#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৭]
_____________________
” হঠাৎ আপনার মাথায় কি চলছে?আমাদের বাসায় কেন আসবেন?”
” অনেকদিন হলো ভালো মন্দ খাইনি তাই…”
” বাজে কথা বলবেন না মিথ্যুক।গতকাল সুন্দরী রমণীর পাশে বসে তো গোগ্রাসে গিলেছেন আমি স্পষ্ট দেখেছি।”
” উফফ আবার পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো।সকাল থেকে চার বার বাথরুমে যেতে হয়েছে এবার বুঝেছি হঠাৎ এমন কেন হলো।তুমি গতকাল নজর দিয়েছো তাই আজ আমার পেট খারাপ করেছে।”
ঈশানের কথায় থতমত খেয়ে গেলো ঈশা।ভেতরটা রাগে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
” বাজে কথা বলছেন কেন?আমি কখন আপনার খাবারে নজর দিলাম?”
” এই তো বললে আবার অস্বীকার করছো।”
” ঈশান..”
” আস্তে আস্তে কানে লাগে তো এই ভাবে কেউ চিৎকার দেয় জান?যদি আমার কানের পর্দা ফেটে যায় তুমি কবুল বললে আমি শুনবো কি করে হুম?”
” সাত সকালে আপনি আমার মাথাটা গরম করছেন কেন?”
” এটা সাত সকাল?সাড়ে নয়টা বাজতে চলেছে।আচ্ছা যাও বাদ দাও এবার বলো পায়ের কি অবস্থা? তোমাকে বলেছিলাম চলো ব্যান্ডেজ করে আসি তুমি তো শুনলে না।”
” পা যেমন ইচ্ছা তেমন আছে।”
” জেদ করবে না।বাসায় গিয়ে ব্যান্ডেজ করেছো?”
” হুম।”
” ব্যথা আছে পায়ে?”
” না আমার তো লোহার শরীর আঘাত লেগেছে ব্যথা থাকবে কেন?”
ঈশান নিশব্দে হাসলো।অধিকাংশ মেয়ের এই এক দোষ সোজা উত্তর সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে দেবে।
” সাবধানে থাকবে পায়ে যেন আর চোট না লাগে।এখন ফোন রাখছি।”
ঈশানদের আসার খবরটা শুনে বেশ চমকে গেলো ঈশা মনে তার ভীষণ ভয় কাজ করছে কি থেকে কি হবে।মুজাহিদ হাসান অনেকবার রিকুয়েষ্ট করেছিলো ঈশানকে যেন তার মা’কে নিয়ে আসে প্রতিবার সেই প্রস্তাব ঘুরিয়ে দিয়েছিলো ছেলেটা।কিন্তু হঠাৎ ঈশান আসতে কেন রাজি হবে?তাও ওতটা কাছের আত্মীয়র বাড়িতে নয় বরং দূর সম্পর্কের।প্রশ্নরা যখন কিলবিল করছিলো ঈশার মাথায় তখন বেখেয়ালি হাটতে গিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় পায়ে চোট লাগা স্থানে পুনরায় আঘাত লাগে।তৎক্ষণাৎ পা ধরে মেঝেতে বসে যায় ঈশা।গজ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল তার পা হঠাৎ আঘাত লাগায় টনটনে ব্যথায় মুষড়ে উঠলো।সাদা গজ কাপড়টা এতক্ষণে রক্তে ভিজে উঠেছে।প্রতিদিন কাজে সাহায্য করার মানুষটা ঈশাকে দেখে এগিয়ে এলো হাক ছেড়ে ডাকলো সবাইকে।
” খালা কাউকে ডাকবেন না।আম্মু দেখলে ভীষণ বকবে।”
” কি কও।আঙুল দেহো কতডি রক্ত ছুডছে।”
” থাক থাক।আমাকে একটু ধরেন রুমে দিয়ে আসেন।”
সুলতানা ছাদে ছিলো বিধায় শুনতে পেলো না।তবে মুজাহিদ হাসানের কানে ঠিকি গেলো ঈশার আর্তনাদ।দ্রুত পায়ে তিনি ছুটে এলেন মেয়ের কাছে হাসিন তার পেছনেই ছিল।কাজের চাপে অনেকদিন হলো আসা হয়নি তাই আজ ভোরে হাসিন এসেছে।ঈশার পায়ে রক্ত দেখে বিচলিত হলেন মুজাহিদ হাসান।
” মারে পায়ে কি হলো?”
” টেবিলের সাথে বারি লেগেছে আব্বু।”
” তুমি দেখে হাটবে তো একটুও নিজের প্রতি যত্নশীল নও তুমি।”
ঈশা দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট কামড়ে ধরলো ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে।তা অবস্থা বুঝতে পেরে আগলে ধরে হাসিন।
” চল হাসপাতালে যাই।”
” না না ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।”
” কতটা ঠিক হবে বুঝতে পারছি ইনফেকশন হয়ে গেলে?এক্ষুনি চল।
ঈশা তৈরি হয়ে হাসিনের সাথে বেরিয়ে যায়।সাদা ব্যান্ডেজটা সম্পূর্ণ রক্তিম হয়ে আছে সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো সে।
৬১.
মাহমুদা নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বসে আছেন।ঈশান অনেকক্ষণ যাবৎ তাকে ডেকেও যখন পেলো না তখন জেদের তাড়নায় আশেপাশে শোপিস ফুলদানি একে একে ভাঙতে শুরু করলো।ভাঙাচুরার শব্দে চমকে গেলেন মাহমুদা একেরপর এক শব্দটা ক্রমশ আসছে রাসেলের গলাও পাওয়া যাচ্ছে ছেলেটা কেমন চিৎকার চেচামেচি করছে।ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো মাহমুদার।রাগের মাথায় ভাঙচুর করার অভ্যস ঈশানের নতুন নয় বরং পুরোনো।ছেলেটা ছোট বেলা থেকেই এমন।তাই তিনি দরজা খুলে দ্রুত বের হলেন।দরজার বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাঁচের দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ হলেন।
” কী বলেছিলাম আমি?বলেছিলাম আগে নিজেকে সামলাও তারপর আরেকটা মেয়ের দায়িত্ব নেবে তারপর বিয়ে করবে আর এখন তুমি…”
” আমি কেন রেগে গেছি সেটা তুমি ভালো করে জানো আম্মু।এক ঘন্টা যাবৎ দরজা খুলতে বলছি খুলেছো?সবচেয়ে বড় কথা খালা বললো তুমি নাকি ঈশাদের বাড়ি যাবে না।”
” হ্যাঁ ঠিক শুনেছো।”
” তুমি কি অসুস্থ?শরীর খারাপ লাগছে?”
” না না আমি ঠিক আছি বাপ।”
” তাহলে কেন যাবে না?”
মাহমুদা চুপসে গেলেন।আমতা আমতা সুরে বলেন,
” ইয়ে মানে যদি ঈশার বাবা এই বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন?”
” তুমি এই ভয়ে যাবে না?ফিরিয়ে দিলে দিবে তাই বলে চেষ্টা করবে না।”
” ঈশান..”
