অর‌ণ্যে রোদন পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
298

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ৩৪

কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে কথা বলল, ‘‌নিহাদ, আমি এত সহ‌জে তোমা‌কে ক্ষমা কর‌তে পারব না।’
‘আচ্ছা ক‌রো না।’
‘‌তোমার সা‌থে আগের কথাও হ‌তে পারব না।’
নিহাদ আটকা‌নো ক‌ণ্ঠে বলল,
‘আচ্ছা।’
‘আ‌গের ম‌তো আমা‌দের মা‌ঝে আর পাঁচটা স্বাভা‌বিক দম্প‌ত্তির ম‌তো স্বাভবিক সম্পর্ক থাক‌বে না।’
‘আচ্ছা।’
‘আমি তোমা‌কে আগের ম‌তো ভা‌লোবাস‌তে পারব না।’

‘এটাই হয়‌তো আমার সব‌চে‌য়ে বড়ো শা‌স্তি। তু‌মি কা‌ছে থে‌কেও তোমা‌কে কা‌ছে পাব না, ভা‌লোবাস‌তে পারব না, এর‌চে‌য়ে ব‌ড়ো শাস্তি তোমার নিহা‌দের জন্য কী হ‌বে? যে নি‌হা‌দের জীবন কথা, সেই কথা আমার কা‌ছে থে‌কেও দূ‌রে থাক‌বে, এর চে‌য়ে ব‌ড়ো শা‌স্তি কী হ‌বে? তু‌মি আমা‌কে শা‌স্তি দাও, যত খুশি শা‌স্তি দাও তা-ও আমার সা‌থে থা‌কো। তু‌মি আর আমার সন্তানরা আমার সা‌থে থা‌কো। আমার এমন ঘৃণ্য অপরা‌ধের পরও তু‌মি আমা‌কে বাবা হওয়ার মতো আনন্দ দি‌লে। স‌ত্যি তু‌মি আমার জীব‌নে দেখা চমৎকার একজন মানুষ। যে সু‌খের কা‌ছে পৃ‌থিবীর সব সুখ নগণ্য ম‌নে হয়, সেই সুখ দি‌লে আমায়। আমার অন্যা‌য়ের শা‌স্তি তু‌মি আমা‌কে সারাজীবন দাও, কিন্তু তু‌মি প্লিজ তোমার যত্ন নেও। আমরা বাচ্চারা আর তু‌মি ভা‌লো থাকে‌া। আমি এটাই চাই।’

কথা কেঁ‌দেই যাচ্ছে। যাকে সবার চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সে, তা‌কে কীভা‌বে শা‌স্তি দি‌বে, সেটাই ভাব‌ছে।

আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া” এর প্রি অর্ডার চল‌ছে। ‌প্রি অর্ডার লিংক সবার শে‌ষে দেওয়া। পা‌শে থাক‌বেন।

৩৬!!
কে‌টে গেল দুই মাসের অধিক সময়। সবার জীবন স্বাভা‌বিকভা‌বেই চল‌ছে। এর ম‌ধ্যে কথা আর তূবার ইয়ার ফাইনাল শেষ হ‌লে‌া। দুজ‌নের পরীক্ষা মোটামু‌টি ভা‌লোই হ‌য়ে‌ছে।

শ্রাব‌ণেরও সে‌কেন্ড ইয়া‌রের ক্লাস পু‌রোদ‌মে শুরু হ‌য়ে গে‌ছে। শ্রাবণ, তূবার প্রেম পু‌রোদ‌মে চল‌ছে। এর ম‌ধ্যে শ্রাবণ ওর মা‌য়ের সাথে তার কো‌চিং-এ গ‌নিত শিক্ষক হিসা‌বে পড়া‌নো শুরু ক‌রে‌ছে।

নিহাদ শিক্ষকতার পেশা একেবা‌রে ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছে। ওর ম‌তে ও পেশাটার সম্মান বজায় রাখ‌তে পা‌রে‌নি। সে কার‌ণে শিক্ষকতা ছে‌ড়ে ওর বাবার ব্যবসায় পু‌রোপু‌রি ম‌নো‌নি‌বেশ ক‌রে‌ছে। ব্যবসায় সময় দেয় আর বাকিটা সময় কথার খেয়াল রা‌খে।

কথা প্রথ‌মে নিহাদের চাক‌রি ছাড়ার বিপ‌ক্ষে থাক‌লেও প‌রে কিছু কার‌ণে মে‌নে নেয়। এক‌দিন নিহাদ, কথা‌কে নি‌য়ে ভা‌র্সি‌টি‌তে গেল। তখন কথা‌ আর নিহাদ‌কে একসা‌থে দে‌খে, কথার কিছু ক্লাস‌মেট বলাবা‌লি কর‌ছিল, ‘‌নিহাদ স্যার কেন যে চাক‌রি ছাড়ল? স্যা‌রের ক্লাসের পয়তা‌লিল্লশ মি‌নিট, এক ঘন্টা কখন কে‌টে যেত টেরই পেতাম না। স্যার‌কে দে‌খেই সময় কে‌টে যেত। কথা এ-ও শু‌নে‌ছে ক‌য়েকটা মে‌য়ে নিহাদ‌কে প্রো‌পোজ ক‌রে‌ছিল। এসব শু‌নে কথাও আর নিহা‌দের সিদ্ধা‌ন্তে বাঁধা দেয়‌নি। আবার কোন সিন্থিয়া, নিহাদের পিছু লাগে কে জা‌নে। তারচে‌য়ে বরং নিহাদ ভা‌র্সি‌টি থে‌কে দূ‌রে থাকুক।

কথা সে‌দিন নিহাদ‌কে বলে‌ছিল, ‘‌আজকালকার যু‌গে মে‌য়ে মানুষ সুন্দর হওয়ার চে‌য়ে ছে‌লেরা সুন্দর হওয়া বে‌শি খারাপ।’
নিহাদ কারণ জান‌তে চাই‌লে ব‌লে‌ছিল, ‘তু‌মি মাত্রা‌তি‌রিক্ত সুদর্শন ব‌লেই তোমার পিছ‌নে সি‌ন্থিয়া প‌ড়ে‌ছিল। তু‌মি দেখ‌তে খারাপ হ‌লে আমা‌দের সম্পর্কটা আগের ম‌তো সুন্দর থাকত।’

কথার কথায়, নিহাদ ‌কো‌নো প্র‌তিউত্তর ক‌রে‌নি। কারণ কথার বিশ্বাস ও পূ‌র্বেই হা‌রি‌য়ে‌ছে। ত‌বে নিহাদ, কথার খেয়াল আগের চে‌য়েও অনেক বে‌শি রা‌খে। কথার ছয় মা‌স চল‌ছে। জমজ বাচ্চা হবার দরুণ ছয়মা‌সেই পেট নয় মা‌সের গর্ভবতীর ম‌তো। ইদা‌নিং ওর হাঁটাচলা কর‌তেও খুব কষ্ট হয়। ত‌বে নিহাদ এবং ওর প‌রিবার কথার এত খেয়াল রা‌খে যে, কথার তেমন কষ্টই হয় না।

তূবা শ্রাব‌ণের প্রেমও চল‌ছে মধুর ম‌তো। টোনা টু‌নির ঘুটুর মুটুর চল‌তেই থা‌কে। আজ দ‌ুজন নৌকায় ক‌রে ঘুর‌তে বের হ‌য়ে‌ছে। তূবা আজ শা‌ড়ি প‌রে‌ছে। শ্র‌াবণ বারবার তূবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হাস‌ছে।

তূবা রাগ ক‌রে বলল, ‘আর একবার আমার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হাস‌লে নৌকা থে‌কে ঠে‌লে ফে‌লে দিব।’
‘আ‌রে হাসছি কেন সেটা না শু‌নে ফেলে দি‌বে?’
‘‌কেন হাস‌ছো?’
‘‌পারপেল র‌ঙের শা‌ড়ি‌তে তোমা‌কে দেখ‌তে এত মি‌ষ্টি লাগ‌ছে না। ঠিক যেন বেগুনী র‌ঙের পিটু‌নিয়া ফুল। দেখ‌লেই ছুঁ‌য়ে দি‌তে ইচ্ছা কর‌ছে।’

তূবা লাজুক হে‌সে বলল, ‘‌তো হাসার কী আছে।’
‘আমি হাসতে পারব না?’
‘আমার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হাসবা না।’
শ্রাবণ হে‌সে বলল, ‘আচ্ছা।’

শ্রাব‌ণের বন্ধু দীপক নৌকা চালা‌চ্ছে। শ্রাবণ বলল, ‘দীপক‌, আরেক‌ দি‌কে তা‌কি‌য়ে নৌকা চাল‌া। আমি তোর ভা‌বির সা‌থে রোমান্স করব।’
তূবা দুম ক‌রে শ্রাব‌ণের পি‌ঠে কিল ব‌সি‌য়ে বলল, ‘বজ্জাত। তোর সা‌থে রোমান্স কর‌বে কে? যা দূ‌রে গি‌য়ে বস।’

