তোমার নামে হৃদয় পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫+৪৬

0
367

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৪৩)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
” আমি বুঝতে চেয়েছি এখানে ঠিক কতটা শান্তি খুঁজে পাবো! ”

তামান্নার কথায় নিরুপমা খুশি হন। মেয়েকে তিনি ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন। এবার আর কেউ তাকে মেয়ের থেকে আলাদা করতে পারবে না। তামান্নাকে নিয়ে তিনি অনেক দূরে চলে যাবেন। অনেক দূরে! যেখানে থাকবে শুধু তারা মা মেয়ে দু’জন।

তামান্নার কথায় সাদিবসহ বাকি দুইজন অবাকের পাশাপাশি হতাশ হলেন। তালিব আবসার, নীলিমা নিজেদের সবটুকু আদর যত্নে গড়ে তোলা মেয়েকে হারাতে বসেছেন। তবে মনে মনে তারা ঠিক করলেন মেয়েকে আর বাঁধা দেবেন না। সাদিব তাদের অবস্থা বুঝতে পেরে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয় তামান্নার ওপর। তামান্না অভিমানের বশে নিরুপমার সাথে যেতে রাজি হয়েছে মানে সেও তাকে হারাতে বসেছে। কিন্তু সে তো এতো সহজে মেনে নেবার পাত্র নয়! স্বামীর উপস্থিতিতে কারোর সাধ্য নেই কোনো মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার। এমনকি তারা বাবা মা হলেও পারবে না।

সাদিব কিছু বলতে যাবে তার আগেই তামান্না সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠে, ” কিন্তু আমি তা পাইনি। ” নীলিমাকে দেখিয়ে বলে, ” ঐ যে দেখতে পাচ্ছেন? উনি আমার একমাত্র মা। উনাকে জড়িয়ে ধরলে আমি যে প্রশান্তিটুকু পাই তা পৃথিবীর কোথাও পাই না। আপনাকে ধরেও পাইনি। ”

নিরুপমা হতাশ চোখে তাকালেন। নিজেকে সামলে বললেন, ” বেশ! তাহলে তাই হোক। অন্তত এতটুকু শুনে খুশি হলাম, নীলিমা আমাকে দেওয়া কথার মর্যাদা রেখেছে। তাকে আদর যত্নে মানুষ করতে পেরেছে। এবার আমি মরে গিয়েও শান্তি পাব। ”

নিরুপমা চোখের পানি মুছে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে মেয়ের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন, ” আসি রে মা। ভালো থাকিস। দূর থেকে দোয়া করবো যেন তুই সুখী হোস। আমার মতো হলেও আমার চেহারার মতো তোর ভাগ্যটা না হোক। ”

তামান্না ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মুখ থেকে একটি রা শব্দও বের হলো না। নীলিমা এবং তালিব আবসার চেয়েও পারলেন না নিরুপমাকে আটকাতে। চব্বিশ বছর আগে কম চেষ্টা করেননি তাকে ফেরাতে কিন্তু সে আসেনি। নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে সংসার জীবন ত্যাগ দিয়েছিলেন। এবার তাই চেয়েও আটকালেন না।
.

.
নিরুপমা চলে যাওয়ার পরমুহূর্তে তামান্না দৃঢ় কণ্ঠে চেচিয়ে বলল, ” তোমরা সবাই আমাকে ঠকিয়েছ, সবাই! ”

নীলিমা এগিয়ে এলেন। বললেন, ” শান্ত হ মা, কেউ তোকে ঠকায় নি। ”

” ঠকায়নি বলছো? আমাকে মিথ্যে পরিচয়ে এতোদিন নিজেদের কাছে রেখেছিলে। কখনো আমাকে আমার অতীতটা জানালে না কেন? আমি কি দোষ করেছি, যার জন্য আমার পরিচয় ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে? সবাই কেন আমার সাথে এমন করে? ” কথাগুলো বলার সময় তামান্না ফুপিয়ে কেঁদে দিল।

” তুমি কষ্ট পাবে বলে তোমাকে কেউ কিছু জানায়নি তামান্না। ” তালিব আবসার বললেন।

” এখন পাচ্ছি না? খুব খুশিতে আছি কি? ”

” সব জেনে যদি তুমি তখন তার কাছে যেতে চাইতে? পারতে নীলিমাকে নিজের মায়ের আসনে বসাতে? পারতে তনিমা, তকি এদের নিজের ছোট ভাইবোনের মতো ভাবতে? ”

” পারতাম না কেন, অবশ্যই পারতাম। ” তামান্না চোখের পানি মুছে বলল।

” পারতে? কিভাবে পারতে? ”

” কারণ আমি আগে থেকেই জানতাম মামনি আমার মা নয়, তকি তনিমাও আমার আপন ভাইবোন নয়। সবটা জেনে এখন যেমন পারছি, তখনো পারতাম! ”

তালিব আবসার এবং নীলিমা অবাক হলেন। দু’জনের মনে একই প্রশ্ন! তামান্না যদি সব জানে তাহলে চুপ করে ছিল কেন? আর কতদিন ধরে জানে?

” কি জানতে?”

” কি হলো বলো? যদি সব জানতেই তাহলে চুপ করে ছিলে কেন? ”

তামান্না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ” আমার জন্ম সাল ১৯৯৯, অথচ তোমাদের বিয়ে হয়েছে ২০০২ সালে। ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক নয় কি? ”

তালিব আবসার নির্বিকার রইলেন। কথা বলার মতো মুখ খোলার সাহস হলো না তার। তামান্না বাবা মা দু’জনকে চুপ দেখে পুনরায় বলল,
” অবাক হচ্ছো? যতটা বোকা ভাবো আমাকে আমি কিন্তু ততোটাও নই বাবা। একটু আধটু হলেও কমনসেন্স নিয়ে ঘুরি। বুঝতে পেরেছ তো? এতোদিন চুপ করে ছিলাম এজন্য যে, আমি ভেবেছিলাম তোমরা নিজেরা একদিন সত্য কথা বলবে। বলবে, আমার আসল বাবা মা কে? আমি তোমাদের কাছে এলাম কিভাবে.? এই একটা প্রশ্ন জানো কতটা অস্বস্তিতে ফেলত আমাকে? একটানা কতদিন ঘুমতে পারিনি জানো? জানো না, তা জানবে কিভাবে? বাবা কখনো আমার খোঁজ ঠিকভাবে নিয়েছ? ছোট থেকে দেখতাম তোমার আমার প্রতি অবহেলা কাজ করত। আমার ছোটখাটো ভুলে তুমি রেগে উঠতে। তোমার ব্যবহারে কতদিন লুকিয়ে কেঁদেছি জানো? বুঝতে পারিনি আমার ব্যবহারে তখন কেন তুমি এতোটা রাগতে। ভাবতাম আমি তোমাদের মেয়ে নই তাই হয়তো। কিন্তু না! এখন বেশ বুঝতে পারছি। কারণ আমার চেহারায় যে তুমি ঐ মহিলাকে দেখতে পাও। উনি তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে তার শাস্তি তুমি আমাকে দিতে। ”

