#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫০
সিয়া মুখে হাত চিপে কাঁদছে।আর অনিক দূর্বল নয়নে তার প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে আছে।সিয়ার কান্নারত মুখখানা আর হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করছে।মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন?অনিকের খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যে,সিয়া তুই কাঁদিস না।আমি একদম ঠিক আছি।
কিন্তু চাইলেও বলতে পারছে না।কারন সে তো কথা বলতে পারছে না।অনিক অনেক কষ্টে হাতের ইশারায় সিয়াকে ওর কাছে যেতে বলল।চোখে তার আকুলতা ভড়পুর।অনিকের ইশারা পেতেই সিয়া গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় অনিকের দিকে।টুলটা টেনে বসে পরল সেখানে।অনিক চোখের ইশারায় ওকে কাঁদতে বারন করল।সিয়া অনিকের হাতটা স্পর্শ করল।ধুকড়ে কেঁদে উঠে বলে,’ কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিলে?তোমার ভালোর জন্যেই তো আমি সরে গিয়েছিলাম।তবে আজ কেন তোমার এই অবস্থা অনিক।আমি সহ্য করতে পারছি না।’
অনিকের কষ্ট হলেও হাতটা উঠিয়ে সিয়ার চোখের পানি মুছে দিলো।চোখের ইশারায় বুঝালো যে ও ঠিক আছে।
সিয়া ভেজা কণ্ঠে বলে,’ বেশি প্রেসার নিও না।তোমার এখন রেস্টের প্রয়োজন।এখন ঘুমাও।’
অনিকের বেশ ভালো লাগছে।সেই আগের মতো সিয়ার মুখে ওকে তুমি করে ডাকাটা।এই ডাকটা বড্ড মিস করছিলো অনিক।তবে কি সিয়া ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে?মেনে নিয়েছে ওকে?অনিক অস্থির হয়ে উঠল।প্রশ্ন করতে চাইলো অনেক কিছু।কিন্তু পারলো না।এর মধ্যেই ডাক্তার আসল।অনিককে মেডিসিন দিবে।আর ঘুমের ইঞ্জেকশন দিবে।ঘুমালে অনিক দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।সিয়া উঠে দাঁড়ালো।যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালে অনিক সিয়ার হাত ধরে আটকে দেয়।সিয়া পিছনে ফিরে তাকায় অনিকের দিকে।অনিকের ব্যাকুলতা বুঝতে পারে।হালকা হেসে বলে,’ কোথাও যাবো না আমি আর।কোনোদিন যাবো না।এখানেই আছি,আর সারাজীবন থাকব।তুমি ঘুমাও।নিশ্চিন্তে ঘুমাও।’
অনিক যেন খুশিতে ফেটে পরল।সিয়ার এইটুকু কথাতেই যেন ওর সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো।সিয়া অনিককে শান্ত করে বাহিরে চলে গেলো।আর ডাক্তার অনিককে চেক-আপ করতে লাগল।ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অনিক ঘুমিয়ে গেলো।আজ যেন বহুদিন পর শান্তির ঘুম দিচ্ছে অনিক।আরামের ঘুম।
_____________
রাত অনেক হয়ে গিয়েছে।চেয়ারে বসে বসে ঢুলছে অথৈ।রুদ্রিক আর ইহান নিচে গিয়েছিলো খাবার আনতে।সবাই তো না খাওয়া।এসে অথৈয়ের এই অবস্থা দেখে ইহান রুদ্রিকের হাত থেকে দুটো খাবারের প্যাকেট বাদে সব খাবারগুলো নিয়ে বলে,’ তুই ওর কাছে যা।আমি সবাইকে খাবার দিচ্ছি।’
রুদ্রিক সম্মতি দিয়ে এগিয়ে গেলো অথৈয়ের কাছে।অথৈয়ের পাশে বসে পরল।রুদ্রিকের অস্তিত্ব টের পেতেই সজাগ হয়ে সোজা হয়ে বসে অথৈ। আলতো হেসে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,’ এসেছেন।’
অথৈয়ের কপালে কিছু ছোটো ছোটো চুল এলোমেলো হয়ে আছে।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের চুলগুলো গুছিয়ে ওর কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলে,’ হুম।তোমার ঘুম পাচ্ছে?’
অথৈ মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ মিথ্যে বলছ কেন?একটু আগেই তো দেখলাম ঘুমে ঢুলছ।’
‘ ও তো এমনিই।’
‘ হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবে না।খাবার এনেছি।নেও খেয়ে নেও।’
‘ আপনি খাবেন না?’
‘ হ্যা আমিও খাব।’
রুদ্রিক অথৈয়ের হাতে খাবারের প্যাকেটটা খুলে তারপর দিলো।বিরিয়ানি এনেছে ওরা।অথৈ আর রুদ্রিক খাবারটুকু খেয়ে নিলো। খাবারের পালা শেষ হলে রুদ্রিক বলে,’ চলো যাওয়া যাক। ‘
অবাক হয়ে অথৈ বলে,’ কোথায় যাবো?’
‘ কেন বাড়ি যাবে না?নাকি এখানেই থাকার প্লানিং আছে?’
‘ না মানে।আপনিও তো থাকবেন।’
‘ অথৈ তুমি ছোটো না।আমি থাকা আর তুমি থাকা এক না।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসব।এভাবে হাসপাতালে থাকা ঠিক না।’
গম্ভীর কণ্ঠে বলল রুদ্রিক।অথৈ আর কথা বাড়ালো না।সে জানে রুদ্রিক যা বলছে ঠিক বলছে।তবে হালকা অভিমান করল।এভাবে বলার কি আছে?সুন্দর ভাবেও তো বলা যেতো।অথৈ উঠে দাঁড়ালো।পা বাড়াবে তার আগেই রুদ্রিক অথৈয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে আগলে নিলো নিজের হাতের মাঝে।তারপর এগিয়ে গেলো বাকিদের কাছে।রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে,’ কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল দিস।আমি ওকে বাড়িতে পৌছি দিয়েই ফিরে আসছি।আর নীল তুই কি মারিয়াকে দিয়ে আসবি?নাকি ও আমার সাথে যাবে?’
নীল বলে,’ সমস্যা নেই তুই যা।আমিও মারিয়াকে এখনই বের হব।ওকেও বাসায় পৌছে দিবো।’
মারিয়া এতে সহমত হতে পারল না। ও বলে,’ সিয়া এখানে একা একটা মেয়ে কিভাবে থাকবে?কোনো দরকারও তো হতে পারে তাই নাহ?আমি যাবো না।’
সবাই কথাটা যুক্তি সংযত মনে করল।আসলেই এতোগুলো ছেলের মাঝে একা সিয়া থাকবে।সিয়ারও তো কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা হতে পারে।তখন ও কার কাছে বলবে?মারিয়ার যুক্তির কাছে সবাই হার মেনে মারিয়াকে এখানে থাকতে দেওয়া হলো।এতোগুলো মানুষ থাকার দরকার নেই।কিন্তু কেউ যেতে চাইছে না।রুদ্রিক,ইহান,নীল,সাফাত,সিয়া আর মারিয়া।ছ’জন সবাই থাকবে।কেউ আর জোড়াজুড়ি করল না।রুদ্রিক কথাবার্তা শেষ করে অথৈকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসল।অথৈ রুদ্রিকের হাত ধরে মাথা নিচু করে ওর সাথে সাথে হাটছে।অথৈকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে বসল রুদ্রিক।আঁড়চোখে অথৈয়ের দিকে তাকালো।তার মনপাখি যে অভিমান করে আছে তা বেশ বুঝতে পারল। কিন্তু তবুও কিছু বলল না রুদ্রিক।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো।পথে কোনো কথা হলো না ওদের মাঝে।এতে যেন অথৈয়ের অভিমান আরও গাঢ় হয়েছে।লোকটা এতো খারাপ কেন?একটাবার ওর দিকে তাকালও না।ও যে অভিমান করে আছে তা কি লোকটা বুঝতে পারছে না?মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো অথৈ। গাড়িটা অথৈয়ের বাড়ির সামনে থামতেই অথৈ নিজের সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামার প্রস্তুতি নিলো।যেই না গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তার আগেই রুদ্রিক ওর বাহু আঁকড়ে ধরে অথৈকে টান দিলো।আকস্মিক টানে অথৈ হুমড়ি খেয়ে পরে রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক সাথে সাথে দুহাতে অথৈয়ের কোমড় পেচিয়ে ধরে।একদম শক্ত করে নিজের সাথে বক্ষস্থলে আগলে নেয়।অথৈ ছটফটিয়ে উঠে।ছাড়া পেতে চায় রুদ্রিকের কাছ থেকে।ওর এমন মোচড়ামুচড়ি দেখে রুদ্রিক আরও শক্ত করে ধরে।শেষে না পেরে অথৈ বলে, ‘ কি করছেন?নিশ্বাস আটকে মেরে ফেলবেন নাকি?’
রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ এভাবে তো তোমায় মারব না সুন্দরী।তোমাকে মারার পদ্ধতি তো ভিন্ন।যেদিন একেবারে আমার বাড়িতে পার্মানেন্টভাবে নিয়ে যাবো।সেদিন বোঝাব কিভাবে মারব তোমায়।’
রুদ্রিকের কথার মানে বুঝতে পেরেই লজ্জায় অথৈয়ের কান গরম হয়ে গেলো।রুদ্রিকের বুকে দুহাতে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,’ ছাড়ুন আমায় অসভ্য লোক।’
রুদ্রিক এইবার একহাত রাখল অথৈয়ের গালে।আলতো স্পর্শ করে বলে,’ রাগ করেছ?’
অথৈ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,’ না রাগ করব কেন?’
‘ রাগ না করলে ওইদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে কেন?আমার দিকে তাকাও।’
অথৈ তাকালো।অথৈয়ের সেই অভিমানি দৃষ্টি দেখে রুদ্রিক মুচঁকি হাসে।অতঃপর মাথা ঝুকিয়ে আনতেই অথৈ চোখ বন্ধ করে নিলো।রুদ্রিক অথৈয়ের দুচোখের পাতায় চুমু খেলো।আবেশে রুদ্রিকের শার্ট খামছে ধরে অথৈ।রুদ্রিক আবার চুমু খেলো অথৈয়ের দুগালে,থুতনিতে।তারপর কপালে চুমু খায়।স্বামির ভালোবাসাময় স্পর্শে দেহ আর মনে শিহরণ বয়ে যায় অথৈয়ের।রুদ্রিক নেশাময় চোখে তাকায় চোখ বন্ধ করে থাকা অথৈয়ের দিকে।ধীর আওয়াজে বলে,’ তাকাও অথৈ। ‘
অথৈ ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়।রুদ্রিকের দিকে তাকালে রুদ্রিক বলে,’ অভিমান কমেছে?নাকি আরও আদর লাগবে?’
লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয় অথৈ। কোনো জবাব দেয় না।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে ফের মুখোমুখি করে অথৈকে।বলে,’ আমার দিকে তাকাও মেয়ে।এদিক ওদিক কি?’
‘ উফ,আমার লজ্জা করে না বুঝি?’
হেসে ফেলে রুদ্রিক অথৈয়ের এহেন বাচ্চামো কথায়।
‘ আচ্ছা?’
ফের বলল,’ তাহলে আরেকটু লজ্জা দেই?’
‘ যাহ!’
অথৈ সরে আসতে নিলেই রুদ্রিক আবার ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।হাত দিয়ে অথৈয়ের ঠোঁট স্পর্শ করলে কেঁপে উঠে অথৈ। রুদ্রিক ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,’ কতোদিন হলো বলো তো?তোমার এই নরম ঠোঁটজোড়ায় স্পর্শ পাই না।সেইযে মেঘালয়ে চুমু খেয়েছিলাম।সেখান থেকে এসেছি আজ কতোদিন হলো বলো তো?চুমুর অভাবে আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।সেই খেয়াল কি তোমার আছে?’
তাজ্জব বনে যায় অথৈ। চুমুর অভাবে মানুষ আবার অসুস্থ হয় কিভাবে?এই লোকের কাছে যতো আজগুবি কথাবার্তা। আর তা ওর সামনেই বলে লোকটা।অথৈ নাক মুখ কুচকে বলে,’ চুমুর অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় এই প্রথম শুনলাম।’
‘ আরেহ তুমি দেখছি কিছুই জানো না।এইযে আমি দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছি।কেন শুকোচ্ছি জানো?এইযে আমার একটা বউ আছে।বউ থাকতেও আমি বউকে প্রতিদিন চুমু খেতে পারছি না।এই চুমুর অভাবেই তো আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।আর শুকিয়ে যাচ্ছি।যেই দেখে সেই বলে,আরেহ রুদ্রিক তুমি এতো শুকোচ্ছ কেন?এখন তো আমি আর বলতে পারি না তাদের।যে বউ আমাকে প্রতিদিন চুমু খেতে দেয় না তার ওই গোলাপি ঠোঁটজোড়ায়।এইকারনেই আমার এই অবস্থা।অবশ্য আমার কোনো সমস্যা ছিলো না বলতে।কিন্তু তুমি তো লজ্জায় আমার সামনেই আসবে না।চুমু খাওয়া তো দূরে থাক।তোমার কথা ভেবেই বলি না।’
অথৈ হা করে রুদ্রিকের এই বেহুদা কথাগুলো সব শুনল।সব যেন অথৈয়ের মাথার এক হাত উপর দিয়ে গিয়েছে।কি থেকে কি বলল এই লোক?পাগল টাগল গয়ে গেলো নাকি আবার?না জ্বর এসেছে?অথৈ হাত বাড়িয়ে রুদ্রিকের গালে কপালে স্পর্শ করল।জ্বর এসেছে নাকি চেক করতে।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ আরেহ কি করছ?’
‘ চেক করছি।আপনার জ্বর টর এলো নাকি আবার?নাহলে এমন আবল তাবল বকছেন কেন?’
রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে বলে,’ কোনো জ্বর আসেনি আমার।আমি একদম ঠিক আছি।তবে আমার এখন একটা ডিপলি লিপ কিস লাগবে।ঝটপট আমার ঠোঁটে একটা চুমু খাও তো।’
লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো অথৈয়ের।এ কোন পাগলের পাল্লায় পরল ও।অথৈ রুদ্রিকের হাত কোমড় থেকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,’ ইশ,ছাড়ুন তো।আমি কোনো চুমু খেতে পারব না।বাড়ি যাবো আমি।’
‘ তা তো হচ্ছে না সুন্দরী।তুমি চুমু না দিলে কি হবে। আমারটা আমিই আদায় করে নিতে পারি।’
কথাগুলো বলতে দেরি রুদ্রিকের অথৈয়ের অধরে অধর মিলিয়ে দিতে দেরি নেই।অথৈ বিড়ালছানার ন্যায় গুটিয়ে গেলো রুদ্রিকের বুকের মধ্যে।এভাবে কতোক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো কেউ বলতে পারল না।দীর্ঘ ওষ্ঠচুম্বনের সমাপ্তি ঘটিয়ে সরে আসে রুদ্রিক অথৈয়ের কাছ থেকে।রুদ্রিক সরে আসলে লজ্জায় অথৈ আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না।গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে চলে যায় বাড়ির ভীতরে ঠোঁট কামড়ে হেসে দেয় রুদ্রিক।অথৈ নিজের রুমে গিয়ে রুদ্রিককে মেসেজ করে দেয় সে রুমে এসেছে।মেসেজটা পেয়েই রুদ্রিক গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে যায়।এদিকে বারান্দায় আড়াল করে দাঁড়ানো অথৈ রুদ্রিকের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থাকে লাজুক হেসে।
#চলবে_______________
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫১
সিয়া অনিকের সাথেই আছে।আজ পাঁচদিন যাবত অনিক হাসপাতালে ভর্তি।এর মাঝে রিধি,প্রিয়ান,পিহু,আহিদ আর অথৈ সবাই একসাথে এসে দেখা করে যায়।ওরা প্রায় প্রতিদিনই এসেছে।আর বাকিদের কথা নাহয় নাই বলা যায়।তারা তো পারলে এক মিনিটের জন্যেও হাসপাতাল থেকে নড়েনি।অনিকের বাবা মা ছেলের কাছে থাকতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তারা বয়স্ক মানুষ।এভাবে দিনের পর দিন হাসপাতালে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেন।তাই তাদের থাকতে দেয়নি কেউ।উনাদের আস্বস্ত করেছে ওরা সবাই।তবে প্রতিদিন আসেন ছেলের সাথে দেখা করতে।এদিকে সিয়ার বাবা মা প্রথম দিন কিছু বলেনি সিয়াকে হাসপাতালে থাকার কারনে।রুদ্রিক ম্যানেজ করে নিয়েছিলো।কিন্তু তারা আর অনুমতি দেননি সিয়াকে।তাই বাধ্য হয়ে সিয়াকে রাতে বাসায় চলে যেতে হয়।কিন্তু সকাল হলেই আবারও সিয়া চলে আসে।অনিকের মন চাইতেও না সিয়াকে যেতে দিতে।কিন্তু কিছু করার নেই।কোনো বাবা মা-ই চাইবে না।তাদের এমন প্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ে রাতের বেলা বাড়ির বাহিরে থাকুক।তাই অনিকও আর জোড়াজুড়ি করেনি।আজ অনিককে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।তাই সিয়া অনিকের যাবতীয় সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।কাজ শেষ হতেই সিয়া অনিকের পাশে এসে দাঁড়ায়।
‘ তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে?যদি পুরোপুরি সুস্থ ফিল না করো।তবে আর কয়েকটা দিন থাকতে পারো হাসপাতালে।’
অনিক সিয়ার কথায় আস্তে আস্তে বলে,
‘ আমি ঠিক আছি।তুই চিন্তা করিস না।’
‘ তাহলে আমি বাকিদের ডাকছি।ওরা তোমাকে হাটতে হ্যাল্প করবে।’
এই বলে সিয়া চলে যাবার জন্যে পা বাড়ালে অনিক সিয়াকে ডেকে উঠে।থেমে যায় সিয়া।ঘুরে এসে ফের অনিকের সামনে দাঁড়ায়।প্রশ্ন করে,
‘ কিছু লাগবে তোমার?’
