#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৭
_______________
পুরো স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নীলয় অহনার দিকে। অহনা যে হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠবে এটা যেন কল্পনারও বাহিরে ছিল নীলয়ের। নীলয় স্তব্ধ হয়ে এখনো দাড়িয়ে আছে তার হাত পা যেন ওখানেই অবশ হয়ে গেছে। না নড়ছে না চড়ছে শুধুই দাঁড়ি আছে সোজা হয়ে।’
অন্যদিকে,
নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখার যন্ত্রনাটা আর নিজের মাঝে দমিয়ে রাখতে না পেরে নীলয়ের কাছে ছুটে এসেছে অহনা। সে জানে এটা ঠিক নয় তাও নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না অহনা। অহনাও কিছু বলবো না শুধু নীলয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর নীলয় স্তব্ধ হয়ে শুধু শুনেই গেল সেই কান্নার আওয়াজ। এভাবে কতক্ষণ দুজন কাটালো জানে না তারা। হঠাৎই নীলয়ের হুস ফিরলো নিজেকে সামলে নিয়ে অহনাকে ছাড়ালো। নরম স্বরে অহনার গালের পানি মুছে দিয়ে বললো,
‘ কি হলো তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?’
অহনা তার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট আর কান্নাভেজা চোখ নিয়ে খুব বেশি দেরি না করেই বলে উঠল,
‘ আমি আপনায় ভালোবাসি নীলয় সাহেব? আমায় ভালোবাসবেন?’
মুহূর্তের মধ্যে নীলয়ের হাবভাব পাল্টে গেল। উঠোনের ভিড়ে থাকা বিয়েতে সামিল হওয়া মানুষগুলোর দিকে তাকালো। এসব কি বলছে অহনা। এমনটা নয় নীলয় ধরতে পারে নি তার মতো অহনাও তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু তাই বলে বিয়ের একদিন আগে তাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলবে এটা যেন কল্পনার বাহিরে ছিল। নীলয় কয়েকদম দূরে সরে দাঁড়ালো অহনার। অহনা দেখলো তা, তবে কি নীলয়কে নিয়ে ভাবা তার সব পরিকল্পনাই মিথ্যে ছিল। নীলয়ের চোখ যে বলে নীলয় তাকে ভালোবাসে এটাও কি মিথ্যে নাকি।’
অহনা দু’কদম এগিয়ে যেতে লাগলো নীলয়ের দিকে। নীলয় বাধা দিল তাকে, অহনার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। নীলয় বলতে লাগলো,
‘ তোমার কি মাথা ঠিক আছে তুমি এসব কি বলবো?’
‘ আমি জানি নীলয় সাহেব আমি ঠিক নই। যে মেয়ের কাল অন্য আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে সেই মেয়ে কি করে আজ অন্য আরেকটা ছেলেকে ভালোবাসি বলতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এমনটা চাই নি আমি না চাইতেও নিজ অজান্তে আপনায় ভালোবেসে ফেলেছি। আর আমি এটাও জানি আপনিও আমায় ভালোবাসেন নীলয় সাহেব।’
অহনার এবারের কথা শুনে নীলয় যেন আরো দু’কদম অবাক হলো। নড়েচড়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ মানেটা আপনি জানেন নীলয় সাহেব।’, ঝটপট জবাব অহনার।’
অহনার কথা শুনে নীলয় কিছু বলে না চুপ থাকে অনেকক্ষণ। এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত তাই যেন মাথায় আসছে না নীলয়ের।’
নীরবতা কাটলো আরো কতক্ষণ। নীরবতা ছাড়িয়ে নীলয় মুখ খুললো। বললো,
‘ এগুলো ঠিক হচ্ছে না অহনা আর তুমি আমায় নিয়ে যা ভাবছো তাও সঠিক নয়। তাই চুপচাপ এইসব ভুলভাল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাই। কাল তোমার বিয়ে ভুলে গেলে নাকি।’
‘ আমার বিয়েটা হয়নি এখনও আপনি রাজি থাকলে আজ আর এক্ষুনি আমরা আমাদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে বিয়েটা ভেঙে দিতে পারি নীলয়।’
এই প্রথম যেন অহনা শুধু ‘নীলয়’ বলে সম্মোধন করলো নীলয়কে। শব্দটা বেশ চমৎকার শুনালো কিন্তু কথাটা ছিল সাঙ্ঘাতিক।’
নীলয় রেগে গেল। মেয়েটার মাথাটা কি পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেল নাকি এসব কি বলছে সে। নীলয়ের ভাবনার মাঝে আবারও বললো অহনা,
‘ কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন?’