” আমি এবার ভীষণ রেগে যাচ্ছি আম্মু তুমি জানো না আমি কতটা রেগে আছি।আজ আমার নিজের ধৈর্য্যর প্রশংসা করতে মন চাইছে।”
মাহমুদা কথা খুঁজে পেলেন না।ঈশানের পাশে দাঁড়িয়ে তখন নিশব্দে হাসছিলো রাসেল।ঈশান রাগে ফসফস করছে এক্ষুনি যেন আরো কিছু ভাঙবে ভাঙতে ভাঙতে কখন না আবার রাসেলকে তুলে আছাড় দেয়।বেচারা ভয়ে মাহমুদার পাশে দাঁড়ালো।
” আন্টি ভয় পাচ্ছো?”
” এমন ছেলে যার সর্বদা ভয় তার।”
“ভয় সবাই পায়,গলা সবারি শুকায় তাই ডিউ খাও।ভয়কে হারাও।মাউন্টেন ডিউ ভয়ের পর জয়।”
রাসেলের নাটকীয় কথায় ভ্রু কুচকালেন মাহমুদা।ছেলেটার পিঠে চাপড় মে রে কপট রাগ দেখি বলেন,
” মজা নিচ্ছিস?তোর মা হই।”
রাসেল মাহমুদার হাত ধরলো তাকে ঘুরিয়ে গাল টেনে বলে,
” মাই বিউটি কুইন আমার মজায় তোমার যদি সাজা দিতে ইচ্ছে হয় দিয়ে দাও আমি সব গ্রহণ করবো।”
মা ছেলের কান্ডে রাগের মাঝেও অগোচরে কিঞ্চিৎ হাসলো ঈশান।রাসেল তার দিকে তাকাতে পুনরায় গম্ভীর ভাব ধরে।
” আম্মু যাও রেডি হও এক্ষুনি যাবে।”
মাহমুদা চলে গেলো নিজের রুমে রাসেল এগিয়ে আসলো ঈশানের সম্মুখে তার ঘাড়ে হাত রেখে ব্রু নাচিয়ে বলে,
” বিয়ের এত তাড়া মনে কি চলে হুম?”
” চুপ কর।”
” এতো চুপ করার বিষয় নয় এত তাড়া কিসের? ”
রাসেলের প্রশ্নের জবাব দিলো না ঈশান গটগটে পা ফেলে চলে তৎক্ষণাৎ গেলো।
.
ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে আয়নায় নিজেকে পরখ করছে অনু নাহ সব ঠিক ঠাক শুধু একটুখানি কাজল দিলেই হবে।মৃদু বাতাসে ওয়াল হ্যাংগিং গুলো টিংটং আওয়াজ করছে বিছানার উপর ফেলে রাখা ফোনে গান চলছে।আয়নায় তাকিয়ে মিষ্টি হেসে গলা ছেড়ে গান ধরে,”মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষেরো সনে।” গানটা শেষ করার আগে কক্ষে এলেন দোয়েল মেয়ের দিকে পরখ করে বলেন,
“তৈরি হয়েছিস?এবার তাহলে যা।গিয়ে আবার মেহমানের মতো বসে থাকবি না তোর আন্টির হাতে হাতে কাজ করবি।”
” তা তোমায় বলতে হবে না আমি অবশ্যই করবো।”
” ঈশান শাহরিয়ারের আশেপাশে যাবি না খবরদার ওই ছেলেটা নাকি ভালো না।”
ভ্রু কুচকে এলো অনুর।হাতের কাজলটা রেখে ঘুরে তাকালো মায়ের দিকে।
” এই কথা তোমায় কে বললো?”
” তোর মনে নেই তোর আঙ্কেলের কাছে পাওনা টাকা পাবে বলে গু ন্ডা ব দ মা শ নিয়ে এসেছিলো।আমি বুঝিনা হঠাৎ ঈশানের পরিবারের সাথে তোর আন্টিদের কিসের এত ভাব?”
” তুমি ভুল ভাবছো তখন যে ঝামেলাটা হয়েছে সেটা এখন আর নেই।তাছাড়া ঈশান ভাইয়া ভীষণ ভালো ছেলে।”
” ভাইয়া?”
ভ্রু কুচকে গেলো অনুর মা দোলনের।তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিক্ষেপ করলেন তীর্যক চাহনি।সেই চাহনিতে গলাটা শুকিয়ে এলো মেয়েটার।মা নিশ্চিয়ই সন্দেহ করছে।
” মা তাহলে কী বলবো?”
” ঈশান ভাইয়া এমন ভাবে উচ্চরণ করলি যেন..”
সহসা ফোন বেজে উঠলো অনুর।তাও ফোন করেছে ঈশা।দ্রুত হাতে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাসার বাইরে।ঈশার সাথে কথা শেষ করে ফোন করলো রাসেলকে ছেলেটা মাত্র গোসল করে ফিরেছে।ভিডিও কলে রাসেলকে দেখে মিষ্টি হাসলো সে।
” কোথায় যাচ্ছো অনু?”
” ঈশাদের বাসায় আন্টি যেতে বলেছে।”
” তার মানে তুমি থাকবে?”
” হুম।”
” এটা তো মস্তবড় সুসংবাদ।”
” খবরদার রাসেল ভুলেও আমার দিকে তাকাবে না আঙ্কেল আন্টি সন্দেহ করলে আমি ফেঁসে যাবো।সবচেয়ে বড় কথা হাসিন ভাই নাকি এসেছেন উনি ভীষণ রাগী।”
” শিকারী আমার আশেপাশে ঘুরবে আর আমি তার দিকে নজর দেবো না এটা হতে পারে?”
” চাইলে হতে পারে।”
” হাসিন ভাইটা আবার কে?”
” ঈশার ফুফাতো ভাই।আচ্ছা যদি ঈশার বাবা মা প্রস্তাবে রাজি না হয় তবে কি হবে?”
” কি আবার হবে?তুমি যা ভাবছো তাই হবে।”
.
দেয়াল ঘড়িতে দুইটা বাজে বাসার গেটের সামনে এসে থেমেছে ঈশানদের গাড়ি।ঈশা জানলার বাইরে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো সেদিকে।একে একে প্রত্যকে বের হলো।তার পেছনে এসে থেমেছে ঈশানের গাড়ি।রাসেল বেরিয়ে
সবাইকে নিয়ে গেটের দিকে গেছে। ঈশান জানলা দিয়ে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে তাকালো ঈশাদের জানলায় উপর থেকে ঠিকঠাক ভাবে বুঝতে পারলো না তাই নিশব্দে চলে গেলো সবার পিছু পিছু।ঈশাদের জন্য নেওয়া প্রতিটা খাবার ড্রাইভার একে একে গাড়ি থেকে বের করছে।অজানা অনুভূতিতে মুষড়ে উঠলো ঈশা।কেন জানি মনে হচ্ছে ঈশানের আগমন স্বাভাবিক ভাবে ধরে নেওয়া যায় না। কেন এসেছে সে?
টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকমের রান্না।কি নেই তাতে?চাইনিজ প্লেটার থেকে শুরু করে বাঙালিয়ানা সব রান্না।ডোর বেল বাজতে চমকে গেলেন মুজাহিদ হাসান দ্রুত দরজা খুলে সবাইকে অভ্যর্থনা জানান।রুদবা পিটপিট চোখে চেয়ে বলে,
” এটা আমার ঈশামনির বাসা ঈশামনি কই?”
