়চারি করছে।
এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে সাঝ গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখে আদনান। সাঝ আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আই!”
আদনান একটা ঢুক গিলে বলে ওঠে,
–” বাকি সবাই কোথায়?”
–” এইতো মাঝের রুমেই আছে,, আই!”
আদনান মাথা টাহ হালকা পিছন দিকে ঘুরিয়ে বলে ওঠে,
–” স্নেহা আই!”
আদনানের কথায় স্নেহা পেছন থেকে এগিয়ে আসে। লাইটের আলো স্নেহার দিকে পড়তেই সাঝ কিছুটাহ চমকে উঠে,, লাল লেহেঙ্গা পরা,, ভারি সাজে,, খোপা চুলে গজরা লাগানো এক নারী। আর সাঝ এই নারী কে চিনে,, স্নেহা! যার পরিচয় আদনানের ফ্রেন্ড। কিন্তু,, এরকম সাজে এখানে কেন সে?
আদনান সাঝের দিকে তাকিয়ে দেখে সাঝ অবাক হয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঝ কোনো কথা নাহ বলে ভেতরে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহা আর আদনানের দিলে। স্নেহা ভয়ে আদনানের হাত চেপে ধরে আছে।
আদনান বুঝতে পারছে স্নেহা ভয় পাচ্ছে। যদিও সে নিজেও কিছুটাহ ভিতু হয়ে আছে। সবাই স্নেহাকে চিনে। শিশিরের বিয়েতেও স্নেহা এসেছিলো,, সবার সাথে পরিচয়ও হয়েছে। কিন্তু,, সে এখানে এরকম সাজে কেন এসেছে? শিশির আদনানের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আদনান! এইসব কি?”
আদনান একপলক স্নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে,, মেয়েটার মুখ ভয়ে একদম শুকিয়ে আছে। আদনান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাদের নাহ জানিয়ে অনেক বড় একটা কাজ করে ফেলেছি। জানি না ন্যায় করলাম নাকি অন্যায়,, কিন্তু এছাড়া আমার কোনো রাস্তা ছিলো নাহ। আমি স্নেহাকে বিয়ে করেছি। আজ থেকে স্নেহা এই রহমান পরিবারের ছোট বউ।”
আদনানের কথা শুনে সবাই চমকে উঠে। কি বলছে আদনান এইসব? আহিয়া রহমান এগিয়ে এসে আদনানের দিকে কম্পিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” আ আদ আদনান! বাপ! কিক কি বলছিস তুই এইসব?”
–” মা! আমি ঠিক বলছি। স্নেহা তোমার ছোট ছেলের বউ।”
শিশির বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে আদনান? সবটাহ ক্লিয়ার করে বল।”
আদনান আস্তে আস্তে সব বলে দেয়। শিশির আর ছোয়াও বুঝতে পারে আদনানের এমন মন মরা হয়ে থাকার কারন। শিশির এক পলক আজিজ রহমানের দিকে তাকায়। আজিজ রহমান এক দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।
শিশির একটা নিশ্বাস নিয়ে আজিজ রহমানের দিকে এগিয়ে যায়। সবাই শিশিরের দিকে তাকায়। আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকাতেই শিশির বলে ওঠে,
–” আব্বু! আদনানকে কোনো প্রকার বকা আপনি করবেন নাহ আশা করি। কারন,, এই মুহুর্তে আদনানের বউ এখানে উপস্থিত। আদনান যদি এই বিয়ে টাহ নাহ করতো,, স্নেহার হয়তো অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যেতো। কিন্তু,, এতে আপনার সন্তান সুখে থাকতো নাহ।”
