কি নেশায় জড়ালে পর্ব-১৫

0
304

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মৌ কে এভাবে অবাক হতে দেখে সবাই সাজ্জাদের দিকে তাকালো।

সাজ্জাদ বাঁকা হেঁসে সামনে পর্দা সরিয়ে একটা ভিডিও প্লে করলো।

সবাই এবার সেই ভিডিওর দিকে তাকালো।

মৌ জেনো এখনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলো না।

ভিডিও তে প্রথমে দেখানো হলো মৌ কোনো একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু ছেলের মুখটা স্পষ্ট নয়। অনেক জায়গায় ঘুরেছে একজন আরেক জন কে খাইয়ে দিচ্ছে।

মৌ রেগে বলে উঠলো, ‘ ভিডিও অফ করো। ও শুধুই আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। তুমি এখন আর কিছু না পেয়ে এইসব দেখিয়ে আর যাই হোক আমাকে খারাপ প্রমাণ করতে পারবে না। এইসব নাটক বন্ধ করে তোমার সিদ্ধান্ত জানাও। ‘

সাজ্জাদ মৌ এর দিকে তাকিয়ে হাসলো।

সাজ্জাদের মুখের এমন হাসি দেখে মৌ ভয় পেয়ে গেলো। একবার আহনাফ এর দিকে তাকালো।

আহনাফ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ভিডিওর দিকে তাকিয়ে আছে।

সবাই আবার ভিডিওর দিকে তাকালো।

যেখানে আহনাফ সবার সামনে হাত বাড়িয়ে বলছে আমার গার্লফ্রেন্ড। আর সেই হাত শক্ত করে ধরে সবার সামনে এসেছে মৌ।

আহনাফ ওর আম্মুর দিকে তাকালো আমেনা বেগম অবাক হয়ে নিজের ছেলের দিকে তাকালো।
আহনাফ এর আব্বু রেগে ওর দিকে তাকিয়ে অপমানে মাথা নামিয়ে আদি চৌধুরীর দিকে তাকালো।

আর সব থেকে লাস্ট ভিডিও টা ছিলো মৌ গাড়ি থেকে বের হলো তারপর আহনাফ।
মৌ আহনাফ এর গলা জড়িয়ে ওকে কিস করলো।

এটা দেখেই মাথা নিচু করে নিলো অনেকে।

মৌ এর চোখ দিয়ে আগুন জ্বলছে।

আহনাফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আহনাফ এর আব্বু ওর সামনে গিয়ে বেশ কয়েকটা থাপ্পড় মারলেন। অনেক কথা শুনালেন।
আদি চৌধুরী ভাইকে থামালেন।
সুবর্ণা বেগম মৌ এর সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তোমাকে ভালো মেয়ে ভেবে ছিলাম। আমি নিজ হাতে আমার ছেলের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছিলাম৷ তুমি আহনাফ কে ভালোবাসালে আমাদের বলতে পারতে৷ আর আজ এমন নাটক করার মানে কি..?

মৌ কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।

মৌ এর আব্বু ওর পেছনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো। উনার মুখ নেই যে কিছু বলবে সব তো মেয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

সাজ্জাদ সবার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সবাই চুপ হও।আহনাফ আর মৌ দুইজন দুই জনকে ভালোবাসে।
আদি চৌধুরীঃ যদি ভালোই বাসে তাহলে এমন সিনক্রিয়েট করার মানে কি..?

সাজ্জাদঃ সে সব আমরা পড়ে বলি। এখন দুই পরিবার সিদ্ধান্তঃ নিয়ে ওদের বিয়েটা ঠিক করে নিন।
আহনাফ রেগে কিছু বলতে গেলে ওর আব্বু ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। আহনাফ চুপ হয়ে গেলো।

রূপা আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে হাসলো। ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসলো।

আহনাফ এর আম্মু আমেনা বেগম বলে উঠলো, ‘ আমি এই মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নিবো না।

আমেনা বেগম কখনি মৌ কে পছন্দ করতো না। আর আজ নিজের ছেলের বউ হতে যাচ্ছে সেই মেয়ে!!।

আমেনা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই দিন দেখার আগে আমি কেনো ম’রে গেলাম না। বলেই এখান থেকে চলে গেলেন।

আহনাফ ওর মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের এই একটা কথা জেনো কলিজায় গিয়ে বিঁধেছে।
অন্য কে আঘাত করতে গিয়ে আজ সে নিজেই সেই আঘাতে জর্জরিত হয়ে গেলো।

আহনাফ কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

মৌ এর আব্বু আদি চৌধুরীর কাছে মেয়ের জন্য ক্ষমা চেয়ে মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে বেরিয়ে গেলেন।