বাচ্চা মেয়েটার আগ্রহ দেখে কিঞ্চিৎ হাসলেন মুজাহিদ হাসান।মেয়েটার গাল টেনে বলেন,
” তোমার ঈশামনি আসছে মামনি।এখন একটুখানি বসো তুমি।”
রুদবা চপল পায়ে এগিয়ে গেলো ঈশানের দিকে বসলো তার কোল জুড়ে।সুলতানা এগিয়ে এসে সবার সাথে দেখা করে গেছেন।ততক্ষণে ড্রাইভার একে একে সব খাবারের প্যাকেট এনে রাখলেন বসার ঘরে।অর্ধেকটা জায়গা দখল করে হয়ে গেলো ঈশানদের আনা খাবারে।
” এসবের কি দরকার ছিল আপা?আপনারা আসবেন শুনে এতে আমি খুশি হয়েছি।”
” কুটুমবাড়িতে খালি হাতে যাওয়া যায় না ভাই এটা আর বেশি কি?একটু আধটু।”
ঈশান হাশফাশ করছিলো এসির মাঝেও ঘামছে সে, মনের কোনে জমে থাকা সব সাহস এক নিমিষে ফুস ফাস উড়ে গেছে।ঈশানের হাশফাশ দেখে হাসিন পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো।
” পানিটা নিন স্যার।”
ঈশান চমকে তাকালো হাসিনের দিকে।তাকে স্যার বলছে কেন?অবশ্য হাসিনের সাথে এখনো খোলামেলা আলাপ হয়নি ঈশানের।
” আমাকে স্যার কেন ডাকছেন?নাম ধরে ডাকুন আমরা সমবয়সী।”
হাসিন কিঞ্চিৎ হাসলো।রুমার স্বামী রেদোয়ান এগিয়ে এলো ঈশানের পাশে।কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
” শালা বিয়ে বিয়ে করে লাফিয়েছো এখন এত ঘামছো কেন হুম?”
” তুমি কীভাবে বুঝবে?জীবনে এই ভাবে রিক্স নিয়ে তো বিয়ে করোনি।”
” দূর তোমার থেকেও ডেঞ্জারাস ভাবে বিয়ে করেছি আমি।অন্যত্র রুমার বিয়ে নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখন রুমা আর আমি কোট ম্যারেজ করেছিলাম তার সাত আটমাসের মাথায় আমাদের বিয়ে হয় ভাগ্যসি বিয়েতে শশুড় শাশুড়ী রাজি ছিল।”
ঈশান চমকে তাকালো রেদোয়ানের পানে।তার চোখ যেন এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে মাথাটা আকস্মিক ঝিম ধরে গেলো।সে যতটুকু জানে রুমার বিয়ে পারিবারিক ভাবে অথচ এরা পূর্ব পরিচিয় ওদের প্রেমের বিয়ে এই সত্যি এত বছর পর প্রকাশ পেয়েছে।ঈশানের চাহনি দেখে নিজের ভুল বুঝতে পারলো রেদোয়ান।এক গাল হেসে নিজের অস্থিরতা দমিয়ে রাখতে বলে,
” থাক এই কথা কাউকে বলো না।আর বললেও কি এখন আমার একটা মেয়ে আছে।”
ঈশান মাথা দুলালো।এদিকে রেদোয়ান ঘামছে।পকেট থেকে রুমাল বের কর কপাল মুছলো দ্রুত হাতে।
” তুমি ঘামছো কেন দুলাভাই?”
” না না ইয়ে মানে..”
মুজাহিদ হাসান তাকালেন দুজনের দিকে সন্দিহান স্বরে বলেন,
” এসি কি বাড়িয়ে দিব?তোমরা ঘামছো কেন বাবা?”
” না না আঙ্কেল আমরা ঠিক আছি।”
কথার মাঝে বসার ঘরে এলো ঈশা।মেয়েটা পা খুড়িয়ে হাটছে অথচ মুখে লেগে আছে এক চিলতে হাসি।তাকে দেখে থমকে গেলো ঈশান, তার বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠলো।হাসিন দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ধরলো ঈশার হাত বসিয়ে দিলো তার পাশে।ঈশার অবস্থা দেখে মুখে আঁধার নামলো রুমা এবং মাহমুদার।
” ঈশা তোমার কি হয়েছে?”
” আপু তেমন কিছুনা নখটা উলটে গেছে।”
” সাবধানে চলবে তো।”
শেষোক্ত বাক্যটি বললেন মাহমুদা।ঈশার মাথায় হাত বুলিয়ে স্থির রইলেন কিছুক্ষণ।মুজাহিদ হাসান বলেন,
” সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো বাসায় ফিরতে দেরি হয়েছে বলে দৌড়ে দৌড়ে হাটছিল।কোথা থেকে কুকুর এসে নাকি দৌড়াতে থাকে আর মেয়েটাও দৌড় দিতে গিয়ে দেখুন নিজের কি হাল করলো।”
ভরা মজলিশে কেশে উঠলো ঈশান।গ্লাসে থাকা বাকিটা পানিটা শেষ করে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটা ঠোঁট কুচকে ক্রূর হাসছে।সেদিন ঈশান তাকে ছুঁতে গেলে ঈশা দ্রুত পায়ে হাটতে থাকে তারপর এই অবস্থা অথচ সে বললো তাকে কুকুর দৌড়ালো।তবে এখানে কুকুরটা কে? ঈশান নয় কি।
রাসেল অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে তার পেট ফেটে হাসি আসছে ঈশানটা আজ দারুন ভাবে জব্দ হলো।
.
খাবার টেবিলে এলাহি কান্ড এত এত খাবার এক বৈঠকে কি খাওয়া যায়?তবুও মুজাহিদ হাসান,সুলতানা, হাসিন জোর করে সবার প্লেটে খাবার দিচ্ছেন।ঈশান এক সঙ্গে এত খাবার খেতে অভ্যস্ত নয় কিন্তু এদের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে।ঈশা রুদবাকে চেয়ারে বসিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে মেয়েটা এটা ওটা প্রশ্ন করছে ঈশাকে।ঈশান নিজের খাওয়ার আড়ালে তাকাচ্ছে ঈশার দিকে।শেষ পাতে দই না হলে জমে না তাই দইয়ের হাড়ি এনে টেবিলে রাখলো অনু সবাইকে বাটি ভরতি দই বেড়ে এক কোনে দাঁড়ালো।রাসেলের সাথে চোখাচোখি হতে চোখ রাঙালো সে।নিলর্জ্জ ছেলেটা কেমন তাকিয়ে আছে পলকহীন।
খাওয়ার শেষে টেবিল পরিষ্কার করলেন সুলতানা।সব কিছু নিরিবিলি হতে মাহমুদা হাত টেনে বসালেন সুলতানাকে।
” আরে আপা কি করছেন?”