ছোয়া এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” মাফ করবেন, আব্বু! আমি কিছু কথা বলতে চাই,, আসলে আপনি এই কয়েকদিন আদনানকে খেয়াল করেছিলেন কি নাহ,, আমার জানা নেই। কিন্তু,, আমি খুব ভালো ভাবে খেয়াল করেছি। আদনান সব সময় মন মরা হয়ে থাকতো,, রুম থেকেও খুব একটা বের হতো নাহ। সব সময় চুপচাপ থাকতো। হাসি খুশি ছেলেটার হঠাৎ এমন হয়ে যাওয়ার কারন খুঁজে পাচ্ছিলাম নাহ। বুঝতে পারছিলাম নাহ কি হয়েছে তার। কিন্তু,, এখন আমার কাছে সবটাহ পরিষ্কার। এইসব কিছুর মূল কারন ছিলো,, নিজের প্রিয় মানুষ টাহ কে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনা। আপনি হয়তো একটা মেয়ে দেখে আদনানকে বিয়ে দিতেন,, আদনানও আপনাদের দিকে তাকিয়ে বিয়ে টাহ করতো। কিন্তু আদনান কখনো সুখি হতো নাহ। কারন,, আদনানের সুখ যে এই মেয়েটাহ।”
শিশির বলে ওঠে,
–” আব্বু! ছোয়া ঠিক কথায় বলেছে। আমি জানি ওরা এরকম হুট করে এমন কাজ করা ঠিক হয় নি। কিন্তু,, এইটাও বুঝতে হবে,, পরিস্থিতি টাই এরকম ছিলো হয়তো।”
এতো সময় আজিজ রহমান চুপ ছিলেন। কিন্তু,, এখন গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সব ঠিক আছে। কিন্তু,, আদনান যে এখনও বেকার। এখনও পড়ালেখাও শেষ হয় নি। তার উপর আবার স্নেহা বড় ঘরের মেয়ে। কিভাবে কি হবে?”
শিশির হালকা হেসে স্নেহার সামনে দাড়ায়। স্নেহা যেন এতে আরও ভয় পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে থাকে স্নেহা। শিশির স্নেহার মাথায় হাত রেখে বলে ওঠে,
–” আব্বু! আমি যদি এতো গুলো মানুষের ভরণপোষণের ব্যাবস্থা করতে পারি,, তাহলে,, আমার এই মিষ্টি ছোট বোনেরও ভরনপোষনের ব্যবস্থা আমি ঠিকই করতে পারবো,, ইনশাআল্লাহ!”
স্নেহা ছলছল চোখে শিশিরের দিকে তাকায়। গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা অশ্রুকণা। শিশির মুচকি হেসে আঙুল দিয়ে স্নেহার চোখ মুছিয়ে দেয়। তারপর শিশির আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আর তাছাড়া,, আব্বু,, আদনান তো একদম বেকার নাহ। টিউশনি করে,, কিছুটাহ আয় করে। তারপর স্টাডি শেষ হলে ভালো চাকরি করবে,, তাহলে সমস্যা কোথায়?”
আজিজ রহমান বলে ওঠে,
–” তাহলে আর কি? আহিয়া! ঘরে তুলো ছোট বউমাকে।”
স্নেহা আর আদনানের চোখে মুখে হাসির রেশ ফুটে উঠে। ওরা ভাবেই নি এমন হবে সব কিছু। স্নেহার চোখ আবার ছলছল করে। কেন জানি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে স্নেহার। আহিয়া রহমান নিজের রুমে গিয়ে আবার ফিরে আসেন। হাতে একটা ছোট্ট বক্স। আহিয়া রহমান ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বউমা! ঘরে মিষ্টি আছে?”
–” জি মা! আপনার ছেলে সেইদিন এনেছিলো।”
–” যাও একটু মিষ্টি আর পানি নিয়ে এসো।”
ছোয়া সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। একটা ছোট্ট ট্রেতে করে মিষ্টি আর পানি নিয়ে আসে। আহিয়া রহমান স্নেহার সামনে দাড়ায়। স্নেহা মাথা নিচু করে রয়েছে। আহিয়া রহমান স্নেহার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে স্নেহার গলায় একটা চেইন পরিয়ে দেয়।
স্নেহা আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে সালাম দিলে আহিয়া রহমান হাসি মুখে সালামের উত্তর দেন। তারপার আহিয়া রহমান একটু মিষ্টি স্নেহা আর আদনানকে খাইয়ে দেয়। স্নেহার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে আহিয়া রহমান।
#_Present_………..
বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙে স্নেহার। সেইদিকে তাকিয়ে দেখে আদনান টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে। কিছু সময় আগে ছোয়া স্নেহাকে একটা সুতি শাড়ি পরিয়ে দিয়ে গেছে। আদনান একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট পরে আছে।
স্নেহা ভাবছে আজ থেকে সে আদনানের বউ। যাকে ভালোবাসে তার বউ সে। ভাবতেই এক অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে স্নেহার। এক অদ্ভুত অনুভুতি স্নেহাকে ঘিরে ধরে আছে। কিন্তু,, বাড়ির কথা মনে পড়লেই মন খারাপ লাগছে। কি জানি,, এখন বাড়ির পরিবেশ কি অবস্থায় আছে? ইয়াশ পেরেছে তো সবটাহ সামলিয়ে নিতে? ভাবনা হচ্ছে স্নেহার।
আদনান স্নেহার কাধে হাত রাখতেই কিছুটাহ কেঁপে উঠে স্নেহা। লজ্জাও লাগছে বেশ। আজ থেকে আদনান তার স্বামী ভাবতেই এক রাশ লজ্জা ভিড় করছে স্নেহার মুখে। আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”
–” হুম!”
–” চল। নামাজ পড়ে নিই!”
স্নেহা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়। দুইজনে একসাথে নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ পড়া হয়ে গেলে আদনান স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে। স্নেহাও আদনানকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” ভালোবাসি আদনান!”
–” আমিও অনেক ভালোবাসি আমার ককটেল সুন্দরীকে,, আমার বার্বিডলকে।”
আদনান স্নেহার কপালে একটা আলতো পরশ দেয়। স্নেহা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সেই পরশ। অসম্ভব ভালোলাগা সৃষ্টি হচ্ছে স্নেহার মনে। এক অজানা সুখ এসে ধরা দিচ্ছে তাকে। আদনান স্নেহার ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয়। আকড়ে ধরে স্নেহা আদনানকে।
★
#_৫_বছর_পর_…………
শিশির,, স্নিগ্ধ ( শিশির আর ছোয়ার ছেলে,, বয়স তিন বছর ),, আদনান,, ছোয়া দাড়িয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে। অপেক্ষা করছে একজনের। আজ যার স্বপ্ন পুরন হয়েছে। শুধু তার নাহ,, স্বপ্ন পুরন হয়েছে রহমান পরিবারের প্রতিটা সদস্যের। সবাই দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। এমন সময় স্নিগ্ধ কলেজের দিকে আঙুল তুলে বলে ওঠে,
–” ঐতো পিউমনি আততে।”
স্নিগ্ধর কথায় সবাই সেইদিকে তাকাতেই সবার চোখ জুড়িয়ে যায়। ছলছল করে উঠে প্রতিটা মানুষের চোখ। কারন,, তাদের সামনে এগিয়ে আসছে এই বাড়ির প্রতিটা মানুষের নয়নের মনি সাঝ।
সাঝের পরনে একটা গাঢ় নীল কুর্তি আর জিন্স,, তার উপর সাদা ডাক্তারি এপ্রোন,, চুল গুলো উচু করে বাধা,, গলায় ঝুলছে স্টেথোস্কোপ,, হাতে সার্টিফিকেট। সাঝ এগিয়ে এসে শিশিরের সামনে দাড়ায়। শিশির ছলছল চোখ নিয়ে সাঝকে দেখছে। আজ তার সব থেকে বড় স্বপ্ন পুরন হয়েছে। তার বোন আজ থেকে ডাক্তার।
সাঝ এগিয়ে এসে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে। শিশিরও বোনকে আগলে নেয়। সাঝ ফুফিয়ে কান্না করে উঠে। আদনান এগিয়ে এসে সাঝের মাথায় হাত রাখে।