মৌ যাওয়ার আগে সাজ্জাদ আর রূপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আসবো আবার আসবো। তবে এভাবে নয় এই বাড়ির বউ হয়ে খুব তারাতারি। ‘

মাহতিম এতোক্ষন পর বলে উঠলো, ‘ সাপের মতো ফুসফুস না করে বেরিয়ে যাও তো।’

মৌ রেগে মাহতিম এর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে উঠলো, ‘ তুমি কথা বলবে না। এখানে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছে। ‘

মাহতিমঃ তোমাদের সিক্রেট কথা হলে বেড রুমে যাও না আমাদের সামনে কেনো বলছো..?সামনে সাপের মতো ফুসফুস করলে কে কথা না বলবে।

সাজ্জাদ শান্ত চোখে তাকাতেই মাহতিম মুখে হাত দিয়ে ফেললো।

এতো কিছুর জন্য সুবর্ণা বেগম রূপার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলো।

এখন যাওয়ার পালা।

রূপা সাজ্জাদ আর সুমাইয়া যাবে।

সুমাইয়ার কথা শুনে নাদিম খুব খুশি।

এদিকে মাহি বার বার এদিকে ওদিকে মাহতিম কে মনে মনে খুঁজছে।

মাহতিম এর দুষ্টুমি করা কথায় মাহি প্রেমে পড়ে গেছে।

সবাই যখন যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হবে তখনি মাহতিম হাতে বড় বড় দুইটা ব্যাগ নিয়ে ওদের সামনে হাজির।

সাজ্জাদ প্রশ্ন করলো ওর হাতে ব্যাগ কেনো..?

মাহতিমঃ ভাই আমরাও তোমার সাথে যাবো। কবে বিয়ে করবো তারপর শশুর বাড়ি এর আগেই যদি ম’রে টরে যাই। প্লিজ ভাই না করো না।
সাজ্জাদঃ আমরা ওখানে এতলোক গিয়ে কি করবো আজ বাদে কাল চলে আসবো।
মাহতিম রূপার কাছে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাবি আপনার বান্ধবীকে আনার সুযোগ করে দেন। ভাই কে বলেন।

রূপা হ্যাঁ করে মাহির দিকে তাকালো।

মাহি মাহতিম এর দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়তো শুনেনি মাহতিম কি বলেছে।

রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি না করবেন না। ভাইয়া আপনি আমার সাথে চলুন।

মাহতিমঃ সাথে আরেক জন আছে।

সুবর্ণা বেগমঃ তোরা কি শুরু করেছিস..?
আদি চৌধুরীঃ যার যার যেতে ইচ্ছে হয় যাও।

মাহতিম জোর করে আরিয়ান চাচ্চু কে নিয়ে নিলো।
কারন মিশন তো আরিয়ান চাচ্চু আর মাহির প্রেম করানো তারপর বিয়ে।

মাহি খুব খুশি মাহতিম যাবে শুনে। গাড়িতে গিয়ে মাহতিম এর পাশে বসলো।

মাহতিম পানি আনার বাহানা দিয়ে আরিয়ান চাচ্চু কে নিজের জায়গায় বসিয়ে সে অন্য গাড়িতে চলে গেলো।

মাহি মুখ ভার করে বসে রইলো। আরিয়ান অনেক সাহস করে মাহির সাথে কথা বললো। তার নিজেকে এতো নার্ভাস কেনো লাগছে..? এখন তো সেই বাচ্চা ছেলেদের মতো প্রেমে পড়ার বয়স আর নেই, ৪৫বছর পারি দিয়েছে সে। আর এই মেয়ের বেশি হলে ২২বছর হবে।
তাদের একদম মানাবে না। এমনটা মনে হতেই মনটা বিষিয়ে গেলো৷ অনেকদিন পর প্রিয়তমাকে ভুলে অন্য কারো দিকে তাকিয়ে জীবনটা সাজানোর স্বপ্ন দেখেছে সে।

মাহি বিরক্ত হলেও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলো৷ কানে হেডফোন গুঁজে বাহিরে তাকিয়ে রইলো।
আরিয়ান মুগ্ধ নয়নে মন ভরে দেখে নিলো তার পাশে বসা রমনীকে।

রূপা সাজ্জাদ কে এই নিয়ে হাজার প্রশ্ন করে ফেলেছে কিন্তু সাজ্জাদ একটার ও সঠিক উওর দেয়নি। এই নিয়ে খুব রেগে গেছে রূপা৷

সাজ্জাদ রূপার রেগে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

রূপা এক পর্যায় গাড়িতে ঘুমিয়ে গেলো৷ সাজ্জাদ যত্ন সহকারে রূপার মাথা নিজের বুকে রাখলো সুন্দর করে রূপাকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
এক এক করে সব ইচ্ছে পূরণ করে নিবে। রূপার মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিবে।

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।