” চুপচাপ বসুন তো।”
মাহমুদার কান্ড বুঝতে পেরে রেদোয়ান হাত টেনে ধরলেন মুজাহিদ হাসানের একে একে সবাই বসিয়ে দিলো ঈশাদের পরিবারের সবাইকে।
মাহমুদা আহ্লাদী সুরে বলেন,
” এবার আপনাদের পালা আমরা বেড়ে খাওয়াবো।কোন দ্বিধা করবেন না কিন্তু ভাইজান..।”
চমকে গেলো সবাই।পোলাওর বাটি হাতে তুলে নিলো রুমা,চিংড়ির বাটি হাতে তুললো রেদোয়ান,ঈশান তুললো রোস্টের বাটি,অপরদিকে মাহমুদা সালাদের বাটি নিয়ে সবার প্লেটে সালাদ দিলেন।খালি হাতে দাঁড়িয়ে রইলো রাসেল কি করবে ভেবে না পেয়ে ভর্তার প্লেটার হাতে তুলে সবাইকে দিলো।
ঈশান সবার অগোচরে দাঁড়ালো ঈশার পাশে মুরগির আরেকটা লেগপিস তুলে দিলো তার প্লেটে।চমকে তাকালো ঈশা একটু আগে একটা নিয়েছে এখন আবার!তার চাহনি বুঝতে পেরে ঈশান স্বল্প সরে বলে,
” আমি জানি এটা তোমার পছন্দ খেতে থাকো।”
সব মিলিয়ে দিনটা সবার বেশ ভালো কাটলো।সুলতানা ভেবেছিলেন ঈশানদের পরিবারের মানুষগুলো বাদবাকি সবাই নিশ্চয়ই দাম্ভিক হবে,খুত ধরা স্বভাবের হবে বড়লোক বাড়ির মানুষ বলা তো যায় না কেমন।নিরহংকারী মানুষ খোঁজা যে আজকাল দায়।অথচ তার ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করলো সবাই।এরা এত ভালো! প্রতিটা সদস্য অমায়িক।
৬২.
“ওষুধ খেয়েছিস ঈশা?”
হাসিনের প্রশ্নে জিভে কামড় বসালো ঈশা।ওষুধ খায়নি এই কথা শুনলে এখন এক গাদা লেকচার দেবে।এই মুহূর্তে তার লেকচার শোনার ইচ্ছে নেই।তবুও স্বল্প স্বরে বলে,
” ভ..ভুলে গেছিলাম দাঁড়াও খেয়ে আসি।”
” তুই বস আমি নিয়ে আসছি।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে স্থির রইলো না হাসিন।বড় বড় পা ফেলে দ্রুত নিয়ে এলো ঈশার ওষুধ।মুজাহিদ হাসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
” মামা তোমার মেয়ে ভালো হবে না।নিয়মিত ওষুধ না খেলে এই আঙুল ভালো হবে?”
” তুমি অযথা চিন্তা করো ভাইয়া।”
” আমি অযথা চিন্তা করি?ধর তোর আঙুলে ইনফেকশন হলো এই আঙুল কে টে ফেলে দিলো তখন তোর জন্য বর পাবো কই?সবাই বলবে আঙুল কা টা ঈশা কেউ বিয়ে করবে না তোকে।”
” না করলে না করবে আমার বয়েই গেছে।”
” আমি যে বলেছিলাম তোর জন্য রাজপুত্র নিয়ে আসবো নাকি রাজা লাগবে তোর?”
” আমার রাজকন্যা ভাবি লাগবে
তোমার জন্য।”
কথাটি বলে হাসলো ঈশা।ভাই বোনের খুনশুটি দেখছিলো মুজাহিদ হাসান নিশব্দে হাসলেন তিনি।রুদবা ঈশার কোল ঘেষে বসেছে মুখোমুখি ঈশান এবং রাসেল।ঈশানের মনে হাসিনকে নিয়ে সন্দেহ বাঁধলেও ধীরে ধীরে তা পালটে গেছে।নিজেকে নিজে হাজারটা গাল দিতে ভুললো না।এটা কি তার রোগে পরিনত হয়েছে?এই যে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে ওভার পসেসিভ হওয়া।
কিছুক্ষণ আলাপ সেরে বেরিয়ে পড়লো ঈশান তার সাথে গেলো রাসেল।সন্ধ্যা হতে বেশি সময় নেই সবাই এখন বাড়ি ফিরবে আর বাড়ি ফিরে আসার আগে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হবে সেই মুহূর্তে ঈশান থাকাটা বেমানান।রুদবাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের কক্ষে গেলো ঈশা তার সাথে ছিলো অনু।বসার ঘরে মাহমুদা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন বলে বাকিদের জড়ো করেছেন।সুলতানার হাত ধরে আকুতি নিয়ে মাহমুদা বলেন,
” একটা আবদার রাখবেন আপা?”
” সাধ্যমতো হলে..”
” সাধ্যমতো চাইছি বোন।ঈশাকে আমাদের সবার ভীষণ পছন্দ।আমরা চাই আমার ঈশানের বউ করে তাকে ঘরে তুলতে।”
ক্ষণিকে হাসি মুখটা থমথমে হয়ে গেলো সবার।হাসিন শক্ত চোখে তাকালো মুজাহিদ হাসানের দিকে।সুলতানা কি বলবেন ভেবে পেলেন না।তাদের এলোমেলো চাহনিতে ঘাবড়ে গেলো রুমা ঈশারা আজ যদি ফিরিয়ে দেয় তবে যু দ্ধে র ময়দান তৈরি হবে বাড়িতে।পরিস্থিতি সামাল দিতে সে বলে,
” আমারা ঈশাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করি আঙ্কেল।আজ আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্যে এটাই বলতে পারেন।তাছাড়া ঈশা কোন দিক থেকে অসুখী হবে না খালামনি দেশের বাইরে ফিরে গেলে সংসার তার একার।স্বামী সংসার নিয়ে সবটা তার।”
মুজাহিদ হাসান মাথা দুলালেন।এতক্ষণ মনে থাকা আনন্দেরা যেন নুইয়ে পড়েছে।মেয়ের বিয়ের কথা ভাবনায় আসতে শরীরটা কেমন নেতিয়ে যাচ্ছে,বুকটা দুরুদুরু করছে চোখটাও ভীষণ জ্বালাপোড়া করছে।বড্ড আদরের মেয়ে এই মেয়েটাকে কি করে বিদায় দেবেন তিনি।
” আপনারা প্রস্তাব এনেছেন আলহামদুলিল্লাহ শুনে খুশি হয়েছি।তবে ঈশান কি এতে রাজি?আমার মেয়েকে বিয়ে কেন করবে সে?তার পায়ে পা লাগিয়ে চলতে গেলে আমার মেয়ে এক কথায় তার জীবন সাথী হিসেবে বেমানান।আরো উচ্চশিক্ষিত ভালো পরিবার ডিজার্ভ করেন আপনারা।”
” এ কথা বলেবেন না ভাইজান।অর্থবিত্ত আমরা চাই না আমরা চাই একজন ভালো মেয়ে।তার পরিবারটা যেন ভালো হয়।ঈশানের সম্মতি নিয়ে এই প্রস্তাব রাখছি।তাছাড়া ঈশানের সাথে শুরুর দিকটা আপনাদের বড্ড তিক্ততার ছিল আমি জানি তা নিয়ে আমি লজ্জিত।”
” দোষ আমার রক্তের ছিল আপন ভাইয়ের ছিল সে আমাকে বাজে ভাবে ফাঁসিয়ে দিলো।পাওনা দারের কোন দোষ নেই।”
” আমার উপর ভরসা রাখুন ভাইজান আমার ঈশান একটু মাথা গরম স্বভাবের তবে আপনার মেয়েকে ভীষণ ভালো রাখবে। আমাদের দিক থেকে সবার মতামত আছে বাকিটা আপনাদের হাতে।”
মুজাহিদ হাসান তাকালেন হাসিনের দিকে।ছেলেটা যেন কিছু বলতে চায়।তার চোখে মুখের অস্বাভাবিকতার ছাপ বুঝতে পারলেন তিনি।গলা ঝেরে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলেন,
” আমি আমার পরিবারের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত জানাবো।”
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৮]
_____________________
নিষ্প্রাণ চোখে ঈশার দিকে চোখ বুলালেন মুজাহিদ হাসান।মেয়েটা দুরন্ত হাতে ঈশানদের আনা প্রতিটা জিনিস দেখছে, তার পাশে প্রতিটা খাবার নিদিষ্ট স্থানে রাখছে অনু।দশ বারো পদের মিষ্টিতে টেবিল ভরে গেছে ঈশানরা মিষ্টি আনতে কার্পন্য করেনি।কিছু প্যাকেটে ফলফলাদি ছিল,আলাদা একটা ব্যাগে ছিলো কিছু কুকিজ,চকলেট এগুলো নিশ্চয়ই ঈশাকে উদ্দেশ্য করে এনেছে অগোচরে হাসলো ঈশা।
” মিষ্টি গুলো ভাগ করো ঈশা অনুদের জন্য একভাগ আর তোমার ফুফুদের জন্য নাও।”
সুলতানার কথায় মাথা দুলালো ঈশা।প্রতিটা প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে গেলো রান্না ঘরে।তার পিছু পিছু এগিয়ে গেলো অনু।এতক্ষণ ঈশার উপস্থিতিতে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলো সবাই মেয়েটা চলে যেতে সবার প্রথমে মুখ খুললো হাসিন।
” এই প্রস্তাবে তোমাদের মতামত কি মামা?”