নীলয় রেগে উঠলো কড়া কণ্ঠে বললো,
‘ তোমায় কি মাথা গেছে মেয়ে কতক্ষণ থেকে কিসব উল্টো পাল্টা বলবো। আর একটাও কথা বললে থাবড়িয়ে গাল লাল করে দিবো।’
অহনা দমলো না। কান্না ভেজা কণ্ঠে বললো,
‘ প্লিজ নীলয় সাহেব এভাবে বলবেন না আমি জানি আপনিও আমায় ভালোবাসেন।’
নীলয় অহনার গালে হাত উঠালো তবে থাপ্পড় দিলো না। অহনা তা দেখলো। চোখ বন্ধ করে রইলো কতক্ষণ তারপর বললো,
‘ মারলেন না কেন আমায়?’
‘ তুমি আমার সামনে থেকে যাবে।’
‘ না যাবো না। আপনি কেন বুঝচ্ছেন না এভাবে বিয়ে করা যায় না।’
‘ অহনা এবার আমি কিন্তু তোমায় সত্যি সত্যিই থাপ্পড় মেরে বসবো। আর বলছি তো আমি তোমায় ভালোবাসি না। তুমি তোমার রুমে যাও।’
অহনা একটু এগিয়ে নীলয়ের হাত ধরলো চোখে চোখ রেখে নরম স্বরে বললো,
‘ মিথ্যে কেন বলছেন আমি জানি আপনি আমায় ভালোবাসেন?’
নীলয়ও চোখ রাখলো অহনার দিকে। নিশ্চুপে বললো,
‘ বাসি না।’
‘ আপনার চোখ বলছে আপনি আমায় ভালোবাসেন?’
‘ তুমি আমার চোখের ভাষা বুঝতে ভুল করেছো।’
‘ আপনার কাঁপা স্বর বলছে আপনি আমায় ভালোবাসেন?”
‘ আমার জ্বর এসেছিল তুমি কি ভুলে গেছো।’
‘ ছাদে লুকিয়ে আছেন কেন?’
‘ ভিতরে গরম লাগছিল।’
‘ আজ তো কারেন্ট আছে?’
‘ ফ্যানের বাতাস ভালো লাগছিল না তাই।’
‘ আপনি মিথ্যে বলছেন?’
‘ তুমি বানিয়ে বলছো।’
‘ আপনার ভেতরটা জ্বলছে, হৃদয়টা পুড়ছে তাও মানতে চাইছেন না কেন?’
‘ তুমি বলে দিলেই তো আর সেটা হলো না।’
অহনা রেগে উঠলো কোথা থেকে যেন সাহস এলো তার ফট করেই নীলয়ের কলার চেপে ধরলো,
‘ আপনি এখনো বলবেন না?’
নীলয় অন্যদিকে ঘুরে তাকালো নিজের কলার থেকে অহনার হাতটা ছাড়িয়ে বললো,
‘ তুমি ভুল ভাবছো রুমে যাও অহনা।’
অহনার গেল না। অনেকক্ষণ চেয়ে রইলো নীলয়ের মুখের দিকে। সে জানে নীলয় মিথ্যে বলছে। অহনা নীলয়ের দিকে তাকিয়ে শেষ বারের মতো বললো,
‘ আমি আমার বিয়েটা শুরু থেকেই করতে চাই নি নীলয় সাহেব?’
নীলয় তাও মানলো না। আবার বললো,
‘ রুমে যাও।’
অহনা আর কিছু বললো না। হয়তো উত্তেজিত হয়ে এভাবে ছুটে আসাটা ঠিক হয় নি তার। অহনা তার চোখের পানি মুছলো। হেঁটে গেল নীরবে পিছন ঘুরে চেয়েছিল এক, দু’বার, বহুবার কিন্তু নীলয় তাকায় নি। অতঃপর বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নিয়েই চলে গেল অহনা।’
আর নীলয় সে চুপচাপ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার কি কান্না পাচ্ছে? নীলয় তার চোখে হাত দিল আপনাআপনি সেখান থেকে পানি পড়ছে। কি আশ্চর্য! নীলয় কাঁদছে অথচ এর আগে কত আঘাত পেয়েছে জীবনে কত একাকিত্ব ফিল করেছে তখন কাঁদলো না। আর আজ! এভাবের আঘাতটা কি খুব বেশি চওড়া?’