অনিক করুন কণ্ঠে বলে,
‘ আমায় মাফ করেছিস সিয়া মন থেকে?আমি চাই না জোড়পূর্বক তুই আমার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াস।আমি তোর বিরহে যেটুকুই বা বাঁচি কিন্তু তোর করুনা আমি সহ্য করতে পারব না সিয়া।আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো।’
অনিকের প্রতিটা কথা মন দিয়ে শুনল সিয়া।দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও।আরেকটু এগিয়ে গিয়ে অনিকের দুহালে নরম হাতে স্পর্শ করল।অনিক আবেশে চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবারও চোখ মেলে তাকায় সিয়ার দিকে।সিয়া নরম গলায় বলে,
‘ আমার চোখের দিকে তাকাও অনিক।আমার চোখের দিকে তাকালেই তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।’
অনিক অপলক তাকিয়ে থাকল সিয়ার চোখের দিক।এইতো,এইতো সেই চোখ।যেই চোখে অনিক অসীম ভালোবাসা দেখতে পেতো।কিন্তু ওর ভুলের নাহ,ভুল না ওর অন্যায়ের কারনে সেই ভালোবাসা সিয়ার হৃদয়ের এককোণে চাপা পরে গিয়েছিলো।আজ ফের সেই ভালোবাসাময় চোখজোড়া দেখে স্নিগ্ধ অনুভূতিতে তলিয়ে যাচ্ছে অনিক।ওর অজান্তেই ওর দুচোখ ভিজে গেলো।সিয়া হালকা হেসে অনিকের সেই ভেজা চোখজোড়া মুছে দিলো।সিয়া বলে,’ কাঁদছ কেনো?’
অনিক ধরা গলায় বলে,’ আমার ভালোবাসাকে ফিরে পেয়ে।’
‘ তোমার ভালোবাসা তো তোমারই ছিলো অনিক।কিন্তু তুমি তো বুঝতে পারোনি।যখন বুঝলে অনেক দেরি করে ফেলেছিলে।তবুও আমি তোমায় ফেলে যায়নি অনিক।আমি যদি তোমার নাও হতাম তবে অন্যকারও কোনোদিন হতাম না।একজীবনে একজনকেই আমি ভালোবেসেছি অনিক।একজনকেই ঠাই দিয়েছি।চাইলেও সেই স্থান আমি কাউকে কোনোদিন দিতে পারতাম না।তার আগেই যে আমার মরন হতো অনিক।’
অনিক সাথে সাথে সিয়ার ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরল।
‘ শশশ!বাঁজে কথা বলবে না তো সিয়া।সহ্য হয় না।আমি তোমাকে প্রমিস করলাম সিয়া।আর কোনোদিন তোমাকে কষ্টে কাঁদতে দিবো না সিয়া।তুমি কাঁদবে আর তা হবে তোমার সুখের কান্না।তুমি সুখে কাঁদবে সিয়া।আমি তোমাকে এতোটাই ভালোবাসব যে আমার দেওয়া আগের আঘাতগুলো তুমি সব ভুলে যাবে।আমার ভালোবাসা তীব্রতায় তুমি হারিয়ে যাবে।’
সিয়ার চোখেই জল জমেছে।ও চোখ মুছে বলে,
‘ আমি তো কাঁদতে চাই অনিক।খুব করে কাঁদতে চাই সুখের কান্না।’
অনিক সিয়ার হাতটা টেনে পরম আদরে চুমু খেলো।বলল,
‘ তুমি আমার হও সিয়া।এই জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই আমার। বিয়ে করবে আমায় তুমি সিয়া?আমার হয়ে তুমি আমাররাজ্যের রানি হবে?’
‘ হবো অনিক।তোমার রাজ্যের রানি হবো।’
চোখে জল, ঠোঁটের কোণে হাসি অনিক আর সিয়ার দুজনের।দুজন অপলক তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে।হঠাৎ চারপাশ থেকে করতালির আওয়াজে হুঁশ ফিরে ওদের।সিয়া দ্রুত সরে যায় অনিকের কাছ থেকে।ওরা তাকিয়ে দেখে রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল,মারিয়া,অথৈ,পিহু,রিধি,প্রিয়ান,আহিদ ওরা সবাই উপস্থিত অনিকের কেভিনে।মারিয়ার হাতে মোবাইল ছিলো।যা দিয়ে ও অনিক আর সিয়ার ওই মুহূর্তগুলো রেকর্ড করছিলো।মারিয়া হেসে বলে,
‘ ওয়াও।হোয়াট অ্যা প্রোপোজাল।’
নীল মারিয়ার কানে কানে বলে,’ আমি কিন্তু আরও রোমান্টিকভাবে প্রোপোজাল করতে পারি।গভীরভাবে ভালোবেসে।’
মারিয়া লজ্জা পেয়ে যায়।লজ্জামিশ্রিত হাসি নীলকে উপহার দিয়ে বলে,’ নির্লজ্জ কোথাকার।আশেপাশে কতো মানুষ আছে দেখছ না?’
নীল হালকা হেসে বলে,’ প্যেয়ার কিয়া তো ডারনা ক্যেয়া?যাব প্যেয়ার কিয়া তো ডারনা ক্যেয়া?’