শ্রাবণ, তূবা‌কে বাহু বন্দী ক‌রে বলল, ‘আমার অনুমতি লাগ‌বে না। আমি তোমার চো‌খের ভাষা পড়‌তে পা‌রি।’
তূবা রাগ দে‌খি‌য়ে ঠান্ডা গলায় বলল, ‘শ্রাবণ, যখন একাকি থা‌কি তখন আলাদা কথা। খবরদার কো‌নো মানু‌ষের সাম‌নে একদম ফাজলামো কর‌বা না। সে হোক তোমার বন্ধু কিংবা আমার। ম‌নে থাক‌বে?’
শ্রাবণ অপরাধী ভঙ্গীতে মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘হুম ম‌নে থাক‌বে।’

তূবা ঠোঁট টি‌পে হাসল। তূবা খেয়াল করল দীপক আরেক‌ দি‌কে তা‌কি‌য়ে নৌকার দাঁড় বাই‌ছে। তূবা ট‌ুপ ক‌রে শ্রাব‌ণের কপা‌লে চুমু আঁকল। শ্রাব‌ণের মুখে হা‌সি ফুটল। তূবা ওর চুল এলো‌মে‌লো ক‌রে বলল, ‘পাগল একটা।’
শ্রাবণ বলল, ‘‌বি‌য়েতে আস‌বে তো?’
‘না এসে উপায় কী? হবু ভাসু‌রের আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে বি‌য়ে, না এসে কী উপায়? কথা ক‌বে আস‌ছে?’
‘সন্ধ্যায় বা‌ড়ি গি‌য়ে দেখব অল‌রে‌ডি এসে গে‌ছে।’

‘তাহ‌লে আমি তোমার সা‌থে সোজা তোমাদের বাসায় যাব। ক‌দিন হ‌লো কথা‌কে দেখি না। আচ্ছা বি‌য়ের আয়োজন ক‌বে থে‌কে শুরু কর‌বে?’
‘অল‌রে‌ডি শুরু হ‌য়ে গে‌ছে। গেস্ট কাল থে‌কে আস‌তে শুরু কর‌বে। আমা‌দের গ্রাম থে‌কেও বহু আত্মীয় আস‌বে।’

তূবা খা‌নিকটা মন খারাপ ক‌রে বলল, ‘‌তোমার ফুপা‌তো বোন শান্তাও আস‌বে।’
‘হ্যাঁ। ওরা তো কালই আস‌বে।’
‘শান্তা তোমা‌কে এখনও পছন্দ ক‌রে?’
শ্রাবণ ভাবল তূবা‌কে একটু ক্ষেপা‌নো যাক। তাই বলল, ‘হ্যাঁ। সে‌দিনও তো ফোন ক‌রে জি‌জ্ঞেস করল আমার কো‌নো গার্ল‌ফ্রেন্ড হ‌য়ে‌ছে কি না?’
‘তু‌মি কী বল‌লে?’
‘বললাম না হয়‌নি।’

তূবা মন খারাপ ক‌রে বলল, ‘না কেন বল‌লে?’
‘তু‌মিই তো ব‌লে‌ছি‌লে তোমার বিষ‌য়ে আমা‌দের রি‌লে‌টিভ‌দের কা‌ছে যেন না ব‌লি।’
‌বিরস মুখে তূবা বলল,
‘ওহ।’
‘আ‌রে মন খারাপ কর‌ছো কেন? শান্তা তো তোমারও ফুপা‌তো বোন। তাছাড়া তোমাদের চেহারায়ও মিল আছে। দুজনই সুন্দরী।’

তূবা শ্রাব‌ণের পাঞ্জা‌বির কলার ধ‌রে টে‌নে কা‌ছে এনে দাঁ‌তে দাঁত চে‌পে বলল,
‘সুন্দর অসুন্দর, চেহারায় মিল অমিল পরে ব্যাপার, প্রথম কথা হ‌চ্ছে শান্তা তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সে। আর তুমিও ওর সা‌থে খুব ফ্লা‌টিং কর‌তে। এবার য‌দি ওর আশে পা‌শেও দে‌খে‌ছি ত‌বে হাত পা ভে‌ঙে দিব।’

শ্রাবণ ঠোঁট টে‌পে হেসে তূবার কপা‌লে ঠোঁট ছুঁই‌য়ে বলল, ‘আচ্ছা। ত‌বে তু‌মি ওকে হিংসা কর‌ছো?’
‘‌মো‌টেও না। আমি তোমা‌কে স‌ন্দেহ কর‌ছি। ছেলেদের একদম বিশ্ব‌াস নেই।’
‘‌কেন?’
‘দা‌দি কী বলেন জা‌নো?’
‘কী?’
‘‌ছে‌লেরা বিড়া‌লের ম‌তো। ছোচলা‌মি করা এদের অভ্যাস।’

শ্র‌াবণ শব্দ ক‌রে হে‌সে বলল, ‘‌ছি! ছি! তু‌মি আমা‌কে ছোচা বিড়াল ভা‌বো? আরে যে নি‌জের প্রাপ্ত জি‌নিসই এখন পর্যন্ত একটুও ভোগ ক‌রেনি সে বাই‌রের জি‌নি‌সে কি নজর দি‌বে?

তূবা লাজুক হে‌সে বলল, ‘‌তো‌কে ভোগ কর‌তে দি‌বে কে?’
শ্রাবণ চোখ টি‌পে বলল, ‘চাই‌লে আমি সব আদায় ক‌রে নি‌তে পা‌রি। নেহাৎ ভদ্র ছে‌লে ব‌লে নি‌চ্ছি না।’
তূবা, শ্রাব‌ণের মাথায় মারল। শ্রাবণ হে‌সে বলল, ‘দা‌দি‌কে ব‌লে দিও সব ছে‌লে বিড়াল না। কিছু ছে‌লে শ্রাবণও। যারা মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত নি‌জের সবটা দি‌য়ে একজন‌কেই ভা‌লোবা‌সে। আমি হচ্ছি শ্রাব‌ণদের লিডার শ্রাবণ।’

তূবা লাজুক হে‌সে বলল,
‘‌দেখ‌া যাবে। শান্তার সা‌থে রঙ ঢঙ কর‌তে দেখ‌লেই হ‌য়ে‌ছে। চাপাবা‌জি তখন ছুটাই দিব।’
শ্রাবণ শব্দ ক‌রে হে‌সে তূবা‌কে নি‌জের মা‌ঝে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। তূবাও, শ্রাব‌ণের বু‌কে মাথা দি‌য়ে গভীর আবে‌গে চোখ বন্ধ করল।’
কখনো কখনো একে অপ‌রের সা‌থে কথা না ব‌লেও গভীরভা‌বে আলাপন করা যায়। ভা‌লোবাসা যায়। তখন নীরবতা হয় ভা‌লোবাসার ভাষা।

চলবে।

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ৩৫

নীস্তব্ধ জ‌লে ভে‌সে চল‌ছে নৌকা। দাঁড় বাই‌বার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ যেন কো‌নো মধুর সঙ্গীত। পা‌নির কলরব যেন নীরবতা, নিস্তব্ধতা ভে‌ঙে কথা বল‌ছে। শ্রাবণ, তূবার আঙু‌লে আঙুল জ‌ড়ি‌য়ে বলল, ‘ভা‌লোবা‌সি।’

তূবা, শ্রাব‌ণের বু‌কে মাথা রে‌খে মুচ‌কি হে‌সে বলল, ‘আর?’
‘‌তোমা‌কেই চাই সারাজীবন। প্র‌তিটা মুহূর্তে, প্র‌তিটা ক্ষ‌ণে।’
‘আর?’
‘জল‌দি বড়ো হ‌তে চাই।’
‘তারপর?’
‘তারপর তোমা‌কে বি‌য়ে কর‌তে চাই।’
‘তারপর?’
‘তার কিছু মাস কিংবা এক বছর পর, ছোট্ট একটা তূবা কিংবা শ্রাবণ আসুক।’

লজ্জায় তূবা এবার আর কো‌নো কথা বলল না। শ্রাবণের হৃদস্পন্দন শুন‌তে লাগল। হঠাৎ ওর হৃদস্পন্দন খুব বৃ‌দ্ধি পে‌য়ে‌ছে। তূবা বলল,
‘শ্রাবণ!’
‘হুম।’
‘বা‌ড়ি চলো।’
‘উঁহু।’
‘‌কেন?’

