#মন_তুমি_ছুুয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৩
চিন্তায় অস্থির অথৈ।চিন্তা করতে করতে আজ সারাপথ হেটে হেটে এসেছে ভার্সিটিতে।অবশ্য ভার্সিটি ওদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নাহ।হেটে যেতে পনেরো মিনিট সময় লাগে।অথৈ দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে ভার্সিটিতে ঢুকল।প্রবেশ করতেই সবার সবার আগে নজর গেল বাইকে বসে থাকা আড্ডারত রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক আজ সম্পূর্ণ কালো রূপে নিজেকে রাঙিয়ে এসেছে।ব্লাক টিশার্ট, তার উপর ব্লাক শার্ট পরেছে,সাথে ব্লাক ডেনিম প্যান্ট।অনেক আকর্ষনীয় লাগছে রুদ্রিককে।কথার তালে তালে যখন হুট করে হাত দ্বারা ব্রাশ করে চুলে।ওই দৃশ্যটুকু দেখে গলা শুকিয়ে যায় অথৈয়ের।আচমকা রুদ্রিক ওর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো।এরপর ওকে চোখ টিপে দিল।অথৈ যেন হার্ড এট্যাক করে বসল এটা দেখে।দ্রুত চোখ সরিয়ে হুরমুর করে দৌড় দিয়ে তৎক্ষনাত সেই স্থান ত্যাগ করল।চরম অস’ভ্য লোকটা।কাল কি এক কান্ড ঘটিয়ে চলে গেল।অথৈয়ের স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘন্টা লেগেছে।তারপরেও রাতে ঘুমোতে পারেনি।চোখ বন্ধ করলেই শুধু রুদ্রিকের দেওয়া চুমুর দৃশ্যটুক বার বার চোখের পাতায় ভেসে উঠছিল।এভাবে কি ঘুমানো যায়?বজ্জা’ত লোক।ওকে এইভাবে ছুটতে দেখে মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসল রুদ্রিক।ওকে এইভাবে হাসতে দেখে নীল বলে উঠল,
‘ কিরে হাসছিস কেন?’
রুদ্রিক বলে,
‘ এমনি।কিছু না।তা তোরা বল।কোথায় যেন ট্যুরে যেতে চাচ্ছিস?’
জেনি সবসময়ের মতো বলল,
‘ কক্সবাজার যাই?সেখানে অনেক মজা হবে।’
সিয়াও জেনির কথায় সহমত পোষণ করল,
‘ হ্যা জেনি ঠিক বলছে।আমরা কক্সবাজার যেতে পারি।’
অনিক বিরবির করে বলে,
‘ জেনির চামচি কোথাকার।জেনি যা বলে তার সাথে সাথে শুধু মাথা নাড়ায়।জাস্ট অসহ্য।’
সিয়া ভ্রু-কুচকালো অনিককে এইভাবে বিরবির করতে দেখে।প্রশ্ন করে,
‘ আপনি কি কিছু বলছেন আমায়?’
অনিক জোড়পূর্বক হেসে বলে,
‘ আরেহ কি বলেন এসব?আপনাদের কিছু বলার সাধ্য কি আমার আছে?আমার গর্দান না কে’টে ফেলবেন? ‘
সিয়া মুখ ভেংচি কাটলো।বাতাস বইছে সেই বাতাসের তালে উড়ছে মারিয়ার চুল।নীলের বেশ ভালো লাগছে।নীল বাইকে বসে আছে আর ওর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মারিয়া।সেদিন মারিয়াকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলো ঠিকই নীল।তবে সুযোগ হাতছাড়া করেনি।রুদ্রিক,ইহান,অনিক,সাফাত ওরা মিলে সব সাঁজিয়ে গুছিয়ে রেখেছিল একটা রেস্টুরেন্ট।সেখানে নীল মারিয়াকে নিয়ে গিয়েই প্রপোজ করেছিলো।মারিয়াও এক্সেপ্ট করে নিয়েছিলো। কারন ও নিজেও তো নীলকে ভালোবাসে।তবে এর বিনিময়ে নীলের পকেট পুরো ফাঁকা করে দিয়েছিলো ওরা।ওদের প্রেম হয়ে যাওয়ার কারনে ট্রিট দিতে হয়েছিলো।নীল মারিয়ার দিকে মুচঁকি হেসে তাকিয়ে আছে।মারিয়াকে দেখছে মন ভরে।মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে বিরক্ত হচ্ছে।বাতাসে ওরা খোলা চুলগুলো বেশ বিরক্ত করছে ওকে।নীলের ভালোলাগে মারিয়াকে খোলা চুলে দেখতে।কিন্তু মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে।এইজন্যে নিজের হাতে পরে থাকা রাবার ব্যানটা দিয়ে মারিয়ার চুলগুলো খুব যত্ন সহকারে বেধে দেয়।মারিয়া প্রথমে অবাক হয়েছিলো।পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যায় মেয়েটা।আর ওর লজ্জারাঙা মুখটা নীল তৃপ্তি নিয়ে দেখে।এদিকে ওদের এমন রোমান্টিক মুহূর্ত দেখে অনিক হা হুতাশ করে উঠল,
‘ আজ সিংগেল বলে তোরা এইসব করে আমাকে এইভাবে হিংসার আগুনে ছা’রখার করে দিবি?এখানে যে আমরা কতোগুলো সিংগেল মানুষ আছি তোর চোখে পরে নাহ?’