এক নিঃশ্বাসে অনর্গল কথাগুলো বলে তামান্না থামল। কান্নায় চোখজোড়া, নাকের ডগা যথেষ্ট লাল রঙা হয়ে গেছে। রাগের কারণে কেঁপে উঠছে সারা শরীর। শ্বাস নিয়ে আবারো বলল, ” চিন্তা কর না। তোমাদের কাছে আর কখনো আসবো না। চলে যাচ্ছি, প্রার্থনা করি এ যাওয়াই যেন আমার শেষ যাওয়া হয়। আমার মতো অপয়ার মুখ দেখে যেন তোমাদের আর কখনো কষ্ট পেতে না হয়। ”

তামান্না কাউকে তোয়াক্কা না করে বাসার সদর দরজা দিয়ে হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেল। রাগের মাথায় ভুলে গেল তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা। নীলিমা পেছন পেছন দৌড়ে এসে তামান্নাকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলেন। তালিব আবসার স্তব্ধ হয়ে রইলেন। তামান্না যে চলে গেছে চোখের সামনে দিয়ে সেদিকে কোনো ধ্যান নেই যেন। নীলিমা স্বামীর হাত ধরে ঝাঁকালেন।

” চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছো কি? মেয়েকে আটকাও না! ও তো চলে যাচ্ছে! ” তালিব আবসার তখনো নির্বিকার।

” কিছু একটা কর না! ওর এই অবস্থায় কিছু হয়ে গেলে তখন কি তোমার হুশ ফিরবে? ”

তালিব আবসারকে পাথরের ন্যায় দেখতে পেয়ে নীলিমা দৌড়ে ঘরে ঢুকলেন। তামান্নার রুমের দিকে গেলেন। একমাত্র সাদিব-ই আছে যে পারবে তামান্নাকে ফিরিয়ে আনতে। অন্যথায় এই ভর সন্ধ্যায় মেয়ের যেকোনো বিপদ হয়ে যাবে।
.

.
নিরুপমা চলে যেতে সাদিব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দমটা অল্পের জন্য বন্ধ হওয়ার জোগাড় করে দিয়েছিল তামান্না। ড্রয়িং রুম ছেড়ে রুমে আসে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে। গতকাল রাতে দেরি করে বাসায় ফিরেছিল, তারপর ঠিক সকাল সকাল তাকে হসপিটালে দৌড়াতে হয়েছিল ইমারজেন্সিতে। তামান্না রুমে আসলে তাকে তৈরি হতে বলবে, একেবারে তাকে নিয়েই বাসার দিকে রওনা দেবে। নীলিমা হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে। সাদিব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। প্রতিবার শ্বাশুড়ির সাথে দেখা হয়েছিল রুমের বাহিরে। আগে কখনো এতোটা লজ্জায় পড়তে হয়নি তাকে।

সাদিব কিছু বলার আগে নীলিমা বলে উঠে, ” বাবা তামান্না…”

সাদিবের কণ্ঠ অস্থির শোনাল। বলল, ” কি হয়েছে তামান্নার? ”

নীলিমা কথা বলতে পারছে না। এইটুকুতে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। সাদিব অপেক্ষা করে না। সে রুমে ছেড়ে বেরোয় দেখতে, তামান্নার কি হয়েছে! রাগের মাথায় কিছু করে বসেনি তো আবার? কিন্তু তামান্না তো ঘরেই নেই। নীলিমা পেছন পেছন এলেন। বললেন, ” তামান্না বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। তুমি কিছু একটা কর! ”

সাদিব কালবিলম্ব না করে বেরিয়ে পড়ল তামান্নাকে খুঁজতে। এতো বড় কঠিন পদক্ষেপ নেবে ভাবতে পারেনি। আশেপাশের সব জায়গায় খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু কোথাও নেই তামান্না। কম সময়ের মাঝে হঠাৎ গায়েব হয়ে গেছে মেয়েটা। সবাইকে চিন্তায় ফেলার মতো কাজকারবার না করলে মেয়েটার শান্তি হয় না। সাদিব তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে। এই অবস্থায় কোথায় যাবে ভেবে পায়না। সাথে সেলফোন থাকায় তামান্নার ফোনে ফোন দিলে রিং হয়, বুঝতে পেরে বুকের মধ্যে দুরুদুরু কম্পনে অপেক্ষা করতে থাকে, কখন সে ফোনটা সে তুলবে! মুখে আওড়ায়, ” প্লিজ ফোনটা একবার তোলো, শুধু একবার! ” কিন্তু না, সাদিবের কথা কেউ শোনেনি। অপর পাশ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। দুপুরের নাম্বায়টাতে ডায়াল করতে নীলিমা কল রিসিভ করলেন। সাদিবকে জানালেন তামান্নার সব বন্ধু বান্ধবের বাসায় ফোন করেছেন, কারোর কাছে যায়নি সে। সাথে এও জানায় তামান্না ফোনটা সাথে করে নেয়নি বরং বাসায় রেখে গেছে। সাদিব হতাশ হয়, নিমিষে ব্যর্থতা এসে ঘিরে ধরে তাকে। আরো আগে আসেনি কেন? কেন তখন ড্রয়িং রুম ছেড়ে ভেতরে গিয়েছিল? আপসোস করতে করতে বসে পড়ে রাস্তার একপাশে। মাথার ওপর খোলা আকাশের দিকে তাকায়। প্রিয়তমাকে হারানোর ভয় চোখে মুখে স্পষ্টত হয়ে উঠে। পুরুষ মানুষদের কখনো কাঁদতে হয় না। এ মুহূর্তের পরিস্থিতিতে ভুলে যায় কথাটা। চোখের কোণ আপনাআপনি ভিজে উঠে। মুখে আওড়ায়, ” আল্লাহ আপনাকে ডেকে তো কখনো নিরাশ হইনি। প্লিজ আমার তামান্নাকে আমার কাছে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিন। প্লিজ! ” আশেপাশে কোনোদিকে খেয়াল করার প্রয়োজন মনে করল না, সেভাবে মাটিতে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল।