” একজন বাবা হিসেবে মেয়ের জন্য যেমন চেয়েছি তেমনটা আমি পেয়েছি কিন্তু মনে দাগ রইলো ঈশানের সেই ব্যবহারে।ঈশান নিজের দিক থেকে হয়তো ঠিক পাওনা টাকা আদায়ের দায়ে সে যা ইচ্ছে তা করতে পারে।সব ভুলে আমি ঈশানকে গ্রহণ করতে পারি কিন্তু আমার পরিবারের বাইরে নয় সবার ইতিবাচক সাড়ায় আমি মেয়ে অন্যর ঘরে পাঠাবো।”
” মামা ঈশানকে আমার মোটেও পছন্দ না ক্ষমতার দাপট তার প্রতিটা স্তরে স্তরে আছে।তোমরা শুধু এই কথা ভাবো তোমাদের সাথে ঈশানদের কোন কিছু মানানসই হবে?ঈশানের কিসের অভাব নেই?আর তোমাদের দিকে তাকাও তাদের কাছে তোমরা তুচ্ছতম।”
” ওনারা নিশ্চয়ই এসব ভেবে প্রস্তাব রেখেছে।”
” ঈশান যদি বিয়ের পর মত ঘুরিয়ে নেয়?বড় লোক ছেলে বলা তো যা না কখন কি করে?”
স্বল্প হাসলেন মুজাহিদ হাসান।হাসিনের চোখে তিনি ঈশার জন্য চিন্তা দেখেছেন,ভালোবাসা দেখেছেন আর সেটা একমাত্র বোন হিসেবে।
” আমার মেয়ের ভাগ্য যদি খারাপ হয় তাহলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যে কোন ছেলের সাথে জুড়ে দিলে তার নিয়তি নিয়ম অনুসারেই চলবে।”
” তার মানে তুমি বিয়েতে রাজি?”
” আমি আমার মতামত এখনো গ্রহণ করিনি আমার আরো সদস্য আছে আমার একমাত্র মেয়ে, আপনজন সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।তবে আগে তোমার মত জানাও হাসিন।”
” এমন না যে আমি চাই না ঈশানের সাথে ঈশার বিয়েটা হোক।ভাগ্যে থাকলে যে কোন বাঁধা পেরিয়ে অবশ্যই এই বিয়ে হবে তবে তার আগে আমার ঈশানের সাথে একান্ত কথা বলা প্রয়োজন।”
” বেশ তুমি বলতে পারো।সুলতানা তোমার মতামত জানাও।”
” ইয়ে মানে ঈশানের পরিবার আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে আমাদের মেয়েটাকে কত আদর করে।মানুষ পালটে যায় ,সময় অসময়ে পাল্টে যায় তাই বলছি কি ভেবে চিনতে…”
বসার ঘরে উপস্থিত হলো ঈশা তার আগমনে নিশ্চুপ রইলেন সুলতানা।বাবা মায়ের অদ্ভুত আচরণে কিছুটা খটকা লাগলো ঈশার।হঠাৎ কি এমন হলো যে সারাদিনের অনন্দ চোখের পলকে ম্লান হয়ে গেলো।
” হাসিন ভাইয়া কি এক্ষুনি চলে যাবে?”
” হ্যা এক্ষুনি যাব।তুই সাবধানে থাকিস পায়ের ব্যান্ডেজ বাসায় খোলার দরকার নেই হসপিটালে যাবি ড্রেসিং করে দেবে।”
.
মুজাহিদ হাসান নির্ভরযোগ্য আত্মীয় সজনকে জানালেন ঈশার বিয়ের ব্যপারে।ঈশানের নাম প্রতিপত্তি শুনে সবাই এক পায়ে রাজি কোন দ্বিমত পোষণ করলেন না কেউ।ঈশার খালামনি শুনে ভীষণ খুশি হলেন শ্রেয়ার বিয়েতে ঈশানের সাথে তার আলাপ হয়েছে এমনি ঈশানের মায়ের সাথেও মানুষ হিসেবে তারা বড্ড ভালো।ঈশার ফুফা ফুফু ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন শুধু সন্দিহান হাসিন সে আগে ঈশানের সঙ্গে আলাপ করবে তারপর বাকি সিদ্ধান্ত।পরিবারের সবার মতামত গ্রহণ করলেও ঈশার মামার বাড়ির কাউকে এই সম্পর্কে জানানো হলো না।এই বিষয়ে অবশ্য একটা কারণ আছে স্বভাবের দিক থেকে ঈশার মামির দোষ আছে অন্যর ভালো তিনি সইতে পারেন না।এই তো শ্রেয়ার বিয়ে নিয়ে সে কি তুলকালাম কান্ড অন্যত্র তার বিয়ে হতে গিয়েও হলো না।বিয়ে ঠিক হওয়ার আগ মুহূর্তে পেছনে মেয়েটার নামে বদনাম রটানো হলো তার নাকি চরিত্রের দোষ আছে।এসব সহজে বিশ্বাস করলো ছেলের মা।সেই বিয়েটা ভাঙ্গার পর মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লো শ্রেয়া।ঈশার মামি সুমার এসব কুটকাচিলে যথেষ্ট প্রমাণ থাকলেও কেউ আর ঝামেলা বাড়ালো না।সবার মতামত গ্রহণ করলেও এখনো ঈশার মতামত নেওয়া হলো না মুজাহিদ হাসানের।মেয়েটা কি চায়? আদৌ সে কি এই বিয়েতে রাজি হবে?
গতকাল বাড়ি ফিরে ঈশান আর একবারেও কল করলো না ঈশাকে এমনকি মেসেজো না।সে কী কোন কারণে রুষ্ট হয়েছে?ভাবনার অতলে হারিয়ে গেলো ঈশা।টিউশনি শেষে কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে নরম দেহখানি এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়।ফুল স্প্রিডে ফ্যানের বাতাসে এলোমেলো করে দিচ্ছে তার খোলা চুল।
” ঈশা মা আসবো?”
মুজাহিদ হাসানের কণ্ঠে তুরন্ত উঠে বসলো ঈশা।গায়ের পোষাক ঠিক করে মুজাহিদ হাসানকে ডাকে।ছোট ছোট পা ফেলে মেয়ের পাশে বসলেন তিনি।
” বেশি ক্লান্ত লাগছে মা?লেবুর শরবত করে দিবো?”