সবাই হেসে দিল অনিকের এমন কথায়।নীল বলল,
‘ তোকে তো কেউ বলেনি হিংসের আগুনে জ্ব’লতে?তুই কেন একটা মেয়ে পটিয়ে ফেলছিস নাহ।’
‘ আরে তোর কপাল ভালো দেখে কি আমাদের কপালও এমন ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি?আমাদের মারিয়া বেশ শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে।শুধু চলাফেরা করে দুইটা অশান্ত মেয়ের সাথে।তাতে কি হয়েছে?ও ওই দুইটা থেকে আলাদা।তুই অনেক লাকি।আর সা’লা আমি প্রেম করতে গেলে আমার কপালে আসবে মেক-আপের ফ্যাক্টরি,ন্যাকার উপর পিএইচডি করা।যে কথায় কথায় খালি বলবে, বাবু খাইছ?বাবু খাইছ? জাস্ট অসহ্য,অসহ্য।আমার এমন ন্যাকা মেয়েদের একটুও পছন্দ না।তাই তো দেখিস নাই সিয়ার সাথে ব্রেক-আপ করে নিয়েছি।’
লাস্টের কথাটা বলে অনিক নিজেই হতভম্ব হয়ে যায়।কথার তালে তালে মুখ ফোসকে বলে ফেলেছে।নাহলে এভাবে ও বলতে চায়নি।এদিকে সিয়ার চোখে জল টইটুম্বুর করছে।শেষে নিজের কান্না লুকাতে না পেরে।বহু কষ্টে শুধু এটুকু বলল,
‘ জেনি,মারিয়া আমি ক্লাসে যাচ্ছি।তোরা চলে আসিস।’
সিয়া উল্টো ঘুরে দ্রুত পায়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।সিয়াকে এইভাবে যেতে দেখে সবারই মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।ইহান থমথমে মুখে বলল,
‘ ব্রেক-আপ করে ফেলেছিস ভালো কথা।তাহলে কথায় কথায় সেই বিষয় টেনে নিয়ে আসিস কেন?দেখলি তো মেয়েটা কিভাবে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।’
অনিক মাথা নিচু করে আছে।রুদ্রিক গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ তোর এভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি।তুই ব্রেক-আপ করে নিয়েছিস।এইজন্যে আমরা কেউ কিছু বলিনি।কারন এটা তোর ব্যাক্তিগত বিষয়।যেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চায়নি।তবে একটা বিষয় আমরা সবাই জানি এমনকি তুইও জানিস যে সিয়া সত্যিই তোকে ভালোবেসেছিলো।ইনফেক্ট এখনো ভালোবাসে। তুই যেসব কারনে ওর সাথে ব্রেক-আপ করেছিলি। মেয়েটা হাজারবার বলেছিল ও নিজেকে বদলে নেবে।তাও যেন তুই ওকে ছেড়ে না যাস।আমরাও বুঝিয়ে ছিলাম।কিন্তু তুই মানিস নি।মেয়েটাকে কতোটা হার্ট করে তুই ব্রেক-আপ করে দিলি।’
সাফাত রুদ্রিকের কথায় সহমত পোষণ করে বলে,
‘ রুদ্রিক একদম ঠিক বলছে অনিক।আর তাছাড়া তুই যেসব কথা বলে আজ ওকে কষ্ট দিলি।ও কি এখন তা করে?ও সেদিনের পর থেকে নিজেকে বদলে নিয়েছে।ও এখন আর আগের সিয়া নেই।ওয়েস্টার্ন বাদ দিয়ে এখন শালীন পোষাক পরে।আগে যে মেয়ে সবসময় মেক-আপের আস্তরণ মুখে মেখে থাকত।সে এখন চোখে একটুখানি কাজল আর ঠোঁটে একটু লিপজেল ছাড়া কিছুই দেয়নাহ।নিজের কথাবার্তা, চালচলন সব বদলে ফেলেছে।আর তাকেই কিনা তুই এইভাবে কথায় কথায় পুরোনো কথা তুলে কষ্ট দিস।’
মারিয়া করুণ গলায় বলে,
‘ ও তোকে এখনও অনেক ভালোবাসে ভাইয়া।মেয়েটা রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না।প্রতিটা রাত তোর জন্যে কেঁদে বালিশ ভিজায়।যার একমাত্র সাক্ষি আমি।’
অনিক সবার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল।সবার বলা প্রতিটা কথা ভীষণভাবে ওর হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে।ও যে কাকে কি বলে? কিভাবে জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না।আসলে জনাব দেওয়ার মতো কোনো ভাষা নেই ওর কাছে।তবে কি ও সত্যিই অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলল সিয়াকে?মেয়েটার মন ভেঙে দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছে ও।অনুশোচনায় হৃদয় পু’ড়ে গেল অনিকের।সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে হনহন করে হেটে চলে যায়।ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে।যারা মন থেকে বুঝতে চায়না।তাদের হাজার বুঝিয়েও লাভ নেই।তাই বাকি কেউ আর ঘাটলো না।সবটা ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিল।
_____________
এদিকে মাঠের মাঝখানে গোল হয়ে বসে আছে অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদ।অথৈ রাগি চোখে সবার দিকে তাকিয়ে।সবাই দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।অথৈ রাগি গলায় বলে উঠল,
‘ তোদের সবার মরা একসাথেই মরছিলো কালকে।আমি ফোন করে বললাম যে আমায় কাল দেখতে আসবে।আর তোদের সবগুলোর একসাথেই এক এক জায়গায় যেতে হোলো।’
পিহু কিছু বলতে নিবে অথৈ তার আগেই ওকে ধমকে উঠল,
‘ তুই তো কোনো কথাই বলবি না। তোকে কতোগুলো ফোন করেছি আমি।একটাও রিসিভ করেছিস?শেষে ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিয়েছিলি।’
পিহু মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
‘ সে তো আমি প্রিয়ান আর আহিদের উপর রাগ করে এমন করেছি।শয়তানগুলো আমাকে না জানিয়ে ঘুরতে চলে গিয়েছে।’
‘ হ্যা তাই জন্যে তুই আমার কল পিক করবি নাহ।’
পিহু কোনো জবাব দিলো নাহ।
আহিদ বলে উঠল,
‘ আরে তুই এতো রেগে আছিস কেন?দেখতেই তো এসেছে জাস্ট তোকে।বিয়েতো আর হয়ে যায়নি তাই নাহ?তোর বিয়ের সময় দেখিস আমরা একমাস আগেই তোর বাড়িতে এসে হাজির হোবো।তাছাড়া আংকেল যে তোকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না তা আমরা জানি।’
‘ হ্যা রিধি।আহিদ ঠিক বলছে।তুই এমন রাগ করছিস কেন?আর দেখতে তো আমাকেও এসেছিলো দু একবার।মেয়েরা বড়ো হলে এমন হয়ে থাকে।’ বলল রিধি।
ওদের কথায় যেন তড়তড়িয়ে অথৈয়ের রাগ বারছে।ওরা কেউ অথৈয়ের কথা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।অথৈ সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
‘ কাল শুধু দেখতে আসলে আমি রাগ করতাম না।ব্যাপারটা তোরাও জানিস।’
‘ তাহলে কেন রেগে আছিস?’