‘দীর্ঘ দুই মাসের অধিক সময় পর তু‌মি আমার সা‌থে ঘুর‌তে বের হ‌লে। এত‌দিন পর তোমা‌কে এতটা কা‌ছে পেলাম। নয়‌তো গত দুই আড়াই মা‌সে তোমার সা‌থে ঠিকম‌তো কথা পর্যন্ত হতো না। শুধু রোজ তা‌মিম‌কে পড়া‌তে গি‌য়ে একবার চো‌খের দেখা দেখতাম। ফো‌নেও ঠিকম‌তো কথা বলতা না। কত‌দিন পর জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে‌ছি। এত দ্রুত তোমায় ছাড়‌ছি না।’

‘ইচ্ছা ক‌রে তো ক‌রি‌নি। পরীক্ষা ছিল তো।’
‘হুম জা‌নি তো। সে জন্যই তো রাগ ক‌রি‌নি। বরং পরম ভালোবাসায় জ‌ড়ি‌য়ে রে‌খে‌ছি। তূবা!’
‘হুম।’
‘তু‌মি ব‌রং ফোর্থ ইয়া‌রে দুই বার ফেল করো।’
‘তাহলে কী হবে?’
‘আমরা তাহ‌লে সমবয়সী হ‌য়ে যা‌বো।’

তূবা হে‌সে বলল, ‘আচ্ছা। তাহ‌লে তিনবার ফেল ক‌রি।’
‘তাহ‌লে কী হ‌বে?’
‘‌তোর ছো‌টো হয়ে যা‌ব।’
‘আইডিয়া খারাপ না। কিন্তু কথা হ‌চ্ছে তোমার হিটলার বাপ না আবার তোমা‌কে ধ‌রে বি‌য়ে দি‌য়ে দেয়।’
তূবা হে‌সে বলল, ‘এবার স‌ত্যি আমা‌দের যাওয়া দরকার। ইদা‌নিং বাবা সন্ধ্যায় বা‌ড়ি ফি‌রেন। তখন বা‌ড়ি ফির‌তে দেখলে হাজারটা প্রশ্ন কর‌বে।’
‘আচ্ছা।’

শ্রাবণ, তূবা‌কে আরও শক্ত ক‌রে বু‌কের মা‌ঝে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে নৌকার সৈ এর ভিতর থে‌কে দীপককে বলল,
‘দীপু, চল বা‌ড়ি যাব।’
দীপক হে‌সে নৌকা চালাতে লাগল। তূবা, শ্র‌াবণের বু‌কে মাথা রে‌খে চোখ বন্ধ ক‌রে রইল। নদীর পা‌ড়ে এসে তূবা বলল, ‘অ‌নেকদিন পর মনটায় শা‌ন্তি লাগ‌ছে।’
শ্রাবণ দুষ্টু হেসে বলল, ‘‌কেন?’
তূবা কিছু বলল না, শুধু লাজুক হাসল।

শ্রাবণদের বা‌ড়ি ফি‌রে তূবা সোজা কথার রু‌মে গেল। কথা তখন বিছানায় ব‌সে আছে। নিহাদ ওর পা‌য়ে তেল মা‌লিশ ক‌রে দি‌চ্ছে। মাত্র ছয় মাসেই কথার শরী‌রে খুব পা‌নি এসে‌ছে‌। প্রেশারও খুব হাই। একটু জা‌র্নি কর‌লেই হাত পা কোমর প্রচণ্ড ব্যথা ক‌রে। বা‌ড়ি থে‌কে কতটুকু পথ গা‌ড়ি‌তে ক‌রে আসল কিন্তু এখন পা‌য়ের আর কোম‌রের ব্যথায় কুপকাত।

তূবা, নিহা‌দের হাত থেকে তে‌লের বা‌টি নি‌য়ে বলল, ‘স্যার, আপ‌নি যান তো। আমি মা‌লিশ ক‌রে দি‌চ্ছি।’
নিহাদ হে‌সে বলল, ‘তূবা, এখন আমি তোমা‌দের স্যার না। আমা‌কে এখন ভাইয়া ব‌লে ডাক‌তে পা‌রো?’
তূবা হে‌সে বলল, ‘‌সে আপ‌নি ভা‌র্সি‌টির টিচার থাকুন বা না থাকুন আমার কা‌ছে সারা জীবন আমার স্যার থাক‌বেন। যা‌কে আমি অনেক বে‌শি সম্মান ক‌রি, শ্রদ্ধা ক‌রি। এখন আপনার বউ এর সেবা আমি করছি আপ‌নি সাম‌নে গি‌য়ে সবার সা‌থে ব‌সেন।’

‌নিহাদ তে‌লের বা‌টি তূবার কা‌ছে দি‌য়ে হাত মুছে চ‌লে গেল। তূবা শা‌ড়ির আঁচল কোম‌রে গু‌জে কথার পা‌য়ে তেল মা‌লিশ কর‌তে লাগল। কথা বলল, ‘শা‌ড়ি পর‌লি কেন?’
তূবা হে‌সে বলল, ‘ঘুর‌তে গে‌ছিলাম।’
‘শ্রাব‌ণে‌র সা‌থে?’
‘হুম।’
‘ব‌াহ্! তো তোকে অফি‌সিয়্যাল‌লী ভা‌বি ডাকা শুরু করব?’
‘‌সে তোর ইচ্ছা।’

কথা হে‌সে বলল, ‘শা‌ড়ি‌তে তো‌কে অসম্ভব মি‌ষ্টি লাগ‌ছে।’
তূবা হে‌সে বলল, ‘আপনার ভাই‌য়ের অনু‌রোধ ছি‌ল, আজ শা‌ড়ি পরার। প্রথ‌মে তো ভে‌বেছিলাম পরব ন‌া। প‌রে ভাবলাম অনেকদিন পর দেখা কর‌ছি, বেচারার কথা একটু শু‌নি।’
কথা মুচ‌কি হে‌সে বলল, ‘‌তো‌দের এভাবে দে‌খে স‌ত্যি খুব ভা‌লো লাগ‌ছে।’

কথা খা‌নিকটা কেঁ‌পে উঠল। তূবা বলল, ‘কী‌রে কী হ‌লো?’
কথা, তূবার হাতটা নি‌য়ে ওর পে‌টের উপর রাখল। আব‌ার বাবু ন‌ড়ে উঠল। কথা খু‌শি‌তে লাফ মে‌রে উঠল। খু‌শি‌তে ওর চোখ ভ‌রে এলো।

কথার পে‌টে কান চে‌পে বাবুর নড়াচড়া অনুভব কর‌তে কর‌তে বলল, ‘কথা, এ অনুভূ‌তির কো‌নো বর্ণনা হয় না তাই না?’
‘হ্যাঁ।’
‘এর চে‌য়ে সুন্দর অনুভূ‌তি বু‌ঝি কিছু নেই।’
‘হ্যাঁ।’

তূবার কাঁদ‌তে লাগল। কথা বুঝল তূবা কেন কাঁদ‌ছে। কথা, তূবা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে বলল,
‘পাগলী, কাঁ‌দিস না। দে‌খিস সৃ‌ষ্টিকর্তা সব ঠিক ক‌রে দি‌বেন।’

শ্রাবণ, দরজায় দাঁ‌ড়িয়ে সবটা দে‌খে‌ছে। ও তূবার কা‌নে কা‌ছে ঠোঁট নি‌য়ে ফিস ফিস করে বলল, ‘আল্লাহ তোমার কো‌লেও ছো‌ট্ট একটা শ্রাবণ দি‌বেন।’
তূবা লজ্জায় কেঁ‌পে উঠল।

আমার নতুন বই ‘রৌদ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মেঘের ছায়া” এর কথা জা‌নেন তো? প্রি অর্ডার ক‌রে‌ছেন? প্রি অর্ডার লিংক সবার নি‌চে।

৩৭!!
শান্তার দি‌কে তা‌কি‌য়ে তূবা হা হ‌য়ে গেল। মে‌য়েটা দেখ‌তে এত সুন্দর হ‌য়ে‌ছে! আগেও সুন্দর ছিল, কিন্তু কি‌শোরী মে‌য়েটা যেন সদ্য যৌব‌নে পা দি‌য়ে অসম্ভব সুন্দর হ‌য়ে‌ছে। রূপ যেন চাঁ‌দের আলোর ম‌তো উঁপ‌চে পড়‌ছে।

আজ সকা‌লেই শান্তারা এসে‌ছে। তূবা বিকা‌লে এসে‌ছে কথার কা‌ছে। তখন শান্তা‌কে দে‌খে রী‌তিম‌তো বাকরুদ্ধ। মে‌য়েটার কৃষ্ণকা‌লো চোখ আর মায়াবী চেহারা মানু‌ষের মন কাড়‌তে বাধ্য। তার ম‌ধ্যে গলার স্বর এত কোমল, মি‌ষ্টি যে কথা শুন‌লে শুন‌তেই ম‌নে চায়। আর শান্তার সব‌চে‌য়ে বড় গুণ হ‌চ্ছে ওর ব্যবহার। নি‌জের সুন্দর আর মা‌র্জিত ব্যবহা‌রে যে কাউ‌কে মুগ্ধ ক‌রে ফে‌লে।