” না না ঠিক আছি আব্বু।হঠাৎ এলে?”
“তুমি তো বড় হয়েছো মা বিয়ের নিয়ে অনেক প্রস্তাব এসেছে।তবে এবারের প্রস্তাবটা একটু স্পেশাল।”
” কিন্তু কেন?”
” ঈশানের মা গতকাল প্রস্তাব রেখেছেন তার ছেলের জন্য তোমাকে চায়।”
” তোমরা কি বললে?”
” বলছি আমার পরিবারের সবার মতামত জেনে তাদের জানাবো।এই ব্যপারে তোমার ফুফু,খালা,মা সবাই রাজি আছেন আমিও রাজি তবে এত সবার মতামতের মাঝে তোমারটা যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।তোমার কি পছন্দের কেউ আছে?আমাকে বলতে দ্বিধা করবে না ।”
“না না আব্বু ত..তেমন কেউ নেই।”
” শুনে খুশি হলাম আম্মু।এবার তোমার মতামত জানাও তুমি রাজি?নাকি সময় চাও।”
” আমি সময় চাই আব্বু এত তাড়াহুড়ো.. ”
মুজাহিদ হাসান মেয়ের চাওয়া বুঝলেন।হাত বুলিয়ে দিলেন ঈশার মাথায়।
” বুঝতে পেরেছি তুমি যা চাইছো তাই হবে।আজ রাতে হাসিন ঈশানের সাথে দেখা করবে হাসিন নিজ থেকে কিছু যাচাই-বাছাই করতে চায়।”
৬৩.
” তোমার সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে কেন দিব?মানে বলতে চাইছি তুমি কোন দিক দিয়ে আমার বোনের যোগ্য?”
পাইনাপেল জুসটা মাত্র মুখে তুলে ছিলো ঈশান।হাসিনের প্রশ্নে নাক মুখ ছিটলে বেরিয়ে এলো সেই তরল পদার্থ।পেট ফেটে এলো অট্টহাসি তবুও নিজেকে করলো সংযত।নাকে জুস যাওয়ায় নাকটা মুহূর্তে জ্বলে উঠলো টিস্যুর সাহায্যে দ্রুত মুখ মুছে হাসিনকে বলে,
” সরি ভাইয়া সরি।”
” ইটস ওকে।”
” খাওয়ার শুরু করুন ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
” বললে না যে।”
” কী?”
” এই যে তোমার সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে কেন দিব?”
ঈশান থমকালো এই মুহূর্তে কি উত্তর দেওয়া যায়?এ কথা তো ভুলেও বলা যাবে না সে ঈশাকে ভালোবাসে তবে যে সবটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে।নিজেকে প্রস্তাত করে নিলো ঈশান স্মিত হেসে বলে,
” আপনার প্রশ্নটা ছিল বেমানান ভাইয়া।এই প্রশ্নের উত্তর আর আমি কী দিব?আমার সঙ্গে আপনার বোনের বিয়ে কেন দিবেন?সেটা আপনার বিষয় আপনি যাচাই-বাছাই করে আমাকে উপযুক্ত ভাবলে তারপর যা হবার হবে।অথচ আপনি এই প্রশ্ন আমাকে করে বসলেন।যদি বলতেন আমি কেন ঈশাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তাহলে এর যুতসই উত্তর আমি দিতাম।”
নড়ে চড়ে বসলো হাসিন।স্টেকের উপর দক্ষ হাতে ছু ড়ি চালিয়ে কেটে নিলো একপিস মাংস।মুখে তুলতে না তুলতে ঈশান পুনরায় বলে,
” আর যোগ্যতার প্রশ্ন তুলছেন,কোন দিক দিয়ে আমাকে অযোগ্য মনে হয়েছে আপনার?টাকা পয়সা অর্থবিত্ত কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই আর রইলো বাকি মনের মিল সেটা আপনার বোনের বিষয় সে কতটা ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারে আমার কাছ থেকে সেটা বড় কথা।”
গলা ঝারলো হাসিন কি বলবে না বলবে ভেবে পেলো না সে।হাসিনকে জব্দ করে বেশ মজা লাগলো ঈশানের।ঈশান নিশ্চিন্ত মনে দক্ষ হাতে কাটতে থাকে স্টেক।কাটা চামচের সাহায্যে এক টুকরো মাংস তুলে ম্যাশ পটেটোতে চুবিয়ে মুখে পুরে নিলো তার চাবানোর ভঙ্গিমা দেখে আড় চোখে তাকালো হাসিন।মনে হচ্ছে যেন ঈশান তাকে এভাবে পিষে ফেলতে চাইছে।
” ঈশা আমার মায়ের পেটের বোন না হলেও ওঁকে আমি কোন অংশে কম দেখিনা।তাছাড়া আপনার সাথে এর আগে একটা ঝামেলা হয়েছে তার।”
” এসব কথা আমি মাথায় রাখিনি।রাখতেও চাই না।”
” শুনে ভালো লাগলো।”
” তাহলে বলতে চাইছেন বিয়েটা ফাইনাল?”
” বিয়ে নিয়ে মনে হচ্ছে তোমার বেশি তাড়া?”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে ভ্রু কুচকালো হাসিন।তার কথায় মিশে আছে তাচ্ছিল্যের রেশ।ঈশান চোখে হাসলো।কেন যেন মনে হয় হাসিন তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু কেন?এত কিসের রোষ তার মাঝে।
” আমার মা দ্রুত তার ঠিকানায় ফিরবেন তাই আর কি।”
.
ঈশার পরিবার থেকে অবশেষে সবাই সম্মতি জানিয়েছে কিন্তু এই ব্যপারে সময় চাইলো ঈশা।মুজাহিদ হাসান তাকে একদিনের সময় দিয়েছেন এর মাঝে যা বলার বলবে সে।ঈশানের সাথে একান্ত কথা বলতে চায় ঈশা।
আর তাই তো ঈশানের দেওয়া ঠিকানায় উপস্থিত হলো সে।এটা একটা রিসোর্ট আশেপাশে তেমন কোন মানুষজনের বালাই নেই।রিসোর্টের ভেতর ছোট্ট এক জলাশয় সেই পানিতে কিছু রঙবেরঙের মাছ দেখা যাচ্ছে।জলাশয়ের পাড়ে বড়বড় পাথর দিয়ে শান বাঁধানো।জলাশয়ের পাড়ে টেবিলে বসলো ঈশা।তার সঙ্গে অনুও এসেছে রাসেলকে নিয়ে লাপাত্তা মেয়েটা।
দক্ষ হাতে ছাই রঙা শার্টের হাতা ফোল্ড করে এগিয়ে আসছে ঈশান।হাতে জ্বলজ্বল করছে সিলভার রঙের ঘড়িটি, কালো সানগ্লাসটা এখনো চোখে। পাগলাটে এই প্রেমিক পুরুষের দিকে বিমুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো ঈশা।বেহায়া চোখকে সংযত করে দৃষ্টি ফিরালো জলাশয়ে।
” তুমি আমাকে দেখছিলে তাই না ঈশা?”
বড্ড অদ্ভুত প্রশ্ন করলো ঈশান।ঈশা তাকিয়েছে তাতে আবার প্রশ্ন করতে হয়?
