মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-৩০

0
412

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

তোহা রেগে ফাহিমের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। রাগে তার ফর্সা মুখে রক্তিম আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে। তোহার পক্ষে বেশ কঠিন ছিল নিজের রাগ সামলানো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফারহানের গালে থা’প্পর লাগিয়ে দিলো। ফারহান হতবাক চাহনিতে চাইল। তোহা রাগী স্বরে বলে ওঠে,
‘হাউ ডেয়ার ইউ? আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলেন?’

‘সেইজন্য আপনি আমার গায়ে হাত তুলবেন?’

‘হ্যাঁ, আর এতে আমার কোন আফসোস নেই। আপনি একটা মেয়েকে ঘরে এনে দরজা বন্ধ করতে পারেন না।’

‘আমার কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্য ছিল না।’

‘আপনার উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে আমি অবগত নাই। আর জানার সময়ও নেই। আমার অনেক জরুরি ক্লাস আছে। আমায় যেতে দিন এখান থেকে। নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো।’

ফারহান বুঝতে পারলো এখন তোহাকে কোনভাবেই সামলানো যাবে না। সে তো কিছু কথা বলতে চাইছিল ইভানাকে কিন্তু এখন আর সেটা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। ব্যাপারটা যাতে বেশি ঘোলাটে না হয়ে যায় সেই কারণে তোহার পথ থেকে সরে দাঁড়ায় ফারহান।

তোহা নিশ্চিত হয়। একটু আগে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিল৷ যদিও অনেক সাহসী ও স্ট্রং সে কিন্তু তবুও হঠাৎ একজন ছেলে যখন একটি মেয়েকে এভাবে ঘরে টেনে আনে তখন কোন মেয়ের পক্ষেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব না। ফারহান পথ ছেড়ে দাঁড়াতেই তোহা আর এক মুহুর্ত নষ্ট করল না। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। বাইরে এসে প্রার্থনা করতে হলো যেন আর কোনদিন তাকে ফারহানের মুখোমুখি হতে না হয়। আপাতত ইভানার কথা ভেবেই কোন সিনক্রিয়েট করল না সে। তবে তোহা ভেবেই নিয়েছে এরপর ফারহান এমন কিছু করলে সে ছেড়ে কথা বলবে না।

এদিকে ফারহানও বকবক করে বলছে,
‘আজকে কাজটা তুমি ভালো করলে না তোহা। তুমি যতোই আমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করো, দিনশেষে তোমার আমারই হতে হবে। তোমার শেষ গন্তব্য আমিই। এবার আমাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বলেই রহস্যজনক হাসি দিলো ফারহান।

৫৯.
ঘড়ির কা’টায় দুপুর ১২ টা। গ্রীষ্মকাল, তাই সূর্যের তেজ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। ইভানা একটু সুস্থ অনুভব করায় ড্রয়িংরুমে এসে বসেছে। ফারজানা বেগমের সাথে গল্প করছে। এরমধ্যে ফাহিম এসে ইভানাকে বকতে থাকে। বলে,
‘একটু সুস্থ হতেই নিচে চলে এসেছ। তুমি কি নিজের প্রতি একটুও খেয়াল রাখবা না? যাও ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও।’

‘আমি ভালো আছি এখন। বিশ্বাস না হলে আপনি আমার জ্বর মেপে দেখুন।’

‘চাইনা আমি। তোমার যা ইচ্ছা করো।’

বলেই ফাহিম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার এখন বুয়েটে যেতে হবে জরুরি কাজে। এদিকে ফাহিম চলে যেতেই ইভানা ফারজানা বেগমকে অভিমানী সুরে বলে,
‘দেখেছেন আপনার ছেলে কিভাবে বলল?’

বলেই গাল ফুলিয়ে নিলো। ফারজানা বেগম বললেন,
‘তোমাগো মান-অভিমান দেখতেও খুব ভালো লাগে।’

আচমকা ফারহান এসে হাজির হয় ড্রয়িংরুমে। এসেই ফারজানা বেগমকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আম্মু তুমি একটু চলো আমার সাথে।’

ফারজানা বেগম বিস্মিত হয়ে জানতে চান,
‘চলো মানে? তোর লগে কই যাবো?’

‘সেটা গেলেই দেখতে পারবা। এখন প্লিজ চলো।’

বলেই ফারজানা বেগমের হাত ধরে টানতে লাগল৷ ফারজানা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
‘আচ্ছা যাচ্ছি চল। তোর মতিগতি বুঝি না বাপু। এই ভর দুপুর বেলা আবার কই যামু ক তো?’