……………..কেটে গেছে অনেকগুলো বছর তাই নাহ? আজ সাঝ ডাক্তার হয়েছে। পুরন করেছে নিজের স্বপ্ন। রহমান পরিবারে এসেছে অনেক পরিবর্তন। শিশির ম্যানেজার পোস্টেই রয়েছে,, নিজের বেতন বেড়েছে অনেক। যাহ দিয়ে সংসার খরচ মিটানোর পরও টাকা জমা করে ব্যাংকে।
ছোয়া অনার্স শেষ করেছে। কিন্তু,, মাস্টার্সে আর ভর্তি হতে পারেনি। শিশির বলেছিলো ভর্তি হতে কিন্তু,, ছোয়া রাজি হয় নি। কেননা,, ততদিনে তার সন্তান তাদের কোলে এসে গিয়েছিলো। তাই আর পড়তে চাই নি। নিজের সন্তানকে দুরে রেখে ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছে তার নেই। বাড়ির রানি হয়ে উঠেছে ছোয়া।
স্নিগ্ধ হলো ছোয়া আর শিশিরের ভালোবাসার চিহ্ন। বয়স মাত্র তিন বছর। বাড়ির সকলের আদরের মনি সে। বাড়ির সকলের জন্য ছোয়া একটু বকতেও পারে নাহ স্নিগ্ধকে। মারাত্মক চঞ্চল স্নিগ্ধ। সব সময় ঘর এলেমেলো করা,, আধো বুলি দিয়ে বাড়িকে পরিপূর্ণ করে রাখা তার কাজ।
আদনান স্টাডি শেষ করে একটা চাকরি করছে। বেতন ভালোই,, কিন্তু শিশিরের মতো এতো নাহ। কিন্তু,, এতে আদনানের কোনো সমস্যা হয় নাহ। কেননা,, তার নিজের খরচ এতো টাও বেশি নাহ। সময় গেলে,, কাজ করলে প্রোমোশন হবে। তাই সব সময় মন দিয়ে কাজ করে সে।
স্নেহা এই পরিবারে প্রথম থেকেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। উপর্যুক্ত করেছে নিজেকে। যে স্নেহা একটা সময় চা বানাতে পারতো নাহ,, এখন সে সব রান্না পারে। যদিও ছোয়া স্নেহাকে খুব একটা কাজ করতে দেয় নাহ। ছোয়া সব সময় নিজের বোনের মতো ভালোবাসা দেয় স্নেহাকে। স্নেহা আর আদনানের একটা মেয়ে হয়েছে। আদ্রিশা! বয়স মাত্র আট মাস। স্নেহা পড়াশোনা শেষ করলেও,, চাকরি করে নি। ইচ্ছে হয় নি তার। সে তার সন্তান,, শ্বশুর বাড়ির মানুষজন,, নিয়ে সংসার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। স্নেহার পরিবারের মানুষ জন প্রথমে নাহ মানলেও,, আদ্রিশা হওয়ার পর মেনে নিয়েছে তাদের।
সাঝ নিজের পড়াশোনা নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থেকেছে। আজ তাই তার স্বপ্ন পুরন হয়েছে। ভাইদের স্বপ্ন পুরন করেছে।
আজিজ রহমান ও আহিয়া রহমান এখন সব সময় শান্তির নিশ্বাস নেন। কেননা,, ভালো আছে তার পরিবার,, সুখে আছে তাদের তৈরি করা #_লাল_নীল_সংসার_!!!!!!!!!
#_চলবে…………..🌹
#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২৮_
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
আর কমলো চিন্তা আমার
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
হালকা হাওয়ার মতন
চাইছি এসো এখন
করছে তোমায় দেখে
অল্প বেইমানি মন
বাঁধবো তোমার সাথে
আমি আমার জীবন
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
চাইলে আস্কারা পাক
বেঁচে থাকার কারণ
আজকে হাত ছাড়া যাক
হুম.. ব্যাস্ততার আর বারণ
লিখবো তোমার হাতে
আমি আমার মরন
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
আর কমলো চিন্তা আমার
গান শেষ করতেই আবিরের ফোন বেজে উঠে। আবির মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে মায়ের কল এসেছে। আবির একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন কানে নিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যালো,, আম্মু!”
