জলফড়িং পর্ব-১৯

0
353

#জলফড়িং
#Roja_islam
#part ১৯

ভোরবেলা আঁধারে আবৃত অম্বরে আলো’র রশ্মি অল্প সল্প ফুটতেই, সম্পূর্ণ রাত জেগে থাকা রাদ নিজের ছোট্ট ব্যাকপ্যাক’টা গোছাতে শুরু করলো। রাতে ঘণ্টা খানেক কথোপকথনের পর ইরা’কে ঘুমুতে পাঠিয়ে। রাদ রাত জেগে প্ল্যান করে আগামী দিন গুলোতে কখন কী করতে হবে, কিংবা কিভাবে কী করবে। রাদে’র মস্তিষ্ক তীরের বেগে ছুটে যাচ্ছে এখনো ও চুপচাপ নিজ কাজে ব্যাস্ত। যথাক্রমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সকাল সকাল তরী, কাশিশ নিজের সুশ্রী মুখোমুখি লটকিয়ে ওর পাশেই বসে আছে। তরী’র নাসারন্ধ্র হতে নির্গত হলো তপ্ত নিশ্বাস, মুখগহ্বর দিয়ে বেরিয়ে এলো আফসোসে’র ফুল ঝুঁড়ি,

–” আমার বিয়ে’টা মাটি হ’য়ে গেলো, আমার একটুও ভালো লাগছেনা রাদ ভাইয়া তুমি সত্যি চলে যাচ্ছো আমি বিশ্বাস অব্দি করতে পারছিনা! ”

সম্বিৎ ফিরে পেলো যেন রাদ। কয়েকটি সেকেন্ড’র নিস্তব্ধতা কাটিয়ে হঠাৎ ফিচলে গলায় বলল,

–” কেন যাচ্ছি সেটা জিজ্ঞেস করবেনা মিসেস হবু তরী চৌধুরানী? ‘

এপর্যায়ে তরী কিছু বলার পূর্বেই থম মেরে বসে থাকা কাশিশ গম্ভীরমুখে বলল,

–” কেন যাচ্ছিস কী হয়েছে এমন? আন্টির কিছু হয়নি আমি জানি। রাতেও তো কথা হলো তাহলে হঠাৎ এভাবে তোর চলে যাবার মানে কী শুনি? ”

রাদ প্রসন্ন’র হাসি হেসে ব্যাকপ্যাক রেখে দু’ভাইবোনের দিকে ফিরে দাঁড়ালো। বিগলিত গলায় শুধালো,

–” সারপ্রাইজিংলি ইরা’র ফ্যামিলি আমাকে দেখতে চাইছে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে খুব দ্রুত ওরা ইরা’র দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিতে চাইছে। কালকের পরদিন ওরা আমার সাথে দেখা করতে আসবে কোনো রেস্টুরেন্টে। এভাবে চলে যাওয়া এটাই মেইন কারণ। তাছাড়া ইরা’কেও একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন ও ভীষন ভয় পাচ্ছে..!”

আকস্মিক রাদ থেমে গেলো! ইরা ভীতসন্ত্রস্ত তার থেকে-ও বড় কথা রাদে’র মাথায় ভূত কিংবা তৃষ্ণা পেয়েছে ইরা’কে একপলক দেখার। মেয়ে’টার শ্যাম মুখশ্রী না দেখে ও আর এক মুহূর্ত স্বস্তি, শান্তি কোনটাই পাচ্ছে না। সেটা ছোট বোনে’র সম্মুখে মুখ ফুটে বলতে পারলো না রাদ। এদিকে ওর কথা শুনে কাশিশ প্রথমে বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হলে-ও পরমুহূর্তেই ছলাৎ করে উঠে বন্ধু কম ভাই’কে জড়িয়ে ধরলো গায়ের জোরে। হাস্যোজ্জ্বল, দীপ্তচক্ষে চেয়ে উচ্চস্বরে আওড়াল,