কিছুক্ষণের জন্য সাদিবের মনে হতে থাকে এই বুঝি তামান্না পেছন থেকে বেরিয়ে এসে খিলখিল করে হেসে ফেলবে। বলবে, ” কি ডাক্তার সাহেব কেমন দিলাম বলো? তুমি না ভীষণ ভিতু বুঝলে! তোমার পেসেন্টরা একথা শুনলে হাসতে হাসতে হসপিটালের মেঝেতে গড়াগড়ি খাবে। ”

#চলবে…

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৪৪)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, গা ছমছমে নির্জীব পরিবেশ! মাঝে মাঝে দূর থেকে শব্দ করে কিছুক্ষণ পর পর কুকুর ডেকে উঠছে। একটু হাঁটতে ব্রিজের ওপর এসে পৌঁছুল তামান্না। ল্যাম্প পোস্টের মৃদু আলোতে জায়গাটি চিনতে একটুকুও অসুবিধে হয়নি। ছেলেবেলা থেকে এখানে কাটাচ্ছে, পথঘাট সব মুখস্থ তার। বাসা থেকে যে খুব একটা দূরে চলেছে এমনটিও নয়, বরং বাসার অনেকটা কাছেই সে। পেটের খিদের জ্বালায় হেঁটে কুলচ্ছে না। তখন রাগের মাথায় এতকিছু বুঝতে পারেনি। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মিনিট দুয়েক না যেতে সামনের দিক থেকে কয়েকটা যুবক বয়সী ছেলেদের নজরে পড়ল। সবার হাতে সিগারেট, স্পিড ক্যানের বোতল। হাসি ঠাট্টা করতে করতে এদিকটায় এগিয়ে আসছে। আচমকা অজানা ভয়ে গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। এই নির্জন পরিবেশে কিছু একটা হয়ে গেলেও কেউ টের পাবে না। তারওপর রাস্তার পাশে ঝোপঝাড়ে ঘেরা সুপারি বাগান। সাথে করে ফোনটাও আনেননি। নাহলে কোনো একটা উপায় ঠিক বের করা যেত।

ছেলেগুলোর পাশ কাটিয়ে চলে যাবে কিনা তাই ভাবছে! কিন্তু নিজের একাকিত্ব বুঝতে পেরে সাহস হয়নি সামনের দিকে এগোবার। নিজের ওপর এবার নিজেরই রাগ হতে থাকে। কেন যে রেগে এতো রাতে বেরোতে গিয়েছি দূর! কাল সকালে বের হলেই তো হতো। উপায় না পেয়ে তামান্না যে পথ ধরে এসেছে সে পথ ধরেই দৌড়তে লাগল। যা হওয়ার হয় সেটা পরে দেখা যাবে। অন্তত ঐদিকে গেলে জানে মালে তো বাঁচবো। দৌড়তে গিয়ে আচমকা কারোর সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিচ্ছিল। ভাগ্যক্রমে পাশে থাকা সুপারি গাছ জড়িয়ে ধরে ফেলে। এ যাত্রায় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় নয়তো পড়ে গেলে সাংঘাতিক কিছু ঘটে যেত।

হাঁপাতে হাঁপাতে পাশে থাকা গাছের গুড়ির ওপর বসে পড়ে। হঠাৎ সাদিবের উপস্থিতি টের পায় তামান্না। সাদিব ধপ করে এসে বসে জড়িয়ে ধরে তাকে। আচমকা আক্রমণে তামান্না হতভম্ব হয়ে যায়। কর্ণকুহরে স্পষ্ট পৌঁছায় সাদিবের হৃৎস্পন্দনের ধ্বনি। তামান্না নিজেকে সামলে নেয়। সরে যেতে চায় সাদিবের কাছ থেকে। কিন্তু সাদিবের শক্ত বাহুডোরের সাথে পেরে ওঠে না। তামান্না ককিয়ে উঠে, ” আহ্ ব্যথা পাচ্ছি। ছাড়ো! ”

সাদিব সাথে সাথে ছেড়ে দেয় তামান্নাকে। তারপর স্থির হয়ে তার দিকে সেভাবেই ফিরে বসে। চারদিকে অন্ধকার ছাড়িয়ে দূরের সেই ল্যাম্পপোস্টের বাতির মৃদু আলোকে ঠেলে সাদিবের ফোনের ফ্ল্যাশলাইট-টাই আলোর একমাত্র উৎস হয়ে উঠে। তামান্না স্পষ্ট অস্থিরতা লক্ষ্য করে সাদিবের চেহারার।

সাদিবের গলা কিছুটা গম্ভীর শোনায়। বলল,
” এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিলে? ”

” জানি না। ”
” কোথায় যাচ্ছো জানো না? ”
” না জানি না। ”
” তো জানো না-ই যখন, তখন কেন বেরিয়েছ? এ অবস্থায় একটা কিছু হয়ে গেলে? ”

তামান্না সাদিবের দিকে ফিরে তাকায়। পরক্ষণে বলে উঠে, ” হলে হত! আমি এসবে পরোয়া করি না। ”

” তুমি পরোয়া না করলেও অন্যরা পরোয়া করে। কতগুলো মানুষকে চিন্তায় ফেলে এসেছো তুমি জানো? ” এতটুকু বলে সাদিব থেমে গেল। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। বলল, “এখানে এতো কথা বলতে চাই না। আগে বাসায় চল, তারপর তোমার হচ্ছে! ”

তামান্নার তরফ থেকে কোনো জবাব আসে না। সাদিব উঠে দাঁড়ায়। বলে, ” কি হল, কথা কানে যাচ্ছে না? ” বলে পেছন ফিরতে দেখে তামান্না সামনের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। সাদিব ভাবল তামান্না বোধহয় আবার হারিয়ে যাবে অন্ধকারে। একে তো অনেক কষ্টে পেয়েছে সাদিব তারওপর তামান্নাকে পুনরায় পাগলামি করতে দেখে সাদিব চোটে গেল। তামান্না বলে হাঁক ছেড়ে ডাকতে যাবে তার আগেই দেখল তামান্না কিনারার ঢালু জায়গায় একপাশে বসে পড়ে। সাদিব যা বোঝার বুঝে যায়। সামনে দিয়ে হেঁটে আসা কয়েকটা ছেলে সিগারেট টানছে।সিগারেটের দুর্গন্ধ নাকে আসতে তামান্না বমি পায়। যার জন্য সে সেদিকে দৌড়ে যায়।