ফোনের ওপাশ থেকে মালতি ( আবিরের বাসা কাজের বুয়া ) বলে ওঠে,
–” ভাইজান,, আমি আফনার মা নাহ। আমি মালতি!’
–” ওহ! হ্যা বল।”
–” ভাইজান! আফনের মা অসুস্থ হইয়া ফড়ছে।”
আবির চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” মানে? আম্মু এখন কোথায়?”
–” আফনার মারে আমি আর ডেরাইভার মিলে ***** হাসফাতালে লইয়া আইছি। আফনি অহনি আহেন।”
–” আমি এক্ষুনি আসছি।”
আবির ফোন কেটে দিয়ে বন্ধুদের বলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। হসপিটালে এসে দৌড়ে রিসিপশন থেকে মায়ের কেবিন নাম্বার জেনে দৌড় দেয় আবির। কেবিনে আসতেই আবির দেখে মায়া চৌধুরী ( আবিরের মা ) বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হাতে স্যালাইন লাগানো।
আবির এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীর পাশে বসতেই মায়া চৌধুরী চোখ খুলে ছেলের দিকে তাকায়। আবিরকে চিন্তিত দেখে হালকা হেসে অসুস্থ গলায় বলে ওঠে,
–” ডক্টর বলেছে সেরকম কিছু হয় নি। চিন্তার কোনো কারন নেই,, একটু পরই ছেড়ে দিবে।”
আবির সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে মালতির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ডক্টর কোথায়?”
মালতি বলে ওঠে,
–” ডাক্তার আফা আইতাছে,, একখান ঐযে ইনজেকশান লইয়া আইতাছে। ঐ তো চইলা আইছে।”
মালতির কথা শুনে আবির সেইদিকে তাকাতেই যেন মুগ্ধ হয়ে যায়। একটা মায়াবী বাঙালী নারী ডাক্তার নার্সের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। আর এই নারী হলো সাঝ। সাঝ একটা লাল রং এর কুর্তির সাথে জিন্স,, উপরে ডাক্তারি এপ্রোন,, ছাড়া চুল,, গলায় স্টেথোস্কোপ,, চোখে হালকা কাজল আর হালকা লিপস্টিক,, বাহ! মাশাআল্লাহ! চমৎকার!
আবির একদৃষ্টিতে সাঝের দিকে তাকিয়ে আছে। সাঝ এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীকে একটা ইনজেকশন দিয়ে পাশে আবিরকে দেখে বলে ওঠে,
–” আপনি পেশেন্টের কে হন?”
সাঝের কথায় আবিরের ধ্যান ভাঙে। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার আম্মু!”
–” ওহ! চিন্তার কোনো কারন নেই। দুশ্চিন্তা থেকে এরকম হয়েছে। চিন্তামুক্ত রাখবেন ওনাকে। স্যালাইন টাহ শেষ হলে বাসায় নিয়ে যাবেন। আর এই মেডিসিসন গুলো টাইমলি দিবেন।”
–” ওকে!”
সাঝ চলে যায়। আবির সাঝের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্যালাইন শেষ হলে মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে আবির।
……………রাতের বেলা মায়া চৌধুরী আবিরের রুমে এসে দেখে আবির গিটার বাজাচ্ছে। মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বসতেই আবির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মু! তুমি এখানে কেন এসেছো? বাবান রুমে নাহ?”
–” হ্যা! এলাম তোর কাছে।”
–” আচ্ছা! আম্মু তোমার এতো কিসের দুশ্চিন্তা বলোতো? কি চিন্তা করো তুমি এতো?”
–” আমার সব চিন্তা তো তোকে নিয়ে। বিয়ে করবি নাহ?”
মায়ের কথাটাহ শুনতেই আবিরের সামনে সাঝের মুখ টাহ আবার ভেসে উঠে। কতটাহ স্নিগ্ধ মেয়েটার মুখ। কত সুন্দর! কত মায়াবী! অমায়িক! ছেলেকে এরকম ভাবনায় দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কি ভাবছিস এতো?”