আহিদের প্রশ্নে অথৈ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।তারপর দূরে মাঠের ওইপ্রান্তে আড্ডারত রুদ্রিকের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।ঠান্ডা গলায় বলল,
‘ কারন কাল আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’
প্রিয়ান পানি খাচ্ছিলো।অথৈয়ের মুখে বিয়ের কথা শুনে ওর নাকে মুখে পানি উঠে যায়।ওর সামনে ছিলো পিহু ওর মুখের পানি সব গিয়ে পরে পিহুর উপর।এদিকে পিহু বেচার প্রিয়ানের এমন কান্ডে কোনো রিয়েকশনই দিলো নাহ।আসলে ও রিয়েকশন দিতে ভুলে গিয়েছে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওইভাবেই একে-অপরের মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করল।এরপর হুট করে সবাই একসাথে হেসে উঠল।ওদের হঠাৎ এমন হাসিতে অথৈ ভড়কে যায়।পিহুর হাসতে হাসতে চোখের কোণে জল জমে গিয়েছে।ও বহুকষ্টে হাসি থামিয়ে বলে,
‘ অথৈ দেখ এমন ফাউল মজা করিস না রে।হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা করছে।’
রিধিও হাসতে হাসতে বলে,
‘ তুই বিয়ে করে নিয়েছিস।অন্তত এটা নিয়ে আমাদের সাথে মজা করিস নাহ।আমরা আমাদের হাসি থামাতে পারছি না।’
‘ তুই আর বিয়ে। ভাই আমি শেষ।’ বলল আহিদ।
এদিকে প্রিয়ান হাসির কারনে কিছু বলতেও পারছে নাহ।
অথৈ ওদের অহেতুক হাসি দেখে উঠে দাঁড়ালো।রাগে ওর সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।ও কি একটা সিরিয়াস কথা বলল আর বেয়া’দবগুলো কিভাবে হুটোপুটি করে হাসছে।অথৈ রাগে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল,
‘ আমি সত্যি বলছি আমার কাল বিয়ে হয়ে গিয়েছে।আল্লাহ্’র কসম করে বললাম।আমি মিথ্যে বলছি না।সত্যি আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’
বলতে বলতে অথৈয়ের চোখ জলে ভড়ে উঠল।বন্ধুদের ছাড়া এইভাবে হুট করে বিয়েটা হয়ে গিয়েছে।সেটা ভাবলেই ওর কষ্টে বুক ফে’টে যায়।
এদিকে এইবার যেন ওদের চারজনের টনক নড়ল।অথৈ যে সত্যি সত্যি মিথ্যে বলছে না সেটা বিশ্বাস করল ওরা।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওরা।হঠাৎ ধরাম করে কিছু একটা পরার শব্দ হতেই ওদের হুশ আসে।কিসের শব্দ হোলো সেটা বোঝার জন্যে শব্দের উৎসের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ান মাঠের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছে।অথৈয়ের মুখে এমন একটা কথা শুনে বেচারা সহ্য করতে পারিনি।তাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।রিধি শুকনো ঢোক গিলল।ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে আহিদের কাছে দিয়ে বলে,
‘ পানি ছিটিয়ে দে ওর চোখে মুখে।জ্ঞান ফেরা ওর।’
পিহু রাগে দুঃখে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকা প্রিয়ানকে ধাক্কা মেরে বলল,
‘ এই বা*টারে মন চাইতাছে ঠাটাইয়া দুইডা থা’ব্রা মারি।এমন সিরিয়াস মুহূর্ত এইটা এমন অজ্ঞান হয় কিভাবে?’
আহিদ প্রিয়ানের চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে বলল,
‘ ও এমন ড্যাঞ্জারাস সিরিয়াস কথা শুনেই জ্ঞান হারিয়েছে পিহু।’
পানি টানি খাইয়ে প্রিয়ানের জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হোলো।ও জ্ঞান ফিরার পর ও এখনও হা করে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।বেচারার এখনও কষ্ট হচ্ছে অথৈয়ের কথাটা বিশ্বাস করতে।অতি কষ্টে বেচারা চুপ করে আছে।পিহু মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।রিতিমতো সবাই প্রচন্ড শক পেয়েছে।
এদিকে রিধি উঠে গিয়ে ধরে অথৈকে ওদের পাশে বসালো।অথৈয়ের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কিভাবে কি হোলো অথৈ?আর বিয়েটা কার সাথে হোলো?ছেলের ছবি টবি আছে?থাকলে দেখা।’
অথৈ গম্ভীর মুখে জবাব দেয়,
‘ উনাকে তোরা চিনিস।খুব ভালোভাবেই চিনিস।’
অথৈয়ের কথায় সবাই আবার একে-অপরের দিকে তাকালো।আহিদ জিজ্ঞেস করল,
‘ কে সে অথৈ?কে সে যাকে আমরা চিনি?’