কথার একটাই ফুপু। শ্রাবণও সুন্দর হ‌য়েছে ওর ফুপির ম‌তো। নয়‌তো কথা আর বর্ষণ ওদের বাবার ম‌তো শ্যামলা হ‌য়ে‌ছে। শ্রাব‌ণের ফু‌পি দেখ‌তেও অপরূপ রূপবতী। শ্রাবণ গা‌য়ের রঙ, চেহারার বৈ‌শিষ্ট্য তার ম‌তো পে‌য়ে‌ছে। শান্তা, শ্রাবণ‌কে একসা‌থে দেখ‌লে আপন ভাই বো‌নের ম‌তো লা‌গে।শ্রাব‌ণের ফুপু, সো‌হেলীর একমাত্র মে‌য়ে শান্তা। শান্তা এবার এইচএস‌সি দি‌বে।

মাস ছয় আগে শান্তা, শ্রাবণ‌কে তার ভা‌লোলাগার কথা জানা‌লে শ্রাবণ তখনই না ক‌রে দেয়। কারণ তখন শ্রাবণ অল‌রেডি তূবার প্রেমে হাবুডুবু খা‌চ্ছিল। তখন অবশ্য তূবা, শ্রাবণ‌কে নি‌জের ভালোবাসার কথা ব‌লে‌নি। শ্রাবণ একাই তূবার পিছ‌নে ঘুরঘুর করত। তাছাড়া শ্রাবণ, শান্তা‌কে সে চো‌খে কখনো দে‌খে‌নি। ছো‌টো‌বেলা থে‌কে শান্তাকে ‌ছো‌টো বো‌নের চো‌খে দেখায়, শান্তা‌কে নি‌য়ে কখনো অন্য‌কিছু ভা‌বে‌নি শ্রাবণ।

কিন্তু ছয় মাস আগে যখন শান্তারা বেড়া‌তে এলো। তখন এক‌দিন বিকা‌লে শান্তা, শ্রাব‌ণকে নি‌য়ে ছা‌দে গেল। তখন ওদের সা‌থে কথা, তূবাও ছিল। শান্তা খুব সাহসী মে‌য়ে। ও তূবা আর কথার সাম‌নে ব‌সেই শ্রাব‌ণের সাম‌নে ফুল বাঁ‌ড়ি‌য়ে বলে‌ছিল,
‘শ্রাবণ ভাই, আমি তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সি। বি‌য়ে কর‌তে চাই তোমা‌কে।’

কথা, তূবা হা হ‌য়ে ত‌াকি‌য়ে ছিল ওদের দি‌কে। শ্রাবণ এক পলক শান্তার দি‌কে তা‌কি‌য়ে প‌রেরবার তূবার দি‌কে তাকাল। তখন তূবার চো‌খে স্পষ্ট ক‌ষ্টের ছাপ। শ্রাবণ সে‌দিনই বু‌ঝে গে‌ছিল তূবাও ওকে ভা‌লোবা‌সে। শ্রাবণ সাথে সা‌থেই শান্তার মাথায় হাত রে‌খে ব‌লে‌ছিল, ‘দেখ শান্তা, তোকে আ‌মি কখ‌নো সেই চো‌খে দে‌খি‌নি। তুই আমার ছো‌টো বোন। তো‌কে আমি তেমন চোখে দে‌খি যেমনটা আমার কথা আপু। এসব ভূত মাথা থে‌কে ঝে‌রে ফেল।’
কথাগু‌লো ব‌লে শ্রাবণ, তূবার ‌দি‌কে তাকা‌লে তূবা‌র চো‌খে দে‌খে‌ছিল চাপা আনন্দ।

তূবা যে শান্তা‌কে অপছন্দ ক‌রে তা না। ত‌বে বর্তমা‌নে শান্তা‌কে খুব ভয় ক‌রে ওর। ম‌নে হয় শ্রাবণ‌কে ছি‌নি‌য়ে নি‌য়ে যাবে। আর আজ‌কের শান্তা‌কে দে‌খে তূবার ভয়টা আরও বে‌ড়ে গেল। এ শান্তা আগের চে‌য়েও সুন্দরী, স্মার্ট, কথা বলার ধরণ আরও আকর্ষণীয়। তূবা ভয়ার্ত চো‌খে শ্রাব‌ণের দি‌কে তাকাল। শ্রাবণ যেন তূবার চো‌খের ভাষা প‌ড়ে নি‌লো। ও তূবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হালকা হাসল। যে হা‌সির মা‌নে, ‘তূব‌া, আমি শুধুই তোমার।’

শান্তা, তূবা‌কে দে‌খে বলল, ‘‌কেমন আছো মি‌ষ্টি আপু।’
তূবা হে‌সে বলল, ‘ভা‌লো। তুই?’
‘খুব ভা‌লো। আর তোমা‌দের কা‌ছে এসে আরও ভা‌লো হ‌য়ে গে‌ছি। জানো তূবা আপু আমি আমার সব বন্ধু‌দের কা‌ছে তোমার কথা ব‌লি।’
‘কী ব‌লিস?’
‘ব‌লি আমার একটা বড়ো আপু আছে, যা‌কে দেখ‌লে চোখ ধ‌রে যায়। যে দেখ‌তে কল্পনায় আঁকা কো‌নো পরীর ম‌তো।’

তূবা হেসে বলল, ‘আমার তো তো‌কে দে‌খে এটা বল‌তে ইচ্ছা কর‌ছে। আগে তো সুন্দর ছি‌লিই এখন দেখ‌ছি পাল্লা দি‌য়ে সুন্দর হ‌চ্ছিস। ইশ! তো‌র সৌন্দর্য খুব চো‌খে লাগ‌ছে।’
শান্তা হে‌সে তূবা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বল‌ল, ‘আপু, ইউ মেইড মাই ডে।’

তূবা হাসল। শান্তা বলল, ‘তা আপু তোমার বি‌য়ে ক‌বে খা‌চ্ছি? আমাদের কা‌জিন‌দের ম‌ধ্যে নেক্সট নাম্বার তোমার। তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড কথা আপু তো ক‌বেই বি‌য়ে ক‌রে নি‌য়ে‌ছে। এখন দে‌খো একসা‌থে দুই সন্তা‌নের জননী হ‌চ্ছে? তু‌মি ক‌বে শ্বশুর বা‌ড়ি যা‌চ্ছো?’

‌স্মিত হে‌সে তূবা বলল, ‘সময় হ‌লেই যাব?’
শান্তা বলল, ‘কী ব‌লো সময় হয়‌নি? তোমার তো বি‌য়ের বয়স পে‌ড়ি‌য়ে যা‌চ্ছে। দা‌দি ব‌লেন মে‌য়েরা কু‌ড়ি‌তে বু‌ড়ি। তোমার তো সেখা‌নে তেইশ বছর। আর কথা আপু আর তু‌মি তো সেইম বয়সী। মে‌বি সপ্তাহ খানি‌কের ছো‌টো ব‌ড়ো তোমরা।’

কথাটা তূবার গা‌য়ে খুব লাগল। কিন্তু ও শুধু ম‌লিন হাসল। কিন্তু শ্রাবণ কথাটা ধ‌রে বসল। শ্রাবণ বেশ গম্ভীর ক‌ণ্ঠে বলল, ‘এটা কেমন কথা শান্তা? তোর মান‌সিকতা সে‌কে‌লে হ‌লো ক‌বে থে‌কে? বয়‌সের সা‌থে বি‌য়ের কী সম্পর্ক? বি‌য়ে যে যার ইচ্ছা ম‌তো কর‌বে? তাছাড়া সৃ‌ষ্টিকর্তার লেখা ব‌লেও তো একটা বি‌ধি আছে। কথা আপুর কপা‌লে জল‌দি বি‌য়ে লেখা ছিল তার জল‌দি হ‌য়ে‌ছে। তূবা আপুর দেরী‌তে লেখা থাকলে তাই হ‌বে। এমনও তো হ‌তে পা‌রে তার আগে তোর বি‌য়ে হ‌লো। বি‌য়েটা যার যার ব্য‌ক্তিগত বিষয়। যার যে সময় ম‌নে হ‌বে এখন বি‌য়ে করা দরকার, সে সে সময় কর‌বে। তাছ‌াড়া তূবা আপু প্রথ‌মে নি‌জে প্রতি‌ষ্ঠিত হ‌বে তারপর বি‌য়ে কর‌বে।’

শান্তা মন খারাপ ক‌রে বলল, ‘আ‌মি সি‌রিয়াসভা‌বে ব‌লি‌নি শ্রাবণ ভাই। আমি তো মজা কর‌ছিলাম। তূবা আপু, তোমার খারাপ লাগ‌লে স‌রি।’
তূবা হে‌সে শান্তার গালে হাত দি‌য়ে বলল, ‘আ‌রে না না আমার খারাপ লাগে‌নি। ওর কথা বাদ দে। ওর তো বে‌শি কথা বলা অভ্যাস।’

শান্তা হে‌সে বলল, ‘আপু, তু‌মি এত মি‌ষ্টি! তোমা‌কে যে পা‌বে সে নিঃস‌ন্দেহ অনেক বে‌শি ভাগ্যবান হ‌বে। অনেকবে‌শি লা‌কি না হ‌লে তূবা‌কে পাওয়া সম্ভব হ‌বে না। কেউ আছে না‌কি আপু?’