ইভানা কিছু বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কি হচ্ছে তা বুঝে ওঠা তার কাছে বেশ কঠিন। ফারহান কি করতে চাইছে সেটাই ভাবতে থাকে ইভানা।

ফারহান ততক্ষণে ফারজানা বেগমকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। ইভানা গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই ভাবতে থাকে। ইভানার কাছে ফারহানের স্বীকারোক্তি,ঝর্ণাকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সবশেষে আজ সকালে ফারহানের কলে তোহার এই বাড়িতে আসা। সবকিছু ভেবে ইভানা অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
‘উনি ওনার মাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাচ্ছেন না তো? দেখলাম বেশ সুন্দর ভাবে সেজেছিলেন। তাহলে কি…আল্লাহ তুমি দেখো, আমি যেটা ভাবছি সেটা যেন না হয়। নাহলে পরিস্থিতি খুব নাজুক হয়ে উঠবে।’

৬০.
ফারহান ও ফারজানা বেগম বসে আছে ইভানাদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে। ইভানার বাবা তারিকুল ইসলাম, মা ইশরাত খাতুন দুজনেই তাদের সামনে বসে আছে। ইশরাত খাতুন ফলের জুস এগিয়ে দিয়ে ফারজানা বেগমকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘বেয়ান আপনি আজ হঠাৎ এলেন যে? আপনি আসবেন আগে বলবেন তো৷ তাহলে আমি সব ব্যবস্থা করে রাখতাম।’

ফারজানা বেগম প্রতিত্তোরে শুধু হালকা হাসেন। কিভাবে কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। এখানে আসার পথেই ফারহান তাকে বলেছে এখানে আসার উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে। ফারহান চায় ফারজানা বেগম ফারহান ও তোহার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলুক। ফারজানা বেগম তো কথাটা শুনে খুব রাগারাগি করেন। এখানে আসতেই চায়নি। কিন্তু সেইসময় ফারহান বলে,
‘তুমি যদি আমার কথা না শোনো, তাহলে কিন্তু আমার ম’রা মুখ দেখবে।’

এই কথা শুনে ফারজানা বেগম থমকে যান। কোন মাই নিজের সন্তানের খারাপ চান না। ফারজানা বেগম কিভাবে কথাটা তোহার মা-বাবাকে বলবেন সেটাই বুঝতে পারছিলেন না। ভীষণ ইতস্তত বোধ করছিলেন। তিনি ফারহানের দিকে একপলক তাকান। ফারহান ইশারা করে বলতে বলে।

ফারজানা বেগম সাহস করে বলেন,
‘আসলে কি কইরা যে কথাটা বলমু,আমার বড় পোলা ফারহান আপনাগো মাইয়া তোহাকে পছন্দ করে, তাই আমি ওগো….’

ফারজানা বেগম পুরো কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলেন না তার আগে সেখানে উপস্থিত হলেন হাশেম আলী। তিনি ক্ষুব্ধ গলায় বললেন,
‘আপনাদের সাহস তো কম না। আমার ছোট নাতনীটাকে এত অপমান করে আপনাদের শান্তি হয়নি এখন বড় নাতনীটাকেও…’

তারিকুল ইসলামও বললেন,
‘আপনারা আমাদের আত্মীয়। আমি চাইছিনা এমন কিছু বলতে যাতে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়। তাই এই ব্যাপারে আর কথা না উঠলেই ভালো হবে।’

ফারহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারজানা বেগম তাকে থামিয়ে বলে,
‘যথেষ্ট হইছে। আর না। তুই এহনই এইহান থাইকা চল। আমাদের যতটুকু সম্মান বাইচা আছে সেটা আর নষ্ট করিস না।’

ফারহান আর কিছু বলতে পারল না। ফারজানা বেগমকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে এলো তোহাদের বাড়ি থেকে।

★★★
তোহা বাড়িতে ফিরে সকল ঘটনা জানতে পারে। ফারহান যে এত দূর এগিয়ে যাবে সেটা ভাবতে পারেনি। ব্যাপারটা এবার মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে। তাই তোহা সাথে সাথে ইভানাকে ফোন করল। ইভানা ফোন রিসিভ করতেই তোহা বলে উঠল,
‘তোর ভাসুর এসব কি শুরু করেছে ইভানা? আজকে নাকি ওনার মাকে নিয়ে আমার জন্য সম্মন্ধ নিয়ে এসেছিল। এসবের মানে কি?’

‘আমি এমন কিছুই আন্দাজ করছিলাম আপাই।’

‘মানে?’

ইভানা এবার ফারহানের ব্যাপারে সমস্ত কথা খুলে বললো তোহাকে। সব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল তোহা। ভীষণ রাগ উঠতে লাগিল তার। ফোন রেখে দিয়ে বলে উঠল,
‘আপনি কাজটা ঠিক করেন নি ফারহান। দু দুটো মেয়েকে অপমান করেছেন আপনি। প্রথমে আমার বোনকে বিয়ের আসরে রেখে গেছেন আর তারপর একটা মেয়েকে যা নয় তাই বলেছেন। এবার আপনি নিজের কর্মফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হোন। আপনার সব কাজের শাস্তি আমি আপনাকে দেবো। আমাকে বিয়ে করার খুব শখ না আপনার। এবার আপনার এই শখ মিটিয়ে দেবো।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