অথৈ সবার দিকে একপলক তাকালো।পর পর দু তিনটা ঢোক গিলল। প্রথম কথাটাই এদের হজম করতে এতো কষ্ট হচ্ছে।তাহলে রুদ্রিকই যে ওর স্বামী সেটা শুনলে না জানি কি করবে।অথৈ কে চুপ থাকতে দেখে পিহু অধৈর্য হয়ে বলে,
‘ কি হোলো বলছিস না কেন?কে সে।’
অথৈ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর বলে উঠল,
‘ সে আর কেউ না।ইহান ভাইয়ার বেষ্টফ্রেন্ড আরিহান রুদ্রিক মির্জা।’
অথৈয়ের কথাটা বলতে দেরি।প্রিয়ানের আবার অজ্ঞান হতে দেরি নেই।বেচারা অজ্ঞান হয়ে চিটপটাং হয়ে পরে গিয়েছে।
#চলবে____________
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৪
পানি টানি খাইয়ে প্রিয়ানের জ্ঞান ফিরানো হয়েছে।বেচারা এখনও হা করে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।বাকি বন্ধুরাও প্রচন্ড ঝটকা খেয়েছে।অথৈ মাথা নিচু করে বসে আছে।একটু আগেই সম্পূর্ণ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বলেছে ও।নিরবতা প্রথমে আহিদই ভাঙলো,
‘ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।এখন আর এইভাবে মুড অফ করে বসে থাকা লাগবে না।সবটা আনএক্সপেক্টেড ছিলো।তুই নিজেও এটা জানতি না যে তোর এইভাবে হুট করে বিয়ে হয়ে যাবে।’
অথৈ করুণ চোখে তাকালো আহিদের দিকে।বলল,
‘ কিন্তু তোদের কষ্ট দিয়ে ফেললাম তো আমি।আমাদের সবার বিয়ে নিয়েই আমাদের সব বন্ধুদের অনেক এক্সপেক্টেশন আছে।সেখানে আমি এইভাবে হুট করে বিয়ে করে তোদের সব আশায় পানি ঢেলে দিয়েছি।’
রিধি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অথৈকে বলল,
‘ আমরা কেউ কষ্ট পায়নি অথৈ।কষ্ট পেতাম কখন জানিস?যখন বিষয়টা এমন হতো যে তুই ইচ্ছে করে আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস।তাহলে রাগ করতাম মানে।প্রচুর রাগ করতাম। কিন্তু এখন ঘটনা উল্টো।তোর যে গতকাল বিয়ে হবে সেটা তো তুই নিজেই জানতি।এখানে আমরা আর কি করব?তাছাড়া বিষয়টা যে একেবারেই আমাদের জানাস নি এমন না কিন্তু।তুই তো আমাদের ফোন করে জানিয়ে ছিলিস যে তোকে কাল দেখতে আসবে।আর এর পরের ঘটনা সম্পূর্ণ তোর অজানা ছিলো।তাই আমরা কেউ কষ্ট পায়নি।’
অথৈ ঠোঁট হাসি ফুটে উঠল,
‘ সত্যি বলছিস?’
‘ একশ পার্সেন্ট।’
পিহু হেসে বলে উঠল,
‘ আর তাছাড়া আমাদের আশায় পানি ঢেলে দিয়েছিস সেটা তোকে কে বলল?তোর মাত্র বিয়ে হয়েছে।কিন্তু রুদ্রিক ভাইয়ারা তো আর তোকে এখনও উঠিয়ে নেয়নি।সেটার অনেক দেরি আছে এখনও।তখন তো নিশ্চয়ই ঢাকঢোল পিটিয়েই তোকে বউ বানিয়ে নিয়ে যাবে।তখন আমরা জম্পেশ মজা করব।একদম আহিদের কথা মতো একমাস আগে থেকেই তোর বাড়িতে এসে পরব।এখন বল আমরা কেন শুধু শুধু মন খারাপ করব?’
পিহুর কথায় অথৈ,রিধি,আহিদ হেসে দিলো।কিন্তু হঠাৎ ওদের সবার নজর প্রিয়ানের দিকে যায়।ও বেচারা এখনও একইভাবে বসে আছে।আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।এইবার যেন রাগ উঠে গেল অথৈয়ের।আশ্চর্য! ওর এমন ব্যবহারের মানে কি?অথৈ উঠে গিয়ে মারল একধাক্কা প্রিয়ানকে।ধাক্কা খেয়ে প্রিয়ান মাঠে পরে গেল।এইবার যেন হুশ আসল প্রিয়ানের।মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠে বলে,
‘ ও মা গো! কোমড়টা আমার মনে হয় ভেঙেই ফেলেছে।’
‘ বেশ করেছি।তুই ওমন আহাম্মকের মতো তাকিয়েছিলিস কেন?’
‘ তো আমি কি করব?তুই যেই শক দিয়েছিস।সেটা আমার হজম করতে সময় লাগবে নাহ?এখন আমাকে ধরে উঠা প্লিজ।’
অথৈ হাত বাড়িয়ে দিলো প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান অথৈয়ের হাত ধরে শয়তা’নি হাসি দিলো।তারপর অথৈকেও টেনে মাঠের মধ্যে ফেলে দিলো।প্রিয়ান উঠে বসল তারপর হু হা করে হেসে দিলো অথৈয়ের অবস্থা দেখে।এদিকে অথৈ দ্রুত উঠে বসল।তারপর রেগেমেগে তাকাল প্রিয়ানের দিকে।দাঁত খিচে বলল,
‘ প্রিয়ানের বাচ্চা তোকে আজ আমি খু’ন করে ফেলব।তুই শুধু দারা।’
অথৈয়ের মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়ান উঠে দৌড় লাগালো।যেতে যেতে বলে,
‘ আমি শুধু প্রিয়ান।কারন প্রিয়ানের এখনও বাচ্চা হয়নি।’
‘ তুই শুধু দারা হা’**! তোকে যদি আমি মে’রে আলুভর্তা না বানাই।’
প্রিয়ান ছুটছে পিছে পিছে ছুটছে অথৈ।এদিকে রিধি,পিহু আর আহিদ হাসতে হাসতে শেষ।অনেক কষ্টে প্রিয়ানকে ধরতে পারল অথৈ।অতঃপর প্রিয়ানের পিঠে অথৈয়ের হাতের কয়েকটা কিল পরল।
