#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৮
বিষণ্ণতার রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটলো। পুরোটা রাত জেগে কাটিয়ে দিল অহনা। ফজরের নামাজ পড়ে তার একটু পরই ঘুমিয়ে ছিল মাত্র। দরজায় নক পড়লো, অহনা ঘুমিয়ে থাকায় নীলা উঠে দরজা খুললো। দরজার বাহিরে তাদের মা ছিল। অহনাকে উঠানোর জন্য তাড়া দিলেন তিনি।’
_____
সকাল সাড়ে নটার কাছাকাছি। অহনার বাবার রুমে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নীলয় আর ভিতরেই নীলয়ের বাবা মা কথা বলছেন অহনার বাবার সাথে। তাদের কথা হলো নীলয় আর কতক্ষণের মাঝেই চলে যাবে আমেরিকাতে। কারণ হিসেবে বলেছে নীলয়ের অফিসের একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। কাল রাতেই ঘটনাটা জেনেছে নীলয় তাই তাকে আজকের ফ্লাইটেই আমেরিকা ফিরতে হবে। কয়েকটা ঘন্টা পরই তার ফ্লাইট অহনার বাবা মটেও বিষয়টায় রাজী নন। নীলয় তার বসের সাথেও কথা বলিয়ে দিয়েছেন নীলয়ের বাবাকে। নীলয়ের অফিসের বসটা ছিলেন বাঙালি। অনেক কিছু বলেছেন তিনি অহনার বাবাকে কিন্তু তাও অহনার বাবা রাজি নন তার একটাই কথা মিনিমাম আজকের দিনটা যেন এখানে থাকে।’
‘ আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন ভাইজান নীলয়ের ওখানে যাওয়াটা খুবই জরুরি। আপনি তো জানেন ও এখানে আসতে চাই নি। তাও এসেছে এখন দেখছেন তো একটু সমস্যায় পড়েছে ওকে যেতে দিন প্লিজ আমরা দুজন থাকবো তো।’
খুব দৃঢ়তার সাথেই কথাগুলো বলেছে নীলয়ের মা অহনার বাবাকে। কিন্তু তাও অহনার বাবা তা শুনতে নারাজ।’
নীলয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো এবার সে দরজার সামনে থেকে সরে এসে দাঁড়ালো অহনার বাবার সামনে। খুব নরম কণ্ঠে বললো,
‘ একটু বুঝুন আঙ্কেল আমাকে যেতেই হবে। আমি বুঝেছি আপনার কথা কিন্তু তাও আমায় যেতে হবে। আই এম সরি।’
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল নীলয়। সে আর এখানে থাকবে না। হয়তো আঙ্কেল কষ্ট পাবে কিন্তু তাও তাকে যেতে হবে। সে কিছুতেই এখানে থেকে অহনার বিয়েটা নিজ চোখে দেখতে পারবে না। তারও তো ভীষণ কষ্ট হয়।’
নীলয় এসব ভাবতে ভাবতে চলে গেল নিজের রুমে। অহনা দূর থেকে দৃশ্যটা দেখেছে। জোরে নিশ্বাসও ফেলেছে মুহুর্তে। আর নীলয়ের বাবা মা আবারও বোঝালেন অহনার বাবাকে।’
_____
বিয়ের আয়োজনে ভরপুর চারপাশ। আর কতক্ষণের মাঝেই পার্লারের লোকেরা হয়তো আসবে অহনাকে সাজাতে। একটা নরমালি কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছে অহনা। অশান্ত মন, দুঃখ ভরা হৃদয় আর অস্থির মস্তিষ্ক নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে সে।’
এমন সময় কাধে ব্যাগ নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করলো নীলয়। নীলয়কে না দেখেও নীলয়ের এখানে থাকার উপস্থিতিটা টের পেয়েছে অহনা। অহনা শক্তপক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোজা হয়ে। রুমে তেমন কেউ নেই সবাই বিয়ের কাজে ব্যস্ত। নীলয় জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে ডাকলো,