গানের এই লাইনটুক খেয়ে নীল মারিয়া নীলকে চোখ মেরে দিলো।মারিয়া হেসে দিলো।
এদিকে সিয়াআকস্মিক সবাইকে দেখে লজ্জা পেলো।আর অনিক মুগ্ধ চোখে সিয়ার ওই লজ্জামাখা মুখটা মন ভরে দেখছে।এই মুখটা আজ কতোদিন পর অনিক উপভোগ করতে পারছে।তাই এই মুহূর্তে এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছে না।
ইহান হাসতে হাসতে বলে,
‘ অনিক তোর মুখে সিয়াকে তুমি বলে সম্বোধন করা শুনে আমার কেন জানি হাসি পাচ্ছে।’
রিধি নাক মুখ কুচকে বলে,’ আপনার তো শুধু অযথাই হাসি পায়।কতো সুন্দর করে অনিক ভাইয়া সিয়া আপুকে প্রোপোজ করল।আপনি তো খারুস আপনি এসব বুঝবেন না।বেআক্কল লোক কোথাকার।’
ইহান চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় রিধির দিকে।
‘ আমাকে বেআক্কল বলা হচ্ছে।তোমাকে তো পরে দেখে নিচ্ছি।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।’
ইহানের হুমকিতে শুকনো ঢোক গিলল রিধি।বেশি বলে ফেলল না-কি?এখন আবার এই লোক তাকে কি করবে?রিধি সরে গিয়ে আহিদের পিছনে লুকিয়ে পরল।রিধির ভীতু মুখটা বেশ উপভোগ করছে ইহান।ঠোঁট কামড়ে মৃদ্যু হাসল ও।
প্রিয়ান পিহুর হাতটা আঁকড়ে ধরল।হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সেদিকে তাকায় পিহু।প্রিয়ানের কাজ এটা বুঝতে পেরেই পিহু চোখের ইশারায় বুঝালো এমন করতে না।এখানে সবাই আছে।কে শুনে কার কথা।প্রিয়ান ওর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলে,’ আমরা কবে বিয়ে করব পিউ?শীঘ্রই মনে হয় অনিক ভাই আর সিয়া আপুর বিয়ে হবে।’
প্রিয়ানের কথা শুনে পিহু বলে,’ অনেক দেরি।আমাদের গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগে তো একদম না।’
প্রিয়ান মুখটা ফুলিয়ে ফেলল।
‘ কোথায় একটু আমাকে শান্তনা দিবি।তা না করে উলটো আমার হৃদয়ের দহন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিস।বেয়াদপ কোথাকার।’
পিহু রেগে গেলো প্রিয়ানের ওকে ‘বেয়াদপ’ বলায়।ও প্রিয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগি স্বরে বলে,’ আমাকে বেয়াদপ বলা।আবার আসিস আমার কাছে।লাথি মেরে তোর মেইন পার্টস উড়িয়ে দেবো একদম।’
পিহু হনহন করে কেভিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।প্রিয়ান ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল।এইজন্যেই বলে বেষ্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করা মানে স্বয়ং নিজেই নেচে-কুঁদে সিংহের গুহায় চলে যাওয়া।অথৈ হেসে দিলো প্রিয়ানের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে।ওকে হাসতে দেখে প্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলে,’ হাসিস না তো।আমি বাঁচিনা আমার জ্বালায়।আর তুই রাক্ষসীগো মতো বত্রিশপাটি দাঁত বাহির কইরা ভ্যা’টকাইতেছস।’
অথৈ ধরাম করে কিল বসিয়ে দিলো প্রিয়ানের পিঠে।রেগে বলে,’ তুই কাকে রাক্ষসী বলছ।ঘুষিয়ে তোর চাপা ভেঙে ফেলব।’
প্রিয়ান পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে কাঁদো স্বরে বলে,’ সারাজীবনটা আমার মাইয়াগো হাতে মাইর খাইতে খাইতে শেষ হইবো।ইয়া মাবুদ এ কই এনে ফাঁসায় দিলা আমারে।’
কেভিনে উপস্থিত সবাই হেসে দিলো প্রিয়ানের কথায়।রিধি হাসতে হাসতে বলে,’ সারাজীবনের কথা জানিনা।কিন্তু তুই যদি এখন পিহুর রাগ না ভাঙাস।তবে পিহু তোকে ওর ক্রোধের আগুনে জ্বা’লিয়ে দিবে।’
রিধির কথা শেষ হতে দেরি। প্রিয়ানের পিহুর পিছনে ছুটতে দেরি নেই।সবাই আরেকদফা হাসল।
মেঘালয় থেকে আসার দুদিন পরেই প্রিয়ান আর পিহু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সবাইকে ওদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়।সবাই বেশ খুশি হয়। সাথে আশ্চর্যও হয়।কারন যারা সারাদিন টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়াঝাটি করতেই থাকে তারা একে-অপরকে ভালোবাসে।ব্যাপারটা হজম করতে বেশ সময় লেগেছে।এদিকে আহিদও কোনো বিরোধীতা করে না।প্রিয়ান ভালো ছেলে।পরিবারও ওর ভালো।ছোটো থেকে ওরা একসাথে বড়ো হয়েছে।আর পিহুও যেহেতু প্রিয়ানকে ভালোবাসে তাহলে এখানে আর নাকচ করার কিছু নেই।
অনিকের চোখে সত্যিকারের ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে রুদ্রিক।ও জানে অনিক এখন সিয়াকে ভালোবাসে।রুদ্রিক প্যান্টের পকেটে দুহাত গুঁজে দাঁড়ালো।গম্ভীর কন্ঠে অনিকের উদ্দেশ্যে বলে,
‘ যেই যেই প্রমিস করলি সিয়াকে তুই।তা যেন অক্ষরে অক্ষরে করা হয় মনে রাখিস।যদি সিয়ার চোখ থেকে কোনোদিন তোর কারনে অশ্রু ঝরে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’
অনিক সিয়ার হাতটা নিজের হাতের মাঝে আগলে নিয়ে বলে,
‘ নিজের জীবন দিয়ে হলেও ওকে আগলে রাখব।আর কোনোদিন ওকে কষ্ট দিবো না।এক ভুল আমি আবারও করতে রাজি নই।’
সাফাত বলে,’ কথাটা মনে রাখলেই হলো।’
‘ অবশ্যই।’
ইহান বলে উঠে,’ এখন চল যাওয়া যাক।নিচে গাড়ি ওয়েট করছে।’
‘ হুম চল।’
অনিককে নিয়ে ওরা হাসপাতাল থেকে চলে যায়।সবাই যার যার বাড়িতে চলে যায়।যেহেতু এক্সামের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি রুদ্রিকদের।তাই প্রিপারেশন নিতে হবে।
__________________
পরেরদিন সকাল সকাল ভার্সিটি এসে হাজির হয় আহিদ।মেঘালয় থেকে আসার পর থেকে মাইশার সাথে দেখা হয়নি ওর।মাইশাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিলো না।ভার্সিটিতে এসে মাইশাকে খুঁজেছিলো পায়নি।না পেয়ে মাইশার বাসায়ও গিয়েছিলো। ওর রুমমেট থেকে জানতে পারে মাইশা নাকি গ্রামের বাড়ি গিয়েছে।এই কয়দিনে পাগলপ্রায় আহিদ দিশেহারা হয়ে পরেছিলো।আজ ওর এক ক্লাসমেট ওকে কল করে জানায় মাইশা নাকি আজ ভার্সিটিতে এসেছে।আর সে লাইব্রেরিতে আছে।খবরটা পেয়ে তৎক্ষনাত ছুটে এসেছে আহিদ।সোজা চলে যায় লাইব্রেরিতে।লাইব্রেরিতে গিয়ে কাক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেয়ে স্থির হয়ে যায় আহিদ।সেইদিকেই একধ্যানে তাকিয়ে থাকে।এতোদিনে খরা হয়ে থাকা হৃদয় জমিনে যেন এক পশলা প্রশান্তির বারিধারার বর্ষণ হলো।বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল আহিদ।
মাইশা লাইব্রেরিতে বসে বসে কিছু নোটস তৈরি করছিলো।হঠাৎ ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিতে লাগল ওকে কেউ দেখছে গভীরভাবে দেখছে।মাইশা ব্যক্তিটিকে খোঁজার জন্যে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল।হঠাৎ লাইব্রেরির দরজার দিকে চোখ যেতেই মাইশার সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেলো।ভূমিকম্পের ন্যায় হৃৎপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠল যেন।মাইশা দাঁড়িয়ে যায়।চোখ ভিজে উঠল মাইশার।ঠিক কতোদিন পর মানুষটাকে দেখল মাইশা।এই মানুষটা যে ওর দেহ,মন সবটা জুড়ে আছে।আহিদ মেঘালয় চলে যাবার পরেরদিনই খবর আসে ওর মা অনেক অসুস্থ।ওই খবর শুনে তৎক্ষনাত গ্রামে ফিরে যায় মাইশা।ফোনে যে যোগাযোগ করবে তারও উপায় ছিলো না।ওর ছোটো ভাই বুঝেনি।খেলার ছলে ওর মোবাইলটা নিয়ে দোতলা থেকে ফেলে দেয়।ফলে মোবাইলটা নষ্ট হয়ে যায়। সিমটা ওর বাবা রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে যে তিনি কোথায় রেখেছেন তা আর বলতে পারেননি। সিমটাও হারিয়ে যায়। গ্রামের বাড়ি ভালো মোবাইল কি আর সেখানে কিনতে পাওয়া যায়?তাই মাইশার বাবা বলেন যে শহরে ফিরে গিয়েই নাহয় নতুন মোবাইল কিনতে।উপায় না পেয়ে বাবার কথাই মেনে নেয়।কিন্তু মনকে কি মানানো যায়।এই মন তো সেই কবেই সে আহিদের কাছে হারিয়ে ফেলেছিলো।লোকটাকে যে কখন নিজের মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে নিজেই বুঝতে পারেনি মাইশা।যখন গ্রামে গেলো।আহিদের অনুপস্থিতি ওকে হারে হারে উপলব্ধি করিয়ে দেয়।যে ও ঠিক কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে আহিদকে।যে কয়টাদিন গ্রামে ছিলো প্রতিটা দিন ছটফট করে কেটেছে মাইশার।ছুটে চলে আসতে মন চাইতো শহরে।শুধু আহিদকে দেখার জন্যে।কিন্তু চাইলেও আসতে পারছিলো না ওর মা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।এইতো কাল সন্ধ্যায় ফিরেছে ও গ্রাম থেকে।আর আজই ভার্সিটিতে চলে এসেছে।কিন্তু ভার্সিটিতে এসে দেখে তেমন কেউ আসেনি। মাইশা আহিদকে দেখার জন্যে এতোটাই বিভোর ছিলো যে।অনেক জলদি চলে এসেছে ভার্সিটিতে।তাই উপায় না পেয়ে ভাবল লাইব্রেরিতে বসে কিছু নোটস বানানো যাক।সময় হলে নাহয় আহিদের সাথে গিয়ে দেখা করবে।
কিন্তু হঠাৎ এভাবে আহিদকে লাইব্রেরিতে দেখবে ভাবেনি মাইশা।চোখে জল, ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে মাইশার।একপা একপা করে মাইশা এগিয়ে যায় আহিদের কাছে।একেবারে আহিদের সম্মুখে এসে দাঁড়ায়।মিষ্টি কণ্ঠে বলে, ‘ কেমন আছেন আহিদ?’