এবার ছেলেগুলোর প্রতি সাদিব বিরক্ত হয়। ইয়াং জেনারেশনের এই এক কমন নেশা, সিগারেটের নেশা। কি যে পায় কাগজের তৈরি তামাকটা টেনে বাতাসে ধোঁয়া উড়াতে, আল্লাহ-ই জানে। নিজের তো ক্ষতি করছেই সাথে আশেপাশের মানুষজন সবার ক্ষতি করছে।

” সিগারেট খাওয়ার আর জায়গা পেলেন না? একবারে এখানে এসেই খেতে হল? ” ছেলেগুলোকে কথাটা বলে তামান্নার দিকে এগিয়ে গেল সাদিব।

তারা কি বুঝল কে জানে! দু’জনকে লক্ষ্য করে সবাই একসাথে সিগারেট ফেলে দিয়ে সাথে সাথে পায়ের নিচে পিষে ফেলে। একজন বলে উঠে, ” কি ভাই অসুস্থ বউ নিয়া রাইতে বাহির না হইলেই তো পারতেন। আপনিও বের হওনের আর সময় পাইলেন না। ”

” আপনি বিবাহিত? ” সাদিবের প্রশ্নে ছেলেগুলো একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। মাথা নাড়িয়ে বোঝাল, ” না! ”

” আগে বিয়ে করেন তারপর বুঝবেন। বিশেষ করে বউ রাগী হলে তো কথাই নাই৷ ”
.

.
তামান্নাকে নিয়ে এক মুহূর্ত দেরি করল না। সোজা বেরিয়ে পড়ল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। বাসার কেউ তাদের আটকালেন না। তামান্নাও থাকতে চায়নি, কিন্তু মনে মনে সাদিবের সাথেও যেতে চাইছে না। ও বাসায় ফেরা মানেই নতুন অশান্তি শুরু করা। তবুও উপায় নেই৷

সাদিব ড্রাইভ করছে, পাশে তামান্না বসে আছে। গাড়ির কাচের গ্লাস খুলে দেওয়া হয়েছে। তামান্নার এমনিতেই ঠান্ডা লেগে আছে তারওপর এসির বাতাস তার সহ্য হয়না। ক্লান্তিতে তামান্নার চোখ জোড়া বুজে আসছে বারবার। সাদিব পাশে খেয়াল করল তামান্নার এলোমেলো খোলা চুলগুলো বাতাসের সাথে দোল খেয়ে সারা মুখ জুড়ে আঁচড়ে পড়ছে। মেয়েটা বারবার চুল সরিয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো কি আর এক জায়গায় থাকার জিনিস! খোলা চুলে মেয়েদের সৌন্দর্য বোধহয় বহুগুণে বেড়ে যায়। তাও সে যদি হয় এলোমেলো মুখে আছড়ে পড়া চুল! তবে তো কথাই নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য বুঝি এটাই।

নিরবতা ছাড়িয়ে তামান্না বলল, ” আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি? ”

” বাসায়! ” সাদিব শান্ত স্বরে বলল।

” কোন বাসায়? ”

” তোমার শ্বশুরের বাসায়। চুপচাপ বসে থাক। একটা ফালতু কথাও মুখ দিয়ে যেন না বের হয়। ”

উত্তরে তামান্না ভেংচি কাটল। বলল, ” বললাম না কথা। কি আসে যায়! ”
.

.
বাসার সামনে আসার পর বাঁধল আরেক বিপত্তি। এতোক্ষণ ঘুমন্ত তামান্নাকে দেখতে ভালো লাগলেও এখন তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়াটাই প্রধান সমস্যা। ভাবল তাকে কি একবার ডেকে তুলবে? পর মুহূর্তে ভাবল না থাক! বিরক্ত না করা যাক। চুপচাপ থাকতে বলেছি বলে, একবারে ঘুমিয়ে পড়তে হবে? আজব মেয়ে মানুষ! আনমনে বলে তামান্নাকে পাঁজা কোলে তুলে নিল।

কলিং বেলের শব্দে সামিরা দরজা খুলে দিলেন। সাদিবের কোলে ঘুমন্ত তামান্নাকে দেখে অবাক হলেন। কিৎকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চেয়ে রইল কিছু সময়। রাত তখন পৌনে বারোটা। তামান্নাকে অসময়ে এ অবস্থায় দেখবেন হয়তো ভাবেননি। নিজেকে সামলে সামিরা জিজ্ঞেস করলেন, ” কি হয়েছে ওর? ”

” গাড়িতে ঘুমিয়ে গেছে। মা এক প্লেটে বেশি করে ভাত বেড়ে দেবে প্লিজ? ”

” ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে! আমি টেবিলে ভাত বাড়ছি। ”

” আরে না না টেবিলে না। ” তামান্নাকে দেখিয়ে বলল, ” আমার জন্য না ওর জন্য বলেছি! অনেক খিদে পেয়েছে ওর। দেখলাম সারা রাস্তায় খিদের জ্বালায় হাসফাস করছে। ”

সামিরা অবাকের সীমা যেন অতিক্রম করতে বসেছেন। তারপর কিছু একটা ভেবে মৃদু হাসলেন৷ বললেন, ” ঠিক আছে, যা। আমি ঘরে নিয়ে আসছি। ”

” থ্যাংক ইউ মা! ”
.

.
সূর্যের ঝলমলে রোদের আলো এসে চোখে পড়তে নড়েচড়ে উঠল তামান্না। আজ ঘুম যেন ভাঙতে চাইছে না। ক্লান্তিতে বারংবার শরীরটা ভেঙে আসতে চাইছে। সারা শরীরে ব্যথার আর্বিভাব ঘটেছে। চোখ মেলতে সাদিবকে পাশে বসে থাকতে দেখতে পায়৷ লোকটা বসে খুব মনোযোগ সহকারে বই পড়ছে। তামান্না তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার ডাক্তার সাহেবকে দেখছে। মনে হচ্ছে এ যাবত কতদিন ধরে তাকে দেখেনি। অথচ দু’জন দু’প্রান্তে থাকার পরেও প্রতিদিন তাদের দেখা হতো।

” মহারানী উঠেছেন? ”

সাদিবের সম্বোধনে তামান্নার সম্বিত ফিরে আসে।
” কাকে বলছো? ”

” এখানে আমি আর তুমি ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছো কি? ”

তামান্না এদিক ওদিক মাথা দোলায়। অর্থ্যাৎ না। তারা ছাড়া আশেপাশে কারোর উপস্থিতি নেই।
” কথাটা তোমাকেই বলছি। ওঠে ফ্রেশ হয়ে নেও। দেখবে ভালো লাগবে। ”