মায়ের কথায় ঘোর কাটে আবিরের। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি বিয়ে করলে তোমার চিন্তা চলে যাবে?”
–” হুম! যাবে।”
–” ঠিক আছে! আমি বিয়ে করবো তাহলে,, কিন্তু আমার পছন্দের মেয়েকে।”
–” তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তুই শুধু বল,, মেয়েটাহ কে?”
–” বলবো,, পরে।”
–” কবে?”
–” কয়েকদিন পর। প্লিজ!”
–” আচ্ছা!”
–” যাও,, এখন গিয়ে ঘুমাও।”
–” আচ্ছা! যাচ্ছি!”
মায়া চৌধুরী চলে যায়। আবির গিটার পাশে রেখে বারান্দায় গিয়ে আকাশ দেখতে থাকে। আকাশে বড় চাঁদ উঠেছে। আবিরের মনে হচ্ছে তার বুকেও যেন আকাশে থাকা চাঁদের মতো সুন্দর রুপালি চাঁদ উঠেছে।
★
সাঝ আয়নার সামনে দাড়িয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। আর ভাবছে আবিরের কথা। সেইদিন আবিরের সাথে প্রথম হাসপাতালে তার মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল। তারপর দুইদিন শুধু শুধু ছেলেটাহ হাসপাতালে এসেছিলো।
পরপর কয়েকদিন হাসপাতালের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছে। ছেলেটাহ আসলে চাচ্ছে টাহ কি? সাঝ জানে সে স্কুল,, কলেজে থেকেই অনেক ছেলের লক্ষ্যবস্তু,, তাকে অসুন্দরী কেউ বলবে নাহ। কিন্তু,, কখনো এইসব নিয়ে ভাবার সময় তার হয় নি।
সব সময় নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে সাঝ। কিন্তু,, আজকাল আবির তাকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। ছেলেটাহ যথেষ্ট সুর্দশন। একদিন হাতে একটা গিটার দেখেছিলো,, গান করে হয়তো। ভাবছে সাঝ,, আজকাল ভাবছে সে,, আবিরকে নিয়ে ভাবছে,, ভাবতে ভালো লাগছে তাই হয়তো ভাবছে।
…………….হসপিটালের সামনে আসতেই চোখ পড়ে আবিরের দিকে। একটা চকলেট কালারের টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে আছে। বেশ লাগছে আবিরকে। ছেলেটাহ আসলেই অনেক সুর্দশন,, অনেক স্মার্ট। আশের পাশের মেয়েরা তাকাচ্ছে।
কিন্তু,, আবির তাকিয়ে আছে সাঝের দিকে। সাঝের একটু লজ্জা লেগে উঠে আবিরের তাকানোতে। তাড়াতাড়ি হসপিটালের ভেতর চলে যায়।
#_রাত_৯_টা_১০_মিনিট_
সাঝ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। এমন সময় একটা গাড়ি এসে সামনে থামতেই কিছুটাহ চমকে উঠে সাঝ। ভালোভাবে তাকায় গাড়িটার দিকে। চেনা চেনা লাগছে,, কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে নাহ।
গাড়ির দরজা খুলে যায়। সাঝ আরও একটু দৃষ্টি মেলে তাকায়। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একজন সুদর্শন যুবক। এখন সাঝ বুঝতে পারলো,, গাড়ি টাহ চেনা চেনা লাগছে কেন। কারন,, গাড়িটা আবির চৌধুরীর।
আবির সাঝের দিকে এগিয়ে আসছে। সাঝের বুকের ভেতর কেমন যেন ধুক ধুক করছে। আবির তার দিকে এগিয়ে আসছে কেন? আবির এসে সাঝের সামনে দাড়ায়। সাঝ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে৷
আবির সাঝের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাঝ কিছুটাহ কাঁপছে। আবিরকে দেখলেই সাঝের কেমন যেন কম্পন সৃষ্টি হয়। এক অদ্ভুত অনুভুতি হয়। কেন হয়,, জানে নাহ সাঝ। হয়তো বা জানার চেষ্টাও করে নাহ। সাঝ আবিরকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আবির বলে ওঠে,
–” সাঝ!”
