মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব-৩২

0
445

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা মনমরা হয়ে বিছানায় বসে আছে। তোহা আজ যা করল তা খুব ভাবাচ্ছে তাকে। এই নিয়ে তোহার সঙ্গে অনেক তর্কও করেছে ইভানা। কারণ হাজার হোক ফারহান ইভানার ভাসুর হয়। তোহা যা করল তাতে ফারহানের তাদের সকলের প্রতি নেগেটিভ ধারণা তৈরি হতে আরে। যার প্রভাব সরাসরি ইভানার উপর এসে পড়ার সম্ভাবনা বেশি৷ এই নিয়ে বেশি চিন্তিত ইভানা।

ইভানা এসব কিছুই বসে বসে ভাবছিল এমন সময় তার মনে পড়ে যায় তার উপর আসা আরো বড় একটি সমস্যার কথা। যেই সমস্যার নাম পরীক্ষা। হ্যাঁ, তাদের কলেজে খুব শীঘ্রই পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। ইভানা এই নিয়ে খুব চিন্তায় আছে। কারণ তার পড়াশোনার অবস্থা নাজুক। আপাতত যেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পড়াশোনার তাতে পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এসব ভাবনা থেকে ইভানা বই নিয়ে বসল। পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি পড়া দিয়েছে, মাঝখানে অনেক দিন কলেজে না যাওয়ায় তার পড়াশোনায় বেশ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এখন পরীক্ষার আগে যেখানে রিভাইজ দেওয়ার কথা সেখানে ইভানার পড়াই কমপ্লিট নয়। বই খুলে বসলে কেবল হতাশার শ্বাস ফেললো ইভানা।

টানা এক ঘন্টা পড়ে যা বুঝল পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়। কোনরকমে পাস করতে পারবে হয়তো। এসব ভেবে খুব কষ্ট লাগল তার। না জানি ফাহিম কত আশা নিয়ে বসে আছে।

ইভানার এসব ভাবনার মধ্যে ফাহিম রুমে আসল। সারাদিন ভীষণ ক্লান্তিতে গেছে তার। তাই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে ইভানাকে বলল,
‘শুনলাম সামনে নাকি তোমার পরীক্ষা? প্রিপারেশন কেমন?’

ইভানা ফাহিমকে আশাহত করতে চায়নি। তাই মেকি হাসি দিয়ে বলে,
‘ভালোই।’

‘বাহ, শুনে ভালো লাগল। আমি আশাবাদী তুমি অনেক ভালো রেজাল্ট করবে। সবার মুখ একেবারে বন্ধ করে দেবে। যারা তোমায় অপমান করেছে তাদের তুমি যোগ্য জবাব দেবে।’

ইভানা ফাহিমের তাকে নিয়ে এত আশা দেখে আরো বেশি হা হুতাশ করতে লাগল। ফাহিম কত কি করে তার জন্য। এরপরও যদি ইভানার রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে ফাহিম অনেক কষ্ট পাবে। তাই ইভানা মনে মনে সংকল্প করে বলে,
‘যে করেই হোক, আমায় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।’

৬৩.
ফারহান আরো একটি সি*গারেট জ্বা’লালো। নিকোটিনের ধোঁয়ার সাথে কষ্টগুলো উড়িয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা মাত্র। তোহার থেকে তো প্রত্যাখ্যাত হয়েছেই এখন আবার বাড়িতে এসে শুনছে ঝর্ণাও বাড়িতে এসে বিয়ের কার্ড দিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ফারহান এখন বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। সবদিক দিয়ে তার নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে।

তবে এসব কিছুর জন্য সে শুধু একজনকেই দায়ভার দিচ্ছে। ফারহানের কাছে মনে হচ্ছে ইভানার জন্যই তার জীবনে এমন পরিণতি দেখা দিয়েছে। ইভানার প্রতি ক্ষোভ জন্ম দিচ্ছে তার মনে৷ এদিকে তোহাকেও দেখিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে তার। তাই ফারহান একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল। সে বিয়ে করবে! আর এমন কাউকে বিয়ে করবে যে তোহার থেকেও ভালো হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে ফারহান ফেসবুকে ঢু মা’রে। ফেসবুকে ঢুকে স্পাম ম্যাসেজে ঢুকতেই একটি অচেনা আইডি থেকে ম্যাসেজ দেখতে পায়। ফারহান ম্যাসেজটি চেক করে দেখে রিয়া নামের মেয়েটির ম্যাসেজ। ফারহান মনে করে রিয়ার কথা। এই মেয়েটাই তো ইভানার সাথে তার বিয়ের দিক তাকে ইভানার ভিডিও দেখিয়েছিল। মেয়েটিকে অনলাইনে দেখে ফারহান ম্যাসেজ করা শুরু করে। ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে গিয়ে রিয়া বলে,
‘জানেন আমি এবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েছি। আমার যে কি খুশি লাগছে। সেই খুশিই তো আপনার সাথে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম। আগামীকাল থেকে আমাদের ক্লাস শুরু। জানেন এরমধ্যে আমাদের কত কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল! ঐ ইভানার বাবার ধার মেটাতে গিয়ে আমাদের অনেক অর্থকষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ সব ঠিক আছে।’

ফারহান উত্তরে বলে,
‘হুম। সবকিছু ঠিকই আছে। আচ্ছা, কাল বা পরশু কি তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?’