তামান্না ভ্রু কুঁচকে তাকাল। ” ভালো লাগবে মানে? তুমি কি বুঝতে পারছো আমার যে খারাপ লাগছে? ”

” বাহ্ রে! সাইডে একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবে বুঝব না বলছো? তাছাড়া তোমার চোখমুখের অবস্থা বলে দিচ্ছে তোমার কাছে খারাপ লাগছে। তুমি অসুস্থ। এ সব কিছু ছাড়ো, সব কিছুর উর্ধ্বে আমি একজন ডাক্তার। তোমার ডাক্তার সাহেব। তোমার সুবিধা অসুবিধা বুঝবো না? ”

” হ্যাঁ, কেমন বোঝেন জানা আছে। ”

” বুঝি না বলছো? ঠিক আছে বল কি বুঝিনি? ”

” অনেক কিছুই তুমি বুঝেও বুঝতে পার না ডাক্তার সাহেব। ”

তামান্নার কথা শুনে সাদিবকে মৌনতা ঘিরে ধরল। বইয়ের দিকে চোখ ফেরাল। তামান্না কথা বাড়াল না। বিছানা ছেড়ে নেমে গেল। পেছন থেকে সাদিব বলল, ” আমি যা ভাবছি তুমি কি সেটাই বলতে চেয়েছো? ”

তামান্না করুণ চাহনিতে চেয়ে রইল কিছু সময়। কিন্তু মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারল না।

#চলবে…

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৪৫)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
বাংলার প্রকৃতি বর্ষার আর্দ্র মৌসুমে পদার্পন করেছে। এ মৌসুমে আকাশ যেমন গুমোট মেঘে ঢেকে যায় সেরকম ভাবে আবার একদম স্বচ্ছ নীল রঙ ধারণ করে বসে। বিনা নোটিশে হুটহাট করে যখন তখন বৃষ্টি চলে আসাই যেন এ মৌসুমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তন্ময় আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে মোবাইলে স্ক্রোল করছে। ফাঁকে ফাঁকে অর্ধাঙ্গীনির পানে চেয়ে দেখছে। ভাবখানা এমন যেন সে দেখছেই না সামনে যে একজন গাল ফুলিয়ে বসে আছে। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি। এদিকে তনিমার চাঁদবদন মুখখানিও আষাঢ়ে মেঘে ডাকা। অনেকক্ষণ যাবত দু’জনেই চুপচাপ বসে থাকায় তন্ময় বিরক্ত হয়ে যায়। শায়িত অবস্থা থেকে উঠে বসে।

তনিমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” তখন থেকে দেখছি গাল ফুলিয়ে বসে আছো। কেন বলতো? কিছু কি হয়েছে? ”

” কিছু হয়নি। ” তনিমার সোজাসাপটা জবাব।

” তাহলে? ”

তনিমা মৌন রইল। বরাবরই কম কথা বলে মেয়েটা। এমনকি রাগ উঠলেও নিরবে নিজের ওপর রাগ ঝাড়ে। তামান্নার সাথে ঝগড়া করা ব্যতিত তাকে খুব একটা কথা বলতে শোনা যায় না। তা সত্ত্বেও ঝগড়াঝাটি শেষেও সেই যত কথা তামান্নাকেই বলতো তনিমা।

তন্ময় পুনরায় বলল, ” মা কিছু বলেছে? ”

তনিমা চোখ তুলে তাকাল। তন্ময় তনিমার চোখের ভাষা বুঝতে চাইল। তনিমা তার ফাঁকে বলে উঠল, ” মা কিছু বলেনি আমাকে। আপনি কিছু একটা হয়তো ভুলে গেছেন। ”

তন্ময় মনে করার চেষ্টা করতে চাইল। পরক্ষনে মনে পড়তে তনিমার আড়ালে জিভে কামড় বসাল। তনিমাকে নিয়ে আজ বেরোবার কথা ছিল তন্ময়ের। কিন্তু অফিস থেকে ফিরে সব ভুলে বসেছে। তারওপর বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি। তন্ময় বুঝতে দিল না তনিমাকে। বরং ক্ষ্যাপানোর উদ্দেশ্যে না জানার ভাণ করে বলল, ” কি বলতো? ”

তনিমা নিরাশ চোখে তাকাল। ” এরই মাঝে ভুলে গেছেন? ”

” জানলেই তো ভুলবো। ”

তনিমা কথা বাড়াল না। বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। তন্ময় ভেবেছিল তনিমা হয়তো রেগে গিয়ে তেড়ে আসবে। তা না করে তনিমা উল্টো অভিমান করে চলে যাচ্ছে দেখে তন্ময় পেছন থেকে তনিমার হাত ধরে বলল, ” আরে কোথায় যাচ্ছো। ”

” ওদিকটায় একটু কাজ ছিল! ”

” তুমি আমাকে কাল বের হবে বলেছিলে, সেটার কথাই কি এতোক্ষণ বলছ? ”

তনিমা মাথা নাড়াল।

” কিন্তু কিভাবে? বাহিরে তাকিয়ে দেখ, এই বৃষ্টিতে বের হলে অসুখ করবে নির্ঘাত। ”

তনিমা মন খারাপ করে বলল, ” অনেকদিন ধরে ঘরে বন্দী হয়ে আছি। আর কবে বের হবো? আপনার তো সময়ই হয় না। ”

তন্ময় কিছু সময় ভাবল। ” আচ্ছা ব্যাপার না। বৃষ্টি কমলে সন্ধ্যার পর দরকার হলে নিয়ে যাবো কেমন? এবার একটু হাসো? স্মাইল! ”

তনিমা সায় দিল। মৃদু হেসে বলল, ” আপনার ফোনটা কি একটু দেয়া যাবে? ”

” আমার ফোন কেন? তোমার ফোনের কি হয়েছে.? ”

” আসলে আমার ফোনে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে। বাসায় একটা কল দিতাম। যদি ফোনটা একটু দেয়া যেত।”

তনিমা তন্ময়ের থেকে ফোন নিয়ে খুশি মনে পা বাড়ায় বারান্দার দিকে। তনিমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে তন্ময় ল্যাপটপে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
.