______________
এদিকে রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল, মারিয়া,জেনি ওরা সবাই অথৈ আর প্রিয়ানের এমন ছোটাছুটি দেখছিল।রুদ্রিকের বেশ ভালোই লাগে অথৈয়ের এমন বন্ধুদের সাথে বাচ্চামো করতে দেখতে।এই কঠোর,রাগি মেয়েটা বন্ধুদের কাছে এলেই একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়।রুদ্রিকের মনটা বেশ হালকা লাগছে অথৈকে হাসিখুশি দেখতে।ওর মনটা খারাপ ছিলো।শুধু ভেবেছিলো মেয়েটাকে বেশি চাপ দিয়ে ফেলল না তো বিয়ের জন্যে?যে ও পরিবারের চাপে পরে বিয়ে করে নিয়েছে।কিন্তু এখন অথৈকে হাসিখুশি দেখে সেই মন খারাপটা নিমিষেই উড়ে গিয়েছে।আর তাছাড়া যতোই হোক রুদ্রিক অথৈকে ছাড়তে পারবে না। কখনই পারবে না।অথৈকে ভালোবাসে ও।প্রচন্ড রকম ভালোবাসে অথৈকে।আর এখন তো নিজের নামে করে নিয়েছে।শুধু অপেক্ষা নিজের ভালোবাসা দিয়ে অথৈর মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করা।রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠল।
‘ ইহান তোর বোনটা একদম পুরাই বাচ্চা।দেখ বাচ্চাদের মতো কেমন করছে।অনেক কিউট লাগছে দেখতে।’ হঠাৎ সাফাত বলে উঠল।
সাফাতের কথাগুলো রুদ্রিকের কানে গিয়ে পৌছাতেই রুদ্রিকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।রাগে হাতদুটো মুঠো করে নিলো।ইহান ভয়ার্ত চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকিয়ে।রুদ্রিকের যেই রাগ।না জানি রাগের কারনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সাফাতকে ঘু’ষি টুষি মে’রে না বসে।তাহলে ক্যালেংকারি হয়ে যাবে।বন্ধুত্বের মাঝে ফাটল ধরে যাবে।যেটা ইহান কখনও চায়না।তবে ও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও চায়না।রুদ্রিকের উপর সবটা ছেড়ে দিয়েছে।ও এটাও জানে রুদ্রিক এমন কিছুই করবে না যাতে ওদের বন্ধুত্বের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়।
এদিকে জেনি সাফাতের কথা শুনে বলল,
‘ এটাকে কোন এংগেলে তোর কিউট মনে হচ্ছে।সরি টু স্যে ইহান। বাট তোর বোনকে পুরো ইডিয়টদের মতো লাগছে।এতো বড়ো হয়েও কেউ এমন করে নাকি?’
ইহান রাগি চোখে তাকালো জেনির দিকে।দাঁত চিবিয়ে বলে,
‘ মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ জেনি।আর কি বললি আমার বোনকে ইডিয়টদের মতো লাগছে?বন্ধুদের সাথে হাসি,ঠাট্টা,আনন্দে মেতে থাকবে সবাই এটাই তো স্বাভাবিক তাই নাহ? নাকি তোর মানে বন্ধুত্ব এটা যে সারাদিন কার বয়ফ্রেন্ড কি করল?কার বয়ফ্রেন্ড কাকে কি গিফট করল?কে কার সাথে রুমডেট করল এইসব নিয়ে গোসিপ করা।এইসব করলেই ভালো তাই নাহ?তবে তুই ভুল।সাবধান করে দিলাম আর কোনোদিন আমার বোন সম্পর্কে এসব বলার আগে দশবার ভাববি।আর তুই আমার বন্ধু দেখে বেঁচে গেলি।আমার জায়গায় অথৈ হলে তোক এক থাপ্প’ড় দিয়ে বেহুশ করে ফেলত।’
‘ ইহান তুই তোর স্টুপিট বোনটার জন্যে আমাকে বলতে পারলি?’
রুদ্রিক এইবার রাগিস্বরে বলে উঠল,
‘ কে স্টুপিট সেটা সময়েই বলে দিবে।আর তাছাড়া তুই ইহানের বোনের সম্পর্কে কতোটুক জানিস?যে তাকে নিয়ে এইভাবে কটুক্তি করলি?ম্যানার্স শিখে নিস জেনি।আর না পারলে আমার কাছে আসিস।তোকে এমন স্পেশাল ক্লাস করে ম্যানার্স শিখিয়ে দিব।যে তুই তা আর জীবনেও ভুলতে পারবি না।’
লাস্ট কথাগুলো দাঁতেদাঁত চেপে বলল রুদ্রিক।এদিকে জেনি ন্যাকাস্বরে বলে উঠল,
‘ তুমিও আমার সাথে এমন করলে?আমি আম্মুর কাছে বলে দিবো দেখো।আমাকে এইভাবে সবার সামনে তুমি ধমকিয়েছ।’
‘ জাস্ট গো না?তুই মনে করিস তোর এই সস্তা থ্রেডে আরিহান রুদ্রিক মির্জা ভয় পেয়ে যাবে?যা ফুপির কাছে গিয়ে বিচার দে গিয়ে। পারলে আরও দু চারটা মিথ্যে বানিয়ে বলিস।’
রুদ্রিকের ধমকে জেনি ন্যাকা কান্নাজুড়ে দিল।রুদ্রিক এইবার জোড়ে ধমক দিলে ও সেখান থেকে চলে যায়।রুদ্রিক মাথার পিছনে হাত দিয়ে চুল খামছে ধরল।তারপর করুণ স্বরে ইহানকে বলল,
‘ সরি ইয়ার।তুই রাগ করিস না।আসলে ফুপির কারনে ওকে কিছু বলতে পারি না।বুঝিসই তো তাদের একমাত্র মেয়ে।কিছু বললে ও গিয়ে ফুপির কাছে বলে।আর ফুপি বাড়িতে এসে হইহুল্লোড় করে বাবা আর দাদুর মাথা খেয়ে ফেলে।এই কারনে ওকে কিছু বলি না আমি।’
ইহান মৃদ্যু হেসে বলে উঠল,
‘ ইটস ওকে।তুই যে অথৈয়ের সাপোর্টে এতোটুক বলেছিস এতেই আমি খুশি।আর বাকিটা আমি বুঝি।’
‘ ভুলে যাস না এখন এটা আমার দায়িত্ব।’
ইহান হেসে মাথা দুলালো।এদিকে রুদ্রিকের কথা শুনে সাফাত ভ্রু-কুচকে বলল,
‘ তোর দায়িত্ব মানে?কিসের দায়িত্বের কথা বলছিস?’