‘ অহনা,
অহনা ঘুরলো না। নীলয় অহনার মুখে তার ডাকের সাড়া না পেয়েও বলতে লাগলো,
‘ জীবনটা খুব সুন্দর রমণী। এখানে খনিকের জন্য আসা জিনিসগুলোকে খুব বেশি প্রাধান্য না দেওয়াই উত্তম। তুমি আমার জন্য নয়, যদি হতে তবে হয়তো এই অসময়ে আমাদের আগমণ হতো না। তোমায় মিথ্যে বলবো না তোমাকে আমার মন চায়। কিন্তু আমি সেই চাওয়াটাকে খুব বেশি প্রাধান্য দিতে চাই না যেখানে তোমার পুরো পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে। এখন এই না চাওয়াটাকে যদি তোমার মিথ্যে বলে মনে হয় তাহলে তাই। অন্যদের কষ্ট দিয়ে কখনো ভালো থাকা যায় না।’
আহিয়ানকে আমি যতটুকু দেখেছি তাতে মনে হয় ছেলেটা যথেষ্ট ভালো আর ভদ্র স্বভাবের তোমায় খুব ভালো রাখবে দেখো।
‘ জীবনে সবার গল্প পূর্নতা পায় না তেমনই ধরে নেও আমাদের গল্পটাও পূর্ণতা পাওয়ার মতো নয়। তোমার সাথে আমার পরিচয়টা হচ্ছে খনিকের এমনও হতে পারে আজ থেকে পাঁচ ছয় বছর পর যদি আমাদের দেখা হয় তুমি তখন আমায় মনে রাখবে না। আবার হয়তো রাখবে। জীবনে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে নিজেকে এলেমেলো করার জন্য। আমি চাই তুমি যাতে সেই এলোমেলোটাকে খুব বেশি নিজের মাঝে না রাখো। এতে জীবনে দুঃখ ছাড়া আর কিছু মিলবে না। নিজের জীবনটাকে সুন্দর করতে শিখ। তুমি খুব ভালো আশাকরি জীবনের বাকিটা সময়ও ভালো থাকবে। আমার জন্য নিজের স্বামীকে কোনোদিন অবহেলা করো না।’
বলে থামলো নীলয় এবার অহনা পিছনে ঘুরলো। তার কান্নাভেজা চোখ জোড়া দেখালো নীলয়কে। নীলয় তা দেখলো তবে বেশি গুরুত্ব দিলো না। বললো,
‘ বিয়ের সময় মেয়েরা এমনিতেই কাঁদে এখন তুমি যদি আগে থেকেই কেঁদে কেটে ভাসিয়ে রাখো তবে কি করে হবে বলো।’
অহনা আর চোখ মুছলো। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
‘ আপনার খুব মজা লাগছে তাই না নীলয় সাহেব?’
নীলয় হাসে। মুগ্ধ করা এক হাসি দিলো সে। বললো,
‘ হয়তো।’
অহনা কিছু বলে না চুপটি করে রয়। নীলয়ও আর বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আমি এখন চলে যাবো বুঝলে কিছু..?’
নীলয়ের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই অহনা বলে উঠল,
‘ পালিয়ে যাচ্ছেন?’
‘ ধরে নেও তাই।’
‘ কষ্ট লাগছে তাও মেনে নিতে চাইছেন না,
‘ যেটা চাই না সেটা মানবো কেন।’
‘ মিথ্যে বলা খুব সোজা একটুও খারাপ লাগবে না আপনার?’
‘ খারাপ লাগার তো কোনো কারণ দেখছি না।’
‘ আপনি মানুষটা খুব নিষ্ঠুর?’
‘ আমি জানি তা।’
অহনার চোখ আবার ভেসে উঠলো। খুব অনুরোধের স্বরে বললো,
‘ একবার কি বাবার কাছে ভালোবাসার কথাটা বলা যায় না নীলয় সাহেব?’
‘ আমি তোমায় ভালোবাসি না।’
‘ তাহলে পালিয়ে যাচ্ছেন কেন?’
‘ ভালো না বাসলে পালানো যায় না নাকি।’
‘ না যায় না আমার বিয়ে খেয়ে তারপর যাবেন?’