আহিদ তখনও এক দৃষ্টিতে মাইশার দিকে তাকিয়ে আছে।মাইশার কথায় নড়েচড়ে উঠে আহিদ।সাথে সাথে এতোদিনের মাইশার এইভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে নেওয়ার ব্যাপারটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।রাগে আহিদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।হাত বাড়িয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে মাইশার দুবাহু।আকস্মিক আহিদের এমন কান্ডে অবাক হয় মাইশা। সাথে বাহুতে ব্যথা অনুভব করায় হালকা আওয়াজে ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে।আহিদের সেদিকে ধ্যান নেই।ও রাগে অগ্নিঝরা হয়ে বলে,’ আজ এতোদিন পর এসে জানতে চাইছ কেমন আছি আমি?দেখো আমাকে। ভালোভাবে দেখো।দেখে বলো আমি কেমন আছি।’
কথাগুলো শেষ করে ঝটকা মেরে আহিদ মাইশার বাহু ছেড়ে দেয়।রাগি গলায় বলে,’ আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না তোমার?আরে তুমি কি এতোটাই অবুঝ?একটা ছেলে কেন তোমার কাছে বার বার আসে।তোমার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চায়।ভার্সিটিতে এতো এতো মেয়ে থাকতে শুধু তোমার কাছেই যেন ছুটে আসে।কেন তোমাকে দিনে দুই তিনবার কল দিয়ে তোমার ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে? তুমি কি কিছুই বুঝো না?তুমি হুট করে গায়েব হয়ে গেলে।’
মাইশা ভয়ে কাঁপছে।আহিদকে এতোটা রেগে যেতে কোনোদিন দেখেনি ও।লোকটাকে সবসময় শান্ত আর হাসিখুশি মেজাজই সর্বদা দেখেছে।মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই তো এতোটা রেগে গিয়েছে।মাইশা শুকনো ঢোক গিলল।কাঁপা গলায় বলে উঠে,’ আমি গ্রামে আমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম।’
আহিদ চিৎকার করে উঠে,’ হ্যা মানলাম তুমি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলে।কিন্তু সেটে একটাবার আমাকে বলতে পারতে।না-কি আমাকে তেমন কোনো কিছু মনেই করো ন তুমি?হ্যা মনে করোই তো না।করলে তো একটাবার আমাকে কল করে জানাতে পারতে।আমিই ছ্যাছড়া।তুমি আমাকে নিয়ে কিছুই ভাবোইনা। সেখানে আমি অযথাই তোমার পিছনে ঘুরেছি এতোদিন।’
আহিদের তিক্ত বাক্যগুলো সহ্য হলো না মাইশার আর।ও ডুকরে কেঁদে উঠে। আহিদ ওকে কাঁদতে দেখে মলিন হেসে বলে,’ ভয় পেয়েছ মাইশা?ভয় পেয়েও না আমাকে।আমার কারনে তুমি ভয় পাচ্ছ এটা আমি মানতে পারছি না মাইশা।আমি চলে যাচ্ছি।তুমি শান্তিতে পড়ো মাইশা।আমি আর কোনোদিন তোমাকে জ্বালাতন করব না।ভালো থেকো তুমি।’
এই বলে আহিদ পা বাড়ালো চলে যাবার জন্যে।মাইশার যেন সহ্য কতে পারল না আহিদের এই তিক্ত বাক্যগুলো।আহিদ ওকে ভুল বুঝে চলে যাবে।এটা মানতে পারলো না কিছুতেই।ভেজা কণ্ঠে ডেকে উঠল মাইশা,’ আহিদ?’
আহিদ একপললের জন্যে থমকে গেলো মাইশার ওই ভেজা কণ্ঠের আকুলতা ভড়পুর ডাক শুনে।পরক্ষনে আবার পা বাড়ালো।তাকে থামলে চলবে না।আর পিছনে ঘুরবে না ও।মাইশা তো ওকে ভালোবাসে না।তাহলে ও কেন মাইশার ডাকে থামবে।এই ডাকে সারা দিতে গেলে ও নিজেই ভালোবাসার দহনে জ্বলেপুড়ে যাবে।মাইশা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।আহিদ চলে যাচ্ছে।মাইশা আর নিজেকে আটকালো না।মন যা চাইলো। তাই করল।ছুটে চলে গেলো আহিদের কাছে।আহিদকে পিছন থেকে ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরল।কাঁদতে কাঁদতে বলে,’ আমি ইচ্ছে করে যোগাযোগ বন্ধ করেনি আহিদ।আমি আপনাকে অনেক মিস করেছি।কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম।চাইলেও আপনাকে কল করতে পারেনি। আপনি আমাকে ভুল বুঝে এভাবে চলে যাবেন না।প্লিজ যাবেন না।’
আহিদ যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো মাইশার এহেন কান্ডে।ও কখনও ভাবেইনি মাইশা ওকে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে।মাইশার ওই নরম দেহের স্পর্শ পেয়ে যেন আহিদের সারা শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস আটকে আসছে।আহিদ কাঁপা কাঁপা হাতে ওর বুকের কাছের শার্ট খামছে ধরা মাইশার হাতজোড়ার উপর রাখল।শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। আহিদের এইটুকু স্পর্শে যেন আরও কান্না বেড়ে গেলো মাইশার। একে একে ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল আহিদকে। সব শুনে অবাক হয়ে গেলো আহিদ।মেয়েটার সাথে এসব ঘটে গেলো আর ও কিনা একবার জানতেও চাইলও না মাইশার কাছে কিছু।উলটো কিনা মেয়েটাকে কতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।অপরাধবোধে আহিদের মনটা একটুখামি হয়ে উঠল।মাইশার হাতদুটো ওর বুকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।পিছনে ঘুরে গেলো। আহিদকে ছেড়ে দিলো মাইশা।মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল।আহিদ হাত বাড়িয়ে মাইশার চিবুক স্পর্শ করল।মুখটা উঁচু করল ওর।আহিদ অপরাধী স্বরে বলে,’ আই এম সরি মাইশা।আমি না জেনে বুঝে তোমাকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলাম।আমাকে মাফ করে দেও।’
আহিদ মাইশার চোখের পানি মুছে দিলো।মাইশা ভেজা কণ্ঠে বলে,’ উহু, সরি বলছেন কেন?আপনার জায়গায় আপনি ঠিক আছেন।আমি জানি কাছের মানুষটার সাথে যোগাযোগ না করতে পারলে কতোটা খারাপ লাগে।আপনার সাথে যোগাযোগ না করতে পেরে আমিও কষ্ট পেয়েছি।’
মাইশার মুখে নিজেকে ‘ কাছের মানুষ’ বলে সম্বোধন করতে শুনে হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।পরক্ষণে দুষ্টু হেসে বলে,’ তার মানে তুমি বলতে চাইছ আমি তোমার কাছের মানুষ?’
আহিদের দুষ্টু স্বরের বলা কথাগুলো শুনে লজ্জা পেয়ে যায়।হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে কি বলে ফেলেছে।খেয়ালই করেনি।এখন লজ্জায় তাকাতে পারছে না আহিদের দিকে।
আহিদ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে মাইশার লজ্জামিশ্রিত মুখটা দেখছে।হঠাৎ আবেগি স্বরে বলে উঠে,’ আই লাভ ইউ মাইশা।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমার বউ হবে মাইশা?’