রিয়া যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল। ফারহান প্রস্তাবটা দিতেই একেবারে লুফে নেয়। বলে ওঠে,
‘অবশ্যই। আপনি বলুন কোথায় দেখা করতে হবে।’

‘তুমি কাল সুলতান ডায়ানে এসো। ওখানে দেখা হবে।’

‘আচ্ছা।’

ফোন রেখে দিয়ে ফারহান বলে,
‘আমার মনে হয় এবার আমি আমার আসল লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছি। তোহা, তুমি তোমার বোনের জন্য আমার সাথে এমন করলে তো! এবার দেখো তোমার সেই বোনের কি অবস্থা করি।’

এদিকে রিয়াও ফোন রেখে দিয়ে কপট হেসে বলে,
‘ঐ ইভানার জন্য আমাকে অনেক সাফার করতে হয়েছে। এবার আমি যদি ইভানার লাইফ হেল করে না ছাড়ি তাহলে আমার নামও রিয়া নয়। এবার শুধু দেখতে থাক ইভানা তোর সাথে কি কি হয়। ফারহানকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেই তোর সর্ব’নাশ করব আমি। মাউ ডিয়ার কাজিন সিস্টার। হা হা হা।”

বলেই একটা বিশ্রী হাসি দেয়।

৬৪.
ইভানা পরীক্ষার টেনশনে কাবু হয়ে আছে। আজ শেষ বারের মতো ক্লাসে এসেছে সে। কাল থেকে পরীক্ষা শুরু। ইভানার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ দেখে মেঘলা বলে,
‘হোয়াটস আপ ইভা? তোমাকে এমন লাগছে কেন?’

এতদিনে তাদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। তাই ইভানা কিছু না লুকিয়ে বলল,
‘তুমি তো জানোই কাল থেকে এক্সাম। বাট আমার পড়াশোনা এখনো কমপ্লিট হয়নি। পাস করারও আশা করা যাচ্ছে না। আসলে মাঝখানে এত গ্যাপ হওয়ায়…’

‘এটা নিয়ে টেনশন করার কি আছে? জাস্ট রিলাক্স। পরীক্ষায় শুধু পাস করবো না অনেক ভালো রেজাল্টও করব।’

‘কিভাবে?’

‘শোন, আমার কাছে নকল আছে।’

‘কি?’

‘হুম। কালকে আমি নকল নিয়ে আসবো। তোমার জন্যেও এক কপি আনবো। আচ্ছা?’

‘না। দরকার নেই। আমি নকল করবো না।’

‘এত ভালো হলে তো পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারবা না। একবার ভালো করে ভেবে দেখো।’

ইভানা সব কিছু বিবেচনা করে দেখলো। ফাহিম কত আশা নিয়ে আসে তার রেজাল্ট নিয়ে। তাই এই মুহুর্তে তার সততা লোপ পেল। ইভানা ভাবলো, এটা তো আর সেরকম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা না। এবার কোনভাবে পাস করে নেই। পরেরবার নাহয় ভালো করে পড়ে ভালো রেজাল্ট করবো।

★★★
আজ ইভানার পরীক্ষার দিন। কথামতো মেঘলা ইভানার জন্য নকল পেপার নিয়ে সাথে নিজের জন্যেও। পরীক্ষা শুরুর আগে ইভানার হাতে নকল তুলে দিয়ে মেঘলা বললো,
‘নাও। সাবধানে। ধরা পড়লে কিন্তু অবস্থা খারাপ।’

‘আমার খুব ভয় করছে।’

‘একদম ভয় পাবা না। এমন ভাব করবে যেন নকল করছ না। এই পেপারটা খাতা পাওয়ার পর খাতার ভেতরে ঢুকিয়ে দেবে। তারপর দেখে দেখে লিখবে। কেউ ধরতেও পারবে না। আপাতত এটা বুকের মধ্যে রাখো। যাতে কেউ টের না পায়।’

ইভানা তাই করে। অতঃপর পরীক্ষার হলে যায়। কিছুক্ষণ পর তাদের খাতা ও প্রশ্ন দেওয়া হয়। ইভানা মেঘলার কথামতো খাতার মধ্যে নকল ঢুকিয়ে লিখতে থাকে। সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের ক্লাসে ডিউটিরত ম্যাডাম কিছু একটা সন্দেহ করে ইভানাকে বলে,
‘এই মেয়ে দাঁড়াও তুমি।’

কথাট শুনে ইভানার বুক ধ্বক করে ওঠে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