রুদ্রিক শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সাফাতের দিকে।শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ জেনি যেহেতু আমার কাজিন।আর ও অন্যায় করেছে এভাবে ইহানের বোনকে কটুক্তি করে।আর ইহান আমার বন্ধু।সেই হিসেবে প্রতিবাদ করাটা আমার দায়িত্ব।আর বাকিটা সময় হলেই বুঝবি। এখন আর কথা প্যাচিয়ে লাভ নেই।ক্লাসে যেতে হবে।’
কেউ আর বেশি ঘাটাঘাটি করল না।রুদ্রিকের কথা সবাই একে একে ক্লাসের দিকে চলে গেল।ইহান যেতে নিয়েও থেমে গেল।রুদ্রিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
‘ তুই যাবি নাহ?’
‘ আসছি তুই যা।’
‘ আচ্ছা,জলদি আসিস।’
‘হুঁ!’
ইহান চলে যেতেই রুদ্রিক মোবাইল বের করে একটা মেসেজ লিখল তারপর সেন্ড করে দিল একটা নাম্বারে।পর পর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।এরপর দ্রুত পায়ে ক্লাসের দিকে চলে গেল।
#চলবে_______________
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৫
ভার্সিটির বড় মেহগনি গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে পিহু একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।বেশ হেসে হেসেই কথা বলছে।মাত্রই ভার্সিটিতে এসে পৌছেছে প্রিয়ান।দূর থেকে পিহু একটা ছেলের সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেল।এইভাবে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলার কি আছে?কই তার সাথে তো কোনোদিন এইভাবে কথা বলেনি?ওর সাথে পারে শুধু খিটখিট করতে।প্রিয়ান রাগে হনহনিয়ে হাটা ধরল।একেবারে পিহুর সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াল।কথা বলায় ব্যস্ত পিহু হঠাৎ সম্মুখে এসে কাউকে দাঁড়াতে দেখে কথা বলা থামিয়ে দিল।নজর সেদিকে নিতেই প্রিয়ানকে দেখে ওর ভ্রু-জোড়া কুচকে গেল।পরপর আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিল।প্রিয়ানকে এমনভাবে ইগনোর করল যেন এখানে প্রিয়ানের কোনো অস্তিত্বই নেই।এতে যেন প্রিয়ানের রাগের মাত্র আরোও দ্বিগুন হোলো।পাশের ছেলেটাকে বিশাল ধমক ছুড়ে বলল,
‘ গেট লস্ট।এক সেকেন্ডের মধ্যে এখান থেকে গায়েব হবে।নয়তো ফলাফল অনেক খারাপ হবে।’
ছেলেটা প্রিয়ানের এমন ধমকে কেঁপে উঠল।ভয়ে পরিমরি করে এক সেকেন্ডের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেল।এদিকে প্রিয়ানের কান্ডে রাগ হোলো পিহুর।ও প্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বিরক্তিভরা কণ্ঠে বলল,
‘ কি সমস্যা তোর?সবসময় আমার সাথে কেন লাগতে আসিস?শান্তি দিবি না আমাকে?এতো জ্বালাস কেন?’
প্রিয়ান ওর ভয়ং’কর রকম লাল হওয়া চক্ষুদ্বয় নিক্ষিপ্ত করল পিহুর দিকে।প্রিয়ানের এমন দৃষ্টিতে ঘাবড়ে গেল পিহু।প্রিয়ান অত্যন্ত চঞ্চল স্বভাবের একটা ছেলে।সর্বদা হাসিখুশি থাকতে সে পছন্দ করে।তাই ওকে রাগান্বিত অবস্থায় খুব কম দেখা যায়।আর আজ প্রিয়ানকে এইভাবে রেগে তাকাতে দেখে পিহুর ভয় লাগছে।নিজের ভয়টাকে কোনোমতে নিজের মাঝে দমিয়ে রাখল পিহু।প্রিয়ানের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ কি হোলো তোর?এইভাবে তাকাচ্ছিস কেন?’
খপ করে পিহুর হাতটা চেপে ধরল প্রিয়ান।ভড়কে গেল পিহু।প্রিয়ান প্রচন্ড জোড়ে চাপ প্রয়োগ করে ওর হাতটা ধরেছে।ফলে অনেক ব্যথা অনুভব করছে পিহু।ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ওর চোখের কোণে জল চলে এসেছে।পিহু কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
‘ কি করছিস প্রিয়ান?আমার ব্যথা লাগছে।’
প্রিয়ান আরেকটু সম্মুখে এগিয়ে গেল পিহুর।দাঁত খিচিয়ে বলল,
‘ আর আমার বুকে যেই ব্যথা লেগেছে সেটা?সেই ব্যথা কিভাবে সারাবি?’