–” কী বলছিস কী ভাই! সত্যি? আই আ্যম সো হ্যাপি, রাদ। সব ঠিক থাকলে.. কী বলছিস। এবার আর কেউ তোর বিয়ে আঁটাতে পারবে না ভাই। আমি জানি, তোকে আর অপছন্দ? হতে-ই পারেনা কারো! ”

তরী অত্যন্ত খুশী হলে-ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ওর বিয়েতে ওর শুভাকাঙ্ক্ষী রূপে ভাই উপস্থিত থাকবে না। রাদ কাশিশের সঙ্গে কথোপকথন শেষে ওর কিঞ্চিৎ ফ্যাকাসে হ’য়ে যাওয়া মুখশ্রী’র সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে তরী ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে নরম গলায় শুধালো,

–” ভীষণ ভালো লাগছে ভাইয়া। আবার কষ্টও! ”

রাদ উজ্জ্বল মুখে তরী’র মাথায় হাত রেখে মোলায়েম হেসে বলল,

–” আচ্ছা তরী, যদি ভাইয়া’র সাথে ভাবীপু এসে পৌঁছায় তোমার বিয়েতে কেমন হবে বলোতো ব্যাপার’টা? ”

তরী বিস্ময়ে আকাশ থেকে টুপ করে ধরণী বুকে আছড়ে পড়লো। পুরপুরি রাদে’র এহেন কথার মর্মার্থ ধরতে পেরে দু’ভাইবোন ঝাঁপিয়ে পড়লো রাদে’র উপর। তরী সীমাহীন খুশী’তে কেঁদে ফেলেছে। কাঁদতে কাঁদতে অস্থির ভঙ্গিতে আওড়াল,

–” টুডে আ’ম ভ্যেরি হ্যাপি রাদ ভাইয়া। বেস্ট গিফট আমার বিয়ের! থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো ম্যাচ। ”

ভারী পুরুষালী গলায় রাদে’র প্রাণ খোলা হাসি ভেসে এলো ভাই-বোনের কর্ণধারে যেটা খুব অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার। রাদ পুনরায় আশ্বস্ত করলো,

–” তুমি আমার এক মাত্র বোন তরী। তোমার বিয়েতে আমি থাকবো না এটা কী করে ভাবলে? তবে আমার ইচ্ছে ইরাও থাকবে আমার সাথে, এ-ই ইচ্ছে কেন হলো জানিনা। তবে প্রমিস, আমি আমার বোনের জন্য জলজ্যান্ত গিফট নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসবো। ২৯-তারিখ সকালে ইন শা আল্লাহ আমি ওকে নিয়ে তোমার বিয়ে এঞ্জয় করবো। হ্যাপি? ”

তরী’র নাক টেনে উচ্ছ্বসিত গলায় উচ্চস্বরে বলল,

–” সো হ্যাপি, ভাইয়া সো হ্যাপি। ভাবীপু থাকবে আমার বিয়ে আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা। বাট আই ট্রাস্ট ইউ লট। ”

ওদের কথোপকথনের মধ্যে কাশিশ হতভম্ব প্রস্ফুটিত চক্ষে চেয়ে রইলো রাদে’র হাস্যোজ্জ্বল মুখে। রাদ পিছন ফিরতে ওকে জড়িয়ে ধরলো কাশিশ। স্পষ্ট গলায় আওড়াল,

–” তোর এ-ই ইচ্ছে অবশ্যই পূর্ণ হবে রাদ। মন থেকে দোয়া রইলো তোদের দু’জনের জন্য। আফসোস তোর পাশে থাকতে পারলাম না। ”

তরী হঠাৎ ভাবুক হ’য়ে গেলো। মন দিয়ে কিয়ৎকাল কিছু ভাবলো। অতঃপর অত্যন্ত উচ্ছ্বাসে’র সাথে হঠাৎ বলল,