মাইশার বুকটা কেঁপে উঠল আহিদের বুকে ভালোবাসার কথা শুনে।নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারল না।ঝাপিয়ে পরল আহিদের বুকে।কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে, ‘ আমিও আপনাকে ভালোবাসি আহিদ।আগে বুঝতে পারেনি।কিন্তু যখন গ্রামে গেলাম।তখন হারে হারে টের পেয়েছি আপনি আমার কতোটা জুড়ে আছেন।আমি আপনার বউ হবো আহিদ।বউ হবো।’
আহিদ দুহাতে বুকের মাঝে আগলে নিলো মাইশাকে।এতোদিম তো এটারই অপেক্ষা করছিলো আহিদ। অবশেষে ওদের ভালোবাসাও পূর্ণতা পেলো।মাইশা ওর মন ছুঁয়ে দেখেছে।বুঝতে পেরেছে আহিদ ওকে কতোটা ভালোবাসে।আর কিছু চায়না আহিদ।শুধু আজীবন মাইশাকে এইভাবে নিজের বক্ষস্থলের মাঝে আগলে রাখতে চায়।
#চলবে____________
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫২
গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আছে ধরনী।তীব্র রোদের আলোতে যেন চারপাশ ঝলসে যাচ্ছে।এমকই এক পরিবেশে গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহা।চোখে মুখে তার বিরক্তির আভাস।আরহার ত্যক্ত কণ্ঠস্বর,
‘ উফ, এই গাড়িটা এখনই নষ্ট হতে হলো।এমনিতেই পাকনামি করে ড্রাইভার আনিনি।ভাইয়া কতো করে বলল।আমি শুনলাম না।এখন যদি শুনে গাড়ি নষ্ট হয়ে আমি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।তাহলে আর নিস্তার নেই।’
আরহা রুমাল বের করে কপালের ঘামটুকু মুছে দিলো।গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করে এক ঢোক খেতেই নাক মুখ কুচকে ফেলল।বলল,
‘ এটা কি পানি?নাকি লাভা?এতো গরম ক্যান?উফ,ভাল্লাগে না কিছু।’
আরহা মোবাইল বের করল।বিরবির করল,
‘ ড্রাইভার কাকাকে এখানের ঠিকানা দিয়ে আসতে বলে দেই।তিনি এসে নাহয় গাড়িটা নিয়ে যাবেন।সে আসলে আমি নাহয় রিকশা বা সিএনজি নিয়ে চলে যাবো।’
আরহা ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলে দিলো।সাথে এটাও বলল এই খবর যেন ওর ভাইয়ের কাছে না যায়।ড্রাইভার জানালো তার ঘন্টাখানিক সময় লাগবে আসতে।আরহা বিরক্তি নিয়ে ফোন রাখল। কি আর করবে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
এদিকে দূর থেকে আরহাকে এতোক্ষণ যাবত দেখছিলো সাফাত।সে অনিককে দেখতে গিয়েছিলো ওর বাড়িতে।সেখান থেকে আসার পথেই সে আরহাকে রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।সাথে সাথেই বাইক থামিয়ে ফেলে।ঠিক কি কারনে বাইকটা যে ও থামিয়েছে ও জানে না।কিন্তু আরহাকে দেখার সাথে সাথে হাতটা আপনাআপনিই যেন ব্রেকে চলে গেছে।আজ ঠিক কতোদিন পর মেয়েটাকে দেখল।সেইযে মেঘালয় থেকে আসার পর মেয়েটার ভাই এসে ওকে নিয়ে গেলো।এরপর আর দেখা হয়নি মেয়েটার সাথে।তবে সাফাতের প্রতিদিন আরহার কথা মনে পরত।ওকে নিয়ে আরহার করা পাগলামিগুলো মনে পরত।সাফাত এটা অনেক আগেই বুঝেছিল আরহা ওকে পছন্দ করে।তাই তো মেয়েটার থেকে দূরে দূরে থাকত।ও চায়না ওর মতো কেউ কষ্ট পাক এক তরফা ভালোবেসে।কিন্তু আজ কেন যেন নিজের মনটাকে থামাতে পারেনি।আরহাকে দেখার সাথে সাথেই ওকে থেমে যেতে হয়েছিলো।অনেকক্ষন যাবতই আরহাকে দেখছিলো।আরহাকে বিনা এইভাবে একা একা রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।কেন যেন ওর ভালো লাগল না।তাই বাইকটা একটু সাইডে পার্ক করে এগিয়ে যায় আরহার কাছে।একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আরহার।এদিকে আরহা ক্রমাগত পায়চারি করছিলো।পায়চারি করতে করতে পিছনে ফিরে আচমকা সাফাতকে দেখে ভড়কে যায়। দুকদম পিছাতে গিয়ে পরে যেত্র নেয় পিছনে।সাফাত নিজেও ঘাবড়ে যায়।দ্রুত হাত বাড়িয়ে আরহার কোমড় জড়িয়ে ধরে।সাফাতের নিরেট হাতের স্পর্শ কোমড়ে পেতেই আরহার সারা শরীর ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠে।চোখ বন্ধ করে নেয় খিঁচে।সাফাত তাকিয়ে রয় আরহার মুখশ্রীর দিকে।কোমড় অব্দি চুলগুলো পনিটেইল করে বাধা।মুখে হালকা মেক-আপের ছোয়া।চোখগুলোতে আইলাইনারের রেখা টানায় আর মাশকারা দেওয়ায় আরও সুন্দর দেখাচ্ছে।গালগুলোতে হাইলাইটার দেওয়ায় রোদের আলোতে আরও জ্বলজ্বল করছে।ঠোঁটে লিপগ্লোস দেওয়া।গায়ে জড়ানো কালো কামিজ।মেয়েটাকে ভয়ানক সুন্দর দেখাচ্ছে।ঠোঁটের দিকে তাকাতেই সাফাত শুকনো ঢোক গিলল।পরক্ষনে আরহা এতো সেজেছে কোনো কারনে।এটা ভাবতেই বিরক্ত লাগল।মেয়েটা এমন সেজেগুজে যাচ্ছে কোথায়?সাফাত দ্রুত আরহাকে সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে দিলো।সাফাত গলা খাকারি দিতেই আরহা চোখ মেলে তাকায়।সাফাতের দিকে চোখ যেতেই আরহা নড়েচড়ে ভালোভাবে দাঁড়ালো।সাফাত গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ এতো সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?’
আরহা চোখ পিটপিট করে বলে,
‘ কোথায় দেখলেন এতো সেজেগুজে?এর থেকেও বেশি সাজে মেয়েরা।’
সাফাত চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো।
‘ মেয়েরা সাজলেই তোমাকেও সাজতে হবে?’
‘ কেনো আমি কি মেয়ে না?’
আরহার প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় সাফাত।আমতা আমতা করে বলে,
‘ হ্যা তুমি মেয়ে।কিন্তু এতো সাজুগুজু করা ভালো না ত্বকের জন্যে।’
আরহা চওড়া হাসল।
‘ এতো প্যাচাপ্যাচি না করে সোজাসাপ্টাভাবে বলে দিলেই তো পারেন।আমাকে ন্যাচারালভাবে দেখতেই আপনার ভালো লাগে।’
সাফাত খুক খুক করে কেঁশে উঠল।তা দেখে আরহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।সাফাত আঁড়চোখে সেই হাসিটা দেখে নেয়।কি হচ্ছে ওর সাথে?কেন হচ্ছে?কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না সাফাত।সাফাত মাথা ঝারা দিয়ে চিন্তাটুক বাদ দিলো।আরহাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
‘ কোথাও যাচ্ছিলে?’
আরহা মাথা দুলালো।
‘ হ্যা,নিজের সাথে একা একটু টাইম স্পেন্ড করতে যাচ্ছিলাম।’
‘ একা কিভাবে টাইম স্পেন্ড করে?’
‘ তো কি করব বলুন?আপনার মতো তো আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই।যে বসে বসে আমার বকবাকানি শুনবে।ভাইয়া তো হসপিটালে ব্যস্ত সময় পার করে।ডক্টর মানুষ।বুঝেনই তো?তবুও আমাকে যথেষ্ঠ সময় দেওয়ার চেষ্টা করে।আর বাবা?তার কথা বাদই দিন।’
সাফাতের খাবার লাগল অনেক আরহার জন্যে।মেয়েটা আসলেই বড্ড একা।সাফাত প্রশ্ন করল,
‘ তোমার ওই ফ্রেন্ডগুলোর কি খবর?’
আরহা হেসে দিলো ফিক করে।
‘ ভাইয়া এমন টাইট দিয়েছে না একেকটাকে।সবগুলো স্বার্থপর।দেশে আসার পর আমার সাথে আবারও প্যাচ আপ করতে এসেছিলো।আমিই পাত্তা দেয়নি।’
‘ এই একটা ভালো করেছ।’
আরহা মুচঁকি হাসল।সাফাতও বিনিময়ে হাসি দিলো।এরপর কি বলবে ভেবে পেলো না সাফাত।পরক্ষনে কিছু একটা ভাবল।অনেকটা সময় নিয়ে আস্তে করে বলে,
‘ তুমি চাইলে আমার সাথে এককাফ কফি খেতে পারো।যাবে?’