তূবা লজ্জা পে‌য়ে বলল, ‘আ‌ছে একজন।’
শ্রাবণ, তূবার গাল টে‌নে বলল, ‘‌কে সেই লা‌কি ম্যান তূবা… আপু…?’
তূবা দুষ্টু হে‌সে বলল, ‘আ‌ছে এক বাদর। আমা‌কে প্রচন্ড জ্বালায়। বাদরটা‌কে পিছু ছাড়া‌নোর এত চেষ্টা কর‌লাম কিন্তু সেই বাদর আমার গলায়ই ঝু‌লে পড়‌ছে।’

শ্রাবণ মুখ দি‌য়ে চুক চুক শব্দ কর‌তে কর‌তে বলল, ‘আহা‌রে! তা নাম কি তার তূবা… আপু…?’
তূবা, শ্রাব‌ণের কান টে‌নে বলল, ‘‌তো‌কে কেন নাম বলব?’
‘না মা‌নে চি‌নে রাখতাম।’

কথা হাস‌তে হাস‌তে বলল, ‘আ‌মি ভা‌লো ক‌রে চি‌নি। তূবার তো এখন রোমা‌ন্টিক প্রেমকাল চল‌ছে। কাল তো তারা নদী‌তে নৌকায় ভে‌সে বে‌ড়ি‌য়ে‌ছে।’

শান্তা গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল, ‘ইশ! নি‌জের প্রিয় মানুষটা‌কে নি‌য়ে নদী‌তে নৌকায় ভে‌সে বেড়া‌নো কত্ত রোমা‌ন্টিক।’
কথা, তূবা আর শ্রাব‌ণের দি‌কে তা‌কি‌য়ে মুচ‌কি হে‌সে বলল, ‘ভীষণ রোমা‌ন্টিক!’

তূবা লজ্জায় হাত দি‌য়ে মুখ ঢাকল। শান্তা বলল, ‘ইশ! তূবা আপু লজ্জায় কেমন লাল হ‌য়ে গেছ। আমি নি‌শ্চিত তোমার ‌সে য‌দি এখন তোমা‌কে দেখত। তোমার লজ্জা রাঙা লা‌গে টুপ ক‌রে চুম‌ু আঁকত।’

তূবা লজ্জায় আরও লাল হ‌য়ে গেল। শ্রাবণ দুষ্টু‌মি ক‌রে বলল, ‘এত লাল হওয়ার কী আছে ডিম পারবা না‌কি?’
তূবা, শ্রাব‌ণের চুল টে‌নে বলল, ‘বজ্জাত! আমি কেন ডিম পারব?’
‘‌ডিম পারা মুর‌গির ম‌তো লাল কেন হ‌য়ে‌ছো?’

তূবা মুখ গোমরা ক‌রে আরেক‌ দি‌কে ঘু‌রে রইল। শান্তা, শ্রাব‌ণের কা‌নে কা‌নে কিছু বলল। শ্রাবণ শব্দ ক‌রে হে‌সে ‌ফেলল। তা ‌দে‌খে তূবার খুব রাগ লাগল। শ্রাবণ, খোঁচ‌া মেরে বলল,
‘তূবা… আপু…, এবার বেলু‌নের ম‌তো ফুল‌ছেন কেন? সুই দি‌য়ে গুতা দি‌য়ে দিব ঠুস ক‌রে ফা‌টি‌য়ে।’

এভা‌বেই দুষ্টু মি‌ষ্টি খুনসুটি‌তে সব কা‌জিনরা মি‌লে বেশ রাত পর্যন্ত আড্ডা দি‌লো, খাওয়া দাওয়া হ‌লো। রাত দশটার দি‌কে তূবা বলল,
‘কথা, অনেক রাত হ‌য়ে‌ছে বা‌ড়ি যে‌তে হ‌বে। বাবা বারবার কল কর‌ছেন।’
কথা বলল, ‘আচ্ছা। একা যা‌বি?’
‘ভয় কর‌ছে। নিহাদ স্যা‌র কিংবা বর্ষণ ভাইকে বল দি‌য়ে আস‌তে।’

শ্রাবণ হুট করে বলল, ‘আ‌মি থাক‌তে, বর্ষণ ভাই কিংবা ভাইয়া‌কে কেন কষ্ট কর‌তে হবে? তূবা আপু, চ‌লেন আপনা‌কে দি‌য়ে আসি।’
কথা হে‌সে বলল, ‘সাবধা‌নে যাবি। একেবা‌রে ঘ‌রে দি‌য়ে আস‌বি।’
শ্রাবণ বিড়‌বিড় ক‌রে বলল, ‘‌কো‌লে ক‌রে নি‌য়ে যাই?’

তূবা কো‌নো কথা না ব‌লে, শ্রাবণীর কাছ থেকে বিদায় নি‌য়ে বাইরে নামল। শ্রাবণ ওর পিছু পিছু আসল। কিছুদূর যাবার পর, যখন শ্রাবণ আর তূবা‌দের বা‌ড়ির মাঝ প‌থে আসল। তখন শ্রাবণ তূবা‌কে টান মে‌রে কা‌ছে এনে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল।

তূবা ভয়ার্ত চো‌খে বলল, ‘কী কর‌ছিন কী স্টু‌পিড? কেউ দে‌খে ফেল‌বে।’
শ্রাবণ হে‌সে বলল, ‘তু‌মি খুব ভা‌লো ক‌রে জা‌নো। এ স্থানটা এ সময় কতটা নি‌রি‌বি‌লি থা‌কে।’
‘তবুও গাধা। লোক আস‌তে সময় লাগ‌বে না। তাছাড়া তো‌দের বি‌য়ে বা‌ড়ি।’
শ্রাবণ, তূবার ঠোঁ‌টে আঙুল দি‌য়ে বলল, ‘হুস।’

তূবা, শ্রাব‌ণের চো‌খের দি‌কে তাকাল। চো‌খে স‌য়ে যাওয়া অন্ধকা‌রে দুজন দুজন‌কে অপলক চো‌খে দেখ‌তে লাগল। শ্রাবণের চো‌খের ঘো‌রে তূবা লজ্জা পে‌য়ে চোখ না‌মি‌য়ে ফেলল। শ্রাবণ নিচু হ‌য়ে তূবার গা‌লে চুমু খে‌য়ে বলল, ‘এই ফোলা ফোলা লাল লাল গা‌লে আজ চুমু না খে‌লে দম আট‌কে থাকত।’

তূবা, শ্রাব‌নের বু‌কে কিল দি‌য়ে বলল,
‘ফা‌জিল একটা।’
শ্রাবণ, তূবা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। কিছু মুহূর্ত পর তূবা ফিস‌ফিস ক‌রে বলল, ‘এই পা‌জি ছাড় আমা‌কে। এখন বা‌ড়ি দি‌য়ে আয়।’

‌যেটুকু প‌থ নির্জন নি‌রি‌বিলি ছি‌ল শ্রাবণ, তূবা‌কে একরকম জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রেই হে‌ঁটে‌ছে। বা‌ড়ির কাছাকা‌ছি আস‌তেই দুজন নি‌র্দিষ্ট দূর‌ত্বে চ‌লে গেল।

চলবে।

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ৩৬

৩৮!!
বিকাল বেলা,
কথা‌দের ছা‌দে ব‌সে তূবা, কথা গল্প কর‌ছিল। তূবা, কথার চু‌লে তেল দি‌য়ে দি‌চ্ছিল। তেল দি‌তে দি‌তে তূবা বলল,
‘কথা, তোর চুল কি সুন্দর হ‌য়ে‌ছে! আগের থে‌কেও অনেক সুন্দর, সফট, স্লি‌কি।’

কথা হে‌সে বলল, ‘মা আর শাশু‌ড়িমাও বল‌লেন, প্রেগ‌নে‌ন্সি‌তে না‌কি চুল অনেক সুন্দর হয়, লম্বাও হয়। ত‌বে বাব‌ু হবার তিন চার মাস পর না‌কি প্রচুর চুল প‌ড়ে। আমি গুগল ক‌রে জে‌নে‌ছি এখন হর‌মোনাল অনেক প‌রিবর্ত‌নের কার‌ণে চুল, হা‌তের নখ সুন্দর হয়। কিন্তু বাবু হবার দুই তিন মাস পর হর‌মোনগু‌লো দ্রুত আবার আগের ম‌তো হ‌য়ে যায়, ফ‌লে সে প‌রিবর্তনটা শরীর নি‌তে না পারায় চুল প‌ড়ে প্রচুর। অথচ আমা‌দের না‌নি দা‌দিরা ব‌লেন বাচ্চারা হাস‌লে মা‌য়ের চুল প‌ড়ে। বাচ্চা হাসার সা‌থে মা‌য়ের চুল পড়ার কী সম্পর্ক?’