–” ভাইয়া তুমিও চলে যা-ও রাদ ভাইয়ার সাথে। এখানে আমার পাশে সবাই আছে কিন্তু ভাইয়া তো একা। সব কিভাবে সামলাবে? তাছাড়া তুমি এখানে দু’দিন না থাকলে কিছু আঁটকে থাকবে না। কিন্তু ভাইয়ার হয়তো ভীষণ অসুবিধে হতে পারে। ভাইয়ার তো তেমন বন্ধুবান্ধব ও নেই ওখানে তুমি ছাড়া। ”

রাদ আশ্চর্যান্বিত চক্ষে স্থির চেয়ে রইলো ছোট মেয়েটার দিকে। ওরা কতটা ভাবে ওকে নিয়ে যেখানে রক্তের সম্পর্ক নেই কারো সঙ্গে। অথচ রক্তের সম্পর্ক গুলো সব সম্পত্তির লোভে যেন অমানুষে রুপান্তরিত হয়েছে। এদের জন্যেই রাদ বিশ্বাস করে ভালো মানুষ অবশ্যই পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে সবাই লোভী, কিংবা কিছু চাওয়া-পাওয়ার লোভে অন্যকে ভালোবাসে না। কিছু মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবেও একদম অপরিচিত একটি মানুষকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে নিতে পারে। তেমনি কাশিশের পরিবার। এবং ওর মা।

কাশিশ নিজেও ভাবছিলো তরী’র বলা কথা গুলো। কিন্তু রাদ চলে যাচ্ছে ও নিজেও চলে গেলে হয়তো ছোট্ট বোনটা কষ্ট পাবে ভেবে রাদের সঙ্গে যাওয়ার কথাটি মুখ ফুটে বলতে পারেনি। এখন তরীর সম্মতি পেয়ে ও এক মুহূর্ত ভাবলো না নিজেও মিনিট দশের মধ্যে তৈরী হ’য়ে ফিটফাট। রাদ যদি-ও কঠোর ভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু ভাই-বোনের সিদ্ধান্ত নড়চড় করাতে সক্ষম হয়নি বিন্দুমাত্র।

অবশেষে তরী এবং কাশিশের মা রুবিনা বেগম হাসিমুখে বিদায় দিলেন দু’জন’কে। রুবিনা বেগম সব শুনে রাদে’র মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার সময় রাদ চট করে সালাম করে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। রাদে’র কাটা, কাটা গোল গাল গম্ভীর মুখশ্রী জুড়ে ছিলো তখন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু পাওয়ার বিস্তৃত সুখ, উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা। প্রেমপ্রেয়সী’কে নিজের করে পাওয়ার অসীম লোভ!
_________

আম বাগান থেকে সুমধুর স্বরে কোকিলের ডাক ভেসে আসছে থেমে থেমে। থাইয়ের একপাশ দিয়ে তীর্যক ছটা রোদের তীক্ষ্ণ রশ্মি মেঝেতে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। সে-ই আলোয় ঘুম ভেঙে যেতেই উত্তেজনায় বেডে শুয়ে থাকতে পারেনি একমুহূর্ত ইরা। এক ঝটকায় উঠে বসে সর্বপ্রথম ফোন চ্যাক করলো। ছোট একটা টেক্স এসেছে ৬:১০ এ! ” গুড মর্নিং জান। কয়েক ঘণ্টা মাত্র আমি আসছি। কী বলেছিলাম রাতে মনে আছে তো? ”