” আমি তো তোমারি তাকাতে বারণ করেছে কে?এই মেয়ে এই আমার চোখে চোখ রাখো।”
ঈশা ঘুরে তাকালো তৎক্ষণাৎ তার চোখে ফু দিলো ঈশান।কপালে ছুয়ে থাকা চুলগুলো এলোমেলো হতে পুনরায় ঠিক করলো ঈশা।
” সুন্দর লাগছে একটা শাড়ি পরে আসতে পারতে।”
” মনে এত রঙ নেই আমার।”
” আমি আছি তো রঙধুনুর সাত রঙ তোমার জীবনে ছড়িয়ে দিবো।আমি ছাড়া তোমার জীবনটাই হবে রঙহীন তামাটে দেখে নিও।”
” শুধুই সাতরঙ?”
” আগে জানতাম পৃথিবীতে মোট ৭ টি রঙ একদিন লিপস্টিক কিনতে গিয়ে শুনলাম লালের মধ্যেই নাকি ২৭ কালার এটা কি সত্যি ঈশা?তুমি কি কয়টা কালারের লিপস্টিক ইউস করো? নাম বলো, নাম বলো ঝটপট বলো।বিয়ের শপিং করতে হবে তো।”
” এই দাঁড়ান আগে আপনি বলুন কার জন্য লিপস্টিক কিনতে গেছেন?সত্যিটা বলুন ঈশান।”
ঈশার চোখে সন্দেহের আভাস।ঈশান তাতে মিষ্টি হাসলো গা এলিয়ে বসলো চেয়ারে।
” রাসেল পা গ লা অনুর জন্য কিনতে আমাকে নিয়ে গেছিলো তখন জানতে পারি।”
ফস ফস শ্বাস ছাড়লো ঈশা।জলাশয়ে দুচোখ করলো নিমজ্জিত।
” তুমি কিছু বলতে চাও ঈশা?”
” হুম।বিয়ে নিয়ে আমার পরিবারের সবাই রাজি কিন্তু আমি না।”
বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো ঈশানের।এই মেয়ে প্রচন্ড জেদি যা করতে চাইবে করেই ছাড়বে যদি বিয়েটা ভেঙে দেয়?এতো মানতে পারবে না ঈশান নিজের যা চাই তা তো আদায় করবেই সে।
” কিন্তু কেন ঈশা?”
” আপনার মতো মানুষের সাথে সংসার করা যায় না।আমি এখনো ভুলতে পারিনি অয়ন ভাইয়ের কথা।এভাবে সারাটা জীবন আপনার সাথে চললে আর কত মানুষের ক্ষতি করবেন আপনি?আপনার ক্রিমিনাল মাইন্ডের স্বভাবটা বদলানো জরুরি।”
ঈশান স্থির রইলো।ভেতরটা চাপা জেদে নিংড়ে যাচ্ছে তবুও নিরব রইলো সে।এলোমেলো হাওয়া এসে শীতল করে দিলো শরীর তবে মনটা আর শীতল হলো না।
” যদি তুমি আমার না হও তবে এর প্রকপ বাড়বে।”
” হুমকি দিচ্ছিনে?”
” যেটা সত্যি সেটাই বলছি।”
” এসব ছাড়ুন।”
” ভালোবাসো না আমায়?”
” বাসি।”
দ্বিধাহীন বললো ঈশা।ঈশান তৃপ্তি নিয়ে হাসলো।ছুঁয়ে দিলো ঈশার হাত সেই হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার তাড়া দেখালো না ঈশা।
” তুমি আমার পাশে থাকলে সবটা গোছালো আর দূরে গেলে অগোছালো।তারপরেও ছেড়ে যাবে?”
” আগে আমায় কথা দিন এসব বাজে কাজ কখনো করবেন না।অন্তত আমাকে উদ্দেশ্য করে না”
” করবো না।তবে আমাকে কথা দাও চোখের আড়াল হবে না?আমার অবাধ্য হবে না,আমার উপর প্রতিটা কাজে প্রতিটা ধাপে প্রতিটা মুহূর্তে বিশ্বাস রাখবে।”
” বিশ্বাস করি বলেই তো ঠাই দিয়েছি।”
.
বাতাসে উড়ছে অনুর চুল সেই চুল কানের পেছনে গুজে পুনরায় গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রাসেল।অনু হাসছে রিসোর্টের দোলনায় দুজনে এক সঙ্গে বসেছে ধীরে ধীরে দুলছে দোলনা।নয়নতারা ফুলটি সাদৃশ্যমান অনুর কানে।এই ফুল দিয়েছে কে?কে আবার রাসেল।নরম তুলতুলে হাত খানি আঁকড়ে ধরলো সে, চুমু খেলো হাতের পৃষ্ঠে।
“সব কিছু এত সহজে হবে ভাবতে পারিনি।ঈশানের বিয়েটা খুব শীঘ্রই হবে।”
” ঈশার মা বাবা মেনে নিয়েছে কিন্তু আমার পরিবারের কেউ যদি না মানে?তখন কি হবে রাসেল?”
” এসব চিন্তা কেন করছো তুমি?অযথা চিন্তা।ঈশান সব মানিয়ে নেবে তোমার আর আমার সম্পর্কে আমি নিশ্চিত আমাদের কোন বাঁধা থাকবে না।”
ক্ষীন হাসলো অনু মনে মনে আওড়ালো “তাই যেন হয়।” এক ঝাপটা বাতাস এসে ছুঁইয়ে দিলো তাদের।দোলনার গতি বাড়লো প্রেম প্রেম মুহূর্তে অনু বললো,
” বিয়ের পর আমি পড়ব না রাসেল।আমি মন দিয়ে সংসার করবো।”
কপট রাগ দেখলো রাসেল ডান হাতে কানটা মলে দিলো অনুর।
” তোমার সাহস কি করে হলো এই কথা বলার?আরেকদিন যদি এই কথা শুনি তবে তোমার বিয়ের স্বাদ আমি এই জন্মের মতো মিটিয়ে দেবো।
.