আরহা হা করে তাকালো সাফাতের দিকে।এই লোক সেধে সেধে ওকে কফি খাওয়ার অফার দিচ্ছে।বিষয়টা হজম করতে বেশ সময় লাগল।নিজেকে সামলে নিয়ে আরহা ঠোঁটে প্রসারিত করে হাসল।
‘ হ্যা অবশ্যই যাবো। যদি আপনার না সমস্যা হয়।’
‘ আমার সমস্যা হবে না। তাই তো তোমাকে বললাম।’
‘ তাহলে চলুন যাওয়া যাক।’
যাবার জন্যে পা বাড়াবে এরপর গাড়ির দিকে নজর যায় আরহার।ঠোঁট উলটে বলে,
‘ কিন্তু এই গাড়িকে কি করব?’
সাফাত বলে,’ তুমি গাড়িটা লক করে রেখে দেও।আমরা বেশি দূরে যাবো না।এই তো কাছেই একটা ক্যাফে আছে।সেখানেই যাচ্ছি।তোমার ড্রাইভারকে টেক্সট করে দেও এখানে এসে পৌছালে তোমাকে একটা কল করতে।তাহলেই তো হবে।’
আরহার বেশ লাগল সাফাতের বুদ্ধিটা।চমৎকার হাসি দিয়ে বলে,
‘ আপনি তো বেশ ভালো বুদ্ধি দিলেন। ইন্ট্যিলিজেন্ট ম্যান।থ্যাংক ইউ সো মাচ।’
‘ ইউর ওয়েলকাম।’
আরহা সাফাতের কথা মতো গাড়ি লক করে দিলো।তারপর সাফাত আর আরহা কাছেই একটা ক্যাফে আছে সেখানে গিয়ে বসল।সাফাত ওয়েটারকে ডেকে নিজের জন্যে একটা হটকফি অর্ডার করল।আর আরহা নাকি কোল্ড কফি পছন্দ করে।অর্ডার করা শেষ হতেই সাফাত এইবার আরহার দিকে তাকালো।মেয়েটা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।সাফাত তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে।সাফাত গলা খাকারি দিয়ে বলে,
‘ তো তোমার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলো।এতোদিন তো টুকরো টুকরোভাবে বলেছ।তাই ভালোভাবে বুঝতে পারেনি।’
আরহা ভ্রু নাচালো।
‘ কি জনাব?আজ হঠাৎ আমার প্রতি আপনি এতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন কেন?’
সাফাত হালকা কেশে এদিক সেদিক তাকালো।মিন মিন করে বলে,
‘ এখানে আগ্রহের কি পেলে?আমরা তো ধরতে গেলে পরিচিত।আর পরিচিত মানুষদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ভালো।এইযে আমিও আমার সম্পর্কে তোমায় বলতাম।অবশ্য তুমি বলতে না চাইলে সমস্যা নেই।’
আরহা মাথা দোলালো।লম্বা শ্বাস ফেলে বলতে লাগল।
‘ আমি বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান।আমার বাবার নাম ফাহিম হোসেন মায়ের নাম রূহানি রহমান।আমার একজন বড়ো ভাই আছে।যার নাম আয়াজ হোসেন।তাকে তো চিনেনই।যেহেতু আমার সম্পর্কে জানতে চাইছেন।তাই আপনাকে আজ সব জানাবো।যা আমি আজও কাউকে বলিনি।নিজের মধ্যে চাপা দিয়ে রেখেছি।’
আরহা মলিন হাসল।ওর মন আজ চাইছে এতোদিনের ওর বুকের মাঝে দামাচাপা দেওয়া ওর কষ্টগুলো সাফাতের কাছে সেয়ার করার।তাহলে যেন ও নিস্তার পাবে।একা একা এই কষ্টগুলো বয়ে বেড়াতে বেড়াতে যে ও ক্লান্ত হয়ে পরেছে।এমন একটা মানুষ কোনোদিন পায়নি।যে দুদন্ড ওর পাশে বসে ওর মনের কথাগুলো বলবে।আজ যেহেতু সাফাত ওর সম্পর্কে জানতে চাইছে। আবার ও তো সাফাতকে ভালোবাসে।তাই ওর কাছে মনের কথাগুলো সব উজাড় করে দিবে।আরহা বলতে শুরু করবে,
‘ আমার যখন সাত বছর বয়স।ভাইয়ার তখন সতেরো বছর বয়স।আমরা দু ভাই বোন পড়ছিলাম।মা আমাকে পড়াচ্ছিলেন।হঠাৎ বাবা ডিপার্টমেন্ট থেকে ফিরলেন।ও বলতে ভুলে গিয়েছি আমার বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন তখন।এখন অবশ্য পুলিশ কমিশনার। তো বাবা আসল।আর এসেই মাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলেন।এর কিছুক্ষণ পরেই মায়ের বিভৎস চিৎকারে যেন আমাদের পুরো বাড়ি শুদ্ধ কেঁপে উঠেছিলো।বাবা মাকে অনেক মেরেছিলেন।মেরে ধরে সে আবার চলে গিয়েছিলো।আমি ভয়ে ভাইয়াকে ঝাপ্টে ধরেছিলাম।আর ভাইয়া অনবরত দরজা ধাক্কে মা আর বাবাকে ডাকছিলো।কিন্তু তাদের কোনো জবাব পাচ্ছিলাম না।শুধু বাবার বিশ্রি ভাষার গালিগালাজ আর মায়ের কান্না শুনছিলাম।বাবা মাকে মেরে চলে যাওয়ার পর আমরা দু ভাই বোন ছুটে গিয়েছিলাম মায়ের কাছে।মা’কে নিস্তেজভাবে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখেছিলাম।আমরা দু ভাই বোন অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন।ভাইয়া আর আমি মাকে ধরে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বলি।ডাক্তার মাকে দেখে চলে যান।মায়ের সারা শরীরটা না কালসিটে দাগ পরে গিয়েছিলো।এরপর থেকে প্রতিনিয়ত বাবাকে দেখতাম মা’কে এইভাবে অত্যাচার করতে।একদিন আমি সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে বাবার হাত ধরে আটকে দিয়েছিলাম।বারবার বলতাম বাবা মাকে মেরো না।বাবা রেগে আমাকে ধাক্কা দিলেন।ভাইয়া আমাকে ধরতে গিয়ে নিজে দেয়ালে আঘাত পায়।তার মাথা ফেটে যায়।ভাইয়া আবার বাবার অনেক প্রিয় ছিলো।ঠিক তার উলটো ছিলাম আমি।আমাকে দেখতেই পারতেন না।ভাইয়া ব্যথা পাওয়ায়।সে রেগে আমাকে অনেক মারল।আমার কারনে নাকি ভাইয়া ব্যথা পেয়েছে।সেই মারার কারনে আমি পনেরো দিন পর্যন্ত জ্বরে ভুগেছিলাম।ভাইয়াও অসুস্থ।মা নিজে অসুস্থ হয়ে আমাদের দু সন্তানের যত্ন নিলেন।এভাবেই চলছিলো দিনকাল।বাবার অত্যাচারে দিনদিন আমাদের দিনগুলো দূর্বিষহ হয়ে উঠছিল।যখন আমার নয় বছর।হঠাৎ একদিন বাবা এক মহিলাকে নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে যায়।আমাদের বলে এটা নাকি আমাদের নতুন মা।আমি মানিনি।মহিলার গায়ে ফুলদানি ছুড়ে মেরেছিলাম।কিভাবে মারব বলুন?আমার তো মা আছে।ওই মহিলা আমার মা হবে কেন?সেই ফুলদানি মারার কারনে আমাকে আবার মারল বাবা।দুদিন যাবত ঘরে আটকে রাখল।ভাইয়া প্রতিবাদ করায় তাকেও আটকে রেখে দেয়।আর মা?মা কেমন যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলো।সেদিনের পর থেকে মা আর কোনোদিন কথা বলেনি আমাদের কারো সাথে।কেমন যেন একটা জড়বস্তুর মতো ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছিলো।আমি ছোটো ছিলাম তাও চেষ্টা করতাম মায়ের যত্ন নিতে।নিজে নিজে রান্না করতে গিয়ে,একদিন হাত পুড়ে যায়।তা দেখে মা একটু স্বাভাবিক হয়।কিন্তু একদিন মা আমায় ভাত খাইয়ে দিচ্ছিলো হঠাৎ বাবা ওই মহিলার সাথে এসে মা’কে জোড় করে নিজের সাথে নিয়ে যায়।তারপর রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।ভাইয়া তখন ভার্সিটিতে ছিল।ঘন্টাখানিক পর বাবা আর ওই মহিলা বের হয়ে যায়।আমি দৌড়ে গিয়ে যেই অবস্থায় দেখলাম।তা আর আপনাকে বলে বোঝাতে হবে না আশা করি।আমি যেতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ কেঁদে দেয়।আমিও কান্না করেছিলাম।ভাইয়া আসার সময় হয়ে যাওয়ায়।মা ঠিকঠাক হয়ে নেয়। আমাকেও বলে যাতে ভাইয়াকে এসব না বলতে।আমিও মায়ের কথা মেনে নেই।কিন্তু পরদিন সকাল যে আমাদের জন্যে এতো বিভৎস হবে ভাবিনি।ঘুম থেকে মা’কে কোথায় পাচ্ছিলাম না।খুঁজতে খুঁজতে গার্ডেনে যাই আমি আর ভাইয়া।গিয়ে দেখলাম বাগানে লাগানো আমগাছটার সাথে আমার মায়ের লা’শ ঝুলে আছে।’