থেমে যায় সাঝ। আবির আবার সাঝের সামনে দাড়ায়। সাঝ এখনও মাথা নিচু করে রয়েছে। আবির বলে ওঠে,
–” সাঝ! তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
সাঝ মাথা তুলে তাকায় আবিরের দিকে। আবির আবার বলে ওঠে,
–” প্লিজ! সাঝ! তোমার সাথে আমি একটু কথা বলব। আমার খুব দরকার।”
সাঝ বলে ওঠে,
–” ঠিক আছে! বলুন!”
–” ঐ যে দেখো একটা কফিশপ। ওখানে গিয়ে বসে কথা বলি?”
সাঝ পেছন ঘুরে দেখে নেয় কফিশপটিকে। তারপর আবিরের দিকে ঘুরে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।
………………চারদিকে শান্ত,, নিরব পরিবেশ। একটু রাত হওয়ায় কফিশপে তেমন কোনো লোক নেই। সাঝ একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। একটা ওয়েটার দুইটা হট কফি রেখে যায়। সাঝ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এইবার বলুন কি বলতে চান।”
আবির একটু নড়েচড়ে বসে বলে ওঠে,
–” সাঝ! আমি আবির চৌধুরী! নাম টাহ আশা করি জানো,, আমার বাবা জিহাদ চৌধুরী! আমার আম্মু মায়া চৌধুরী! আমার বাবা একজন বিজনেসম্যান! আমিও স্টাডি শেষ করে বাবার সাথে জয়েন্ট হয়ে গিয়েছি। গানও করি,, সাথে ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। কিন্তু,, এই দুইটা আমার প্রোফেশন নাহ,, শখ বলতে পারো।”
–” কিন্তু,, আপনি এইসব আমাকে কেন বলছেন?”
–” বলছি কারন,, আমি তোমাকে ভালোবাসি!”
আবিরের এরকম সরাসরি প্রস্তাবে কিছুটাহ চমকে উঠে সাঝ। কখনো ভাবে নি,, আবির এরকম সরাসরি প্রস্তাব দিবে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শিহরণ বয়ে যায় সাঝের। আবির আবার বলে ওঠে,
–” সাঝ! আমি তোমাকে প্রথম দিন দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে যায়। আর তারপর আস্তে আস্তে ভালোবাসাও হয়ে যায়। আমি তোমাকে চাই সাঝ!”
সাঝ হালকা কাঁপছে। তাও নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখুন আমি এইসব পছন্দ করি নাহ।”
আবির আকুল হয়ে বলে ওঠে,
–” সাঝ! এমন করে বলো নাহ প্লিজ! আমি তোমাকে সত্যিই চাই। আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে সুখি করার চেষ্টা করবো। প্লিজ! সাঝ!”
সাঝ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখুন! আবির! আমি আপনার এই প্রস্তাব গ্রহন করতে পারছি নাহ। আমাকে মাফ করবেন। কিন্তু,, আপনি আমার বাড়িতে বলে দেখতে পারেন,, তারা যদি রাজি হয় আমি আনন্দের সাথে আপনাকে বিয়ে করবো। কিন্তু,, অন্য কোনো সম্পর্কে আমি নিজেকে জড়াতে পারবো নাহ। আমার পরিবার যদি আপনাকে মেনে নেয়। তাহলে ঠিক আছে। নাহলে,, আমার দ্বারা কিছুই করা সম্ভব নাহ।”
আবির চুপ করে আছে। সাঝ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। আমি আসছি। আল্লাহ হাফিজ!”
সাঝ চলে যায়। আবির সাঝের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে,, সাঝ তাকে গ্রহন করলো নাকি রিজেক্ট করলো???
#_চলবে……….🌹
{{ হ্যাপি রিডিং…..🍂 }}