.
বিছানার পাশে রাখা ল্যাম্পসেটের ড্রয়ার ঘেঁটে তামান্না একটা নোটবুক বের করল। অনেকদিন ধরে এতে কিচ্ছুটি লেখা হয় না। নিজের অবসর সময়ে তামান্নার অন্যতম সঙ্গী এই নোটবুকটি। যাতে উৎসর্গ করে লেখা আছে মনের এককোণে জমিয়ে রাখা একগুচ্ছ সুপ্ত অনুভুতি। ডাক্তার সাহেবের সাথে বিয়ে হওয়া থেকে সবটা সে এই নোটবুকে টুকে রেখেছে। সম্পূর্ণটা শেষ করে একদিন ডাক্তার সাহেবের নিকট নোটবুক খানি পেশ করবে বলে ভেবে রেখেছে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উল্টোটা। লিখতে গিয়ে এক সময় তামান্না নোটবুকটা সামনে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।

সাদিব সারাদিন বাসায় ছিল। একমুহূর্তের জন্যেও সে চায়না তামান্নাকে আড়াল করতে। এখন আর তামান্না একা নয়। তার সাথে জড়িয়ে আছে আরো একটি প্রাণ। সামনে নিজের অনেক দায়িত্ব দেখতে পাচ্ছে সে। পুরোটা সময় তামান্নার খেয়াল রাখবে বলে ঠিক করেছে। বাকি সব গোল্লায় যাক! তাতে সে পরোয়া করবে না। তারপরেও দরকারি কাজে হসপিটালে যেতে হয়েছিল তাকে। ফিরে এসে দেখতে পায় তামান্না টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ভীষণ রকমের সিগ্ধ সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। মা হলে বুঝি মেয়েদের সৌন্দর্য্য বেড়ে যায়! ভাবল কিছুটা সময় নিয়ে। তামান্নাকে কোলে তুলে বিছানায় এনে সযত্নে শুইয়ে দিল। মুখের সামনে এসে পড়া চুলগুলো সরিয়ে সযত্নে কানের পেছনে গুঁজে দিল। কপালে আলতো ঠোঁট ছুয়ে, ফ্রেশ হতে চলে গেল।

লম্বা সময় নিয়ে সাওয়ার শেষ করল সাদিব। টাওয়াল দ্বারা মাথার চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো। হঠাৎ নজর পড়ল টেবিলের ওপরে রাখা একটি নোটবুকের ওপর। যার ওপরের কভার পেজে মাঝারি আকারে লেখা আছে, “#তোমার_নামে_হৃদয়❤️ ”

সাদিব অবাক হল। সাথে নামটার প্রতি কৌতুহল জন্মালো। নোটবুকের নামও আবার এমন হতে পারে? ভাবা যায়। কৌতুহলের বশে প্রথম পাতা উল্টায় সাদিব। যেখানে লেখা আছে, ” উৎসর্গ- প্রিয় ডাক্তার সাহেব! ”

সাদিব পেছন ফিরে তামান্নার দিকে তাকাল। মেয়েটা তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তারপর নোটবুকের উৎসর্গ লাইনটির ওপর নজর রেখে আনমনে হেসে দিল সাদিব। ভেতরের লেখাগুলো দেখল তবে পড়ল না। অনেক কিছু লিখে ফেলেছে তামান্না। ভাবল সবগুলো সে একা পড়ে আনন্দ পাবে না। তারচে বরং নোটবুকের মালকিন ঘুম থেকে উঠুক, তারপর নাহয় তার মুখ থেকে সবটা শুনবে! তাকে ভেবে কত কিছু লেখা হয়ে গেছে অথচ সাদিব জানতেই পারল না। কখন করল তামান্না এসব? সাদিবের মনে প্রশ্নেরা উঁকিঝুঁকি মারল।
.

.
আছর গড়িয়ে মাগরিবের ওয়াক্ত হতে চলল। তামান্না তখনো বেঘোরে ঘুমচ্ছে। সাদিব তামান্নাকে কোমল স্বরে ডাকল। তাতে তামান্না সামান্য নড়েচড়ে উঠল। সাদিব তামান্নার গালে হাত রেখে মৃদু নাড়াল। পুনরায় ডাকল, ” তামান্না উঠো। দেখ সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ”

তামান্নার সাড়া মিলল না।

” তামান্না! শুনতে পাচ্ছো? ”

” হু..

” উঠ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নামাজ পড়তে হবে তো! নাহলে কাযা হয়ে যাবে কিন্তু। ”

” আরেকটু। ”

” না, একটুও না। উঠো বলছি! ”

সাদিব ব্যর্থ হয়ে তামান্নার পাশ থেকে উঠে পড়ল। ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে বেসিনের কল ছেড়ে হাতে করে পানি এনে তামান্নার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিল। এবার না উঠে যাবে কই! তাতে সত্যি সত্যি কাজ হয়েছে। তামান্না হাতের সাহায্যে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসল। হাই তুলল। ঘুমের রেশ কাটতে সাদিবের দিকে তাকাল। বলল, ” কি হয়েছে? আমার চোখে পানি মারলে কেন? ”

“তুমি উঠছ না কেন? ”

” তুমি ডাকলেই পারতে, এভাবে পানি মারার কি ছিল ডাক্তার সাহেব? ”

” তোমাকে ডাকি নি বলছো? ”

” ডেকেছ তো দেখলাম, তাও পানি মেরে! ”

” পানি মারাতেই উঠেছ। বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি ওজু সেরে নামাজ পড়তে এসো। ”

” যাচ্ছি যাচ্ছি। তোমাকে বলতে হবে না হুহ! ” তামান্না সাদিবকে ভেঙচি কেটে বিছানা ছাড়ল।
.

.
তন্ময় নিজের কথা রেখেছে। সন্ধ্যার পর তনিমাকে বের হবার জন্য দু’জন তৈরি হয়ে নিয়েছে। বের হওয়ার সময় ড্রয়িং রুমে তন্ময়ের মা তাদের দেখে বললেন,
” তন্ময় এই ভরসন্ধ্যায় কোথায় যাচ্ছিস? ”

তনিমা তন্ময়ের মায়ের গম্ভীর স্বভাবকে বেশ ভয় পায়। কখনো নিজে থেকে কোনো কথা বলতে গত দু-মাসের মধ্যে আজ অব্ধি সাহসে কুলোয়নি তার। তাই মহিলার গলার আওয়াজ শুনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়ের পাশে। পেছন থেকে তন্ময়ের এক হাত চেপে ধরে রেখেছে তনিমা। তন্ময় বুঝতে পারল তনিমার ভয়ের কারণ৷ মাকে উদ্দেশ্য করে তন্ময় বলল, ” এইতো কাছেই। তোমার বউমা একটু বের হতে চেয়েছিল তাই তাকে নিয়ে একটু বাহিরে যাচ্ছি। ”

” ওহ্ আচ্ছা। তো সারাদিন কোথায় ছিলি তোরা? এখন কেন বের হতে হচ্ছে? ”