এইটুকু বলে আরহা আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারল না।দু হাতে মুখ ঢেকে ধুকড়ে কেঁদে উঠল।তার জীবনের এই ভয়ংকর অতীতটুকু তাকে আজও শান্তিতে নিশ্বাস নিতে দেয়না।প্রতিমুহূর্তে ওর মন চায় ম’রে যেতে।এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।আরহা নিজেকে থামানোর অনেক চেষ্টা চালালো।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে শুরু করল,
‘ আমার মা আমার বাবার করা অত্যাচার সয্য করতে না পেরে আত্ম’হত্যা করে।সেদিন যেন আমরা দু ভাই বোন দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম।পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু কি করার বলেন?একবার যে চলে যায় তাকে কি আর কোনোদিন ফিরে পাওয়া যায়?যায় না।আর আমরা চেয়েও কিছু করতে পারলাম না।বাবা যেহেতু পুলিশ ছিলেন তাই আমার মায়ের এই ঘটনাটা দামাচাপা দিয়ে দিলেন।কেউ কোনো প্রশ্ন করল না আমার মায়ের মৃত্যু নিয়ে।আমাদেরও ভয় দেখিয়ে রাখল।আমরা তো ছোটো ছিলাম বলেন?তাই ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি।কিন্তু ভাইয়া প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলো।বাবা আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তাকেও চুপ করিয়ে রাখে।আমার মায়ের মৃত্যুটা সবাইকে স্বাভাবিক মৃত্যুর মতো দেখানো হলো।কিন্তু আমরা তো জানি বলেন?আমার মাকে হত্যা করা হয়েছে।আমার মাকে জীবিত লা’শ বানিয়ে দিয়েছিলো সে।সে শুধু নিশ্বাস নিচ্ছিলো।তাদের অত্যাচারে সেটাও ত্যাগ করে আমার মা।মায়ের মৃত্যুর পর বাবা ওই মহিলাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।শুরু হয় আরেক অত্যাচার।একদিন আমার নানাভাই আমাদের ব্যাপারে জানতে পারেন সব।ও আমার বাবা মায়ের লাভ ম্যারেজ ছিলো।তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিলো।তাই তিনি মেনে নিননি তাদের।তো হঠাৎ নানাভাই খবর পান তার আদরের মেয়ে আর নেই।তাই সব রাগ অভিমান ছেড়ে দৌড়ে চলে এসেছিলেন। কিন্তু তখন তো অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।মা তো আমার কবরে ঘুমিয়েছিলো শান্তিতে বলেন।নানাভাইকে আমরা চিনতাম।মায়ের কাছে একটা এলবাম ছিলো।সেখানে আমার নানুবাড়ির সবার ছবি আছে।তো নানাভাইকে এক দেখাতেই চিনে ফেলেছিলাম।নানাভাইকে আমি আর ভাইয়া সব বলে দিয়েছিলাম।নানা ভাই আমাদের সাথে নিয়ে যান।কিন্তু আমাকে নিয়ে যেতে দিলেও ভাইয়াকে তিনি নিয়ে যেতে দিবেন না।পরে ভাইয়া নিজেই রাগারাগি করে।সে নানাভাইয়ের সাথে যেতে চায়।তাই আর আটকাতে পারেননি।আর এই বিষয়ে কেস করলেও তিনি হেরে যেতেন।কারন আমরা তো নামাভাইয়ের সাথেই যেতাম।নানাভাইদের বাড়ি মাদারিপুর ছিলো।সেখানে আমরা চলে গেলাম।কিছুদিন পর নানাভাই ভাইয়াকে হোস্টেলে দিয়ে আসেন।যেহেতু ভাইয়া ঢাকা মেডিকেলে পরে।তার পড়েলেখায় সমস্যা হচ্ছিলো।আর আমি একা নানুবাড়িতে রয়ে গেলাম।এরপর নানাভাই বাবার নামে মামলা করল।অনেকদিন চলল মামলা।বাবা যেহেতু পুলিশ অফিসার ছিলেন।ভালো পজিশনে।তাই তার কিছুই করতে পারলাম না আমরা।নানাভাইও হার ছেড়ে দেন।উপর ওয়ালার হাতে সব ছেড়ে দেন।আল্লাহ্ ছাড় যেন কিন্তু ছেড়ে দেননা।সেই আশায় রইলাম।দেখতে দেখতে আমি বড়ো হয়ে যাই।কিন্তু এতো সহজ ছিলো না।আমার মামিরা আমায় সহ্য করতে পারতো না।প্রতিনিয়ত আমাকে অত্যাচার করত।আমি তাও কিছু বলতাম না কাউকে।কাকে বলব বলেন?নানাভাই যে তখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে ছিলেন।আর ভাইয়া তখন পড়ালেখা করত।তাকে এসব বলে তাকে চিন্তায় ফেলতে চাইতাম না।এরপর ভাইয়া ডক্টর হয়ে যায়।সেদিন আমার থেকে খুশি যেন কেউ ছিলো না।কি যে খুশি ছিলাম।ভাইয়া আমার জন্যে অনেক অনেক গিফট এনেছিলো। এভাবেই চলছিলো।ভাইয়া হসপিটাল জয়েন করে।কিন্তু হঠাৎ নানাভাই মারা যান। আমি যেন এটা মানতেই পারলাম না।মানুষটা যে আমার বড্ড আপন ছিলো।আমি ডিপ্রেশনে চলে যাই।এর মধ্যে মামিদের অত্যচার তো আছেই।একদিন ভাইয়া সব জেনে যায়।ভাইয়া যেহেতু এখন নিজে ইনকাম করতে পারে।তাই ঢাকায় একটা ফ্লাট কিনে নেয়।আর আমাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।এরপর একবছর লেগেছিলো আমার ঠিক হতে।এতে আমি লেখাপড়াতেও পিছিয়ে পরি। ভাইয়া আমার অনেক যত্ন নিয়েছে।ভাইয়ার কারনে আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।এরপর ভাইয়া আমাকে আবার কলেজে ভর্তি করে দেয়। এর মধ্যে আমার বাবা ফের আসেন আমাদের কাছে।তার ওই বউয়ের ভাইয়ের মেয়েকে ভাইয়ার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্যে উঠেপড়ে লেগে যায়।কিন্তু ভাইয়া আমার ভাবি মানে ইসরাত ভাবিকে ভালোবাসত।বাবার জোড়াজুড়িতে ভাইয়া তৎক্ষনাত ভাবিকে বিয়ে করে নেয় ঘরোয়াভাবে।ভাবির ফ্যামিলি আগে থেকে সব জানত তাই সমস্যা হয়নি।এতে বাবা অনেক রেগে যায়।কিন্তু ভাইয়াকে কিছুই বলতে পারেননি।তবে তিনি থেমে থাকেননি।এখন তিনি পরেছেন আমার পিছনে।তার বউয়ের ভাইয়ের ছেলেও আছে।এখন সেই ছেলেকে আমায় বিয়ে করতে বলছে।মানে তারা অনেক বড়োলোক তো তাই।শুধু মাত্র আপনাকে আমার সম্পর্কে বলার জন্যে ওই জঘন্য লোকটাকে বাবা বলে সম্বোধন করলাম।যাতে আপনার বুঝতে সমস্যা না হয়। নাহলে তাকে বাবা বলে আমি কোনোদিন মানি না।সে বাবা নামের কলঙ্ক।জা’নোয়ার সে।তার মতো লোক কখনও মানুষের কাতারে পরে না।সে আমার মায়ে’র খুনি। তাকে আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি।আমার সাধ্য থাকলে এই দুহাতে তাকে কু’পিয়ে কু’পিয়ে খু’ন করতাম আমি।’
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে আরহার চেহারায় হিংশ্রতা ফুটে উঠে।
#চলবে____________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।