হাল্কা হাসে নীলয়। বলে,
‘ আমি তোমার বাধ্য কেউ নই। তাই তুমি থাকতে বললেও আমি যাবো। তুমি মানতে না চাইলেও আমি যাবো।’
নীলয় ঘড়ি দেখলো এবার তাকে বের হতেই হবে। নিশ্বাস আঁটকে আসছে নীলয়ের। নিজেকে দমালো নীলয়। বললো,
‘ আমার বড্ড দেরি হচ্ছে এবার সত্যি যেতে হয়। সবসময় ভালো থাকো, আনন্দে বাঁচো।’
বলেই চলে যায় নীলয়। অহনা চেয়েও আর ধরতে পারে না তাকে। অহনা মুখ চেপে ঠুকরে কেঁদে উঠে রুমে। আর নীলয় বুকে পাথর বেঁধে চলে যায় নিচে। তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে।’
—–
অতঃপর পুরো দমে অহনার পুরো পরিবারকে বিদায় জানিয়ে নিজ বাসস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো নীলয়। তাবাসসুমও থাকার জন্য বলেছিল কয়েকবার কিন্তু নীলয় শোনে নি। লাস্ট বারের মতো অহনার পুরো পরিবারকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলো নীলয়। দলবেঁধে বাড়ির সামনে আসতে বারণ করেছিল নীলয় তাই তেমন কেউ দাঁড়ায় নি সামনে৷ কারণ এতে সবাই বুঝে যাবে সে চলে যাচ্ছে আর মানুষের যা মন তাতে নির্ঘাত ভুলভাল কিছু ভেবে বসবে যদিও সেই ভুলভালটাই সঠিক। তাও মানুষকে সেই সঠিক জিনিসটা বোঝাতে চায় না নীলয়। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নীরবে।’
গাড়ি চলতে শুরু করলো। নীলয় আর পিছন ঘুরে তাকায় নি। যদি আবারও অহনার সেই কান্না ভেজা চোখটা নজরে আসে তখন। মেয়েটাকে কষ্ট দিতে চায় নি নীলয় কিন্তু কি করবে সময়টা যে বড্ড বেশিই বেমানান।’
.
.
ছাঁদে দাঁড়িয়ে নীলয়কে শেষ বারের মতো দেখার ইচ্ছেটা পূরণ করলো অহনা। হয়তো ছেলেটা সত্যিই বলছে সময়টা বড্ড বেমানান। একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে নীলয় চলে গেছে নয়তো দেখা গেল বিয়ের আসরেই কি না কি ঘটিয়ে ফেললো অহনা। অহনা তার চোখের পানি মুছে নিল। তাকালো আকাশ পথে, খুব আফসোসের স্বরে বললো,
‘ যখন কিছু হওয়ারই ছিল না তাহলে অসময়ে কেন আনলে তাকে?’
প্রশ্ন তো করলো কিন্তু উত্তর কি মিললো, মিললো না। আকাশটা ধীরে ধীরে আধারে ঘনিয়ে এলো, অহনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল নীরবে। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা।’
এমন সময় ছাঁদে প্রবেশ করলো অহনার বাবা। মেয়েটাকে দেখলেন তিনি। শাড়িতে মেয়েটাকে কি দারুণ লাগছে। তার সেই ছোট্ট মেয়েটা যে এত দ্রুত বড় হয়ে যাবে কে জানতো। তবে বড় হলেও অহনার সাথে তার বাবার বড্ড দুরত্ব। কখনো মেয়েটা আধ বাড়িয়ে তার কাছে কিছু চায় নি। যা লেগেছে মাকে বলেছে আর ওর মা বাবাকে। অহনার বাবা এগিয়ে গেলেন তার মেয়ের দিকে। অনেক দিনেরই তার ইচ্ছে ছিল মেয়েটার সাথে একটু মন খুলে কথা বলবে কিন্তু সুযোগ সময় কোনোদিনও হয়ে ওঠেনি তার। আর কতক্ষণ পরই মেয়েটা শশুর বাড়ি চলে যাবে আজ না বললে হয়তো আর কোনোদিনও বলা হবে না। এসব ভেবে অহনার বাবা ছুটে গেলেন মেয়ের দিকে। নরম কণ্ঠে ডাকলেন মেয়েকে।বললেন,
‘ অহনা।’
হঠাৎই বাবার ভয়েসটা কানে আসতেই অহনা ভড়কে গেল, বিষম খেল। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে বললো,
‘ জি বাবা,
#চলবে…..