নীলয় তার চোখের পানি মুছে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। নিশ্বাস নিলো কয়েকবার। এমন সময় তার কাঁধে হাত রাখলো নীলয়ের মা। ছেলের ঘরে গিয়েছিলেন সে। কিন্তু ছেলেকে সেখানে না পেয়ে ছুটে আসলেন ছাঁদে কারণ ছেলেটা এখানে আসার পর রুমে না থাকলে ছাঁদ ব্যতীত কোথাও যায় না। কিন্তু ছাঁদে এসে এসব কি শুনে ফেললেন তিনি। নীলয় তার মায়ের দিকে তাকালো। খানিকটা অপ্রস্তুত স্বরে বললো,
‘ মম তুমি এখানে?’
‘ অহনাকে তুই ভালোবাসিস নীলয়?’
নীলয় আবার চুপ হয়ে গেল। তার মাও তাদের কথোপকথন শুনে ফেলেছিল নাকি। নীলয়ের চোখের মুখের ভাব দেখে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়লেন নীলয়ের মা,
‘ কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
নীলয় কি বলবে বুঝতে পারছে না। অহনার সামনে নিজের অনুভূতি দমিয়ে রাখতে পারলেও মাকে কি মিথ্যে বলতে পারবে সে। নীলয় ভেঙে ভেঙে বললো,
‘ তুমি এসব কি বলছো মম কাল ওর বিয়ে হবে?’
‘ বিয়ে হবে হয়নি তো এখনও সময় আছে বাবা মনে কিছু থাকলে বলে দে।’
‘ তোমার মাথাও কি খারাপ হয়ে গেছে মম এত মানুষ এত আয়োজন আর যে ছেলেটার সাথে বিয়ে হবে আহিয়ান সেও তো নিশ্চয়ই এখন রাত জেগে অহনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।’
নীলয়ের মা হাল্কা হাসলেন। বললেন,
‘ তার মানে তুই অহনাকে ভালোবাসিস নীলয়?’
নীলয় থেমে গেল আরো একবার। তবে বেশিক্ষণ চুপ না থেকে বললো,
‘ ঘুরে ফিরে সেইম প্রশ্ন করো না মম?’
‘ ভালো যখন বাসিস তখন মানতে চাইছিস না কেন? আমি এক্ষুনি অহনার বাবার সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলবো নীলয়।’
বলেই ছুটে যেতে লাগলো নীলয়ের মা। সঙ্গে সঙ্গে নীলয় পথ আটকানোর জন্য বললো,
‘ তুমি কোথাও যাবে না মম আমি কালই এখান থেকে আমেরিকা ফিরে যাবো?’
নীলয়ের মার পা থেমে গেল। তার ছেলে যে কিছুতেই কিছু মানবে না এটা সে বুঝে গেছে। কিন্তু, নীলয়ের মা নীলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বললো,
‘ এমনটা কেন করছিস মেয়েটা তো তোকে ভালোবাসে আর তুই ও তো..
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলো নীলয়,
‘ সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না মম। আমি চাই না আমার জন্য ড্যাড আর অহনার বাবার বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হোক। আর তার থেকেও বড় কথা অহনার কাল বিয়ে এত মানুষ এত আয়োজন সবকিছু ইজি নয় মম। যেটা ইজি সেটা হলো আমার চলে যাওয়া। আমি অনেক আগেই আমার যাওয়ার টিকিট কেটে ফেলেছি। তোমরা বিয়ে খেয়ে আসো আমি কালই চলে যাবো। তুমি কিছু বলে ম্যানেজ করে নিও বাড়ির মানুষদের।’
‘ কিন্তু নীলয়,
মায়ের হাত ধরে বসলো নীলয়। খুব অনুরোধের স্বরে বললো,
‘ প্লিজ মম। কাউকে কিছু বলো না। আমি জানি তুমি কিছু বলবে না। একটু বোঝো মম সময়টা বড্ড বেমানান। আঙ্কেল সাথে তার পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে বিয়েটায়।’
ব্যস এতটুকু বলেই ছাঁদ প্রত্যাখান করলো নীলয়। আর নীলয়ের মা শুধু তাকিয়ে রইলো ছেলের যাওয়ার পানে। কেমন যেন জিমানো কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ এদের মিলন বোধহয় সত্যি হওয়ার নয়।’
আজকের রাত যেন একটু বেশি যন্ত্রণায় ঘেরা। ছটফট করছে দুটো হৃদয়। আকুলতার শীর্ষে দুটো প্রাণ। তাও একজন নির্জীব, চুপচাপ।’
#চলবে……
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️