তূবা হে‌সে বলল, ‘আমা‌দের না‌নি দা‌দিরা তো তা‌দের আম‌লে কত কথাই বল‌তেন। সে‌দিন শুনলাম আমার পা‌শের বা‌ড়ির দা‌দি তার নাতবউ মা‌নে ভা‌বি‌কে নানান উপ‌দেশ দি‌চ্ছিল। যার অধিকাংশ আমার কা‌ছে ভি‌ত্তিহীন লাগ‌ছে। লা‌কি ভা‌বিও কন‌সিভ কর‌ছে।

দা‌দি বল‌ছি‌লেন, ‘শোন বউ পু‌টি মাছ খা‌বি না বাচ্চার মুখ পু‌টি মা‌ছের ম‌তো ছো‌টো হ‌বে, বোয়াল মাছ খা‌বি না মুখ বড় হ‌বে, কই মাছ খা‌বি না বাচ্চা কা‌লো হ‌বে, হা‌সের ডিম খা‌বি বাচ্চার চোখ বড় বড় হ‌বে। ঢেলা মাছ খা‌বি না বাচ্চার চোখ সাদা হ‌বে। চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহ‌ণের সময় কো‌নো কাজ কর‌বি না, কিছু খাবি না, শুধু চুপ ক‌রে শু‌য়ে থাক‌বি। আরও কত কত কথা। শু‌নে আমার মাথায় চক্কর দি‌চ্ছিল।’

কথা হে‌সে বলল, ‘আমা‌কেও অনে‌কে অনেক কথা বল‌ছে কিন্তু আমি শু‌নি‌নি। আমি সেটাই কর‌ছি যেটা ডাক্তার বলছে এবং নি‌জের কা‌ছে স‌ঠিক ম‌নে হ‌য়ে‌ছে।’
‘আরও তেল দিব?’
‘আর একটু ম্যাসাজ ক‌রে দে। তুই আর শাশু‌ড়ি মা দুজন যখন চু‌লে তেল দি‌য়ে ম্যাসাজ ক‌রে দিস তখন আরা‌মে ঘুম চ‌লে আসে আমার।’

তূবা হে‌সে কথার মাথা ম্যাসাজ কর‌তে লাগল। তখন শান্তা এসে বলল, ‘কী কর‌ছো তোমর‌া?’
কথা বলল, ‘মাথায় তেল দি‌চ্ছি।’
শান্তা বলল, ‘কথা‌ আপু, একটা কথা জি‌জ্ঞেস ক‌রি?’
‘হুম।’
‘স‌ত্যি স‌ত্যি উত্তর দিবা?’
‘‌মিথ্যা কেন বল‌বো?’
‘না মা‌নে? হয়‌তো বলতে পারবা না। অনেক সময় হয়না কো‌নো প্র‌শ্নের উত্তর জানা থাক‌লেও আমরা কো‌নো না কো‌নো কার‌ণে উত্তর দি‌তে পা‌রি না।’

কথা হে‌সে বলল, ‘‌সে রকম কিছু হ‌লে উত্তর দিব না।’
শান্তা স্মিত হে‌সে বলল, ‘আপু, শ্রাবণ ভাই কা‌কে ভা‌লোবা‌সে?’
কথা খা‌নিকটা কেঁ‌শে বলল, ‘‌কেন?’
‘না মা‌নে সে তো আমা‌কে না ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। শত চেষ্টা ক‌রেও তার না‌ কে হ্যাঁ বানা‌তে পা‌রি‌নি।’

তূবা গভীর ম‌নোযোগ দি‌য়ে শান্তার কথা শুন‌তে লাগল। কথা বলল, ‘‌তো?’
‘এক‌দিন খুব জোর ক‌রে জি‌জ্ঞেস করলাম কেন আমা‌কে তার পছন্দ না? তারপর সে বলল, সে না‌কি অন্য কাউ‌কে খুব ভা‌লোবা‌সে। তা‌কে ছাড়া কাউকে সে কখনো গ্রহণ কর‌বে না। আমি অনেকবার জি‌জ্ঞেস করলাম কে? কিন্তু কে বলল না। তারপর রি‌কো‌য়েস্ট করলাম কো‌নো হিন্ট দি‌তে। কিন্তু সে শুধু বলল, আমা‌দের কা‌জিন‌দের ম‌ধ্যে। এখন তু‌মি ব‌লো আমা‌দের কা‌জিন‌দের ম‌ধ্যে এমন কে যা‌কে শ্রাবণ ভাই ভা‌লোবাস‌তে পা‌রে?’

কথা মুখ টি‌পে হেসে তূবার দি‌কে তাকাল। তূবা তখন মাথা চুলকা‌চ্ছে। গলা খাক‌রি দি‌য়ে বলল, ‘শ্রাবণ, এতটুকু যখন ব‌লে‌ছে তখন নামটাও ওর কাছ থে‌কেই শু‌নিস।’
শান্তা বলল, ‘কা‌জিন‌দের ম‌ধ্যে শ্রাবণ ভাইর সমবয়সী কিংবা তার‌চে‌য়ে ছো‌টো এমন কো‌নো মে‌য়ে‌কে দে‌খি না, যার সা‌থে শ্রাবণ ভাই এর যায়। আর বা‌কি যেগুলা আছে সেগুলা সব পি‌চ্চি নয়‌তো অনেক বড়ো। হ্যাঁ শ্রাবণ ভাইর সা‌থে যায় এমন একজন‌কেই চো‌খে বা‌জে কিন্তু সেটা হয় কী না বুঝ‌তে পা‌রছি না।’

কথা বলল, ‘কা‌কে চো‌খে বা‌জে?’
শান্তা ফট ক‌রে বলল, ‘তূবা আপু। শ্রাবণ ভাই এর সা‌থে তূবা আপুর ম‌তো মি‌ষ্টি কো‌নো মে‌য়ে‌ যায়। কিন্তু তূবা আপু তো বড়ো, সে কার‌ণে স‌ঠিক বল‌তে পার‌ছি ন‌া।’

তূবার নামটা বলায় তূবা, কথা দুজ‌নেই চম‌কে উঠল। তূবা তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে বলল,
‘কথা, আমার কাজ আছে। আমি গেলাম।’
শান্তা, তূবার হাত ধ‌রে বলল, ‘তূবা আপু! শ্রাবণ ভাই তোমাকে খুব ভা‌লোবা‌সে তাই না?’

তূবা চম‌কে শান্তার দি‌কে তাকাল। শান্তা শান্ত চো‌খেই তা‌কি‌য়ে বলল, ‘আমি জা‌নি, তু‌মি আর শ্রাবণ ভাই রি‌লেশ‌নে আছো।’
তূবা চোখ নিচু ক‌রে ফেলল। শান্তা বলল, ‘‌যে‌দিন শ্রাবণ ভাই ব‌লে‌ছিল আমা‌দের কা‌জিন‌দের ম‌ধ্যে কেউ সে‌দিনই আন্দাজ ক‌রে‌ছিলাম। কারণ শ্রাবণ ভাই এর সা‌থে মানায় এমন কা‌জিন য‌দি আমি না হই তা‌হলে নি‌শ্চিত সে তু‌মি। আর কাল থে‌কে তোমার প্র‌তি তার বি‌হেব দে‌খে শিওর হলাম।

সে সবসময় যেন তোমার ঢাল হ‌য়ে দাঁড়ায়। তোমাকে কেউ কিছু বললে শ্রাবণ ভাই সেটা ধ‌রে ব‌সে, সবসময় তোমা‌কে প্র‌টেক্ট ক‌রে, তোমার খেয়‌াল রা‌খে, গতকাল থে‌কে দেখতে‌ছি সবসময় যেন পাহা‌ড়ের ম‌তো তোমার ঢাল হ‌য়ে সাম‌নে দাঁড়ি‌য়ে থা‌কে। আমি এতটা বোকা না যে বুঝব না। ত‌বে তোমরা দু’জন ভীষণ চালাক। সবসময় সবার সাম‌নে এমন বি‌হেব ক‌রো, যেন তোমরা জাস্ট কা‌জিন, না‌থিং এলস।’

আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া” এর প্রি অর্ডার চল‌ছে। ‌প্রি অর্ডার লিংক সবার শে‌ষে দেওয়া। পা‌শে থাক‌বেন।