জলাশয়ের ছোট ছোট মাছগুলোকে খাবার দিচ্ছে ঈশা।শীতল বাতাসে গায়ে কাটা তুলছে ক্ষণে ক্ষণে।আকাশের এক কোনে কালো মেঘ জমেছে অন্য কোনে সফেদ মেঘ উড়ে যাচ্ছে।এই রিসোর্টে গাছের অভাব নেই।অদূরে দাপট দেখিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাগান বিলাস গাছ।তার রূপ যে ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে এই রূপের মোহে যে কেউ সহজে আবেশিত হতে বাধ্য।দুই ধারে দুটো গাছ একটি শুভ্র এবং অন্যটি গোলাপি রঙা ফুল।ঈশান ভিডিও কলে গুরুত্বপূর্ণ কথায় ব্যস্ত।ঝটপট ইংরেজিতে কাকে কিছু একটা বোঝাচ্ছে।মাঝে মাঝে হিন্দিতেও কিছু বলছে।দুইজন হয়তো দুই দেশের।
বাগান বিলাশের ছায়াতলে দাঁড়ালো ঈশা।গায়ের তার বাসন্তী রঙের জামা শুভ্র গাছটার ঢাল ঝাপটাতে সব ফুল ঝরে পড়ে ঈশার গায়ে।নৈসর্গিক এই সৌন্দর্যে চমৎকার হাসে সে।গোলাপি রঙের ফুলগুলো গায়ে পড়তে চমকে তাকায় ঈশা এই গাছতো সে ঝাপটায়নি তবে?পাশে তাকাতে দেখতে পেলো মোহ বেষ্টিত চোখে তাকিয়ে আছে ঈশান।ম্লান আলোতে ছেলেটাকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে।ঈশান লাফিয়ে একটি ঢাল ভাঙলো শুভ্র রঙের ফুলটা নিয়ে কানে বাঁধলো ঈশার।
” কি করছেন কি ঈশান।”
পিছিয়ে গেলো ঈশা তার হাত ধরে কাছে টেনে আনে ঈশান।রেশমি চুলে হাত বুলিয়ে ক্ষীণ হাসলো।
” তুমি এই ফুলের মতো সুন্দর কখনো শুভ্র, কখনো রঙিলা,কখনো আমার নেশার ঘোরের ভয়াবহ মাদকতা।”
ঈশা লাজুক হাসলো।প্রেম প্রেম হাওয়া মনে লেগেছে।চুলগুলো ঠিক ঠাক করে আদুরে সুরে বলে,
” এই ঈশান আমার কিছু ছবি তুলে দাও না।”
“এই মনের দলিলে দস্তখত করলাম যাবজ্জীবন তুমি আমার মডেল আর আমি তোমার ফটোগ্রাফার।”
ঈশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো চোখ ঘুরিয়ে তাকালো অন্যদিকে আর ঈশান মন দিয়ে তার দায়িত্ব পালন করছে সে ঈশার ছবি তুলছে।ঈশানের সাথে বেশ কয়েকটা ছবি তুললো ঈশা।মিষ্টি মধুর বিকালটা আরো স্মৃতিময়,সুন্দর হয়ে উঠলো।ছবি তোলার মাঝে ফোন করেছেন ঈশার মা সুলতানা হঠাৎ তার ফোনে ঘাবড়ে গেলো ঈশা।দূরে গিয়ে যে কথা বলবে সেই সুযোগটুকু নেই ঈশান তার ঘাড়ে হাত রেখে বন্ধী করেছে বুক পাজড়ে।
” আম্মু বলো।”
” ঈশানের মা ফোন করলেন আমাদের মতামত জানতে চাইলেন।আমি কি বলবো?তোমার বাবাকে ফোন করেছি সে বললো তোমাকে জানাতে আমরা সবাই রাজি মা এবার তোমার মতামতটা দাও।এভাবে একজন মানুষকে অপেক্ষায় রাখা ঠিক না।”
পাশ থেকে ঈশান সবটা শুনলো।ঈশার মাথায় চুমু খেয়ে ইশারায় ফিসফিসিয়ে বললো, “হ্যা বলে দাও।আর কোন অপেক্ষা নয়।” জিভের সাহায্যে ঠোঁট ভেজালো ঈশা ঢোক গিলে বলে,
” আমি রাজি আম্মু বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা।”
” আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আমি জানতাম তুমি ফিরিয়ে দেবে না।তোমার বাবা শুনলে ভীষণ খুশি হবে ।”
ঈশা ফোন রাখলো শরীরটা তার কাঁপছে লজ্জায় নিংড়ে যাচ্ছে ঈশানের কাছে।ছেলেটার দু’চোখে জ্বলজ্বল করছে।ঈশাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করালো ঈশান কপালে চুমু খেলো শব্দ করে কানের কাছে চুল গুজে বলে,
” একটু জড়িয়ে ধরি?বেশি না একটু ধরবো।”
ঈশার মনে সংকোচ তবুও ইতিবাচক মাথা নাড়ে অনুমতি পেয়ে ঈশান চটপট জড়িয়ে ধরলো ঈশাকে।কথা ছিলো একটু জড়িয়ে ধরবে কিন্তু ঈশান এতটা জোরে জড়িয়ে ধরে ঈশার যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।ছেলেটা আদুরে হাতে বুলিয়ে দিচ্ছে ঈশার মাথা তাকে ছাড়ার যে নাম নেই।ঈশানের জড়িয়ে ধরা ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠলো চাপ প্রয়োগে ঈশার প্রাণ পাখি যে উড়াল দেবে।ঈশা জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে ঈশান আলগাতে দাঁড়ালো এলোমেলো ঠোঁটে কতবার যে ছোঁয়ালো ঈশার মুখে তার ইয়াত্তা নেই।
” ঈশান।”
বুকের ভেতরের হৃদযন্ত্রটা শব্দ গতি উভয় বেড়ে চলেছে।শরীরের ভারটা ছেড়ে দিলো ঈশানের বাহুতে।এতটা কাছে সে কখনো আসেনি।
” আমাদের বাড়িতে এমন গাছ থাকবে আমরা অবসরে সময় কাটাবো ঈশা।তুমি দেখবে জীবনটা স্বপ্নের মতো সুন্দর হবে।”
” বাগান বিলাসের ছায়ায় আমাদের ক্লান্তি দূর হবে ঈশান।দেখে নিও মনের কোনে শান্তি ধরা দেবে।”
” বাগান বিলাসের ছায়া তলে তোমার শান্তি মেলে।আর জানো কি? তোমার ছায়া তলে আমার প্রশান্তি মেলে।”
৬৪.
মাহমুদা ইতোমধ্যে খবর পেয়েছেন ঈশারা বিয়েতে রাজি।আনন্দে কেঁদে ফেললেন মাহমুদা ঈশান পা গ লা টা যে এই খবর পেলে কত্ত খুশি হবে তার ইয়াত্তা নেই।ছেলেকে সারপ্রাইজ দিতে মনে মনে পরিকল্পনা সাজালেন তিনি।বাড়িতে উপস্থিত সব সাহায্যকারীদের মিষ্টি খাওয়াতে ভুললেন না।সবাইকে নিজের হাতে মিষ্টি খাইছেন।মাহমুদার আনন্দরা আজ এতই গভীর যে সুখের তল্লাটে কেঁদে ভাসাচ্ছেন।
.
আঙুলের ডগায় জ্বলন্ত সিগারেট ঘুরিয়ে হাসলো এক জনৈক ব্যক্তি।বাম হাতের সাহায্যে ফোনটা কানে ধরে আছে।প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে হাসছে এই ব্যক্তি।এইদিনের অপেক্ষায় যে ছিলেন তিনি ফোন কেটে পুরলেন পকেটে।জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরলেন দুই ঠোঁটের ফালিতে।কি যে সুখ এই ধোঁয়ায় তা কেউ বুঝবে না।নাকে মুখে উন্মুক্ত করলেন সিগারেটের ধোঁয়া এলোমেলো সেই গাঢ় ধোঁয়ারা লহমায় হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।জনৈক ব্যক্তি ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো ক্রূর হাসি।
” পূর্ণিতার আনন্দ কেমন আমায় তুমি বুঝতে দাওনি ঈশান শাহরিয়ার।আমাকে বুঝতে দিয়েছো দূরত্বের যন্ত্রণা।এই যন্ত্রণা কতটা তুমি বুঝনি আর বুঝবে না।তবে তোমার বোঝা উচিত।”
গাঢ় নিশ্বাস ছাড়লেন ব্যক্তিটি।বাইকে লম্বালম্বি শুয়ে আকাশের পানে তাকালেন পলকহীন।বুকের কোনে হাত রেখে বিড়বিড় করে শুধালেন,
“এই শহরের মানুষেরা দুঃখ দিতে জানে তবে এই দুঃখের দুর্বহ কতখানি সেটা জানে না,কখনো উপলব্ধি করতে চায় না। ”
#চলবে__