পিহু প্রিয়ানের এহেন কথাবার্তায় প্রচন্ড অবাক হচ্ছে।এটা সম্পূর্ণ অন্য প্রিয়ান।যাকে আজ প্রথম দেখছে পিহু।প্রিয়ান পিহুর হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে ওকে টেনে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসল।দুজনের মাঝে ইঞ্চিখানিক দূরুত্ব।পিহুর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ প্রিয়ানের সান্নিধ্যে এসে।প্রিয়ান পিহুর কানের কাছে মুখ নামিয়ে নিলো।প্রিয়ানের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পিহু ঘাড়ে এসে বারি খেতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় পিহু।প্রিয়ান শক্ত গলায় বলে উঠল,
‘ অনেক কষ্টে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে আছি।আমার রাগ তুই সামলাতে পারবি না।তাই তোর ভালোর জন্যেই বলছি।আমি ছাড়া আর অন্য কোনো ছেলের সাথে যেন তোকে কথা বলতে না দেখি।আমার কথার খেলাফ করলে একদম জানে মে’রে ফেলব।কথাটা মাথায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে নিস।’
কথাটা শেষ করে পিহুকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে সেই স্থান ত্যাগ করল প্রিয়ান।প্রিয়ানের যাওয়ার পথের দিকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো পিহু।একটু আগের প্রিয়ানের কান্ডে প্রচন্ড রকম ঝটকা খেয়েছে সে। আপাততো ওর মস্তিষ্ক সবকিছুর হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।
_______________
শুভ্র জামায় পরিহিত নিশ্চুপ সিয়াকে আজ অন্যরকম লাগছে।মেয়েটার চোখেমুখে বিষাদের ছায়া।চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে ফুলে আছে।মনে হচ্ছে যেন কাল সারা রাত মেয়েটা একটুও ঘুমায়নি।এলোমেলো চুলগুলো কোনোরকম একটা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকানো।মুখে সামান্য একটু সাজসজ্জার ছোঁয়া নেই।আজ যেন মনে হচ্ছে সিয়া নিজেকে একটু বেশিই অবহেলা করেছে।তবুও যেন মেয়েটার মলিন মুখশ্রী জুড়ে মায়া উপচে পরছে।বাইকের উপর বসা অনিক অপলক চোখে সিয়াকে দেখে এইসবে মনে মনে ভাবছিলো।আচ্ছা?কাল কি মেয়েটাকে অনেক বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও?নয়তো এতো নিশ্চুপ তো সিয়া একেবারেই থাকে না।আজ এখানে আসার পর মেয়েটা টু শব্দ অব্দি করেনি।কেমন যেন নিষ্প্রাণ চোখে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।অনিকের ভীতরটা হাশফাশ করতে লাগল।বুকের বা পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে সে।সিয়ার সাথে একটুখানি কথা বলার তীব্র ইচ্ছা জাগ্রত হোলো মনে।কিন্তু কিভাবে কথা বলবে?সিয়া কি এখন আর ওর সাথে কথা বলবে?ও যেই ব্যবহার করেছে মেয়েটা তো এখন ওকে ঘৃ’না করে।ঘৃ’না করাটাই তো স্বাভাবিক তাই নাহ?
‘ তুই যে সিয়াকে ভালোবাসিস এটা মেনে নে।নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস।মেয়েটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস।’
আকষ্মিকভাবে ইহানের কথায় অনিক চমকে তাকায় ইহানের দিকে।ইহান মৃদ্য হাসলো ফের বলল,
‘ একবার সিয়াকে ভালোভাবে পরখ করে দেখে নে।গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ কর মেয়েটা তোর জন্যে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছে।তোর দেওয়া আঘাতে সিয়া আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।দেখবি এইভাবেই মেয়েটা একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে।তখন কিন্তু চাইলেই আর সিয়াকে পাবি না।তাই বলছি সময় থাকতে নিজের ভুলটা সুধরে নে।’
ইহানের কথায় বুক কাঁপছে অনিকের।সিয়ার কিছু হয়ে যাবে ভাবলেই দমটা বন্ধ হয়ে আসছে।তবে কি ইহানের কথাই ঠিক?ও কি সত্যিই ভালোবাসে সিয়াকে?মনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে অনিক দিশেহারা হয়ে পরল।পলক ঝাপ্টে তাকাল সিয়ার দিকে।সাথে সাথেই যেন অনিকের দিশেহারা মনটা নিজ সুখের ঠিকানা পেয়ে গেল।সিয়ার দিকে তাকালেই অনিক শান্তি অনুভব করে।ইচ্ছে করে সারাটা দিন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতে।এইগুলো যদি ভালোবাসা হয় তবে অনিক সত্যি সিয়াকে ভালোবাসে।নাহ,এভাবে আর না।সিয়াকে আর কষ্ট পেতে দিবে না অনিক।জলদি সিয়াকে মনের কথা বলে ওকে নিজের মনের মাঝে লুকিয়ে রাখবে।অনিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ থ্যাংক্স দোস্ত।মনের খেই হারানো এই আমিকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়ার জন্যে।’
ইহান প্রতিত্তোরে শুধু মুঁচকি হাসল।
______________
ক্লাসে মন বসছে না অথৈয়ের।বার বার শুধু রুদ্রিকের দেওয়া মেসেজটার কথা মনে পরে যাচ্ছে।নিজেকে কিছুতেই শান্ত রাখতে পারছে না অথৈ।মনে মনে আবারও কালকের ঘটনা স্মরণ করল ও।কাল যখন কাল যখন ক্লাসে যাচ্ছিলো এমন সময় ওর মোবাইলে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসে।সচরাচর এমনটা ওর সাথে হয় না।ওতোটা ভাবল না অথৈ। চট করে মেসেজটা ওপন করল। সেখানে লিখা।
~`প্রিপেয়ার ইউরসেল্ফ পারফেক্টলি।আজকে তোমায় ছাড় দিয়েছি।কারন কাল আকস্মিকভাবে আমাদের বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় তুমি একটু ঘাবড়ে ছিলে।তাই ধাক্কাটা সামলে উঠার জন্যে আজকের দিন মাফ।তবে এটা ভেবো না যে প্রতিদিন ছাড় দিবো।প্রিপেয়ার ইউরসেল্ফ ফোর আরিহান রুদ্রিক মির্জা’স পানিশমেন্ট মিসেস আরিহান রুদ্রিক মির্জা।——— ইউর হাজবেন্ট।`