শান্তার কথা শু‌নে ভ‌য়ে তূবা ঘে‌মে গেল। কথাও খা‌নিকটা ঘাব‌রে গেল। শান্তা, তূবার কা‌ঁধে হাত দি‌য়ে বলল, ‘‌রিলাক্স আপু। ভয় পাবার কিছু নেই। আমি ক‌াউ‌কে কিছু বলবো না। আর তু‌মি কো‌নো অন্যায়ও করো‌নি। তাছ‌াড়া সি‌নিয়ার জু‌নিয়ার ওটা কো‌নো বিষয় না। মূল বিষয় হচ্ছে সম্প‌র্কের প্র‌তি সি‌রিয়াস‌নেস। যেটা বুঝলাম শ্রাবণ ভাই এ সম্পর্ক নি‌য়ে খুব সি‌রিয়াস। তু‌মি তো সি‌রিয়াস হ‌বেই। কারণ অনেক বে‌শি সি‌রিয়াস না হ‌লে কেউ জু‌নিয়া‌রের সা‌থে সম্প‌র্কে জড়ায় না।

শ্রাবণ ভাই এর প‌রিবার‌কে রা‌জি করা‌নোও কো‌নো ব্যাপার না। কারণ মা‌মি রা‌জি হ‌লে বা‌কি সবাই রা‌জি হ‌তে বাধ্য, কিন্তু মূল সমস্যা তো তোমার বাবা। তা‌কে রা‌জি করা‌তে পার‌বে তো? আপু আমরা সবাই জা‌নি, আমার মা, মামা, কিংবা তোমার প‌রিবার এরা উপ‌রে উপ‌রে সবাই ভা‌লো ক‌রে কথা ব‌লে কিন্তু ম‌নে ম‌নে এরা একে অপর‌কে ভীষণ অপছন্দ ক‌রেন

তোমার কী ম‌নে হয় যে, ঝা‌মেলা তোমার দাদা আর আমার নানা লা‌গি‌য়ে গে‌ছেন তা সহ‌জে মিটবে? পারিবা‌রিক ঝা‌মেলা‌কে সাই‌ডে রে‌খে তোমার বাবা এ সম্পর্ক মে‌নে নি‌বে? শ্রাবণ ভাইকে যতটা জে‌নে‌ছি তা‌তে সে তো‌মাকে উম্মা‌দের ম‌তো ভা‌লোবা‌সে। পা‌রিবা‌রিক বিবা‌দে তুুমি হয়‌তো অন্য কাউকে বি‌য়ে ক‌রে খু‌শি থাক‌তে পার‌বে কিন্তু শ্রাবণ ভাই পাগল হ‌য়ে যা‌বে। কী ভবিষ্যৎ তোমা‌দের সম্পর্কের? তূবা আপু প্লিজ শ্রাবণ ভাই‌কে কষ্ট দিও না। তার ম‌তো মানুষ খুব কম হয়।’

তূবা দপ ক‌রে নি‌চে ব‌সে পড়ল। ওর চে‌য়ে ছো‌টো একটা মে‌য়ে যে বিষয়টা সহজে বু‌ঝে‌ছে কিন্তু ও আর শ্রাবণ সে বিষয়টা‌কে বেমালুম অগ্রাহ্য ক‌রে সম্পর্ক চা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে। শান্তা তো স‌ত্যি বল‌ছে, কী ভ‌বিষ্যৎ ওদের সম্প‌র্কের? দুজন তো চু‌টি‌য়ে প্রেম কর‌ছে কিন্তু ভ‌বিষ্য‌তের কথা একটুও ভাব‌ছে না। তূবা ম‌নে ম‌নে বলল, ‘আচ্ছা শ্রাবণ কী ভাব‌ছে এসব কথা?’

তূবা অঝো‌রে কাঁদ‌তে লাগল। কথা, তূবার কা‌ছে এসে ওকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, ‘এই পাগ‌লি কাঁদ‌ছিস কেন? দেখ আমি আছি। তো‌দের সম্প‌র্কের ভ‌বিষ্যৎ গড়ার দা‌য়িত্ব আমার। তাছাড়া শ্রাবণ সব রকম চেষ্টা কর‌ছে দুই প‌রিবা‌রের সম্পর্ক ঠিক করার। তুই তার ফলাফল দেখ‌ছিস না?

বাবা নি‌জে গি‌য়ে তোর পুরো প‌রিবার‌কে বি‌য়ে‌তে দাওয়াত কর‌ছেন। তোর চা‌চিরা আমা‌দের বা‌ড়ি‌তে আস‌া যাওয়া শুরু কর‌ছে। বাবার সা‌থে তোর বাবা একসা‌থে নামাজ পড়‌তে যা‌চ্ছেন, বিকা‌লে হাঁট‌তে বের হ‌চ্ছেন। তুই কী ভাব‌ছিস এসব এম‌নি এম‌নি হ‌চ্ছে? শ্রাবণ কর‌ছে এসব। তুই প্লিজ ভে‌ঙে প‌ড়িস না। শ্রাব‌ণের উপর একটু ভরসা রাখ। আমার ভাইটা তোর জন্য সব কর‌তে পা‌রে। ও দুই প‌রিবার‌কে এক করেই ছাড়‌বে দে‌খিস।’

তূবা কান্না থামাল না। দুহা‌তে মুখ ঢে‌কে কাঁদ‌তে লাগল অবিরাম। কথা ভয় পা‌চ্ছিল ছা‌দে না কেউ চ‌লে আসে। তূবা‌কে এমন কাঁদ‌তে দে‌খে নি‌শ্চিত জি‌জ্ঞেস কর‌বে কী হ‌য়ে‌ছে?

শান্তা, তূবার কাঁধে হাত রে‌খে বলল, ‘আপু আমি তোমা‌কে কষ্ট দি‌তে চাই‌নি। আমার যেটা ম‌নে হ‌য়ে‌ছে সেটা ব‌লে‌ছি। তু‌মি আবার ভেবনা আমি শ্রাবণ ভাই‌কে ভা‌লোবাসতাম ব‌লে তোমা‌কে এসব বল‌ছি। শ্রাবণ ভাইয়ার প্র‌তি আমার একটা ভা‌লোলাগা, ভা‌লোবাসা তৈ‌রি হ‌য়েছিল ঠিকই কিন্তু যখন শ্রাবণ ভাই বল‌লেন, তি‌নি আমা‌কে বো‌নের নজ‌রে দে‌খেন এবং সে অল‌রে‌ডি একজন‌কে ভা‌লোবা‌সে, সে‌দিন থে‌কে তারপ্র‌তি তৈ‌রি হওয়া আমার সকল অনুভূতি শেষ হ‌য়ে গে‌ছিল। আমিও এখন তা‌কে ভাই ছাড়া অন্য নজ‌রে দে‌খি না। কিন্তু তোমা‌দের বিষয়টা জে‌নে আমার শ্রাবণ ভাইয়ার জন্য চিন্তা হ‌চ্ছে। তোমা‌কে হারা‌লে সে ঠিক থাক‌বে তো?’

তূবা আর দাঁড়াল না। চোখ মু‌ছে ছাদ থে‌কে নে‌মে গেল। যাওয়ার সময় শ্রাব‌ণের সাম‌নেও পড়ল। শ্রাবণ ওকে দে‌খে প্রথমে হাস‌লেও তূবার কান্নাময় চোখ দে‌খে জি‌জ্ঞেস করল, ‘কী হ‌য়ে‌ছে?’
তূবা কো‌নো উত্তর দি‌লো না। মাথা নিচু ক‌রে চ‌লে গেল। শ্রাবণ বুঝল কিছু তো হ‌য়ে‌ছে তূবার। কিন্তু কা‌কে জি‌জ্ঞেস কর‌বে ভাব‌তেই দেখল, কথা‌কে ছাদ থে‌কে ধ‌রে শান্তা নামা‌চ্ছে।

শ্রাবণ, কথার কা‌ছে গি‌য়ে বলল, ‘আপু, তূবার কী হ‌য়েছে? কাঁদ‌ছিল কেন?’
শান্ত অপরা‌ধি ভ‌ঙ্গি‌তে মাথা নিচু ক‌রে বলল, ‘স‌রি শ্রাবণ ভাই, আমার জন্য কেঁ‌দে‌ছে আপু। আমি ছাগ‌লের ম‌তো কিছু না বু‌ঝেই তা‌কে কিছু কথা জি‌জ্ঞেস ক‌রে‌ছিলাম। যেটা আপু নি‌তে পা‌রে‌নি। কথা আপুর রুমে চ‌লো আমি খু‌লে বল‌ছি সব।’

কথার রুমে গি‌য়ে শান্তা সবটা খু‌লে বলল। তখন নিহাদও রু‌মে ছিল। নিহাদ সবটা শু‌নে বলল, ‘শান্তা, তু‌মি স‌ত্যি বাচ্চা। কিন্তু আমা‌দের শ্রাবণ কিন্তু তোমার ম‌তো বাচ্চা না। ওর বয়স তূবার চে‌য়ে কম হ‌লেও তূবার চে‌য়ে ম্যা‌চিওর ও। শ্রাবণ আমা‌কে সবটা ব‌লেছে। এম‌নকি দুই প‌রিবার‌কে এক কর‌তে আমার থে‌কে হেল্পও নি‌চ্ছে। তূবার বাবা‌র সা‌থে আমার সম্পর্ক খুব ভা‌লো। সে কার‌ণে আমি সবসময় শ্রাব‌ণে‌র হেল্প করব।’