সকাল সকাল রাদ রওনা দিয়ে দিয়েছে রাজশাহীর উদ্দেশ্য। আর ও পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে ইরা! চক্ষুদ্বয় রগড়াতে রগড়াতে আয়নায় সম্মুখে এসে দাঁড়ালো মেয়ে’টা। কিছুদিনের খাওয়া-দাওয়া ঘুমে অনিয়ম চেহারার করুণ অবস্থা, চুল গুলোতে যেন প্রাণ নেই। একেই চেহারার যা হাল চাল। এ-ই মুখ নিয়ে কিভাবে ইরা যাবে প্রাণপুরুষের সম্মুখে সেটাই হতাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে। তার উপর আজ বাসা থেকে কী বলে বের হওয়া যায়, সে-ই টেনশনে মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে। মা’য়ের রোষানল মুখ’টা অন্তঃপুরে উঁকিঝুঁকি দিতেই, ভীতসন্ত্রস্ত ইরা’র অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেঁপে উঠে। ও হয়তো আজ বলতেও পারবেনা বাহিরে যাওয়ার কথা। গভীর চিন্তায় ভারাক্রান্ত অস্থির ইরা বাসিমুখে রাদ’কে কল দিলো তৎক্ষনাৎ। রাদ তখন বাসে কল রিসিভ করতেই সে-ই আভাস স্পষ্ট টের পেলো ইরা। শা শা শব্দ হচ্ছে। ইরা মন খারাপ করে নরম গলায় বলল,

–” রাদ আজ দেখা করতেই হবে? ”

কাশিশ পাশে বলে গম্ভীর গলায় রাদে’র সংকীর্ণ জবাব,

–” হ্যাঁ হবে! ”

ইরা ভীরু গলায় শুধালো,

–” মা যদি যেতে না দেয়? ”

রাদ একগুঁয়ে গলায় আওড়াল,

–” আগে ব’লে তো দেখো। বলবে ক্লাস আছে ইট’স ইম্পর্ট্যান্ট! ”

–” আমার ভয় করছে মা’কে আমি এখন চিনতেই পারিনা। মনে হয় ভিন্ন কিছু ভর করেছে উনার উপর। ”

রাদ হঠাৎ হেসে ফেলল। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আওড়াল,

–” একবার শুধু শাশুড়ী আম্মু’র সাথে দেখা’টা হতে দাও। দেখবে আমার ফ্যান হ’য়ে গিয়েছে। ”

এহেন কথায় ইরা কিয়ৎকাল তাজ্জব বনে রইলো। পরপর ওপাশ থেকে কাশিশ এবং রাদে’র দুষ্টু হাসি’র শব্দে লজ্জা পেয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বলল,

–” তুমি আজকাল কিসব বলো। ”

রাদ চোখে হাসলো। নরম গলায় শুধালো,

–” ইট’স ট্রু! ”

ইরা এবার হেসে ফেলল। বলল,

–” ঠিক আছে বাবা। প্রে ফর মি। যেন মা রাজি হ’য়ে যায়। ক’টায় থাকতে হবে রেস্টুরেন্টে? ”

–” উম্ম ১২-টা? ”

–” ওকে দ্যান আমি আজ ভার্সিটি হ’য়ে তোমার কাছে যাবো। তবে যদি বেরুতে না পারি আই আ্যম স্যরি। তুমি রেগে যেতে পারবে না। ”

রাদ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু ভাবলো। অতঃপর দৃঢ় গলায় আওড়াল,

–” রেগে যাবো না। বাট রাতে আমি তোমার বাসায় আসবো। ইউ উয়িল বি রেডি ফর দ্যাট জান। বাই! ”

ইরা হকচকিয়ে গেলো রাদে’র এহেন শ্রান্ত বাণী, নাকি শ্রান্ত, শীতল মস্তিষ্কের থ্রেট শুনে? কিছু বলতে উদ্যোগ হয়েছিলো সবে। রাদ ততক্ষনে যান্ত্রিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ঠোঁট টিপে বসে রইলো স্তব্ধ ইরা। শ্রান্ত, নম্র, বুঝদার, গম্ভীর রাদ’কে আজ বড্ড জেদিও মনে হচ্ছে। ছেলেটা কী চাইছে? আজ এতটা তাড়া কিসের দেখা করার? কে যানে! খুব বেশী ভাবনার সময় পেলো না ইরা দৌড়ে গেলো ওয়াশরুমে তৈরী হতে হবে তো ওকে প্রাণপুরুষের জন্য!
___________