” সারাদিন তো বৃষ্টি হচ্ছিল বাহিরে। এভাবে বৃষ্টির মধ্যে কি আর বের হওয়া যায় নাকি। তখনও তো বকতে। ”

তন্ময়ের মা চুপ করে রইলেন। তনিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ” এই মেয়ে! শোন, আমি কোনো বাঘ ভাল্লুক নই যে তুমি আমাকে এতো ভয় পাবে। এদিকে তাকাও বলছি। ”

তনিমা নিচু স্বরে বলল, ” জ্বি মা! ”

” তোমার বোন তো বেশ কথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে। ওর মতো সাহসী মেয়ের বোন হয়ে তুমি এতো চুপচাপ থাক কেন? কিছু না হোক, অন্তত ওর মতো সব সময় হাসিখুশি থাকবে বুঝলে? এতো চুপচাপ থাকা আমার পছন্দ না। ”

তন্ময় বলল, ” তাহলে যাই আমরা! ”

” যা! ” তনিমাকে বললেন, ” আর শোন পরেরবার থেকে যা কিছুর দরকার হলে ওকে বলতে না পারলে নির্দ্বিধায় এসে আমাকে বলবে কেমন? মনে থাকবে? ”

তনিমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। বলল, ” জ্বি মনে থাকবে। ”

#চলবে…

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (৪৬)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
অন্তত ওর মতো সব সময় হাসিখুশি থাকবে বুঝলে? এতো চুপচাপ থাকা আমার একদম পছন্দ না। ”

তন্ময় বলল, ” তাহলে যাই আমরা! ”

” যা! ” তনিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ” আর শোন পরেরবার থেকে যা কিছুর দরকার পড়বে ওকে বলতে না পারলে নির্দ্বিধায় এসে আমাকে বলবে কেমন? মনে থাকবে? ”

তনিমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। বলল, ” জ্বি মনে থাকবে। ”

বাসার বাহিরে এসে তনিমা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। শ্বাশুড়ি যা ডেঞ্জারাস মহিলা, উনার সামনে কথা বলতে গেলেও তনিমা মেপে মেপে কথা বলে। তনিমার হাবভাব দেখে তন্ময় জোরেশোরে হেসে উঠল। আচমকা তন্ময়ের হাসির শব্দ কানে ঠেকতে তনিমা অবাক হল। হাসির কারণ বুঝতে পেরে তন্ময়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। কোমরে দুই হাত গুঁজে বলল, ” হাসি পাচ্ছে খুব তাই না? ”

তন্ময়ের কথা কানে গেলেও হাসির জন্য সে জবাব দিতে পারল না। তনিমার কথায় উল্টো হাসির মাত্র বেড়ে গিয়ে লুটোপুটি খাওয়ার উপক্রম হল যেন। খানিক বাদে থেমে হাত নাড়িয়ে বলল, ” দাঁড়াও দাঁড়াও! আরেকটু হেসে নেই। ”

তনিমা নির্বিকার হয়ে স্বামীর কান্ড দেখে যাচ্ছে। অথচ মুখে তার বিন্দু মাত্র হাসির রেশ দেখা গেল না। একসময় হাসি থামিয়ে দু’জন হাত ধরে পাশাপাশি চলতে শুরু করল। হাঁটার এক ফাঁকে তন্ময় বলল, ” আচ্ছা তুমি আমার মাকে এতো ভয় কেন পাও বলতো? ”

” কই ভয় কোথায় পেলাম? ”

” এই যে তখন উনার সামনে গিয়ে পেছন থেকে আমার হাত চেপে ধরেছিলে! মা কিন্তু ঠিক খেয়াল করেছে। ”

তনিমা জিভে কামড় বসাল। না জানি তিনি কি ভাবলেন। হয়তো ভেবেছেন মেয়েটার হায় লাজ বলতে কিছুই নেই। কিভাবে শ্বাশুড়ির সামনে স্বামীর হাত চেপে ধরেছে দেখ! তনিমাকে নিরব থাকতে দেখে তন্ময় বলল, ” কি হলো? চুপ করে রইলে যে? ”

” আমাকে ওভাবে আপনার হাত ধরতে দেখে মা কি খুব খারাপ ভেবেছে? ”

তন্ময় পাশে ফিরে তাকাল। রাস্তার পাশের বিল্ডিং গুলো থেকে আলো ঠিকরে বাসার বাহিরে বেরিয়ে আসছে। তাতে তনিমার মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তন্ময়। বলল, ” উমম্ তা তো জানি না। হয়তো ভেবেছে! ”

তনিমা উত্তরে কিছু বলল না। তন্ময় আবারো বলল, ” তোমার কি মন খারাপ? ”

তনিমা ধ্যান চলে গিয়েছিল অন্যদিকে। তন্ময়ের কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো৷ পাশে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে জবাব দিল, ” কই না তো! ”

” তাহলে কি হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে? ”

” না। বিশেষ করে আপনার পাশে হাঁটতে আমার কখনো কষ্ট হয় না। কেন আপনার হচ্ছে কি? ”

” যেখানে তোমার হয় না সেখানে আমার হবে কি করে ভাবলে? চল আমরা বরং আরেকটু হেঁটে যাই! ”

” হুম চলুন! ”

তন্ময় একটু পর পর তনিমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। না চাইতেই অতীতের স্মৃতিতে ডুব দিল। একটা সময় ছিল যখন সে চাইত তামান্না তার পাশে এভাবে হাতে হাত রেখে হাঁটুক। তামান্নার বৃষ্টি খুব পছন্দ, হাত ধরে যখন তখন দু’জন মিলে ঝেঁপে পড়ে বৃষ্টিতে ভিজবে। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে প্রায়ই ক্যাম্পাসের মাঠে ঘাসের ওপর তামান্নাকে খালি পায়ে হাঁটতে দেখেছে তন্ময়। খুব ইচ্ছে করত তার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে। তামান্নার উপন্যাস পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। সব সময় তাই ব্যাগে একটা করে উপন্যাস সাথে করে নিয়ে ঘুরত সে। তখন তামান্নার মুখে সেসব উপন্যাসের কাহিনি শুনতে এক অবাধ্য ইচ্ছে মনে জাগত। যদিও জানত সেটা কখনো সম্ভব না। ইচ্ছেটা ছিল অনেকটা এমন, কোনো এক খোলা আকাশের নিচে তামান্নার কোলে মাথা রেখে দূর আকাশের দিকে সে তাকিয়ে দেখবে। তামান্না তাকে বই পড়ে পড়ে শোনাবে। সে তামান্নার বলা প্রতিটি লাইন বেশ মনোযোগ সহকারে শুনবে। মাঝে মাঝে প্রকৃতিতে ভেসে আসা মৃদু বাতাস তামান্নার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে মুখের ওপর আছড়ে ফেলবে। তামান্না তাতে বিরক্ত হয়ে মুখ বাঁকাবে। সেটা দেখতে পেয়ে তন্ময় মৃদু হেসে সযত্নে তার চুলগুলোকে কানের নিচে গুঁজে দেবে। এমন হাজারো স্বপ্নের জাল বুনে রেখেছিল তন্ময় মনের কৌটায়। অথচ জীবনের প্রথম প্রেমটা কেন জানি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হলেও ভুল মানুষটার সাথেই হয়ে যায়। তন্ময়ের বেলাতেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি নয়।