শান্তা জিব কে‌টে বলল, ‘আ‌মি দুঃখীত। প্লিজ সবাই মাফ ক‌রে দিন। আমি আস‌লে বুঝ‌তে পা‌রি‌নি শ্রাবণ ভাই অল‌রে‌ডি দুই প‌রিবার‌কে মিলা‌নোর চেষ্টা কর‌ছে। না বু‌ঝেই তূবা আপু‌কে যা তা ব‌লে ফে‌লে‌ছি। আমার আস‌লে শ্রাবণ ভাইয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছিল। বারবার ভাব‌ছিলাম তূবা আপুর বাবা যে প‌রিমাণ রা‌গি তি‌নি য‌দি ভাইয়ার কো‌নো ক্ষ‌তি ক‌রেন।’

শ্রাবণ দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল, ‘শান্তা, আমার আর তূবার বিষ‌য়ে দয়া ক‌রে তুই আর কো‌নো কথা বল‌বি না। তূবা‌কেও আমি সাম‌লে নিব। নিহাদ ভাই, আপ‌নি কথা আপু‌কে সামলান। তূবার জন্যও গা‌ধিটাও ছাগ‌লের ভ্যা ভ্যা ক‌রে কাঁদ‌ছে। আমি তূবা‌কে দেখ‌ছি।’

শান্তার খুব খারাপ লাগ‌ছে। কি একটা বাচ্চা‌মি ক‌রে ফেলল! ম‌নে বলল, ‘ইশ! তূবা আপুর কা‌ছে কান ধ‌রে সরি বল‌তে হ‌বে।’

সন্ধ্যার পর,
শ্রাবণ, তা‌মিম‌কে পড়া‌তে গেল। শ্রাব‌ণে‌র হা‌তে একটা শ‌পিং ব্যাগ। শ্রাবণ চু‌পি চু‌পি তা‌মিম‌কে বলল, ‘তূবা কই?’
‘রু‌মে। সেই বিকাল থে‌কে রু‌মের দরজা বন্ধ ক‌রে আছে। মা জি‌জ্ঞেস করল কী হয়েছে বলল, মাথা ব্যথা কর‌ছে ঘুমা‌বে।’
‘ওহ।’

‘ঝগড়া হ‌য়ে‌ছে না‌কি তোমা‌দের?’
‘একটু রাগ কর‌ছে।’
‘‌ফোন ক‌রো।’
‘ক‌রে‌ছিলাম ধর‌ছে না।’
‘তাহ‌লে গি‌য়ে কথা ব‌লো?’
‘চা‌চি কোথায়?’
‘মা, মেজচা‌চিদের ঘ‌রে গে‌ছে।’
‘ঘ‌রে আর কেউ আছে?’
‘নাহ। আমি তু‌মি আর তূবা আপু।’
‘আচ্ছা দরজাটা লক ক‌রে পাহাড়া দে। কেউ আস‌লে আগে আমা‌কে ডাক‌বি। তার আগে তূবা‌কে ডাক দি‌য়ে দ‌রজা খোলা। আমার ডা‌কে আজ খুল‌বে না।’

তামিম হে‌সে তূবার দরজার সাম‌নে গি‌য়ে বলল, ‘আপু, দ‌রজাটা খোল, আমার একটু কাজ আছে তোর রু‌মে।’
‌ভিতর থে‌কে তূবা বলল, ‘শ্রাবণ গে‌ছে?’
তামিম মুখ চে‌পে হে‌সে বলল, ‘হ্যাঁ।’

তূবা দরজা খুল‌তেই শ্রাবণ ওর রু‌মে ঢু‌কে দরজা বন্ধ ক‌রে দি‌লো। তূবা বেশ ভ‌য়ে পে‌য়ে বলল, ‘‌দেখো শ্রাবণ, চা‌চি চ‌লে আসবে।’
‘চা‌চি, মেজ চা‌চি‌দের ঘ‌রে গে‌ছেন। এখন তু‌মি ব‌লো তু‌মি এমন কর‌ছো কেন? কী হ‌য়ে‌ছে?’
‘‌কিছু না।’
‘শান্তা আমা‌কে সবটা ব‌লে‌ছে।’

তূবা ফু‌ঁপি‌য়ে কেঁদে উঠল। শ্রাবণ গভীর আবে‌শে ওকে বু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে বলল, ‘পাগলী একটা। শুধু শুধু ভয় পায়। কিছু হ‌বে না। সব ঠিক হ‌বে। সব। আমি ঠিক ক‌রে দিব। আমি যত‌দিন আছি আমার তূবা‌কে কো‌নো সমস্যা ফেইস করতে হ‌বে না।’

শ্রাবণ, তূবার থুতু‌নি‌তে হাত দি‌য়ে মুখ তু‌লে বলল, ‘এ্যাই তূবা, আমার দিকে তাকাও।’
তূবা চোখ তু‌লে তাকা‌তেই শ্রাবণ ওর চো‌খের পা‌নি মু‌ছে চো‌খে, গা‌লে চুমু এঁকে বলল, ‘ইশ! কান্না ক‌রে পু‌রো লালবতী হ‌য়ে‌ছে। আচ্ছা ব‌সো তো তোমা‌কে একটা জি‌নিস দে‌খাই।’

শ্রাবণ ওর হাতে থাকা শ‌পিং ব্যাগটা হা‌তে দি‌য়ে বলল, গত তিনমাস যাবত টিউশ‌নির টাকা জমি‌য়ে তিনটা শা‌ড়ি কি‌নেছি। একটা মা‌য়ের, একটা কথা আপুর আর একটা তোমার জন্য। ও হ্যাঁ নতুন ভা‌বির জন্য একটা কি‌নব ব‌লে ভে‌বে‌ছি। সেটা তু‌মি পছন্দ ক‌রে দি‌বে। কাল কিন্তু আমার সা‌থে শ‌পিং কর‌তে যা‌বে। আর কথা আপুর শা‌ড়িটা কাল বা‌ড়ি গি‌য়ে দে‌খো। এখন দে‌খো তো তোমার শা‌ড়িটা পছন্দ হ‌য়ে‌ছে কি না?’

তূবা ব্যাগ থে‌কে শা‌ড়িটা বের কর‌লে‌া। হালকা গোলা‌পি র‌ঙের, সফট জর‌জে‌টের শা‌ড়ি। বেশ ভারী সুতা আর পাথ‌রের কাজ কর‌া। তূবা শা‌ড়িটায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
‘খুব সুন্দর।’
শ্রাবণ, তূবার পা‌শে ব‌সে ওর কাঁ‌ধে থুতু‌নি রে‌খে বলল,
‘কথা আপু বলল, রঙটা না‌কি তোমার গা‌য়ের সা‌থে মি‌লে যা‌বে। তবে তোমা‌কে দারুণ লাগ‌বে।’

তূবা, শ্রাব‌ণের দি‌কে তাকা‌তেই শ্রাবণ বলল,
‘খবরদার একদম বলবা না বা‌জে খরচ ক‌রে‌ছি। সম্পর্ক শুরু হওয়ার পর থে‌কে তোমা‌কে কিছু দেইনি এখন পর্যন্ত। কিছু দি‌তে চাই‌লেই বলতা আমার বাবার টাকার জি‌নিস তুুমি কেন নিবা? এটা আমার নি‌জের ইনকা‌মের টাকার। আর আমার টাকার উপর তোমার অধিকার আছে।’

তূবা ম‌লিন হে‌সে বলল, ‘আ‌মি বল‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম শা‌ড়িটা খুব সুন্দর হ‌য়ে‌ছে।’
‘তাহ‌লে বউ ভা‌তের দিন এটা পরবা।’
তূবা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে শ্রাবণ‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। ম‌নে বলল, ‘শ্রাবণ, তু‌মি কি স‌ত্যি পার‌বে আমা‌কে নি‌জের ক‌রে নি‌তে? পার‌বে বাবা‌কে রা‌জি কর‌তে?’

একটা কথা ব‌লেন আমার গল্প আপনা‌দের কা‌ছে কেমন লাগে? য‌দি ভা‌লো লা‌গে তাহ‌লে নিশ্চয়ই আমার বইটাও আপনা‌দের কা‌ছে ভা‌লো লাগ‌বে। কারণ Fb তে গল্প আমি যতটা মন দি‌য়ে লে‌খি, বই লে‌খি তার‌চে‌য়ে দশগুণ বে‌শি মন দি‌য়ে। তো fb গল্প এর চে‌য়ে বই‌য়ের গল্প আপনা‌দের আরও বে‌শি ভা‌লো লাগ‌বে। আশাক‌রি নতুন বইটি কি‌নে হতাশ হ‌বেন না।

চল‌বে…