গতকালকের এই লিখাগুলো পড়ে ঠিক কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারিনি অথৈ।তবে রুদ্রিকের লিখা মিসেস আরিহান রুদ্রিক মির্জা লিখাটায় চোখ আটকে গিয়েছিল একদম।ভালোলাগায় মনটা ছেঁয়ে গিয়েছিল।সে রুদ্রিকের বউ।সত্যিই তো?কিভাবে কিভাবে বিয়ের দুটো দিন কেটে গেল বুঝতেই পারেনি অথৈ। রুদ্রিকও এই দুদিনে ওর সামনে অব্দি আসেনি।সেটা যে ওকে একটু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আসার জন্যে করেছে তা বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে অথৈ। না অথৈ আত লুকোচুরি খেলবে না।রুদ্রিক তো ওর স্বামি।ওর সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে।অথৈ এখন মনে প্রাণে শপথ করে নিলো রুদ্রিক আর ওর মাঝের সম্পর্কটাকে আর পাঁচটা স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কের ন্যায় স্বাভাবিক করে তুলবে।আর সেটা এইভাবে দূরে দূরে থাকলে কোনোভাবেই হবে না।যতো দুজন দুজনার কাছাকাছি থাকবে,একান্তে সময় কাটাবে তবেই না অনুভুতিরা এসে হানা দিবে মনের দুয়ারে।অথৈ আর ঘাবড়ালো না।নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো রুদ্রিকের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে উঠাত জন্য।তাই ক্লাস শেষে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিলো অথৈ। সময় প্রথমে অথৈয়ের বেশ মজা উড়িয়েছে।হাসিঠাট্টা শেষে অথৈ বন্ধুদের কাছে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করল।সবাই অথৈয়ের কথা শুনে বেশ খুশি হোলো।যাক,মেয়েটা তবে বুঝতে শিখেছে সম্পর্কের গুরুত্ব।অথৈ ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।রুদ্রিক ওকে তৈরি থাকতে তো বলেছে।কিন্তু ও এখন যাবেটা কোথায়?এই লোক কোথায় আছে কে জানে?ও কি একটাবার রুদ্রিককে মেসেজ করবে?মেসেজ করে জিজ্ঞেস করে নিবে সে কোথায়?অথৈ ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে রুদ্রিককে মেসেজ লিখতে ব্যস্ত হয়ে গেল।সম্পূর্ণ ধ্যান মোবাইলে থাকায় সামনের কিছুই খেয়াল নেই অথৈয়ের।আকস্মিক কারো সাথে প্রচন্ড জোড়ে ওর বাহুতে ধাক্কা লাগল।হাত থেকে ফোনটা ছিটকে পরে গেল অথৈয়ের।সাথে সাথে ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল।ব্যথায় চোখে পানি এসে পরেছে।ব্যথাযুক্ত স্থানে নিজের হাতের দ্বারা ঢলতে লাগল অথৈ। নিজেকে শক্ত রাখল অথৈ। সামান্য ব্যথায় ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করার মতো মেয়ে অথৈ না।নিজেকে সামলে নিলো ও।এখানে সম্পূর্ণ দোষ ওর নিজের।তাই অযথা ঝামেলা করার প্রশ্নই আসে না।অথৈয়ের ভাবনার মাঝেই সেই ব্যক্তিটি ঘাসের উপর পরে থাকা অথৈয়ের মোবাইল ফোনটা উঠিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিল।বলল,
‘ আ’ম এক্সট্রেমলি সরি মিস।আমি ইচ্ছে করে ধাক্কাটা দেয়নি।’
অথৈ তাকিয়ে দেখল একটা ছেলে হাসি মুখে ওর দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে আছে।ছেলেটার পিছনে আরও দু চারজন ছেলে।হয়তো বন্ধুবান্ধব হবে।ছেলেটার বয়স বেশি না। এই রুদ্রিকের মতোই হবে।ফর্সা মুখশ্রী,লম্বা, চওড়া দেখতে বেশ ভালোই।তবে এতে অথৈয়ের কিছু যায় আসে না।ও ছেলেটার হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে নিল।ভদ্রভাবে বলে উঠল,
‘ আপনাকে সরি বলতে হবে না।এখানে সসম্পূর্ণ দোষটা আমার।আমিই মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাটছিলাম।তাই আমিই ক্ষমা চাচ্ছি আপনার থেকে।আই এম সরি।’
ছেলেটা মুঁচকি হেসে বলল,
‘ ইট্স ওকে মিস।সুন্দরীদের একশটা ভুল অনায়াসে মাফ করা যায়।কি ঠিক বললাম তো মিস?’
অথৈয়ের কথাটা পছন্দ হলো না মোটেও।তবুও জোড়পূর্বক হেসে বলল,
‘ ভুল করলে তাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। তবে যদি সেটা হয় ইচ্ছাকৃত।অনিচ্ছাকৃতভাবে করলে তাকে ক্ষমা করা যায়।কিন্তু সেটা একবার,দুবার,তিনবার।চতুর্থবারের সময় সেই ভুলের ক্ষমা আর হয় না।এখন আসি।আর হ্যা একটা কথা মিস না মিসেস।’
ছেলেটা অথৈয়ের লাস্ট বাক্যটায় অবাক হোলো।অথৈয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে।এদিকে অথৈ দু পা বাড়াতেই হঠাৎ একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।এভাবে সামনে আসায় অথৈ বেশ বিরক্ত হোলো। ও ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে। ছেলেটা তা বিন্দুমাত্র আমলে নিলো না।দু ঠোঁট প্রসারিত করে চওড়া হাসি দিয়ে বলল,
‘ ভাবি আমার সাথে আসুন।ভাই আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে।’
অথৈয়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না ছেলেটা কোন ভাইয়ের কথা বলছে।তাই চুপচাপ ছেলেটার পিছুপিছু পা বাড়ালো।
এদিকে অথৈয়ের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকা সেই ছেলেটি হঠাৎ নিজের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটা ছেলেকে বলে উঠে,
‘ মেয়েটার সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমার চাই।আর ওইযে যেই ছেলেটা আসল।যতোদূর জানি ওটা রিফাত।এই রিফাত তো একজনকেই ভাই ভাই করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।সবকিছুর তথ্য নিয়ে আসবি।আই ওয়ান্টস টু নো এব্রি ইঞ্চ এবাউট হার।’
‘ হয়ে যাবে তুই যা বলছিস রিয়ান।’
রিয়ান নামক ছেলেটা এখনও তীক্ষ্ণ চোখে অথৈয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে একইভাবে।
#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।।