যেদিন তামান্নার মুখে সাদিবের সাথে বিয়ের ব্যাপারে জানতে পারে, সেদিন তাই শুরুতে সে সবটা বিশ্বাস করতে পারেনি। ছুটে গিয়েছিল তামান্নার বাসায়। তামান্নার বিয়ে হলে নিশ্চয়ই এ মুহুর্তে শ্বশুর বাড়িতে থাকবে, বাপের বাড়িতে নয়। সেদিন তামান্নার বাসার নিচে তনিমার সাথে দেখা হয়ে যায় তন্ময়ের। দেখে বোঝা যাচ্ছিল তনিমা বাহির থেকে বাসায় ফিরেছে। তন্ময়কে দেখে চিনতে পারে তনিমা। কেবল তন্ময়-ই চেনেনি তাকে। তনিমার মুখে সবটা শুনে খনিকের ব্যবধানে সব স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এতোসব কিছুর পর তন্ময়ের ভাঙা হৃদয়টাকে জোড়া লাগাতে তন্ময়ের জীবনে তনিমার আগমন ঘটে। গোপনে সবকিছুর জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তন্ময়। বর্তমানে ফিরতে তনিমার সাথে হাতের বাঁধন শক্ত হয় তন্ময়ের।
.

.
তামান্না অনেকক্ষণ যাবত হন্য হয়ে কিছু একটা খুঁজে যাচ্ছে। একবার বারান্দায় তো একবার রুমের ভেতর ছুটে যাচ্ছে। কখনো টেবিলে নিচে কখনো আবার খাটের তলায় উঁকিঝুঁকি মারছে। সাদিব চশমার ফাঁক ঘেষে সবটা নিরবে দেখে যাচ্ছে। মুখে কিচ্ছুটি বলছে না। যতক্ষণ তামান্না নিজে থেকে মুখ ফুটে বলবে না ততক্ষণ সে বুঝতেও দেবে না, যা সে খুঁজছে সেটা তার কাছেই আছে। খোঁজাখুঁজি শেষে তামান্না হাল ছেড়ে ধপ করে বসে পড়ে বিছানার এক কোণে। আজকাল অল্পতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তামান্না। হুটহাট যখন তখন আবার ঘুমিয়ে পড়ার মতো উপক্রম ঘটে। সাদিবের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে পাশ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিতে। সাদিব বোতল তুলতে গেলে দেখতে পায় সেটা খালি অবস্থায় পড়ে আছে। তামান্নার দিকে দৃষ্টি ঘেরালে দেখতে পায় সে তখনও একইভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সাদিব হাতে থাকা বইটা পাশের ল্যাম্পসেটের ওপর রাখে। হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে উঠে বসে। চশমাটা খুলে রাখে বইয়ের পাশটায়।

” বোতল তো খালি। তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি। ”

তামান্না বাঁধা দিয়ে বলে উঠে, ” থাক লাগবে না। তুমি বরং থাকো, আমি গিয়ে নিয়ে আসছি। ”

” উঠেই যখন পড়েছি তখন গিয়ে নিয়েই আসি। ”

সাদিবের হাত থেকে বোতলটা ছো মেরে নিয়ে নেয় তামান্না। ” লাগবে না একবার বলেছি তো! তোমাকে কেউ আনতে যেতে বলেছে? ”

সাদিব কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারল না। তার আগেই তামান্না সাদিবের সামনে থেকে প্রস্থান করল। আনমনে বলল, ” আজব একখান বউ কপালে জুটালে তুমি আল্লাহ্! কখন যে তার কি করতে মন চায় সে নিজেও জানে না। ”
.

.
সামিরা ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলেন। মহিলার সিরিয়ালের প্রতি বেজায় জোক। সেসময় আশেপাশে কাউকে ঘেষতে দেন না তিনি। অপরজনের কথার কারণে বিরক্ত বোধ করেন কিনা! তামান্না পানি খেতে ডাইনিং কক্ষে আসলে ড্রয়িং রুমের টিভির শব্দ কানে আসে। জানে এসময় সামিরা টিভিতে সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত থাকেন। গাঁটছড়া সিরিয়াল চলছিল টিভির পর্দায়। দেখতে মন্দ নয়। বিনা শব্দে আস্তে করে সামিরার পাশে গিয়ে বসে পড়ল তামান্না।

অতিরিক্ত প্যাচগোছের দরুণ খুব একটা সিরিয়াল দেখতে বসে না তামান্না। কিভাবে যে মানুষ এক নাগাড়ে পুরো ধারাবাহিক সিরিয়ালে সবটা দেখতে পারে, কে জানে! সে তো তার পছন্দের সিরিয়াল দেখতে বসলেও টেনে টেনে দেখে। দূর এতো ধৈর্য কার! হুট করে তার মনে পড়ে গেল আজ তো বুধবার। আজ তো তারও পছন্দের সিরিয়াল চলবে। যদিও সেটা সে টিভিতে দেখতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের সম্প্রচার করলেও পাকিস্তানি গুলোর করা হয় না। তাকে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে আরো দু’টো ঘন্টা। অন্যথায় কাল ব্যতিত দেখতে পারবে না।

” হঠাৎ অসময়ে তুমি? কিছু কি লাগবে? ” সামিরার শান্ত কণ্ঠস্বর।

” না মা, এমনি। আপনার কিছু লাগবে? ”

” লাগবে। ”

” কি? ”

” আমার ছেলেকে! ”

” ডেকে দিচ্ছি। ” বলে নিজেদের রুমের দিকে পা বাড়াতে নিলে সামিরা বললেন, ” থাক লাগবে না। কি বলতে আবার কি লাগাও। ” বিড়বিড় করে কথা শেষ করে পুনরায় পায়ের ওপর পা তুলে সিরিয়াল দেখায় মনোযোগ দিলেন।

চলবে…

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]