ইরা একেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরুলো পড়নে একটা ধবধবে সাদা চুড়িদার। দ্রুত হাতে লাল টকটকে ইরানী স্টাইল হিজাব পড়ে ইরা চোখের বিষণ্ণতা দূর করতে চোখে মোটা করে কাজল এঁকে নিলো। পাতলা ঠোঁট রাঙিয়ে নিলো লিপগ্লোসে। এক নজর নিজেদের দিকে চক্ষুদ্বয় বুলিয়ে দেখলো মেয়েটা। শ্যাম রঙা শুকনো শরীরে অল্প সাজে খারাপ লাগছে না। সব শেষে চটপট ভার্সিটির ব্যাগটা কাধে তুলে বেরিয়ে এলো রুম থেকে৷

আশেপাশে নজর ঘুরিয়ে শুকনো ঢোক গিলে ইরা সোজা কিচেনে ঢুকে বড়মায়ের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালো। পাশে-ই নীলা বেগম বিষণ্ণ ভঙ্গিতে নাস্তা বানাচ্ছেন। ইরা দু-মাকেই শুনিয়ে শুনিয়ে স্পষ্ট করে বলল,

–” ভার্সিটির যাচ্ছি। ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে আজ যেতেই হবে। ”

নীলা বেগম ওর কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না। বড়মা ইরা’র দিকে একবার চক্ষুদ্বয় বুলিয়ে মলিন গলায় বললেন,

–” মিষ্টি লাগছে আজ তোকে মা। তবুও মুখটা শুকনো রাতেও তো খেলিনা কিছু। টেবিলে বস নাস্তা খেয়ে তারপর যাবি। ”

এ-ই মুহূর্তে বড়মার মুখে প্রশংসা আশাকরেনি ইরা। হকচকিয়ে গেলেও নাকচ করতে পারলোনা খাবেনা বলে। এক নজর স্থির চেয়ে মায়ের মলিন, ক্লান্ত মুখ পানে দ্রুতপদে ডাইনিং এ এসে বসলো। বড় মা খাবার বেড়ে দিলেন মুহূর্তে। এখন আর বাসায় আগের মতো রুটিন মেনে এক সাথে এক সময়ে সকালে ব্রেকফাস্ট করা হয় না। সময়ে’র সাথে নিয়ম গুলো বদলে গেছে কিভাবে যেন। ইরা খেতে খেতে ভাবলো আদি’র বলা রাতে’র কথাগুলো। ও যা ভুল করার করে তো ফেলেছে। এখন সব ভুল শুধরে দিতে হবে খুব দ্রুত বাড়ি’র দুই ছেলে’কে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে হবে ওর। আর ভয় নয়। মা’য়ের দিক চেয়ে হলে-ও আজকে’ই বড় বাবা’র সঙ্গে কথা বলতে হবে। ইরা মনে মনে ছক কষে নিলো কিভাবে বলা যায়।

তন্মধ্যে রাদে’র ম্যাসেজ এলো৷ ছিটকে বেরুলো ইরা ভাবনা হতে, আর ঘণ্টাখানেক লাগবে রাদে’র চাপাইনবয়াবগঞ্জ এসে পৌঁছাতে। ইরা দ্রুত খাওয়াদাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বড় মা’য়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে নাহ্, নীলা বেগম বিন্দুমাত্র কোনোরূপ গতিক্রিয়া দেখায়নি।

ইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রিকশা খুঁজতে ব্যাস্ত হলো। এখন দেখার পালা ওর প্রাণপুরুষের আজ দেখা করার কীসের এতো তাড়া? কথাবার্তায় যতোটুকু বুঝতে পারছে মনে হচ্ছে বড়সড় প্ল্যান পাকিয়েছেন স্যার! কী সেই প্ল্যান?

চলবে!